জনমত সমীক্ষার একজন গবেষক হিসাবে, সাধারণ মানুষের তরফে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মূল্যায়নের চেয়ে পরিবারিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়ায় অনেক বেশি করে আস্থা রাখি। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ইচ্ছামত উজ্জ্বল কিংবা অন্ধকারাচ্ছন্ন হিসাবে তুলে ধরে মানুষকে বোকা বানানো সহজ। কিন্তু দৈনন্দিন সাংসারিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে জনতাকে ঠকানো যায় না। কিন্তু গত ৬ বছর ধরে ‘ইন্ডিয়া টুডে’ মানুষকে প্রশ্ন করে গেছে, “২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের অর্থনীতির কতটা পরিবর্তন হয়েছ বলে মনে করেন?” এরকম প্রশ্নের মাধ্যমে একদিকে সূক্ষ্ম কায়দায় নরেন্দ্র মোদির নামটাকে আরও বেশি করে জনপ্রিয় করে তোলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এই প্রশ্নটি এমনভাবে করা হয়েছে, যার অভিমুখটাই ছিল মোদির পক্ষে। যদিও ৩৬ শতাংশের প্রতিক্রিয়া যে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপ হয়েছে। তুলনায়, ২৮ শতাংশ মানুষের প্রতিক্রিয়া যে ২০১৪-র থেকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি জারি আছে। অর্থাৎ এই যে বেশি সংখ্যক মানুষ যারা নিজেদের পরিস্থিতির উন্নতি আশা করেন কিন্তু তাঁদের আশঙ্কা যে অদূর ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হবে — এই পরিসংখ্যান যে কোনও সরকারের জন্য ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। এমনকি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার পতনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ... ...
উনি যা করেন দেশের ভালর জন্যেই করেন। বেশ সাহসী এবং আউট অফ দ্য বক্স ভাবনা চিন্তা করতে পারেন। কিন্তু একটু সময় দেবেন তো! আমার গিন্নি আমার পেনশনের টাকার থেকে কিছু সরিয়ে ওঁর শাড়ির ভাঁজে রাখেন, সব ৫০০ ও ১০০০ টাকায়। আমি টের পেয়েও টের না পাওয়ার ভান করি; সেগুলোর কী হবে? ব্যাঙ্কে চাকরি করেছি। যোগ দেবার একমাসের মধ্যে, মানে জানুয়ারি ১৯৭৮ সালে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ৫০০, ১০০০, ৫০০০ ও ১০০০০ টাকার নোট ব্যান করেছিল, কিন্তু সেগুলো বাজার থেকে তুলে নেওয়ার আগে সময় দিয়েছিল যাতে পাবলিকের অসুবিধে না হয়। এরকম রাত্তিরে মাত্র ৪ ঘন্টার সময় নয়, এ তো একেবারে ‘উঠল বাই, কটক যাই’ কেস! ব্যাপারটা বোঝার জন্য বিভিন্ন চ্যানেলে প্রধানমন্ত্রী মোদীজি, বিত্তমন্ত্রী অরুণ জেটলী ও বিত্ত সচিব শক্তিকান্ত দাসের বক্তব্য মন দিয়ে শুনে যা বুঝলাম, তা’হল এই: পড়তে থাকুন - নোটবন্দীর পর ৫ বছর.. ... ...
নোটবন্দীকরণের উদ্দেশ্য কী ছিল, দেশজুড়ে তার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াই বা কী ছিল, এসবই এখন ভারতবাসী মাত্রেই তো বটেই, পৃথিবীর প্রায় সকলেরই মোটামুটি জানা। তবু হয়তো আলোচনার কারণে সে সব চর্বিত চর্বণ দু’য়েকবার উঠে আসবে। এটিএমের সামনে সেইসব সুদীর্ঘ লাইন, লাইনে দাঁড়িয়ে মৃত্যু, নগদ টাকার হাহাকার, ছোট ব্যবসাদারদের আর্তনাদ, আরও অসংখ্য গল্প এখন এদেশের লোকগাথা হয়ে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু আজ আমরা মূলতঃ দেখব, পাঁচ বছর পর, নোটবন্দী আমাদের কী দিল না দিল, সেই ব্যালান্স শিটের হিসেব। ... ...
