জ্ঞানউপুড় পোস্ট ঢালি আমরা।রাষ্ট্রব্যবস্থা সমাজব্যবস্থা সব নিয়েই কী অগাধ পাণ্ডিত্য! আদালতের ভারডিক্ট, তার ঠিক ইন্টারপ্রিটেশন ভুল ইন্টারপ্রিটেশন...সমীহ জাগে আর তখনই জেগে ওঠে শাঁখা সিঁদুরজনিত অন্য অন্ধকার।
হ্যাঁ। আমাদের আলো-পাওয়া চোখ, ইন্টেলেকচুয়াল বিভা,বন্ধনমুক্তির জন্য কোমরের জোর, শাঁখা সিঁদুর ইত্যাদি বিবাহচিহ্ন মুছে ফেলার জোর যোগায় বই কী!
জোর যোগায়,যখন বলে কেউ , সিঁদুর মুছে দিয়েছে, শাঁখা পরে না,হাজব্যান্ডের পদবি নেয় না,কী ধান্দা আছে কে জানে!এসব প্রতিক্রিয়াশীল কথা মহিলারাও বলে থাকেন বই কী!আর,ছেলেরা তখন যারপরনাই আহ্লাদের সঙ্গে জানান, মেয়েরাই যে মেয়েদের শত্রু। তাঁরা ভুলে যান সেক্ষেত্রে মেলার মাঠে কথা-বলা পুতুলের ভূমিকা, মেয়েটির। পুরুষ, অন্তরালে আছেন।
না। কোনও ঘোড়া গাধা খচ্চরের মুখের খবর নয়। হাওয়াবাহিত ভাইরাসও নয়। আমার দৃষ্টি ও শ্রবণের ফার্স্ট হ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স বলব এবার।
রিমোট ভিলেজে পর্যন্ত কষ্টকরে যেতে হবে না। বাড়ি থেকে দুপা দূরের খালবিল, খেত,মাটিরবাড়ি, পঞ্চায়েতসম্বল আরশিনগরগুলোর কথা বলছি। শাঁখা সিঁদুর ত্যাগ করার কথায় দুগ্গা,ফুলিরা আঁতকে ওঠে কিংবা হি-হি করে হাসে।
'কী বলছ কী মামিমা,এসব না পরলে মরে যাব তো! আমাদের দেশেঘরে তোমাদের নিয়ম খাটে না। কুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়েরাও অনেকসময় এসব পরেটরে...'
'কেন?'
'ভয়ে গো ভয়ে। কোনও গার্জেন নেই জানলে টিঁকতে দেবে ভেবেছ? বেটাছেলেরা টানাটানি শুরু করে দেবে।'
মিনতির বর বেদম পেটায় ওকে।মদ খেয়ে। না খেয়েও। সারাদিন হাপুশ খেটে টাকা কামায় মিনতি।বর ভোর-ভোর খালপাড়ে গিয়ে বাংলা খেতে বসে যায়।
বললাম,'রোজগার করে।এমন বরকে ডিভোর্স দেয় না কেন?'
কুলকুলকরে হেসে ওঠে দুগ্গা।
'ওসব তোমাদের ওখানে চলে গো।বর নিজে থেকে ছেড়ে চলে গেল তো আলাদা কথা, আমরা ছেড়ে গেলে শেয়ালকুকুর এসে ছিঁড়ে খাবে।এই তো ঘাসিয়াড়ায় একটা বৌ, বরকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, এখন মেয়েটা একদম নষ্ট হয়ে গেছে!' মুখ দিয়ে চুকচুক শব্দ তোলে ও।
শাঁখা সিঁদুর এইসব মহিলাদের ট্যালিসম্যান।রক্ষাকবচ।
আপনি আমি ভুরু কুঁচকে বলি, চেতনা ফিরবে না?
ফেরানোর জন্য, গিয়ে গিয়ে, সন্ধেবেলা ক্লাসরুম লেকচার দেয়াই যায় কয়েকটা দিন। কিন্তু তারপর? দিদিমনিরা ফিরে গেলে, সমিতির ঘর থেকে একা একা নিজের বাড়ি এসে এঁরা এই শাঁখা সিঁদুরের বর্ম নামিয়ে রাখলেই ওঁৎ পেতে থাকা আশেপাশের চারঘর থেকে নেমে আসবে শ্বাপদ।
কোনও প্রচেষ্টা ছোট করছি না আমি। কিন্তু এই পাশবিক রিয়েলিটি দিনের পর দিন লক্ষ করে গেছি।
তবে উপায়?
আছে তো!
আমার একটি কবিতায় লিখেছিলাম :
সেই মেয়েটির কথা লিখি।
আকাশে আঁকশি দিয়ে স্বপ্ন নামিয়ে এনে
মেশাতে চেয়েছে রান্নায়।
সে যাহার পরিবার, তার হাত বারবার
তেল-নুন ঘেঁটে দিয়ে গেছে,
মেয়ে স্বপ্ন মুছেছে।
সেই মেয়েটির কথা লিখি।
আকাশে আঁকশি দিয়ে হাসি নামিয়ে নিয়ে
ছড়িয়েছে ট্রামরাস্তায়।
সন্দেহে লোকজন,সন্ধে হয় যখন,
'প্রস' বলে আঙুল তুলেছে,
মেয়ে হাসি নিভিয়েছে।
সেই মেয়েটির কথা লিখি।
আকাশে আঁকশি দিয়ে মেধা নামিয়ে নিয়ে
উপুড় করেছে খাতায়।
সঙ্গী লগনচাঁদা ছেলেরা লজ্জার মাথা
খেয়ে,ওর জিহ্বা ছিঁড়েছে,
মেয়ে ঘুমিয়ে গেছে।
সেই মেয়েটিকে আমি লিখি কি লিখি না,
সেটা বড় কথা নয়,
একদিন,সে নিজেই প্রহরণ হয়
তো,চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।নরনারী নির্বিশেষে যাতে সঠিক পথ পাই আমরা।
আহা, আর একটু লিখলে হত। বড় ভালো শুরু হয়েছিল! আর একটু...
ঠিক
অসাধারণ একটি গোছানো লেখা।
কী ভাল লিখেছেন চৈতালি।
আহা। সঙ্গে দেওয়া কবিতাটি পড়ে
অভিভূত হলাম। বেদনা এবং বেঁচে ওঠা স্পর্শ করল একসাথে।
শাঁখা সিঁদুর একরকম করে নিশ্চয়তা দেয়, যাকে অগ্রাহ্য করা মুশকিল। স্বামীর মঙ্গলকামনা, শুভ অশুভ শুধু না, এ সমাজ স্বামীহারাদের জন্যে যে বিধিনিষেধ চালু করে রেখেছে, কোথায় বদলালো সেসব। অল্প কিছু পরিবর্তন নিশ্চয়ই হয়েছে তবে সে আর কতটুকু?
লেখাটা পড়ে মনে এলো, আমাদের ছোটবেলায় দেখতাম, মেয়েরা বাইরে গেলে মানে সন্ধ্যেবেলা,সঙ্গে একজন চলনদার থাকতো। কচি দশবছরের হলেও রক্ষক যে সে সবসময়ই একজন পুরুষ:)
ঘোর বাস্তব !
ঘোর বাস্তব !