চলতি বছরে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে উত্তরাখণ্ডে পাঁচ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে দাবানলে। প্রশ্ন উঠতে পারে যে দাবানলে মানুষ মরল কী ভাবে? কারণ দাবানল অরণ্যে হয়। তাহলে কি দাবানল এত বিধ্বংসী আকার ধারণ করেছে যে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে অরণ্যের পাশের জনপদে? এক্ষেত্রে সম্ভাব্য কারণ বলা হচ্ছে মানুষ দাবানল নেভাবার চেষ্টা করতে গিয়ে ঘটেছে এই ঘটনা। পাহাড়ে আদিবাসীদের একটা বড় অংশের মানুষের কাছে বৃক্ষ এবং অরণ্যের মহিমা দেবতার মত। পরিবেশবিজ্ঞান বইয়ের পাতা উল্টে শেখে না তারা। জন্ম থেকেই মানুষ প্রকৃতির হাত ধরে বাঁচে সেখানে, ফলে নাগরিক সভ্যতার বৃত্তের বাইরের মানুষ বৃক্ষদেবতা তথা অরণ্যকে বাঁচাবার চেষ্টা করবে, এমন ঘটনা নতুন নয়। ... ...
এই মুহূর্তে বার বার একটা নাম শোনা যাচ্ছে। সোনাম ওয়াংচুক। অনেকেই হয়তো বলবেন যে লাদাখ নিয়ে নতুন রাজনীতির আবর্ত তৈরি হচ্ছে এই নামটিকে ঘিরে। কিন্তু যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেটা সফল হলে এবং বিভিন্ন জায়গায় আরও কয়েক দশক আগে শুরু হলে হিমালয়ের প্রকৃতি কিছুটা হলেও বাঁচত। ... ...
জলবায়ু পরিবর্তনকে এই বিপর্যয়ের জন্য সরাসরি দায়ী করা যেতে পারে। পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের সম্মুখভাগের অর্ধগলিত অংশে হ্রদ তৈরি হয় প্রাকৃতিকভাবে। এই হ্রদের তিন পাশের দেওয়াল নির্মিত হয় হিমবাহ বাহিত মোরেন দ্বারা। মোরেন শব্দটির অর্থ হল যে পাথর ও পলি হিমবাহ পাহাড় ক্ষইয়ে ভেঙে বয়ে নিয়ে আসে। এই মোরেন-এর মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড় আকারের পাথর থাকে। সূক্ষ্ম দানার পলি খুবই কম। কারণ হিমবাহের গতি শ্লথ; ভেঙে আনলেও পাথর বেশিদূর বহন করে নিয়ে যায় না। ... ...
প্লাবনের বিষয় হিমালয়ে নতুন নয়। ২০০০ সালে শতদ্রু নদের ভয়াবহ বন্যা দেখেছে হিমাচল। ২০২৩ সালে অবশ্য বার বার এসেছে বিপর্যয়। এই বছরে মেঘ ভাঙার ঘটনা এবং তার ফলে হড়পা বান, এসব ঘটেছে বার বার। সারা বিশ্বে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। হিমালয় ব্যতিক্রম নয়। এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অপ্রত্যাশিত এবং অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যোগ হয়েছে মনুষ্যকৃত কিছু হঠকারী কার্যকলাপ। সেই কাজের মধ্যে অন্যতম হল যথেচ্ছ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি গড়ে তোলা। ... ...
এই যে মানুষের হিমালয়কে দেখবার এত ইচ্ছা, সে তো শুধুই তীর্থ দর্শনের পুণ্যার্জনের জন্য নয়। ট্রেকিং করতে যাওয়া ভ্রমণেচ্ছুক মানুষের সংখ্যা কম নয়। পর্বতারোহণ ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে স্পোর্টস হিসেবে। শুধুমাত্র ভারতবর্ষ নয়, সারা পৃথিবী থেকে আগত ট্যুরিস্ট, পর্বতারোহী এদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে দিন দিন। হিমালয়ে পদে পদে এত বিপদ, সে কথা কি মানুষ জানে না? হয়তো এই বিপদের জন্যই হিমালয়ের আকর্ষণ আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। ... ...
বুড়ি জানে হাতে একটু টাকা রাখতে হয়। এদিকটা না দেখলে হবেনা। গঞ্জনা জুটবে, না খেয়েও মরতে হতে পারে। ক্রয়ক্ষমতাই তো ক্ষমতা এখন! বুড়ি বোঝে। এদিকটা না সামলালে চলবেনা, অরণ্যের জীবন তো আজ আর পাওয়া যাবেনা। তাই সে এটুকু করে। বাদবাকি সবসময় তুমি দেখো, বুড়ি আর প্রকৃতি। বুড়ি যেনো কথা বলে, "কীগো কেমন আছ তোমরা সবাই? আমার মন ভালো নেই। বাঁশবাগানে চ্যাং মাছ নেই। খালে শাল মাছ নেই। প্যাঁচার ডাক শুনতে পাইনা। শেয়ালরা কেউ নেই।" ... ...
অর্চনার একজনের ওপর বিরাট ক্রাশ ছিলো। জনৈক 'লেদা রাজা'। যে যেখানে কারুর কোনো গুণের কথা বলুক না কেন, অর্চনা হাসিতে মুখ ভরিয়ে বলতো "লেদা রাজার মত"। আমি তো কিছুতেই ভেবে পেতামনা যে কোনো রাজা 'ল্যাদা' হলে তাঁর এত ভক্ত হবার কী আছে! এদিকে যতই জিজ্ঞেস করা হোক না কেন এই 'লেদা রাজা'টি কে, অর্চনা খালি ফিক করে হেসে বলতো "আমি কী জানি?" শেষে একদিন কৃষ্ণর গল্প শুনে সে সটান বলে বসলো "এটা তো লেদা রাজার গল্প। আন্টি মোটেই জানেনা, লেদা রাজার গল্পে শুধুশুধু ভুলভাল কান্ড ঢুকিয়ে দিয়েছে!" সবাই মিলে তখন নানা প্রশ্ন, নানা মন্তব্য। কারুর রাগ হয়েছে, কেউ আন্টিকে বলে দিতে চাইছে। কিন্তু এই বিস্ফোরক মন্তব্য করে দিয়েই অর্চনা আবার সেই – ফিক, "আমি কী জানি?" মোডে চলে গেছে। ... ...
সুবিনয় রায়ের গান শুনতে গিয়ে দেখলাম সেখানে বিভূতিভূষণ উপস্থিত। " কী অচেনা কুসুমের গন্ধে" জেগে উঠছে ছবি, আর আমি ভাবছি একের পর এক মৃত্যুমিছিলের কথা। যে মানুষ চলে গেলেন, তাঁদের যাওয়া নয়, তাঁদের সঙ্গে সামান্য কিছু কথা, দেখা, কয়েকটি মুহূর্ত। ছোটবেলার বন্ধু, বন্ধুদের বাড়ির লোক চলে গেলেন খুবই অলক্ষ্যে। আরো এমন অনেক মানুষ যাঁদের চিনিনা। কিন্তু শোক ছাপিয়ে এই ভাবনা প্রবল যে এই এঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে সেইসব জমানো মুহূর্তেরা থেকে গেল। এইসব যখন হয়েছে, তখন ভাবিনি কোন কোন পথের বাঁকে আনন্দময় স্মৃতি জমে উঠছে। হেলায় কুড়িয়ে বইয়ের ভাঁজে রাখা সেসব ফুলই অপূর্ব রূপ নিয়েছে এখন। ... ...
চাঁদ আর খরগোশের সম্পর্ক কিন্তু এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছেনা! পশ্চিম গোলার্ধেও গল্প নেই ভেবেছো? অবশ্যই আছে। মেক্সিকোতে আছে। অ্যাজটেকদের গল্প। উত্তর অ্যামেরিকা আর ক্যানাডার উপজাতিদের মধ্যেও আছে। অ্যাজটেকদের গল্পটা এই এশিয়ার গল্পেরই রকমফের অবশ্য। ওখানে 'কোয়েতজালকোটল' বলে একজন দেবতা অমনি মানুষ সেজে পৃথিবী দেখতে বেরিয়েছিলেন। খিদেয় ক্লান্তিতে যখন আর পা চলেনা তখন ঐ বুনো খরগোশ এসে নিজের মাংস দিয়ে ওঁর পেট ভরানোর প্রস্তাব দিয়েছিলো। শেয়াল টেয়াল অবশ্য ছিলোনা। এদিকে 'ক্রী' উপজাতির লোকেরা একটা অন্য গল্প বলে। তাতে খরগোশ অনেক জাদু জানতো। তার এদিকে চাঁদের ভেতরটা দেখার ভারী শখ। কিন্তু তেমন কোনো জাদু ওর জানা নেই যা দিয়ে আকাশে ওঠা যায়। খরগোশ গিয়ে পড়লো সারস পাখির কাছে। 'স্যান্ডহিল ক্রেন' বলে যেগুলোকে ইংরেজিতে। সারস পাখিদের কিন্তু তখন অমনি লম্বা পা ছিলোনা। অন্য পাখিদের মতই ছোটছোট ঠ্যাং। তা, সারসের মনে দয়া হলো। খরগোশকে বললো -- "আমার পা ধরে ঝুলে পড়ো। উড়ে উড়ে তোমাকে চাঁদে নিয়ে যাবো।" তাই হলো শেষ অবধি। খরগোশ তো সারসের পা ধরে লটকে আছে। এদিকে চাঁদ তো আর কাছে নয়! উড়তে উড়তে ওর টানের চোটে পা গুলো একটু একটু করে লম্বা হতে হতে ঐ আজকের সারসের মত হয়ে দাঁড়ালো। তবে গিয়ে তারা চাঁদে পৌঁছেছে। অতক্ষণ ধরে ঝুলে থেকে থেকে খরগোশের হাতও কেটেকুটে এক শা। সেই রক্তমাখা হাত সারসের মাথায় রেখে সে আশীর্বাদ করলো। সেই থেকে স্যন্ডহিল ক্রেনের মাথায় অমনি সুন্দর লাল ছাপ। ... ...
এই অগাস্টের পনেরো তারিখ আরো একটা দেশে একটা বিশেষ দিন। সে হলো চীন। এদিন ওখানে মস্ত উৎসব হবে। চাঁদের উৎসব। চাঁদের উদ্দেশ্যে নাচগান হবে। নানা রকম ভালো খাবার সাজিয়ে দেওয়া হবে। তার মধ্যে সবচেয়ে স্পেশ্যাল হলো 'মুনকেক'। এই উৎসবকে ওঁরা বলেন ‘মাঝ-শরতের চাঁদনী পরব’। ঠিক যে অগাস্ট মাসের পনেরো তারিখেই তা নয়। তবে আট নম্বর মাসের মাঝের দিনে ঠিকই। চীনের চাঁদ-সুর্য্যের ক্যালেন্ডার মেনে ঐ সময়ে যে পূর্ণিমা পড়ে সেইদিনেই চাঁদের পরব হবে। সেটা সেপ্টেম্বর মাসেও পড়তে পারে, কিম্বা অক্টোবরেও। কিন্তু এসব তারিখের কচকচানি নিয়ে কী হবে? আসল হলো এই উৎসবের পেছনে যে গল্পটা আছে সেটা । চীনে মাইথোলজির গল্প। বলছি। ... ...
গোলেনূর দাদীর বাড়ির পেছনে ঝোপ-জঙ্গল থেকে ঘুঘু পাখি থেমে থেমে ডেকে উঠছে। আর গোলেনূর দাদীর ছায়াঘেরা উঠোন একটু পরপর চঞ্চল হয়ে উঠছে রান্নার ছ্যাঁত ছ্যাঁত শব্দে। কড়াইয়ে এবার থেঁতলানো রসুন পড়লো। একটু নাড়তেই তা বাদামী হয়ে আসলো। এরপর অনেকটা পেঁয়াজ কুঁচি আর বুকচেরা কাঁচামরিচ যোগ হলো তাতে। গনগনে আঁচে তেতে থাকা কড়াইয়ে তা পড়তেই ঝাঁঝ ছড়িয়ে পড়লো উঠোনে। দমকে কেশে উঠলাম আমি। ... ...
ইদিশ ভাষা অসম্ভব চাতুর্যের সঙ্গে এই শব্দটিকে মুক্তি দিয়েছে তার সঙ্কীর্ণতা থেকে। সেখানে মিশপখের ব্যুৎপত্তি ইহুদিয়ানার গণ্ডিকে অতিক্রম করে যায়- তাই মিশপখে আমাদের হিসেবে গুষ্ঠি! ইংরেজিতে ক্ল্যান। লক্ষ্যের ঐক্য থাকলে তার ভেতরে বন্ধু বর্গ পাড়া পড়শি যে কেউ ঢুকে পড়তে পারেন। বৃহত্তর পরিবার! যেমন ধরুন এই দুনিয়ার সব মোহন বাগান সমর্থক আমার আপন গুষ্ঠি, তারা সবাই আমার মিশপখে। গোরা ঘোষকে খুঁজে পেয়েছি নুরেমবেরগে, শিকাগোতে সিরাজুল ইসলামকে। আমরা সবাই এক ডালের পাখি, এক গোয়ালের গরু। একই দলের লোক। হাত ঘড়ির সময়টা আলাদা হলেও মনে পড়ে যায় খেলা শেষ হবার বিশ মিনিট আগে আমাদের সবুজ -মেরুন পতাকা নেমে যাবে (আমাদের কালে যেতো)। সেখানে সকলে এক মন এক প্রাণ। ... ...
খোলা উনুনে এবার ঠাকুমা দুধের হাঁড়ি বসিয়েছে। তাতে মিশিয়ে দিয়েছে ঝোলাগুড়। দুধ ফুটছে। সেদ্ধ আতপ চালের মণ্ড ঠাকুমা খুব ভালভাবে মেখে নিলো আর তা থেকে বানালো ছোট ছোট লেচি। লেচিগুলোর মধ্যে গুঁজে দিলো অনেকটা করে পাটালি গুড়। হাতের তালুতে ঘুরিয়ে নাড়ুর মতো গোল হলেই লেচিগুলো দুধের হাঁড়িতে পড়তে শুরু করলো। ডালিম গাছের মাথায় দিনের শেষ রোদের আয়েশি আড্ডা জমেছে। তুলসীতলায় জ্বলে উঠেছে প্রদীপ। ঘটে সিঁদুর গোলায় আঁকা হয়েছে পুতুল। ... ...
সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেই উনচল্লিশটি বিধান বিস্তৃত হল। জেফ্রি আমাকে বোঝালেন সেটি খুবই সহজ ছিল। এই ধরো বিজলি/ইলেক্ট্রিসিটি। সুইচ টিপলে আলো বা অগ্নির উৎপাদন হল। প্রাথমিক উনচল্লিশটি বিধানে আগুন জ্বালানো মানা। তাই এটির বারণ। মোজেসের আমলে মোটর গাড়ি, বিজলি বাতি, হাওয়াই জাহাজ, স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, ফ্রিজ বা ওয়াশিং মেশিন ছিল না। সাবাথের রীতি নীতি অনুসারে বাতিল হল গাড়ি চালানো বা চড়া, বিজলি বাতি জ্বালানো বা নেভানো টেলিভিশন দেখা ফোন করা বা ধরা। বই পড়তে পারেন অবশ্যই। তবে আইপ্যাড বা স্মার্ট ফোনে নয়। তার সুইচ অন করাটা একটা কাজ! ... ...
এই সমাজকে পাল্টাতে হবে। এই শোষণের সাম্রাজ্যকে পাল্টাতে রাজনীতি হচ্ছে পথ। আর কবিতাও এই পাল্টানোর জন্য আমার অন্যতম হাতিয়ার। আর তাছাড়া রাজনীতিকে বাদ দিয়ে ‘মানুষের কবিতা’ লেখা যায় না। মানুষের কবিতা লিখতে চেয়েছিলেন দ্রোণাচার্যের মত অনেকেই। যেমন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র তিমিরবরণ সিংহ। শঙ্খ ঘোষ ছিলেন তিমিরের মাস্টারমশাই। ‘আদিমলতা গুল্মময়’ ও ‘বাবরের প্রার্থনা’র কবিতায় এই সব দিনের আভাস আছে। 'কবিতার মুহূর্ত'। সেখানেও শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন— আটষট্টিতে তিমিরের মুখের রেখায় অনেক বদল হয়ে গেছে। শুধু তিমির নয়, অনেক যুবকেরই তখন পাল্টে গেছে আদল, অনেকেরই তখন মনে হচ্ছে নকশালবাড়ির পথ দেশের মুক্তির পথ, সে-পথে মেতে উঠেছে অনেকের মতো তিমিরও। তারপর একদিন গ্রামে চলে গেছে সে... যাদবপুরের বসতি এলাকার শ্রমিকদের মধ্যে নকশালবাড়ি রাজনীতির আগুন মশালের মতো করে বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিমির। তারপর একদিন মালদার গ্রামে চলে যান ভূমিহীন গরিব কৃষকদের কাছে। ... ...
গোলেনূর দাদির বড়ঘরের বারান্দায় পাটি পড়েছে দুপুরের খানার। হাঁড়ি ভরা ভাত, বাটিতে বাগারের রসুন ভাসা মসুর ডাল আর শাকের ডগা ভাজি। অন্য একটা বাটিতে কাঁচামরিচ আর পেঁয়াজ। কৈ মৌরি দেখে গোলেনূর দাদির চাপা দীর্ঘশ্বাস, কোহিনূরের আব্বা খুব ভালো খায় কৈ মৌরি। উটকো বাতাসের হিসহিস শব্দ। সাথে একটু একটু মেঘের ডাক। আমরা দাঁড়াই না।কৈ মৌরির থালটা গোলেনূর দাদির হাতে দিয়েই বাড়ির পথ ধরি। পা চালিয়ে ভেতর বাড়িতে চলে আসতেই দাদুর ডাক, গিন্নি তোমার জন্য ওল সেদ্ধ ভাত মাখিয়ে বসে আছি তো। কাঁচামরিচ ভাতে মাখিয়ে নেবার আগে ওল মাখানো অল্প ভাত দাদু আমার পাতে তুলে দেয়। আমি কাঠের পিঁড়িতে বসে তা মুখে তুলতেই ঝমঝম করে নেমে আসে বৃষ্টি। উঠোনের বুকে জমে থাকা কালো মেঘের ছায়া বৃষ্টি জলে একটু একটু করে মুছে যেতে থাকে। তাঁতঘরে বাঁশির সুর, ... ...
জেরুসালেম থেকে ছড়িয়ে পড়া ইহুদি ইউরোপে এলেন স্পেন পর্তুগালে (সেফারদি) এবং রাইন নদী ধরে আরেক দল (আশকেনাজি) গেলেন উত্তরে। নাগরিক অধিকার বস্তুটি মেলে না। পশ্চিম ইউরোপের নানা দেশের দরজা তাঁদের জন্য বন্ধ। এমন সময়ে পোলিশ রাজা পুণ্যবান বলেস্লাভ আমন্ত্রণ জানালেন - ইহুদিদের দিলেন ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার, আপন বিচার ব্যবস্থা, জোর করে ধর্মান্তরিত করার বিরুদ্ধে আইনি সমর্থন (কালিস ঘোষণা ১২৬৪)। পরবর্তী চারশ বছরের পোলিশ লিথুয়ানিয়ান রাজত্বে সকল শাসক ইহুদিদের সে অধিকার সসম্মানে রক্ষা করেছেন। ১৫শ শতকে স্পেনে যখন রাজা ফারদিনান্দ ও রানি ইসাবেলার সাদর উৎসাহে কলম্বাসের কল্পিত ভারত আবিষ্কার আর তার সঙ্গে ইহুদি ধর্মান্তর, সংহার ও বিদায় উৎসব চলছে, নরওয়ে সুইডেনের মতো আলোকিত দেশ গুলি অবধি তাদের প্রবেশাধিকার দেয় নি। পোল্যান্ড লিথুয়ানিয়া তাদের স্বাগত জানিয়েছে। স্বাধীনতা ছিল সীমিত, জীবন ধারণ অত্যন্ত কঠিন কিন্তু এই প্রথম ইউরোপ তাদের খানিকটা মানুষের মর্যাদা দিলো। ... ...
রোজরোজ এইরকম সব কথা হয় ওর সাথে। কিন্তু আলাপ পুরো হচ্ছে না। রোজই দেখি লাল টিনের বোর্ডের ওপরে সাদা দিয়ে লিখে রেখেছে "নো সুইমিং", ইংরিজি আর হিব্রু দু ভাষাতেই। এ কী অনাছিস্টি কথা! সমুদ্রে নামবো না? বালির ওপরে বসে ঢেউয়ের শব্দের সব কথা বুঝতে পারি না। আমার শ্রবণেন্দ্রিয় মাছের মত, সারা শরীর জুড়ে। স্পর্শেন্দ্রিয় পার্শ্বরেখা মনে আছে? ভেতরে বড্ড ছটফটানি জমা হয়। "কেন মানা? মানা কেন জলে নামা?" জলের কোয়ালিটি কন্ট্রোলের ওপর খুব কড়াকড়ি ওখানে। নিয়মিত দূষণের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয়। তাতে পাশ না হলে বিজ্ঞপ্তি উঠবে না! থাকো এখন বসে হাত পা গুটিয়ে! ... ...
তবে সবার আগে উনুনে উঠলো জলভরা লোহার কড়াই। এতে বাঁধাকপি ভাপানো হবে। ঠাকুমা খুব ঝুরি করে বাঁধাকপি কাটছে, বাঁধাকপি যত ঝুরি করে কাটা হবে স্বাদ তত খেলবে এর। তবে আমার মনোযোগ বাঁধাকপিতে নেই। সব মনোযোগ ঠাকুমার হাতের শাঁখা-পলা এক অদ্ভুত ছন্দ তুলছে তাতে। ক্রমাগত সে ছন্দ আমার লোভ বাড়িয়ে দিচ্ছে, ও ঠাকুমা, এবার রথের মেলা থেকে আমাকে ঠিক এমন চুড়ি কিনে দিবা? ... ...
কথাটা পরিহাসের ছলে বলা কিন্তু এর ভেতরে একটি গভীর সত্য নিহিত ! ইউরোপের হাজার বছরের ইতিহাসে ইহুদি হবার অপরাধে সরকারি বা অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কর্ম গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল বহুকাল । সে কারণেই ওকালতি , ডাক্তারি জাতীয় বিবিধ স্বাধীন পেশা এবং আপন ব্যবসাতে ইহুদির ভূমিকা বহু বছরে সুপ্রতিষ্ঠিত । মহাজনি কারবারের জন্য তাঁরা বিশেষ দুর্নাম কুড়িয়েছেন , শেক্সপিয়ারের শাইলক যার এক প্রতীক । এক দরোজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে জীবন ধারণের উদ্দেশ্যে অন্য দ্বারে করাঘাত করেছেন। আপন বুদ্ধি ও কর্ম বলে সফল হয়েছেন। ... ...