এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • প্যারিস পাণ্ডুলিপি এবং অর্ধেক আকাশ

    Sakyajit Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২২ অক্টোবর ২০১৭ | ৩০৭৪ বার পঠিত
  • (গত এক বছর ধরে কার্ল মার্ক্সের দুশ'তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আরেকরকম পত্রিকাতে মার্ক্সের বিভিন্ন লেখাপত্রে কম আলোচিত দিকগুলো, যেমন জেন্ডার, ধর্ম, প্রাক-পুঁজিবাদী সমাজ, জাতিসত্বার আত্মনিয়ন্ত্রণ, গ্রান্দ্রিস, শেষ জীবনের নোটবুক ইত্যাদি নিয়ে একটা সিরিজ লিখছি। লেখাগুলো এক এক করে ফেসবুকে আর্কাইভ করে রাখব। নোটসে ফুটনোট দেবার অপশন এখনো আসেনি , দুর্ভাগ্যবশত। তাই ডিরেক্ট রেফারেন্স দিতে পারা গেল না, প্রাসঙ্গিক গ্রন্থনির্দেশ দিয়ে দেওয়া হল)

    "কখনো বিপ্লব হলে পৃথিবীর স্বর্গরাজ্য হবে/ শ্রেণীহীন রাস্ট্রহীন আলোপৃথিবীর সেই দেশে/ আপনি বলুন মার্কস, মেয়েরা কি বিপ্লবের সেবাদাসী হবে ?" এরকম এক অভিযোগমূলক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে একদা তাঁর কবিতা শেষ করেছিলেন নারীবাদী কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত। কবিতাটির মধ্যে অন্তর্নিহিত প্রশ্ন যেটা ছিল -- কেন মেয়েদের গৃহশ্রমকে বামপন্থীরা পূর্ণ শ্রমের মর্যাদা দেবেন না? তাহলে কি মেয়েরা শুধুমাত্র বিপ্লবীর ভাত রেঁধে দিয়েই তাঁদের অবদান সম্পন্ন করবেন? সত্যিই কি মার্ক্সীয় সমাজবিপ্লবে মেয়েদের স্থান তাহলে সেই রান্নাঘরেই?

    প্রশ্নটা গুরূত্বপূর্ণ কারণ গত একশ বছর ধরে নারীবাদ এবং মার্ক্সবাদের পারস্পরিক সম্পর্কটা অম্লমধুর থেকে গেছে। প্রথম পক্ষের একটা প্রধান অভিযোগ ছিল উপরোক্ত কবিতাটির মতই- সবই যদি একমাত্র শ্রেণিসংগ্রাম দিয়েই ফয়সালা করবার কথা মার্ক্স বলে গিয়ে থাকেন, তাহলে নারীমুক্তির সংগ্রামে কি সাম্যবাদীদের পাশে পাওয়া যাবে না? দ্বিতীয় দলের অভিযোগ আবার অনেকটা বিপরীত রকমের--লিঙ্গ-পরিচিতি নির্ভর রাজনীতিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নারীবাদীরা অর্থনীতি এবং শ্রেণীর প্রশ্নটিকে খাটো করে দেখেছেন। এমনকি কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যেও মহিলারা বিভিন্ন সময় তাঁদের পুরুষ কমরেডদের সঙ্গে তীব্র মতাদর্শগত তর্কে লিপ্ত হয়েছেন। লেনিন এবং ক্লারা জেটকিন ও আলেক্সান্দ্রা কোলনতাই-এর কথোপকথন এই প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থেকেছে। এমনকি নিজের পার্টির কমরেডদের লিঙ্গ-অসহিষ্ণুতা নিয়ে তিতিবিরক্ত লেনিন তো ক্লারা জেটকিনকে বলেই ফেলেছিলেন "মেয়েদের সম্বন্ধে যে কোনো কমিউনিস্টের সঙ্গে কথা বলতে যাও, দেখবে তাদের মধ্যে থেকে একটা করে দানব বেরিয়ে আসছে"।

    কিন্তু কার্ল মার্ক্স নিজে কী ভাবতেন এই বিষয়ে? প্রচলিত জনপ্রিয় তত্ব অনুযায়ী, নারীমুক্তি বিষয়ে মার্ক্স উদাসীন ছিলেন। পল্লবগ্রাহীরা এই মতামতকে আঁকড়ে ধরে অনেকদিন ধরেই মার্ক্সের বিরুদ্ধে নারীবিদ্বেষের অভিযোগ তুলে আসছেন। এমনকি এঁদের কেউ কেউ এতদূর পর্যন্ত চলে গেছেন যে কার্ল মার্ক্সের ব্যক্তিগত জীবনকে পর্যন্ত তাঁদের স্বকপোলকল্পিত তত্বের সমর্থনে হাজির করেছেন। মার্ক্স নাকি সংসারের প্রতি উদাসীন ছিলেন, জেনির সুখদুঃখের দিকে ফিরেও তাকাতেন না, এবং তাঁর পরিচারিকার গর্ভে এক অবৈধ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তাই তাঁকে অবশ্যম্ভাবী ভাবে নারীবিদ্বেষী ভণ্ড হতেই হবে ! সম্প্রতি ত্রিস্তান হান্টের লেখা এঙ্গেলস বিষয়ক গ্রন্থগুলি, বিশেষত 'ফ্রক কোটেড কমিউনিস্ট' বইটিতেও মার্ক্স এবং এঙ্গেলসকে মোটা দাগের নারীবিদ্বেষী হিসেবেই উপস্থাপনা করা হয়েছে। এই বাজারচলতি মতবাদটি বেশ পুরনো এবং এতটাই ভিত্তিহীন যে এর বিরুদ্ধে কলমের কালি অপচয় করাটাও যেন বেশি হয়ে যায়। কার্ল এবং জেনির তীব্র প্রেম এবং ঝোড়ো দাম্পত্য বিষয়ে আসল তথ্য জানতে গেলে মেরি গ্যাব্রিয়েলের লেখা 'লাভ এন্ড ক্যাপিটাল' বইটি পড়লেই হয়। যদিও সেটি পড়বার পর এই মার্ক্সবিদ্বেষীরা বেশ খানিকটা আশাহতই হবেন।

