আমি সম্ভবত একটু বেশি আগেই মাৎস্যন্যায় নামে একটা পর্ব লিখে ফেলেছিলাম। বা ওইটা লেখার পরে অন্য পর্ব গুলোর আর অন্য নাম না দিয়ে ওইটাকেই শিরোনাম রেখে বাকি পর্ব গুলো লিখে যাওয়া উচিত ছিল। কারণ মাৎস্যন্যায় পর্যায় থেকে এক বিন্দুও অগ্রগতি হয়নি আমার দেশের। লম্বা সময় হয়ে গেছে দেশের অবস্থা নিয়ে লেখা হয় নাই। আজকে মনে হচ্ছে আরও বৃহৎ পরিবর্তনের আগে আমার ভাবনাটুকু লিখে রাখা দরকার। তাই ল্যাপটপের ভাঙা পর্দাকে এক পাশে রেখেই লিখতে বসলাম।
এক মাসের বেসে হয়ে গেছে এই সরকারের। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য পুরো সরকার এখন পর্যন্ত কোন একটা কাজ ধরতে পারে নাই, শুরু করতে পারে নাই যা জনমনে স্বস্তি এনে দিবে। একটাও না! এইটা একটা অবিশ্বাস্য ঘটনা আ? আইন শৃঙ্খলা তলানিতে নামতে নামতে আর নামার জায়গা পাচ্ছে না! উন্নতির জন্য কোন পদক্ষেপ? না!
উল্টো দেখছি পুলিশ ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছে আর ঠিক আগের কায়দায় মানুষকে ফাঁসানোর দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে। কোন পার্থক্য না। শারিয়ার কবির গেরেফতার হয়েছে, আসাদুজ্জামান নুরের নামে মামলা হয়েছে, গেরেফতারও হয়েছেন, জাফর ইকবালের নামে মামলা হয়েছে, সম্ভবত দুই একদিনের মধ্যে ভদ্রলোককে দেশপ্রেমের জন্য শাস্তির মুখোমুখি হতেই হচ্ছে। দুর্দান্ত উন্নতি! এই দেশে জাহানারা ইমামের নামে দেশদ্রোহিতার মামলা হয়েছে, সেটা একটা নির্বাচিত সরকারই করেছিল, বৃহৎ একটা দলই করেছিল। তারাই আবার ক্ষমতার কাছাকছি। এমন কিছু হওয়াতে অবাক হওয়া মানায় না মনে হয়।
অন্যদিকে দেখেন, যে শঙ্কাটা আমি শুরু থেকেই করে আসছিলাম, জঙ্গিবাদের উত্থান, তা প্রবল ভাবে সত্য হয়ে ফিরে এসেছে! আমার এই আশংকা সত্য না হলে খুব খুশি হতাম। কিন্তু তা আর হল কই? যখন মন্দির ভাঙা হয় তখন আমি বলছিলাম যে যারা ভাঙায় বিশ্বাস করে তারা যে মন্দির ভেঙ্গেই থেমে যাবে এমন ভাবার কোন কারণ নাই। এরপরে ঢুকবে নিজেদের ভিতরে। মতের মিল না হলে ভেঙ্গে দিবে মসজিদ! শুরু হয়ে গেল তাই! একের পর এক মাজার ভাঙা হতে থাকল। সরকার নীরব! সিলেটে মানুষ যায়ই দুইটা কারণে, মাজারে যাওয়া আর চা বাগানে ঘুরা। মাজার বলতে দুইটা প্রধান মাজার। শাহজালালের মাজার আর শাহ পরানের মাজার। আমি নিজে দুইটাতেই বেশ কয়েকবার গিয়েছি। শাহ পরানের মাজারের উপরে হামলা হয়ে গেল! তারা আর গান করবে না এমন শর্ত দিয়ে মাজার রক্ষা করেছে। এইটা তখন শুনে ছিলাম। পরে এখন শুনছি মাজারের খাদেমকে মারতে মারতে মেরেই ফেলেছে! ধারণা করছে অন্তত দুইজন মারা গেছে!
নানা জায়গায় মাজার ভাঙার সাথে সাথেই কক্সবাজারের এক বীর সেনার আগমন ঘটে গেল। তিনি নিজ দায়িত্বে সমুদ্র সৈকতে কোন নারীর পোশাক কেমন তা বিচার করে শাস্তি দিচ্ছেন! কান ধরে উঠবস করাচ্ছেন! না, অবিশ্বাস্য লাগলেও কিছু করার নাই, সব গুলই সত্য। এইসবের পিছনে মানুষের সমর্থন আছে। মাজার ভাঙা হোক আর নারীর পোশাক কেমন তা দিয়ে শাস্তি দেওয়া হোক, বিপুল মানুষের সমর্থন আছে এগুলার পিছনে। আরেক পক্ষ বলছে এরা পতিতা, তাদের শাস্তি দেওয়া ঠিক আছে! জায়েজ করে দেওয়া হল! মানবাধিকার কর্মীরা রেজাওয়ান হাসানের কাছে সরাসরি এই বিষয়ে কথা বলার পরে তিনি নিজে যখন বিষয়টা দেখেছেন তখন কক্সবাজার পুলিশ সেই মহান বীর সেনাকে ধরেছে! বাকি সব জায়গায় মব জাস্টিস চলছে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি, ভু রাজনীতি এগুলা নিয়ে নানা সময় নানা মন্তব্য করে ফেলি। আসলে তো এর বিন্দু বিসর্গও বুঝি না আমি। কী থেকে কী হচ্ছে আল্লা মালুম। ডক্টর ইউনুসকে এক দাগে খারাপ মানুষ বলে দেওয়া সম্ভব না। আমিও বলতে চাই না। কিন্তু তিনি এমন সব কাজ করছেন যার হিসাব ভালো মানুষের খাতায় নাই। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। কে এই তাইজুল ইসলাম? আর এইটা কোন ট্রাইব্যুনাল? একটু চিন্তা করেন! এইটা হচ্ছে সেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যেখানে সমস্ত রাজাকারদের বিচার করা হয়েছে। এখন এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ বাকি যাদের নামে মামলা হয়েছে, হয়ত জাফর ইকবাল, শাহরিয়ার কবিরদেরও এই ট্রাইব্যুনালেই বিচার হবে। মজাটা হচ্ছে কে এই তাজুল ইসলাম প্রশ্নে! এই একই ট্রাইব্যুনালে রাজাকারদের বিচার চলার সময় এই উকিল জামাতের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন! মনে হচ্ছে না এইটা একটা প্রতিশোধের মঞ্চ বানানো হচ্ছে? মনে হচ্ছে না নোবেল জয়ই মানুষটার অন্তর তীব্র ঘৃণায় পূর্ণ? তিনি পিষে মারতে চাচ্ছেন প্রতিপক্ষকে? এতে যদি দেশ, জাতি, মুক্তিযুদ্ধের সাথেও আপোষ করতে হয় তার সেই আপোষে কোন দ্বিধা নেই! আর এইটা বুঝার পরেও তার মহানুবতা নিয়ে কথা বলতে হবে? বলতে হবে আরে তিনি জ্ঞানী মানুষ, ঠিক সব লাইনে এনে ফেলবে! লাইন চ্যুত করার সমস্ত ব্যবস্থা করে সব লাইনে চলবে আশা করা কে কী বলব? আম গাছ লাগিয়ে আনারস পাওয়ার আশা?
কায়দে আজম মোহাম্মদ আলি জিন্নার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে ঢাকায়। স্বাধীনতার পরে এবারই প্রথম এই কাণ্ড ঘটল। এইটাকে ফালতু বলে বাতিল করে দেওয়া যেত যদি না একটা পক্ষ এর আগে থেকেই জাতীয় সংগীত পরিবর্তন, পতাকা পরিবর্তন নিয়ে আলাপ না তুলত। এখন আমি সবগুলোকে যোগসূত্রে মিলাব না? আর শুধু যে মৃত্যুবার্ষিকী পালন তা তো না, সেখানে দাবি করা হয়েছে তিনিই আসল জাতির পিতা। জিন্না না হলে পাকিস্তান হত না, পাকিস্তান না হলে বাংলাদেশ হত না! ঠিক আছে না যুক্তি?
কয়েকটা বিষয় নিয়ে পরিষ্কার থাকা দরকার সবার। বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থান এইটা এখন দিনের আলোর মতো সত্য। হোলি আর্টিজেনে ঘটনা কারা ঘটিয়েছে? হিজবুত তাহরীর। এই সংগঠন এখন সংবাদ সম্মেলন করে বলছে তাদেরকে নিষিদ্ধ খাতা থেকে নাম কাটিয়ে দিতে হবে। তারা মিটিং মিছিল করছে প্রকাশ্যে। ডক্টর ইউনুস এই সব ব্যাপারে নীরব। কেন কে জানে! হিজবুত তাহরীরের উত্থান বিগত সরকারের জন্য বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এইটা এমন একটা সংগঠন যা আন্তর্জাতিক ভাবেই বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর আগে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের কয়েকটি আরব দেশ, জার্মানি, তুরস্ক, পাকিস্তানে হিযবুত তাহ্রীর নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমন একটা সংগঠনের তৎপরতা দেশে বেড়ে যাচ্ছে অথচ কর্তা ব্যক্তিদের কোন হেলদোল নাই! নতুন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কী করছেন আমি জানি না। তিনি যে ৭.৬২ নিয়ে কোন শব্দ উচ্চারণ করবে না তা নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু তিনি যে কোন শব্দই করবেন না তা বুঝি নাই! হিজবুত তাহরীর এখন সরাসরি বলছে তারা এই আন্দোলনের মধ্যে ছিল। তারা যেহেতু নিষিদ্ধ তাই তারা ব্যানার ছাড়া রাস্তায় নেমেছিল। তাদের দাবিকে অস্বীকার করার কোন উপায়ও নাই। হিজবুত তাহরীর সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। হোলি আর্টিজেনের ঘটনার দিকে তাকালেই বুঝা যাবে এইটা। সবাই দেশের বড় বড় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এই আন্দোলনের সবচেয়ে বেশি একটিভ ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই। বিশেষ করে যখন ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খালি করে দেওয়া হয় তারপরে।
লেফটেনেন্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। সরকার না কি এখন বিডিআর বিদ্রোহের সুষ্ঠু বিচার করতে চায়। ঘটনা হচ্ছে এই জাহাঙ্গীর আলমই আওয়ামীলীগ যে তদন্ত কমিটি করেছিল বিডিআর বিদ্রোহের সেই কমিটির প্রধান ছিলেন! এখন? এই প্রশ্ন কী কেউ করবে যে ভাই, এইটা কী হচ্ছে?
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।