এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মানুষ হওয়ার এই মিছিল

    Saswata Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ৩৭১১ বার পঠিত
  • (২১শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪)

    সমস্ত জটিলতা, বিতর্ক ও বিশ্লেষণ সরিয়ে রেখে একটা কথা বলাই যায় – যাদবপুরকে কেন্দ্র করে একটা বন্ধুত্বের ঢেউ উঠেছে। রাজ্য-দেশ-সীমান্ত দল-মত সব কিছু ঢেকে গেছে সহমর্মিতায়, রাগে।

    দেশ-দেশান্তর থেকে গলা মেলাচ্ছেন মানুষ। উদ্বিগ্ন হচ্ছেন লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে-যাওয়া ভাইবোনেদের স্বাস্থ্যচিন্তায়। আশঙ্কা করছেন প্রশাসনিক প্রতিহিংসার পরবর্তী প্রকাশ নিয়ে। সকলেরই খুব আন্তরিক আশা – যেন ভুল পথে না চলে যায় এই জাগরণ। যেন ‘ব্যবহৃত’ না হয়ে পড়ে এই সম্মিলিত আবেগ।

    আজ যেন নতুন করে মানুষ হওয়ার পাঠ নিচ্ছি আমরা সবাই!

    শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর বর্বর আক্রমণ কোনো মানুষ মেনে নিতে পারে না। সেই আন্দোলনের কারণ বা পদ্ধতির প্রতি কারোর সমর্থন নাও থাকতে পারে। কিছুদিন আগে যাদবপুর ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনা সম্পর্কে অনেকরকম কথা শোনা যাচ্ছে। তার কিছু সত্য, কিছু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই বিকৃত। সত্য উদ্‌ঘাটনের স্বার্থেই দ্রুত যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার, এবং সেই দাবী নিয়েই প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল পড়ুয়ারা। সেই আন্দোলনের প্রতি কারোর সহমর্মিতা রয়েছে কি না, তার চেয়েও এই মুহূর্তে বড়ো হয়ে উঠেছে – কীভাবে তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করা হল।

    রাতের অন্ধকারে সেই নৃশংসতার ফুটেজ সকলের সামনে এসে যাওয়ায় – মানুষ রেগে গেছে। এই রাগ কোনো রাজনৈতিক রাগ নয়। কোনো স্বার্থান্বেষী দেখনদারী নয়। এই রাগ মুক্তিকামী মানুষের নিহিত স্লোগান।

    যাদবপুরের এই ছাত্র-আন্দোলনের ওপর রাজনৈতিক রঙ লাগানো হচ্ছে খুব চতুরভাবে। দুটি বক্তব্য শোনা যাচ্ছে প্রায়ই –

    ১। যে মেয়েটির শ্লীলতাহানি হয়েছিল, সে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক বলে, আন্দোলনের ছলে অন্যায়কারীদের আড়াল করা হচ্ছে।

    ২। এখন সমস্ত মনোযোগ আসল ঘটনা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উপাচার্য ও অন্যান্যদের অপসারণের দাবীতে আন্দোলনের দিকে। এবং যেহেতু পুলিশ আর উপাচার্য (এবং আক্রমণকারী গুন্ডারা; অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীরা বাদে বাকি সবাই) সরকারপক্ষের, তাই এই আন্দোলন হয়ে উঠেছে সরকার-বিরোধী। শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ কই?

    প্রথম অভিযোগের বিষয়ে ওই ছাত্রীর মত জানা গেছে কি না আমার জানা নেই। কিন্তু তার বাবার বক্তব্য শুনলাম। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন – যত দিন গেছে ততই অসহযোগী ও নিশ্চেষ্ট হয়ে উঠেছেন বর্তমান উপাচার্য। তার ওপর কোনো ভরসা নেই আর।

    কই কোথাও তো তিনি বলেননি, প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতে আন্দোলন করছে তার মেয়ের সহপাঠীরা?

    এরপর কী বলবেন, মেয়ের ইজ্জতকে তুচ্ছ করে দল বদলেছেন তার বাবা? কোথা থেকে কোন দল?

    কলকাতার রাস্তায় ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা-করা মহামিছিল দেখে, পরের দিনই নিগৃহীতার বাড়িতে ছুটলেন শিক্ষামন্ত্রী। এতদিন সচেষ্ট হননি কেন?

    ভারতবর্ষের অন্যতম নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুর। সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে আছেন, বাংলা তথা ভারতবর্ষের সমাজ-গঠনে নিরন্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন তারা। তাদেরই একজনের ক্যাম্পাসের ভেতর শ্লীলতাহানি হলে কেন ভ্রুক্ষেপ করবেন না আপনি, ‘পরিবর্তিত’ বাংলার শিক্ষামন্ত্রী? সর্বদা লোকচক্ষুর নজরে-থাকা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক পড়ুয়ার এই নিরাপত্তাহীনতা থাকলে, রাজ্যের প্রত্যন্ত কলেজগুলির কী অবস্থা? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন আন্তরিকতাসহ উদ্যোগী হলে এই পরিস্থিতি কি তৈরি হত? এমনকী শ্লীলতাহানির অভিযোগটিও সত্য না মিথ্যা (এমন কিছু কথাও ভাসছে বাতাসে) তা জানার জন্য তো তদন্ত প্রয়োজন।

    লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাত্রছাত্রীরাই বা কেন মনোযোগ পাবে না আপনার?

    দ্বিতীয় অভিযোগ প্রসঙ্গে বলি। একেকটি আন্দোলনের মূলত দু-ধরণের দাবী থাকতে পারে – একটি তাৎক্ষণিক, অন্যটি সামগ্রিক। এই দুটি দাবী হতেই পারে পরস্পরের সঙ্গে কোনোভাবে সম্পর্কিত।

    যেভাবে কারোর সঙ্গে আলোচনা না করে পুলিশ (ও বহিরাগত গুন্ডা) ডেকে বর্তমান উপাচার্য এই আন্দোলন ভাঙার চেষ্টা করলেন, তা থেকে উনি কী ধরনের মানষিকতা পোষণ করেন – তা স্পষ্ট।
    আপাদমস্তক মিথ্যাবাদী, ভণ্ড একটা লোক দিনের আলোয় দলদাসত্ব করে। তার পদত্যাগ এই মুহূর্তের সবচাইতে বড়ো দাবী। শুধু যাদবপুরের আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী নয় – গোটা ভারতবর্ষ ওনার অপসারণ চাইছে। যেতে ওনাকে হবেই।

    এই যে দাবী তা উঠে এসেছে আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি থেকে। মধ্যরাতে পুলিশের লাঠি ও বুটের ডগা থেকে। এই দাবী তাৎক্ষণিক। কাল উনি সরে গেলে এ চাওয়া আর থাকবে না।

    কিন্তু এর সঙ্গে আসল ঘটনাকে আড়াল করার প্রসঙ্গ আসছে কেন?

    যে উপাচার্য যে ছাত্রদের মানুষ বলে ভাবেন না, তার কাছে এক নির্যাতিতা ছাত্রীর যন্ত্রণা মূল্যহীন হবে এ তো স্বাভাবিক। উনি তদন্ত-কমিটির কার্যকলাপ ও ভবিষ্যত দিক নিয়ে একটা পাবলিক স্টেটমেন্ট দিতে চাননি। নিজের আরামকেদারা ছেড়ে বাইরে এসে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি; তার নাকি dignity তে বাঁধে। উনি করাবেন ছাত্রস্বার্থে যথাযথ তদন্ত?

    শ্লীলতাহানির ঘটনা সম্পর্কে ওনার তৎপরতা কতদূর ছিল, তা তো ঘটনার অগ্রগতিতেই স্পষ্ট।

    এই লোকটা সরে গেলে নতুন যিনি আসবেন, তিনি নিশ্চয়ই যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। অর্থাৎ সুষ্ঠ তদন্তকমিটি গঠন ও নিরপেক্ষ তদন্তের যে সামগ্রিক দাবী তার সঙ্গে এই বিন্দুতে জুড়ে আছে বর্তমান উপাচার্যের অপসারণ।

    ভবিষ্যতে যথাযথ তদন্তের কাজে যদি বাঁধা দেয় আজকের আন্দোলনকারীরা, কিংবা তদন্তে বেরিয়ে আসে অন্য অপ্রকাশিত কোনো হীন অভিপ্রায় ছিল তাদের, তখন যথার্থই বলা যাবে তারা ক্ষুদ্রস্বার্থে আড়াল করতে চাইছে প্রকৃত দোষীদের। তখন আওয়াজ উঠবে বর্তমানের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে; তার আগে নয়।

    এছাড়াও তাদের সাম্প্রতিক জেনারেল বডি মিটিং-এ আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বলেছে (লিখিত স্টেটমেন্ট রয়েছে) – শ্লীলতাহানীর ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের লক্ষ্য তাদের সমস্ত দাবী অটুট থাকছে।

    এর পর আর কী করার? নবান্ন-এর দেওয়ালে বড়ো বড়ো করে লিখে দিয়ে আসতে হবে নাকি?

    ....................................

    কোনো বিরোধী আন্দোলন যদি তার স্বতঃস্ফূর্ত জোয়ারে কেবলই টেনে নিতে থাকে আরও আরও বেশি মানুষ, তখন ঈর্ষায়, ভয়ে, নিজেদের প্রকৃত রূপ প্রকাশিত হয়ে-পড়ার আশঙ্কায় নানাবিধ ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার শুরু করে শাসককূল। তাদের অপপ্রচার যত বেশি চোখে পড়বে, বুঝে নিতে হবে নিজের জোর বাড়াচ্ছে দলতন্ত্রের আওতার বাইরে থাকা গণআন্দোলন।

    এই অপপ্রচারের কিছু নমুনা ও নিজের মতো করে তার উত্তর দিই –

    অপপ্রচার ১। আন্দোলনকারীরা নাকি শিক্ষকের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখায়নি।

    আহা রে, বেচারা শিক্ষক! তা শিক্ষক কে? যিনি অন্যায় জেদ ধরে আরামে বসে থাকেন গেট-টানা ঘরের ভেতর আর বাইরে রাত-জেগে গলা ফাটিয়ে মরে তারই সন্তানসম ছাত্র-ছাত্রীরা? কী শেখার আছে ওনার থেকে যে ওই উপাচার্যকে শিক্ষক হিসেবে মানতে হবে? একটু দেখি –

    ক) নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর ঘটনার তদন্ত যত রকম ভাবে দেরী করানো যায়, তিনি করেছেন। যা শুনলাম, প্রথমেই তো নাকি বলেছিলেন, এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে ১৫ দিন সময় লাগবে। ইনি শিক্ষক? – ছিঃ।

    খ) আন্দোলন ভাঙতে উনি পুলিশ ডাকলেন। কার সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত? ওইসময়ের পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা কি একমাত্র ওনারই ছিল? নাকি অন্য কারোর দেখাদেখি একটু একানয়ক হওয়ার সাধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল?

    গ) অভিযোগ – প্রাণের হুমকি দিয়েছিল ছাত্ররা; ছিনতাই করার চেষ্টা করেছিল উপাচার্যকে।

    ওনার সঙ্গে আটকে ছিলেন যারা, তাদের একজনও একবারও কোথাও প্রাণভয়ের কথা বলেছেন? বরং ঘটনার পরে একদিন সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন কর্মস্থলে। ঢুকতে না পেরে দীর্ঘক্ষণ বসে ছিলেন ওখানেই। পরে আন্দোলনকারীরা আলোচনার ভিত্তিতে ওদের ভেতরে যেতে দেয়। ওনারাই বলুন, অতক্ষন তো বসেছিলেন অরবিন্দ ভবনের সামনে, একটা কেশাগ্রও স্পর্শ করেছে কেউ?
    ছাত্রছাত্রীরা কী অমানুষ না দলের গুন্ডা যে খুন করবে?

    তাছাড়া ঘটনার দিন রাত্রে, পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে গেট বন্ধ। বাইরে গিটার, ভায়োলিন, স্যাক্সোফোন হাতে গান-বাজনা করছে ছেলেমেয়েরা। কোথায় প্রাণনাশের হুমকি, কোথায় তান্ডবচিহ্ন? (তবে ওনার রকমসকম দেখে মনে হচ্ছে তারুণ্যের গানে ওনার হৃদকম্পজনিত মৃত্যু হলেও হতে পারে; একেই কি প্রাণনাশের হুমকি বলছেন উপাচার্য !!)

    ঘ) বলছেন, নাকি বহিরাগতরা ঢুকেছিল ক্যাম্পাসে। গদিমোড়া চেয়ারে বসে ওনার দোসররা তো আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে বলছে – ভয়ানক সব অস্ত্র নাকি ঢুকে পড়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে!

    শুনলাম উপাচার্য হুমকি দিয়েছিলেন আগেই যে বাইরের লোক এনে আন্দোলন ভেঙে দেবেন। উনি নিজের মনে ভাবুন, ‘বহিরাগত’ কারা?

    ওই বিশ্ববিদ্যালয়, ওই ক্যাম্পাস, প্রত্যেকটা ইঁট-বালি-ধুলোকণা ওখানকার পড়ুয়াদের। ঘটনার দিন অনেকক্ষণ ধরেই বাইরে জড়ো হয়েছিল শাসকের গুন্ডাদল। ক্রমাগত হুমকি দিয়েছে তারা – রাত নামলে দেখে নেবে। পুলিশের তো উচিত ছিল আগে গিয়ে ওইগুলোকে তাড়ানো। তা না করে ওদের সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল ছাত্রদের ওপর।

    অসহায় হয়ে ছাত্ররা ডেকেছিল বন্ধুদের। সেই ডাক শুনে যারা মানুষ, তারা যাবে না? বেশ করেছে গেছে। যারা গেছেন তারা দিনের আলোয় দাঁড়িয়ে জোর গলায় বলেছে্ন – বন্ধুর পাশে বন্ধু হয়ে গেছি, প্রেমিকার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রেমিক।

    কিন্তু পুলিশের সঙ্গে ঢুকল যারা, তারা এসে বলুন সবার সামনে কেন গিয়েছিলেন ওইখানে ওই সময়ে? পুলিশ স্বীকার করুক তবে, আমরাও বিপন্নতাবোধে ডেকেছিলাম গেঞ্জি-পরা ‘বহিরাগত’ সঙ্গীদের।
    এই অন্যায় তক্‌মার বিরুদ্ধে কেউ কিন্তু বলছে না সিঙ্গুরের ঘটনার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভায় ঢুকে চিৎকার করাটা অন্যায় হয়েছিল। বলছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুকে বাঁচাতে যাওয়া প্রেসিডেন্সির বন্ধু যদি ‘বহিরাগত’ হয়, তাহলে সিঙ্গুরে, নন্দীগ্রামে কী ছিলেন ততকালীন বিরোধীনেত্রী? কীই বা ছিলেন ‘স্বজন’-এরা, কীই বা ছিলেন মেধা পাটেকর?

    মানুষের বিপদে মানুষ এগিয়ে আসবে এইটা স্বাভাবিক। ওইসব ‘বহিরাগত’-টত বলে কোনো লাভ নেই। আসল কথা হল তাদের ভূমিকা কী ছিল ওই মুহূর্তে।

    একটাও ছবি দেখান কেউ যেখানে সেইদিন যাদবপুরে যাওয়া ভিন-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-ছাত্র-গবেষকেরা কোনোরকম অস্থিরতা তৈরি করেছে?

    পুলিশ যদি বুটের বাড়ি মারে, আমরা কী বুক পেতে দেবো? আত্মরক্ষার অধিকার সবচাইতে মৌলিক অধিকার। হাত-পা ছুঁড়ে, আক্রান্ত বন্ধুর শরীর আগলে তাই করেছে ছাত্রছাত্রীরা। নিজেদের গা বাঁচাতে পালিয়ে যায়নি। দূর থেকে বসে টিভিতে যুদ্ধ দেখে মজা নেয়নি।

    অস্ত্র যদি থাকত তবে ওই দানবগুলোর অন্তত একফোঁটা রক্তও ঝরত? কই, দেখান?

    নাকি ওখানে সেদিন সন্ধ্যায় ভয়ঙ্কর সব অস্ত্রের ডেমো দেখিয়ে তুলে রেখেছিল ছেলেমেয়েরা?

    ঙ) ছাত্ররা নাকি আলো ভেঙে দিয়েছে।

    কত বড়ো নির্বোধ হলে এই কথা বলা যায়! আলো ভেঙে কী সুবিধাটা পেল ওরা? অন্ধকারে ভয়ংকর সব অস্ত্রহাতে কটা পুলিশকে আহত করল?

    বরং সবাই জানে এখন সব ফোনে ক্যামেরা থাকে। অত্যাচারের ছবি ছড়িয়ে গেলে সমস্ত সহানুভূতি চলে যাবে আন্দোলনকারীরের দিকে। এবং শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে ঠিক এমনটাই হয়েছে।

    একটি ছাত্র সাংবাদিকের ক্যামেরার সামনে নিজের মোবাইলের ঘটনার সময়কার ভিডিও চালিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সমস্ত আলো প্রায় একই সঙ্গে নিভে যাচ্ছে, এবং এইসব আলোর নিয়ন্ত্রণ বন্ধ গেটের ওইপারে, অর্থাৎ উপাচার্যের কোর্টে!!

    এছাড়া, পরের দিন ওইসব আলো ক্যামেরায় ধরে এনেছেন সাংবাদিকরা। সবকটাই অক্ষত।
    তবে কী গুন্ডাদের হাত ধরে বাড়ি পৌঁছিয়েই অভূতপূর্ব তৎপরতায় লোক লাগিয়ে আলোগুলো বদলে দিলেন উপাচার্য? আহা কী কাজপাগল লোক গো !!

    ছ) মাওবাদী – এ প্রসঙ্গে কথা না বাড়ানোই ভালো। একথা এত্ত বার এত্ত বার বলা হয়েছে এত্তদিন ধরে, যে আজকাল ঘোড়াও হাসছে। শুনলেই হাসছে।

    উপাচার্যের গুণকীর্তন অনেকদূর গড়িয়ে গেল। কিন্তু এত কিছুর মধ্যে ওনার শিক্ষকত্বের ছিটেফোঁটাও কি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে কোথাও? তারপর তো সম্মান।

    প্রকৃত একজন শিক্ষকের কথা বলি। সৌমিত্র বসু। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরই দর্শনের শিক্ষক। সাম্প্রতিক পুলিশি বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্যপদে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। স্পষ্ট বলেছেন – এই নির্মম পদক্ষেপ মানা যায় না কিছুতেই।

    উনিও আটকা পড়েছিলেন ঘেরাও-এ। পুলিশ বার করে নিয়ে আসে তাকে। তখন ভেবেছিলেন, ছাত্রদের কোনোভাবে সরিয়ে দিয়েছে তারা। কিন্তু পরে এই ঘটনা জানতে পেরেই তিনি পদত্যাগ করেন। প্রতিবাদ করেন। সর্বসমক্ষে তিনি জানিয়েছেন – ভুল হয়েছিল তার। বলেছেন, বিবেকের দংশনের কথা।

    শিক্ষক হতে গেলে, অনেক জ্ঞানের চাইতেও এই ‘বিবেক’ থাকাটা বহুগুণ আবশ্যক। প্রণাম শিক্ষক সৌমিত্র বসু।

    তুলনায় বড়ো একটা কিছু আসে যায় না। কোনো অন্যায় দেখিয়ে আরেক অন্যায়কে বিশ্লেষণ বা সমর্থন করা যায় না। তবু নিছক তথ্যে-প্রদর্শনের খাতিরেই যারা ‘শিক্ষক’দের প্রতি সম্মান নিয়ে চিন্তায় ফেসবুক ফাটিয়ে ফেলছেন, তাদের দু-একটা ঘটনা বলি।

    কলেজের অধ্যক্ষের বাড়ি ঘিরে ফেলে, তাকে বাইরে ডেকে, আঙুল তুলে হুমকি দেওয়াটা কী ধরণের সম্মানজ্ঞাপন? প্রশাসন নেই? ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নেই? কলেজে বসে ভদ্রভাবে কথা বলা যায় না? বেশি দিন নয়, কাল-পরশুর ঘটনা। স্থান জলপাইগুড়ি (আনন্দচন্দ্র কলেজ)।

    কিছু মাস আগে টিভিতে একটা ছবি দেখেছিলাম। এক কলেজের অধ্যক্ষের কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছেন এক ছাত্র। - এই সম্মান শিক্ষকের প্রতি !! কিছুদিনের মধ্যেই আবার এইসব ‘দুষ্টু’ ছাত্রদের প্রতি এসে পৌঁছেছে উপরতলার আশীর্বাণী – ছোটো, সামান্য ঘটনামাত্র। নিছক দুষ্টুমি বই আর কিছু না!

    এছাড়া আরও আছে। শিক্ষিকার মুখে জলের জগ ছুঁড়ে ছিলেন এক ‘তাজা নেতা’। তিনি আবার নতুন শিক্ষামন্ত্রীর প্রথম দিনে ঘরে গিয়ে চেয়ার দখল করে বসেছিলেন আপ্রাণ গম্ভীর-করে-তোলা মুখে (ঘরের বাকি সবাই যখন দাঁড়িয়ে!!)। অবশ্য উনি নিজেই বলেছিলেন যে শিষ্য হয়ে গুরুর উন্নতির আনন্দে আটখানা হয়ে চলে গিয়েছিলেন ওইখানে !!

    কিছুদিন আগেও তৃণমূলপন্থী অধ্যাপকদের একটি সম্মেলনে মাননীয়া কৃষ্ণকলি বসু ভয়াবহ টুকলির প্রতিবাদে এক অধ্যক্ষের পদত্যাগ-করাকে ‘বাড়াবাড়ি’ বলেছেন। যারা টুকলি করেছিল, সেইসব দুষ্টুদের প্রতি তার, তার দলের সর্বাধিনায়িকার কী বক্তব্য?

    এইসব কীর্তির পরেও যারা ‘শিক্ষকের সম্মান’ শব্দটা মুখে আনে, তাদের মানষিক সুস্থতার অবিলম্বে সি বি আই তদন্ত হওয়া উচিত (‘সিট’ হলে চলবে না!)।

    অপপ্রচার ২। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা নাকি অশালীন পোশাক ও ভঙ্গিমায় ছিল ওইখানে।
    এই অশালীনতা মাপকাঠি কী – এইটা একটা বড়ো বিষয়। আমাদের দেশে তরুণ প্রজন্মের পোশাক-আশাকের ধরন এখনও অনেকটাই অর্থনৈতিক শ্রেণী ও সবচাইতে কাছের বড়ো শহর থেকে তার আবাসস্থলের দূরত্বের ওপর নির্ভর করে। এই ক্ষেত্রে মানসিকতা ও রুচির বিশ্বায়ন এখনও সম্পূর্ণ হয়নি, অন্তত ভারতবর্ষে।

    তাছাড়া যারা এইসব বলছেন, তাদের অনেকেই নিশ্চয়ই মানেন একটি মেয়ে ছোটো জামাকাপড় পরলেই তাকে ধর্ষণের অধিকার জন্মায় না।

    তাহলে যেখানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রসঙ্গ উঠছে, সেখানে ছোটো জামাকাপড়, বন্ধুর গলায় বান্ধবীর হাত – এইসব তুচ্ছ কথা কী আনা উচিত?

    ভালোবেসে পিছন থেকে বন্ধুর গলাটা জড়িয়ে ধরা পাপ আর হাত-পা ধরে মাটির ওপর ছেঁচড়ে ছাত্র টেনে নিয়ে যাওয়া ‘সংবেদনশীলতা’?

    আর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যারা এইসব সংস্কৃতি আর শালীনতার কথা পাড়ছেন, তাদের মনে করিয়ে দিই একের পর এক কলেছে প্রতিষ্ঠা দিবস ও আরও নানাবিধ উপলক্ষে তাদের কর্মীদের উন্মত্ত নাচ – কোথাও নিজেরাই, কোথাও বা শিল্পী ভাড়া করে। সমস্ত কিছুর ভিডিও আছে। চাইলেই দেখতে পারেন রাতের মেহফিলে কেমন বাদশাহী মেজাজে টাকা ওড়াচ্ছেন একজন কিংবা রবীন্দ্রভাররী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বছরের সেরা ছাত্র’ কেমন জামা খুলে সুন্দর নাচ দেখাচ্ছে (আবার দেওয়াল থেকে কে যেন চেয়ে চেয়ে দেখছে সেই নাচ!)

    এছাড়া ফেসবুক খুললেই দেখা যাচ্ছে # হোককলরবের পালটা দিতে # হোক_ক্যালানি! বাহ্‌ সংস্কৃতি!

    অপপ্রচার ৩। কথা উঠছে, যাদবপুরের ক্যাম্পাসের মাদক-দ্রব্যের ব্যবহার রুখতে খুবই তৎপর বর্তমান উপাচার্য তথা কর্তৃপক্ষ। তাই তার বিরুদ্ধে এই ছদ্ম-আন্দোলন। এই আন্দোলন নাকি আসলে ‘নৈরাজ্য, অপসংস্কৃতি ও মাদকদ্রব্য ব্যবহার’এর পক্ষে যাদবপুরের একাংশ ছাত্রছাত্রীর তৎপরতা।

    নানান সময়ে নানান জায়গায় ছাত্ররা অনেক অন্যায় দাবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেন, যেমন ফেল-করা ছাত্রদের পাশ-করানোর দাবীতে, টুকলির অধিকারকে স্বীকৃতি-প্রদানের দাবীতে। এইসব আন্দোলনকে কোনোভাবেই সমর্থন করেন না শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যদি নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্যের ব্যবহার হয়ে থাকে, তাকে বন্ধ করাটা একদিনের প্রক্রিয়া নয়। সব ছাত্রই তো আর মারণ-নেশায় মজে নেই। যারা নেই, তাদেরকে পাশে পেতে হবে কর্তৃপক্ষের। ধৈর্য-সহকারে এগোতে হবে। কঠোরতা প্রয়োজন, কিন্তু প্রথম পর্যায়েই তা যদি হয়ে ওঠে অমানবিক, তাহলে তা ফলপ্রসূ হবে না কিছুতেই।

    যদি উপাচার্য মাদক-বিরোধীতার খুব তৎপর মুখ হন, তাহলে এই ইস্যুতে একাংশ ছাত্রছাত্রী, শিক্ষেরাই এসে দাঁড়াবেন ওনার পাশে। কই তারা? যিনি ছাত্রী-নিগ্রহের ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে সময় চান, তিনি পড়ুয়াদের নৈতিকতার উন্নয়নে ব্রতী হবেন, বিশ্বাস করতে বেশ কষ্টই হয়।

    আমাদের রাজ্যেরই আরেক উৎকৃষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বেসু। একসময় তার ক্যাম্পাসের অশান্তির খবর প্রায় রোজই দেখা যেত সংবাদপত্রের পাতায়। কিন্তু কিছুকাল যাবৎ এই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও সমস্ত অস্থিরতা কাটিয়ে ক্যাম্পাসের শান্তির বাতাবরণ নজর কেড়েছে সকলেরই। কই ছাত্রছাত্রীরা নৈরাজ্যের পক্ষ নিয়ে এর প্রতিবাদ করছে না তো? উপাচার্যকে হেনস্থা করছে না তো। বরং যতটুকু জানি, সেই উপাচার্য অত্যন্ত আদর ও সম্মান পেয়ে থাকেন শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী ও অন্যান্য শিক্ষাকর্মীদের থেকে।

    মিথ্যাকথা বলে, এর-ঘাড়ে-ওকে চাপিয়ে পরিস্থিতি গুলিয়ে দিয়ে কোনো লাভ আছে কি?

    আবার বলি, এই মুহূর্তে এই আন্দোলন এই উপাচার্যকে অপসারণের ও পুলিশি বর্বরতার প্রতিবাদ। তাকে সমর্থন করেই এই লেখা।

    মাদকদ্রব্য-বিরোধী প্রচেষ্টা ও মানবিক পদক্ষেপের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে আমার।

    অপপ্রচার ৪। অসীম চট্টোপাধ্যায় যেহেতু গেছেন যাদবপুরে, প্রতিবাদ করেছেন, এর অর্থ হল ভেতরে ভেতরে নকশাল ক্রিয়াশীলতা শুরু হয়ে গেছে। কেন গেলেন অসীম? উনি তো ছাত্র নন। অর্থাৎ বহিরাহত।

    যারা বলছেন এ কথা, তারা ভুলে যাচ্ছেন কেন, একদিন এই অসীমবাবুই নির্বাচন লড়েছিলেন তৃণমূলের সমর্থনে, বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে। পরে ভুল বুঝতে পেরেছেন নিজের। বহুদিন ধরেই উনি বাংলার একজন প্রতিবাদী মুখ। গুণী মানুষ। বিদগ্ধ বিশ্লেষক ও প্রাবন্ধিক। সারদা কেলেঙ্কারীতে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষজনের হয়েও উনি লড়ছেন।

    এখানেও ওই একই কথা। মানুষ বিপদে পড়লে আরেকজন মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম আর্তের পাশে এসে দাঁড়ানো। মানবিকতা যুক্ত হওয়ার কথা বলে, আর ক্ষুদ্র কায়েমী শক্তি, অত্যাচারী শাসককূল সবর্শক্তি দিয়ে চারিয়ে দিতে চায় বিভাজন।

    নন্দীগ্রাম কান্ডের পর নোয়াম চমস্কির বার্তা নিয়ে হেঁটেছিলেন মানুষজন। শারীরিকভাবে চমস্কি না থাকলেও, বাংলায় এসে পৌঁছেছিল তার গভীর উদ্বেগ। এই উদ্বেগটুকুই একজন মানুষের মানুষ হয়ে থাকা। একে রাজনৈতিক কুৎসায় রাঙিয়ে ছোটো করা অন্যায়।

    ....................................

    অনেকেই ভাবছেন মাত্র তিন বছর আগেই ‘পরিবর্তন’এর আকাঙ্খায় এক বিপুল ঢেউ এসে ধুয়ে মুছে দিয়ে গেল দীর্ঘ চৌত্রিশ বছরের একছত্র শাসন। মানুষের গভীর প্রত্যাশায় ভর করে, স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলনের মাধ্যমে মসনদে এল নতুন সরকার।

    কয়েকটা দিন যেতে না যেতেই এই তার রূপ! তবে এর পরে কী? এর পরেও আবার কীসের পরিবর্তন? আবার সিপিএম? নাকি বিজেপি?

    অর্থাৎ আজকের প্রতিবাদের অভিমুখ ঠিক কী?

    আমাদের সমস্যা হল, আমরা সমাজের সমস্ত বৈশিষ্ট্য-ব্যাখার জন্য রাজনীতির পথে ভাবতে চাই। সব উন্নয়নের প্রত্যাশা সঁপে দিই রাজনীতির কাছে। আর ব্যর্থতার দায়ভার চাপাই রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকদের ওপর।

    কিন্তু সমাজের সব গুণগত উন্নয়ন রাজনীতি-নির্ভর নয়। তাই এইবারের পরিবর্তনটিকে খুঁজতে গেলে শুধুই সিপিএমের বদলে তৃণমূল বা তৃণমূলের বদলে অন্য কেউ – এই দিকে তাকালে হবে না।

    আমরা আমাদের চারপাশের প্রকৃতি ও ব্যাপ্ত জগতের সঙ্গে জুড়ে আছি সত্যের মাধ্যমে। সত্যের যথার্থ অনুভবই আমাদের ন্যায়ের পথে চালিত করে। সেই অনুভবের নিরিখে যে প্রতিক্রিয়া, ঔচিত্যের সংজ্ঞা মেনে চলে সে-ই।

