এসব আলোচনা এখন হবার কোনো মানে নেই, কিন্তু সম্পাদক নিরুপায়। গুরুচণ্ডা৯তে প্রায় ১৪ বছর আগে প্রকাশিত একটি লেখা (https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=18135) নিয়ে সম্প্রতি কোনো কোনো গোষ্ঠী নেট মাধ্যমে প্রবল হইচই সৃষ্টি করেছেন। গুরুর সম্পাদনার সঙ্গে অতীতে বা বর্তমনে সংশ্লিষ্ট লোকজনের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে। কোনো কোনো মহলে 'ফেক নিউজ' ছড়ানোর জন্যও দায়ী করা হয়েছে। গুরুতেও বিষাণ বসু, এই লেখাটি নিয়েই একটি সমালোচনাও লিখেছেন (https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=20571)। ১৪ বছর আগের কোনো ঘটনার, এই মুহূর্তে, আলোচনার অগ্রাধিকার পাবার কথা নয়। কিন্তু যেহেতু অভিযোগগুলি উঠেছে, ফলে সম্পাদকের দিক থেকে সংক্ষেপে উত্তর দেওয়া প্রয়োজন।
প্রথমে কয়েকটি খুচরো কথা।
১। লেখাটি ১৪ বছর আগের। আজকের গুরুর লোকজনের কাছে তার জবাবদিহি চাওয়া অর্থহীন। লেখাটি প্রকাশ করার পিছনে গুরুর বর্তমান বা অতীত টিমের কারো যদি কোনো দায় থেকে থাকে, সেটি এই শর্মার। ফলে অন্য কারো কাছে কোনোরকম ব্যাখ্যা চাওয়ার কোনো মানেই নেই।
২। 'ফেক নিউজ' কথাটিও সম্পূর্ণ ভুল। যাঁরা কথাটি ছড়াচ্ছেন, তাঁদের গুরুর সাইট তো নয়ই, উদার পরিসর বা লিবারাল স্পেস সম্পর্কেই ধারণা খুব সীমিত। অথবা জেনেবুঝেই করছেন। কোনটা জানা নেই। তাই জানিয়ে রাখা যাক, গুরু কস্মিনকালেও কোনো সংবাদপত্র নয়, তেমন কোনো দাবিও নেই। ইদানিং কিছু প্রতিবেদন বেরোয় বটে, কিন্তু যে সময়ের কথা, তখন তাও বেরোত না। যা বেরোত, তা প্রবন্ধ। সংবাদ নয়, নিবন্ধ। নিউজ নয়, ভিউজ। উল্লেখ্য লেখাটিও কোনো নিউজ নয়। যেহেতু গুরু একটি একটি উদার পরিসর, তাই সমস্ত পক্ষের লেখা প্রকাশিত হয়। এই লেখাটির সমালোচনাও প্রকাশিত হয়েছে। অন্য দৃষ্টিভঙ্গিও প্রকাশিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে। তার কোনো লেখাই নিউজ নয়, এবং লেখকের দৃষ্টিভঙ্গিজাত। নানা দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে বিরোধ থাকবে, ফলে একটি লেখা অন্যটির বিরোধিতাও করতেই পারে। পারে শুধু নয়, উদার পরিসরে সেটাই কাম্য। গুরুর একটি লেখার কিয়দংশ শেয়ার করে যাঁরা ফেক এবং নিউজ, শব্দদুটি ছড়াচ্ছেন, তাঁরা উদার পরিসর ব্যাপারটিই বুঝছেন না, বা চাইছেন না। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ঢুকে আছে যে মৌলবাদ, গুরু সেদিনও তার বিরোধী ছিল এবং আজও।
এবার জরুরি প্রশ্নটি। যা ততটা খুচরো নয়। লেখাটি বেরিয়েছিল সম্পাদিত বিভাগে। সম্পাদকের ইচ্ছে না হলে বেরোত না। বিভিন্ন মতকে ঠিক কতটা স্থান দেওয়া যায় একটি উদার পরিসরে? এটি খুচরো কথা নয়, উদার পরিসর সম্পর্কিত যে চলমান বিতর্ক, তার অংশ। দার্শনিক আলোচনায় এখানে ঢোকা যাবেনা, শুধু ওই লেখার নির্দিষ্ট প্রেক্ষিতেই থাকা যাক। লেখা প্রকাশের সময়কাল ২০০৭। খুব সম্ভবত লেখা হয়েছিল ১৫ তারিখ রাতে। তার ঠিক একদিন আগে সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম নারকীয় একটি ঘটনা ঘটে গেছে। নন্দীগ্রামের গুলিচালনা। বাম জমানায় পুলিশের গুলিচালনা একেবারেই বিরল ঘটনা ছিলনা, কিন্তু এক্ষেত্রে সব সীমারেখাই পেরিয়ে যায়। খুব সংক্ষেপে বললে, নিরস্ত্র জমায়েতের উপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। সরকারি হিসেবে ১৪ জন মারা যান। তার কিছু অংশ পুলিশ যেদিক থেকে গুলি চালাচ্ছিল, সেদিক থেকে তোলা ঝাপসা ভিডিওয় ধরা আছে। তখনও হাতে হাতে সেলফোন আসেনি।
এরপর পুলিশ এলাকায় ঢোকে। সঙ্গে ঢোকে দলীয় কর্মীরা। তারপর সে এলাকায় কী ঘটে তার খবর আর পাওয়া যায়নি। কারণ গোটা এলাকাকে অবরুদ্ধ রেখে, সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতে না দিয়ে চলছিল পুলিশি তাণ্ডব। সংবাদমাধ্যমের হাতে-গোনা যে কজন এলাকায় ছিলেন, তাঁদের বর্ণনানুযায়ীই গুলি চালনার পর তাঁরা প্রাণ হাতে পালান। সাংবাদিক সুকুমার মিত্র প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে (https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=20569) লিখেছেন, "শ্রীকান্ত পাইকের কথা শোনার পর আর কোনও ঝুঁকি নেওয়ার কথা ভাবিনি। চোখে যা দেখেছি, কানে যা শুনেছি তা সম্বল করে প্রাণ নিয়ে পালানো... এরপর আর পাঁচ ঘন্টা ফোনে যোগাযোগ নেই। জ্যামার লাগানো হয়েছিল। যাতে ভিতরের খবর দ্রুত না বেরোতে পারে। নন্দীগ্রামে ওইদিনও গণহত্যা চালানোর সময় এলাকার চারধারে ছিল সিপিএম ও পুলিশের কঠোর নাকাবন্দী। কাউকে এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকী সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদেরও না।"
পরদিন সকালে আনন্দবাজারের হেডলাইন ছিল "রক্তে দখল মুক্তাঞ্চল"। সেদিন এর চেয়ে বেশি খবর তারাও জোগাড় করতে পারেনি। সেদিন, অর্থাৎ ১৫ তারিখ হাইকোর্ট পুলিশের কাজকে অসাংবিধানিক আখ্যা দেয়। জ্যোতি বসু প্রশ্ন করেন পিঠে গুলি কেন? মহিলাদের গুলি কেন? সবই পরের দিনের কাগজে বেরোয়। অর্থাৎ ১৬ তারিখ। সঙ্গে প্রথম পাতায় আরেকটি হেডলাইন ছিলঃ "হাড়হিম করা ত্রাসে নন্দীগ্রাম কার্যত বোবা"। "হাড়-হিম" শব্দবন্ধটি রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধির।
এর পরের দিন, অর্থাৎ ১৭ তারিখ বেরোয় বহু আলোচিত সৌমিত্র বসুর লেখাটি। কার্যত নন্দীগ্রাম তখনও অবরুদ্ধ। সন্ত্রাস, ক্ষয়ক্ষতি, মৃত্যুর পরিমাপ বাকি পৃথিবীর মানুষ জানেননা, জানতে দেওয়া হয়নি। লেখক নন্দীগ্রামে যাননি। যাবার কোনো উপায় ছিলনা। খবর জানারও। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান হুবহু উদ্ধৃত করেছেন মাত্র। অবশ্যই উদ্ধৃতি চিহ্নের ভিতরে। সে বয়ানে সুকুমার মিত্রর কথাও আছে, যিনি প্রাণ হাতে করে পালান নন্দীগ্রাম থেকে। বয়ানে মনে হয়না কোনো কিছু বিকৃত করা হয়েছে। কারণ এর কদিন পর সরকারি অবরোধ উঠে গেলে অমিতাভ গুপ্ত এবং বোলান গঙ্গোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম ঘুরে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে যে কথাবার্তা বলেছিলেন, তাতেও হুবহু একই চিত্র। এপ্রিলের ৫ তারিখ, আনন্দবাজারের এক উত্তর সম্পাদকীয়তে অমিতাভ গুপ্ত লেখেন "অশীতিপর বৃদ্ধা বলতে থাকেন 'পুলিশ প্রথমে গ্যাস মারল, তারপর গুলি করল। পুকুরে বিষ দিলে দেখেছেন কীভাবে পুঁটিমাছ ভেসে ওঠে? সেরকম ভাবে গাদাগাদি করে পড়ে ছিল মানুষগুলো। মেয়েদের টেনে নিল। গাছের সঙ্গে হাত বেঁধে কাপড় খুলে নিল। ইজ্জত লুটল। তারপর বুক কেটে নিল, মাংস খুবলে নিল, খুন করল।' শুনতে শুনতে শরীরের ভিতরটা গুলিয়ে ওঠে, কিন্তু তিনি বিবরণ দিয়েই চলেন... 'গুলি লেগে একটা বউ পড়ে গেল। কোলে একটা বাচ্চা ছিল, বুকের দুধ খাচ্ছিল। মা পড়ে যাওয়ায় বাচ্চাটাও মাটিতে ছিটকে পড়ল। সেই বাচ্চাটাকে তুলে নিয়ে দুপা ধরে টেনে আড়াআড়ি ছিঁড়ে ফেলল'। স্পষ্ট বুঝতে পারি, টেলিভিশনের পর্দায় ছবি দেখে আর খবরের কাগজের রিপোর্ট পড়ে এই নৃশংসতার অনেকটাই বুঝতে পারিনি এতদিন। বোঝা সম্ভব ছিলনা... উত্তর দেন বছর চল্লিশের কৃষক 'চোখ বন্ধ করলে শুধু রক্ত দেখতে পাই। ঘুমের মধ্যে দুহাত ছিটকে ওঠে, যেভাবে ওই বাচ্চাটাকে টেনে ছিঁড়ে দিয়েছিল পুলিশ, সেই ভাবে। আরও কতগুলো বাচ্চাকে যে পা দিয়ে চেপে, টেনে মারল... ঘুম হয়না...'"।
বোলান লেখেন মেয়েদের কথা। ধর্ষিতাদের বয়ান। হ্যান্ডিক্যাম দেখলেও কেঁপে উঠছেন কেউ। কারো যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে লাঠি। কারও রক্তস্রাব বন্ধ হয়নি তখনও। এইসব।
এ সবেরই জায়গা হয়েছিল, খবরে নয়, উত্তর সম্পাদকীয়তে। নিবন্ধ আকারে। কারণ, খবর জানার কোনো উপায় ছিলনা। একমাত্র ভরসা ছিল প্রত্যক্ষদর্শীরা। প্রশ্ন হল, কী বলবেন, এইসব বয়ানকে? বানানো? গোটা সংবাদমাধ্যম, পুরোটাই ফেক নিউজ তৈরির ফ্যাক্টরি? শুনলে সুমিত সরকার থেকে নোয়াম চমস্কি অবধি সকলে হেসে উঠবেন।
ফলে টেকনিকালি, এই সমস্ত নিবন্ধে, আনন্দবাজার হোক, বা গুরু, কোথাও ভুল নেই। খবর তো না, এগুলো উদ্ধৃতি। কিন্তু তার পরেও অবশ্যই একটি কথা আসে। যে কথা বিষাণ বসু লিখেছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলেন, তা মিথ্যা না হলেও, অবশ্যই নানা অতিরঞ্জন মিশে থাকে। এক্ষেত্রেও আন্দাজ করা যায় কিছু অতিরঞ্জন ছিল। টেকনিকালি উদ্ধৃতির মধ্যের বক্তব্যের সরাসরি কোনো দায় নেবার প্রয়োজন না থাকলেও (যিনি বলেছেন, সেটা তাঁর দায়), নৈতিক দায়িত্বের কিছুটা নিশ্চয়ই লেখক এবং সম্পাদকের উপর বর্তায়। সে দায়, অবশ্যই স্বীকার করা দরকার। করছিও। ভবিষ্যতে, আশা করি, যুদ্ধপরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না, হলে, অবশ্যই এই শিক্ষা কাজে লাগবে। কিন্তু একই সঙ্গে এটুকুও মাথায় রাখতে হবে, যে, পরিস্থিতিটি যুদ্ধক্ষেত্রেরই ছিল। ক্ষয়ক্ষতি, খুন-জখম, মানবিকতার বিরুদ্ধে অপরাধ, সব মিলিয়েই। যে সরকারি দল যুদ্ধক্ষেত্রের হত্যালীলার মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল নিজের রাজ্যের অধিবাসীদের, তারও সেই ভয়াবহ অপরাধ স্বীকার করার সময় হয়েছে। এই লেখাটির যাঁরা সমালোচনা করেছেন, তাঁরা এই প্রসঙ্গটি পুনরুত্থাপন করেছেন যখন, তখন আশা করি, এই বিষয়টিও মাথায় রাখবেন।
প্রসঙ্গটি যখন উঠেছেই, তখন আরও একটি কথা এখানে বলে রাখা জরুরি। এই যুদ্ধাপরাধের বিচার এখনও হয়নি। অন্যান্য অনেক কিছুর মতই (কাশীপুর-বরানগর, ৭২-৭৭ এর খুন-জখম, মরিচঝাঁপি) সেদিনের ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হয়নি। সেদিনের অপরাধী যাঁরা, তাঁদেরও কোনো তদন্ত বা বিচার আদৌ হবে কিনা সন্দেহ। কারণ এর মধ্যে যুযুধান দুই শিবিরের দুই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাই, লক্ষ্মণ শেঠ এবং শুভেন্দু অধিকারী, এক এক করে কেন্দ্রীয় সরকারি দলে যোগ দিয়ে দিয়েছেন, তারপর সমীকরণ আরও বদলেছে, বদলাচ্ছেও, পুলিশ আধিকারিকদের পদোন্নতি হয়েছে। চেপে দেওয়ার খেলা যে দিগন্তপ্রসারী, সে নিয়ে সন্দেহের বিশেষ কোনো অবকাশ নেই। তা সত্ত্বেও দাবিটি রেখে যেতে হবে। কারণ, সেটাই গণতন্ত্র।
উন্নয়ন নিয়ে আমার মত হলো আমি কেক খেতে পেলেও খুশী, আর রুটির সাথে মাংস থাকলেও খুশী। এছাড়া পরিবেশ টরিবেশ নিয়ে ভেবে আমার কাজ নেই :-)
ও জীবনেও পাওয়া যাবে না। কল্লোলদাকেও বহু বচ্ছর আগে সেম প্রশ্ন করে সেম উত্তর পেয়েছিলাম।
সরকার কিছু করলেও ঝামেলা, না করলেও ঝামেলা।
এই বাইরে আসা নিয়ে লেখা দেখে মাথা গরম করে লিখলাম। আমি অজস্র লোককে জানি যারা গিভেন a চান্স একবাক্যে কলকাতা ফিরে যেতে চায়, ইন ফ্যাক্ট বেরোতেই চায় না। অবশ্য তারা আঈটি কুলি, জমিও নাই, দিদিও নাই
কী মুশকিল, ফিরতে তো আমিও চাই। আবার ফিরলে বেরুতে চাইবো। কী আর করা, অস্থিরচিত্ত:)
আর সরকারকে তো গাল দিতেই হবে। যখন যে থাকে, গাল না দিলে সরকার কাজ করবে নাকি! নিয়মগিরিতে গাল দেবো আর সিঙ্গুরে দেবো না, সে কী করে হয়। আমাজনের রেন ফরেস্টে আগুন লাগলে তাকে মন্দ বলবো আর সুন্দরবন হাপিস হয়ে গেলে নিন্দে করবো না?
মাঝেমধ্যে ভালো কিছু করে ফেললে প্রশংসাও করতে হবে, তবে ভালো কাজ করাটাই তো সরকারের কাজ। আমাদের একবার রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছিল, উপরাষ্ট্রপতির কাজ কী। শান্তনু উপরাষ্ট্রপতির কাজ হল সংবিধানে উপরাষ্ট্রপতির জন্যে নির্দিষ্ট করা কাজগুলি ভালো ভাবে করা - এই কথাটা ইনিয়ে বিনিয়ে ফেনিয়ে ফেনিয়ে তিন পাতা জুড়ে লিখেছিল।
অবশ্য আমার তো আবার কলকাতা ফিরলে সেটা ফেরা হবে না, সেটাও যাওয়া হবে।
কী যে মুশকিল। এই বিষয়ে আমার একটা পদ্য আছে। সেসব তো আপনারা পড়েন না, করেন মিছে কোলাহল।
আহা সে আপনি অস্থিরচিত্ত হোন না। বলছি যে বেরোতে চায়না তার অপশন থাকা উচিত।
দেখুন নিয়মগিরির বিষয়ে আমি জানি না। কিন্তু সিঙ্গুর বিষয়ে তথা এরকম ভারি শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্র্র আমার বক্তব্য সিম্পুল। পরিবেশ রক্ষার্থে যথাসম্ভব কড়া গাইডলাইন দেওয়া হোক। সরকার তথা ইনভেস্টত কোম্পানিগুলোকে যথাসম্ভব বেশি ক্ষতিপূরণের চাপ দেওয়া হোক, এককালীন আর দীrghakaaleen উভয়ত। কিন্তু ফাইনালি কাজটা হোক।
যাগ্গে পদয়টাই ভেজুন পড়ে সার্থক hai
ভারি শিল্পে ঠিক কতটা কর্মসংস্থান হয়? চাষ আর এম এস এমই-র সঙ্গে তুলনা করলে? এই বিষয়ে দ্বিবিধ মত শুনি। কোনো ডেটা পাওয়া যাবে?
উইকিপিডিয়া দেখে বলছিঃ
ধরুন এই ন্যানোরই সানন্দ, গুজরাতের প্লান্ট। সব মিলিয়ে ১১০০ একর জমি। সেখানে সব মিলিয়ে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ১০,০০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে শুধুমাত্র প্রোডাকশানকে ঘিরে। এই সংখ্যার সত্যতা অবশ্যই জানা নেই।
তবে যেটা জানি সেটা হল ব্যাঙ্গালোরে ইনফোসিসের ক্যাম্পাস। সেখানে ৮০-৯০ একর জমির উপরে তিরিশ হাজার লোক কাজ করে প্রত্যক্ষ ভাবে। আপনি ভালই জানেন যে সফটওয়ার কোম্পানিগুলো কিভাবে জমির অপচয় করে, বিশেষ করে ইনফোসিস। ফলে একটা ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টের সঙ্গে তুলনা করা যেতেই পারে।
আবার ধরুন জার্মানিতে মারসিডিজের প্লান্ট। উইকি বলছে ৭৫০ একরের প্লান্টে ৩৭,০০০ লোক কাজ করেন। তবে এর মধ্যে ১০,০০০ লোক আরেন্ডিতে।
এটা ঠিকই যে আজকাল সব প্লান্টেরই একটা বড় অংশ অটোমেটেড। ফলে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান অপেক্ষাকৃত কম হয়। কিন্তু একটা বড় কারখানাকে ঘিরে প্রচুর অর্থনৈতীক কাজকর্ম চলে। ধরুন এই গাড়িগুলোকে বড় ট্রাকে করে বন্দরে নিয়ে যেতে হত। সেই ট্রাকগুলোর থাকার জায়্গা, সেগুলোর মেরামতির কাজ, পেট্রোল পাম্প প্রয়োজন হয়। আবার সেগুলোরও সাপ্লাইয়ার আছে। এই প্লান্ট এবং তাকে ঘিরে তৈরী হওয়া সব কাজকর্মে যেসব লোকজনরা রয়েছে, তাদের প্রয়োজনে থাকার জায়্গা, দোকানপাট তৈরী হয়।
আর যাদের জমি নেওয়া হচ্ছে, তাদের তো টাকাও দেওয়া হচ্ছে। ফলে এক্ষেত্রে ১-১ রিপ্লেসমেন্ট না ধরলেও চলবে। বাম সরকার বিঘাপ্রতি পোনে তিনলাখ মতন দিয়েছিল। বেশিরভাগ চাষীই নিয়ে নিয়েছিলেন। আমার মনে হয়েছে এই দামটা নিয়ে লড়াই করলে সবথেকে ভালো হত। গুজরাত সরকার অনেক বেশি দাম দিয়েছিল বলে দাবী করেছে। মোস্ট থিংস হ্যাভ আ প্রাইস।
একটা রিপোর্টে দেখলাম এখন সিঙ্গুরে জমির দাম একর প্রতি ১ কোটির উপরে। কেন এত দাম? কারণ সবাই বোধয় অপেক্ষা করছে যে আবার কেউ কারখানা করতে আসবে। তবে ঐদামে জমি কিনে কেউ কারখানা করবেনা এক যদিনা সরকার নিজের পকেট থেকে প্রচুর পয়সা দেয়।
দেখুন আমি রাজনীতি ছেড়ে একদম ইকনমিকালি ব্যাপারটা লিখলাম। আমার মতে সিঙ্গুর হলে দুটো ঘটনা ঘটতো। এক, আমরা ট্রায়াল বেসিসে দেখতে পারতাম যে ভারি শিল্পের দোষ গুন কি আছে। দুই, সব শিল্পপতিদের কাছে (যারা কিছুতেই এই রাজ্যে বিনিয়োগ করতে চায় না, অথচ মার্কেটটা খুব ভালই ব্যবহার করে নেয়) একটা সিগনাল যেত যে বেঙ্গল ইজ ওপেন ফর বিজনেস।
* ইকনমিকালি ঃ)) মানে ইকনমিক র্যাশনাল দিয়ে।
সিঙ্গুরে কৃষি জমির দাম এক কোটি পার একর -?? সিরিয়াসলি ??
কিছু গড়বড় আছে ১০০-% । বেআইনি ভাবে হয়তো কৃষি জমি কনভার্ট করে করে রেসিডেন্সিয়াল প্লট হিসেবে বড়ো প্রোমোটরদের বিক্রি করা হচ্ছে। ঘুষ দিলে সবই সম্ভব।
বড়ো শিল্প ছাড়া এম এস এমই সাস্টেনেবল করা খুব ডিফিকাল্ট। এক যদিনা দারুন ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক থাকে। তাইওয়ান , কোরিয়া সেসব করতে পারে। ছোট এম এস এমই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিস্ট্রিক্ট গুলো থেকে বড়ো হুন্ডাই বা স্যামসুং এর ফ্যাক্টরি গুলোতে পার্টস সাপ্লাই করে। কিছুটা একইভাবে নয়ডা-ওয়েস্টার্ন ইউপি ইন্ডাস্ট্রিয়াল মডেলটা গড়ে উঠেছে -যদিও অনেক ছোট স্কেলে। ওসব পবতে দিবাস্বপ্ন।
ভুল বলেছিলাম। ওগুলো পুরোনো রিপোর্ট। এখন বিঘায় ১.২ কোটি। মানে একরে সাড়ে তিন কোটি। কাঠা প্রতি দাম ৫-৬ লাখ। সাধারণ লোকেরা আর বাড়ি করতে পারবেনা ওখানে।
https://www.99acres.com/residential-land-plot-for-sale-in-singur-kolkata-others-1040-sq-yard-r6-spid-N37126131
https://www.99acres.com/residential-land-plot-for-sale-in-singur-kolkata-others-1936-sq-yard-spid-F52186124
বড়েস,
এই দামটা বোধহয় ন্যাশনাল হইওওয়ের ওপর জমি হওয়ায় জন্য। একটু ভেতরে হলে এত দাম হয়ত নয়। এক কোলিগ অন্ধ্রপ্রদেশে জমি কিনেছে - ও বলেছিল ন্যাশনাল হাইওয়ে থেকে ২-৩ কিলোমিটার ভিতরে কিনলে জমি নাকি প্রায় হাফ দামে পাওয়া যায়।
লসাগুদা, দুটো লিন্ক আছে। একটা যেটা বড় ১ বিঘা জমি সেটা দূর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে। আরেকটা ১৩ কাঠার জমি - এটা ভেতরেই মনে হচ্ছে, জমির সামনে ১২ ফুটের রাস্তা, দাম ৭৫ লাখ।
ওদিকে এখন যাখুশি দাম চাইছে। পারলে একটা কিনে রাখুন। কারখানা হলে কয়েক্গুনে বিক্রি করতে পারবেন। অবশ্যি যদি রক্ষা করতে পারেন, তবে।
@S, ধন্যবাদ। এককালে শুনেছিলাম সিংগুরের ১০০০ একর জমিতে চাষের কাজে ১০০০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়, সংখ্যাটা এক্সট্রাপোলেটেডও হতে পারে। কিন্তু, চাষ-ক্ষুদ্রশিল্প-বৃহৎ শিল্প-সার্ভিস এই চারটে ক্ষেত্রয়, একর প্রতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান কত হয় এবং কাদের হয়, এইটার অবজেক্টিভ অ্যানালিসিস দরকার।
সোমনাথবাবু এই পেপারটা পড়ে দেখতে পারেন, জাপান, তাইওয়ান আর সাউথ কোরিয়ায় এগ্রিকালচারাল থেকে ইনডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিতে ট্রান্সফর্মেশান নিয়ে লেখাঃ
The Transition from an Agricultural to an Industrial Economy in East Asia
https://sci-hub.st/10.1086/451559
এটা খুবই বড়ো সাবজেক্ট, বহু পেপার লেখা হয়েছে এ নিয়ে, আর আমার আইডিয়া খুবই কম। তবে এটুকু জানি যে ফার্ম থেকে ইন্ডাস্ট্রি ট্রান্সফর্মেশান হলে পার ক্যাপিটা প্রোডাকটিভিটি আর পার ক্যাপিটা ইনকাম বাড়ে। ওপরের পেপার থেকে দুয়েকটা লাইন কপি করলামঃ
Most important in raising farm family incomes (once increases in yields, multiple-cropping, and diversification into nonrice crops slowed down) was off-farm employment, that is, work in nearby industries and services. In Japan, off-farm incomes were one-half of on-farm incomes in the mid-1950s but rose to four times in 1980; in Taiwan, it was onehalf in the mid-1960s and rose to double in 1980.
I find that the rapid decline of the agricultural labor force through mechanization was a major source of TFP growth in Taiwan, as it was in Japan during the 1950s and 1960s and in the United States in the early decades of this century.
The industrial transition is completed most readily with high rates of growth of GNP and of factor productivity when agricultural development and labor-intensive industrialization are emphasized, since not only productivity within agriculture and industry is growing but also the wide productivity gap between the two sectors is narrowing, with rising capital/labor substitution and accelerating use of technology under conditions of full employment.
তবে এগুলো তো সিলেক্টিভ কপি হলো, তার চেয়ে পুরো পেপারটা পড়ে নিন।
আর চেন্নাইয়ের ঠিক বাইরে শ্রীপেরুমবুদুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এসটেট আছে, সেখানে হিউন্ডাই, বিএমডাব্লু, ফক্সকন, ক্যারিয়ার, ইত্যাদি বেশ কিছু কারখানা আছে। হিউন্ডাইএর কারখানার এই রিপোর্টটা পড়তে পারেন, তবে এটা বহু পুরনো, ২০১৪ সালেরঃ
এটায় বলছে কারখানা তখন 535 একর ছিলো, তবে পরে অনেক এক্সপ্যানশান হয়েছে। তখন কারখানায় চাকরি করতেন ৯৫০০ জন, এখন কতো হয়েছে জানিনা। বোধায় একই আছে। আর তখন ডাইরেক্ট ভেন্ডর ছিলো ১২০ টা কোম্পানি, সেটা এখন বেড়েছে। ভেন্ডর প্রতি ৫০ জন ধরলেও মোটামুটি আরও পাঁচ হাজার, মানে ৫০০ একরের জন্য ডাইরেক্ট এমপ্লয়মেন্ট ১৫০০০ জন মতো। এছাড়া ইনডায়রেক্ট এমপ্লয়মেন্ট আরও অনেক আছে। আর ইকোনমিক মাল্টিপ্লায়ার এফেক্ট তো আছেই।
ধন্যবাদ
এসব বলে আর লাভ কি? সে এক্টা সময় ছিল সবাই জানত গাড়ি কারখানা বানাতে কত একর জমি লাগে। এখন প্রশ্ন করলে শুনবেন ওসব তো আন্দোলনে মাতোয়ারা হয়ে বলে ফেলা গিয়েছিল, "Tekanikaali" কোন দোষ কোথাও হয়নি।
আরেকটা মজার কথা বলি। এই শ্রীপেরামবুদুরে যেহেতু অনেকগুলো ইনডাস্ট্রি, তাই এর আশেপাশে বেশ কিছু হাউসিং কমপ্লেক্সের ফ্ল্যাটভাড়া খুব বেশী। এই কমপ্লেক্সগুলোয় অনেকেই কর্পোরেট ক্লায়েন্টদের ফ্ল্যাট ভাড়া দেন। ৩ বেডরুম ফ্ল্যাট ফুল ফারনিশড হলে (মানে মডুলার কিচেন, খাট, টেবিল, আলমারি, এসি, টিভি) চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার পার মান্থ ভাড়া পাওয়া যায়। অনেক সময়েই এরকম ফ্ল্যাটে দুজন কোরিয়ান বা দুজন ফ্রেঞ্চ থাকেন। (শোনা কথা না)।
দোষ কারোরই কখনো হয়না। বরং যারা তখন তথাকথিত বিপ্লব করেছিলেন তাদের অনেকেই মমব্যানের দয়ায় ভালোই সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছেন। শুধু ম্যাংগো আদমী দের কয়েকটা জেনারেশন মিগ্রান্ট লেবার হয়ে ই কাটিয়েছে বা কাটাবে। যেই আসুক এ পাল্টানোর নয়।
যাগ্গে। লেট্ দা মহাকাল ডিসাইড। ইন দা লং রান অল আর ডেড এনিওয়ে।
সেই এমন সুন্দর আয়ের ব্যবস্থা করে দিলে আমিও কোনওদিনও কোথাও কোনও কারখানা হতে দেবোনা। ঃ)) ঐসব লোকজনের চাগরি, ভবিষ্যত প্রজন্মের চিন্তাভাবনা, অর্থনৈতীক উন্নতি এসব সেকেন্ডারি ব্যাপার স্যাপার।
জব তৈরী করতে হলে কি করতে হবে জানি না কিন্তু সরকার কিছু করলে সেটা যে মারাত্মক ভুল আর শয়তানি সেটা আমি জানি বিলক্ষণ ।..তাতে বাগড়া দিতেও জানি ।.এই হল মোদ্দা কথা
স্বীকার করি, এপারে পাহাড়ি আদিবাসী অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে দীর্ঘদিন তথ্য সাংবাদিকতা করতে গিয়ে অন্তত দু'টি গণহত্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে, দেখতে হয়েছে অসংখ্য জ্বালাও-পোড়াও, গণধর্ষণ, লুঠপাট, নিরাপত্তা বাহিনী-সেটেলারের পাকিপনা নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতাও নিছক কম নয়।
নন্দীগ্রাম অপারেশনের ঘটনা পড়তে পড়তে বার বার পাহাড়ের সেই রক্তাক্ত স্মৃতি ভেসে আসছে, মেশিনগানের গুলির মুখে হাজারো মানুষের আর্তনাদ!
তথ্যসূত্র ও বিশ্লেষণগুলো একটি লেখায় যুক্ত করায় অনেক ধন্যবাদ সৈকত দা।
লাল সেলাম, নন্দীগ্রাম!