এক ভদ্রলোকের কথা মনে আছে। এলেন। বছর ত্রিশেক বয়স। দিন কুড়ি থাকলেন। সন্ধ্যা বেলায় বিচিত্র গল্প শোনালেন। তারপর একদিন একটা চাদর নিয়ে চলে গেলেন। আর একজনের কথা খুব মনে আছে। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় মার্কা চেহারা। দক্ষিণ ২৪ পরগণার মানুষ। কামারশালা বসাতেন আমাদের বৈঠকখানার পাশে। রাতে থাকতেন বৈঠকখানায়। হাঁড়িকুঁড়ি ঝালাই করতেন। তামার হাঁড়ি পাতিল নিকেল করতেন। রিপিট মারতেন কড়াই বা বালতিতে। কাজ ছিল চমৎকার। বেশ কয়েকবছর এসেছিলেন। তাঁরা বেগুন দিয়ে একটা তরকারি করতেন। বেড়ালের পায়খানার মতো রঙ হতো। গোলমরিচের হাল্কা ঝাল থাকতো। আহা অমৃত। আমি তো সারা সন্ধ্যা কোনও মতে একটু পড়ে কামারশালেই বসে থাকতাম। ওই আগুনে রঙ, হাপরটানার কায়দা, নিপুণভাবে ঝাল করা, আমাকে মুগ্ধ করে দিত। ইচ্ছে হতো, হাপর টানি। দুয়েক বার চেষ্টা করেছি। সুবিধা হয় নি। গণদেবতা তখন পড়ে ফেলেছি। আমার তাঁকে অনিরুদ্ধ কামার মনে হতো। ... ...
গ্রামে আগে ছেলেদের প্রচুর কাজ ছিল। চাষে সাহায্য করা পড়াশোনা করা ছাড়াও ক্লাব করা ফুটবল খেলা, হাডুডু কবাডি নুনচিক / গাদি/ জাহাজ খেলা, শীতে ভলিবল খেলা, ডাংগুলি পেটানো, মার্বেল খেলা, ভাটা খেলা, নিদেন পক্ষে দাবা চাইনিজ চেকার লুডো বা বাগ বন্দি বা তাস খেলা। নাহলে আড্ডা দেওয়া। যাত্রা নাটকের মহলা দেওয়া। সবাই নাটক যাত্রা না করলেও মহলা দেখতে বা শুনতে ভিড় করতেন। নানা ধরনের খেলার দর্শক হতেন। আড্ডায় গিয়ে কথা শুনতেন। মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়েরা বিকেলে পাড়া বেড়াতেন। এ ওর চুল বেঁধে দিতেন। কেউ নতুন কোনও সেলাই ফোঁড়াই কুটুম বাড়ি গিয়ে শিখে এলে শিখতে যেতেন। ... ...
রেল পরিষেবা চালু হওয়ার পর শিয়ালদহ স্টেশনে বাইরে থেকে আসছে প্রচুর মালপত্র। স্টেশনে আসা মালপত্র শহরের নানা প্রান্তে পৌঁছানর ব্যবস্থা করাটা হয়ে উঠল নগরকর্তাদের প্রধান সমস্যা। সমস্যার কথা জানানর পর ভারত সরকারের কাছ থেকে ট্রাম চালাবার পরামর্শ আসে। কোলকাতার Justice for the Peace পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য একটি কমিটি তৈরি করলেন। কমিটি, গ্রামের থেকে আসা পণ্য বিভিন্ন গুদামে পৌঁছে দেওয়ার উপযোগী করে একটি রুট ঠিক করল। পরিকল্পনা মঞ্জুর হল। দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে শেয়ালদা থেকে বৈঠকখানা রোড, বৌবাজার স্ট্রিট, ডালহৌসি স্কোয়ার হয়ে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত লাইন পাতা হল। আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত লাইন পাতা হয়েছিল কারণ, ওইখানে ছিল তখনকার ইষ্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ের হাওড়ার টিকিটঘর। শিয়ালদহ এবং হাওড়ার মধ্যে পণ্য পরিবহণের সুবিধার কথা চিন্তা করেই ওই স্থান নির্বাচন করা হয়। ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কোলকাতায় চলল প্রথম ট্রাম। ... ...
এ বছর চৈত্রের শুরু থেকেই ঝলসে দেওয়া শুকনো গরম। সেই গরমে sskm এর এক একটা লাইনে তিন ঘন্টা দাঁড়িয়ে নারী পুরুষ। মেয়েরা এখানে সংখ্যাগুরু। সংসারের যাবতীয় কাজ ভোর রাতে উঠে সামলে তারা চলে আসে। কখনো নিজের জন্য, কখনো সন্তানের জন্য। এমনকি এমন মেয়ের দেখা পেয়েছি যে sskm চেনে হাতের তালুর মত আর তার হাত ধরে প্রথমবারের জন্য ডাক্তার দেখাতে এসেছে তার স্বামী। মেয়েরা না কি রাস্তা পেরোতে পারে না ... ...
থাইল্যান্ডে দোল নেই। কিন্তু নববর্ষের দিনে আছে জল ছোঁড়াছুঁড়ির খেলা। এপ্রিল মাসে বেজায় গরম। লাওস কামবোদিয়া থাইল্যান্ডের পথে ঘাটে সেদিন জল আক্রমণের ধুম পড়ে যায়; মারো পিচকারি! সেটা ছবিতে মাত্র দেখেছি। আমাদের এই মন্দিরে তার একটা ছোটো এডিশন আছে – এক ভিক্ষু ঝ্যাঁটা দিয়ে সবার মাথায় জল ছড়িয়ে দেন। দুঃখের বিষয় যে থাইল্যান্ড বা লাওসের স্টাইলে আমরা তাঁকে জল কামান দিয়ে আক্রমণ করতে বা তাঁকে পাল্টা ঝাপটা মারতে পারি না! নববর্ষের পরবের অন্য রিচুয়ালগুলি মোটামুটি অনুসরণ করা হয়ে থাকে ন্যাপহিলের অনুষ্ঠানে - যেমন প্রার্থনার পরে ভিক্ষুদের খাদ্য দ্রব্য দান। সকলে আনেন কিছু না কিছু, সার দিয়ে বসে থাকেন দানের জন্য, ভিক্ষু সেটি গ্রহণ করলে পরেই স্থান ত্যাগ করতে পারেন। অল্প বয়েসি ছেলে মেয়েরা বয়স্ক নারী ও পুরুষের পা ধুইয়ে দেন, পিতা মাতার গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক সেটি। পুণ্য অর্জনের আরেকটি পন্থা - বুদ্ধ মন্দির বা স্তূপ নির্মাণে শ্রমদান। মাঠের মধ্যে বালি দিয়ে তৈরি স্তূপ মন্দির আছে, দূরে এক কোনায় রাখা বালির পাহাড়; সেখান থেকে পাত্র ভরে কিছুটা বালি এই নির্মীয়মাণ মন্দিরে পৌঁছে দেওয়াটা একটা সিম্বলিক সহায়তা। নববর্ষের এই দিনে নতুন জামা পরা আবশ্যিক, নিজের বা পরিবারের জন্য অর্থ ব্যয় কম,দান বেশি এবং মদ্যপান বারণ! ... ...
আমরা দেশের বাড়ি যেতুম ২৯ শের রোজায়। সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ঈদ নয়ত আর একদিন মানে তিরিশটি রোজা সম্পূর্ণ করে ঈদ পালন। তখন আর চাঁদ দেখার ঝামেলা নেই। হাদিস মোতাবেক তিরিশটি রোজা হয়ে গেলে অবশ্যই পরদিন ঈদ। এখন যেমন,"যাহ! সৌদিতে আগে ঈদ হয়ে গেল। আমাদের হল না কেন?” বলে বিভিন্ন বিতণ্ডার শুরু তখন সেসব কেউ ভাবতও না। চাঁদ দেখা গেলে ঈদ হবে সেই অঞ্চলে নয়ত রেডিওয় কান পেতে থাকতেন মুরুব্বিরা- নাখোদা মসজিদের ইমামসাহেব যা ঘোষণা করবেন মেনে নিতেন সবাই। ... ...
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত, এক সন্ধ্যা থেকে আরেক সন্ধ্যা, এক পূর্ণ-চন্দ্র থেকে এক চন্দ্র-হীন রাত কিংবা আরেক পূর্ণ-চন্দ্র, শীত থেকে গ্রীষ্ম, বাড়ির সামনে গাছের ছায়া ঘুরতে থাকে, আজ যেখানে ছায়া পড়েছে আবার কত সকাল বাদে এই ছায়া সেখানে প্রায় অমনি করে এসে পড়বে, দিন, রাত, পক্ষ, মাস, ঋতু, বছর, কোথাও সারা বছর জীবন এক ভাবে ভিজে যায় কি পুড়ে যায়, কিংবা একই ফুল ফোটে, চিরবসন্তের কোকিল ডেকে যায়, কোথাও ঋতুতে ঋতুতে লহরের পর লহর তুলে প্রকৃতি বদলে যায়, দেয়ালে নতুন ক্যালেন্ডার আসে – কোথাও কেবলই দিন গুনে, কোথাও শীতে পাতাখসা গাছেদের ডালে ডালে বসন্ত আসার মাঝে, কোথাও বসন্তের দিন ফুরালে আকাশ, বাতাস আগুন হয়ে ওঠার আগে, শরীর দিয়ে, চেতনা দিয়ে যতি খুঁজে নিই আমরা, বর্ষশেষ, বর্ষশুরু। ... ...
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর স্তরে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে মঞ্জু রায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগে গবেষণায় যোগ দিলেন প্রফেসর অমরনাথ ভাদুড়ির কাছে। তারপর গবেষণাই করেছেন সারাজীবন। গবেষণার বিষয় ছিল ক্যান্সারের ওষুধ আবিস্কার। ডঃ মঞ্জু রায় এবং তাঁর স্বামী ডঃ শুভঙ্কর রায় একসঙ্গে কাজ করে কর্কট রোগ বা ক্যান্সারের চিকিৎসায় মিথাইল গ্লাইওক্সাল নামক যৌগটির কার্যকারিতা প্রমাণ করেছিলেন এবং ক্যান্সারের ওষুধ হিসেবে এই যৌগটিকে সাধারণ মানুষের নাগালে আনতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কাজ করেছেন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স (IACS, যেখানে সি ভি রমনও কাজ করেছেন) এবং বসু বিজ্ঞান মন্দিরে; শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার সহ বহু পুরস্কার এবং সম্মানও পেয়েছেন সারাজীবনে। ... ...
সুভাষদা, সুভাষ গাঙ্গুলিকে নিয়ে লিখতে গেলে এখন এই বয়সে এসে ঝাপসা হয়ে যাওয়া স্মৃতি ধূসর পাণ্ডুলিপির মত ভেসে চলে যায়। এই তো সেদিন এপিডিআরের পঞ্চাশ বছর উপলক্ষে সাক্ষাতকার নিতে গেছিলাম সুভাষদা-ভারতীদির ফ্ল্যাটে। সেদিনও সেই প্রথমদিনের মত উষ্ণ গলায় সাদর ডাক। সেদিনও সেই প্রথমদিনের মত খাদির পাঞ্জাবী আর বড় ফাদের পাজামা। সেই প্রথমদিনের মত কদমছাঁট চুল, নাঃ সেবার ছিলো একমাথা কালো এবার পাক ধরেছে তাতে। সেই একই রকম ছিপছিপে অবয়ব, কালো ফ্রেমের চশমা। ... ...
৯২ বছরের কর্মময় জীবন শেষ হল। আমাদের মনের মধ্যে হাহাকার নেই, শূন্যতা কিছুটা আছে, এমন মানুষ কোথায় পাব আর? আমাদের কাছে তিনি ছিলেন বিস্ময়। এই বয়সে এত উৎসাহ, অসুস্থ শরীরেও এমন শারীরিক সক্ষমতা থাকে কি করে? শেষ বয়সেও তাঁর তারুণ্যময় জীবনযাত্রা, কাজকর্ম এবং চিন্তাভাবনা দীর্ঘদিন মুগ্ধচিত্তে স্মরণ করব আমরা। ... ...
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘আমরা বাঙালি’ কবিতায় তাঁর সম্বন্ধে লিখেছিলেন, “বিষম ধাতুর মিলন ঘটায়ে বাঙালি দিয়াছে বিয়া...”, আবার একই বছরে জন্ম হওয়াতে তাঁর সত্তর বছরের জন্মদিনে বন্ধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশস্তিপাঠে বলেন, “কালের যাত্রাপথে আমরা একই তরণীর যাত্রী...”। তাঁকে বাঙালি চেনে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, দেশপ্রেমী, ছাত্রদরদী, দানবীর, ব্যাবসায়ে উদ্যোগী পুরুষ হিসেবে। এ লেখায় তাঁর জীবনের এমন কিছু অংশের কথা বলবো, যার কিছু অন্যান্য বইয়ে পাওয়া গেলেও, বাকি আমি জেনেছি পারিবারিক গল্প হিসেবে। আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জন্ম—অবিভক্ত বাংলার (ব্রিটিশ ভারত) খুলনা জেলার কপোতাক্ষ নদীর তীরে রাড়ুলি কাটিপাড়া গ্রামে এক প্রাচীন জমিদারবাড়ির অন্দরমহলে। সাল ১৮৬১, তারিখ ২রা আগস্ট। বংশের পুর্বপুরুষ দেওয়ান মানিকলাল রায়চৌধুরী বাংলার নবাবের থেকে দক্ষিণদেশে অনেকগুলো তালুক পত্তনি পেয়ে কপোতাক্ষ-তীরে এই অঞ্চলে, গাছপালা কেটে, জঙ্গল পরিষ্কার করে, জমিদারি স্থাপনা করেন। রায়ের আল বা আলি থেকে গ্রামের নাম হয় রাড়ুলি আর গাছপালা কেটে স্তুপ করে রাখা পাশের গ্রামের নাম কাটিপাড়া। মানিকলাল যথেষ্ট অর্থশালী ছিলেন। ভারী লোহার কড়িকাঠের বরগা, চুন-সুরকি দিয়ে তিনি অন্দরমহলে মহিলাদের জন্য একটি দ্বিতল বাড়ি তৈরি করেন। এই অন্দররমহলেরই একতলার একটি ঘরে, মানিকলালের বংশধর হরিশ্চন্দ্র রায়চৌধুরীর স্ত্রী ভুবনমোহিনী দেবী জন্ম দেন প্রফুল্লকে। ... ...
“১৯৮৪ সালে হ্যালির ধূমকেতু যখন এসেছিল, তখন বিড়লা মিউজিয়াম হ্যালির ধুমকেতু দেখানোর ব্যবস্থা করেছিল। তখন আমি সবে এই বিজ্ঞানের জগতে ঢুকেছি। সেই সময়ে আমার ওঁকে প্রথম দেখা। একজন মানুষ, যিনি দৌড়ে একবার ছাদে যাচ্ছেন একবার নিচে নামছেন। কোনও সমস্যা হয়েছে কিনা দেখে তার সমাধান করতেন। এর পর অল ইণ্ডিয়া অ্যামেচার অ্যাস্ট্রোনমার্স মিট, সারা ভারত জুড়ে অপেশাদার আকাশপ্রেমীদের সংগঠন, তার যে মিট, সেটা আমরা প্রেসিডেন্সি কলেজে করেছিলাম। সেই মিটটার জায়গা খোঁজার জন্য আমাদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে বেরিয়েছেন কখনও নেহেরু চিলড্রেন্স মিউজিয়াম, কখনও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল। এরপর একেবারে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে সংগঠন করার পরে। আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান ওঁর সঙ্গে করি এবং শিখি যে বিজ্ঞান কিভাবে ডেমনস্ট্রেট করতে হয়। ... ...
বিজ্ঞানের লোকপ্রিয়করণের পাশাপাশি প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে সমরদার ছিল এক তীব্র অন্তর্দহন। গাছপালা বনাঞ্চল সবুজের আচ্ছাদন পাহাড়ের গালিচা ক্রমবর্ধমান হারে উচ্ছেদ ও ধ্বংস দেখতে দেখতে তিনি মনে হয় যেন পাগল হয়ে উঠতেন। আমাদের বলতেন, মানুষ এত মূর্খ হয়ে যাচ্ছে। সবাইকে বোঝান। জল জমি বায়ু চলে গেলে পশু পাখি নিঃশেষিত হয়ে গেলে মানুষ বাঁচবে কী করে? বাজার দোকান মল আর কেনাকাটার ভিড় দেখতে দেখতে দেশে ক্রমবর্ধমান ভোগবাদের প্রতি আকর্ষণ নিয়ে তাঁর ছিল অন্তহীন ক্ষোভ। বিভিন্ন সভায় গিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলতেন, আমাদের এত জামা জুতো ব্যাগ কেন লাগবে? রাস্তায় আর কত গাড়ি চালাতে পারবে? আর কত কারখানা করতে পারবে না দেশের সীমিত সম্পদকে ব্যবহার করে? সমস্ত সম্পদ যদি আমরাই শেষ করে দিয়ে যাই, ভবিষ্যতের শিশুদের জন্য আমরা কী রেখে যাব? আর তখনই যেন এক বেদনাতুর আক্ষেপ বেজে উঠত তাঁর কণ্ঠে – যারা দেশটা চালাচ্ছে, তারা কি কিছু বুঝতে পারছে না? ... ...
ব্যথা যে অন্য রোগের উপসর্গ মাত্র নয়, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথাকে রোগ হিসেবে গণ্য করা দরকার এই উপলব্ধি আসে এই চিকিৎসকের মননে। তারপর নিজেকে শিক্ষিত করা, স্বীকৃতি অর্জন করা, সরকারি ব্যবস্থার লাল ফিতে ছিঁড়ে ব্যথা চিকিৎসার এক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা ইএসআই হাসপাতালে, ভারতের প্রথম ব্যথা চিকিৎসা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-ই এস আই ইনস্টিটিউট অফ পেইন ম্যানেজমেন্ট। ব্যথা চিকিৎসার এই পুরোধা পুরুষ চলে গেলেন ২০২৩-এর ৫ই জুলাই। ... ...
সময় বদলে গেছে। সন্দীপ দত্তের মতো লিটল ম্যাগাজিনের জন্য জীবনপাত করার লোক চারপাশে আর দেখি কই! টেমার লেনের লাইব্রেরিটির ভবিষ্যৎও অজানা। বিপুল ও দুর্লভ সব পত্রিকার দেখভাল করবেন কে এবার? সন্দীপ দত্ত চলে গেলেন। আমাদের কাছে রেখে গেলেন স্মৃতি ও প্রশ্ন। বেশ-কিছু দায়ও, যা হয়তো পালন করতে পারব না কোনোদিনই। শুধু গর্বের সুযোগ ফিরে-ফিরে আসবে— ‘আমরা সন্দীপ দত্তকে চিনতাম।’ ... ...
পদবী-বর্জিত সুবিমলমিশ্র কোনোদিন একটি বর্ণও কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পত্রিকায় লেখেননি। আমি তাঁকে পড়েছি লিটল ম্যাগাজিনে। সুবিমল কোনোদিন সাহিত্যের প্রতিষ্ঠান, একাডেমির কাছ দিয়ে হাঁটেননি, আমি তাঁকে পড়েছি মানিক তারাশঙ্কর পড়তে পড়তে নিজ প্রয়োজনে। তাঁর লেখার ভিতরে যে ঝাঁজ দেখেছি সেই চল্লিশ বছর আগে, তা আমাকে শিখিয়েছিল অনেক। আমি নিজে সুবিমলের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই সহমত নই, তাঁর পথ আর আমার পথ আলাদা কিন্তু দূরে থেকেও আমি তাঁর লেখার অনুরাগী। ... ...
গোদার বিপ্লব। গোদার নাশকতা। গোদার ধ্বংস, সৃষ্টি, স্পর্ধা সব কিছুই। বিংশ শতাব্দী জ পল সাত্র, বব ডিলান বা বিটলস ছাড়া এরকম সুগভীর চুম্বনের স্বাদ খুব একটা পেয়েছে বলে মনে করা যায় না। তাঁর যাবতীয় রহস্য, দুর্বোধ্যতা, ইমেজ সমস্ত কিছু নিয়ে পাতার পর পাতা লেখাপত্র হয়েছে, তুফান উঠেছে চায়ের কাপে, গবেষণা কাটাছেঁড়া বিতর্ক কিছুই নেই যা এই নামটিকে ঘিরে হয়নি। তিনি সিনেমার শতাব্দী স্পন্দিত নায়ক। তাঁর অরৈখিক সম্পাদনা, কাহিনী বিরোধিতা, জাম্প কাট, প্রতিবিল্পব ও প্রতিসংস্কৃতি প্রায় রূপকথার মতন পঠিত। আজ বিয়োগের মুহূর্তে সেইসব আলোচনা করে আমি এই শূন্য দেবস্থানে বিলাপ করতে চাইনা। কেবল রইল গোদার নামক কোন এক ধ্রুবতারার সাথে একুশ শতকের একটি তাল-ভোলা যুবকের আলাপ আর সম্পর্কের কিছু চিরকুট। ... ...
ইদের দিন সকালে মা গরম পানি করে কাকিমা'র ঘরের ছাদে সাবান শ্যাম্পু মাখিয়ে গা ধোয়াতো, তারপর নতুন জামা পরিয়ে, চুলে ক্লিপ বেড়ি (হেয়ার ব্যান্ড) লাগিয়ে, পন্ডস বডি লোশন গায়ে ও মুখে পন্ডস ক্রিম লাগিয়ে, লিপস্টিক কাজল টিপ দিয়ে সাজিয়ে এমনকি জুতো পরিয়ে দিতো, তারপর দুই ভাইকে পাঞ্জাবি পায়জামা পরিয়ে আব্বার সঙ্গে আমাদের পাঠাতো ইদগাহে। তখনো মেয়েরা তৈরি হইনি, মেয়েদের ইদ গাহে যেতে নেই, মেয়েরা ছেলেরা একসঙ্গে তৈরি হয়ে কী হবে? আগে ছেলেরা স্নান করে তৈরি হয়ে চলে যাক। তারপর ঝট করে স্নান করে রান্না ঘরে রকমারি রান্না করতে বসে পড়ার মত মেয়ে হইনি। ... ...