৪) যদুনাথ শুধু ফার্সি ও ফ্রেঞ্চ নয়, মারাঠিও শিখেছিলেন এবং সমসাময়িক মারাঠি ইতিহাসবিদদের সঙ্গে কোলাবোরেট করেছিলেন। আমার উল্লিখিত বই দুটোর দীর্ঘ ভূমিকায় সেগুলো স্পষ্ট করে বলা আছে।
'বাখার' হচ্ছে মারাঠিদের লোকগাথা।
যদুনাথ কাঁকর সরিয়ে চাল বেছেছেন। উনি নির্ভর করেছেন 'সভাসদ বাখারের' উপর। যা শিবাজীর সমকালীন সভাসদেরা লিখে গেছেন। বর্জন করেছেন জনপ্রিয় 'চিটনিস বাখার'কে -- যা শিবাজীর মৃত্যুর ১০৯ বছর পরে লেখা এবং যদুনাথের ভাষায় "বাগারম্বর পূর্ণ"। উনি খেয়াল করেছেন যে এরপরও শিবাজীকে নিয়ে অতিমানবিক সব গালগল্প তৈরি হয়ে চলেছে। এগুলো আমি খুব সংক্ষেপে পর্ব এক এর একেবারে গোড়ায় উল্লেখ করেছি।
গুন্ডার আক্রমণে নিহত গোবিন্দ পানসরের 'হু ইজ শিবাজী' লেখার থেকে জানতে পারছি যে ব্রাহ্মণেরা তাদের জীবদ্দশায় শিবাজীকে ক্ষত্রিয় নয় বলে হেয় করেছে। ওনার রাজ্যাভিষেকে ওরা রাজি হয় নি। বেনারস থেকে ব্রাহ্মণ (গঙ্গ ভট্ট বা অমনি কোন নাম) এনে কাজ সমাপন করতে হয় এবং তারপর স্থানীয় ব্রাহ্মণদের চাপে শুদ্ধিকরণ করে তবে উনি সিঙ্ঘাসনে বসেন।
যদুনাথের মতে শিবাজী ভোঁসলে 'দলিত'।
এখন মহারাষ্ট্রে দলিতেরা আইডেনটিটি পলিটিক্সে শিবাজী পুত্র শম্ভাজীকে নিজেদের আইকন ভাবছে। সে নিয়ে উচ্চবর্ণের সঙ্গে রেষারেষি।
কারণ ক্ষমতায় যারা আছেন তাঁরা শিবাজীকে উচ্চবর্ণ প্রমাণিত করে নিজের কোলে ঝোল টানতে চান।
সি এস ঠিকই ধরেছেন -- সিনেমাটি অংক কষে নির্মিত। একদিকে দলিতদের কাছে টানা এবং অন্যদিকে শম্ভাজীকে হিন্দুবীর হিসেবে স্থাপিত করা এবং দলিতদের বোঝানো যে তোমার আমার কমন এনিমি -- মুসলমান। কারণ, জাতিপ্রথায় নির্যাতিত দলিতদের একটা বড় অংশ আম্বেদকরবাদী বৌদ্ধ অথবা মুসলিম।
৫) সামগ্রিক মোগল ও মারাঠা ইতিহাসের যাঁরা অধ্যয়ন করতে চান তাঁরা অবশ্যই যদুনাথে আটকে থাকবেন না। আগেই বলেছি আমার সীমিত সাধ্যে বুড়ো বয়সে একটাই পাখির চোখ-- ফেক এবং মিথ বাস্টিং।
৬) আরও দুটো বাস্টিং এ হাত দিয়েছি।
ক) মুসলমানরা স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য কিছু করেনি, জেল যায় নি, কালাপানির সাজা পায় নি, ফাঁসি চড়ে নি।
-- এর জন্যে সাক্ষী মেনেছি আর সি মজুমদারকে এবং হাসবেন না -- খোদ সাভারকরকে।
খ) স্বাধীনতা এসেছে সশস্ত্র সংগ্রাম, বিশেষ করে আজাদ হিন্দ ফৌজের লড়াইয়ে ব্রিটিশ ভয় পাওয়ায়। গান্ধী নেহেরুরদের কোন ভূমিকা নেই, ওঁরা ভীরু।
-- এবার আর সি মজুমদার এবং শ্যামাপ্রসাদ।
এগুলো আগামী মাসের গোড়ায়।