-------------------------------
দেবী প্রশমণীর পাঁচালি
-------------------------------
(১)
শুন শুন ভক্তজন, শুন দিয়া মন।
দেবী প্রশমনী কথা করিনু বর্ণন।।
শুনিতে বসিবে কথা ক্ষারজল হাতে ।
রাখিবে দূরত্ব একে অপরের সাথে।।
পুরাতন দেশ এক নাম তার চীন,
সেই দেশে ছিল এক ক্ষুদ্র প্যাঙ্গোলিন।
দেবী তারে স্নেহক্রোড়ে দিছিল আশ্রয়,
দেবীর আশ্রিত পশু নাহি জানে ভয়।
সেই দেশে ছিল এক বণিক কুমার
দেবদ্বিজে নাই ভক্তি ধর্ম পরিহার।
অহংকার মদে মত্ত বণিকের ছেলে,
বধ করি প্যাঙ্গোলিন সস মেখে খেলে।
হারাইয়া বাহন দেবী রুদ্রমূর্তি ধরে,
কুপিতা দেবীর ক্রোধে বহু লোক মরে।
মর্তধামে শোক নামে কর্ম বন্ধ হয়,
দুষ্কর্মের ফল ইহা জানিবে নিশ্চয়।
বিপদে পড়িয়া লোকে হায় হায় করে,
কহ মাত: শাস্তি দিলা কি পাপের তরে।
সন্তানের দুখে মা-র হৃদয় গলিল
দয়া করি প্রশমণী স্বপ্নে দেখা দিল।
কন্টকবলয়া দেবী সূক্ষ্মদেহধারী,
দুই পার্শ্বে দুই চ্যালা মার আর মারী।
এক হস্তে প্রাণবায়ু অন্য হস্তে বিষ,
দেবীর প্রভাবে হয় কোভিড উনিশ।
এক দেহ হইতে দেবী শত দেহ ধরে,
জ্বর কাশি ব্যাধি রূপে ফিরে ঘরে ঘরে।
হস্তজোড়ে দেবীরে কহে বণিক তনয়,
“বলো মাগো কি উপায়ে এ রোগের ক্ষয়।”
হাসিয়া কহিলা দেবী, “শুন দিয়া মন,
তিন পথে হবে এই রোগের খন্ডন।”
হস্ত পদ প্রক্ষালন করি বার বার
বন্দিবে চরণ এবে প্রশমণী মা-র।
এর পরে নাকে মুখে মাস্কও বাঁধিবে,
মাস্ক না মিলিলে মুখে বস্ত্র চাপা দিবে।
নাসিকা চিবুক ঢাকা প্রয়োজন অতি,
মাস্ক খুলি বাক্যালাপ করে দুর্মতি।
রুমাল কাপড় আদি কবচ সমান
ধারণ করিলে পরে রক্ষা পাবে প্রাণ।
গৃহ হইতে যথাসাধ্য কর্ম সম্পাদিবে
একে অপরের হইতে দূরত্ব রাখিবে।”
এই বলি প্রশমণী দেবী অন্তর্হিলা,
দেশে দেশে দেবী-কথা WHO প্রচারিলা।
দেবীর আদেশ পেয়ে বণিক কুমার
দেশে ফিরি ব্রতকথা করিল প্রচার।
যে বা শোনে, যে বা পড়ে, যে বা রাখে ঘরে
দেবীর বরেতে জেনো যমও তাকে ডরে।
(২)
এক দেশে ছিল এক ট্রাম্প দুরাচারী,
বুদ্ধিভ্রষ্ট স্বার্থপর অতি অহংকারী।
প্রজার সুখের কথা রাখে না খেয়াল,
একমাত্র পণ তার তুলিবে দেয়াল।
প্রশমণী কথা শুনি কহে ব্যঙ্গ করি,
“তুচ্ছ এক ফ্লু -দেবীরে আমি নাহি ডরি।
অফিস রাখিব খোলা, খুলিব বিপণী,
গোষ্ঠী প্রতিরোধে রোগ ধাইবে আপনি।”
হেন বাক্য শুনি দেবী ক্রুদ্ধ হন মনে,
পাঠাইলা অতিমারী ওয়াশিংটনে।
নিউ ইয়র্কাদি গ্রাম ছিল যত
দেবীরোষে কাঁপে ত্রাসে বেতসের মত।
বিষম তরাস দশ দিকেতে রটিল
অন্ন, স্বাস্থ্য, শান্তি গেল অনর্থ ঘটিল।
জ্বর আদি ব্যাধি লয়ে হইয়া কাহিল,
ট্রাম্পের আদেশে প্রজা খায় ফিনাইল।
অবশেষে কোনও দিকে না দেখি উপায়,
ত্যজিয়া অহং ট্রাম্প দেবীপদে যায়।
কহে, “মাগো ক্ষম মোরে আমি অর্বাচীন,
তুমি মাগো রাজেশ্বরী আমি অতি দীন।”
তুষ্ট হইয়া কহে দেবী “করো মোর ব্রত
তিন পন্থা মানি চল তুমি সাধ্যমত।
সুরক্ষা দাও যত বৃদ্ধ প্রজা আছে,
পরিবার ভিন্ন কেহ না আসিবে কাছে।
কিছুমাত্র কষ্ট হলে থাকো অন্তরীণ-
প্রতি সোমবারে খাও ডি-ভিটামিন।
এই বিধি মেনে চলে কষ্ট হবে দূর,
সোনার সংসার হবে সুখে ভরপুর।”
ট্রাম্প কি মানিবে কথা? দিইবে কি কান?
এরপর কি হইবে জানে ভগবান।
(৩)
ডোনাল্ডের মিত্র দেশে রাজা এক আর
নির্মলা হর্ষ সেথা অমিত অপার।
তার কথা বলি শুনহ মাস ফেব্রুয়ারী
সুখের বাসরে ঢোকে রোগ মহামারী।
রাজন্যরে মহাদেবী দিছিল সময়,
কিন্তু মূঢ় ট্রাম্প সঙ্গে করে কালক্ষয়।
তার সাথে আছিল এম.পি-র লোভ,
অবহেলা দেখি বাড়ে দেবীর প্রকোপ।
না করে পরীক্ষা আদি, না বন্ধে উড়ান
নিভৃতাবাস আদি না করে নির্মাণ।
শত হইতে বাড়ে রোগ পৌঁছে হাজারে,
জনসমাগম চলে হাটে ও বাজারে।
তারপর আচম্বিতে বুদ্ধির উদয়,
একদিন অচানক সব বন্ধ হয়।
প্রস্তুতি অভাবে লোকে হাহাকার করে
পরিযায়ী শ্রমিকাদি পড়ে আতান্তরে।
তারই মাঝে চলে বাদ্য, দীপ প্রজ্জ্বলন,
কেহ নাহি জানে এর কিবা প্রয়োজন।
কেহ আনে গোমূত্র কেহ আর্সেনিক
পূজার্চনা ব্রতবিধি মানে না সঠিক।
রোগ বেড়ে ধীরে ধীরে লক্ষাধিক হল,
মূঢ়মতি একদিন সব খুলে দিল।
বন্ধ শুধু বিদ্যালয় শিক্ষালয় যত,
বাকি সব চলাচল যথা পূর্বমত।
(৪)
বুঝি গেল নর নারী বৃদ্ধ শিশু যত।
আত্মনির্ভর হইতে হইবে সাধ্যমত।।
যেই হাতে পূজে রাজা দেব আম্বানি।
সেই হস্তে না পূজিবে মাতা মহারানী।।
অতএব ব্রতবিধি প্রজাদেরই দায়,
আরোগ্যের ইহা ভিন্ন না দেখি উপায়।
তিন পন্থা মেনে চললে ভাইরাস জননী
তুষ্ট হইয়া শান্ত হন দেবী প্রশমণী।
হস্ত-পদ প্রক্ষালন মাস্ক পরিধান,
দূরত্ব বজায় রাখো হইয়া সাবধান।
মাস্ককে গলায় পরে নির্বুদ্ধি নিলাজ,
মাস্ক খুলি বাক্যালাপ অনুচিত কাজ।
দ্বিফালি, ত্রিফালি মাস্ক সুরক্ষা বলয়,
গৃহে ফিরি মাস্ক ধুইতে ভুল নাহি হয়।
বৃদ্ধ, শিশু, অসুস্থেরে আগলিয়া রাখো,
হাঁচি কাশি পাইলে অগ্রে হস্তে মুখ ঢাকো।
হাঁচি অন্তে হাত ধোওয়া দরকারি অতি,
সুখাদ্য সুস্বাস্থ্য জেনো অগতির গতি।
সময়ে শয়ন আর সময়ে ভোজন
বাইরে যাইবে যদি অতি প্রয়োজন।
জ্বর আদি সর্দি কাশি যদি কারও হয়
বাড়িতে রাখিতে পারো নাহি করি ভয়।
এমত রোগীর সাথে দূরত্ব রাখিবে
শ্বাসকষ্ট হইলে ত্বরা ডাক্তার ডাকিবে।
বাড়িতে রাখিতে পারো অক্সিমিটার
শ্বাসকষ্টে অক্সিজেন দ্রুত দরকার।
উপুড় করিলে কষ্ট প্রশমিত হয়,
ক্রমাগত দিতে হবে রোগীরে অভয়।
দরকারি নম্বর আদি রাখিবে যতনে,
সত্বর ফোনাইতে পারো যেন প্রয়োজনে।
এই কটি পূজাবিধি জেনো মনে সার,
করো এই ব্রতকথা জগতে প্রচার।
(৫)
পাঁচালি অন্তে সব প্রণাম করিবে,
অন্য কার্য ভুলি সবে হুলুধ্বনি দিবে।
কহো “মাগো প্রশমণী জগতের সার,
স্নেহময়ী তুমি মাগো করুণা অপার।
অধম সন্তান আমি অতি দীন হীন,
দয়া করি দাও মাগো, শীঘ্র ভ্যাকসিন।”
এই বলি সাষ্টাঙ্গে করিবে প্রণাম,
শুদ্ধ মনে জপ করো প্রশমণী নাম।
প্রশমণী দেবী কথা হইল সমাপন,
ভক্তি ভরে বর যাচো যাহা লয় মন।
-------------------------------
জয় মাতা প্রশমণীর জয়।
((এই পাঁচালির কিছু অংশ ভক্তার্নব শ্রী শ্রী ঈশান চক্কোত্তি মশায়ের লেখা)
অপূর্ব