এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  কাব্য

  • মহাকাব্যের মহাসাগরে

    TANJAN BOSE লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | কাব্য | ২৭ জুলাই ২০২৩ | ৫৫৬ বার পঠিত
  • ধর্ম, অবতার এবং পুত্র
    তাঞ্জন

    " আজি হতে শতবর্ষ পরে কে তুমি পড়িছ বসে আমার কবিতাখানি... ", অল্প বয়সে এই লাইনটি পড়ে অবাক হয়ে ভাবতুম যে নিজের শিল্পের প্রতি কতটা বিশ্বাস থাকলে এই ছত্রটি লেখা সম্ভব হয়। পরবর্তীকালে একই কথার অনুরণন খুঁজে পাই আরেক মহাকবির শ্লোকে।

    "আচখ্যুঃ কবয়ঃ কেচিৎ সম্প্রত্যাচক্ষতে পরে।
    আখ্যাস্যন্তি তাথৈবান্যে ইতিহাসমিমং ভুবি।। "

    এই আখ্যান পূর্বেও কবিরা বর্ননা করে গেছেন, আজও করছেন, ভবিষ্যতে অন্য কবিরাও করবেন। মহাভারতের আদি পর্বে বর্নিত এই শ্লোকেই মহাভারতের কথা বিস্তৃত হয়েছে। সত্যিইতো, সেই আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত কত কবি কতভাবে মহাভারতের কথা বর্ননা করে গেছেন। কখনো সমসাময়িক রাজারাজরাদের ঘটনা যুক্ত হয়েছে, কখনো বাদ গেছে পুরাতন কোন কাহিনী। এরকম ভাবে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এবং অন্য দেশেও মহাভারতের সব মিলিয়ে অন্তত ২২০০ বিভিন্ন রূপ প্রচলিত। পরবর্তী কালে বিভিন্ন গবেষক চেষ্টা করেছেন এই বিপুল ভান্ডার ঘেঁটে প্রামাণ্য একটি আকর গ্রন্থ রচনা করতে। এই কাজে বারবার এগিয়ে এসেছেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কালীপ্রসন্ন সিংহ, কিশোরীমোহন গাঙ্গুলি, সর্বোপরি পুনার ভান্ডারকর ওরিয়েন্টাল ইন্সটিটিউট অফ রিসার্চ।

    আরেকদিকে মূল মহাভারতকে আকর করে বিভিন্ন কবি বা লেখক বিভিন্ন সময়ে নিজের কল্পনা মিশিয়ে তৈরি করেছেন নতুন গাথা। যেমন বাংলাতে সঞ্জয়, কাশীরাম দাস বা পারগলি মহাভারত। এখন সমস্যা হচ্ছে যে এইসব মহাভারতে মূল ঘটনা যেমন বিবৃত হয়েছে, তেমনই অনুপ্রবেশ ঘটেছে অনেক উপকথা অথবা লেখকের মস্তিষ্ক প্রসূত কল্পনার। ফলত এগুলো যথেষ্ট সুখপাঠ্য হলেও আকর গ্রন্থ হিসেবে প্রামাণ্য নয় কোন মতেই। এঁরা ছাড়াও আরেক দল লেখক আছে যারা দুই মহাকাব্যকে অনুসরণ করেই লিখে গেছেন এবং চলেছে অজস্র গল্প, নাটক, কবিতা, প্রবন্ধ প্রভৃতি। এই শেষ দলের একটা সুবিধা আছে। মূল মহাভারত এতটাই বড় যে অনেক পাঠকের পক্ষে বসে পুরোটা পড়ার ধৈর্য থাকেনা, ফলত এঁরা খোঁজেন এইরকম অনুসারী সাহিত্যকে। এখান থেকেই তাঁরা দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে নেন। এখানে এসে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন সমস্যার। এই লেখককুল অনেক সময়েই লেখার তাগিদে মূলের বাইরেও নিজস্ব ব্যখ্যা বা কল্পনার মিশেল ঘটান। কিন্তু যারা মূল আখ্যান না পড়েই এই অনুসারী সাহিত্য পড়তে শুরু করেন, তারা বিভিন্ন ভুল ধারণার বশবর্তী হন। এরকমই একটি মিথ হল "যুধিষ্ঠিরের বাবা বিদুর।" হ্যাঁ, বাঙালি জনমানসে এই ধারণা প্রবল ভাবে রয়েছে। যারাই মহাভারত নিয়ে সামান্য উৎসাহী, বিভিন্ন প্রবন্ধ বা অনুসারী সাহিত্য নিয়ে নাড়াঘাঁটা করেন, তারাই এই মিথটার সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল।

    কিন্তু এই মিথের উৎস কোথায়? প্রাচীন কোন অনুবাদে, তা,সে কালীপ্রসন্ন হোক বা রাজশেখর কিম্বা কাশীদাস, এরকম কোন তথ্য নেই। এই ধারণার মূল কান্ডারী বলা চলে বাংলার দুজন প্রথিতযশা সাহিত্যিককে। প্রতিভা বসু আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। আনন্দবাজার পত্রিকায় বেরনো এক প্রবন্ধে প্রথম এই দাবী করেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় । এদিকে প্রতিভা বসু তার মহাভারতের মহারণ্যে প্রবব্ধেও একই দাবী করে বসেন। মায় তিনি তো একধাপ এগিয়ে বিদুরকে লোভী, পরগাছা প্রভৃতি উপাধিতেও ভূষিত করেন। অথচ এর স্বপক্ষে কোন যুক্তিপ্রমাণ দেন না, যেটুকুও দেন তাও মূলভাষ্যকে বিকৃত করে মনগড়া এক ভাষ্য। এছাড়াও বাণী বসু তার ক্ষত্রবধূ নামক উপন্যাসে দেখান যে নিয়োগ প্রথায় ব্যাসদেবের কথাতেই বিদুরের ঔরসে আর কুন্তীর গর্ভে জন্ম যুধিষ্ঠিরের। এঁরা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দীপকচন্দ্র, সমরেশ বসু প্রমুখ বিভিন্ন লেখক এই দাবী করে এসেছেন বিভিন্ন উপন্যাস, গল্পে বা প্রবন্ধে। এঁদের কারুরই ভুল ধরার ধৃষ্টতা এ অধমের নেই। কিন্তু মহাকাব্যের একজন পাঠক হিসেবে এই মিথটাকে যাচাই করে দেখতে পারি যুক্তির কষ্টিপাথরে।

    প্রথমে মূল মহাভারতে যাওয়ার আগে চলে যাই আরেক প্রথিতযশা মহাভারত গবেষক নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ির কাছে। সেখানে গেলে দেখতে পাই যে উনি এই মতকে সম্পূর্ন অস্বীকার করছেন। বরং উনি উল্টো যুক্তি সাজিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছেন যে কুন্তী আর বিদুরের মধ্যে এরকম কোন সম্পর্ক ছিল না।

    এবার অন্যের ধ্যান ধারণা বাদ দিই। বরং চলুন ঘুরে আসি এই মহাকাব্যের অলিগলিতে আর টুকরো টুকরো তথ্যগুলো কী বলে শুনে আসি। তবে তার আগে একবার দেখেনি যারা এই সম্পর্কের স্বপক্ষে সরব তাদের যুক্তিগুলো।
    ১ যুধিষ্ঠিরের জন্ম ধর্মের ঔরসে। এদিকে বিদুর নিজেই ধর্মের অবতার। এই কারণে অনেকেই যুধিষ্ঠিরকে বিদুরের ঔরসজাত বলে ধরে নেয়।
    ২ পাণ্ডবরা বনবাসে থাকাকালীন কুন্তীকে বিদুর নিজের বাড়ি নিয়ে গেছিল। এটাতেও অনেকে রসোলো একটি পরকীয়ার গল্প খুঁজে পায়।
    ৩ বিদুরের মৃত্যুর সময় বিদুর যোগবলে যুধিষ্ঠিরের দেহে প্রবেশ করেন। তিনি যুধিষ্ঠিরের প্রাণে নিজের প্রাণ এবং যুধিষ্ঠিরের ইন্দ্রিয়ে নিজ ইন্দ্রিয়ের প্রবেশ ঘটান। অনেকে মনে করেন এই ঘটনা উভয়ের পিতা পুত্র হওয়ার কারণেই ঘটেছে। গুজবের স্বপক্ষে যুক্তিগুলো তো দেখলাম। এবার দেখি মহাভারতে বর্নিত অন্য তথ্যগুলো কী বলছে। প্রথমেই আসি পাণ্ডবদের জন্মকালে।

    পাণ্ডু হরিনরূপি কিন্দম মুনীকে সঙ্গমরত অবস্থায় মারার জন্য অভিশাপগ্রস্ত হয়। অভিশাপ হল, পাণ্ডু কখনো স্ত্রীসংসর্গ করলে তখনই মৃত্যু হবে। (এবং হয়েওছিল তাই) যাইহোক, এই অভিশাপ শুনে দুঃখিত পাণ্ডু বনে চলে আসেন। সঙ্গ নেন তাঁর দুই স্ত্রী কুন্তী আর মাদ্রী। পাণ্ডু বিভিন্ন বন ও পর্বতে ভ্রমন করে শেষে শতশৃঙ্গ পর্বতে এসে থিতু হন। এরমধ্যে একদিন শতশৃঙ্গ পর্বতের ঋষিরা ব্রহ্মলোকে যাচ্ছেন শুনে পাণ্ডুও তাদের সাথে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু ঋষিরা পথের দূর্গমতার অজুহাত দেখিয়ে মানা করেন। পাণ্ডু বোঝেন যে অপুত্রক রাজাকে সশরীরে ব্রহ্মলোকে নিয়ে যেতে রাজী নন ঋষিরা। বস্তুত সেই সময়, নিঃসন্তান মানুষকে অপয়া মনে করা হত। প্রসঙ্গত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে কর্ণ ভীষ্মকে এই কারনেই অপয়া বলে অপমান করেন

    মুনীদের কথায় দুঃখিত পাণ্ডু এসে কুন্তীকে ধরেন সন্তান উৎপাদন এর জন্য। পাণ্ডু বিভিন্ন সমসাময়িক রীতির উল্লেখ করে কুন্তিকে অন্য উপায়ে গর্ভধারণ করতে অনুরোধ করেন। স্বামীর এই অনুরোধে কুন্তি হতবাক হয়ে যান, এবং পৌরাণিক বিভিন্ন কাহিনীর উত্থাপন করে নিজের আপত্তি জানান। কিন্তু সন্তানের আশায় অধীর পাণ্ডু বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে কুন্তিকে বোঝান যে পুত্রোৎপাদনের এবং নরক থেকে রেহাই পাওয়ার এইই একমাত্র উপায়। ( প্রাচীন মতে, পুত্র শ্রাদ্ধাদি করলে তবেই পুন্নাম নামক নরক থেকে রেহাই পাওয়া যায়। পুত্র নামটিও এসেছে এই কারনে)। এইরকম ভাবে বিভিন্ন যুক্তি এবং কাহিনীর মাধ্যমে পাণ্ডু কুন্তীকে নিয়োগপ্রথার মাধ্যমে সন্তানধারণ করতে রাজি করান এবং নিজের সমান জাতি বা উঁচু জাতির কারুর সাথে সঙ্গমে যেতে বলেন। এইখানটা ভাল করে খেয়াল করুন। পাণ্ডু কুন্তীকে বলেন "তুল্যবর্ণ বা অপেক্ষাকৃত শ্রেষ্ঠ বর্ণ দ্বারা পুত্রোৎপাদনের" জন্য।

    এর গুরুত্ব নিয়ে পরে আলোচনা হবে। এখন এগিয়ে চলি ঘটনার সুত্র ধরে। এভাবে বারবার কুন্তীর মানা সত্বেও পাণ্ডু তাকে রাজী করাতে পারলে কুন্তী তখন নিজ জীবনের এক গোপন অধ্যারের কথা জানান রাজাকে, দুর্বাশার দেওয়া বরের কথা। কুমারী কুন্তীর সেবায় তুষ্ট হয়ে ঋষি দুর্বাসা তাকে মন্ত্র দিয়েছিলেন, সেই মন্ত্রবলে কুন্তী যেকোন দেবতাকে ইচ্ছা হলে ডাকতে পারবেন এবং তাদের ঔরসে সন্তান ধারণ করতে পারবেন। এই বলে কুন্তী পাণ্ডুকে জানান যে, এই বরের ফলে কুন্তী পাণ্ডুর ইচ্ছানুযায়ী যেকোন দেবতা বা ব্রাহ্মণকে ডেকে আনতে পারেন। দেবতা হলে তৎক্ষনাৎই পুত্র হবে, কিন্তু ব্রাহ্মণ হলে সন্তান হতে দেরী হবে। পাণ্ডু এই কথা শুনে উৎসুল্ল হয়ে কুন্তী আর দুর্বাসা মুনীকে সাধুবাদ জানান এবং ধর্মরাজকে আমন্ত্রন জানাতে বলেন, কারণ দেবতাদের মধ্যে তিনিই সর্বাপেক্ষা পূন্যবান। আর তার ঔরসজাত পুত্র প্রজাপালনের জন্য যে নীতি নেবে তা কখনোই অধর্মযুক্ত হবে না। অতঃপর কুন্তী ধর্মরাজকে আহ্বান করে বিধীপূর্বক শয্যা গ্রহণ করলে একটি পুত্রসন্তান জন্মায়, ইনিই যুধিষ্ঠির।

    উপরে বর্নিত অলৌকিকতাকে সত্যি ধরলে এটা দেখাই যাচ্ছে যে কুন্তী সন্তান ধারণের জন্য নিয়োগপ্রথা স্বয়ং পাণ্ডুরই অনুমতিক্রমে করেছিলেন। এবং দুজনেরই লক্ষ ছিল উচ্চতর বর্ণের দিকে। তাহলে পারশব বিদুরকে কি ডাকা সম্ভব? আর যদি ডাকাই হত তাহলে ব্যাসদেবই বা লুকাবেন কেন? যেখানে তিনি নিজের জন্মরহস্যই খোলা গলায় প্রকাশ করছেন? আসুন এগিয়ে দেখা যাক এই প্রশ্নের উত্তর পাই কিনা। যুধিষ্ঠিরের জন্মের পর সময় এগিয়ে চলে। একে একে পাণ্ডবদের পাঁচ ভাইয়ের জন্ম, মাদ্রীর সাথে রমণে পাণ্ডুর মৃত্যু প্রভৃতি সমস্ত ঘটনা দ্রুত ঘটে যায় এবং এর অবশ্যম্ভাবী ফল রূপে কুন্তী পাঁচ সন্তানকে নিয়ে ফিরে আসে কুরু বংশের রাজধানী হস্তিনাপুরে।

    কুন্তীর সাথে পর্বতবাসী অন্য মুনিরাও আসেন। মুনিদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ একজন এসে রাজপুরবাসী সকলের সামনে সমস্ত ঘটনা জানান। সাথে পাণ্ডবদের প্রত্যেকের জন্মরহস্যও জানান। কোন দেবতার ঔরসে কোন পুত্রের জন্ম, সমস্ত ঘটনা জানান। এখানে দ্রষ্টব্য, যুধিষ্ঠিরের পিতা হিসেবে কিন্তু মুনি ধর্মরাজের নাম নেয়। বিদুরের নন। প্রসঙ্গত, নিয়োগপ্রথা তো কোন লজ্জাজনক ঘটনা ছিল না। বরং তখনকার দিনে যথেষ্টই সম্মাঞ্জনক এবং বহুল প্রচলিত ঘটনা ছিল। তাহলে মুনিরা তা জানাবে না কেন? তারা জানতে পারবে না এই যুক্তিও অসার। খেয়াল করে দেখুন, মহাভারতে উল্লেখ আছে সে পাণ্ডুর বনবাসের প্রথম দিকে ধৃতরাষ্ট্র তার প্রয়োজনীয় জিনিস পাঠাতেন লোকের হাত দিয়ে। অর্থাৎ, হস্তিনাপুরের সাথে পাণ্ডুর যোগাযোগ ছিলই। পরে যখন পাণ্ডু পুরোপুরি সন্নাসব্রত নিয়ে চলে যান, তখনো ধৃতরাষ্ট্র কোন খবর রাখেন নি তা বলা যায়না। কারণ যুধিষ্ঠিরের জন্মের খবর পেয়েই গান্ধারী হাতাশ হয়ে পেটে আঘাত করে গর্ভপাত করান। অর্থাৎ হস্তিনাপুরের অন্তঃপুরে পাণ্ডুর খবর নিয়মিতই আসত। সেখানে বিদুর যাতায়াত করলে বা কুন্তীর সাথে কোন সম্পর্ক থাকলে সেই খবর আসত না এটা ভাবাটা একটু কষ্টকল্পনা নয় কী? এমনকি পর্বতবাসী মুনিদেরও অজ্ঞাত থাকত কি?

    এরপর তো ঘটনার স্রোত বয়ে চলে নিজের মতন। পাণ্ডব আর কৌরবরা ভীষ্মের তত্ত্বাবধানে দ্রোণের কাছে অস্ত্রশিক্ষা নিতে থাকেন। এখন ছেলেদের নিজেদের মধ্যে খেলাধুলার সময় ভীম সকলের থেকে থাকে এগিয়ে। অন্যান্য ছেলেরাও তার কর্তৃত্ব মেনে নেয়। এদিকে ভীমের দৌরাত্মে অস্থির হয়ে পড়ে কৌরবেরা। একা ভীম কখনো দু তিনজনকে একসাথে ধরে জলে চুবিয়ে দেয়, আবার কখনো কুস্তির ছলে তাদের মুখ ঘষে দেয় শক্ত মাটিতে। এদিকে হয়তো কখনো কৌরবরা গাছে উঠেছে, ভীম এসে গাছ নাড়িয়ে দিল তাদের ফেলে। দূর্যোধন পড়ল মহা মুশকিলে। এতদিন ধরে সে নিরঙ্কুশ সিংহাসনের স্বপ্ন দেখে বড় হচ্ছিল। আর এ ব্যাপারে বাবা মার নিরব প্রশ্রয়ও ছিল। ধৃতরাষ্ট্রের সিংহাসনের
    প্রতি লোভ তো সর্বজনবিদিত। গান্ধারীর হিংসা অত প্রকট না হলেও বোঝা যায় যখন বংশের জ্যেষ্ঠ সন্তান যুধিষ্ঠির হওয়ার খবর পেয়ে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ গান্ধারী নিজের গর্ভপাত করায়। এতে বোঝাই যায় গান্ধারীরও সিংহাসনের প্রতি লোভ যথেষ্টই ছিল। আসলে রাজা হিসেবে পাণ্ডু যথেষ্টই সুশাসক ছিলেন। ফলত তার জায়গায় লোভী, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা ধৃতরাষ্ট্র সঠিক পছন্দ ছিল না কখনোই। হতে পারে রাজরানি হিসেবে যথাযথ মর্যাদা কোনদিন পাননি, ফলত সুপ্ত ইচ্ছা ছিল রাজমাতা হয়ে সেই সাধ পূর্ন করার। ফলত দূর্যোধন বড়ই হয়ে উঠেছিল এক অস্বাস্থ্যকর, হিংসাপূর্ণ পরিবেশে সীমাহীন প্রশ্রয়ের মধ্যে দিয়ে। সেইখান থেকে এসে পড়ল তুমুল প্রতিযোগিতার মুখে। দূর্যোধন ভালই বুঝতে পেরেছিলেন যে, জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠির আর ভীমার্জুনের বাহুবল থাকতে তিনি কখনোই সিংহাসন পাবেন না। ফলত আঁটলেন কুরু বংশের ইতিহাসে প্রথম বারের জন্য ভাতৃহত্যার ফন্দি। ভীমকে বিষ খাইয়ে মেরে যুধিষ্ঠির আর অর্জুনকে বন্দী করে সিংহাসন নিষ্কন্টক করার ফন্দী। পরিকল্পনা অনুযায়ী দূর্যোধন সুদৃশ্য শিবিকা তৈরী করেন নদীর ধারে। এখানে একটা জিনিস লক্ষনীয়। দূর্যোধন এখনো রাজা হয়নি, এমনকি যুধিষ্ঠির থাকাকালীন তিনি অদৌ হবেন কিনা তারও ঠিক নেই। অথচ অনায়াসে নিজের ইচ্ছানুযায়ী শিবিকা স্থাপন করাতে পারছেন যাতে বিলাসের সমস্ত উপকরণ মজুত। সাথে যথেচ্ছ খাবারেরও ব্যবস্থা। এই খরচ যে রাজকোষ থেকেই যাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। ধৃতরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ের এক বড় উদাহরণ এটি। সেখানে নিজের হাতে বিষ মেশানো মিষ্টি ভীমের মুখে তুলে অচেতন ভীমকে ফেলে দেয় নদীতে।

    ভীমকে না দেখে উদ্বিগ্ন কুন্তী আকুল হয়ে খবর পাঠান বিদুরকে। বিদুরও সব শুনে ছুটে আসেন বিধবা সহায়সম্বলহীন বিপদগ্রস্ত এক নারীর কাছে। এখন কুন্তীর এই আকুলতাকে অনেকেই প্রেম ভেবে ভুল করেন। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন তো, কুন্তী পাণ্ডুর স্ত্রী। যে পাণ্ডু যথেষ্ট সুযোগ্য রাজা ছিল, যার রাজ্যশাসনের প্রশংসা প্রায় পাঁচ পুরুষ পরের জনমেজয়কে করেন বৈশম্পায়ন। সেই পাণ্ডুকেও দেখা গেছে কুন্তীর সাথে আলোচনা করতে বিভিন্ন বিষয়ে, তার মতামতকে গুরুত্ব দিতে। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি কুন্তী নিজেও যথেষ্ট প্রাজ্ঞ এবং কুটনৈতিক বুদ্ধিসম্পন্না ছিল। এখন এরকম বুদ্ধিমতী মহিলা রাজ অন্তঃপুরে যে হিংসার রাজনীতি চলছে তা বুঝবেন না, তা তো নয়। নিজের জন্মান্ধ ভাসুরকে ভাল মতই চিনতেন তিনি। জানতেন এই স্নেহান্ধ প্রৌঢ়ের কাছে ছেলে সম্বন্ধে কোন অভিযোগেই লাভ নেই। তাই এটা কি খুবই অস্বাভাবিক যে তিনি ছুটে যান সেই মানুষটার কাছে যাকে স্বয়ং ধর্মের অবতার ধরা হয়? যাকে পরবর্তীকালেও দেখি অন্যায়ের বিরুদ্ধে বারবার প্রতিবাদ জানাতে, যার কুটনৈতিক বুদ্ধি অসামান্য। এর মধ্যে প্রেম কোথায়? দরকার তো নেই। মানুষ সমস্যায় পড়লে সবসময়েই সেই মানুষের কাছেই যাবেন, যার কাছে সমাধানের আশা থাকে। কুন্তীর কাছে সব শুনে বিদুর চার ভাইকে নিয়ে ছুটে যান বনে ভীমের খোঁজে। কিন্তু খালি হাতে ফিরে আসেন। কুন্তী তখন নিজের সন্দেহ জানান যে দূর্যোধনই কোন উপায়ে মেরে ফেলেছে ভীমকে।

    কিন্তু বিদুর নিজেও তখন অসহায়। কুরুবংশের যে অশুভ ভবিষ্যতের আভাস দিয়ে ব্যাসদেব দুই পুত্রবধূ সমেত সত্যবতীকে বনে নিয়ে গেছিলেন পাণ্ডুর শ্রাদ্ধের পরেই, সেই অশুভ ভবিষ্যৎ তখন প্রত্যক্ষ করছেন বিদুর। কিন্তু তিনি জানেন যে এই নিয়ে কোন কথা উচ্চারিত হলে বাকি চার ভাইয়েরও বিপদ, তাই তিনি কুন্তীকে উপদেশ দেন চুপচাপ থাকার। কিছুক্ষন পূর্বেই কুন্তী যে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন দূর্যোধনের দ্বারা ভীমকে হত্যা করার, তা যেন ঘুনাক্ষরেও অন্য কারুর কানে না যায়। তাহলে তাঁদেরও বিপদের আশঙ্কা দূর্যোধনের হাতে। এই বলে বিদুর ব্যাসের গননায় প্রাপ্ত ভীমের দীর্ঘজীবীতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে কুন্তীকে শান্ত থাকার উপদেশ দেন এবং সত্বর ঘরে ফিরে আসেন। এখানে দ্রষ্টব্য যে বিদুর কিন্তু ঠিক ততটাই সাহায্য করেছেন যতটা একজন শুভানুধ্যায়ীর পক্ষে করা উচিত। কুন্তীর আহ্বান পেয়ে ছুটে গেছেন এবং ভীমকে খুঁজেছেনও বাকি পাণ্ডবদের সাথে। কিন্তু তারপর আর কোন সময় নষ্ট করেন নি। যথাযথ উপদেশ দিয়ে ফিরে এসেছেন নিজের ঘরে। হৃদয়ঘটিত কোন দৌর্বল্যের খোঁজ পাওয়া যায়না বিদুরের কোন কাজে।

    এদিকে ভীম নিজের প্রমাতামহ বাসুকির কাছ থেকে নাগ 'জাদু শরবত' খেয়ে অজুত হাতির শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছে মায়ের কাছে। ভীমের কাছে সব ঘটনা শুনে পাণ্ডবরা সহজেই বুঝতে পারে দূর্যোধনের চক্রান্ত। তখন যুধিষ্ঠিরের মুখে শুনতে পাই বিদুরেরই কথার প্রতিধ্বনি। তাঁরা মন্ত্রগুপ্তির মতনই সমস্ত ঘটনা লুকিয়ে রাখেন নিজেদের মধ্যে আর যুধিষ্ঠির ভাইদের জানান এ সেদিন থেকে তাদেরই পরষ্পর পরষ্পরকে রক্ষা করতে হবে। এরপরই মহাভারতকার জানিয়ে দিলেন যে এরপর থেকেই ধার্মিক আর বুদ্ধিমান বিদুর সমস্ত ব্যাপারেই পাণ্ডবদের মন্ত্রনা দিতে লাগলেন।

    আমরা এবার ফিরে যাই বিদুরের কাছে। বারবার যাকে বুদ্ধিমান, প্রাজ্ঞ, নীতিশীল, কুটনৈতিক, স্বয়ং ধর্মের অবতার বলা হচ্ছে তিনিই রাজ সিংহাসনে ব্রাত্য শুদ্রযোনিজাত হওয়ার কারণে। তৎকালীন সমাজে পারশবদের রাজ সিংহাসনে বসার অধিকার ছিল না। তার উপর বাবা বা মায়ের দিক দিয়ে বিদুর হস্তিনাপুর রাজ বংশের সাথে সম্পর্কযুক্তও ছিলেন না। ফলত সমস্ত যোগ্যতা থাকা সত্বেও তিনি সিংহাসন লাভ করিতে পারেন নি। অথচ নিজের সারাজীবন কাটিয়ে দিলেন এই সিংহাসন রক্ষার জন্যই। কুরু বংশের আরেক শুভানুধ্যায়ী ভীষ্মকেও দেখি সদ্য যুবক বিদুরের কাছে তার সমবয়সী বা সামান্য বড় ধৃতরাষ্ট্র বা পাণ্ডুর বিয়ের ব্যাপারে মন্ত্রনা করতে। মনে করবেন রাজ বংশের বিয়ে কিন্তু শুধুই বিয়ে নয়। বরং এর পিছনে রাজনৈতিক অথবা কুটনৈতিক অনেক হিসাবনিকাশ থাকে। ভীষ্ম শান্তনু বেঁচে থাকাকালীনই যুবরাজ হিসেবে সিংহাসনের দায়িত্ব সামলে এসেছেন। পরে সিংহাসনের দাবী ছাড়লেও বিচিত্রবির্যের বকলমে তিনিই রাজ্যের দায়ভার সামলাতেন। খেয়াল করুন ভীষ্ম শুক্র এবং বৃহষ্পতি দুই বিপরীত ঘরাণার রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ, যা,সেই সময়ের পক্ষে সহজে পাওয়া যায়না। এরকম মানুষও সদ্য যুবক বিদুরের প্রাজ্ঞতাকে সম্মান দিচ্ছেন দেখে বিদুরের রাজনৈতিক জ্ঞান সম্বন্ধে ধারণা করাই যায়। আবার আমরা দেখতে পাই অন্য ভাইদের বিয়ে হয়ে গেলেও বিদুরের বিয়ে একটু পরে হয়। কারণ ধরে নেওয়া যায় বিদুরের বর্ণ। পারশব বিদুরের সাথে রাজনৈতিক কারণেই ভীষ্ম অন্য বর্ণের বিয়ে দিতে চাননি। নইলে হস্তিনাপুরের তখন যা প্রতিপত্তি অনায়াসে কোন ছোটখাটো রাজ্য থেকে কন্যা তুলে এনে বিয়ে দিতে পারতেন, ঠিক যেরকম সুদুর গান্ধার রাজের অসামান্যা,রূপবতী কন্যার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন নিজের জন্মান্ধ ভাইপোর। অথচ নিজে গিয়ে কন্যা চাওয়ার প্রয়োজনও মনে করেন নি, দূত পাঠিয়েই কাজ সেরেছিলেন। কিন্তু বিদুরের ক্ষেত্রে একই কাজ করার সাহস দেখান নি, কারণ তিনি জানতেন যে প্রতিলোম বিবাহ দিলে তিনি ঘরে বাইরে ক্ষোভের মুখোমুখি হবেন, তাই বিদুরের জন্য তিনি দেবক রাজের পারশব কন্যাকে খুঁজে বের করেন এবং তার সাথে বিয়ে দেন। তাদের সন্তানও হয়, কিন্তু মহাভারতের পরবর্তী কালে তাদের কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না।

    এবার আমরা ফিরে যাই আগে বর্নিত একটা বিষয়ে। পাণ্ডু যখন কুন্তীকে সন্তান ধারণের জন্য অনুরোধ করছিলেন, তখন তিনি বলেন যে স্ববর্ণের অথবা উচ্চবর্ণের কোন পুরুষকে নিয়োগ করতে। কুন্তী নিজের মন্ত্রপ্রাপ্তির কথা জানালে পাণ্ডু ধর্মকে ডাকার কথা বলেন এবং জানান যে ধর্ম ঔরসে জাত পুত্রের রাজ্যশাসন ধর্মে কখনো অধর্মের প্রবেশ ঘটবেনা। অর্থাৎ আমরা দেখতে পাই সন্তানধারণ এর পিছনে পাণ্ডুর ভবিষ্যতে রাজ্য ফিরে পাওয়ার আকাঙ্খাও কাজ করছে। এখন সে ক্ষেত্রে যে নিজের নিম্ন বর্ণের জন্য সিংহাসনের দাবীদার নয়, যাকে বিয়ে করার জন্য ক্ষত্রিয়া না খুঁজে ভীষ্মকে পারশব কন্যা খুঁজে বার করতে হয় সেই বিদুরকে নিয়োগ করার প্রস্তাব দেওয়া অসঙ্গত এবং অসম্ভব মনে হয়না? খেয়াল রাখবেন, পাণ্ডুরা কিন্তু শতশৃঙ্গ পর্বতে একা ছিলেন না। অন্য মুনিরাও ছিলেন। এছাড়া আগেও দেখেছি হস্তিনাপুরের অন্তপুরেও পাণ্ডুদের খোঁজ নিয়মিত আসত। সেখানে বিদুরের বারবার যাতায়াত কী কারুর চোখ এড়িয়ে যেতে পারে? ফলত ধর্মপুত্র হিসেবে যুধিষ্ঠিরকে পরিচয় দেওয়ার সময়ই কি এই সন্দেহ উঠত না? খেয়াল রাখবেন বিদুর সবার পূজ্য এবং সম্মানীয় হলেও রাজ্যের সিংহাসনে তারই ঔরসজাত সন্তানকে বসালে আপত্তি উঠতই। এবং তা সর্বজনস্বীকৃত হত। কারণ হিসেবে চলে যাই অনুশাসন পর্বে। সেখানে বর্ণশংকর নিয়ে যুধিষ্ঠিরকে বলার সময় ভীষ্ম জানান যে উচ্চবর্গের মাতার গর্ভে নিম্ন বর্ণের পিতার ঔরসজাত সন্তান সমাজের চতুর্বনের কাছেই নিন্দনীয়। যেরকম সূতপুত্র★ হিসেবে কর্ণকে অস্ত্রশিক্ষা প্রদর্শনী বা স্বয়ম্বর সভায় অপমানিত হতে হয় বারংবার। এখন চার বর্ণের কাছেই নিন্দনীয় সন্তান কী করে সিংহাসনের দাবীদার হবে? বিশেষত যেখানে ব্যাসের করা যুধিষ্ঠিরের কুষ্ঠিতে দেখছি রাজচক্রবর্তী হওয়ার যোগ আছে। পারশব ঔরসে জাত সন্তান কী করে রাজচক্রবর্তী হবে? আর কেউ না মানুক দূর্যোধনই এই যুক্তি দেখিয়ে যুধিষ্ঠিরের সিংহাসনে বসার পথ বন্ধ করে দিত। কিন্তু তিনি তা করেন নি। কারণ তিনি জানতেন কুন্তীর মতন রাজনৈতিক প্রাজ্ঞ মহিলা কখনোই বিদুরের ঔরসে নিজের প্রথম সন্তান নেবেন না। এটা সামাজিক এবং রাজনৈতিক কারণেই অসম্ভব। তাই তৎকালীন রাজনীতি এবং সমাজব্যবস্থা সম্বন্ধে অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তিই পাণ্ডবদের জন্মরহস্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন নি। এই সন্দেহ বা গুজব এসেছে অনেক পরে।

    তাহলে বিদুর কেন এত সাহায্য করত যুধিষ্ঠিরদের, কেনই বা কুন্তীকে ঘরে নিয়ে গেলেন বা মৃত্যুর পূর্বে তার দেহ মিশে গেল যুধিষ্ঠিরের দেহে? আসুন আমরা এবার মহাভারত দেখি বিদুরের চোখ দিয়ে। রাজনৈতিক প্রাজ্ঞতা আর বিচক্ষনতায় অগ্রনী হয়েও বিদুর শুদ্রযোনীজাত হওয়ায় কখনোই সিংহাসনের অধিকারী হতে পারেন নি। এই নিয়ে তার মনে কোন ক্ষোভ ছিল কিনা জানা যেই, কিন্তু সিংহাসন এবং কুরু রাজপরিবারের প্রতি তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত এবং চির শুভাকাঙ্ক্ষী। ভীষ্ম বা পাণ্ডুর সময়েও তিনি নিজ বিচক্ষনতার যথাযোগ্য মর্যাদা পেতেন। ধৃতরাষ্ট্রও তার রাজনৈতিক জ্ঞানকে যথেষ্টই সম্মান করতেন। নইলে অপমানিত বিদুর পাণ্ডবদের কাছে বনে চলে যাওয়ায় তিনি আর ফিরিয়ে আনতেন না। এর পিছনে যতটা ভাতৃপ্রেম, তার চেয়েও বেশী রয়েছে বিদুরের অমূল্য পরামর্শ যুধিষ্ঠির পেয়ে যাওয়ার ভয়। যুধিষ্ঠির, কৃষ্ণ আর বিদুর, এই তিনের যোগ কখনই কাম্য নয় ধৃতরাষ্ট্রের কাছে। এছাড়াও পাশাখেলা বা অন্যান্য অনেক সময়েই বিদুরের কাছেই পরামর্শ চেয়েছেন ধৃতরাষ্ট্র। কিন্তু বুদ্ধিমান বিদুর বুঝতে পেরেছিলেন যে অহংকারী দূর্যোধনের কাছে বিদুর যথাযোগ্য মর্যাদা পাবেন না। প্রত্যেক মানুষই চায় নিজ আদর্শ, শিক্ষা, চিন্তাভাবনাকে পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে। বিদুর নিজের সন্তানের মধ্যেও হয়তো নিজের শিক্ষা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পারশব সন্তান হওয়ায় তাদের রাজ বংশে সেরকম উচ্চ জায়গা ছিল না। এমন সময় হস্তিনাপুরে পাঁচ সন্তান নিয়ে পদার্পণ করলেন কুন্তী। যুধিষ্ঠিরের মধ্যে বিদুর দেখলেন নিজের ছায়া। শান্ত, বুদ্ধিমান, দূরদর্শী যুধিষ্ঠির এদিকে বংশের জ্যেষ্ঠ সন্তান। যার রাজা হওয়া নিয়ে স্বয়ং ধৃতরাষ্ট্রেরই কোন সন্দেহ নেই। ফলত বিদুর পেয়ে গেলেন নিজের রাজনৈতিক আর কুটনৈতিক শিক্ষা দেওয়ার যথাযোগ্য পাত্র।

    এদিকে দূর্যোধনের চক্রান্তের ফলে যুধিষ্ঠিরও তখন খুঁজছিলেন উপযুক্ত মন্ত্রনাদাতা। বিদুরের শিক্ষা তিনি গ্রহন করলেন যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে। তাই দূর্যোধনের কূট পরামর্শে ধৃতরাষ্ট্র যখন পাণ্ডবদের বারণাবতে পাঠায়, তখন আমরা দেখি দূর্যোধনদের আচরণে সন্দিহান বিদুরের ম্লেচ্ছ ভাষায় সাংকেতিক ভাবে সাবধানবানী শুনে যুধিষ্ঠির বুঝছেন এবং তা জানিয়ে দিচ্ছেন। এখানে লক্ষনীয় পাশে দাঁড়ানো কুন্তী কিন্তু বুঝতে পারেন নি সেই ভাষা। কুন্তী বিদুরের গুপ্ত প্রনয়ী হলে সেটা একটু অস্বাভাবিক নয় কী? কারণ গুপ্ত প্রণয়ের ক্ষেত্রে সাংকেতিক বা ম্লেচ্ছ ভাষায় কথা চালাচালিটাই তো স্বাভাবিক হওয়ার কথা। দুজনের মধ্যে অবৈধ কোন সম্পর্ক থাকলে তো বিদুর প্রথমেই এই ভাষা শিখিয়ে দেবেন কুন্তীকে! তাই নয় কী! অথচ এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি কুন্তী যুধিষ্ঠিরকে জিজ্ঞেস করছেন বিদুরের কথার মানে। যুধিষ্ঠির কিন্তু বিদুরের যোগ্য শিষ্য। বিদুরের সাংকেতিক কথার মানে যেমন বুঝেছেন, তেমনিই জতুগৃহে গিয়ে সেরকম ব্যবস্থাও নিয়েছেন। জতুগৃহে থাকার কথা শুনে ভীম যখন যুধিষ্ঠিরকে তৎক্ষনাৎ চলে যেতে বলেন যুধিষ্ঠির তখন মানা করেন। তিনি জানান যে তখনই চলে গেলে লোকের সন্দেহ হবে পাণ্ডবরাই আগুন জ্বালিয়েছেন। সেইজন্য তিনি অপেক্ষা করছেন সঠিক সময়ের যাতে জনরোষ কৌরবদের বিপক্ষে যায়। তাই এক বছর অপেক্ষা করে, পাঁচ সন্তান সহ এক নিষাদ নারীকে আমন্ত্রন করে তাদের পেট ভর খাইয়ে এবং পান করিয়ে অচেতন অবস্থায় ঘরে আগুন লাগিয়ে চলে যায়। এর ফল আমরা দেখতে পাই জনরোষ, ঠিক যেমনটা যুধিষ্ঠির চেয়েছিলেন। জনগন ধৃতরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বোঝা যায় বিদুরের রাজনৈতিক আর কুটনৈতিক প্রজ্ঞার যোগ্য উত্তরসুরী হয়ে উঠেছেন যুধিষ্ঠির।

    এরপর বিদুরেরই ব্যবস্থাপনায় পালিয়ে নদী পার হয়ে নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে পাঞ্চাল রাজ্যের কাছে এসে পড়েন পাণ্ডবরা। এখানে এসে ব্যাসের দেখা এবং তারই আগ্রহে স্বয়ম্বর সভায় দ্রৌপদীকে লাভ। এদিকে বিদুর মারফত এই বিয়ের খবর এসে পৌছায় হস্তিনাপুরে। পাণ্ডবদের বেঁচে থাকার খবর শুনে ধৃতরাষ্ট্র সাদরে ডেকে আনেন তাদের এবং ভীষ্ম,দ্রোন আর বিদুরের মধ্যস্থতায় তাদের খাণ্ডবপ্রস্থ ছেড়ে দেন রাজ্যশাসনের জন্য। কৃষ্ণের সহায়তায় এবং চার ভাইয়ের বাহুবলে যুধিষ্ঠির খান্ডবপ্রস্থকে ইন্দ্রপ্রস্থে পরিনত করেন। এরপর দিগ্বীজয় করে অশ্বমেধ যজ্ঞে ব্রতী হন যুধিষ্ঠির। অশ্বমেধ যজ্ঞে তার সম্পদ দেখে দূর্যোধন হিংসায় জ্বলে পুড়ে যান। হিংসার ঘীয়ে আগুন জ্বালে ইন্দ্রপ্রস্থে তার নাকাল হওয়া এবং তা নিয়ে ভীম ও তার সঙ্গীদের উপহাস। লাঞ্চিত, অপমানিত দূর্যোধন নিজের মধ্যেই গজরাতে থাকে। শকুনি অনেক বার চেষ্টা করেন যাতে দূর্যোধন হিংসার বশবর্তী না হয় এবং নিজের রাজত্ব নিয়েই সুখে থাকেন। কিন্তু শেষে ভাগ্নের জেদ দেখে বুদ্ধি দেয় পাশাখেলার। সেই মতই তারা এসে ধৃতরাষ্ট্রকে ধরে বসে। গররাজি ধৃতরাষ্ট্র প্রথমে বিদুরের পরামর্শ নিতে চাইলেও পরে দূর্যোধন আত্মহত্যার ভয় দেখালে স্নেহান্ধ পিতা রাজী হয় এই কুপরামর্শে। বিদুর সব ঘটনা শুনে অনিচ্ছা সত্বেও গিয়ে হাজির হয় যুধিষ্ঠিরের কাছে। যুধিষ্ঠির তার মত জানতে চাইলেও দূত বিদুর নিজ পদমর্যাদা লঙ্ঘন করেন না। কারণ যুধিষ্ঠির তখন নিজেও একজন রাজা। ফলত কোন রাজার দূত অন্য রাজার কাছে শুধুই খবরই দিতে পারে, নিজ মত নয়। তাই ঘুরিয়ে নিজ মত জানিয়ে বার্তাটুকুই দিয়ে যায়। ক্ষত্রিয় যুধিষ্ঠিরের পক্ষে সম্ভব হয় না পাশাখেলার আহ্বান অগ্রাহ্য করার। খেলায় যা হয় তাতো সবাই জানি। একের পর এক দানে যুধিষ্ঠির সব সম্পত্তি, ভাই হারিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেকেও হেরে বসেন। তখন আশ মেটেনা কৌরবদের। শকুনির উস্কানিতে যুধিষ্ঠির পণ রেখে বসেন দ্রৌপদীকে। সত্যবাদী এবং ন্যায়পরায়ণ বিদুরকে এই প্রথম দেখি মুখর হতে। তিনি ন্যায়সংগত প্রশ্ন তুলে দ্রৌপদীকে পণ রাখার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেন। কিন্তু প্রতিহিংসায় মত্ত দূর্যোধন অপমান করে বসে তাকে। তারপর দ্রৌপদীকে ভরা সভায় এনে অপমান, বস্ত্রহরণ এবং ভীমের ভয়ঙ্কর প্রতিজ্ঞা। স্বয়ং দূর্যোধনের ভাই বিকর্নও দাদাদের এই অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে। এইসময় গান্ধারী, বিদুর প্রমুখের পরামর্শে চৈতন্য ফেরে ধৃতরাষ্ট্রের।

    তিনি দ্রৌপদীকে ডেকে বর হিসেবে তার স্বামীদের মুক্ত করে দেন এবং সমস্ত সম্পত্তিও ফিরিয়ে দেন। যদিও তার পরেই দূর্যোধনের প্ররোচনায় তিনি আবার যুধিষ্ঠিরকে পাশা খেলায় ডেকে আনেন। এরপর ১২ বছর বনবাস আর এক বছর অজ্ঞাতবাসে থেকে পুনরায় রাজ্য ফিরে পাওয়ার বাজিতে হেরে বনবাসে যায় পাণ্ডবরা। এইসময় কুন্তী নিজ সন্তানদের সঙ্গে বনে যেতে চাইলেও মানা করেন বিদুর। এতে অনেক কেচ্ছাপ্রিয় বাঙালীই রোমান্টিকতার আভাস খুঁজে পান ঠিকই। কিন্তু একটু তলিয়ে ভাবুন তো। একজন ন্যায় পরায়ণ মানুষ, বারবার প্রতিবাদ করা সত্বেও যখন একটা চরম অন্যায়কে নিজের চোখের সামনে হতে দেখছেন তখন এইটুকু প্রতিবাদ তো তিনি করতেই পারেন। দূর্যোধন আর ধৃতরাষ্ট্রকে এইভাবে বার্তা দিয়ে গেলেন যে তিনি তাদের অধীনে নয়। এছাড়াও তখন তিনি যেভাবে কুন্তীকে আর্যা, কল্যানী বা বৃদ্ধা বলে সম্বোধন করেছেন, তাতেও শত্রুপুরীতে অসহায়, বৃদ্ধা বৌদির প্রতি তার সম্ভ্রমই প্রকাশ পেয়েছে, লালসা বা গোপন প্রেম নয়। অন্যভাবে দেখতে গেলেও, বৃদ্ধা কুন্তীর পক্ষে ১৩ বছরের বনবাসের ধকল সহ্য হওয়ার কথা নয়। অথচ ধৃতরাষ্ট্রের কাছেও তিনি নিরাপদ নন। অন্তত পাণ্ডবদের মাতা হিসেবে দূর্যোধনের কাছে তাঁর লাঞ্চিতা হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা। তাই একজন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ হিসেবে বিদুরের বিধবা এবং বিপন্ন বৌদিকে নিজ গৃহে নিয়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক নয় কি? যেখানে পাশাখেলা বা বনবাসের সাথে কুন্তীর কোন সম্পর্কই নেই? এখানে রোমান্টিকতার অ্যাঙ্গেল কল্পনা করাটাই অস্বাভাবিক, যেখানে মূল কাব্যেই এরকম কোন উল্লেখ নেই।

    এরপর যুধিষ্ঠিরের ভাগ্য এগিয়ে চলে নিজ পথে। বারো বছরের বনবাস এবং এক বছরের অজ্ঞাতবাস সেরে ফিরে এসে রাজত্বের ন্যায্য দাবী জানায়। এমনকি পাঁচটা গ্রাম পেলেই হবে সেই দাবীও জানায়। কিন্তু দূর্যোধন রাজী হয়না স্বাভাবিকভাবেই । ফলস্বরূপ অবশ্যম্ভাবী ভাতৃঘাতী যুদ্ধের সম্মুখীন হয় কুরু পরিবার। এই সমস্ত ঘটনায় বিদুর বারংবার চেষ্টা করে গেছেন যাতে যুদ্ধ না হয়। কিন্তু তার ভাল কথায় ধৃতরাষ্ট্র কান দেন নি। তিনি আর দূর্যোধন চলেছেন নিজের পথে। ফলস্বরূপ কৌরবদের শোচনীয় পরাজয় এবং যুধিষ্ঠিরের রাজ্যলাভ। এরপরে আমরা বিদুরকে সেরকম ভাবে উচ্চকিত হতে দেখিনা। অবশেষে দাদা ধৃতরাষ্ট্র এবং বৌদিদের সঙ্গে তিনিও চলে যান বনবাসে।

    এরপর কাব্যে তার দেখা পাই তার শেষ দিনে। যুধিষ্ঠিররা ধৃতরাষ্ট্রের সাথে দেখা করতে এসেছে দেখেই বিদুর কোন কথা না বলে চলে যান সেখান থেকে। পিছন পিছন তাকে ডাকতে ডাকতে আসতে থাকেন যুধিষ্ঠির। বিদুর এসে দাঁড়ান এক গাছের নিচে। উপবাসে ক্লিষ্ট শীর্ণ চেহারার বিদুরকে চেনা কঠিন তখন। সেখানে দাঁড়িয়েই যুধিষ্ঠির এর চোখে চোখ রেখে বিদুর ধ্যানমগ্ন হন , এবং তার দেহ যুধিষ্ঠিরের দেহে এবং ইন্দ্রিয় যুধিষ্ঠিরের ইন্দ্রিয়ে মিলিত হয়। যুধিষ্ঠির যেন সহসা নতুন উদ্যম আর বল পায় শরীরে। এই ঘটনাকে অনেকেই পিতা পুত্রের মিলন বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু পিতা পুত্র না হিয়ে যদি গুরু শিষ্য হয়? সারা জীবন ধরে আস্তে আস্তে যাকে নিজের সমস্ত শিক্ষা, আদর্শ, গোপন ভাষা, রাজনৈতিক জ্ঞান শিখিয়ে এসেছেন। যাকে বিভিন্ন বিপদে রক্ষা করেছেন বারংবার, সেই প্রিয় এবং সুযোগ্য শিষ্য যুধিষ্ঠিরের দেহেই মিশে গেছেন বিদুর। আসলে মানুষ মরনশীল ঠিকই, কিন্তু তার চিন্তা ভাবনা, আদর্শ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বয়ে চলে। এভাবেই চতুঃবর্ণের কাছে নিন্দনীয় সিংহাসনে বসার অযোগ্য পারশব বিদুর মৃত্যুর পূর্বে লীন হয়ে যায় ক্ষত্রিয় রাজাধিরাজ যুধিষ্ঠিরের দেহে। অমর হয়ে থাকে তার রাজনৈতিক আর কুটনৈতিক জ্ঞান। এভাবেই স্বয়ং ধর্মের অবতার মিশে যায় ধর্মপুত্রে।

    ★ সূত - ক্ষত্রিয় পিতার ঔরসে ব্রাহ্মনীর মাতার গর্ভে জিন্মানো সন্তানকে সূত বলা হয়। এদের কাজ মূকত রাজবংশের স্তব করা।

    তথ্যসূত্র -
    মহাভারত - কালীপ্রসন্ন সিংহ।
    মহাভারতম - হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ অনূদিত
    মহাভারত - বিবেক দেবরায় অনূদিত ( B.O.R.I's critical edition অনুযায়ী)
    মহাভারতের ছয় প্রবীন - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি
    ছবি ঋণ - অক্ষয় লাইব্রেরির মহাভারত থেকে সংগৃহীত।
    লেখাটি কচিপাতা পত্রিকা নিবেদিত স্মরণেষুর বিশেষ ইতিহাস ভিত্তিক সংখ্যায় প্রকশিত।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৭ জুলাই ২০২৩ | ৫৫৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন