এপ্রিল ফুল পেরিয়ে গেলেও এদেশের মানুষ কিন্তু প্রতিদিন ফুল হয়েই চলেছেন। আসুন দেখি কি ভাবে –
১) ডিমনিটাইজেশন – ডিমনিটাইজেশন নামটা শুনলেই অনেকে চোখে অন্ধকার দেখেন। অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে নাকি সবাইকে। কিসের কষ্ট বুঝি না। দিব্যি লোকজন বাতানুকূল এটিএম বা ব্যাংকের শাখায় টাকা পেয়েছেন। আর নভেম্বর মাসে কিসের গরম। সবার তো আর ননীর শরীর না। আর বৃদ্ধদের তো সবাই লাইন ছেড়ে দিয়েছে। কালো টাকার হিসেব চেয়েই বা কি হবে? ওগুলো তো কালো টাকা। এখন তো টাকা গোলাপি। ভালোবাসা বা ঘৃণা কি মাপা যায়? যায় না। কিছু জিনিস শুধু অনুভব করতে হয়।
২) চোখ মারলেই কাজ উদ্ধার – কিছুদিন আগে আমরা সবাই আধার কার্ডের উপকারিতার বিষয়ে অবগত হয়েছি। এখন আরও জানা যাচ্ছে যে ভবিষ্যতে আর ওই কার্ডেরও আর দরকার হবে না। ক্যাশলেস তো আমরা হয়েই গেছি, কার্ডলেসও হয়ে যাব শীঘ্রই। দেশে এমন উন্নত তথ্যপ্রযুক্তি আসছে যা দিয়ে চোখ মারলেই সব কাজ হযে যাবে। সব কাজের মধ্যে কি কি পড়বে সেই নিয়ে একটু ইয়ে আছে আর কি। ইয়ে মানে কনফিউশন। তবে এই নিয়েও কিছু দেশদ্রোহী উল্টো প্রচার করছেন। বলছেন যে আমাদের ভবিষ্যত নাকি আঁধারে ছেয়ে যাবে। ফুল বানানোর চেষ্টা করছেন আর কি।
৩) গরু উদ্ধার - গরু আমাদের রাষ্ট্রমাতা। সে কেউ বলুন ছাই না বলুন। আদি-অনন্তকাল ধরে আমরা গরুকে মাতৃস্থানীয় করে রেখেছি। তাই, গোমাতা নিয়ে কেউ আমাদের বোকা বানালে সেই নিয়ে আমাদের সরব হয়ে ওঠা দরকার। প্রসঙ্গতঃ, গত কয়েক দিন ধরে চীনের কিছু গুপ্তচর আমাদের দেশের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির মাঠে-ঘাটে গরু সেজে অবাধ বিচরণ করছিল। দেশের খবর পাচার করা তাদের মূল উদ্দেশ্য। ধরা পড়ে তারা এটা স্বীকার করেছে। এরকম ভাবে গরুর ছদ্মবেশ ধারণ করে আমাদের বোকা বানানো হচ্ছে।
৪) অবাধ কর্পোরেট ডোনেশন – অনেকে বলছেন যে অবাধ কর্পোরেট ডোনেশন হলে বড় শিল্পপতিদের দৌরাত্ম্য বাড়বে। তারাই নাকি তখন দেশ চালাবে। কিন্তু এই তথ্য ভুল। আসলে শিল্পপতিরা এমনিতে খুব কিপটে হন। এই দানের টোপ দিয়ে ওদের থেকে টাকা নেওয়াই মূল উদ্দেশ্য। এবং সেই টাকা শুধুই দেশের কাজে ব্যবহার করা হবে।
৫) সোনালী করমর্দন – যারা নিয়মিত কর (ট্যাক্স) দিয়ে থাকেন তাদের সুবিধার্থেই নানান আলোআঁধারি প্রকল্প শুরু হতে চলেছে। এই সকল সুবিধা কি সেটা এই মুহূর্তে জানা না গেলেও এইটুকু নিশ্চিত যে অসুবিধা কিছু হবে না। অসুবিধা হওয়া মানেই ধরে নিতে হবে যে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিগ্রস্ত। এই করব্যবস্থার সরলীকরণ করাও অনেকের চক্ষুশূল। তারা নানা উল্টোপাল্টা লজিক দিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে।
৬) পিপিএফ ইত্যাদির হার কমল – এটা নিয়ে সবাই এত হাহাকার করছে কেন জানি না। উল্টো দিকে লোনের হারও তো কমেছে। তাই লোন নিন সবাই। ইন্ভেস্ট করে কি হবে। শেষমেষ তো আ্যসেট = লায়াবিলিটি হবে রে বাবা। তাছাড়া, পিপিএফ-এর টাকা মার যেতে পারে, ইএমআই-এর টাকা মার দিয়েও ফেরত আনা যায়।
৭) রোমিও মাস্ট ডাই – শেক্সপিয়র সাহেব কবে রোমিও নিয়ে গপ্প লিখেছিলেন সেই নিয়ে আমাদের কি বলুন তো। রোমিও মানেই কি সে আদর্শ প্রেমিক? না। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন হলে রোমিও-ও ইভটিজার। ধর্ষণকারীদের না ধরলেও চলবে। ধর্ষণ তো রোজ হয় না। হলেও খুব কম। ইভটিজিং আটকানোই আসল।
৮) RTI না ছাই – কি হয় এই আরটিআই করে? কিছুই না। তথ্য সংগ্রহ করে কি মহাভারত লিখবে লোকে? আর তাছাড়া, আজকাল টুইটারের যুগ; ইতিহাস লিখে কি হবে।
৯) টানেল ভিশন – পাহাড়ের গায়ে টানেল করা কিন্তু আসলে আতংকবাদীদের বোকা বানানোর জন্য। ওই লম্বা টানেলের মধ্যে আটকে দুদিক থেকে আক্রমণ করে ওদের মেরে ফেলা হবে। খোলা আকাশের নিচে যুদ্ধ করা তো কঠিন, তাই এই অভিনব ফন্দি। এটা নিয়েও অনেকে বিরূপ মন্তব্য করে আমাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করবে হয়ত।
১০) ১৫ লাখের স্বপ্ন – যাদের ব্যাংকে এখনও পনেরো লাখ টাকা ঢোকেনি তারা হতাশ হবেন না। ভুয়ো খবরে কান না দিয়ে, আরো বড় স্বপ্ন দেখুন। সুদ সমেত আপনার স্বপ্নের ফল পাবেন।
উপরোক্ত সব বিষয় নিয়ে আমাদের বোকা বানানো হচ্ছে। কে কীভাবে বানাচ্ছে সেটা জানা জরুরি নয়। শুধু জানা জরুরি যে আপনার নিজের পন্চেন্দ্রিয় কাজ না করলেও ষষ্ঠটি যেন করে।
জ্জয় গুরু !