
হিন্দি সিনেমার মধ্যে শোলে আর ডিস্কো ড্যান্সার এখনো আমার প্রিয় সিনেমা। শোলে কেন প্রিয় সেটা সহজেই বলতে পারব। কিন্তু ডিস্কো ড্যান্সার কেন সেটা অন্য একদিন না হয় বলব। রায়-সেন-ঘটকের অন্ধ ভক্ত আমি। সেই আমি কি করে ডিস্কো ড্যান্সার ভালবাসি জেনে অনেকে অবাক হয়েছিলেন, আবার অনেকে হেসেওছিলেন। যাইহোক, ভারতীয় চলচিত্র জগতে মিঠুন চক্রবর্তী আমার একজন প্রিয় শিল্পী। মিঠুন যখন বিজেপিতে যোগদান করলেন, মিঠুন-ভক্ত হওয়ায় বেশ দুঃখই হলো। তখনি মনে পড়লো “মৃগয়া”র কথা। আর তার সাথে শুনলাম বিজেপিতে যোগ দেওয়ার মিঠুনের “যুক্তি”---- উনি নাকি সেই ১৮ বছর বয়েস থেকে গরিবদের জন্য কাজ করে এসেছেন। প্রথমে বামপন্থী ছিলেন। তারপর তৃনমূল হলেন। আর এখন বিজেপি। বিজেপিতে যোগ দিয়ে নাকি গরিবদের জন্য কাজ করা সহজ হবে। এ যুক্তি হাস্যকর হলেও ভারতীয় “যুক্তিবাদ” এবং “যুক্তিবাদীদের” সম্বন্ধে আমার তেমন উচ্চ ধরনা নেই। বাঙ্গালি যুক্তিবাদীদের নমুনাও অনেক দেখেছি, তাই মিঠুনের এই কুযুক্তি অবাক করেনি। “আমরা” “ওদের” ত্রাণকর্তা বলার মধ্যে যে কতখানি কাস্ট-প্রিভিলেজ কাজ করে সেটা বোঝার ক্ষমতা যে উচ্চবর্ণের ভদ্রলকেদের নেই সেটা জানি, যুক্তিবাদীদেরও যে নেই সেটা অনেক পরে জেনেছি।
কাস্ট-প্রিভিলেজ বোঝার ক্ষমতা সুশীল ভদ্রসমাজের কেন নেই তার কারণটা অত্যন্ত স্পষ্ট। যে দেশের স্বনামধন্য শিল্পীদের কাস্ট-প্রিভিলেজ বোঝার ক্ষমতা নেই সেদেশে সাধারণ মানুষদের থাকবে কি করে? সত্যজিৎ রায়; দেশ বিদেশ ঘুরে এসেছেন, অনেক জ্ঞান, অনেক পুরষ্কারে পুরস্কৃত; তবু জানতেন না “ব্ল্যাক-ফেসের” রেসিজম। জানতেন না মুখে কালো রং মাখিয়ে ভদ্রলোকদের “ছোটলোক” সাজানোর অন্তর্নিহিত বর্ণবাদ। রায়ের “অরণ্যের দিন রাত্রি” আমার নিজের একটা প্রিয় ছবি। বহুবার দেখেছি। ডায়লগ সব মুখস্থ। ট্যারান্টিনো (Quintin Tarantino) ওনার “পাল্প ফিকশান (Pulp Fiction)” ছবিতে সবজান্তা খুনে ভিন্সেন্ট (Vincent Vega) আর কথায় কথায় মনগড়া বাইবেল শ্লোক আওরানো বন্দুকবাজ জুলসকে (Jules Winnfield) নগ্ন করে আপাদমস্তক হোশ পাইপ দিয়ে স্নান করিয়ে রক্ত-ময়লা ধুয়েছিলেন। রায়ও “আমি লোক হাসাই না” বড়লোক অসীম, “কনভেনশনাল ভালছেলে” চাকুরীজীবী সঞ্জয় আর “আমি তো মানুষ” বেকার শেখরকেও পাতকুয়োর ঠাণ্ডা জলে গাত্রস্নান করিয়ে বেয়াজ্জতি করেছিলেন। সেন্সরের ভয়ে রায়বাবু তো তাও তিনজনকে একটা করে জাঙ্গিয়া দিয়েছিলেন; গল্পের লেখক সুনীল গাঙ্গুলী সেটাও দেননি। মৃণাল সেনও অহংকারী ভুবন সোমকে ঐ একইরকমভাবে হেনস্থা করেছিলেন। একদিকে যেমন রায়বাবুর ছবিতে সুশীল সমাজের ভদ্রলোকগুলোর অহংকার একে একে গুঁড়িয়ে দেওয়া দেখে উৎফুল্ল হওয়া যায়, অন্যদিকে সিমি গ্রেওয়ালকে কালো রং মাখিয়ে আদিবাসী সাজানোর ঘৃণ্য বর্ণবাদ নিয়েও সমালোচনা করা যায়। রায়ের “অরণ্যের দিন রাত্রি” নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে; যদিও সে সব সমালোচনার বেশিরভাগই অর্থহীন কারণ ভারতীয় চিত্রসমালোচকদের চলচিত্র সম্বন্ধে জ্ঞান সীমিত। তারও কারণ সমালোচকদের কাস্ট-প্রিভিলেজ। আদিবাসীদের সমাজকে ছোট করে দেখানো হয়েছে বলে খানিকটা সমালোচনা হলেও, “ব্ল্যাক-ফেসের” নির্লজ্জ রেসিজম নিয়ে তেমন সমালোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সত্যজিৎ রায় বামপন্থী ছিলেন বলেই জানি। মৃণাল সেন তো সক্রিয় ছিলেন। আজও মৃণাল সেন নাম শুনলেই বামেদের লালাস্রাব হয়। রায়ের “অরণ্যের দিন রাত্রি” নিয়ে সামান্য সমালোচনা হলেও, সেনের “মৃগয়া” নিয়ে হয়নি। চক্কত্তিবাবু আর মমতাদেবী কে রং মাখিয়ে আদিবাসীর ভূমিকায় ব্যাবহারের এপ্রোপ্রিয়েশন (appropriation) বা আত্মসাতের বর্ণবাদ বোঝার ক্ষমতা মৃণালবাবুরই যদি না থাকে, সমালোচকদের মধ্যেই বা কোথা থেকে আসবে? মজার ব্যাপার যে রায়-সেন আপ্প্রপ্রিয়াসনের বর্ণবাদ যে একেবারে বুঝতেন না তা নয়। মৃণালবাবুর “আকালের সন্ধানে” মন দিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে যে আপ্প্রপ্রিয়াসন বা আত্মসাৎ কী তাঁরা দুজনেই জানতেন। তাই ডিস্কো ড্যান্সারের মিঠুন চক্রবর্তী যখন নিজেকে “গরিবদের ত্রাতা” মনে করে বিজেপিতে যোগ দেন তখন তাঁর কাস্ট-প্রিভিলেজই প্রকাশ পায়। আর এই কাস্ট-প্রিভিলেজ ডিস্কো ড্যান্সারের মিঠুনের না থাকলেও “মৃগয়া”র মিঠুনের পুরদমে ছিল যার আজ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
রায়-সেনরা বড় হয়েছেন ফ্রয়েড-মার্ক্স-রবীন্দ্রনাথ পড়ে তাই তাঁদের “ফিল্ড নোটস” লাগে। একথা আগন্তুকে রায়বাবু তাঁর অলটার ইগো মনমোহন মিত্রর মুখ দিয়ে বলিয়েছিলেন। অর্থাৎ রায়বাবুও আত্মসাতের অর্থ ভালই জানতেন। এঁরা ফ্রয়েড-মার্ক্স-রবীন্দ্রনাথ পড়েছেন, কিন্তু ডুবয়স (W.E.B. Dubois) পড়ে দেখেননি। বাবাসাহেব আম্বেদকার কিন্তু ডুবয়স পড়তে বলেছিলেন। তবু এঁরা পড়েননি। “Three musketeers” হয়তো পড়েছেন, কিন্তু গল্পের লেখক মিশ্র-বর্ণ আলেকযান্দ্রে দুমাকে (Alexandre Duma) যে আর সব মিশ্র-বর্ণ কৃষ্ণকায়দের মতই ইতর দাসপ্রথার দুঃসহ বোঝা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়ছিল সে কথা কি জানতেন? “Uncle Toms Cabin” নিশ্চয়ই পড়েছেন, “Gone with the wind” দেখেছেন কিন্তু দুটোরই অন্তর্নিহিত বর্ণবাদের কথা বোধহয় জানতেন না। তাই তাঁদের নানা কাজে জ্ঞানে-অজ্ঞানে তাঁদের কাস্ট-প্রিভিলেজের বর্ণবাদ ফুটে উঠেছে। এটা হলফ করে বলা যায় যে রায় বা সেন আর যাই করুন বিজেপিতে কোনদিন যোগ দিতেন না। কিন্তু তাঁদের কাস্ট-প্রিভিলেজ বর্ণবাদে গড়া সুশীল ভদ্রসমাজের ভদ্রলোকরা যে বিজেপিতে যোগ দেবেন এতে অবাক হবার হয়তো কিছু নেই। তবু দুঃখ হয়েছে কারণ আমার কাছে মিঠুন চক্রবর্তী ডিস্কো ড্যান্সারের মিঠুন, “মৃগয়া”র নয়।
a | 220.24.***.*** | ১৫ মার্চ ২০২১ ০২:১৭103672অসম্ভব বাজে লেখা
santosh banerjee | ১৬ মার্চ ২০২১ ১২:৩২103768কি যে কইতে চায় !!অরে বোঝান কেউ ..ভাষার গুরুচন্ডালি আর আঁতেল খিচুড়ি দিয়া পেট ভরানো যায় না দাদু !!সোজা কথা সোজা ভাবে কইতে কি মাগ্গো ফাটে ???? অখনে আসল কথা টা অইলো ..মিঠুন চক্রবর্তী অইলো একটা "রেনেগেড ""মাল !!মাল কইলাম কারণ উনি সর্ব গুন সম্বন্ধিত ।।.যারে কয় গিয়া """কোন গুন নাই তার কপালে আগুন ""!!এই মাল রে লইয়া বেশি ভাজ্যের ভাজ্যের করা দরকার নাই !!সালারা আইস্যা পড়ছে কিছু কামাইবার লাইগ্যা ।..কামায়া যাইবো গিয়া উটি তে ।..মজা করতে ।..!!!"ব" কারান্ত গালাগালি দিয়া এই গুরু চন্ডালির পাতা অপবিত্র করলাম না !!
বাইরে দূরে | ১৭ মার্চ ২০২১ ০১:৩৭103811সহমত। একথা গুলো বলা সাহসীর কাজ। কিনতু অত্যনত জরুরী। ধন্যবাদ। তবে একটু দেখে নেবেন ওটা দুবোয়া হবে ডুবয়স নয়।
বাইরে দূরে , অসংখ ধন্যবাদ লেখার ভাবটা বোঝার জন্য। এটা সবাই বুঝবে না জানতাম :)
ডুবয়সটা ঠিকই আছে। আমি যে ভাবে ওনার নাম উচ্চারণ করা হয় সেটা শুনে লিখছি। উনি ফারসি হলে হয়তো আপনি যেমন বলছেন ঠিকই। কিন্তু উনি আমেরিকান। তাই উচ্চারণটা দুবয়স। "এস" টা উহ্য নয়।
সত্য সত্যই ইনি কত্তো জানেন ! জ্ঞানের ঘূর্ণিপাক লাগিয়ে দিলেন যে।
মাথা ধরিয়ে দিলেন গো !! দোহাই গুরুচণ্ডালি , এট্টু রহম করেন ।