এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • এনআরসি -- বামপন্থীদের অবস্থান

    Sakyajit Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০১ আগস্ট ২০১৮ | ২৯৮৬ বার পঠিত
  • ১। এনআরসির দাবী সর রাজনৈতিক দলের । একমাত্র বিজেপি এই দাবীর সঙ্গে সহমত ছিল না।

    ২। সিপিআই(এম)-এর স্ট্যান্ড হল সুপ্রিম কোর্টের তত্বাবধানে ১৯৭১ সালের কাটঅফ ডেট ধরে এনআরসি হোক। কেন? কারণ এই ডি লেবেল, অনাগরিক, এই সব ইস্যু দূর হবে এতে।

    ৩। পার্টি যেটা নিয়ে বারবার স্ট্রং স্ট্যান্ড রাখছে সেটা হল যে এনআরসি ধর্মের ভিত্তিতে করা যাবে না। বিজেপি সেটাই করতে চাইছে। এবং এটা নীতিগত ভাবেও। কেন, সেটা পরে বলছি।

    ৪। ২০১২ সালের কোঝিকোড় কংগ্রেসের নেওয়া রেজোলিউশন অনুযায়ী বাঙালী শরনার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবী জানাচ্ছে পার্টি। বিশেষত মতুয়া ও নমঃশূদ্র কমিউনিটি। কিন্তু সেই দাবী যেন আসাম চুক্তিকে না ক্ষুণ্ণ করে সেটাও দেখতে হবে।

    ৫। প্রশ্ন উঠতে পারে যে তার পরেও কেন তথাকথিত অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করবার ডাক উঠছে? উঠছে, কারণ বাংলাদেশ থেকে যারা আসছে তারা সকলেই তাড়া খেয়ে পালিয়ে আসা বা কাজের খোঁজে আসা লোকজন নয়। বাংলাদেশের হিন্দু মানেই যে অত্যাচারিত এসব গল্পকথা। প্রচুর হিন্দু এখানে এসে অবৈধ প্রপার্টি বানিয়েছেন। আবার মুসলিম যুদ্ধ-অপরাধীরাও লুকিয়ে আছে ভারতে। মনে থাকতে পারে লোকজনের যে শিলিগুড়ি থেকে বছর কয়েক আগে এরকম এক বড়সড় ওয়ার ক্রিমিনাল রাজাকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি ভারতে ততদিনে জাঁকিয়ে বসেছেন। আর সেটার থেকেও বড় সমস্যা হল, স্মাগলিং এবং টেররিস্ট অ্যাক্টিভিটি। এবার, বিজেপি প্রচুর হিন্দু অবৈধ অভিবাসীকে নাগরিকত্ব দিচ্ছে , নিজেদের স্বার্থেই। সেটাকে সুপ্রিম কোর্ট দিয়ে আটকাতে হবে, পার্টির স্ট্যান্ড এটাই।

    ৬। কীভাবে এনআরসি-র মধ্যে ধর্মের ব্যাপারটা চলে আসছে? কারণ বিজেপি-র প্রস্তাবিত ২০১৬-র নাগরিকত্ব বিল। সেখানে যেটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৪ সাল পর্যন্ত মুসলমান বাদ দিয়ে অন্য সব ধর্মের মানুষই নির্যাতিত হয়ে চলে এসেছেন, অতএব তাঁদের আশ্রয় দিতে হবে । ফলে যা দাঁড়ালো ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিম ছাড়া অন্যসব ধর্মের মানুষই আশ্রয় পাবেন, এটা ধরেই নেওয়া হচ্ছে। ফলে এনআরসি শুধুমাত্র মুসলিমদের মধ্যে কারা সঠিক ভারতীয় আর কারা অনুপ্রবেশকারী এটুকু ঠিক করবার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং পর্যবসিত হচ্ছে মুসলিম নাগরিকপঞ্জিতে। এবার এর মধ্যেও ঘোটালা আছে। আশ্রয় পাবার মানেই নাগরিকত্ব পাওয়া নয়। ২০১৬'র নাগরিকত্ব বিলের কোথাও নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়নি। বিলে বলা হয়েছে যে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে আগত অ-মুসলিমদের অবৈধ বলে ধরা হবে না। এবং ১১ বছরের পরিবর্তে মাত্র ৬ বছর হবে তাঁদের পিরিয়ড অফ ন্যাচারেলাইজেশন। সেখানেও ধোঁয়াশা। অবৈধ নয়, অথচ নাগরিকও নয়। তাহলে কী? শরণার্থী? সেটাও না , কারণ ভারতবর্ষ ১৯৫১ রিফিউজি কনভেনশান সই করেনি। ফলে যেটা দাঁড়াচ্ছে, একদিকে নাগরিক বিল যদি পাশ হয়, তাহলে বিজেপি খুল্লামখুল্লা ভাবে প্রচুর হিন্দুকে ঢোকাবে, কিন্তু তাদের নাগরিকত্ব না দিয়ে বশংবদ করে রাখবে। উল্টোদিকে, মুসলিমদের কোয়ালিফাই করা হবে।

    অবৈধ হিন্দু অভিবাসীদের বৈধতাকরণ বিজেপি-র নিজস্ব ট্যাক্টিক্স। উল্টোদিকে, সিপিয়াই(এম) চায় বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের জন্য ২০০৩-এর সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের 2(i)b ক্লজের অ্যামেন্ডমেন্ট। সেই অ্যামেন্ডমেন্ট অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট ছাড়া কেউ এদেশে আসলে, বা তার পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে ইললিগাল ইমিগ্রান্ট বলা যাবে না। এমনকি বৈধ পাসপোর্টে স্ট্যাম্পড থাকার দিনের সময়সীমা পেরিয়ে যাবার পরেও কেউ থেকে গেলে তাকে চোখ বুজে ইললিগাল ইমিগ্রান্ট বলা যাবে না, যদি সে বাংলাদেশ থেকে আসে। পার্টিশন এবং ১৯৭১-এর সময়ে চলে আসা লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশির কথা ভেবেই এই অ্যামেন্ডমেন্টের দাবী করেছে পার্টি। এবার বিজেপি-র কাজের সঙ্গে সেই দাবীর তফাত কোথায় হচ্ছে? হচ্ছে দুখানা জায়গাতে।

    ১। পার্টি স্পষ্ট করে বলেছিল যে আসাম চুক্তি (১৯৮৫) যেন ক্ষুণ্ণ না হয় সেটা দেখতে হবে। বিজেপি নির্বিচারে হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিয়ে দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে আসাম চুক্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে যেখানে বলা আছে যে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে হবে।

    ২। পার্টি যখন অ্যামেন্ডমেন্টের কথা বলেছে, তখন ধর্মের ভিত্তিতে যেন সেই অ্যামেন্ডমেন্ট না করা হয় সেটার দাবী রেখেছে। ২০১৬-র বিলে, বলাই বাহুল্য, সেই দাবী মানা হয়নি।

    এনআরসি আর সিটিজেনশিপ বিল, দুখানা আলাদা বিষয়। কিন্তু একসাথে যদি দুখানাই ইমপ্লেমেন্টেড হয়, ভারতবর্ষ হিন্দুরাষ্ট্র হবার দিকে আরো এক কদম এগোবে।

    আরো যেটা বিষয়, কমিউনিস্ট পার্টি ডিপোর্টেশনের বিপক্ষে। যে মানুষজনের পরিচয়পত্র নেই, তাঁদের রাষ্ট্র সংবেদনশীলতার সঙ্গে ট্রিট করুক (যদি ক্রিমিনাল ইনটেন্ট না থাকে)। কিন্তু ডিপোর্টেশন করা যাবে না। তাদের কীভাবে এই দেশের মধ্যেই রেখে দেওয়া যায় সেই বিষয়ে পার্টি বারবার আলোচনার দাবী জানিয়েছে সংসদে। লোকসভাতে মহম্মদ সেলিম বলেছেন যে এই মানুষজন যদি রাষ্ট্রের হয়রানির শিকার হন তাহলে পার্টি তাঁদের পাশে সর্বশক্তি দিয়ে দাঁড়াবে। এই জায়গাতে আসাম অ্যাকর্ডের থেকে পার্টির স্ট্যান্ড সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যায়।

    এনআরসি আর তার ইমপ্লিমেন্টেশন প্রব্লেমাটিক হচ্ছে নানা কারণে। আধার কার্ড তার মধ্যে একটা বড় সমস্যা। কিন্তু এনআরসি-র দাবী ঐতিহাসিকভাবে সব দলের ছিল। NRC র সবচেয়ে বড় সমর্থক AMSU (Assam Muslim Students Union) আর AIUDF(বদরুদ্দিনের দল) যাদেরকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশকারী তকমা পেতে হয়। আর সবথেকে বড় বিরোধী এতদিন অবধি ছিল বিজেপি ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০১ আগস্ট ২০১৮ | ২৯৮৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দেব | ***:*** | ০১ আগস্ট ২০১৮ ০১:৫৮63861
  • "প্রচুর হিন্দু এখানে এসে অবৈধ প্রপার্টি বানিয়েছেন। "

    'প্রচুর' মানে মোটামুটি কত? হাজার? এক লাখ? দশ লাখ? কোন সোর্স পাওয়া যাবে? না থাকলে এই কথাটার কোন মানে হয় না। কোন স্টাডি আছে?

    "পার্টি যেটা নিয়ে বারবার স্ট্রং স্ট্যান্ড রাখছে সেটা হল যে এনআরসি ধর্মের ভিত্তিতে করা যাবে না।"

    না ওটা ছুতো। পার্টির আসল স্ট্যান্ড হচ্ছে এইটা -

    "না মানে দেখুন অনুপ্রবেশকারীদের আমরাও চাই না। কিন্তু একবার ঢুকে গেলে কিসু করা যায় না দাদা। আসাম এইটাকে খুঁচোতে চাইছে। সেটা আটকানোর সহজতম উপায় হচ্ছে হিন্দু-মুসলিম দু'দলকেই বেরোতে বলা। ব্যাস। তাহলেই আর বিজেপির সাপোর্ট পাওয়া যাবে না। একটাকে আটকালেই অন্যটাও আটকে যাবে। স্ট্যাটাস কূয়ো মেনটেন রইল"

    খারাপ বুদ্ধি নয়। পরিস্থিতিবিচারে আমার মতে এইটাই এই মুহূর্তে বেষ্ট টেকনিক।
  • দেব | ***:*** | ০১ আগস্ট ২০১৮ ০৩:২৭63862
  • আরেকটা ইন্টারেস্টিং জিনিস পাওয়া গেল। NRC তে মোট আবেদনকারী ৩ কোটি ২৯ লক্ষ। আর ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী আসামের জনসংখ্যা তখন ছিল ৩ কোটি ১১ লক্ষ। মানে আসামের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২০০১-১১ পর্যায়ের তুলনায় ড্র্যাস্টিক্যালি কমে গেছে।

    এটার সাথে NRCর কোন সম্বন্ধ নেই। কিন্তু ব্যাপারটা চোখে পড়ল। বাকি ভারতেও ২০২১এর সুমারীতে একই প্যাটার্ন দেখতে পাওয়া যাবে বলে মনে হয়।
  • Ishan | ***:*** | ০৩ আগস্ট ২০১৮ ০৮:২৪63863
  • এটা গ্রুপে দিয়েছিলাম। প্রেক্ষিত একই। এখানেও থাক।

    শোনা যাচ্ছে, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি দাবী করছে। তালেগোলে হয়েও যেতে পারে। কারণ এন আর সির সর্বাত্মক বিরোধিতা কাউকে করতে দেখছিনা। বিজেপি শিবসেনার তো কথাই নেই। বাদবাকি মধ্য এবং বামরা মোটামুটি ভাবে "ব্যাপারটা তো ঠিকই আছে, শুধু প্রয়োগে গোলমাল" এই লাইনে খেলে চলেছেন। এর চেয়ে বাজে কথা আর কিছু হতে পারেনা। কারণ এনআরসি এমনই একটি লিস্টি, একদম সংজ্ঞানুযায়ী তার থেকে কিছু মানুষ বাদ যাবেনই। কোনো পরীক্ষার মেধাতালিকায়ই সব পরীক্ষার্থীর জায়গা হয়না, কিছু জনকে বাদ দেবার জন্যই মেধাতালিকা তৈরি হয়। এনআরসিও অবিকল তাই। আর তালিকা থেকে বাদ গেলে, তারপর বাদ যাওয়া মানুষদের নিয়ে কিছু একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। তাঁদের ঠেলে অন্য দেশে পাঠাতে হবে, কিংবা ক্যাম্পে রাখতে হবে, কিংবা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বলে একটি নতুন বর্গ চালু করতে হবে। "পদ্ধতি ঠিক আছে, শুধু প্রয়োগে গোলমাল" কথাটার মানে হল, এই সবকিছুকেই মেনে নেওয়া। এর বাংলা মানে হল, যদি ঠেলে অন্যত্র পাঠাতেই হয়, তো একটি "মানবিক" পদ্ধতিতে পাঠান। বাঘের মুখে কিছু মানুষকে ফেলার আগে হেসে একটু "সি ইউ" বলুন। ঠ্যাং ভেঙে দেবার আগে দুঃখপ্রকাশ করে নিন। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে দুটো একস্ট্রা চেয়ার পাঠান। এইসব ঢপেচ্চপ।

    এই বাজারে এইটুকু বলার মতো ধক কারো নেই, যে, "অনুপ্রবেশ" একটি আদ্যন্ত দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক স্লোগান। একদম টিপিকাল মুসলিম এবং বাঙালি বিরোধী। মুসলিম বিরোধী, কারণ, নেপাল থেকে অবাধে লাখে লাখে লোক এসে ভারতবর্ষের নানা জায়গায় করে কম্মে খাচ্ছে, তা নিয়ে কারো কিছু এসে যাচ্ছেনা, একমাত্র সমস্যা হল বাংলাদেশীরা ঢুকলে ( এর মধ্যে কে হিন্দু কে মুসলমান, সে আর আলাদা করে বলার দরকার নেই)। বাঙালি বিরোধী, কারণ, তামিল অনুপ্রবেশ নিয়ে কথা বলতে গেলে তামিলরা দ্রাবিড়ভূম থেকে তাড়িয়ে ছেড়ে দেবে, বাঙালিরা সেটা করবেনা, অতএব এটা বাঙালিদের উপর সহজে প্রয়োগ করা যায়। এন আর সিও তাই স্রেফ বাঙালিদের উপরই প্রযোজ্য হবে। কিন্তু এই সোজা কথাটা বলার ধক কারো নেই। "অবৈধ" বাংলাদেশী চিহ্নিত করতে যে পদ্ধতির সৃষ্টি, তার কুপ্রভাব বাঙালিদের উপরেই পড়বে, এটা সহজবোধ্য। এমনকি চোখে দেখা যাচ্ছে, চল্লিশ লক্ষ বাদ-যাওয়া মানুষের সিংহভাগই বাঙালি। তবুও নাকি বলতে হবে, ওই লিস্টে তেরোজন রাজবংশী এবং কুড়িজন বিহারি আছেন, কাজেই এটা বাঙালির সমস্যা নয়, ধর্মীয় বিতাড়নের সমস্যা নয়। বিশ্বমানবতার সমস্যা। পদ্ধতিটা ঠিকই আছে, স্রেফ প্রয়োগে সামান্য গোলমাল। সেটা শুধরে নিলেই বিশ্বমানবতা গৌতম বুদ্ধের মতো স্মিত হাস্য দেবেন।

    এই বাজারে তাই স্পষ্ট করে সেই কথাটা বলা দরকার, যেটা বলার ধক কারো নেই। হ্যাঁ, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প, উদ্বাস্তু সমস্যা নিশ্চয়ই বিশ্বমানবতার সমস্যা। কিন্তু সেটা বাঙালি জাতিরও সমস্যা। মুসলিম ধর্মপরিচয়েরও সমস্যা। বিজেপি তার অ্যাজেন্ডা খুব স্পষ্ট করে বলে দেয়। "বাংলাদেশী হিন্দুরা হল শরণার্থী এবং মুসলমানরা অনুপ্রবেশকারী" (শেষ পর্যন্ত বাঙালি হিন্দুদেরও ওরা মানুষ মনে করেনা, পারলে তাড়িয়ে দেয়)। এর উল্টোদিকে প্রতিবাদটা হওয়া উচিত একদম নির্দিষ্ট করে জাতিগত এবং ধর্মগত চিহ্নিতকরণ এবং বিতাড়নের বিরুদ্ধে। হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে "দেখুন তেরোজন পোলিশ কমিউনিস্টও ছিলেন" এই বলে ইহুদি জাতির উপর অত্যাচারটাকে উড়িয়ে দেওয়া যায়না। যেটা যা ঘটনা সেটাই বলতে হবে এবং প্রতিবাদটাও সেটা নিয়েই করতে হবে। এই হল বাংলা কথা।

    আরও একটি সহজ কথা স্পষ্ট করে বলা দরকার। এই অনুপ্রবেশ এবং উদ্বাস্তু সমস্যার গোড়ায় তাকাতে হয়। সেই গোড়ায় যে গলদ হয়েছিল, অর্থাৎ, দেশভাগ, তার দায়ভার প্রতিটি রাজনৈতিক মতাদর্শের। সেই ১৯৪০ এর দশকে, মুসলিম লিগ মুসলমান-শাসিত, বা বলা ভাল, মুসলিম লিগ শাসিত দেশ চেয়েছিল। কংগ্রেস চেয়েছিল নিজের দেশের সর্বেসর্বা হতে। হিন্দু মহাসভা চেয়েছিল হিন্দুদের দেশ। আর কমিউনিস্ট পার্টি বলেছিল হিন্দু ও মুসলমান দুটি আলাদা জাতি, যাদের আলাদা রাষ্ট্র দরকার। এদের মধ্যে মুসলিম লিগই সবচেয়ে সোজাসাপ্টা ছিল। ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাবে একটি অবিভক্ত ভারতের কথা বলা হয়েছিল। যেখানে পূর্ব-মধ্য-পশ্চিম তিনটি অঞ্চলের তিনটি আঞ্চলিক সরকার থাকবে। আর মাথার উপর যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার। এই প্রস্তাবে মুসলিম লিগ রাজি ছিল। বাকি কেউ রাজি হননি। হিন্দু এবং মুসলমান এই দুটি যে আলাদা জাতি, এই আইডেন্টিটি পলিটিক্সে তাঁরা অবিচল ছিলেন। এবং অবিভক্ত ভারতকে দুই টুকরো করেই ছাড়েন।

    "ধর্মভিত্তিক জাতি" -- এই ধারণা যাঁরা তৈরি করেছেন, মেনে নিয়েছেন, অনুপ্রবেশ এবং উদ্বাস্তুদের তাঁরাই তৈরি করেছেন। সেই পাপ তাঁদেরই স্খালন করতে হবে। যাতায়াতের পথে আচমকা কাঁটাতার তুলে দিলে মানুষ পাঁচিল ডিঙোবেই। কেউ লাথি ঝাঁটা খেয়ে ডিঙোবে, কেউ বাধ্যতায় ডিঙোবে। এই সমস্যাটার একমাত্র সমাধান হল বেড়া উপড়ে দেওয়া। সেটা একাধিক রাষ্ট্রের কনফেডারেশন, অবাধ চলাচল এসবের মধ্যে দিয়ে হতে পারে। অন্যভাবেও হতে পারে। কিন্তু পাঁচিল টিকিয়ে রেখে অনুপ্রবেশ বা উদ্বাস্তু সমস্যা মিটবেনা। বরং বেড়ে চলবে। একের পর এক এনআরসি হবে। ৪৬-৪৭ সালের বিপুল বিপর্যয় থেকে মাস-এক্সোডাসের সর্বাত্মক বিরুদ্ধতা করার শিক্ষাটুকু অন্তত আমাদের নেওয়া উচিত।
  • amit | ***:*** | ০৪ আগস্ট ২০১৮ ০১:৪৬63864
  • লাও তো বটে, কিন্তু আনে কে ? এতো গুচ্ছ গুচ্ছ উচিত কাজ কে , কোথায় , কখন আর কিভাবে করবে ?
  • PT | ***:*** | ০৪ আগস্ট ২০১৮ ০১:৫৪63865
  • "না মানে দেখুন অনুপ্রবেশকারীদের আমরাও চাই না।"
    অনুপ্রবেশকারীরা আসতেই থাকুক এমন অবস্থান কারো আছে নকি? নাকি থাকা উচিত? তক্কের খতিরে যদি ধরে নেওয়া যায় যে যারা ২০১৬-তে আসামে ভোট দিয়েছে তাদের ভারতীয় নাগরিক ধরে নিয়ে তালিকা তৈরি হবে তাহলেও কি শেষ পর্যন্ত ওম শান্তি হবে?
  • কল্লোল | ***:*** | ০৪ আগস্ট ২০১৮ ০৩:২৩63867
  • অনুপ্রবেশকারী মানে কি? কারে কয়?
    বিজেপি বলেছে ভারতের বাইরে থেকে আসা হিন্দুরা অনুপ্রবেশকারী নয়। একদম পরিস্কার অবস্থান। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ময়নমার, শ্রীলঙ্কা থেকে আসা হিন্দুরা স্বাগত। অন্য ধর্মের মানুষ হলেই অনুপ্রবেশকারী। ব্যতিক্রম হয়তো তিব্বত, ভূটান থেকে আসা বৌদ্ধ, নেপাল থেকে আসা মুসলমান।
    অন্য দলেরা কাদের অনুপ্রবেশকারী আর কাদের শরণার্থী বলবে তাতে ধর্ম নেই, সময়সীমা আছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১৯৭১এর আগে হলে শরণার্থী, পরে হলে অনুপ্রবেশকারী। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা বা ময়নমারের বেলায় সময়সীমা কি? ভূটান আর তিব্বতের বেলায় কি?
    কারুর জানা থাকলে বলুন।
    দুধরনের মানুষ লুকিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়, দুই ধরনের মানুষ না লুকিয়ে বেআইনীভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়।
    লুকিয়ে ও বেআইনীভাবে পার হয়, ১) অভাবী মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে, ২) চোরাচালানকারী ও সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত মানুষ।
    না লুকিয়ে ও বেআইনীভাবে পার হয়, ১) অভাবী মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে - এরা রোজ পার হয় রোজ ফিরে যায়, ২) চোরাচালানকারী - এরাও আসা যাওয়া করে।
    বিএসএফের কাছে নিশ্চিত খবর থাকে বেশীরভাগ সময়ে কারা পার হচ্ছে। সেই বুঝে তারা গ্রেপ্তার করে/গুলি চালায়/টাকা নিয়ে পার করায়।
    সীমান্ত (অন্ততঃ বাংলাদেশ সীমান্ত) খুলে দেওয়া যেতেই পারে। চোরাচালানকারী আর সন্ত্রাসী আটকানো বিএসএফের কাজ। তাদের কাজ ঠিক মত করতে হবে।
  • dd | ***:*** | ০৪ আগস্ট ২০১৮ ০৩:৫১63868
  • "অনুপ্রবেশকারী মানে কি? কারে কয়?"।

    এটা বোধ হয় ঐ একটা গ্রাভিটির মতন একমূখী মাইগ্রেশন। বাংলদেশ বা নেপাল থেকে ভারতে, মেক্সিকো থেকে আম্রিকায়, পুর্ব জার্মানী থেকে পচ্চিম জার্মানী। সবটাই একবগ্গা।

    উল্টোটা হয় না। আর আইনী পথেও বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে হয় না। দেখলাম বিজেপির এক মুসলিম সমর্থক কয়েছেন (আবাপে) "আমরা সবাই যদি বাংলাদেশে চলে যেতে থাকি, সেটা বাংলাদেশ সরকার মানেবেন তো?'।

    এখন সকল অনুপ্রবেশকারী তো আর নহে সমান। সেটা তো ডিপেন' করবে আপুনি কোন দলের সেটার উপর।
  • dc | ***:*** | ০৪ আগস্ট ২০১৮ ০৪:২৪63869
  • "অনুপ্রবেশকারীরা আসতেই থাকুক এমন অবস্থান কারো আছে নকি?"

    আমার আছে। আমি ক্যাপিটাল আর লেবারের গ্লোবালাইজেশানের পক্ষে।
  • h | ***:*** | ০৪ আগস্ট ২০১৮ ০৫:১৮63870
  • শাক্য, একটা অনুরোধ ছিল। সেটা এইরকম, পার্টি (৬৪ র আগে পরে?) আরকাইভে অ্যাকসেস আছে বা প্রকাশিত ডকুমেন্টস হাতের কাছে আছে? তাহলে এই বিষয়ের একটা অনলাইন আরকাইভ বানা। প্রথমে শুধু লিংক আর পিডিএফ আপলোড দিয়েই শুরু কর।
  • PT | ***:*** | ০৪ আগস্ট ২০১৮ ০৫:২১63871
  • উক্ত বাক্যে ক্যাপিটাল নেই। শুধু লেবার....এমন দিন কি হবে তারা!!
  • Sakyajit Bhattacharya | ***:*** | ০৫ আগস্ট ২০১৮ ০৫:২৬63872
  • আমার কাছে নেই। জেলা অফিসের লাইব্রেরিতে থাকতে পারে
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন