এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • অন্তরীক্ষ

    অমলেন্দু বিশ্বাস
    গপ্পো | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৪৭৭ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • শিবশঙ্করের বাবা বিষুপদর একটা ছোট ওষুধের দোকান আছে । শ্যামবাজার মোড়ের খুব কাছে । বেশ ভালই চলে । সারারাত না হলেও বেশ অনেক রাত পর্যন্ত দোকানটা খোলা থাকে । তাই জরুরী প্রয়োজনের ওষুধ হলে এ অঞ্চলের লোকে এই দোকানেই আসে । বাবা ছাড়াও দোকানে আরও দুজন লোক কাজ করে । এ বাড়ীর সব ছেলেমেয়েদের নাম দেবদেবীর নামে । শিবশঙ্করের দাদার নাম কালীকিঙ্কর । দাদা যখন কলেজে পড়ছিল তখন দাদার চালচলন মতিগতি বাবার বা বাড়ীর অন্য কারোর খুব ভাল লাগছিল না । দাদার বন্ধু বান্ধবদের পাড়ায় খুব একটা সুনাম ছিল না । স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার অপ্রিয় ও নোংরা কাজগুলো এইসব যুবকরা করে দিত । এই সময় বাবার দোকানটা ভালই চলছিল , পাশের ঘরটা নিয়ে দোকানটা আরও বড় করলেন বাবা । দাদার অনিচ্ছা সত্ত্বেও দাদাকে কলেজ থেকে ছাড়িয়ে দোকানে বসিয়ে দিলেন বাবা । শিবশঙ্কররা দুই ভাই আর এক বোন , লক্ষ্মী । লক্ষ্মীর বিয়ে হয়ে গেছে । মায়ের কোমরের যন্ত্রণাটা ক্রমশঃ বাড়ছে – কাজ কর্ম করতে বেশ কষ্ট হয় । কালীকিঙ্করকে পুরোপুরি সংসারী করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন বিষুপদ ।
    এ বাড়ীর ত্রিসীমানায় সাহিত্য সংস্কৃতি গানবাজনা আসে না । যা হয় সেটা বাংলা বা হিন্দি সিরিয়াল আর জনপ্রিয় হিন্দি বা বাংলা ছবির গান । কখনো কোন আলোচনা হোলে তবে তার বিষয় হত কোন বিয়ে বাড়ীতে কে কত খরচ করল, কে কেমন সেজেছিল, সোনার দাম এখন কত, আত্মীয় স্বজন বন্ধু পাড়ার লোকের মুখরোচক হাঁড়ির খবর ইত্যাদি । শিবশঙ্কর এসব আলোচনায় যোগ দিত না, ওর ভাল লাগত না । ওর সময় কাটত বন্ধুদের সংগে খেলা করে আর গল্পের বই পড়ে । বিষুপদর ইচ্ছা শিবশঙ্কর ডাক্তারি পড়ে, তারপরে পাস কোরে ঐ দোকানের পাশে চেম্বার করে প্রাকটিস করে ।
    এমনই চলছিল । তারপর হঠাৎ একদিন জানলার ফাঁক দিয়ে এক নতুন হাওয়া এসে শিবশঙ্করের জগতটা উলটপালট করে দিল । কালীকিঙ্করের বিয়ে হোল । বাড়ীতে নতুন এক মানুষ এল –- অন্য পরিবার থেকে, অন্য আবহাওয়া থেকে । এর নাম কোন দেবীর নাম নয় । এর নাম অলকানন্দা , ডাক নাম অলি । বিয়ের এক মাস পরে অলি বাপের বাড়ী গেল । ফিরে যখন এলো তখন শিবশঙ্কর অবাক হয়ে দেখল বৌদির সংগে একটি হারমোনিয়াম ও একটি তানপুরা রয়েছে । আর সংগে আছে কিছু গানের ও অন্যান্য বই । এ বাড়ীতে অভিনব আগন্তুক । ক্রমশঃ বাড়ীতে দু একটা সাপ্তাহিক সাহিত্য পত্রিকাও আসতে শুরু করল । একদিন অলি তানপুরাটা বার করে দরজা বন্দ করে গান করছিল । শিবশঙ্কর পাশের ঘরে পড়ার ভান করে তন্ময় হয়ে গান শুনছিল । বাবা বিষ্ণুপদ দোকানে চলে গেলে অলি গান করার সুযোগ পেত । মা অন্নদা যেদিন শুনল বৌমা গান গাইছে সেদিন খুব অবাক হয়ে গিয়েছিল । মেয়ে দেখার দিন সে শুধু মেয়ে কি কি রান্না করতে জানে আর ঘরের কাজকর্ম করতে পারে কিনা তাই জিগ্যেস করেছিল । বিষ্ণুপদ জানতে চেয়েছিল কত ভরি সোনা আর কত টাকা নগদ দেবে । মেয়ে রান্না আর ঘরের কাজ জানলেই হল , গান জানা মেয়ে এনে তাদের কি হবে । আগে জানলে হয়ত না-ই করে দিত । যা হোক বিয়ে হোলও আর অলি এবাড়ীতে এলোও । অলি গান জানে বোলে এবাড়ীতে আর কেউ খুশী না হোলেও শিবশঙ্কর অবিশ্বাস্য রকমের খুশী হয়েছিল । গান শুনতে ওর ভাল লাগে, গান ওকে দুলিয়ে দেয় বসন্তের বাতাসের মত । শিবশঙ্কর অনেকক্ষণ একমনে অলির গান শুনল । তারপর আস্তে আস্তে ভেজানো দরজা ঠেলে ঘরে ঠুকে অলির পাশে গিয়ে বসল । গান শেষ হলে সপ্রতিভ ভাবে অলিকে বলল , “ বৌদি আমাকে গান শেখাবে ?”
    সুচরিতাদের বাড়ীটা অন্যরকমের । ওরা থাকে দক্ষিণ কলকাতায় , একডালিয়া রোডে । দুই বোন, এক ভাই । সুচরিতা সবার ছোট , তাই একটু বেশী আদরের। বড় বোন অনন্যার বিয়ে হয়ে গেছে । স্বামী এক আই এ এস অফিসার , বদলির চাকরি । কলকাতার জীবনে অনন্যা ছিল এক নামকরা নৃত্যশিল্পী , প্রচারপত্রে নাম থাকলে প্রেক্ষাগৃহ ভরে যেত । এখন নাচ ছেড়ে দিয়েছে, মা ও স্ত্রীর জীবন মন দিয়ে পালন করছে কোন এক ছোট শহরে । বড় ভাই অমিত কৃতী ছাত্র , অল্প বয়সেই অর্থনীতি জগতে নাম করেছে । দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক । সুচরিতা ইংরেজির স্নাতক । এখন স্নাতকোত্তর বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে । অনেক বন্ধুবান্ধব আছে । অনেক কিছু নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখে । পড়াশুনা ছাড়া ওর সময়ের সিংহভাগ নিয়ে আছে গান । দক্ষিণ কলকাতার এক জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষালয়ে গান শিখতে যায় নিয়মত । এখন আর নিয়মিত তালিম না নিলেও চলে , তবুও যেন কেমন নেশার মত হয়ে গেছে । গানের ওই পরিবেশটাই ওর ভাল লাগে । তাছাড়া অনেক পুরানো বন্ধু আছে যাদের মধ্যে অনেকেই এখন ওখানেই শিক্ষকতা করছে, তাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার লোভটাও সামলাতে পারে না । বাবা বিভূতিভুষণ এক প্রথম শ্রেণীর সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন, এখন অবসর নিয়ে পড়াশুনা লেখালিখির মধ্যে ডুবে আছেন । বাবার লেখা প্রবন্ধ ও কবিতার চাহিদা আছে । তাই পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকরা প্রায়ই বাবার সংগে দেখা করতে আসেন । ইদানীং চোখে কম দেখেন তবু মোটা চশমার কাঁচ নিয়ে যুদ্ধ করে যান । প্রায়ই প্রাক্তন ছাত্রদের আনাগোনা হয় বাড়ীতে, সাহিত্য কবিতা রাজনীতি দর্শন নিয়ে আলোচনা চক্র বসে । সেই আড্ডাতে সুচরিতাও যোগ দেয় মাঝে মাঝে ।
    শিবশঙ্কর বাড়ীর মধ্যে একেবারে আলাদা । বাড়ীতে ও কম কথা বলে কিন্তু বিষয় যদি মনমত হয় তবে ওর বক্তব্য রাখতে কার্পণ্য করে না । বই পড়তে ভালবাসে কিন্তু বাড়ীতে বই পড়ার বা কেনার রেওয়াজ নেই তাই স্থানীয় লাইব্রেরী থেকে বই এনে পড়ে । পড়ার অভ্যাসটা ও ছাড়তে পারেনি । আর এই পড়ার নেশাটাই , বিশেষ করে দুষ্প্রাপ্য ও দুর্লভ বই পড়ার দুর্দম্য ইচ্ছাই ওকে শেষপর্যন্ত আলিপুরে ন্যাশানাল লাইব্রেরীতে নিয়ে গিয়ে ফেলল ।
    সুচরিতা একটা নতুন মুখ দেখল ন্যাশানাল লাইব্রেরীর এই পডার ঘরটাতে । এই ঘরটাতে যারা পড়তে আসে তারা প্রায় নিয়মতই আসে তাই সব মুখই মোটামুটি চেনা । নতুন মুখ দেখলে নভোমন্ডলে নতুন নক্ষত্র আবিষ্কারের মত মনে হয় । বই থেকে মুখ তুলে শিবশঙ্করের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ঠিক চোখে চোখ মেলার আগেই বইএ নিবিষ্ট হয়ে গেল সুচরিতা ।
    দাদা অমিত ছিল সুচরিতার জীবনে এক বিরাট প্রভাব । অমিত কথায় কথায় কবিতার উপমা দিত । রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব, সুনীল, শক্তি ইত্যাদি কবিরা দাদার হাত ধরেই সুচরিতার জীবনে এসেছে । প্রত্যেক জন্মদিনে দাদার কাছ থেকে দুয়েকটা কবিতার বই আসত উপহার হিসেবে । তাছাড়া নতুন কিছু কবিতা ভাল লাগলে ছোট বোনকে আবৃত্তি করে শোনাত । কবিতা প্রথমে সুচরিতার একেবারেই ভাল লাগত না , পরে যেন ওকে নেশার মত রক্তে বাসা বেঁধে ছিল ।
    কবিতা কোন দিন শিবশঙ্করের মনোহরণ করেনি । উৎকৃষ্ট আবৃত্তি শুনলে ভাল লাগতো । কিন্তু ওই পর্যন্তই । পাঠ্যপুস্তকের বাইরে কোনোদিন কবিতা ( ও বলতো পদ্য ) পড়ার চেষ্টা করেনি।
    সুচরিতা শিবশঙ্করকে দেখে মনে মনে ভাবল এ হয়ত ক্ষণিকের পরিব্রাজক ---কৌতূহল বশত; এই পুণ্যস্থানটা দেখতে এসেছে । আর কখনো আসবে না । সুচরিতা নিজের কাজে মন দিল । সপ্তাহে একদিন বা দুদিন ও এখানে আসে । যে দিন আসে সেদিন বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে যায় । সঙ্গে কেউ না কেউ থাকে । মাঝে মাঝে বাগানে ঘুরে বেড়ায়, বাগানটা বেশ সুন্দর , সবুজ ঘাস আর বড় বড় গাছ । শব্দ ও জনগণের আনাগোনা কম , মোটামুটি নিরিবিলি ।
    পরেরদিন সুচরিতা এসে দেখল শিবশঙ্কর এসে বই পড়ছে সেই একই জায়গায় । তার পরের বার এসে তাই দেখল । তার পরেরবারও । সুচরিতা ভাবল তাহলে তো এ শুধু বেড়ানোর বিলাস নয় , পড়াশুনোর ইচ্ছাটা হয়তো গভীর । একটু নাড়া দিয়ে দেখবে নাকি !

    সুচরিতা নোটের খাতা থেকে এক টুকরো কাগজ ছিঁড়ে দুটো লাইন লিখল । তারপর কাগজটা মুড়ে চলে আসার আগে শিবশঙ্করের টেবিলে ফেলে বেরিয়ে গেল । ও চলে যাওয়ার পর শিবশঙ্কর কাগজটা তুলে নিয়ে পকেটে রাখল ।
    বাড়ী এসে কাগজের টুকরো খুলে হতভম্ব হয়ে গেল । মাথা মুণ্ড কিছু বুঝল না । মনে হল কবিতার দুটো লাইন , কিন্তু ও তো কবিতা পড়ে না । আর কটা কবিরই নাম জানে ও । শুধু রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল । পাড়ার দোকানে রেকর্ডে হেমন্তর ‘রানার’ গান শুনে সুকান্তর নাম জেনেছিল । কিন্তু কার কোন লেখাই তেমন করে পড়া হয় নি । কেমন যেন লজ্জা ও ভয় মেশানো এক অদ্ভুত অনুভূতি সারা শরীরকে আচ্ছন্ন করে ফেলল । আর বোধ হয় ওই লাইব্রেরীতে যাওয়া হবে না । তবু একবার চেষ্টা করা যাক । হঠাৎ মনে পড়ল বৌদি যখন বাপের বাড়ী থেকে ফিরল তখন তানপুরা ও হারমনিয়াম ছাড়াও সঙ্গে ছিল কয়েকটা বই । মনে হচ্ছে তার মধ্যে ছিল তিন খণ্ড গীতবিতান ও সঞ্চয়িতা । কপাল ভাল । সঞ্চয়িতা নিয়ে কিছুক্ষণ কসরত করার পর শিবশঙ্কর খুঁজে পেল অভীপ্স অক্ষরগুলো । সুচরিতার কাগজের টুকরোটা বার করে আবার পড়ল ---
    লাজুক ছায়া বনের তলে
    আলোরে ভালবাসে ।
    ………………………
    …………………………।।
    তারপর যে লাইন দুটোতে ডট ডট দেওয়া ছিল সেখানে লিখল –
    পাতা সে কথা ফুলেরে বলে
    ফুল তা শুনে হাসে ।।

    আঃ কি আনন্দ ! ঘাড় থেকে যেন সাতমনি বোঝাটা নেমে গেল । মনে হল এখনই গিয়ে বৌদিকে একটা ‘থ্যাঙ্ক ইউ ‘ দিয়ে আসে ।
    পরের দিন লাইব্রেরীতে গিয়ে প্রায় বিজয়ীর ভঙ্গিতে সুচরিতার টেবিলে আলতো ভাবে রেখে দিল কাগজটা । সুচরিতা কাগজটা খুলে পড়ল , তাপর একটু মুচকি হেসে রেখে দিল । দিনের শেষে কাজ শেষ করে বাড়ী ফেরার আগে এক টুকরো কাগজ নিয়ে লিখল ---- পূজা / ৫৩১ । ঠিক আগের মত শিবশঙ্কররের টেবিলের ওপর ফেলে খুব তাড়াতাড়ি দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল ।
    বাড়ী ফিরে শিবশঙ্কর গীতবিতান নিয়ে বসল । পূজার ৫৩১ সংখ্যক গানটি বার করে পড়ল ---
    তোমায় চেয়ে আছি বসে পথের ধারে সুন্দর হে ।
    জমল ধূলা প্রাণের বীণার তারে তারে সুন্দর হে ।।

    শিবশঙ্কর অভিভূত হয়ে গেল । বুঝতে পারছে জীবনের এতকাল অজানা একটা দিক আস্তে আস্তে উন্মোচিত হচ্ছে । অতি সূক্ষ নরম কোমল দুই বোধ ক্রমশঃ ওকে অধিকার করছে । দুটি অচেনা জগতের সঙ্গে ও একটু একটু করে পরিচিত হচ্ছে । এক কবিতার জগত , অন্যটা নারীর জগত । কবিতার জগত একটা অদ্ভুত জগত --- শব্দ ছন্দ সব মিলে শরীরে মনে রোমাঞ্চ আনে, ধমনীতে আলোড়ন তোলে । কোনো শিহরিত মুহূর্তে অপার শান্তি আনে, অজস্র আলোর রোশনাই জ্বলে মনের অন্ধকারে । আর নারীর জগত, এ যেন এক ভিন্ন রকমের নারীর জগত । এতকাল ও যাদের দেখেছে তারা বর্ষীয়সী মা-পিসী-মাসী বা বাড়ীতে যে রান্না করে, কাজ করে বা উজ্জ্বল শাড়ীপরা ঝলমলে গয়না গায়ে উৎসবে অথবা বিয়ে বাড়ীতে সোচ্চারে আলাপরতা মহিলা । বৌদি বোধহয় একটু আলাদা রকমের --- গান গায় আর সঞ্চয়িতা থেকে কবিতা পড়ে । সদ্য যৌবনা রুচিশীলা কোন মেয়ের সংগে বা সেই অর্থে কোন যুবতীর সংগেই ওর আলাপ পরিচয় নেই । আর বই নিয়ে সময় কাটায় ও কবিতা ভালবাসে এমন কোন মেয়ের সঙ্গে তো নেই-ই । আসল কথা শিবশঙ্কর ওই নারীজাতিটাকে এড়িয়ে চলে , ওরাও শিবশঙ্করকে ।
    সুচরিতার নির্দেশিত গানের লাইন দুটো পড়ে শিবশঙ্কর গীতবিতানটা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে রইল । আচ্ছন্ন ভাবটা কেটে গেলে একটা কাগজ টেনে লিখল – পূজা / ২৭২ ।
    সেদিন সুচরিতা বিছানায় শুয়ে শিবশঙ্করের কাগজের টুকরোটা গীতবিতানের সেই পাতায় রাখল, পূজা/২৭২---
    অনেক দিনের শূন্যতা মোর ভরতে হবে
    মৌন বীণার তন্ত্র আমার জাগাও সুধা রসে ।

    এমনি করে কিছুদিন চলল । সুচরিতা একটা করে গীতবিতানের গানের সূত্র অথবা সঞ্চয়িতার কবিতার কোন পংক্তি তুলে দিত । শিবশঙ্করও প্রত্যুত্তরে তার পালটা দিত । ওরা কখনো কথা বলেনি । চোখে চোখ রাখেনি কোনোদিন । যা কথা মনে মনে আর কবিতা ও গানের আনুসন্ধানে ।

    এমনি চলছিল । এ এক অদ্ভুত খেলা – সব জাগর মুহূর্তগুলো আচ্ছন্ন করে রাখে । কিন্তু হঠাত সুচরিতা খেলার নিয়ম পালটে দিল । এবার কোন নির্দেশন নয় --- এ অন্য ধরণের কবিতা ।

    আলো-অন্ধকারে যাই -- মাথার ভিতরে
    স্বপ্ন নয় , কোন এক বোধ কাজ করে ;
    স্বপ্ন নয় -- শান্তি নয় --ভালোবাসা নয় ,
    হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয় ;

    কাগজটা নিয়ে শিবশঙ্কর অনেকক্ষণ বসে থাকল । বেশ কয়েকবার পড়ল । শব্দগুলো কেমন যেন পাকিয়ে মনটাকে মাকড়সার জালের মত জড়িয়ে ধরল । কিছুতেই বার হতে পারছে না । কোন এক ‘বোধ জন্ম লয়’ । শিবশঙ্করের কেমন যেন অসহায় লাগছে । বৌদির সঞ্চয়িতা গীতবিতান তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেছে – কোথাও নেই । কোথাও পেল না । এ কি নিদারুণ সমস্যায় পড়ল সে । কেমন যেন এক অশরীরী আচ্ছন্নতা ভর করেছে ওকে । কোন কাজে মন দিতে পারছে না । দুসপ্তাহ লাইব্রেরীতে যেতে পারেনি সে । কয়েকদিন তাকে না দেখে সুচরিতাও খুব অস্বস্তি বোধ করছিল । বেশ কিছুকাল ধরে টেবিলের ওই কোনটাতে শিবশঙ্করকে দেখে দেখে কেমন একটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল --- না দেখলে ফাঁকা ফাঁকা লাগে --- শুধু টেবিলের ওই কোনটাই নয়, মনের একটা কোনও ।

    শিবশঙ্কর যেদিন এলো তাকে দেখে সুচরিতা চমকে উঠলো । মনে হল একটা উদ্ভ্রান্তি তাকে যেন গ্রাস করেছে, আলুথালু ভাব, কোন এক পাখি যেন প্রচণ্ড ঝড়ের স্পর্শ নিয়ে নীড়ে ফিরল । সুচরিতা ভাবল গিয়ে জিগ্যেস করে কি হয়েছে । কিন্তু যার সংগে কখনো কথা বলেনি তার কাছে গিয়ে কি এমন কথা বলা যায় ! একটু সঙ্কোচ হল । সুচরিতা ভাবল নিশ্চয় কোনো কারণ ওকে এমন কাতর করে রেখেছে । আবার ভাবল , যদিও এটা একেবারেই সম্ভব নয়, সেই কবিতার চার লাইন খুঁজে না পেয়ে ও এমন বিপর্যস্ত বোধ করছে না তো ! না তা হতে পারে না । তা কি করে হবে ? তবুও …… একটা কাগজ বার করে খস খস করে লিখল -----
    ধূসর পাণ্ডলিপি --– জীবনানন্দ দাশ ।
    শিবশঙ্করের কাছে কাগজটা পৌঁছুলে সুচরিতা দেখল শিবশঙ্কর যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল । অসীম অন্ধকারের মধ্যে যেন একটুকরো আলো পেলো । বাড়ী ফেরার পথে শিবশঙ্কর কলেজ স্ট্রীট পাড়ায় নামলো । বইয়ের দোকানে গিয়ে জিগ্যেস করল , “ আমাকে কিছু আধুনিক কবিতার বই দেখান । অনেক বই কিনল ---- ধূসর পাণ্ডলিপি , শীতের প্রার্থনা ঃ বসন্তের উত্তর, যে-আঁধার আলোর অধিক, স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যত, সংবর্ত ও আরো কত । কিনল আধুনিক কবিদের শ্রেষ্ঠ কবিতা । দুমাস ধরে সুধা সাগরে ডুবে থাকল । এই নতুন জগতে আগে ওর যতায়াত ছিল না । পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে । এ তো উপন্যাস নয় , সুতরাং খুব আস্তে আস্তে পদচারণ করতে হচ্ছে । কিছু বুঝছে কিছু বুঝছে না --- কিছু ভালো লাগছে কিছু ভালো লাগছে না । কিন্তু যতটুকু ভাল লাগছে তাতে আনন্দে মনটা ভরপুর হয়ে উঠছে । ধন্যবাদ তোমাকে নারী , যে নামই হোক তোমার।
    এমনই আছন্নতার মধ্যে দিন কাটছিল । দুজন দুজনকে দেখে কিন্তু কথা হয় না । হঠাত একদিন সুচরিতা শিবশঙ্করের পাশের জায়গায় এসে বসলো । শিবশঙ্কর একটু অবাক হল – একটু শিহরিত হল । সুচরিতা ফিস ফিস করে বলল , “ কথা তো আমাদের অনেকদিনই হচ্ছে , মনে মনে । তাই আর আপনি বলে সুরু করছি না । চল , বাইরে গিয়ে বসি ।
    হ্যাঁ বা না বলার মত কোনো শক্তি নেই শিবশঙ্করের । মন্ত্র মুগ্ধর মত ওর সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে এল । একটা বড় গাছের নীচে ছায়াতে বসলো ।
    --আমার নাম সুচরিতা । তোমার ?
    --আমি শিবশঙ্কর ।
    অনেকক্ষণ বসে থাকল দুজন পাশাপাশি , কোন কথা নেই । শিবশঙ্কর স্বভাবে অন্তর্মুখী । আসলে সবকথা গুছিয়ে সবসময় বলতে পারে না। সুচরিতা সপ্রতিভ , সংযত, মার্জিত –পরিশীলিত্‌ , কথাবার্তার মধ্যে একটা আত্মপ্রত্যয় আছে । সব মিলিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে চরিত্রের দৃঢ়তা প্রকাশ পায় । অথচ মুখে একটা সহজ সরল ভাব আছে । নিবিষ্ট মনে ওর কথা শোনা যায় অনেকক্ষণ ধরে ।

    বেশ কিছুক্ষণ দুজনে চুপ করে থাকার পর সুচরিতাই নীরবতা ভাঙল । নিজের মা-বাবা-দিদি-দাদার কথা বলল , কলেজের গল্প করল । শিবশঙ্করের কাছ থেকে জানলো ওর বাড়ীর কথা --- বাবা-মা-দাদা-বৌদির পরিচয় । বিকেল যখন শেষ হয়ে এসেছে তখন উঠে পড়ল দুজনে । যাওয়ার আগে সুচরিতা বলল --- পরশুদিন ছটায় একাডেমিতে এসো --- একটা ভাল নাটক হচ্ছে ।
    পরের অনেকগুলো মাস ওদের এমনি করে কাটল । কোনোদিন কলামন্দিরে গান, নন্দনে সিনেমা, সিমার গ্যালারীতে ছবির প্রদর্শনী অথবা গড়ের মাঠে বেড়ানো বা কলেজ স্রীটের ফুটপাতে বই কেনা । ওরা বেশ অন্তরঙ্গ হয়ে উঠল – বেশ ঘনিস্ট । মনে হল ওরা দুজনে দুজনকে বেশ ভালভাবেই চেনে জানে । ওদের এই জানাশোনা যেন বহুকালের ।

    অজিত-ভোম্বল-শোভন-দীপা-সুধীন-সুষমা ও আর কত শিবশঙ্করের বন্ধুদের সংগে সুচরিতা বেশ সহজভাবে মেলামেশা করত । সাহিত্য বা রাজনীতি, গান বা নাটক ফিল্ম --- সব আলোচনাতেই ও যোগ দিত । শুধু শ্রোতা ছিল না সুচরিতা --- সব বিষয়েই ওর একটা মতামত থাকত আর সেটা স্পস্টভাবে জানাতে কখনো দ্বিধা করত না । বেশ বোঝা যেত ওর মতামতের পিছনে আছে কিছু চিন্তা আর কিছু পড়াশুনাও । সুচরিতার ওপর শিবশঙ্করের একটা দুর্বলতার ভাব ক্রমশঃ দানা বাঁধছিল । দুজনের প্রতি দুজনের আকর্ষণ একটা অন্য স্তরে গিয়ে ঠাঁই নিল । দুজনের কাছেই এই অনুভূতি নতুন ---- এর স্বাদ ওরা আগে কখনো পায় নি ।

    কয়েক সপ্তাহ হল সুচরিতার কোন দেখা নেই । বন্ধুদের আড্ডাতেও আসে না , লাইব্রেরীতেও আসে না । শিবশঙ্কর নিয়মিত লাইব্রেরীতে যায়, কিন্তু পড়ায় মন বসে না । সুচরিতার চেয়ারটা শূন্য --- মনে হল সারা লাইব্রেরীটাই শূন্যতায় ভরা । একদিন সুচরিতা এল, দেখে মনে হল – খুব ক্লান্ত , মলিন, … যেন কোন অসুখ থেকে উঠেছে অথবা অনেক রাত ঘুম হয় নি । পোষাকে সেই বিন্যাস নেই । কাছে গিয়ে শিবশঙ্কর জিগ্যেস করল ঃ

    --- কি ! তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো ? কি হয়েছে তোমার ?
    --- না, আমার কিছু হয় নি । ঠিকই আছি আমি । চল একটু বাইরে গিয়ে বসি ।

    সুচরিতা শিবশঙ্করের হাতটা ধরে অনেকক্ষণ বসে রইল । কথা প্রায় বললই না। চলে যাওয়ার আগে শিবশঙ্করের হাতে একটা খাম গুঁজে দিল । বাড়ীতে গিয়ে পোড়ো । শিবশঙ্কর দেখল ওর চোখদুটো যেন ভিজে ভিজে ।

    দারুন কৌতূহল হচ্ছে্‌ তবুও খামটা খুলল না । বাড়ী এসে হাত্মুখ ধুয়ে রাতের খাওয়াটা সেরে নিল । নিজের ঘরে ঢুকে পড়ার টেবিলের আলোটা জ্বালল । খামটা খুব হাল্কা , মনে হচ্ছে একটা পাতার বেশী কিছু নেই । একটা পেন্সিল নিয়ে খামটার ভিতরে ঢুকাল , খামটা ছিঁড়ল । ছোট চিঠি । যা পড়ল তা শিবশঙ্করের বিশ্বাস হল না । মাথায় ঢুকল না কিছু । একবার , দুবার বার বার পড়ল । আস্তে আস্তে পরিস্কার হচ্ছে মনে হল । মাথার ভিতরটা যেন একেবারে শূন্য । কোন বোধ নেই, কোন চিন্তা নেই । ঠিক যে কিছু নেই তাও নয়, আবার যে কিছু আছে তাও নয় --- থাকা আর না থাকার মাঝখানে এক অজাগতিক পরিসর । সুচরিতা লিখেছে ----

    শিব,
    সেদিন তোমার ইঙ্গিতটা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি । আমার ভয় করছে, ভীষণ ভয় করছে । স্বপ্ন যদি ভেঙ্গে যায় তবে হয়ত আমি বাঁচব কিন্তু আমার স্বপ্নের যদি মৃত্যু হয় তবে আমারো মরণ হবে । তাই ভয়টা আমার বাস্তব হয়ে থাক । স্বপ্নটা আমার বেঁচে থাক । আমাদের যৌথ জীবনের বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার সাহস নেই আমার । তাই এই আমাদের শেষ দেখা । জানি কোন এক দুঃসহ যন্ত্রণা আমাকে কাতর করে রাখবে, হয়তো বা তোমাকেও । তবু নিশ্চিত জানি সময়ের যাদুকরী কারসাজীতে ম্লান হয়ে যাবে স্মৃতি । মনে পড়ে একদিন দুজনে মিলে সুধীন দত্তের ‘অর্কেস্ট্রা’ পড়ছিলাম । ‘ভবিতব্য’ পড়ে দুজনেই একসঙ্গে মৃদু হেসেছিলাম ।

    তোমারে ভুলিব আমি , তুমি মোরে ভুলিবে নিশ্চয় ;
    মদনের চিতানলে অনঙ্গের হবে আবির্ভাব ;
    হরিবে অসংখ্য অলি যৌবনের অমৃতসঞ্চয় ;
    সর্বস্বান্ত মর্মে শুধু প’ড়ে রবে অবেদ্য অভাব ।।

    আমার ভয় আর এক দৈনন্দিনের ছবি আঁকে । বুদ্ধদেব বসুর মৈত্রেয়ীর ভাষায় বলি ---

    ‘ সন্তানের মাতা তব, নিপুনা গৃহিণী ।
    ... প্রিয়াকে পেতে না আর ।
    প্রেমের সমাধি হ’তো অগোচরে মোদের দোঁহার ,
    হাজার প্রয়োজনের পুঞ্জিত জঞ্জালে
    হয়ে পথ-হারা
    লুপ্ত হ’তো ক্ষীণ প্রেম-ধারা ।‘

    জানি, এ ভয় তোমার কাছে হাস্যকর । তাই মুখোমুখি এ কথা বলার সাহস পেলাম না ।

    সুচি
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৪৭৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Bishakha Deb | 24.19.***.*** | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০২:৫০540097
  • বেশ ভালো লাগলো , 
  • নির্মলেন্দু | 122.16.***.*** | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:০৮540108
  • ছন্দময় লেখন আমাকে এক অজানা অনুভূতিতে লিপ্ত করল।
  • নমিতা আচার্য! | 2a00:23c4:f921:b000:303e:a31:fcb:***:*** | ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০২:১২540111
  • গল্পটি আমাকে নিয়ে গেলো আমার সেই ফেলে  আসা কোন অতীত দিনের কলকাতার বুকে ন্যাসালাল লাইব্রেরির মনোনিকেতনে । খুবই ভালো লাগলো । 
    কবিতার পংক্তি গুলির উদ্ধৃতি অপুর্ব ।
  • Sujit Bhattacharjee | 2a00:23c5:2b86:9101:90fa:c97c:feeb:***:*** | ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৪:৫০540214
  • Sorry I do not have Bengali font, hence the review is in English.
      "Antoriksha", a very well written storey. expressed in a simple but lucid and flowing language.The storey  touches upon the well knoen theme of the natural differences in man and woman in their emotinal response to romantic relationship  highlighted in "Shesher Kovita", yet the way the storey was narrated and paced by the authot, it kept me engaged and interested to the end.
    Amalendu is, no doubt, a good sroreyteller.
    Sujit Bhattacharjee   
  • Diptimoy Roy | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৪১540295
  • অন্তরীক্ষ গল্পটি bhalo লাগলো ।বলার  কথা নোতুন  নয় , বলাটা ভালো .
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন