বিষয়টাতে সত্যিই আগ্রহ থাকলে চার্জশিটটা নিজেকে পড়তে হবে, ভাটিয়ালিতে কেউ লিংক দিয়েছিল। অনুবাদের নাম করে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেটা বাংলায় বলে বেশি লোক ইংরেজি ছেড়ে বাংলাটা পড়েই বিশ্বাস করবে ও মতামত তৈরি করবে, হোয়াটস্যাপ / ফেসবুকে ছড়াবে ধরে নেওয়া হচ্ছে। তা বৃথা নয়, dc-ই প্রমাণ। ইউরেথ্রাল সোয়াবটা ভিকটমের নয়,অ্যাকিউজড-এর। এক্সহিবিট B-5, 10-08-24 তারিখে সকালে অ্যাকিউজড-এর MLC তে প্রাপ্ত। সেই সোয়াবে ভিকটিমের ডিসচার্জজনিত DNA পেলে তাও কিছু প্রমাণ হত,
ব্যক্তিগত মনে হওয়াটাও লিপিবদ্ধ রাখা যাক।
১) চার্জশিট মানে তদন্তের সমস্ত পরম্পরা ও সিদ্ধান্তের লিপিবদ্ধকরণ নয়, একজনকে অভিযুক্ত করে তার বিরুদ্ধে সংগৃহীত প্রমাণ একত্র নথিবদ্ধ করা, যাতে তাকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হয়। সুতরাং এতে এমন কিছু লেখা চলে না যাতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো কেস ঘেঁটে যায় বা কোনো কনফিউশন তৈরি হয়। সেটা করার দায়িত্ব মামলা চলার সময় অভিযুক্তের উকিলের।
২) চার্জশিটে লেখা আছে (16-25, last line) মাল্টি ইনস্টিটুশনাল মেডিকাল বোর্ড (MIMD)-এর চূড়ান্ত মতামত এখনও আসেনি। হতে পারে সেটা আসার আগে চার্জশিট জমা করতে হয়েছে বলে আরও কিছু প্রমাণ (মূলত সিমেন সংক্রান্ত) পরে যোগ করা হবে।
৩) চার্জশিটে ভ্যাজাইনাল সোয়াব, ওয়েট ভালভার মপ, বা ভিসেরা (মূলত ভ্যাজাইনা) কোথাও সিমেন আছে কিনা এবং তা অভিযুক্তের কিনা (বা একাধিক জনের কিনা) সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। এটা একটু দৃষ্টিকটু, বিশেষত ধর্ষণ ও খুনের মামলায়। এর কারণ যা হতে পারে, (২) নং ছাড়া) --
ক) ৯ তারিখের সংগৃহিত নমুনা ১৩/১৪ তারিখে ল্যাবে পাঠানোয় কিছু প্রমাণ নষ্ট হয়েছে, যা সিমেন সংক্রান্ত হতে পারে।
খ) ভিকটিমের দেহে পাওয়া সিমেনের অ্যানালিসিস চার্জশিটে কনফিউশন তৈরি করতে পারে। কেন, সেটা স্পেকুলেশন :
০) হতে পারে মারামারি করে খুন করার সময় জেনিটালসের ফোর্সফুল পেনিট্রেশনের ক্ষত তৈরি করা হয় মোটিভকে রেপ-এর দিকে ঘুরিয়ে যাওয়ার জন্য। বা,
i) হতে পারে পেনিট্রেশন হয়েছিল, কিন্তু তা হয়েছে ফিঙ্গারিং এর মাধ্যমে। বা পেনিট্রেশনের পর মারামারি ও খুন করতে গিয়ে ইজাকুলেশন আর হয়ে ওঠেনি।
ii) হতে পারে দেহের ভিতরে ইজাকুলেশন হয়নি, কিন্তু দেহের বাইরে বা পোষাকে, ম্যাট্রেসে কোথাও সিমেন পাওয়া গেছে। কিন্তু সেসব যে আদৌ পাওয়া গেছে বা তা অভিযুক্তের সঙ্গে মিলেছে, তেমনও চার্জশিটে লেখা নেই।
iii) হতে পারে খুনের সময় ইজাকুলেশন হয়নি, পরে অভিযুক্ত মাস্টারবেট করেছিল। সেইজন্যেই MLC-তে অভিযুক্তের ইউরেথ্রাল সোয়াবে সিমেন মিলেছে। এটা অন্তত অভিযুক্তের উকিল বলতেই পারে।
iv) হতে পারে ভিকটিমের দেহে একাধিক ব্যক্তির সিমেন পাওয়া গেছে, কিন্তু সেটা লিখলে প্রশ্ন উঠবে বাকিরা কে বা কারা? আর যতক্ষণ সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না অভিযুক্তের চূড়ান্ত শাস্তি হবে না, কারণ এমন হতেই পারে একাধিক লোক থাকলে, বাকিদের আইডেন্টিফাই না করা অবধি খুনটা যে অভিযুক্তই করেছে, বা একা করেছে তা প্রমাণ করা যাবে না। কোনো একটা চ্যানেলের প্রচার থেকে এমনটাও ধারণা করা যেতে পারে, সেইজন্যেই স্পার্ম ব্যাঙ্ক থেকে এনে সোর্স আইডেন্টিফাই করা অসম্ভব এরকম সিমেন ভ্যাজাইনাতে ঢালা হয়েছিল (ইনজেক্ট করা মানেই ইঞ্জেকশন দিয়ে ঢোকানো নয়, প্লান্ট করাও হতে পারে), যাতে পরে একাধিক ব্যক্তির সিমেনের উপস্থিতিতে আদালতে আসামীর উকিল বাকিদের উপস্থিতির সম্ভাবনায় মামলা ঘেঁটে দিতে পারে। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে যতক্ষণ অবধি পারা যায় ভ্যাজাইনাতে পাওয়া সিমেনের প্রসঙ্গ উল্লেখ না করাই চার্জশিট দাখিলকারী সংস্থার পক্ষে সুবিধের। একাধিক ব্যক্তির সিমেন থাকলে অর্থাৎ প্রত্যক্ষভাবে রেপ / খুনের সঙ্গে অন্য ব্যক্তি জড়িত থাকলে তাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত সিমেনের অন্য ডিএনএ-র তথ্য কোনো কাজের নয় (হাসপাতাল-কলেজের সকল ছাত্র-শিক্ষকের ডিএনএ নিয়ে ম্যাচ করানোর চেষ্টা অসম্ভব।), মামলা ঘেঁটে দিয়ে কড়া শাস্তি হবে না বুঝে অভিযুক্ত আরও মুখ খুলবে না। বরং সেসবের উল্লেখ না করলে, একা অভিযুক্ত হিসেবে মামলা চলাকালীন ফাঁসি বা যাবজ্জীবন হতে চলেছে বুঝলে সে মুখ খুলতেও পারে।
গলা টিপে খুনে গলায় নাকে মুখে চেপে বসা আঙুলের দাগ থেকে যায়, সেরকম কিছুর উল্লেখ নেই ইনকোয়েস্ট বা পোস্ট মর্টেম-এ অথচ সেগুলো যথেষ্ট ডিটেইলড নয় এমন কোনো অভিযোগ সিবিআই-এর তরফে এখনও নেই। বলপূর্বক পেনিট্রেশন হলে অভিযুক্তের পেনিসে ব্রুসিং থাকবে, সেরকম কিছুর উল্লেখ চার্জশিটে বর্ণিত অভিযুক্তের MLC (মেডিকো লিগাল এগজামিনেশন)-তে নেই। অভিযুক্তের অন্তর্বাস বাজেয়াপ্ত বা ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়নি এটা আশ্চর্যের। আর একটা ব্যপার, পুল অফ ব্লাড (16-2) এল কী করে? ঘুমন্ত ভিকটিমের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও গলা মুখ নাক টিপে মারার মধ্যে কেটে ছড়ে যাওয়া ইত্যাদি হয়েও কত বেশি রক্ত বেরোনো সম্ভব? আর যা বেরোবে তা জেনিটালস থেকে। অধিকাংশ রক্তক্ষরণ কোন্ অংশ থেকে হয়েছে আর সেই ক্ষত কীভাবে করা হয়েছে, দেওয়ালে ঠুকে বা অন্য কোনো ভারি বস্তুর আঘাতে সে বিষয়ে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বা চার্জশিট নীরব।
সৌরভ খেলেও সঞ্জয় ৮ তারিখ রাতে মদ খায়নি, শুধু বিয়ার খেয়েছে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে সুস্থ থাকতে হবে সেটা তার মাথায় ছিল। পতিতাপল্লীর ঘরে ঢোকেনি। রাতে রেপ করার মত প্রস্তুত থাকতে হয়েছিল। টাকা থাকবেনা কেন? দুপুরে যে টাকা ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া হয়নি সে টাকা তার কাছেই থাকার কথা, কারণ টাকাটা যার অ্যাকাউন্টে জমা করার তাকে সে-ই রিপোর্ট করে, যদি না সৌরভও তাকে রিপোর্ট করে আর যদি না সে টাকা সৌরভ সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে থাকে। সেটা সৌরভকে জেরা করেই জানা সম্ভব। দুপুর থেকে রাত পৌনে এগারোটা অবধি হাসপাতালে সঞ্জয় কী করছিল, কোথায় ছিল, কাদের সঙ্গে কথা বলেছে? সেসব তথ্য সিসিটিভি দিয়ে সাপোর্ট করা গেছে? জানা যাচ্ছে না। সিবিআই জানলেই ভালো, লিক করলে আবার বাকিরা সাবধান হয়ে যাবে।
ঘটনার রাত সাড়ে তিনটেয় হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিটের দোতলায় সে শুভ দে-র বাড়ির লোককে দেখতে পায়নি। ভালো কথা। কিন্তু তারপর সে ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ে গিয়ে পাঁচতলা থেকে চারতলা কী/কাকে খুঁজতে খুঁজতে ঘুরছিল? প্রথমে কলকাতা পুলিসকে সে জানিয়েছিল, ব্যঙ্গের সুরেই, শিকার। অর্থাৎ কাউকে রেপ করার মতো পাওয়া যায় কিনা খুঁজছিল। এটা তার নিয়মিত প্র্যাকটিস হতে পারে না। নইলে বিগত তিন বছরে একই পদ ও প্রোফাইলে থাকাকালীন সে এই হাসপাতালে আরও রেপ করে থাকত, যদি না আয়াদের সঙ্গে তার সেরকম সম্পর্ক থেকে থাকে। সে হঠাৎই একদিন ঝোঁকের বশে এই কাজ করে ফেলে বিশেষ করে, তারই সঙ্গে যে সমসময়ে প্রাতিষ্ঠানিক করাপশনের কাছে থ্রে্ট হয়ে উঠছে, এতখানি সমাপতন বিশ্বাস করা একটু কঠিন। এইটা আমার ব্যক্তিগত অবস্থান।
আমার ধারণা তাকে এই খুন করার বরাত দেওয়া হয়। সম্ভব হলে রেপ করারও স্বাধীনতা দেওয়া হয়। এ কাজে তাকে সাহায্য করার বা প্রমাণ লোপ তথা প্যাথলজিকালি মামলাকে কনফিউজ করে কড়া শাস্তি থেকে বাঁচানোর অঙ্গীকারও করা হয়। সাহায্য স্বভাবতই সিসিটিভি ক্যামেরা বাঁচিয়ে, যা হাসপাতালের/কলেজের ভিতরের লোক ছাড়া বাইরের লো্কের পক্ষে সম্ভব নয়। যেমন আর জি করের সমস্ত সিসিটিভি ক্যামেরার অবস্থান মনে রেখে সেগুলোর নজর বাঁচিয়ে চলাফেরা করা তারকাটা সঞ্জয়ের পক্ষে সম্ভব ছিল না। যেহেতু এ রাজ্যে বর্তমানে সাধারণভাবেই রেপ জিনিসটাকে ধামাচাপা ও প্রমাণ লোপ করে শাসকদের লজ্জা ও নিন্দার হাত থেকে বাঁচানোর সংস্কৃতি বহুদিন ধরেই চলছে। ওয়েল কানেক্টেড হওয়ার সুবাদে সেই কাজ সরকারী সহায়তায় সুসম্পন্ন করার আত্মবিশ্বাস সন্দীপ ঘোষ ও থ্রেট কালচারে জড়িত তার অনুচর ও সাঙ্গোপাঙ্গোদের ছিল।
আপাতত ভিকটিমের বুকে অভিযুক্তের লালা পাওয়া এবং অভিযুক্তের জিনস ও স্যান্ডেলে ভিকটিমের রক্ত পাওয়াটাই সবচেয়ে জোরালো প্রমাণ। তাতেও আক্রমণ, মারামারি প্রমাণ হলেও খুন করাটা প্রমাণ হয় না। এটা সমস্যার। ভিকটিমের নখের কাটিং ও স্ক্র্যাপিং-এ এবং ব্যবচ্ছিন্ন জেনিটালসে অভিযুক্তের ডিএনএ দেখানো গেলে আরেকটা প্রমাণ হবে। গলায় আঙুলের ছাপ না রেকর্ড করা হয়ে থাকলে সেটাও সরাসরি খুনের নয়। ক্রাইম সিন গাদা লোক গিয়ে ঘেঁটে না ফেললে মেঝে থেকে অভিযুক্তের স্যান্ডেলের ছাপ টাপ বা আঙুলের ছাপটাপ বেরোতো হয়তো, সেটা চুলোয় গেছে, যাকগে।