    চারপাশে ঘটে চলা নিরন্তর প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ গড়ে উঠা সামাজিক সত্যগুলিকে আমরা অনুভব করি বিভিন্ন মাধ্যমের দ্বারা। যেমন খুব দূরের কোনো অঞ্চলে কোনো অশান্তি ঘটলে তার খবর আমরা পাই লোকমুখে, মিডিয়ার মাধ্যমে। এখন সব মাধ্যম-বাহিত খবরেই কিছু না বিকৃতি ঢুকে পড়ে। আর আমরাও আমাদের ভেতর পারিবারিক ও সামাজিক প্রভাবে গেঁথে যাওয়া কিছু বিশ্বাস, কিছু মানসিকতার দ্বারা চালিত হয়ে আমাদের পছন্দমতো মাধ্যমদ্বারা বাহিত খবরটিকে গ্রহণ করি। এতে সত্যের যথার্থ অনুধাবন হয় না।

    সিপিএম সমর্থকদের বাড়িতে দিনের বেশির ভাগ সময় যে চ্যানেল চলে, একজন তৃণমূল সমর্থকের বাড়িতে হয়ত সে চ্যানেল খোলাই হয় না। পাড়ায় পাড়ায় এক অদ্ভুত পরিচয়ে চিহ্নিত করা হয় মানুষজনকে – ও তৃণমূল, ও সিপিএম, ও বিজেপি, ও কংগ্রেস। এবং ‘বিরোধী’ মত মানেই তা অবান্তর ও অভিসন্ধিমূলক।

    অর্থাৎ একধরণের অন্ধত্ব এসে ঘিরে নেয় আমাদের সত্য অনুধাবনের প্রক্রিয়াটিকে। আমরা একপক্ষের কথাই কেবল গ্রহণ করি, মেনে চলি। সেই মতো কাজ করি। এর থেকেই আসে প্রশ্নহীন আনুগত্য; যা থেকে জন্ম নেয় নিরঙ্কুশ দলতন্ত্র।

    যাদবপুরে পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে এই যে একের পর এক মিছিল, তাদের ভেতর রাজনৈতিক অভিসন্ধি কেন খুঁজতে চাইছেন টিএমসিপি তথা তৃণমূল সমর্থকেরা? কারণ তারা ভয় পাচ্ছেন যে এই প্রতিরোধ আসলে তাদের দলের বিরুদ্ধে। এবং স্বাভাবিকভাবেই তা নিশ্চয়ই সিপিএম-এর সমর্থনে।
    কেন তারা ভাবতে পারছেন না কোথাও ভুল হয়েছে তাদের সরকারের? কেন ভাবতে পারছেন না, অন্ধ আনুগত্য নয়, ইস্যু-ভিত্তিক সমর্থনের কথা?

    যে দল যে ইস্যুতে সঠিক, যুক্তিযুক্ত অবস্থান নেবে, সেই ইস্যুতে আমি সেই নির্দিষ্ট দলটিকে সমর্থন করব। সমর্থন করব ভালো কাজকে, সামগ্রিকভাবে দিনের পর দিনে চোখ বন্ধ করে কোনো একটি দলকে নয়।

    এই আন্দোলন শ্লীলতাহানীর ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের দাবী তুললে – সমর্থন। পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধতা করলে – সমর্থন। দোষীদের আড়াল করলে – প্রতিবাদ। গোপনে মাদক-ব্যবহার চালু রাখতে চাইলে – প্রতিবাদ।

    বর্তমান সরকার ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমে কন্যাসন্তান-বিষয়ক সচেতনতা গড়ে তুলতে চাইলে – সমর্থন।

    সারদা কেলেঙ্কারীর সঙ্গে যুক্ত কাউকে আড়াল করতে চাইলে – প্রতিবাদ।

    আমার মনে হয়, বর্তমান পরিস্থিতি এক সুদীর্ঘ অন্ধত্ব বিনাশের ইঙ্গিত দেয়, অন্তত আংশিক হলেও। যাদবপুরের ছবি ছড়িয়ে গেছে দুনিয়াজুড়ে। আর মধ্যে কোনো উদ্দেশপ্রবণ বিকৃতি নেই। প্রায় নিজের চোখেই সব দেখে যন্ত্রণায় রাগে জ্বলে উঠছেন সকলে।

    আন্দোলনকারীরা কেউ কিছু ভুলছেন না ২০০৫-এর ১১ই জুন কী করেছিল তৎকালীন বামপন্থী সরকার। কেউ ভুলছে না নন্দীগ্রাম। তাই এই মিছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএম-এর, একথা বলা অমূলক।

    সাম্প্রতিক বর্বরতার প্রতিবাদের সামিল হয়ে আসলে সংকীর্ণতা থেকে এক উদার প্রাঙ্গণে পা রাখছেন বহু মানুষ, বিশেষ করে ছাত্রযুবকেরা, যাদের মনোভঙ্গী ও সক্রিয়তাই একটি সমাজের দিক নির্দেশ করে। এতে করে পরের নির্বাচনে কারা জিতবে এই প্রশ্নের সমাধান হয় না। কিন্তু অশান্তি-উদ্ভূত আলোড়নের ফলে, উত্থিত নানান প্রশ্ন ও গণ-আলোচনার ফলে যে মন্থন, যে যুক্তি-বিনিময়, তার দ্বারা আমাদের সমাজ-মানসিকতা ও বোধের পরাধীনতা ঘুচে উন্নতি হয় অনেকটাই। এ-ই হল নতুন পরিবর্তন।

    এই আন্দোলন আসলে বার্তা দেয় – ভবিষ্যতের কোনো শাসক, কোনো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর যদি হিংস্র অত্যাচার নামিয়ে আনে, তার প্রতিবাদ দবে। দলমত-নির্বিশেষে গর্জে উঠবে ছাত্রদল। গর্জে উঠবে সমাজ।

    ২০শে সেপ্টেম্বরের মিছিলে আসা জন্য কোনো প্রলোভন ছিল না। ছিল না কোনো চোখ-রাঙানি। তবু বাংলার প্রত্যন্ত কোণ থেকে মানুষ এসে ভরিয়ে তুলেছে বাংলার রাজপথ। স্থানীয় রাজনৈতিক গুন্ডাদের শাসন মানেনি, বৃষ্টি মানেনি। কেউ কাজ কামাই করেছে। কেউ ক্লাস করেনি। অসুস্থ কোনো মানুষ একদিন পিছিয়ে দিয়েছে ডাক্তার দেখানো। কেন?

    কারণ তারা অনুভব করেছে ‘হয় সিপিএম নয় তৃণমূল নয় বিজেপি নয় কংগ্রেস’ – এই অতিসরলীকরণ আর নয়। এতে করে পিছিয়ে পড়তে হয়। মাথা উঁচু করে চলতে গেলে, স্বচ্ছ দৃষ্টিতে দেখতে হলে দলের বজ্রমুঠি থেকে বেরোতেই হবে।

    শাসক চায় প্রতিরোধহীন এক্তিয়ার। ২০০৫-এ তাই মধ্যরাত্রে পুলিশের গুন্ডামি দেখেছে যাদবপুর। ২০১৪-এও তাই।

    আসলে কোনো নির্দিষ্ট আন্দোলন নয়। শাসকের লক্ষ্য হচ্ছে ওই বিরোধী স্বর। ছাত্রসমাজের প্রতিস্পর্ধা।
    আর নিরঙ্কুশ আধিপত্য কায়েম করতে করতে, অন্ধ হতে হতে তারা খেয়াল করে না কোথায় পা রাখছে তারা।

    যাদবপুরের মাটি এখন আকীর্ণ অঙ্গার। কোনো অন্যায়কারীর একবিন্দু জমি নেই সেখানে।

    আসুন, যে যেখানে আছি সেখান থেকে বুক দিয়ে রক্ষা করি এই দুর্দম আন্দোলন, যা পুলিশের বুট ও লাঠির মুখ থেকে বিচ্ছুরিত করে নির্ভীক আলো, রোদবৃষ্টি হুমকি কিছুতে দমে না। ক্রমশ বেড়ে ওঠে। আর বেড়েই চলে ...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ৩৭১১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    জবাব - Saswata Banerjee
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • a | ***:*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:৪৯72475
  • মেয়েটির বাবা আজ স্টেটমেন্ট দিয়ে অনুরোধ করেছেন ছাত্রদের ক্লাস শুরু করবার। এর পর অন্তত #১ আর প্রযোজ্য রইল না, আশা করি?
  • কল্লোল | ***:*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৬:২৯72466
  • অসাধারণ।
    কোন কিছুই ভুলে যাওয়া ঠিক না। তাই নীচের পুরোনো খবরটা দেওয়া রইলো। একই ঘটনা ঘটেছিলো ১৯৭৮এ - এই যাদবপুরেই। ভুলছি না কিছুই।
    https://www.facebook.com/photo.php?fbid=859923900707523&set=a.486274408072476.117932.100000697646430&type=1&theater

    তোমাদের উপর ভরসা আছে। নতুন দিশা দেখাবে তোমরা এই কুৎসিত দলীয় রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে।

    শুভেচ্ছে রইলো। পাশে আছি সবসময়।
  • quark | ***:*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৬:৩৭72467
  • জিও! অন্যায়ের শেষ না দেখা পর্যন্ত এই মুঠি যেন আলগা না হয়!
  • de | ***:*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৬:৫৪72468
  • এই ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলির জন্য বড় গর্ব হয়! এগিয়ে যাও, যাদবপুর!
  • কল্লোল | ***:*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৭:২৩72469
  • এরা তো আমাদেরই সন্তান। ১৯৭৮এ যাদবপুরে ভিসি ঘেরাওয়ে লাঠি চলে। সেদিন বন্ধুদের পাশে রং-তুলি আর গান নিয়ে ছিলাম।
    আবার ২০০৫এ। সেদিনও ছিলাম ওদের পাশে।
    এখন কলকাতায় থাকি না - কিন্তু আছি তো। এই প্রৌঢ়ত্বেও জীবনের জন্য হাত পেতেছি সন্তানদের কাছে, একইভাবে গান গেয়ে।
    আমাদের সন্তানেরা ঝড়-জল মাথায় নিয়ে রাষ্ট্রের পা টলিয়ে দিয়েছে। সাব্বাশ।
    এর পর আর না বাঁচলেও আফশোস থাকবে না।
  • lcm | ***:*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৭:২৯72471
  • "... মাথা উঁচু করে চলতে গেলে, স্বচ্ছ দৃষ্টিতে দেখতে হলে দলের বজ্রমুঠি থেকে বেরোতেই হবে ..."
    সাবাস! বেরিয়ে এগিয়ে যাও - কোন দিকে যাচ্ছ একটূ খেয়াল রেখো। ফরোয়ার্ড মার্চ করতে লেফ্ট রাইট দুটোই লাগে।
  • pi | ***:*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৭:২৯72470
  • ranjan roy | ***:*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৭:৪৭72476
  • a,
    কেন প্রযোজ্য রইল না? দোষী ছেলেগুলোর নামে মেয়েকে নিয়ে বাবা যাদবপুর থানায় এফ আই আর করিয়েছেন। তা তো উইথ ড্র করছেন না।
  • এমেম | ***:*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১১:১১72472
  • খুব ভালো লেখা। পরিষ্কার স্বচ্ছ অবস্থান। তবু একটা প্রশ্ন, সকলের কাছেই 'নতুন যিনি আসবেন, তিনি নিশ্চয়ই যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করবেন' -- শাস্তির ব্যাবস্থা করা কি সম্ভব হয়? যদি দেখা যায় অভিযোগে সত্যতা ছিল, তাহলেও কি হস্টেল থেকে বার করে দেওয়া যায়, একজনকেও!
  • এমেম | ***:*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১১:১৬72473
  • প্রশ্নটা সকলের কাছেই।
  • pinaki | ***:*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১২:০৩72474
  • বেশ ভালো লাগলো লেখাটা। অন্ধ রাজনৈতিক পোলারাইজেশন থেকে বেরিয়ে মুক্ত চোখে দুনিয়া দেখার ক্ষেত্রে ছাত্ররা দিশা দেখাতে পারে বলে মনে হয়। খালি একটা কথা খেয়াল করিয়ে দিতে চাই। কেবল দল থাকলেই অন্ধতা থাকে, আর দল না থাকলে থাকে না - এটা একটু অতিসরলীকরণ। অন্ধতার থাবা দলের মধ্যে বাইরে সব জায়গায় সমানভাবে ক্রিয়াশীল। এজেন্ডা বিশেষে তাৎক্ষণিক ঐক্যমত্যের উপর দাঁড়িয়েও 'দল' তৈরী হয়। তারাও ইকুয়ালি ম্যানিপুলেট করতে সক্ষম, কাগজে-কলমে 'দল' হিসেবে এক্সিস্ট না করলেও।

    আসলে নিজ নিজ রাজনৈতিক বিশ্বাসের প্রতি কমিটমেন্ট থাকাটা তো অন্যায় নয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সেই কমিটমেন্ট মুক্ত চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে বাধা তৈরী করছে, পরমত অসহিষ্ণুতা তৈরী করছে। জন্ম নিচ্ছে যেনতেনপ্রকারেণ ম্যানিপুলেট করে নিজের বা নিজের গোষ্ঠীর মতকে প্রতিষ্ঠা করার প্রবণতা। ছাত্র আন্দোলনকে এগুলোর ঊর্দ্ধে ওঠার রাস্তা দেখাতে হবে। এই সময়ের রাজনীতি হোক নিজের কাছে সৎ থাকার, নিজের বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার রাজনীতি। আর পরমত সহিষ্ণুতার রাজনীতি।

    আর দুটো কথা এপ্রসঙ্গে বলার আছে।

    ১) এই আন্দোলনে আনন্দবাজার গ্রুপ এবং এসএফ আই এর ভূমিকা দেখে ঘরপোড়া গরুদের গা জ্বলা খুব অস্বাভাবিক নয়। একদম একইরকম সিচুয়েশনে এদের অতীতের ভূমিকা আমরা জানি। কাজেই অবিশ্বাস থাকবে। কিন্তু তারপরেও এই দুটি গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন রাখা উচিৎ বলে আমার মনে হয়। আবাপ গোষ্ঠীকে বিশ্বাস করার কোনো জায়গাই নেই। বরং প্রতি মুহুর্তে মনে রাখা এবং মনে রাখানোর চেষ্টা করা উচিৎ যে আবাপর প্রচার আসলে একটা স্লিপারি স্লোপ। যে যে পরিমাণে একটা অন্দোলন আবাপর প্রচার নির্ভর হয়ে উঠবে সেই সেই পরিমাণে তার অপমৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরী হবে। কিন্তু এসএফাঅই এর ক্ষেত্রে এই অবিশ্বাসের ঊর্দ্ধে ওঠার চেষ্টা করা উচিৎ বলে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়। আজকে যে ছাত্রটি এসএফ আই করে সে অন্ততঃ সরকারি জামা গায়ে পরে এসএফ আই করে না। কাজেই ২০০৫ এ তার আগের প্রজন্মের দাদাদিদিরা যে অন্যায় করেছে সেই দায়ভার আজকের এসএফ আই এর ছাত্রটির ঘাড়ে না চাপানো-ই ভালো। আমি বরং আশা রাখার পক্ষপাতী যে এই আন্দোলন তার ব্যপ্তি এবং উত্তাপে এই প্রজন্মের এসএফ আই এর ছাত্রছাত্রীদের একধরণের কাঙ্খিত উত্তরণ ঘটাবে।

    ২) ছাত্ররা এই সমাজেরই অংশ। কাজেই এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে তারা সমাজের পচা-গলা চিন্তাভাবনা, সুবিধাবাদিতা ইত্যাদি থেকে মুক্ত বিশুদ্ধ কিছু একটা। হ্যাঁ, বরাবর শিরদাঁড়া সোজা রেখে প্রতিবাদী ভূমিকা নেওয়া যাদবপুরের ছাত্রদের ক্ষেত্রেও এই কথা খাটে। এটা এর আগে র‌্যাগিং এর ঘটনার সময় বা আরও কিছু ক্ষেত্রে দেখতে পাওয়া গেছে। এবারেও ছাত্রীটির সুবিচারের লড়াইএ আরও আগে আরও সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসা উচিৎ ছিল ইউনিয়নের। রাজনীতির অন্য ধারা প্রতিষ্ঠার লড়াইটা একটাভাবে নিজের সাথেও। সেখানে সব ধরণের অপরচুনিজমের সথে লড়তে কোথাও যেন ফাঁকি না থেকে যায় - মাথায় রাখা উচিৎ সেইটাও।

    লড়াই চলুক। সঙ্গে আছি।
  • Amit | ***:*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৩72477
  • এ এক অসম লড়াই হয়ে যাচ্ছে। এক পাশে সভ্য, শিক্ষিত, অনুভূতিশীল ছেলে মেয়ে র দল, যারা সুস্থ ভাবে বড় হতে চায়, ভালো ক্যারিয়ার বানাতে চায়, সুস্থ সমাজে বেছে থাকতে চায়।অন্য দিকে অশিক্ষিত, অসভ্য গুন্ডা র দল যারা এক পাশবিক নেত্রী র কথায় ওঠে বসে, যারা তোলাবাজি ছাড়া জীবন-এ আর কিছু শেখেনি, এ লড়াই এর ফল যা হবার তাই হচ্ছে। কিছু ভদ্র ছেলে মেয়ের জীবন বরবাদ হচ্ছে। তোলাবাজ তৃনমুলি দের তো আর হারাবার কিছু নেই, এরা কুকুর এর মতই জন্মেছে, আর কুকুরের মতই এরা শেষ হবে। যে নেত্রী নিজে সারা জীবন সুধু শব-সাধনা ছাড়া কিছু জানেন না, মৃতদেহ নিয়েই তো ওনার যত গলাবাজি। জানি না এই বেঙ্গল nightmare এর শেষ কোথায়, তবে একটা কথা খুব ভালো বলে দিতে পারি astrologer না হলেও। মমতা র শেষ দিনগুলি বড় যন্ত্রনাদায়ক হবে। ওই মহিলা নিজে তো নরকেই যাবে, তাই সবাই কে বেচে থাকতেই নরক দেখাতে চায়।
  • a | ***:*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১০:১৭72478
  • রন্জনদা, এই লাইনটার জন্যেঃ "প্রথম অভিযোগের বিষয়ে ওই ছাত্রীর মত জানা গেছে কি না আমার জানা নেই। কিন্তু তার বাবার বক্তব্য শুনলাম। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন – যত দিন গেছে ততই অসহযোগী ও নিশ্চেষ্ট হয়ে উঠেছেন বর্তমান উপাচার্য। তার ওপর কোনো ভরসা নেই আর।" উনি এখন ভিসির উপরেই আস্থা রাখছেন, শুনে নিত পারেন ওনার বাইট।

    অমিতকেঃ মানুষের সমর্থন এখনো মমতার দিকেই, তাই শেষ ক্থা বলবার টাইম এখনো আসীনি
  • Amit | ***:*** | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১২:২৩72480
  • অ এর উত্তর এ জানাই ইটা ঠিক এ যে মানুষ এর so called সমর্থন এখনো মমতা র দিকেই আছে, যেমন বামেদের ছিল ৩৪ বছর। একবার এই অচলয়াতন কে নাড়া দিলে ধসে পড়তে বেসি সময় লাগবে না। একটু ধৈর্য ধরুন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন