এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  ভ্রমণ   যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে

  • বিন্দু বিন্দু সিন্ধু 

    . লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৯ জুন ২০২৫ | ৩৯ বার পঠিত
  • এখানে থাকবে সাম্প্রতিক তিনটে দেশের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • . | ০৯ জুন ২০২৫ ০৬:০৩745003
  • ক্রমে পৃথিবীর মানচিত্রে যেমন নতুন নতুন করে দেশের সংখ‍্যা বেড়ে চলেছে, তেমনি কমে যাচ্ছে গন্তব্যের সংখ্যা। কোথাও যুদ্ধ চলছে তো কোথাও যেতে গেলে স‍্যাংশানের দোহাই দিয়ে টিকিট কেনার পথ বন্ধ। যদিও বা ফন্দি ফিকির করে টিকিট কাটব ঘুরপথে, তাও হোটেল বুকিং করে উঠতে পারব না, ক্রেডিট কার্ড কাজ করবে না সেসব দেশে। অথচ কত কত সাধ ছিল সেসব জায়গাগুলোতে যাবার। কিন্তু ভূরাজনীতি এমন খেলা খেলছে যে ক্রমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক দরজা।
    কদিন আগেই এমন একটা দেশে বেড়াতে যাবার মতলব ফাঁদছিলাম যাদের সঙ্গে স‍্যাংশনের অদৃশ্য কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে আমার দেশের। ভিসা লাগে না যেতে, কিন্তু যেই তুমি ফ্লাইট বুক করতে যাবে, অমনি বুকিং সাইটগুলো তোমাকে অদ্ভুত একটা মেসেজ দেখাবে — আপনার গন্তব্যের তারিখ অথবা গন্তব্য পরিবর্তন করুন।
    তারিখ যতই বদলাও না কেন ঐ একই মেসেজ আসতে থাকবে সর্বদা। এর নাম স‍্যাংশন। অথচ অন‍্য কোনও দেশ থেকে ঐ টিকিট যে কোনো তারিখে পাওয়া যাবে। নয়ত অন‍্য পথও আছে, সীমান্তের কাছে কোনও দেশে পৌঁছে সেখান থেকে বাকিটুকু বর্ডার চেকপোস্টে গাড়িতে বা ট্রেনে করে পৌঁছে ইমিগ্রেশনের ছাপ পাসপোর্টে লাগিয়ে সেই দেশে বেড়াতে যাওয়া। তবে সবটুকুই অনেক ঝামেলার এবং অনিশ্চয়তার ব‍্যাপার। অবিশ‍্যি আমরা দুজনে যেমন গুপীবাঘার মতো নিত‍্য নতুন দেশে দেশে রোমহর্ষক সব ঘটনার সম্মুখীন হতে ভালোবাসি, আমাদের কাছে এমন করে হুটহাট স‍্যাংশন করা দেশে ঢুকে পড়া হবে এক অন‍্য অভিজ্ঞতা। পান্থশালার বুকিং থাকবে না, ঠিকানাও জানা থাকবে না, সবটাই চান্স, কতকটা ঝুঁকি, তবুও আমরা ফের বেরিয়ে পড়বো, ছুটি পেলাম কি পেলাম না সেসবের ধার না ধারি না। ভেবেছিলাম আরেক বন্ধু দম্পতিকে সঙ্গে নেব, বেশ চারজনের একটা গ্রুপ মতো হলে হৈচৈ করে অনেক মজা হবে। কিন্তু সেই বন্ধু এরকম বেআক্কেলে ভ্রমণ প্ল‍্যান শুনে আঁতকে উঠলো। খামোখা স‍্যাংশন হওয়া দেশে কেন বাপু? দুনিয়ায় আর কোনো ঠিকঠাক দেশ নেই বুঝি? যদি ওদেশে গেলে পাসপোর্টের ছাপের জন‍্য পরে কোনও সমস‍্যা হয়? 
    এতশত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বা না দেওয়ায় কোনও তফাৎ পড়বে না তাদের সিদ্ধান্তে, তারা যাবে না বোঝাই যাচ্ছে। 
    আমি মানে আমরা দুজন অবশ্যই যাবো ঐ দেশটায় শিগগিরি, তবে সবে যে দেশ তিনটেয় বেড়িয়ে এলাম সেই গল্প এখন বলতে হবে।
  • . | ০৯ জুন ২০২৫ ০৬:৩২745004
  • আমরা সমুদ্র ভালোবাসি, পাহাড় ভালোবাসি, ভালোবাসি মরুভূমি উপত‍্যকা নদী খাদ গিরিখাত জঙ্গল আকাশ এবং মানুষ।
    ফেব্রুয়ারিতেই সবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বেড়াতে গেছলাম, তখন সমুদ্র দেখেছি, আগ্নেয়গিরি দেখেছি, পাহাড় জঙ্গল সবই ছিল। তারপরে ঘুরতে গেলাম হংকং। সেখানে তেমন জমল না ভ্রমণ। উঁচু উঁচু বাড়িগুলোর দিকে তাকালে মাথা ঘুরত। হোটেলের উঁচু তলায় থাকা যেন বন্দীর মতো, জানলা খোলা যায় না। তিরিশ কি চল্লিশ কি পঞ্চাশ তলা তা ম‍্যাটার করে না। নীচে তাকালেই মাথা ঘোরে, কেমন যেন গা গুলোয়। তড়িঘড়ি যাহোক তাহোক করে বেড়িয়ে কটা দিন পরেই ফিরে এলাম দেশে। ঐখানে দেখেছিলাম দোতলা ট্রাম। ছোট্ট ছোট্ট দোতলা ট্রাম, একেকটা একেক রঙের। সে যাই হোক। ক্রমে আরও দুটো মাস কেটে গেল, আবারও গুপীবাঘার বেড়াতে মন চাইছে, মে মাস পড়ে যাওয়া মানে ফুলটাইম বসন্ত। 
    আমরা ভেবেছিলাম দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো হ্রদটার কাছে যাবো। কাস্পি। যেটাকে ইংরিজিতে কাস্পিয়ান সী বলা হয়। কাস্পিকে ঘিরে আছে বেশ কটা দেশ। যেমন আজেরবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, কিছুটা অংশে রাশিয়া, কাজাখস্তান, ইরান এইসব দেশ।
    ইরানের ভিসা পাওয়া শক্ত নয় তবে ঐ দেশে গুপীবাঘাকে হোটেলে একই ঘরে রাত্রিযাপন করতে দেবে কিনা সন্দেহ। এও এক ধরনের স‍্যাংশন। রাশিয়ায় তো স‍্যাংশন, সরাসরি যাওয়া যাবে না, তুর্কমেনিস্তান কারোকে ঢুকতে দেয় না, আজব গেশ, এ নিয়ে পরে বলব এখন। অতএব হাতে রইল আজেরবাইজান এবং কাজাখস্তান। গুপী ভাবতে বসল কেমন করে দুটো দেশেই ঘোরা যায় এবং সঙ্গে যদি কাস্পিতে একটা বজরা ভ্রমণ করা যায় তবে তো যা তা ব‍্যাপার হবে। বাঘা এসবে মাথা ঘামায় না, গুপী যেমন যেমন নিয়ে যাবে, সে ঢোল বাজাতে বাজাতে সঙ্গে সঙ্গেই যাবে।
  • . | ০৯ জুন ২০২৫ ০৭:২৪745005
  • আজেরবাইজান ভিসা না নিয়ে ঢুকতে দেয় না। ভিসা অন অ‍্যারাইভাল অপশন আমাদের পাসপোর্টের জন‍্য নেই। সরাসরি সরকারি ওয়েবসাইটে ভিসার জন‍্য দরখাস্ত করলাম, পান্থশালার বুকিং ও করতে হলো। ঠিক করলাম বাকুতে ল‍্যান্ড করে কটা দিন আশেপাশে ঘুরে টুরে কাস্পিতে একটা জাহাজে চড়ে কাজাখস্তানের আক্তাউ বন্দরে নেমে সেখান থেকে রাজধানী আস্তানার উদ্দেশ্যে রওনা দেব। নিশ্চয়ই ফ্লাইট পাওয়া যাবে। তারপরে আস্তানা থেকে আলমাতি যাবো, চারিন গিরিখাত দেখব, লেক টেক তো আছেই, তিয়ান শান পর্বতমালা দেখে টেখে ঘরে ফিরে আসবো। 
    কাজাখস্তান যাবো যখন ঠিকই করে ফেললাম, তখন মনে পড়ে গেল, আরে ঐ দেশের এক বাঙালি শিল্পপতিকে তো আমি চিনি। তাকেই নাহয় ফোন করে কথা বলে আলোচনা টালোচনা করে কী কী জায়গা ঘোরা যায় একটু জিজ্ঞাসা করে নিই না কেন। সেই শিল্পপতি যখন টিনেজার ছিল তখন সে ছিল আমার জুনিয়র, বছর দশেক আগে আমার শহরে এসেছিল বেড়াতে, তখনও জম্পেশ আড্ডা খানাপিনা হয়েছিল। আমি তাকে ফোন করে ফেললাম।
    যারা আমার পুরনো লেখা পড়েছেন যেখানে ভারতীয় দূতাবাসের সেক্সি স্টোরিজ লিপিবদ্ধ করেছিলাম, তাঁরা কমপ্ল‍্যান বয় সম্বন্ধে অল্প জানেন। আহা সেই যে সেই ছেলেটা, যে মধ‍্যগ্রীষ্মের পড়ন্ত আলোর এক সন্ধ্যায় তাশখন্দের মধ‍্যস্থলে গার্লফ্রেন্ডের বাড়ি থেকে ফেরার পথে রাস্তায় প্রচণ্ড বেগ অনুভব করেছিল। হোস্টেলের পথ সেখান থেকে বহুদূর। রবিবার। সব শুনশান। কাছেই ভারতীয় দূতাবাস। পাশেই অ‍্যাম্বাসাডারের রেসিডেন্স। দোতলার বারান্দায় অ‍্যাম্বাসাডার ড্রেসিং গাউন পরে সিগারেট ঠোঁটে মৌতাত করছেন। ছেলেটা ফুটপাথে দাঁড়িয়ে সটান দোতলায় অ‍্যাম্বাসাডারের তোখে চোখ রেখে বলেছিল — স‍্যার ক‍্যানাই ইঊজ ইয়োর টয়লেট? অ‍্যাম্বাসাডারের কূটনৈতিক চোখে ধরা পড়েছিল যে ছেলেটি সমূহ বিপদের মুখে। কালবিলম্ব না করে করে তিনি "শিয়োর" বলেই দ্রুত নীচে নেমে নিজেই দরজা খুলে তাকে টয়লেটের পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন। সেকালে ভারতীয় নাগরিকের বিপদে দূতাবাস নানানভাবে সাহায্য করত, এটা তারই এক সামান্য নমুনা। 
    সেই ছেলেটি পরে নিজের হোস্টেলে না গিয়ে আমার ঘটে চলে এসেছিল তার বীরত্বের এই ঘটনা জানাতে। তখনও পর্যন্ত সে দুধ বা কমপ্ল‍্যান ছাড়া আর কিছুই খেত না। চা কফি কিছুই না। সে দিন সে ভোদকা খেয়ে উদযাপন করেছিল এই ঘটনা উৎসবের মতো। অ‍্যাম্বাসাডারকে দিয়ে তার দরজা খুলিয়ে তার বাথরুমে হেগে আসার মতো ঘটনা তো কম গৌরবের নয়। 
    সেই কমপ্ল‍্যান বয় এখন বিলিওনিয়ার হার্ড কারেন্সিতে। সে বলল, আরে ধূর আক্তাউ কেন যাচ্ছো? বাকুতে রী দেখবে? ফালতু জায়গা! তুমি বরং জর্জিয়া ঘুরে নাও। সিগনাগি যাও, খাসা জায়গা।
    আমি কনফিউজড হয়ে গেলাম। 
    কত দিনের ছুটি নেব বুঝতে পারছি না। বাকু তো যাব ঠিক করে ফেলেছি, হোটেল বুকিং আছে, এদিকে কমপ্ল‍্যান বয় বলছে ওদিকে যেও না।
    তাহলে কি কাস্পিতে জাহাজ ভ্রমণ আমাদের হবেই না?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন