এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমার স্বদেশ! আইনবিভাগ, বিচারবিভাগ ও গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে যা পরিচিত সেই সংবাদমাধ্যমও শাসকের কবজায়। আইনসভা তো বহু পূর্বেই কলুষিত হয়েছে কাঞ্চনমূল্যে। পরিকল্পনা পর্ষদ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি পর্ষদ, রেলের জন্য পৃথক বাজেট হয় বিলুপ্ত বা স্বাধীন সত্তাহীন। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন দৃষ্টিকটুভাবে শাসক দলের অনুজ্ঞাবাহী। সংসদ এড়িয়ে তিন কৃষি আইন বলবৎ। ব্যাঙ্কিং ও বিমা শিল্পে বিদেশি পুঁজির ঊর্ধ্বগামী নিয়ন্ত্রণ। অন্যদিকে দিল্লির সীমান্তেই গত অক্টোবর মাস থেকে চলে আসা কৃষক ধর্নার প্রতি সরকারের অনমনীয় মনোভাব আর বিদেশে কোভিড প্রতিষেধক রপ্তানির বদলে নিজেদের সন্তানসন্ততির জন্য প্রতিষেধকের দাবিতে পোস্টার লিখে দিল্লিতেই পঁচিশ জন গ্রেপ্তার! ১৯৭৫-৭৭ সময়কালের জরুরি অবস্থা কি এর থেকেও ভয়ঙ্কর ছিল?
আর এই চরম নিপীড়িত অবস্থাই দাবি করে বামপন্থার বিকাশের। চরম সামাজিক-অর্থনৈতিক অসাম্যের বিপ্রতীপে সর্বজনিক কল্যাণের চাহিদা সাম্যবাদী রাজনীতির জন্ম ও বিকাশের পূর্বশর্ত। আমাদের দেশে অসাম্যের সব ধরণের উপাদান প্রভূত পরিমাণে মজুত থাকলেও নকশালবাড়ির ঐতিহাসিক বিদ্রোহের পর গত পাঁচ দশক ধরে বামপন্থী আন্দোলনের ধারা ক্রমশ ক্ষীয়মান। বামপন্থী দলগুলির নিজস্ব মতানৈক্য ও বিবাদ-বিসংবাদের ফলে মূল ধারা আজ অগণিত শাখায় বিভাজিত, ফলে কোনো ক্ষীণ ধারার পক্ষেই দীর্ঘ বালুচর অতিক্রম করে সাগরে মেশা এক কথায় অসম্ভব। অতঃপর ‘যৌথ খামার’ এর স্বপ্ন দেখা অগণিত তরুণ/তরুণী, যুবক/যুবতীরা কি হতোদ্যম হয়ে স্রোতের বিপক্ষে হাল বওয়ায় ক্ষান্ত দেবে?
লেনিনের কথামত শতাধিক বছর আগেই পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদের চেহারা নিয়েছিল তার বিবর্তনের স্বার্থে। পুঁজির কেন্দ্রিকরণের যে প্রক্রিয়া ইউরোপে শুরু হয়েছিল ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ও সপ্তদশ শতাব্দীর শুরুতে তা আজ ভুবনায়নের কল্যাণে বিস্তৃত দুনিয়াময় এবং বিশ্ব পুঁজিও কেন্দ্রিকরণের চূড়ায়। গোটা পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি সম্পত্তি গুটিকয়েক ধনকুবেরের কুক্ষিগত - আমাদের দেশের দিকেও তাকালেও একই চিত্র ধরা পড়ে। লকডাউন পর্যায়ে দেশের অর্থনীতির সার্বিক বৃদ্ধি যখন নেতিবাচক, কয়েক কোটি পরিবার কর্মসংস্থান হারিয়ে সরকারের দেওয়া রেশন ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল, তখন রিলায়েন্সের সম্পত্তি বেড়েছে কয়েক গুণ! আর আজ অতিমারীর সুযোগে পুঁজির কেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করা হচ্ছে ‘ডিজিটাল ইকোনমি’র বকলমে। শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের সঙ্গে মূল দ্বন্দ্ব যেহেতু পুঁজির, তাই পুঁজির এই বিবর্তিত বর্তমান কর্পোরেট রূপ সম্বন্ধে সচেতন থাকাটা জরুরি। এই কর্পোরেট পুঁজি সস্তা শ্রমের লক্ষে স্পেশাল ইকনমি জোন চায় যেখানে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া আইনত দণ্ডনীয়। আর যেহেতু এ দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের কর্মসংস্থান হয় অসংগঠিত ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিক ভাবেই সেখানকার শ্রমজীবী মানুষেরা শুরু থেকেই অসংগঠিত ফলে শ্রমিক আন্দোলনের চিরাচরিত কৌশল সেখানে অচল। প্রয়াত অধ্যাপক কল্যাণ মজুমদার যুক্তি দিয়েছিলেন যেহেতু এই অসংগঠিত ক্ষেত্র থেকেই পুঁজির জন্য প্রয়োজনীয় সস্তার শ্রম ও কাঁচামালের যোগান আসে তাই এই অসংগঠিত ক্ষেত্র কখনোই পুঁজির স্বার্থে সংগঠিত রূপ নেবে না বরং সময়ের সঙ্গে পুরো সংগঠিত ক্ষেত্রটারই কাঠামো ক্রমশ অসংগঠিত আকার ধারণ করবে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় যে সরকারি বা বেসরকারি দপ্তরে সাফাইকর্মী, গাড়িচালক সহ তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত কাজ হয় অসরকারি মাধ্যমে- নয়া উদারবাদী অর্থনীতি চালু হওয়ার পূর্বে এই ধারা এত প্রবল ছিল না। লক ডাউনের সময় অভিবাসী শ্রমিকদের অসহায়তা দেখাল যে এই শ্রমিকদের অনেকেই কল-কারখানার মজুর। তাঁদের না আছে কাজের নিরাপত্তা না আছে কোন ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তা। আর এই ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে এবং নিত্যদিনের ক্ষোভ বিক্ষোভ সামলে রাখতে এই ক্ষেত্রকে সময়বিশেষে অনুদান বা ঋণের মাধ্যমে কিছুটা ছাড় দেওয়াও জরুরি। আবার মনে রাখা দরকার অসংগঠিত কর্মসংস্থানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চিরাচরিত মালিক- শ্রমিক সরাসরি দ্বন্দ্বের জায়গা অনুপস্থিত, ফলে নিষ্পেষিত মানুষের কাছে সরকার বা ভগবানকে দোষা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। এই পরিস্থিতিতেই দরকার হয়ে পড়ে সরকারি সাহায্য যা অনুদান হিসেবে নন্দিত ও একইসাথে প্রবলভাবে নিন্দিতও। আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর থেকেই এরকম নানাবিধ প্রকল্প দেখে আমরা অভ্যস্ত এবং দরিদ্র জনতার উন্নতির লক্ষ্যে রচিত এইসব প্রকল্প থেকে সরকারি আমলা থেকে নেতা মন্ত্রীদের ফুলে ফেঁপে ওঠার অসামান্য বিবরণ রয়েছে পি সাইনাথের একাধিক পুরস্কার বিজয়ী গ্রন্থ এভরিবডি লাভস্ অ্য গুড ড্রট–এ। আমাদের মত বিপুল জনসংখ্যার দেশে এই অনুদান বা খয়রাতি পর্যাপ্ত তো নয়ই, বরং যে কোন প্রকল্পই তার সীমাবদ্ধতাকে বাতিল করে নতুন প্রকল্পের ইন্ধন জোগায়। অনেকটা নতুন মোড়কে পুরনো জিনিস বিক্রি করার মত। উদাহরণ হিসেবে আমাদের দেশে সর্ববৃহৎ সমাজ কল্যানমুখী প্রকল্প হিসেবে গৃহীত একশো দিনের কাজের কথাই ধরা যাক। এই প্রকল্পে ইচ্ছুক পরিবার প্রতি একশো দিনের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি আইনত বিধিবদ্ধ হলেও আজ অবধি সারা দেশে কোনো বছরেই পাঁচ শতাংশ পরিবারও একশো দিনের কাছাকাছি সংখ্যায় কর্মসংস্থান পায় নি। অনুদান/খয়রাতির এই সীমাবদ্ধতা থেকেই জন্ম নিতে পারে নতুন সম্ভাবনা আর বামপন্থী রাজনীতি এখানেই প্রাসঙ্গিক, কারণ শ্রমজীবি মানুষের আন্দোলনকে সঠিক দিশা দেওয়া বামপন্থীদের মৌলিক কর্তব্য।
এই প্রসঙ্গে এটাও বলা দরকার, শতকরা ৯০ ভাগ ভারতীয়, যাঁরা জীবিকানির্বাহ করেন মূলত অসংগঠিত ক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে, তাঁদের সিংহভাগই আদিবাসী, তপশিলি, সংখ্যালঘু ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষ। সরকারি তথ্য অনুসারে ভারতে দশটি আয়স্তরে উপরিউক্ত সম্প্রদায় সমূহের উপস্থিতি মূলত সর্বনিম্ন পাঁচটি স্তরে। অর্থাৎ এ দেশে দারিদ্র - যার জঠরে ধ্রুপদী ‘প্রলেতারিয়েত’ স্তরের জন্ম - তা একমাত্রিক হওয়ার বদলে বহুমাত্রিক, যা শ্রমজীবী আন্দোলনকেও করে তুলেছে বহুমাত্রিক। ধর্ম-জাতি-বর্ণে বিভক্ত এ দেশের দরিদ্র জনতাকে নিজের রুটি রুজির লড়াই জারি রাখার সঙ্গে সঙ্গে কখনো গাছ বাঁচাতে, কখনো নদী বাঁচাতে আবার কখনো চাষের জমিতে প্রস্তাবিত ‘কেমিক্যাল হাব’ নির্মাণ প্রতিরোধ করতে পথে নামতে হয়েছে কেননা এসবই তাঁদের জীবন জীবিকার অংশ। এই নানা ধরণের উপাদানের সমাহারে সংপৃক্ত এ দেশের শ্রমজীবী মানুষের দীর্ঘ সংগ্রামী পথ যেখানে সিধহু-কানহু, মঙ্গল পাণ্ডে, সাবিত্রী ফুলে, মহাত্মা গান্ধী, আম্বেদকার, সুন্দরলাল বহুগুণা, মেধা পাটেকার মিলে মিশে একাকার হয়ে যান তেভাগা-তেলেঙ্গানা-নকশালবাড়ীতে - সেই ধারাতে অবগাহন করেই মিলতে পারে আগামীর পথের সন্ধান। আর সেটাই এ দেশে বামপন্থা বিকাশের সর্বোত্তম সুযোগ ও সম্ভাবনা।
অথচ কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে স্বাধীন দেশে বামপন্থী আন্দোলন কোনো অর্থেই ‘ইনক্লুসিভ’ নয় – আম্বেদকার থেকে অরুন্ধতী রায় হয়ে এ অভিযোগ এখন আর নতুন নয়। হিন্দুত্ববাদ এ দেশে প্রায় একশো বছর ধরে শাখা প্রশাখা বিস্তার করে আজকের অনুকুল পরিবেশে কর্পোরেট পুঁজিকে দোসর করে এক ধর্ম এক দেশ এক ভাষা এক সংস্কৃতি প্রসারে যে আগ্রাসী চেহারা নিয়েছে তা প্রতিরোধের একমাত্র উপায় বহুত্ববাদ - যা লুকিয়ে আছে এ দেশের বহুজন সমাজের বৈচিত্রের মাঝে। এ দেশের বহুজন সমাজও তাদের অস্তিত্বরক্ষায় অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন রাজনীতির ছাতার তলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে কারণ এই আগ্রাসী কর্পোরেটপোষিত হিন্দুত্ব শুধু তাদের জীবন জীবিকায় হাত দেয় নি বরং তাদের কৃষ্টির শিকড় ধরে টান দিয়েছে। তাই সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে তামিলনাড়ু, কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গে এই বহুজন সমাজই বিজেপিকে রুখে দিয়েছে যাতে মহিলাদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। এই বাস্তবতাকে অনুধাবন করেই আগামী লোকসভা নির্বাচনের সলতে পাকানো শুরু করতে হবে দেশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বামপন্থীদের। যেখানে ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা হবে মৌলিক, নিঃশর্ত ও নির্ধারক দিশা। নিজেদের সংসদীয় স্বার্থকে সাময়িক ভাবে উপেক্ষা করে দেশের শতাধিক কোটি জনসংখ্যাবহুল বহুজন সমাজের মধ্যে সেতুবন্ধন করে ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাভূত করার প্রস্তুতি নিতে পারে ভবিষ্যতের জন্য তা হবে শ্রমজীবী ভাষ্যের নতুন ভিত্তিভূমি। এই সংকটকালে এই কাজ বামপন্থীরা ছাড়া আর করার কে আছে? ছদ্ম বর্ণবাদী কংগ্রেসের রাজনৈতিক পরিধি সংকুচিত হতে হতে আজ তা দেশের কয়েকটি মাত্র রাজ্যে সীমাবদ্ধ এবং কংগ্রেস চিরকালই তাদের বাদ দিয়ে বিকল্প গঠনের ক্ষেত্রে দোদুল্যমান ও দ্বিধাগ্রস্ত।
এই অসংগঠিত ক্ষেত্রের বাইরে এই বহুজন সমাজের কর্মসংস্থানের বৃহত্তম ক্ষেত্র হল কৃষি। গুটিকয়েক ধনাঢ্য কৃষককে বাদ দিলে দেশের আপামর কৃষক সমাজ, যার সিংহভাগই প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষী. তাঁদের সংকট বোঝার জন্য প্রতিবছর দেশে কৃষকের ক্রমবর্ধমান আত্মহননের সংখাই যথেষ্ট। সংকটাপন্ন এই কৃষি ব্যবস্থার উপর নতুন আঘাত হিসেবে করোনা কালে কোনরূপ আলাপ আলোচনা ছাড়াই জারি হল নতুন কৃষি আইন যা এবার পথে বসাবে চাষের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত কয়েক কোটি পরিবারকে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা বা উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের গত ছ’মাসের বেশি ধরে চলা আন্দোলনের রাজনৈতিক দিশা বোঝা যায় যখন তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে ছুটে আসেন বিজেপিকে পরাজিত করার আবেদন নিয়ে। চলমান এই কৃষক আন্দোলনে বামেদের উপস্থিতি যদিও যথেষ্ট প্রতীয়মান কিন্তু সারা দেশ জুড়ে ফ্যাসিস্টের পরাজয় নিশ্চিৎ করতে নানা কৃষক আন্দোলনে ঋদ্ধ দেশের বাম দলগুলিকে আগামী দিনে কৃষক আন্দোলনের দিশা নিয়ে গভীর ভাবে অনুশীলন করতে হবে।
আগামীতে এ দেশে বামপন্থার বিকাশের চাবিকাঠিও রয়েছে এই বিশাল বহুত্ববাদী সমাজের মাঝে বামমন্থীরা কতটা নিজেদের সাক্ষর রাখতে পারে এই জনজাতি সমূহের য়ার্থ-সামাজিক অস্মিতার উত্থানে। বাংলা, তামিলনাড়ুর বা কেরালায় বিজেপির পরাজয় আসলে বিজেপির আরএসএস-এর একমাত্রিক ভারত গড়ার প্রকল্পে এক বড় ধাক্কা যেমন বাংলায় ‘জয় শ্রীরাম’ পরাস্ত হল ‘জয় বাংলা’ র কাছে। কিন্তু এই লগ্নে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল নানা ধারা-উপধারায় বিভক্ত বামেরা কি পারবে এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে? হিটলারের উত্থানের পশ্চাতে অন্যান্য নানাবিধ কারণের সাথে সে দেশের বামেদেরও অবদান ছিল বলে মনে করা হয়। সবচেয়ে অদ্ভুত হল রাজ্যে রাজ্যে বাম দলগুলি অবাম দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় যে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে নির্বাচনী আঁতাতে সেই বোধ উধাও হয়ে যায়। আরও দুর্ভাগ্যজনক এই অতীব সংকটকালীন সময়েও এদের কেউ কেউ অপরকে ব্যঙ্গ করে বিপ্লবী আত্মপ্রসাদ লাভ করছেন যা ভবিষ্যতে বাম ঐক্য গঠনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। প্রশ্ন জাগে বিহারের বিজেপি বিরোধী জোটে বামেদের সাফল্য থেকে কি কিছুই শিখবে না তথাকথিত বড় বাম দলগুলি?
আগামীদিনে বামেদের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে তারা ‘ক্লাস’ (শ্রেণি) এর সাথে ‘কাস্ট’ (জাতি) এর মেলবন্ধন ঘটাতে কতটা সৃজনশীল হবে। আমাদের দেশে মার্ক্সবাদী কাঠামোতে শ্রেণি হল ভিত্তি (বেস) আর জাতি হল উপরিকাঠামো (সুপারস্ট্রাকচার) যা অনেকটাই রাশিয়ার দুই তাত্ত্বিক নেতা প্লেখানভ ও বুখারিনের চিন্তার অনুসারী, যদিও তাঁদের অন্য দুই সহকর্মী লেনিন ও ট্রটস্কির লেখায় এই বিষয়ে খুব একটা আলোকপাত নেই। মার্ক্স নিজে এই বিষয়ে প্রথম লেখেন ১৮৫২ সালে এবং দ্বিতীয়বার তাঁর লেখায় এর উল্লেখ পাওয়া যায় ১৮৫৯ সালে। তাঁর মৃত্যুর পর এঙ্গেলস ১৮৯০ সালের ২১-২২ সেপ্টেম্বরে এক জার্মান ছাত্রকে লেখা চিঠিতে এই বিতর্কের জন্য তাঁকে ও মার্ক্সকে দায়ী করে বলেন যে ইতিহাসে চূড়ান্ত নির্ধারণকারী বিষয় হল উৎপাদন ও পুনরুৎপাদন, কিন্তু কেউ যদি একে বিকৃত করে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বিষয়ে জোর দেয় তা হলে তা হবে একইসাথে অর্থহীন ও হাস্যকর। আমাদের দেশের বাস্তবতার ভিত্তিতে ১৯১৬ সালে আম্বেদকার বলেন ‘A caste is an enclosed class’ এবং ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে তাঁর কর্মকাণ্ডে শ্রেণি ও জাতিগত লড়াইয়ের ঐক্যের বার্তাই বারংবার প্রতিফলিত হয়েছিল। আমাদের দেশে জাতি ও পেশা পরস্পর ঐতিহাসিক ভাবে সংযুক্ত ফলে একজন আদিবাসী বা দলিতকে একই সাথে জাতীগত ও শ্রেণিগত সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয় – ভিত্তি আর উপরিকাঠামোর আলাদা করে আর কোনো অস্তিত্ব থাকেনা। নিজেদের তাত্ত্বিক কাঠামোর অর্গল মুক্ত করে এ দেশের বামপন্থীরা এই উপলব্ধিতে যত দ্রুত পৌঁছবেন ততই মঙ্গল কারণ ভবিষ্যতের বামপন্থার শিকড় নিহিত যে ওখানেই।
বেশ বেশ !
ভালো থীসিস ।
পিএইচডি করছেন বুঝি ?
লেখাটা ওয়েল কম্পোজড কিন্তু বিষয়বস্তুটা ঘাঁটা। ওই বেস-সুপারস্ট্রাকচারের গপ্পো ভারতে চলবে না, চলতে পারে না। ফলে যে বামপন্থীরা একদা আমাদের রাজ্যে জাতপাত নেই বলতেন, তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন সেই নিয়ে গুমোরের ফল। বাংলার রাজনীতি ও সংস্কৃতি এতদিন পরেও বামুন-কায়েত-বদ্যির দখলে।
বিহারের বামপন্থা আরেক ঘাঁটা জিনিস। সেখানে যে কে কার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, তার জাতবিচার করতে বসলে শিউরে উঠতে হবে। আর এই যে কর্পোরেটপুষ্ট সবুজ বিপ্লব হয়ে চুক্তিচাষের দীর্ঘ যাত্রা, সে বিষয়ে বামপন্থীরা কোন ক্ষেত্রে আলাদা?
'ছোটলোক' বিদ্বেষ ও মুসলমান বিদ্বেষ আমাদের রক্তে-মজ্জায় প্রবাহিত। বামরা সে ব্যাপারে কারও চেয়ে কম নয়। ফলে তারা একজোট হল কি হল না, তাতে কিস্যু আসে যায় না।
জীববিজ্ঞানের স্ফূরণে বামপন্থা তথা সাম্যের আজ নতুন ও বিকশিত রূপ দেখতে পাই হাঁস-মুরগি-গরুর খামারে!
এই থিসিস মার্ক্সবাদের এন্টিথিসিস ছাড়া আর কিছু নয়।
দীপক সেন গুপ্ত
আপনি একটা সিনথেসিস দিন না?
আপনার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো, আরো কিছি কিছু ব্যাপার সমবন্ধে জানতে আগ্রহী, যেমন
১) যেই ১০টা আয়স্তরের কথা বললেন, আর তার লাগোয়া পরিসবগখ্যান - এইটা নিয়ে আরো কিছু আলোচনা, অঞ্চলভিত্তিক পরিসংখ্যান পড়ার কোন উতস পেলে খুবই আগ্রহ নিয়ে পড়ব।
২) বামপন্থার ইনক্লুসিভ হওয়ার বিষয়টা বলতে তাদের কর্মকান্ডে গণ-অংশগ্রহণকারিতার কথা বলেছ্রন। এই বিষয় নিয়েও আরো কিছু আলাপ আলোচনার সন্ধান পেলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
বর্ণবাদ এর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিতে হবে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পদবী প্রথা বাতিল করতে হবে এই দাবি তুলতে হবে।
বর্ণবাদ এর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিতে হবে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পদবী প্রথা বাতিল করতে হবে এই দাবি তুলতে হবে।
Reservation ও তোলা উচিত সেক্ষেত্রে