লাইফ ইনশিওরেন্স কর্পোরেশন, মানে এলআইসির কথাই বলছি। সেই মানুষটির কথা ভাবুন - অফিস-ফেরত এক-কাপ চায়ের খরচ বাঁচিয়ে, সস্তা সাবানে দাড়ি কামিয়েও, প্রতিটি পাই-পয়সা তুলে রেখেছেন প্রভিডেন্ট ফান্ডে - যাতে শেষ বয়সে টাকার জন্য বৃদ্ধ মা-বাবার চিকিৎসা, ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষা - আটকে না যায়। কোনও এক শুভ্র, নির্মল সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি তিনি জানতে পারেন - এই প্রতিষ্ঠানগুলি বেমালুম ভ্যানিশ হয়ে গেছে, তাহলে তো তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ারই কথা। হ্যাঁ, এটাই ঘটতে চলেছে। আমাদের আপাত-নিশ্চিন্ত জীবনযাপনের আড়ালে নিঃশব্দে মাথা তুলেছে এক সর্বগ্রাসী সর্বনাশের আয়োজন। পড়তে থাকুন... ... ...
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতি করে এই রাজ্যের কৃষকদের এই কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে বঞ্চিত করছেন বলে বিজেপি প্রচার করেছে, অথচ বাজেট পাশের আগে ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি মমতা বন্দপাধ্যায় এই প্রকল্পে রাজ্য অংশগ্রহণ করবে ঘোষণা করবেন, সে কথা জানিয়ে দেন। তাহলে ভোটমুখী পশ্চিমবঙ্গের ৭২ লক্ষ কৃষক পরিবারের জন্য অতিরিক্ত খরচের সংস্থান বাজেটে কেন করা হল না? মনে রাখতে হবে এই প্রকল্প — যার ফলে কৃষক পরিবারগুলি (যাঁরা প্রকল্পের শর্তপূরণ করছেন) বছরে ৬০০০ টাকা সারাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পাবেন - ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের প্রক্কালে এটাই বিজেপির সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘোষণা ছিল। ... ...
প্রবল নাটকীয়তার গল্প শুনে বড় হয়েছে যে ভারত, সে বাজেটে মজে থাকতে চায়, তার খুব গুরুত্ব আর না থাকলেও। আর মিডিয়ার তো কিছু একটা চাই বেঁচে থাকার জন্য, আত্নহত্যা থেকে বাজেট – কিছুতেই তাদের অরুচি নেই। তাই এই উন্মাদনা - যা প্রায় সার্কাসে পর্যবসিত। এক্ষেত্রে সঙ্গত ভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে এত কথা জানার পরেও আমি কেন এইসব নিয়ে লিখে সময় নষ্ট করছি? আমি আসলে সেই কারণেই লিখছি যে কারণে সিপিএম দুর্গাপুজোয় বইয়ের দোকান দেয়! ... ...
এখানেও বারবার পায়ের তলার মাটি গঙ্গার জলে তলিয়ে যেতে থাকে। ওরা শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে ফেলে আবার খুঁজতে থাকে পায়ের শক্ত মাটি। এভাবে কেটে যায় বছরের পর বছর। নদীর মাছ আর চরের ঘাসে যখন আর পেট ভরে থাকল না ওদের নতুন প্রজন্ম আবার রওনা দিল অন্য অন্য রাজ্যে। দাদন খাটতে। শকুরুল্যাপুরের সামতলী চৌধুরীর বড়ো ছেলে সুজয় চৌধুরী গেছিল দাদন খাটত। রাজ্যের নামটা ভুলে গেছে। ছেলের নামটা সামান্য ভুল হয়ে গেছিল। পাঁচ বছর চলে গেছে মাঝে। পাশের কার থেকে জেনে নিয়ে মনে করে বলেছিল সামতলী। ছেলে মরার কারণটা বলতে পারেনি। শুধু বলেছিল, জানি কি আমি? আমি কি ছিলাম ওখানে? ওই উঁচু বিল্ডিং থেকে পড়ে মরে গেল কি গুম করে দিল কি ওর লাশ পুঁতে দিল কীভাবে বলব বলেন তো দিদিমণি? আমি কি ছিলাম ওখানে? কী করে যাব বলেন দিদি সে কি এখানে? সে তো বিদেশ! ... ...
অনেকে বলবেন, কেন লোকপ্রসার প্রকল্পের সহায়তা আছে, সরকারি রেশন আছে, বাবুদের দেওয়া রিলিফ আছে, সমস্যা কোথায়? সমস্যাটা হল, পেশাগত কাজ বাবদ আয় কখনোই কোন অনুদানের বিকল্প নয়। তার থেকেও বড় কথা হল, এই মানুষগুলি বাঁচেন তাদের শিল্প পরম্পরাকে ঘিরে। সেটাই তাদের আনন্দ, গর্ব এবং জীবন। নিজেদের ভালোবাসার জিনিসটাকে ধরেই তারা জীবিকার রাস্তা গড়তে চান। তা না করতে পারলে হীনমন্যতা আর মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। আমাদের উন্নয়ন, পরিকল্পনা সবকিছুতেই সংখ্যা একটা বিষয়। কিন্তু যারা দেশ তো বটেই বিদেশের দরবারেও দেশের সাংস্কৃতিক পরম্পরাগুলিকে তুলে ধরছেন; যাদের কাজের সুবাদে ছৌ নাচ ইউনেস্কোর ঐতিহ্যবাহী পরম্পরার আন্তর্জাতিক তালিকায় স্থান পেয়েছে; পটচিত্রের নাম জানেন সারা পৃথিবীর শিল্প রসিকরা; তারা কী আর একটু গুরুত্ব আশা করতে পারেন না? ... ...
ভারতের কৃষি সমস্যা বুঝতে গেলে আমাদের প্রথম বুঝতে হবে ভারতের কৃষকের সমস্যা। ওপরের টেবল থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের প্রায় ৮৭% কৃষক আংশিক শ্রমিক। আর তাঁদের প্রায় ৩৫% মূলত মজুরির ওপরেই নির্ভর করেন ক্ষুণ্ণিবৃত্তির জন্য। উচ্চতর কৃষকেরও কৃষি বহির্ভূত শ্রম আয় থাকে, কিন্তু তা কায়িকশ্রমের আয় না, মেধাশক্তির আয়। নিম্নতম ৮৭% কৃষকের জমির পরিমাণ দুই হেক্টরেরও কম। পরিবার পিছু গড় জমির পরিমাণ ১.২ হেক্টর, আর মিডিয়ান আরও কম। অধ্যাপক রঙ্গনাথনের রিপোর্টে আমরা আরও দেখতে পাই যে সমাজের কোন বর্ণের হাতে কত জমি আছে আর তাদের পারিবারিক আয় কত। এই দুই তালিকা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, দরিদ্র কৃষকরা সমাজের কোন স্তরে পড়ে। ... ...
এই তথ্যগুলোর বিচারে বলা যায়, নীতি আয়োগের কৃষি, কৃষক ও কৃষিপণ্য মূল্য নিয়ে যে ধারণা তা অত্যন্ত মায়োপিক। আমাদের কৃষির সমস্যা সমাধানের জন্য নয়, শুধুমাত্র কৃষিপণ্য বাজারে কিছু অ্যাগ্রিগেটরকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য এই আইন করা হয়েছে। নতুন আইন কোনো সমাধানই নয়। তেমনি এখনই এর জন্য কৃষকের ভয়ানক সর্বনাশ হয়ে যাবে এমনও নয়। আবার ফড়ে বলে যে সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তারা ভয়ানক অপরাধ করে যাচ্ছে তাও নয়। এটা ঠিক মধ্যস্বত্বভোগী বা ফড়েরা ভোক্তা যে মূল্য পণ্যের জন্য দেয় তার ১০-৭০% বিভিন্ন পণ্যের জন্য পেয়ে থাকে। কিন্তু এই ব্যবস্থা একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে জন্ম নিয়েছে। অর্থনীতিতে কিছু ভূমিকা এরা পালন করেছে, তা নানা কারণে কৃষকের পক্ষে যায়নি। যতক্ষণ না সেই প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হয় মধ্যস্বত্বভোগী থাকবেই, তা সে ধুতি পরা গ্রাম্য হোক আর কর্পোরেট সংস্থাই হোক। এই মুহূর্তে কর্পোরেট সংস্থার মাধ্যমে কৃষিপণ্যের বাজারজাত করা শুরু হলে খুব দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, পণ্যসংগ্রহের জন্য কর্পোরেটকে সেই ফড়েদের ওপরেই নির্ভর করতে হবে। নীতি আয়োগের আলোচনায় আরও যা লক্ষ করা হয়নি তা হল অকৃষি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ। ভারতের অর্থনীতির যা চেহারা তাতে একে লুম্পেন অর্থনীতি আখ্যা দেওয়াই যায়। কৃষিতে অবাঞ্ছিত শ্রমিক বা এরপর উপার্জন হারানো ফড়ে (ধরে নিলাম হবে) কোথায় যাবে? গ্রামে শুধু নয়, আমাদের শহরেও লুকোনো রয়েছে বেকারত্ব। এসব দেখেও না দেখার ভান করা কৃষিনীতি ও তার ওপর ওপর বিরোধিতা আসলে নিজেদের সামগ্রিক ব্যর্থতা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা, সরকারের এবং বিরোধী পক্ষের। ... ...
সমস্ত ধরনের কাজের যন্ত্রায়ণ আজ এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, কোন একটা কাজ মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি ছাড়া হবে না এটা হয়তো আর বলা যাবে না। ফলে সমস্ত ধরনের কাজে মানব-শ্রমের প্রয়োজন কমতে কমতে একদম তলানিতে। এতে শিল্প ও ব্যবসা মহল আপাততঃ খুব খুশি। উৎপাদন বাড়ছে, খরচ কমছে, ঝামেলা কমছে। প্রাথমিক বিনিয়োগ বাড়ছে অনেকটাই। কিন্তু তার জন্য ব্যাঙ্ক আছে। কিন্তু সমস্যার শুরু সেখানেই। ব্যাঙ্ক কার টাকায় চলে ? সোজা উত্তর, সাধারণ মানুষের টাকায়। মানুষ ব্যাঙ্কে টাকা রাখে। সেই টাকা ব্যাঙ্ক নানান উদ্যোগে খাটায়। মানুষ যে টাকাটা ব্যাঙ্কে রাখে, সেটা কোথায় পায় ? রোজগার থেকে। মানুষের হাতে কাজ না থাকলে সে ব্যাঙ্কে জমা করার টাকা কোথায় পাবে ? কাজেই আজ না হলে কাল ব্যাঙ্কের পুঁজিতে টান পড়তে বাধ্য। ... ...
উন্নয়নের ভূগোল মোটের ওপর কেন্দ্র-পরিধির কাঠামো মেনেই চলে। আর এখানেই করোনার সংক্রমণ একটা নতুন সমস্যার জন্ম দিয়েছে। আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়া গত অনেক বছর ধরেই যে নীতি ধরে এগিয়েছে সেটা হল সংযোগের নীতি। এই সংযোগটা কখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের রূপে এসেছে, কখনো কেন্দ্র-পরিধির রূপে। ... ...
দুনিয়ায় এখন আর্থিক অসাম্য যতখানি, টমাস পিকেটি সাক্ষী, শিল্প বিপ্লবের পর আর কখনও অসাম্য এতখানি বাড়েনি। অসাম্য জিনিসটা তার নিজের কারণেই খারাপ— জিনিসটা অন্যায়, অনৈতিক। কিন্তু, পুঁজিবাদের একটা কু-অভ্যাস, তা নৈতিকতার যুক্তিকে স্বীকার করতে চায় না। কাজেই, চাহিদা-জোগানের দিক থেকেও যে অসাম্য জিনিসটা খারাপ, সেটা মনে করিয়ে দেওয়া ভাল।ধরুন, মোট ১০০ টাকা আছে, সেটাকে দু’রকম ভাবে ভাগ করা যায়— দশ জনের মধ্যে দশ টাকা করে; আর, এক জন ৯১ টাকা, বাকি ন’জন এক টাকা করে। দ্বিতীয় বিকল্পে শেষ ন’জনের ক্রয়ক্ষমতা বলে কার্যত কিছু নেই, ফলে তাঁদের চাহিদাও নেই। প্রথম জনের হাতে অনেক টাকা, কিন্তু ভোগব্যয়ে খরচ করার প্রথমত একটা সীমা আছে; আর দ্বিতীয়ত, প্রাথমিকপ্রয়োজন মেটানোর পর যে ভোগব্যয়, তাতে খরচ হওয়া টাকার বণ্টনও এই দ্বিতীয় বিকল্পের মতোই অসম। ... ...
সুন্দরবনের সন্দেশখালি, ন্যাজাটের বানভাসি গ্রাম বাউনিয়া। মেয়েরা এসেছিল মেডিক্যাল ক্যাম্পে ডাক্তার দেখাতে, তারই মধ্যে একটু ফাঁক পেয়ে ডেকে নিয়ে গিয়ে বসাল বেঞ্চিতে। পেট মোটা এক বিগ শপারে ঠাসা শাড়ি, এক মহিলা ঝুঁকে পড়লেন, অন্যরা বলতে লাগল, ‘বেগুনিটা নয় রে, হলুদটা দেখা।’ হলুদ শাড়িই বেরোল, দু’ধারটা ধরে মেলে দাঁড়ালেন দু’জন, আর সেই গাছ উপড়ে-পড়া, ছাদ উড়ে-যাওয়া বিধ্বস্ত গ্রাম যেন নিমেষে হেসে উঠল। পীতবস্ত্রে অজস্র সোনালি চুমকি, পাড়ে আরও ঘন হয়ে শোভা বাড়াচ্ছে, আর আঁচলে যেন জোনাকির মেলা। এমন অপরূপ শাড়ির কারিগরদের মুখ ম্লান। আগে ১২০ টাকা দিত শাড়িতে চুমকি বসাতে, এখন ৮০ টাকা দেবে বলছে ব্যবসায়ীরা। একটা গোটা শাড়িতে কাজ করতে তিন দিন থেকে সাত দিন লাগে। কত ঘণ্টা, তা চুমকির ঘনত্ব দেখে আন্দাজ করা কঠিন নয়। এই কাজের দাম ৮০ টাকা হলে ঘণ্টায় ক’টাকা মজুরি দাঁড়ায়, ভাবলে মনে মনে মরে যেতে হয়। ... ...
আমাদের দেশের রাজনীতিকরা যেমন ‘দেশ সেবা’ করার জন্য রাজনীতিতে যোগ দেন, আমাদের শিক্ষক চিকিৎসক ইত্যাদি পেশাগুলিও মানুষের কাছে যথেষ্ট ‘সম্মানের’। দুঃখ হল দেশ সেবাটা যেমন শিশুপাঠ্যের মধ্যেই বন্দী থাকে। বাস্তবে শিক্ষকদের সম্পর্কে জনমানসের মনোভাব রাস্তাঘাটে কান পাতলেই বুঝতে পারবেন। আমি শিক্ষক বলতে প্রাথমিক শিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক সকলকেই রেখেছি। কেউ কেউ বলতেই পারেন, না গবেষকদের প্রতি শ্রদ্ধা এখনো অটুট আছে। একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন গবেষকদের প্রতিও শ্রদ্ধা আর অবশিষ্ট নেই। তাঁরা শুধু অর্থের অপচয় করেন বা স্বজন পোষণ করেন এরকম অভিযোগ সর্বত্র শুনতে পাবেন। মোদ্দা কথা পেশা হিসাবে শ্রদ্ধা আর অবশিষ্ট নেই। তাই চলচ্চিত্রের নায়ক বা নায়িকা, ক্রিকেট খেলোয়ার বা রিয়েলিটি শো-র গায়ক, এরাই কিশোর-তরুণদের চোখে আইডল, মডেল, আদর্শ। ... ...
যদি ধরেও নিই যে আগামী তিনটি ত্রৈমাসিকেই বৃদ্ধির হার ০ তে আটকে রইল (অর্থাৎ সংকোচন বা বৃদ্ধি কোনোটাই হল না)—যদিও সেটা বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় অবাস্তব ভাবনা, তাহলেও বার্ষিক সংকোচনের হার অন্তত ৬% তে গিয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে ২০২০-২১ সালে ভারতীয় অর্থনীতির সংকোচনের পরিমাণ স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক ইতিহাসে সর্বাধিক হতে চলেছে। ... ...
কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর আঠেরোশো আঠারো সালের ইংরেজি সংস্করণে "বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েত' শীর্ষক প্রথম পরিচ্ছেদের টীকায় এঙ্গেল্স লেখেন "বুর্জোয়া বলতে আধুনিক পুঁজিপতি শ্রেণীকে বোঝায়, যারা সামাজিক উৎপাদনের উপকরণগুলির মালিক এবং মজুরি শ্রমের নিয়োগকর্তা। প্রলেতারিয়েত হল আজকালকার মজুরি-শ্রমিকেরা, উৎপাদনের উপকরণ নিজেদের হাতে না থাকায় যারা বেঁচে থাকার জন্য স্বীয় শ্রমশক্তি বেচতে বাধ্য হয়।' ... ...