    কিন্তু আরেকটি সমালোচনার জায়গা আছে, যেটি গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণের দাবী রাখে। এই ধারার সমালোচকেরা মোটামুটিভাবে মার্ক্সবাদ এবং বামপন্থার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েও এটা অভিযোগ করেন যে কমিউনিস্ট আন্দোলনের তাত্বিক ভিত্তিভূমির মধ্যে শ্রেণি যত গুরুত্ব পেয়েছে, লিঙ্গসাম্য ব্যাপারটি পায়নি ততটা। মার্গারেট বেন্সটন, মারিয়ারোজা ডালা এবং টেরেন্স কার্ভারের মত মার্ক্সীয় নারীবাদীরাও ধ্রুপদী মার্ক্সবাদকে মাঝে মাঝেই সমালোচনা করেছেন তার অর্থনৈতিক কার্য-কারণ সূত্রের প্রাধান্যের জন্য। সমস্ত উপরিকাঠামোই যেন এই কার্য-কারণের এক কঠিন নিয়মতান্ত্রিক রজ্জুতে বাঁধা হয়ে আছে, যাকে মেনে চলাটাই নিয়তি, মার্ক্সবাদের এমন পাঠও করেছেন কেউ কেউ (যদিও এঙ্গেলস নিজেই বারবার তীব্রভাবে এই পাঠের বিরোধী ছিলেন)। লিঙ্গসাম্যের প্রশ্নটি কি তাহলে শ্রেণির লেজুড় হয়েই থাকবে? না কি শ্রেণি-নিরপেক্ষ ভাবেই তাকে বিকাশ করাবার মার্ক্সবাদী তত্ব মিলবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে মার্ক্সের নারীমুক্তি বিষয়ক চিন্তাগুলিকে একবার খুঁটিয়ে পড়া প্রয়োজন, যে কারণে এই লেখার অবতারণা। বর্তমান লেখাতে শুধুমাত্র ১৮৪৪ সালের প্যারিস পাণ্ডুলিপি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কারণ মার্ক্সের লিঙ্গসাম্য বিষয়ক চিন্তাভাবনার প্রথম উল্লেখযোগ্য হদিশ দেখা যায় এই খসড়াতেই। এই খসড়ার একটা খুঁটিয়ে পাঠ প্রয়োজনীয়, যেহেতু এই লেখাগুলি মার্ক্সীয় নারীবাদের পাঠের আদি ভিত্তিভূমি রচনা করেছিল ।
    প্যারিস পাণ্ডুলিপিতে বিচ্ছিন্নতার আলোচনার সূত্রে পরিবার এবং নারীপুরুষের সম্পর্কের সবথেকে স্পষ্ট বিশ্লেষণ এসেছিল সম্ভবত নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদটিতেঃ

    “গোষ্ঠিগত লালসার বলি এবং হাতের পুতুল হিসেবে নারীর সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যেই মানুষের অসীম অবনতির চিত্রটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে... মানুষের সঙ্গে মানুষের সবথেকে প্রয়োজনীয়, স্বাভাবিক এবং আশু সম্পর্কটি হল পুরুষ ও নারীর সম্পর্ক। এই সহজাত সম্পর্কে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক হল সরাসরি মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, এবং একইভাবে মানুষে মানুষে সম্পর্ক হল সোজাসুজিভাবে মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক, তার নিজস্ব স্বাভাবিক কার্যাবলীর সম্পর্ক। এই সম্পর্ক থেকে তাই পর্যেবক্ষণের মাধ্যমে জানা সম্ভব ঠিক কতখানি বহির্প্রকৃতি মানবপ্রকৃতির সঙ্গে এক হয়ে যাচ্ছে এবং কোথায় মানবপ্রকৃতি মিলে যাচ্ছে বহির্প্রকৃতির সঙ্গে। এই সম্পর্ক থেকেই বোঝা যায় মানবজাতির কতখানি অগ্রগতি হল। এটাও বোঝা যায় মানুষ কতখানি তার গোষ্ঠীর সদস্য হয়ে উঠেছে এবং নিজেকে সেরকম ভাবতে পারছে।"

    এই অনুচ্ছেদটির মত এত স্পষ্টভাবে মার্ক্স সম্ভবত আর কোথাও নারীপুরুষ সম্পর্ক এবং সেই সূত্রে মানুষের বিচ্ছিন্নতা নিয়ে আলোচনা করেননি। খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করবার আগে একটি প্রাসঙ্গিক তথ্য জানিয়ে রাখা যাক। মার্ক্স এখানে 'স্বাভাবিক' শব্দটি একমাত্র প্রথমবার সাধারণভাবে লিখেছিলেন। তারপর থেকে প্রতিবার আইটালিকস হরফে (অর্থাৎ একটু বাঁকা করে) লিখেছেন। এর কয়েকটি ব্যাখ্যা আছে, যেগুলির সম্বন্ধে বিশদে জানতে গেলে মার্ক্সীয় নারীবাদী হেদার ব্রাউন ও রায়া দুনায়েভস্কায়ার আলোচনা উল্লেখযোগ্য। আমরা সংক্ষেপে এই লেখায় সে ব্যাপারে আলোকপাত করেছি।

    প্রথম বাক্যে গোষ্ঠীগত লালসার বলি হিসেবে মেয়েদের এক ঐতিহাসিক চিত্র বর্নণা করেছেন মার্ক্স। এই "গোষ্ঠীগত লালসার বলি এবং হাতের পুতুল' শব্দবন্ধটি কেন ব্যবহার হল, তার একটা ব্যাখ্যা আমরা নিজেদের মত করে দেবার চেষ্টা করেছি। সেই আলোচনাতে ঢুকছি এই নিবন্ধের শেষাংশে । আপাতত বর্তমান লেখার প্রথম বাক্যটি থেকে যা দেখা যাচ্ছে, পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা আসলে মানুষের অসীম অবনতির দিকেই অংগুলিনির্দেশ করে। নারীকে হাতের পুতুল বানালে অধঃপতন হয় পুরুষের, এরকম দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের আভাস আছে এখানে। দ্বিতীয় বাক্যে লেখক নারী পুরুষের জৈবিক সম্পর্কের ব্যাপারে ইংগিত দিলেন। প্রজননের খাতিরে নারী পুরুষ সম্পর্ক অন্যতম প্রধান হয়ে উঠেছে। কিন্তু একই সঙ্গে এই সম্পর্ক 'আশু' (ইংরেজি অনুবাদে 'Immediate')। অর্থাৎ, এখানে প্রজননের খাতিরে জৈব প্রবৃত্তির আদানপ্রদান আশু প্রতিক্রিয়া। কিন্তু প্রতিটা সমাজেই নির্দিষ্ট সামাজিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে নারীপুরুষ মিলিত হয়। অর্থাৎ নারীপুরুষের 'স্বাভাবিক' সম্পর্কের দুরকম মানে হয়। একটি অর্থ জৈব প্রবৃত্তির উপর ভিত্তি করে যে স্বাভাবিক আকর্ষণ জন্মায় সেটা, অপরটি হল সমাজ নামক বস্তুটি বাইরে থেকে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে যে 'স্বাভাবিকতা' নির্মাণ করে সেটা। মার্ক্স এই দুখানাকে আলাদাভাবে বোঝানোর জন্য আইটালিকসের ব্যবহার করেছেন।

    এর পর মার্ক্স প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সমাজ-অনুমোদিত সম্পর্কের দিকে নির্দেশ করলেন। মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব, তাই বহির্জগতের সঙ্গে মানিয়ে নেবার চেষ্টার মধ্যে দিয়ে মানুষের সঙ্গে সেই জগতের সম্পর্ক আসলে মানুষের সঙ্গে তার সমাজের অন্যান্য সদস্যের সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে উদ্ভাসিত হয়। অর্থাৎ সমাজ ও প্রকৃতির মধ্যে অনপনেয় দূরত্ব নেই। তারা দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়াতে একে অপরের সংগে সম্পর্কিত।
    তাহলে মানবসমাজ যদি প্রকৃতির সঙ্গে এই দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়াতেই যুক্ত থাকে, সেই সংযুক্তির একটি প্রধান পূর্বশর্ত হবে বহির্বিশ্বের সঙ্গে নিরন্তর আদানপ্রদান। অর্থাৎ মানুষের যেটা দরকার তা হল প্রকৃতিকে তার জীবন-প্রণালীর এক অতিপ্রয়োজনীয় অংশ হিসেবে বুঝতে চাওয়া। এখানে এসে মার্ক্স প্রথম তাঁর পূর্বসুরি দার্শনিকদের থেকে আলাদা হয়ে গেলেন। এর আগে অ্যাডাম স্মিথ, রিকার্ডো থেকে শুরু করে প্রুঁধো পর্যন্ত সব রঙের দার্শনিকেরা বলে এসেছিলেন প্রকৃতিকে জয় করবার কথা, বহির্বিশ্বের সত্বা হিসেবে উপস্থিত যে প্রকৃতি তাকে বশীভূত করবার কথা। কিন্তু মার্ক্স প্রথম বললেন যে এই প্রকৃতি মানবসত্বার বাইরে নয়, বরং তার অস্তিত্বের একটা গুরূত্বপূর্ণ অংশ। আর ঠিক সেই কারণেই, তাঁর মতে, “ ঠিক কতখানি বহির্প্রকৃতি মানবপ্রকৃতির সঙ্গে এক হয়ে যাচ্ছে এবং কোথায় মানবপ্রকৃতি মিলে যাচ্ছে বহির্প্রকৃতির সঙ্গে,” সেটার ধারণা করা সম্ভব। এই যুক্তি অনুসরণ করেই এরপর মানবপ্রকৃতির সামাজিক সত্বাটির দিকে নির্দেশ করা হয়েছে। মানুষ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নয়, সে তার গোষ্ঠীর সদস্যও বটে । এই যে যৌথ যাপনের বোধ, সেটাকেও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক দিয়ে বোঝা সম্ভব--"মানুষ কতখানি নিজেকে তার গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ভাবতে পারছে"।

    মার্ক্স তারপরে লিখলেন
    "নরনারীর সম্পর্ক হল মানুষের সবচেয়ে স্বাভাবিক সম্পর্ক। এই সম্পর্ক থেকে তাই বোঝা যায় মানুষের স্বাভাবিক ব্যবহার কতখানি মনুষ্যজনোচিত, এবং তার মনুষ্যজনোচিত সারাংশটি কতখানি স্বাভাবিক, তার মানবিক প্রকৃতি কতখানি স্বাভাবিক। মানুষের প্রয়োজন কতখানি মানবিক প্রয়োজন, এবং অন্য মানুষ কতখানি ও কীভাবে তার সেই প্রয়োজনের তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে, এবং সে একই সঙ্গে ব্যক্তি ও সমষ্টির অংশ হিসেবে কতখানি সহাবস্থান করতে পারে, এসবই বোঝা যেতে পারে এই সম্পর্ক থেকে"।

    আবারো, উপরোক্ত অনুচ্ছেদের আইটালিক্সগুলি মার্ক্স নিজে দিয়েছিলেন। প্রথমেই তিনি নরনারীর সম্পর্কের স্বাভাবিকতার দিকে অংগুলিনির্দেশ করলেন। কিন্তু এই স্বাভাবিকতা দ্বৈত অর্থ বহন করে বলে শব্দটিকে বাঁকানো অর্থে লেখা। প্রথম অর্থে যেটা স্বাভাবিক তা হল প্রজননের উদ্দেশ্য । দ্বিতীয় অর্থটি হল, মানুষের গোষ্ঠী সদস্য হিসেবে যৌথতার পরিচয়ে বাঁচাকে সার্থক করে তোলাটাই স্বাভাবিকতা, আর সেই কারণেই নারীকে দেখতে হবে তার ব্যবহারিক মূল্য বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে, পুরুষের সঙ্গে সমান দৃষ্টিতে। এই কারণে মার্ক্সের এই মন্তব্যটি গুরূত্বপূর্ণ-- " অন্য মানুষ কতখানি ও কীভাবে তার সেই প্রয়োজনের তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে" । কারণ প্যারিস পাণ্ডুলিপিতেই মার্ক্স একাধিকবার মন্তব্য করেছেন যে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় মানুষের চোখে অন্য মানুষ প্রতিভাত হয় তার ব্যবহারিক মূল্য দ্বারা। মানে, কারখানার মালিক শ্রমিকের চোখে প্রতিভাত হন তাঁর 'মানুষ' পরিচয়ের মাধ্যমে নয়, অর্থদাতা হিসেবে। স্ত্রী অথবা প্রেমিকা আসলে যৌন চাহিদা পূরণের লক্ষ্য কিংবা মানসিক জোরের জায়গা। পরিণত সন্তান বাবা মায়ের কাছে খাদ্য বস্ত্র চিকিৎসা জোগানের মাধ্যম। অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রেই মানুষ সত্বাটির অবমূল্যায়ন ঘটে গিয়ে প্রাধান্য পাচ্ছে তার উপযোগীতার সত্বাটি । বিচ্ছিন্নতার একটা বড় উৎস এখানেই। তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে মার্ক্স বললেন যে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে যাবার প্রথম অনুশীলনটি হল নারীকে তার অবমূল্যায়নের থেকে বার করে এনে স্বাভাবিক সম্পর্কের দৃষ্টিতে দেখা (বলাই বাহুল্য, এখানে 'স্বাভাবিক' দ্বিতীয় অর্থে ব্যবহৃত)।

    তার মানে একটি সত্যিকারের অগ্রসর সমাজব্যবস্থায় মানবিক সম্পর্ক কোনো জাগতিক আদানপ্রদানের উপর নির্ভর করবে না। নারী এবং পুরুষ দুজনেই তাই একে অপরকে সমান এবং সম্পূর্ণ মানবিক দৃষ্টিতেই দেখবে। আমরা 'মানবিক' ঠিক সেই অর্থেই ব্যবহার করছি যে অর্থে মার্ক্স ব্যবহার করেছেন। মানে, মানুষের যেটুকু অংশ তাকে মনুষ্যজনোচিত করে তোলে, তার বোধ বুদ্ধি অনুভূতি, ঠিক সেগুলোই, এবং সমস্ত জাগতিক লাভ ক্ষতির হিসেব বাদ দিয়েই, সামগ্রকভাবে 'মানবিক'। অর্থাৎ মার্ক্স এখানে 'স্বাভাবিক' শব্দটির শুধুমাত্র প্রথম অর্থ নিয়েই সন্তুষ্ট নন। নরনারীকে যৌন মিলনের উদ্দেশ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতেই হবে এ কথা অনস্বীকার্য। কিন্তু নারীর শেষ সেখানেই নয়। বরং নারীকে তার সম্পূর্ণ পরিপূর্ণতায় উত্তীর্ণ হতে হলে নারী এবং পুরুষ উভয়কেই সেই জৈব প্রবৃত্তি অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। লিংগবৈষম্য সম্পূর্ণ দূরীকরণের মাধ্যমেই একমাত্র সেটা সম্ভব। মজার কথা, মার্ক্স তাঁর নোটবুকে এখানে জার্মান শব্দ 'aufhebung’ ব্যবহার করেছিলেন। শব্দটির মানে শুধু অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া নয়, বরং একই সঙ্গে দমন করাও বোঝায়। তৎকালীন রক্ষণশীল প্রুসিয় ঘরানাতে শিক্ষা পেয়েছিলেন মার্ক্স। তারই কিছু অবশেষ কি তাঁর অবচেতনে থেকে গিয়েছিল? যৌন সম্পর্ককে অতিক্রম করবার অর্থ বোঝা যায়, কিন্তু দমন করবার ইংগিতের মধ্যে কি সামান্য শুচিবায়ুগ্রস্ততা লুকিয়ে ছিল না?

    আরেকটা বিষয়ের দিকে একটু আলোকপাত করতে চাই। কারণ নারীমুক্তির প্রসঙ্গে মার্ক্সবাদীদের অবস্থান কোন প্রশ্নে অন্যান্য উদারনৈতিকদের থেকে আলাদা তার একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে এটা। প্যারিস পাণ্ডুলিপির উপরোক্ত আলোচনা থেকে যেটা বোঝা যাচ্ছে, যেটা মার্ক্স স্পষ্ট করে লিপিবদ্ধ করেছেন -- একটি সমাজে মেয়েদের অবস্থান কীরকম, সেটা দেখে সেই সমাজের একটি সার্বিক অগ্রগতির ব্যাপারে ধারণা করা সম্ভব--"এই সম্পর্ক থেকেই বোঝা যায় মানবজাতির কতখানি অগ্রগতি হল"। এই কথাটা খুঁটিয়ে পড়বার দরকার আছে। কারণ মার্ক্স ঠিক অবলাবান্ধব মানবতাবাদী ছিলেন না যিনি মহিলাদের সম্মান করা বিষয়ক ফাঁকা বুলি আওড়াতেন। তাঁর প্রতিটি বক্তব্যের পেছনে থাকত সমাজ-অর্থনীতি বিষয়ে নিজস্ব অনুধাবন। ঠিক এইরকম কথাই তাঁর আগে ইউটোপিয়ান সমাজতান্ত্রিক চিন্তাবিদ ফ্যুরিয়ের অথবা ষষ্টদশ শতকের ইউরোপের মানবতাবাদী কবিরা বলে গিয়েছেন। সত্যি বলতে কী, জুলিয়েট মিশেলের মত নারীবাদীরা এটাও বলেছিলেন যে ফ্যুরিয়েরের ১৮৪১ সালের মন্তব্য-- "নারীমুক্তি কতখানি হল সেটা দিয়ে সার্বিক মুক্তির ধারণা করা সম্ভব" -- মার্ক্স সেটাকেই পুনরাবৃত্তি করছেন। কিন্তু মার্ক্স যদি সেটাই করতেন তাহলে তাঁকে তার জন্য কলমের এতখানি কালি খরচ করতে হল কেন? কেনই বা 'স্বাভাবিক' শব্দটিকে দুটো আলাদা অর্থে বোঝাতে হল? মার্ক্স তো চাইলেই ফ্যুরিয়েরের কথাটি লিখে দিয়ে কাজ সারতে পারতেন ! তাহলে ঠিক কোথায় তাঁর এই বক্তব্য আলাদা হয়ে যায়?

    প্যারিস পাণ্ডুলিপিতে, এবং সেই সময়ের অন্যান্য লেখাপত্রগুলিতেও বটে, মার্ক্স যে নতুন সামাজিক সম্পর্কের উদ্ভবের রূপরেখা কষেছিলেন, সেটা পুঁজিবাদী উৎপাদন প্রণালীর থেকে প্রকৃতিতে সম্পূর্ণ আলাদা হবে। সেটি চরিত্রে হবে প্রগতিশীল, কারণ এক নতুন ধরণের সামাজিক সম্পর্কের সৃজনশীলতা হবে সেই উৎপাদন ব্যবস্থার ভিত্তিভূমি। সেই সামাজিক সম্পর্ক মূল্য নামক এক প্রাণহীন বিচ্ছিন্ন ধারণার উপর নির্ভর করবে না, করবে মানবিক ও সৃজনশীল আদানপ্রদানের উপর। ফলস্বরূপ, এতদিন ধরে যে মানুষ সমাজের মধ্যে তার উপযোগীতাকে মেপে এসেছে শুধুমাত্র স্থূল অর্থের ভিত্তিতে, সে এই প্রথমবার তার মধ্যে নিহিত যে অনন্ত সম্ভাবনা, সেটার সম্বন্ধে সচেতন হবে। তাহলে সেই সম্ভাবনা সবথেকে বেশি করে অনুভব করবে সমাজের প্রান্তিক বর্গগুলি, যার মধ্যে প্রধান হচ্ছে নারীরা । এতদিন ধরে নিষ্পেষিত থাকার পর তাদের এগিয়ে যাবার জন্য যে এক বিশাল খোলা মাঠ পড়ে আছে, এবং সৃজনশীল উৎপাদন প্রণালীর মধ্যে তাদের অবদান রাখবার অধ্যায়টি যে সবে শুরু হল, এই চেতনা যখন নারীর মধ্যে আসবে, ঠিক তখন থেকেই পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার মৃত্যুঘণ্টা বাজবার শুরু। আর ঠিক সেই কারণেই মেয়েদের অবস্থান সামাজিক অগ্রগতির গুরূত্বপূর্ণ সূচক। তাই প্যারিস পাণ্ডুলিপিতে মার্ক্স যখন মন্তব্য করেন "সাম্যবাদ হল মানুষ বনাম প্রকৃতি এবং মানুষ বনাম মানুষের সংঘাতের সত্যিকারের সমাধান”, তখন এই বাক্যটির মধ্যেই নিহিত থাকে উপরোক্ত যুক্তিগুলি। মানুষ বনাম মানুষের সংঘাতের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে লিঙ্গ দ্বন্দ্ব। তাহলে এটা বলা যায় যে সাম্যবাদই একমাত্র ব্যবস্থা যেখানে পুরুষ বনাম নারী এই দ্বন্দ্বের অবসান সম্ভব। ফ্যুরিয়েরের মত উদারনৈতিকেরা যেখানে নারী কল্যাণের প্রসঙ্গ এনেই ক্ষান্ত দিয়েছেন, মার্ক্স সেখানে একধাপ এগিয়ে তার সঙ্গে পুঁজিবাদের বিলোপের প্রশ্নটিকে জুড়ে দিয়েছেন।

    এই লেখার প্রসঙ্গে মার্ক্সবাদী তাত্বিক রায়া দুনায়েভস্কায়া একটি গুরূত্বপূর্ণ মূল্যায়ন করেছেন। তাঁর পাঠ পরবর্তীকালে নারীবাদের একটি মার্ক্সবাদী ঘরানাকে সূচিত করেছিল বলা যায়। দুনায়েভস্কায়ার মতে, মার্ক্স একটি সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা আনয়নের উদ্দেশ্যে নারীজাতির অবমূল্যায়নকে বিলুপ্ত করবার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। মানুষকে মানুষতর হয়ে ওঠবার উদ্দেশ্যে (দুনায়েভস্কায়ার গ্রন্থে প্রথমে ‘man’ এবং পরে ‘human’ শব্দদুটি ব্যবহৃত হয়েছে) মেয়েদের উপর যুগ যুগ ধরে চলে আসা নিষ্পেষণের অবসান জরুরী। একমাত্র তবেই নতুন সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এখানেই দুনায়েভস্কায়া চিরাচরিত মার্ক্সবাদী ধারণাটির মধ্যেই একটি অন্য প্রস্থানপথের হদিশ দিয়েছেন। তিনি বলছেন মার্ক্স যদিও নারীজাতির মুক্তি চেয়েছেন শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা গঠনের উদ্দেশ্যে, কিন্তু সেটার বাইরেও এই মুক্তিকে দেখতে হবে মেয়েদের নিজস্ব ইস্যু থেকে। মানে, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন যেভাবে সমাজ পরিবর্তন আছে, ঠিক একইভাবে একটি বিকল্প তত্বভূমিও আনতে হবে, যেখানে আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে মেয়েরা। মার্ক্সের শেষজীবনে তাঁর চিন্তাধারার মধ্যে এই বিকল্প ভাবনাটি ধীরে ধীরে যে স্থান করে নিচ্ছিল তার প্রমাণ মেলে। কিন্তু সেই আলোচনা বর্তমান লেখার ক্ষুদ্র পরিসরে সম্ভব নয়।

    এই প্যারিস পাণ্ডুলিপিতেই কার্ল মার্ক্স এরপর কিছু কৌতূহলোদ্দীপক মন্তব্য করেছিলেন সাম্যবাদী সমাজের ধারণাগুলো সম্বন্ধে বিকৃতি প্রসঙ্গে। তিনি এই ধারণাগুলিকে অভিহিত করেছিলেন 'স্থূল সাম্যবাদ' বলে। তৎকালীন বেশ কিছু চিন্তাবিদ পুঁজিবাদী সমাজের নিষ্পেষণকে কঠোর সমালোচনা করতেন ঠিকই, কিন্তু তাঁদের কাছে সাম্যবাদ মানে ছিল ব্যক্তিগত যা কিছু আছে সেই সবকিছুর ধ্বংস-সাধন। সেই কারণে তাঁদের কাছে মেধা, প্রতিভা ইত্যাদি বস্তু ছিল দুর্বিষহ, যেহেতু সেগুলি ব্যক্তিগত এবং বণ্টন করে দেওয়া যায় না। এমনকি বিবাহ ব্যাপারটাও তাঁদের কাছে ঘৃণার্হ কারণ নারী যে আসলে পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি, বিবাহ এই ধারণাটাকেই শিলমোহর দিয়ে দেয় । এই স্থূল সাম্যবাদীদের মতে শোষণমুক্তির পথে একটা বড় অধ্যায় হল সভ্যতা-সংস্কৃতির সমূলে ধ্বংসসাধন, যেহেতু সেগুলি বিকাশের পেছনে মেধা, প্রতিভা এবং জাগতিক ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবদান আছে। তাই স্থূল সাম্যবাদ আসলে সমাজকে অগ্রসর করে না, বরং পিছিয়ে নিয়ে যায় ব্যক্তিগত সম্পত্তি উদ্ভবের আগের পর্যায়টিতে। কাম্বোডিয়ার পল পট এবং ভারতবর্ষের কিছু বামপন্থী দলগুলিকে দেখে স্থূল সাম্যবাদ যে কি বস্তু তার সম্যক ধারণা হয়ত করা সম্ভব!
    স্থূল সাম্যবাদীদের সমালোচনার প্রসঙ্গে মার্ক্স ব্যক্তিগত সম্পত্তির প্রসঙ্গটি টেনেছিলেন। খুব তাৎপর্য্যপূর্নভাবে মার্ক্স ব্যক্তিগত সম্পত্তির ইতিবাচক দিক এবং মানুষের চাহিদার মানবিক দিকটির দিকে ইংগিত করেছিলেন। ব্যাপারটা বেশ চমকপ্রদ, কারণ এক শ্রেণীর স্থূল মার্ক্সবাদীরা আমাদের বরাবর বুঝিয়ে এসেছেন যে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মানেই তা পাপ। কিন্তু মার্ক্স এখানে নিজেই মন্তব্য করলেন "...(বিশ্বজনীন পুঁজিবাদ) এখনো ব্যক্তিগত সম্পত্তির ইতিবাচক ভূমিকা অথবা চাহিদার মানবিক দিকটি সম্বন্ধে সচেতন নয়, বরং এখনো তা ব্যক্তিগত সম্পত্তির দখলে এবং তার দ্বারা কলুষিত"। অর্থাৎ, যান্ত্রিকভাবে ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে না দেখে তার ঐতিহাসিক ভূমিকাটির সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে। এবং এই প্রসঙ্গেই মার্ক্স ঐতিহাসিক একটি মন্তব্য করেছিলেন, যা মার্ক্সীয় নন্দনতত্বের একটি ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে পরবর্তীকালে গণ্য হয়ে থাকে। কিন্ত এই মন্তব্যটি লিঙ্গবৈষম্যের পাঠেও সমানভাবে প্রণিধানযোগ্য।

    "ব্যক্তিগত সম্পত্তি আমাদের এতই নির্বোধ এবং একদেশদর্শী বানিয়ে দিয়েছে যে আমাদের চোখে একটি বস্তু তখনই নিজস্ব হয় যখন আমরা তাকে অধিকার করি। যখন পুঁজি হিসেবে তা আমাদের জন্য উপস্থিত থাকে, অথবা যখন তাকে খাওয়া, পান করা, পরিধান করা ইত্যাদি হয়ে থাকে। সংক্ষেপে, যখন তাকে ব্যবহার করা হয়। অথচ ব্যক্তিগত সম্পত্তি এই বিভিন্ন ধরণের অধিকারকে জীবনধারণের প্রণালী হিসেবে ধারণা করে, যে জীবন আসলে ব্যক্তিগত সম্পত্তির জীবনীশক্তি-- শ্রম ও পুঁজিসৃষ্টি।"
    অর্থাৎ, পুঁজিবাদ আসলে মানুষের ইন্দ্রিয়ানুভূতিগুলিকে অবনমন করিয়ে স্থূল 'দখলের' ঘেরাটোপে বেঁধে ফেলেছে। সেই কারণে যে কোনও বস্তুকে দখল না করলে, ভোগ না করলে তার গুণাবলী পূর্ণরূপে অনুভূত হয় না। নারীকেও যেহেতু পুঁজিবাদী উৎপাদন প্রণালীতে বস্তু হিসেবেই দেখা হয়ে থাকে, সেইজন্য এই ব্যবস্থায় নারীর সর্বোচ্চ উৎকর্ষ একমাত্র তখনই যখন পুরুষ তাকে দখল এবং ভোগ করবে। এই যে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের অবমূল্যায়ন ঘটে গিয়ে শুধুমাত্র স্থূল দখলের চৌহদ্দিতেই আটকে যাওয়া, মার্ক্স এটাকে 'পরম দারিদ্র্য' হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। এই 'পরম দারিদ্র্য'-ই একদিন ইতিহাসের দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়াতে হয়ে উঠবে স্বর্ণপ্রসবিনী, যেদিন পুঁজিবাদী সমাজ বিলুপ্ত হয়ে মানুষ তার পরিপূর্ণ সম্ভাবনাকে খুঁজে পাবে। এখানেই মার্ক্সের সঙ্গে স্থূল সাম্যবাদীদের তফাত হয়ে যায়, যাঁরা মানুষের মেধা, প্রেম, সৌন্দর্য্যতত্ব ইত্যাদির অনন্ত সম্ভাবনাকেই নাকচ করে দেন, কারণ তাঁদের চিন্তারথের চাকা ততদিনে ব্যক্তিগত সম্পত্তি নামক চোরাবালিতে আটকে গিয়েছে।

    অর্থাৎ পুঁজিবাদে নারী পুরুষের পণ্য অবশ্যই। কিন্তু নারীকে এখানে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে দেখা হয় না। দেখা হয় যৌথ সম্পত্তি হিসেবে। এই কারণে মার্ক্স নারীকে "গোষ্ঠীগত লালসার বলি এবং হাতের পুতুল" হিসেবে বর্ণণা করেছেন, যেটা এই নিবন্ধের শুরুতে দেখানো হয়েছে। তিনি সম্ভবত খুব দৃঢ়তার সঙ্গে স্থূল সাম্যবাদীদের থেকে দূরত্ব রচনা করতে চাইছিলেন। সেই কারণে এই শব্দবন্ধটির প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল । কারণ নারী যদি ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে থাকে তাহলে সেই সম্পত্তি বিলোপ করবার আড়ালে প্রাক-পুঁজিবাদী আদিম প্রথাগুলিতে ফিরে যাবার স্থূল সাম্যবাদী ডাকে গলা মেলাতেই হয়, যেখানে বিবাহ প্রথা উঠে গিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত হবে আদিম নারী-কৌম প্রথাটি। এই প্রথায় যে কোনও নারী পুরুষ নিজেদের মধ্যে ইচ্ছেমত সময় কাটিয়ে আবার অন্য সঙ্গী-সঙ্গীনি বেছে নিতে পারে। শুনতে প্রগতিশীল লাগলেও এই প্রথায় নারীর অবমূল্যায়ন ঘটে সবচেয়ে বেশি। কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে মার্ক্স-এংগেলস এই প্রথাটিকে সাম্যবাদী নয়, বরং বুর্জোয়া ঘরানার চিন্তা হিসাবে অভিহিত করেছিলেন। এই আপাত-বিপ্লবী কিন্তু আসলে প্রতিক্রিয়াশীল দর্শনটির বিপ্রতীপে মার্ক্স যখন নারীকে দেখালেন গোষ্ঠীর লালসার বলি হিসেবে, তখন, বলাই বাহুল্য, ব্যক্তিগত থেকে গোষ্ঠীগত সম্পত্তিতে উত্তরণ হয়ে নারীর অবস্থার উন্নতি কিছুই ঘটল না। সম্পত্তির ধারণাটি তখনো তার নিজস্ব অসংস্কৃত রূপেই বিরাজমান, এবং তখনো নারী পুরুষের সম্পর্কের মধ্যে প্রধান চালিকাশক্তি হল উপযোগিতা, ব্যবহারীতা, দখলদারির মানসিকতা ইত্যাদি। কিন্তু যেটা তফাত ঘটল, তা হল সামাজিক উৎপাদন শক্তির সঙ্গে নারীমুক্তির প্রশ্নটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গেল। নারী যদি গোষ্ঠীর নিষ্পেষণের বলি হয়, তাহলে সেই গোষ্ঠীর (উৎপাদন) ব্যবস্থা বদল এবং নারীর আত্মনিয়ন্ত্রণ একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। একটি না হলে অপরটি বাস্তবায়িত হবে না।

    প্যারিস পাণ্ডুলিপির পরের দীর্ঘ চার দশক ধরে কার্ল মার্ক্স তাঁর এই লিঙ্গসাম্য বিষয়ক চিন্তাগুলিকে ধীরে ধীরে পরিমার্জন করেছেন। 'হোলি ফ্যামিলি' গ্রন্থে তিনি এঙ্গেলসের সঙ্গে মিলে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন বিবাহ ও যৌনতা বিষয়ক বুর্জোয়া নৈতিকতার ধারণাটিকে। গ্রান্দ্রিস এবং ক্যাপিটালে তিনি আরো কিছু অন্যরকম ভাবনা ভেবেছিলেন, এবং আলোচনাতে এনেছিলেন প্রাক-পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় মেয়েদের অবস্থানকে । কিন্তু সবথেকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের দেখা পাওয়া যায় জীবনের শেষদিকে এসে, যখন মার্ক্স আর সমাজবিপ্লব নয়, বরং মেয়েদেরকেই তাঁর চিন্তার কেন্দ্রস্থলে রেখে নারীমুক্তির বিষয়টি পর্যালোচনা করেছেন। অর্থাৎ সেই মুক্তি এবং সমানাধিকারের উদ্দেশ্য তখন আর শুধুই নতুন সমাজ গঠন নয়, বরং মেয়েদের আত্মনিয়ন্ত্রণের নিজস্ব প্রশ্নটি। প্রৌঢ় মার্ক্স যে যুবক মার্ক্সের তুলনায় অনেক বেশি মানবতাবাদী, বহুত্ববাদী এবং সহনশীল হয়ে উঠেছিলেন, তার একটা বড় প্রমাণ এই আলোচনাগুলি। পরবর্তী কোনো লেখায় আমরা সেগুলো দেখানোর চেষ্টা করব।

    গ্রন্থনির্দেশঃ
    1. Clara Zetkin, Lenin on the Women’s Question,
    2. Karl Marx (1844), The Economic and Philosophical Manuscripts, (Edited by) Eric Fromm (2004), Continuum, New York, p. 103
    3. Heather Brown (2012), Marx on Gender and the Family, Brill, Boston
    4. Raya Dunayevskaya (1981), Rosa Luxemburg, Women’s Liberation, and Marx’s Philosophy of Revolution University of Illinois Press, Chicago
    5. Juliet Mitchell (1966), Women: The Longest Revolution, New Left Review, Volume 40, December
    6. Raya Dunayevskaya (1985), Women’s Liberation and the Dialectic of Revolution: Reaching for the Fure, Humanities Press, Atlantic Highland
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২২ অক্টোবর ২০১৭ | ৩০৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | ***:*** | ২৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:১০61764
  • তুললাম। পরে লিখব।
  • abcd | ***:*** | ২৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৫:২৫61766
  • প্রাসঙ্গিক, তাই লিঙ্কটা দিলাম। অপরাজিতা মুখার্জীর লেখা একটি অসামান্য রিভিউ। মার্ক্সবাদী দৃষ্টিকোণে নারীমুক্তি। 'অনীক' পত্রিকায় প্রকাশিত। পত্রিকাটার সফটকপির লিঙ্ক দিয়ে রাখলাম। ১৬ পাতায়।
    এই লেখাটি ছাড়াও প্রাসঙ্গিক আরো কিছু লেখা 'অনীক'-এর এই সংখ্যাটিতে রয়েছে।

    https://aneekpotrika.files.wordpress.com/2013/12/sep-oct-13-full.pdf
  • প্রতিভা | ***:*** | ২৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:০৭61765
  • নভেম্বর বিপ্লবের পর লিঙ্গসাম্যের লক্ষ্যে একগুচ্ছ আইনি সংস্কারের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ, গর্ভপাত, বিবাহ বহির্ভূত একত্র বাস, তথাকথিত অবৈধ সন্তানের বৈধ সন্তানের মতই সম্পত্তিতে অধিকার, সমকামিতার স্বীকৃতিও ছিল। দেখা গেল চূড়ান্ত বেড়ে গেল বিচ্ছেদ আর গর্ভপাত। এমনিতেই যুদ্ধ আর গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত বিশাল দেশে প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে অংশ নেবে এমন মানুষ কম। তারপর আবার কাঁধে ছিল সে দেশকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব। তাই ১৯৩৬ সালে স্তালিন এইসব অধিকার প্রত্যাহার করেন।
    এই চূড়ান্ত ব্যক্তিবাদের যুগে তা নিন্দনীয় মনে হলেও ওই এক থেকে বহুর লালসাদ্রব্যে পরিণত হওয়া যে কি বিষম তার প্রমাণ তৎকালীন সোভিয়েতেই ছিল। এইজন্য মার্কসবাদের চর্চা কোন দিন ফুরোবে না। এতটাই প্রাসঙ্গিক।
  • রৌহিন | ***:*** | ২৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৭:২৫61767
  • ""সাম্যবাদ হল মানুষ বনাম প্রকৃতি এবং মানুষ বনাম মানুষের সংঘাতের সত্যিকারের সমাধান”, তখন এই বাক্যটির মধ্যেই নিহিত থাকে উপরোক্ত যুক্তিগুলি। মানুষ বনাম মানুষের সংঘাতের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে লিঙ্গ দ্বন্দ্ব। তাহলে এটা বলা যায় যে সাম্যবাদই একমাত্র ব্যবস্থা যেখানে পুরুষ বনাম নারী এই দ্বন্দ্বের অবসান সম্ভব। " এটাই খুব ভালো করে বোঝা দরকার। আমি কিছুতেই বুঝিনা শ্রেণীদ্বন্দ্ব কিভাবে নারীবাদের অন্তরায় হয় - যেখানে নারী হল প্রায় প্রাচীনতম নিপীড়িত শ্রেণীর প্রতিভূ। এবং এই নিপীড়নের কারণ মূলতঃ অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত। সম্পত্তির অধিকার, উত্তরাধিকার থেকেই নারীকে অন্তরালে ঠেলার এবং শোষণের শুরু। তাই নারীবাদ এসেনশিয়ালি শ্রেণী সংগ্রাম। এই দুটোকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে দুই আন্দোলনেরই ক্ষতি।
  • Atoz | ***:*** | ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২৪61768
  • "পুরুষমুক্তি আন্দোলন"ও অর্গানাইজ করা দরকার। এই যে বস্তাপচা পুং-মালিকানার ধারণা, এই যে দানবত্বের শৃঙ্খল, এই যে ভোগকারী, প্রভু, অত্যাচারীর বাধ্যতামূলক ইমেজ --- এও কি বন্দীত্ব নয়? এইসব থেকে পুরুষের মুক্তির প্রয়োজন নেই? এই যে পুঁজিবাদ পুঁজিবাদ করে গলা ফাটানো, পণ্য করে দেখা নারীকে এই নিয়েই যুগ যুগ বলে আত্মপ্রসাদ পুরুষের, এও তো বন্দীত্ব! আরে, পুরুষ কি পণ্য নয়? সর্বত্রই সে মালিক আর ক্রেতা নাকি? কোথাও কোথাও সেও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে না?
    নারী ও পুরুষ দুইদল মুক্ত হলে তবেই মানুষের মুক্তি নয়?
  • pi | ***:*** | ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৫৯61769
  • প্রতিভাদি, এটা একটু ব্যাখ্যা করবে? বিচ্ছেদ আর গর্ভপাত ব্যানের নিরিখে?

    'ওই এক থেকে বহুর লালসাদ্রব্যে পরিণত হওয়া যে কি বিষম তার প্রমাণ তৎকালীন সোভিয়েতেই ছিল'
  • প্রতিভা | ***:*** | ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ০৭:০০61770
  • আসলে এই লিঙ্গসাম্য আইনগুলি লাগু হবার পর ডিভোর্স বেড়ে গেল বহুগুণ। আর বিবাহ বহুর্ভূত সন্তানাদি। মুক্ত যৌনতা নিয়ে কলন্তাইয়ের বক্তব্য ছিল যে সকল উৎপাদন সম্পর্কের মৌলিক রূপান্তরই 'মুক্ত ভালোবাসা ' খারাপ দিকগুলো থেকে নারীকে রক্ষা করবার পূর্বশর্ত সৃষ্টি করতে পারে। ফল উল্টো হয় যখন অস্বাভাবিক এবংবর্বর আচার আচরণ নিজেদেরকে এই মুক্ত প্রেমের অংশীদার হিসেবে নিজেদের চিনহিত করতে চায়। উনি একটা উদাহরণ দিয়েছিলেন। শিল্পসংস্থার মালিক ও ছোট বড় কর্মকর্তারা নিজস্ব যৌন আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করবার জন্য ছাঁটাইয়ের ভয় দেখায়। এটা তাদের নিজস্ব মুক্ত প্রেম অনুশীলন করবার পন্থা। অথবা যে গৃহকর্তা পরিচারিকাকে গর্ভবতী করে রাস্তায় বার করে দেয়। নভেম্বর বিপ্লবের পর তো তাও রাষ্ট্র নিয়েছিল শিশুপালনের ভূমিকা । মুক্ত প্রেম কখন যে বিকৃত যৌন স্বাধীনতায় রূপান্তরিত হবে বোঝা খুব কঠিন।

    উৎসব ওর ফেক প্রোফাইল থেকে কলনতাইয়ের লেখা একটা গল্প শেয়ার করেছিল। ওটা পড়লে মালুম হবে এই কাজগুলো কত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তথাকথিত নারীবাদীরা, কলনতাই আবার বলেছেন, বিবাহ বহির্ভূত নতুন ধরণের সহবাসকে উৎসাহ দেয় আর তখনই তারা মুক্ত ভালবাসার পক্ষে যায়।
  • প্রতিভা | ***:*** | ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ০৭:০৫61771
  • কিন্তু যখনই শ্রমিক শ্রেণীকে নিয়ে কথা ওঠে তখন তা হয়ে দাঁড়ায় উচ্ছৃঙ্খল যৌনসংগম।

    হয়তো এইভাবে মেয়েদের যৌন হয়রানি বন্ধ করা যাবে না বুঝেই স্তালিন আইনগুলো তুলে দিলেন। হয়তো তার মনে হয়েছিল ঘরের যৌনতার শিকার মেয়েটিকে আরো বড় মৃগয়াক্ষেত্রে নিঃসঙ্গ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
    আমি একেবারেই এই ব্যানগুলোর পক্ষে নই। কেবল ঐ সময়ের জটিলতাটা বোঝার চেষ্টা করছি।
  • Pinaki | ***:*** | ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ০৯:৫৩61772
  • এটা নিয়ে অনেকগুলো কথা আছে, পরে লিখছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন