এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ভ্রমণ

  • ভ্রমণপিপাসুর তুলোমেঘ

    মল্লিকা
    ভ্রমণ | ২৭ অক্টোবর ২০০৭ | ৬৪২ বার পঠিত
  • বসন্তদিনের ভ্রমণ

    শহরটির নাম ন্যাচেজ( Natchez )। নদীর তীরে পুরানো শহর, তবে এই নতুন দেশের হিসেব কিনা, মাত্র শদেড়েক কি শদুয়েক বছর হলেই বলে ঢের পুরানো। তবে ঐ শহরে প্রাচীন রেড ইন্ডিয়ানদের সমাধিভূমি আছে, জায়গাটি সত্যিই বহুকাল যাবৎ মানুষের তৈরী জনপদ ছিলো,তবে তখন তো শহর ছিলো না সেটা! ছিলো আরণ্যক যাযাবরদের জনপদ মাত্র।

    বসন্তের শেষদিকে এক সকালবেলা রওনা দিই আমরা। সঙ্গে ভ্রমণগাইড হিসাবে একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা,যাতে শহরটির দ্রষ্টব্য ইত্যাদি আর হোটেল রেস্তঁরার বর্ণনা আর ম্যাপ। ফ্রীওয়ে দিয়ে হু হু করে চলেছে গাড়ী,দুপাশে ঘন সবুজ দীর্ঘদেহ পাইনগাছের আড়াল,মাঠ বা চারণক্ষেত্র দেখতে দেয় না। এই সুন্দর সবুজ দেশে কেবল এইটাই কষ্ট অনুভব করি,আদিগন্ত খোলা মাঠের ঐপারে সূর্য, এই জিনিসটা মিস করি। এদেশের পশ্চিমের দিকে বা মধ্যখানেও অমন নাকি আছে হাজার হাজার মাইল দীর্ঘ খোলা মাঠ,তার ঐপারে আবীরলাল সূর্য অস্ত যাচ্ছে,মেঘে মেঘে আকাশকুসুমের অঞ্জলি দিতে দিতে। একদিন হয়তো দেখা হয়ে যাবে তাও। ন্যাচেজ শহরটির নাম ন্যাচেজ নামের রেড ইন্ডিয়ান উপজাতির নামে, যদিও উপজাতির উচ্চারণ নাকি "নোচি'। ওরা সমাধির উপরে স্তূপ বানাতো যার উপরিভাগ সমতল।ওদের দলনেতাকে বলতো মহান সূর্য। কবেই ওরা হারিয়ে গেছে, দেখা যাক, ঐ হারিয়ে যাওয়া নচিকেতাদের কোনো চিহ্ন কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় কিনা। কাছাকাছি হতে থাকি রহস্যময় শহরের, বাতাসে নদীর গন্ধ পাই,সাহেব বন্ধু হেসে বলে ক্রফিশের গন্ধ। এখানে ক্রফিশ বলে একরকম চিংড়ি কাঁকড়ার মাঝামাঝি দেখতে জলজ জীব খুব আদরণীয় খাবার,ক্রফিশ বয়েল বলে উৎসবও হয় খোলা মাঠে,যাতে গামলা গামলা ক্রফিশ সেদ্ধ এনে লোহার চৌবাচ্চার মতন বড়ো ট্রেতে ঢেলে দেয়,সঙ্গে থাকে আলুসেদ্ধ ভুট্টাসেদ্ধ ইত্যাদি।কাগজের প্লেটে ক্রফিশ আর আলুভুট্টা তুলে এনে মাঠের ঘাসের উপরে গোল হয়ে বসে সবাই মিলে ক্রফিশ ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে খাবার স্বাদই আলাদা,যেন ময়দানে সবাই মিলে ফুচকা খাচ্ছি।

    ন্যাচেজে পৌঁছে প্রথমেই খাবারের জায়গার সন্ধান করা হলো, সেখানে বেশ ভালোমত লাঞ্চ সেরে তারপরে মিউজিয়ামে যাওয়া, সেখানে ন্যাচেজ উপজাতির শিলনোড়া, মাটির ভাঙা পাত্র, হাতুড়ীবাটালিজাতীয় কিছু যন্ত্র রাখা আছে প্রিজার্ভ করে আর আছে ছবি।কিন্তু আমাদের উৎসুক মন এতে তৃপ্ত হয় না, আরো দেখতে চায়। এখানের গাইডেড টুর বড়ো বড়ো প্রাসাদ দেখানোর জন্য,গত শতকে তৈরী সুন্দর সুন্দর বড়ো বড়ো প্রাসাদ, প্রত্যেকটার নামটাম আছে, গাইডেরা ঘুরিয়ে দেখায় প্রাসাদের ঘরদোর,আয়না,রূপোর টিসেট,শোবার ঘরে পুরানো আমলের মস্ত মস্ত কারুকার্য্যকরা খুঁটি আর পায়াওলা খাট। এক প্রাসাদের বাগানে নীল ফুলের পাশে আমরা ভ্রমণকারী দলটা ছবি তুলি, তারপরে একটু জিরিয়ে নিতে গাছের ছায়ায় বসি।ভারী রৌদ্রকরোজ্জল দিনটা। সকলেই ঘেমে উঠেছে এত ঘুরে। নচিকেতাদের রেখে যাওয়া কোনো চিহ্ন দেখতে মন ব্যকুল, কিন্তু কোথায়? নিশ্চিহ্ন হয়ে মিলিয়ে গেছে কি তারা? এতো তাদেরই ভূমিখন্ড, কত হাজার হাজার বছর ধরে তাদেরই মুক্ত দুনিয়া ছিলো,কারা দুদিনের আপস্টার্টেরা এসে এমন করে খেদিয়ে দিলো তাদের সবাইকে? কিছুই আর রইলো না মনে করানোর মতন যে তারা ছিলো? শুধু নামটা বিকৃত উচ্চারণে হলেও রয়ে গেছে কেমন করে! রোদ পড়ে আসা বিকেলে আমরা গিয়ে সেই সমাধিভূমিতে পৌঁছাই। সবুজ ঘাসে ঢাকা সেই সমতলশীর্ষ স্তূপের কাছে,দীর্ঘ দীর্ঘ ওক পাইন ম্যাগনোলিয়া ছায়া মেলে রেখেছে মাঠে। স্তূপের পায়ের কাছে গিয়ে বসি, ছবিটবি তোলা হয়। মাঠের মধ্যে একটা খড়ের কুটির বানানো আছে, নাকি দেখানোর জন্য যে প্রাচীন ন্যাচেজরা কিরকম বাড়ীতে থাকতো। খড়ের বাড়ীটার কাছে গিয়েও আমরা ছবি তুলি, বাড়ীর দরজাটা অত্যন্ত ক্ষুদ্র,ওরা কি হামাগুঁড়ি দিয়ে ঘরে ঢুকতো নাকি? আরণ্যক মনে পড়ে যায় খাপছাড়াভাবে, ইতিহাসের পরাজিতরা হারিয়ে যায় নি:শব্দে, কোথাও কোনো বিচূর্ণীত অস্থিকঙ্কালের রেখায় তবু থেকে যায় কিছু চিহ্ন কোথাও না কোথাও। আমরা তাদের খুঁজে পাই না। খুঁজতে চাই ও কি তেমন করে? দিন আনা দিন খাওয়া ছাপোষা আমরা কেমন করেই বা খুঁজবো এই সান্ত্বনা দিই।
    সমাধিমাঠ থেকে বিরাট নদীটির তীরের ফুলগাছের পার্কে এসে দাঁড়াই,বুক ভরে নদীর হাওয়া টেনে নিই, পাথরের লতাগৃহগুলি দেখে সুন্দর লাগে, হয়তো বিগত দিনের মস্ত মস্ত স্কার্টপরা ছবির মত সুন্দরীরা ঐ মার্বেল পাথরের লতাগৃহে পালকের পাখা হাতে শুয়ে বসে দ্বিপ্রহরের নদীর দৃশ্য উপভোগ করতেন। নদীর উপরে বার্জ দেখা যায়, পার্কের সিঁড়ি ধরে নেমে গিয়ে চটি খুলে রেখে নদীর জলে পা ডুবাই, আহ! কী ঠান্ডা!
    মিসিসিপির জলে গঙ্গাহৃদয় দুলে ওঠে, সীমানাচিহ্ন মুছে যায়, হরিদ্বারের খরস্রোতা গঙ্গার স্পর্শ পাই এই জলে, যাদু নাকি? ভ্রমণ-সঙ্গী বন্ধুরা হাসছে, আমি উঠে আসি দ্রুত চটি পরে নিয়ে, এবারে ফেরার সময় হয়ে এলো, ছায়ারা দীর্ঘতর হয়েছে। ফিরে যেতে যেতে স্বপ্নে হাজার বছরের পূর্বেকার নাচেজে ফিরে আসার জন্য প্রার্থনা করতে থাকি,তখন এইসব পথ ছিলো না,প্রাসাদ ছিলো না, পার্ক ছিলো না লতাগৃহ ছিলো না, কিন্তু ছিলো সবুজ মহারণ্য, ছিলো ঐ মহা বিপুলা নদী। ছিলো সরল মুক্ত মানুষের দল, অজস্র পশুপাখীসরীসৃপ যাদের অনেকেই এখন বিলুপ্ত। মানুষের নাম হতো প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে--বনকুসুম, বলাকা, ঋষভ, ঋক্ষবান .... যাযাবর তারা পাড়ি দিতো অরণ্য থেকে অরণ্যান্তরে ...
    ডানহাতের মুঠোর মধ্যে ছিঁড়ে আনা সুগন্ধী ঘাসের গোছা, সন্তর্পণে হাত তুলে আনি নাকের কাছে ... এই চিরঞ্জীব তৃণসৌরভ আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাক সেই ফেলে আসা বহুদূর অতীতে। খুলে দাও খুলে দাও দুয়ার,তুলে নাও তুলে নাও গন্ডী।
    ""আমি যে তোর প্রথম মেয়ে
    আমি যে তোর ছা-
    কৃপণ বর্তমানের থেকে
    পিছন ফিরে যা।""
    ঐ যেখানে তরুণ ঋক্ষবান শিকারে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে এক শেষবিকেলে অরণ্য থেকে গাঁয়ে ফিরে দেখে গ্রামের চিহ্ন নেই, যাযাবরেরা সব অস্থায়ী বাড়ীঘর তাঁবুতাঁবা তুলে চলে গেছে, শুধু একটি ছোটো গাঁটরি নিয়ে গ্রামের প্রান্তে ওর জন্যে অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে বনকুসুমী।ওর সুন্দর কালো চোখের মণিতে টলটল করছে ভালোবাসা আর অশ্রুজল, শুধু নতুন গাঁয়ের পথটুকু দেখিয়েই যে ওকে বিদায় নিতে হবে! যেতে যেতে বনজ্যোৎস্না উঙ্কÄল হয়ে ওঠে, বনসুরভি ভেসে আসে হাওয়ায় হাওয়ায়, অরণ্য মর্মর যেন বিরহীর দীর্ঘশ্বাস। তরুণ ঋক্ষবানের পিছে পিছে নরম পায়ে ধীরে ধীরে আসে তার নীরব সহচরী। নতুন গাঁয়ে পৌঁছে ঋক্ষবান দূর থেকে আগুন দেখতে পায়, পরিচিত কন্ঠস্বরগুলি শুনতে পায়, পিছনে তাকিয়ে কিন্তু আর বনকুসুমীকে দেখতে পায় না, রাত্রিশেষের জ্যোৎস্নার মতন সে মিলিয়ে গেছে প্রান্তরে .... পরিচিতজনেরা অজস্র জিজ্ঞাসায় ভরে দিতে দিতে ঋক্ষবানকে নিয়ে যেতে থাকে গাঁয়ের মধ্যে, মধ্যস্থলে পবিত্র বৃক্ষের নীচে, বনকুসুমীর সমাধির কাছে, মাত্র কয়েকদিন আগে ওকে সমাধিস্থ করা হয়েছে যেখানে।হতবাক, স্তম্ভিত ঋক্ষবানের চোখ মুখ শরীর হৃদয় মন ইহলোক পরলোকের উপর দিয়ে ঝড়ের ঘূর্নীধুলো উঠে সব ঢেকে দেয় ...

    শহরের কাছাকাছি এসে গেছি, বন্ধুদের উৎফুল্ল উত্তেজিত গলায় ঘোর কেটে যায়। ঘর কাছে এসে গেছে। সবায়ের নাকি বেজায় খিদেও পেয়ে গেছে।কাছের টাকোবেলে থামা হলো। এদের মেক্সিকান খাবার যেমন খেতে ভালো তেমনি রিজনেবল দাম। সফট টাকো বীন বারিটো নাচো খেতে খেতে সারাদিনের ছোট্টো ছোট্টো মুহূর্তের গল্প করি আমরা। তা থেকে গল্প আস্তে আস্তে সরে যায়। পেরুর ছেলেমেয়ে লিও আর আইরিস,ওরা স্বামী স্ত্রী, দুজনে ওদের দেশের গল্প করে, পাহাড়ী গাঁয়ের ছেলে লিও সমুদ্র-উপকূলের শহরের কলেজে পড়তে এসে কেমন করে ফুল্লকুসুমের মতন এই আইরিসের প্রেমে পড়েছিলো ...

    ঋক্ষবান ও বনকুসুমীরা থেকে যায়, কোথাও না কোথাও ঠিকই থেকে যায়, নইলে কেমন করে বারে বারে শীতের সাদা জোব্বা সরিয়ে ফেলে কচি সবুজ বসন্ত খিলখিল করে হেসে ওঠে বলো?

    চন্দ্রকলা নগরী

    নিউ অর্লিয়াঁ। শহরটির আরেক নাম ক্রেসেন্ট সিটি। না, এ শহর লুনাটিক বলে নয় (যদিও অন্য ভব্যসভ্য শহরের তুলনায় এই উৎকট হুল্লুড়ে শহরকে সঙ্গতকারণেই লুনাটিক বলা যায়), নাদীতীরের বাঁকা চাঁদের মতন ভূখন্ডে শহরটি অবস্থিত বলে। মধ্য জুলাই, ২০০৪ এ, কজনে মিলে ঘুরতে গেছিলুম নিউ অর্লিয়াঁ শহরে। লুইজিয়ানা রাজ্যে অবস্থিত এ শহর। এ শহরে ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার বলে একটা জায়গা আছে সেখানে পুরনো আমলের মতো ঘরবাড়ী। খোলা বাজার আছে যার নাম ফ্রেঞ্চ মার্কেট।সেখানে আমাদের দেশের মতো খোলা জায়গায় গয়নাগাঁটি জামাকাপড় মশলাপাতি তরিতরকারি ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে।আমরা তো দেখে একেবারে দিওয়ানা।

    এদিকে সেই গরমের মধ্যে হেঁটে হেঁটে ঘুরে একেবারে লায়তাকাত অবস্থা সবার। তাগদ প্রায় লয় পেয়েছে। জাপানী মেয়ে তায়ি বললো,"এখানে খুব ভালো একটা দোকান আছে বর্বন স্ট্রিটে।নাম অয়স্টার।চলো সেখানে গিয়ে ডিনার করে নিই আমরা। বেশ সস্তাও পড়ে ওখানে।"
    তো সেই বর্বন স্ট্রিট খুঁজে বের করে তো চল্লুম আমরা ছজন অভিযাত্রী। বর্বন স্ট্রিট নাকি ওখানে নামকরা হুল্লোড়বাজ মাতালের জায়গা।দেখলুম পথের দুধারে অসংখ্য মদের ঠেক। এই দিনের বেলাতেই সেখানে যা চলছে তাতে রাতের কথা না ভাবাই ভালো। শেষ পর্যন্ত হেঁটে হেঁটে পায়ে ব্যথা করে গিয়ে পৌঁছনো হলো অয়স্টারে।সেখানেও হুল্লোড় চলছে তবে ততটা লাগামছাড়া নয়।এখানে বিয়ার তো দেখি লোকে সফট ড্রিংকের মতো সহজে অর্ডার দিয়ে দিচ্ছে। তায়ি অর্ডার দিলো আধডজন অয়স্টার।এলো সেই ঝিনুক, একেবারে কাঁচা, সঙ্গে দিয়েছে অনেক করে টক লেবু।দেখে তো আমি উল্টে পড়ি প্রায়। ভালো করে খুঁজে পেতে ভাজা চিংড়ি অর্ডার দিলুম, সঙ্গে জাম্বালায়া। জাম্বালায়া বেশ ভালো খাবার। ভাত মশলা তরকারি মাংস সব মিলিয়ে বেশ একটা আমিষ জগাখিচুড়ির মতো লোভনীয় ব্যাপার।এসে গেলে দিব্যি আর কোনো দিকে না তাকিয়ে খেতে শুরু করে দিলুম।একে খিদে তায় ক্লান্তি।দেরি করা যায়? তায়ি তৃপ্তি করে কাঁচা ঝিনুকের মাংস খাচ্ছিল ওর মধ্যে লেবু চিপে।
    আমাদের দলে ছিল মোহামেদ বলে মরক্কোর একজন ছেলে, হোয়ান বলে পেরুর একটি ছেলে আর ভেনিজুয়েলার মেয়ে ইরিস আর আরেকটি জাপানী মেয়ে কিকো।কাঁচা ঝিনুক একমাত্র তায়ি ছাড়া আর কেউ নেয় নি।কিকো দেখলাম আমার মতোই জাম্বালায়া খাচ্ছে। তবে ও তায়ির থেকে দুটো ঝিনুক চেখেছে।মোহামেদ,হুয়ান আর ইরিস তিনজনে খাচ্ছে ক্যাটফিশ,ভাজা ঝিনুক আর আলুভাজা যাকে এদেশে বলে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।সবাই সফট ড্রিংক নিয়েছে অথবা জল।সন্ধ্যেবেলা ভৌতিক ভ্রমণ আছে প্ল্যানে। এখনি কড়া পানীয় নিয়ে মাথা ঘুরে গেলে চলবে কি করে?
    যাই হোক খাওয়া দাওয়া নির্বিঘ্নে সমাধা করে আমরা নদীর বাঁধানো ধারটায় হাওয়া খেতে গেলাম।উঁচু পাড়,বড়োবড়ো বোল্ডার ফেলা আছে জল পর্যন্ত।সেখানে বেশ কিছু ফটো টটো তোলা হলো।নদী খুব শান্ত,বয় কি বয় না বোঝা যায় না।অবশ্য এটা এক্কেবারে মোহনার কাছে কিনা,একটু পরেই গিয়ে মিশে গেছে মেক্সিকো উপসাগরে,তাই আরকি একাবরে অশান্তি নেই।সাগর প্রেমিকের এত কাছে চলে এসে তটিনী-প্রেমিকা ভারী শান্ত আর লক্ষ্মী হয়ে গেছে।নদীর বুকে বড়ো বড়ো বজরা ভেসে আছে।এতে নাকি সব ক্যাসিনো আছে।এদেশের আইন অনুযায়ী ক্যাসিনো দেশের জমিতে বেআইনী,তাই আরকি আইন বাঁচিয়ে নদীর উপরে জুয়া খেলার ব্যবস্থা।

    একটু হাওয়া খেয়ে আবার ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারে। এখানে ব্যাপার বেশ ভালোই। সারা বছরই চলছে হুল্লোড়। ঘোড়ার গাড়ী চড়ে বেড়াচ্ছে সদ্য আসা টুরিস্টরা।পথের ধারে ধারে বসে আছে ছবি আঁকিয়ের দল-অল্প কিছু পয়সা দিলেই তারা এঁকে দেয় পোর্ট্রেট। অনেকে দেখি বসে বসে প্রতিকৃতি আঁকাচ্ছে। একজায়গায় ভীড় দেখে দাঁড়ালাম,সেখানে দেখি একজন লোক গয়নাবিক্রেতা একেবারে ধাতুর তার থেকে শুরু করে সামনাসামনি গয়না বানিয়ে দিচ্ছে। একেবারে হাতে গরম আংটি যাকে বলে।দেখে তো আমাদের চোখ নাটানাটা।আরেক জায়গায় চলছে গানবাজনা।বিরাট এক ভেঁপু বাজাচ্ছে সোনালী বোতামের মেলা ওয়ালা বড়ো নীল কোট গায়ে এক সোনালী চুল নীল চোখ স্কটিশ। দেখতে দেখতে সন্ধে হয়ে এলো। এইবার শুরু আমাদের হন্টেড টুর।দলের বাকীরা এসে গেছে যেখানে জমায়েত হতে বলা হয়েছিল সেখানে।গাইড এলো,কুচকুচে কালো সিল্কের জামাপ্যান্ট পরা ভয়ানক কালো আর রোগা একটি লোক।আমাদের তো দেখেই আক্কেল গুড়ুম। যাক গে চলতে তো শুরু করলুম সবাই মিলে।আকাশে মেঘ করেছে, বেশ গুমোট গরম।তার মধ্যে এইবার সেই অপূর্ব গাইড আমাদের একের পর এক নিয়ে চললো একেকটা হান্টেড বাড়ীর সামনে আর বিবরণ দিতে থাকলো নানা ভৌতিক ব্যাপারের।সে কতকাল আগের এক অর্বাচীন যুবক,তার প্রেমিকা তাকে ডেকে নিয়ে গেছিল নিজের ঘরে-মেয়েটির বাবামা ভাইবোনেরা সেদিন কোথায় গেছিল যেন থিয়েটার দেখতে--কিন্তু খবর পৌঁছে গেল, রাশভারী বাবা ভদ্রলোক এসে গেলেন বাড়ীতে,গর্জন করে বন্দুক বার করলেন।বেগতিক দেখে প্রেমিক দোতলা থেকে থাম বেয়ে পালাতে গেল।কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না, সে ধারালো শিকে লেগে মরে গেল।সেই তার অতৃপ্ত আত্মা নাকি এখনো মাঝে মাঝে দেখা দেয়। তারপরে আরেক বাড়ীর কাছে নিয়ে বললো বহুকাল আগের এক কিশোর ক্রীতদাসের করুণ মৃত্যুর কথা। মনিবনীর অত্যাচারে নির্দোষ ছেলেটি মরে গেছিল।তার আত্মা নাকি আজও দেখা দেয়। এক জায়গায় ভ্যাম্পায়ারের কাহিনিও এলো। দুটি মেয়ে নাকি ভ্যাম্পায়ারের কামড়ে রক্তশূন্য হয়ে মরে গেছিল।

    আরেক জায়গায় এক মিষ্টি প্রেমের কাহিনি।এক তরুনী গণিকা ভালোবাসতো তার এক বাবুকে।তাই সে যেকোনো মূল্যে তার স্ত্রী হতে চাইলো। ভদ্রলোক বললেন ডিসেম্বরের প্রচন্ড শীতের রাতে মেয়েটিকে উলঙ্গ হয়ে সারারাত ছাদে কাটাতে হবে।এটাই হবে তার ভালোবাসার প্রমাণ।মেয়েটি রাজি হলো।সকালে তাকে পাওয়া গেল মৃত।সে জীবন দিয়ে ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে গেল।আজও নাকি সে বাড়ীর ছাদের উপরে ডিসেম্বরের প্রচন্ড ঠান্ডা কোনো কোনো রাতে সেই মেয়েটিকে দেখা যায়। আসলে এই নিউ অর্লিয়াঁ শহরে ইতিহাসের এত আলোড়ন ঘটেছে যে অনায়াসে জন্ম নিয়েছে এইসব কাহিনিমালা।এটা ছিল ফরাসী আর স্প্যানিশ ঔপনিবেশিকদের জায়গা।সঙ্গে অবশ্যই তাঁদের ভৃত্য হিসাবে আফ্রিকা মহাদেশের অসংখ্য ক্রীতদাস।তবে এখানে নাকি ফরাসী আইন চলতো। সে আইনের হিসেবে ক্রীতদাসদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার চলতো না, ক্রীতদাসদের তাদের পরিবার মানে স্ত্রী ও বাচ্চাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিক্রি করে দেওয়া যেত না,রবিবারে তাদের ছুটি ছিল,তারা মনিবের পরিবারে কাজ করা ছাড়াও অন্য জায়গায় কাজ করতে পারতো যাতে টাকা জমিয়ে নিজের আর স্ত্রীপুত্রকন্যাদের জন্য মুক্তি ক্রয় করতে পারে।(পরে কৃষ্ণাঙ্গ বন্ধুরা এসব শুনে বাঁকা হেসেছে যদিও) এইসব কথাগুলো ২০০৪ সালে দাঁড়িয়ে শুনতে শুনতে কিরকম অদ্ভুত লাগছিল।মাত্র দেড়শো দুশো বাছর আগেও এদেশে দাসপ্রথা ছিল,মানুষ কেনাবেচার কাজ চলতো! মনিবরাও বর্ণময় চরিত্র।ফরাসী আর স্প্যানিশ দুই দলই তো হুল্লোড়বাজ ও জীবনরসিক বলে নিজেদের পরিচয় দেয়।শত্তুরে অবশ্য বলে যে স্প্যানিশরা নাকি ওস্তাদ লুঠেরা আর অতি নিষ্ঠুর ধরনের লোক।আমাদের জলজঙ্গলের বাংলায় হার্মাদ জলদস্যু ইত্যাদি বলে তো স্প্যানিশ পর্তুগীজদের বেশ একটা কুখ্যাতিই আছে। যাই হোক,ফরাসীরা নাকি এখানে এসেছিল স্প্যানিশদের পরে।ফরাসীরা প্রথমে কানাডায় ওদের উপনিবেশে ছিল।সেখানে কিছু গন্ডগোল বাঁধায় এরা দক্ষিণে নেমে আসতে বাধ্য হয়।এত দক্ষিণে একেবারে এই লুইজিয়ানাতে এসে এরা বসতি করতে পারে।এই কানাডা সংসর্গ থাকার জন্য এদের নামের সঙ্গে কেজান কথাটা জুড়ে যায়। বোঝাই যাচ্ছে প্রথমদিকে এরা ছিল প্রায় একেবারে উদ্বাস্তু ধরনের।নিশ্চয় আগে থেকে মৌরুসীপাট্টা গেড়ে বসে থাকা ওস্তাদ লড়ুয়ে স্প্যানিশরা এদের সহজে জায়গা ছেড়ে দেয় নি।অর্থাৎ লড়াই।ইতিহাসের আলোড়ন।অনেক মৃত্যু,হত্যা,বিচ্ছেদ।আর পরিনামে কান্নাহাসির রঙবেরঙের অজস্র কাহিনি।দেশে দেশে যা আজও চলে আসছে। তবে যতই হুল্লোড়বাজ আর সুরারসিক হোক,রান্নার ব্যাপারে নাকি ফরাসীরা টেক্কা দেয় অন্য ইউরোপীয় জাতিদের।এখানেও এদের রান্নার তরিকা তাক লাগায় অন্যান্যদের।এই রান্নার কৌশল কেজান স্টাইল হেসেবে পরিচিত।আর নিউ অর্লিয়াঁ একটি বন্দরশহর হওয়ার জন্য প্রাচ্য দেশ থেকে আনা নানা মশলাপাতি সহজে পাওয়াও যেত।কেজান রান্নায় তেল মশলার ব্যাপক ব্যবহার থাকায় আমাদের মতো ভারতীয়দের জিভে বেশ বেড়ে ঠেকে। সত্যি বলতে কি অন্যদেরও ভালোই লাগে নইলে সারা আমেরিকায় এই রান্নার খ্যাতি ছড়াবে কেন? উত্তরের অঞ্চলে নাকি রান্না বান্না নামেমাত্র তেলে মশলায় হয় বলে অতি ভোঁতা।তরকারি সেদ্ধ,মাংস সেঁকা বা সাঁতলানো।তাই সে অঞ্চলের লোকেরা মুখ ছাড়াতে কেজান রান্না খেতে আসতো এই ফরাসী মহল্লায়।এখন দেশের প্রান্তে প্রান্তে কেজান ফুডের রেস্তরাঁ তৈরী হয়েছে।

    যাক ভুতের গল্পে পরে রান্নার প্রচুর গল্প শোনার পর সবারই বেশ খিদে খিদে পেয়ে গেল।অতএব চলো একটি কেজান রেস্তরাঁয়।
    কেজান রাইস বেশ তেলে মাংসকুচিতে মনোরম ভাত।সঙ্গে থাকে ভাজা মুর্গি।এই গ্রীষ্মে এখানের বিশেষ জিনিস হলো ক্রফিশ।চিংড়ি কাঁকড়ার মাঝামাঝি দেখতে জলের প্রানী।টুকটুকে লাল।গোটা গোটা সেদ্ধ অবস্থায় প্রচুর পরিমানে এলো প্লেটে প্লেটে।সঙ্গে ছোটো আলু সেদ্ধ আর মিষ্টি ভুট্টা সেদ্ধ।এইবারে কায়দা করে ছাড়াতে হবে ক্রফিশ।শক্ত মাথার দিকটা ধরে মাথা থেকে ছাড়িয়ে নিতে হবে লেজসমেত বাঁকানো দেহটা।তারপরে লেজের দিকটা চেপে ধরে দেহের শক্ত খোলাটা ছাড়িয়ে নিয়ে সসে ডুবিয়ে অথবা এমনিই খেতে হবে।সত্যি চমৎকার খেতে লেগেছিল।কিন্তু ক্রফিশ খাওয়াটা বেশ পরিশ্রমসাপেক্ষ ব্যাপার।এত কায়দা করে ছাড়াতে হয়!তাই আরকি পরিশ্রম ভুলতে মাঝে মাঝে সেদ্ধ আলুতে কামড় দিয়ে নিতে হয়।অথবা মিষ্টি ভুট্টাসেদ্ধ একটুখানি চেখে নিতে হয়। যাহ, এই ভ্রমণকাহিনি তো দেখছি একটি আহার বর্ণনায় পরিণত হচ্ছে। রাত বেড়ে যাচ্ছে। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে এগারোটায়। এবারে ফিরতে হবে নিজেদের শহরে। সেটা গাড়ী করে এখান থেকে ঘন্টাতিনেক। সেমেটারির পাশ দিয়ে গাড়ী চলার সময় দেখা গেল সমাধিগুলো মাটি থেকে বেশ উপরে।কি ব্যাপার? জানা গেল,এই শহর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নীচু হওয়ায় বন্যার সময় সব জলে ডুবে যাওয়ার আশংকা থাকে।বহু আগে নাকি একবার এইরকম হয়েছিল,তখন সমাধির সব কফিন জলে ভেসে চলে গেছিল।তারপর এই আইন হয়েছে যে সমাধি মাটি থেকে বেশ অনেকটা উঁচুতে হবে। এ অঞ্চলে হারিকেন নামক একরকম ঘূর্ণিঝড়ের খুব প্রাদুর্ভাব।(বস্তুত পরের বছরেই মহা ভয়ানক এক হ্যারিকেন ক্যাট্রিনা এসে শহরটি জলমগ্ন করে দেবে,ক্রমে ধীরে ধীরে তা থেকে মাথা তুলবে শহর) সময়টা জুলাই থেকে প্রায় অক্টোবর পর্যন্ত। হারিকেন সীজন। প্রধানত সেই সময় এই শহরের বন্যার আশঙ্কা থাকে।তবে এখন এদের জল-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা খুব ভালো,প্রচুর পাম্প রেডি করা থীকে জল সেঁচে ফেলার জন্য।তবু সেই উচ্চ-সমাধি আইন আজও চলে আসছে।

    এবার নিউ অর্লিয়াঁকে আলাবিদা জানিয়ে তো আমাদের গাড়ী উত্তর দিকে ছুটতে আরম্ভ করলো। মাঝরাত পেরোতেই হঠাৎ শুরু হলো ভয়ানক বৃষ্টিবাদলা।আকাশের জমাট মেঘ থেকে মুষলধারে বর্ষণ আর সঙ্গে বিদ্যুৎ ও বজ্রপাত।আমাদের গাড়ীর সামনের কাঁচ জলে একেবারে ঝাপসা।ওয়াইপার চলছে সমানে,তবু তেমন কাজ হচ্ছে না।বন্যাধারার মতো বৃষ্টি পড়ছে। একটি লম্বা ব্রীজে এসে উঠলো গাড়ী।এই ব্রীজের নীচে যে জলবিস্তার সেটা মেক্সিকো উপসাগরের একটি অংশ।এই মহাবৃষ্টির রাতে এই ব্রীজ পেরোতে পেরোতে মনে হলো যেন যুগ পার হয়ে যাচ্ছে।অন্ধকার ধূসর জলরাশির উপর দিয়ে যেন জাহাজ বেয়ে চলেছি আমরা কজন।মাঝে মাঝে চিকমিকে বিদ্যুতে মুহূর্তের জন্য আলো হচ্ছে,আবার অন্ধকার পরক্ষণেই। যাই হোক একসময় সেই ব্রীজ পেরিয়ে এলো গাড়ী।বৃষ্টির ধারও কমে গেছে।লুইজিয়ানা রাজ্য পার হয়ে এবার মিসিসিপিতে ঢুকে পড়লাম আমরা। আরো কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি একেবারে থেমে গেল। এবারে গাড়ীর ভিতরে আমাদের দিব্যি খোসগল্প শুরু হলো। জাপানী ভাষায় নাকি ফোন করার সময় হ্যালোর বদলে বলা হয়,"মুশমুশ"। শুনে মরক্কোর ছেলে মোহামেদ বলে কি,"এটা কি রকম ব্যাপার? শুনে তো সিরিয়াস লাগছে না!আমি যদি ফোন করে বাড়ীতে মাকে বলি, মুশমুশ, মা শুনে বলবে, এ কি ফাজলামো হচ্ছে?এইরকম আর কখনো কোরো না।" আমরা শুনে হাসছি সবাই, কিকো বললো,""না,এর মানে হলো ""আমি বলছি।"" জাপানী ভাষা নাকি খুব অনুকার শব্দে ভরা,"টোরা টোরা,কিং কিং,টোগা টোগা"এইধরনের শব্দে ভরা। ইরিস ভেনিজুয়েলার মেয়ে, ওখানে ওরা স্প্যানিশ ভাষা বলে।স্প্যানিশের কাস্তিলিয়ানো ডায়ালেক্ট।দক্ষিণ আমেরিকার শুধু ব্রাজিল বাদে অন্য সব দেশে এই কাস্তিলিয়ানো চলে,ব্রাজিলে চলে পর্তুগীজ।
    দুর্যোগ পার হয়ে আসার আনন্দে ভাষা নিয়ে ঠাট্টাতামাশা করতে করতে আমার পথ পেরিয়ে আসতে থাকি।বাব্বা ব্রীজের উপরে তো মনে হচ্ছিল প্রলয় ঘনিয়ে আসতে আর দেরি নেই।কেউ কেউ তো ভাবছিল হারিকেন এলো নাকি রে বাবা? আরেকটু এগোতে আকাশের ছেঁড়া মেঘের ফাঁক দিয়ে গুটিকয় তারা দেখা দেয়।ঐ তো দেখা যায় আমার শহরের আলো।

    আ,এবার বাড়ী।একটি নিটোল শান্তির ঘুম। সারদিনের হুল্লোড়ে বড়ো ক্লান্ত। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখবো প্রাণের হুল্লোড়ে ভরা নদীপারের শহরটিকে, যা কিনা সমুদ্রতলের চেয়ে নীচে, দেখবো সেই অদ্ভুত হন্টেড টুর, সেই রেস্তরাঁ, সেই বাঁশীবাজানো লোকটি, সেই ঘোড়ার গাড়ী।সব কিছু নিয়ে ব্যস্তসমস্ত অন্যরকমম জনপদ এক।কোথাও যেন খুব মিল আছে কলকাতার সঙ্গেও।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ভ্রমণ | ২৭ অক্টোবর ২০০৭ | ৬৪২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন