রমিত আপনার অতি সঙ্গত প্রশ্ন -- মোকাবিলা কীভাবে?
আমার উত্তরঃ
এক,
নতুন চিন্তা নতুন বীজ পোঁতার আগে দরকার আগাছা উপড়ে ফেলা, লাঙল চালানো। আমি সীমিত সাধ্যে সেই কাজটা করছি।
দেখুন, ভক্তরা কেউ পড়ে না। ওরা অথরিট চায়, বাণী শুনতে চায়। আপনি যেই সতীশ চন্দ্র, ইরফান হাবিব, গৌতম ভদ্র বলবেন -- ওরা বলবে, ওঃ আগেই জানতাম। এসব সেকু-লিবু-মাকু কুতর্ক। আমাদের সভ্যতা সংস্কৃতি বিরোধী। ব্যস, হয়ে গেল।
তাই প্রথমে দরকার ওদের কনফিডেন্স ভেঙে দেয়া। ওরা যে ওদের আচার্য আর সি মজুমদার এবং আচার্য সরকারকে পড়েনি, খালি ওঁদের নাম নিয়ে গুল মারছে -- সেটা প্রমাণ করে দেয়া। দেখুন আমি কোন নিজস্ব বিশ্লেষণ, নিজের যুক্তি পেশ করিনি। শুধু আচার্য যদুনাথের কথা উদ্ধৃত করে বলেছি ওনার নাম নিয়ে যা বলা হয় সব মিথ্যে।
প্রথমে ক্যালকুলাস বললে হবে না। আগে তো নিউটনীয় মেকানিক্স বুঝুক।
দুই,
দেখুন, ডিফেন্স লইয়ারের কাজ সোজা। শুধু প্রসিকিউশনের থিওরিতে একগাদা ছ্যাঁদা করে দেয়া। এটা প্রমাণ করাই যথেষ্ট যে অপরাধী কে আমি জানি না। কিন্তু যেই হোক আমার মক্কেল কোনমতেই নয়। পেশ করা সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে যে আমার মক্কেলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় না। ব্যস।
তিন, একটি গ্রুপে উচ্চশিক্ষিত এবং দায়িত্বপূর্ণ পদে চাকরি করে গর্বিত বাঙালী ভদ্রলোক একটি ফেবু পোস্ট শেয়ার করলেন। তাতে বলা হয়েছে যে নেহরু ইন্দিরা সব আসলে মুসলমান, কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ নয়। এমন তথ্যের উৎস?
কেন? নেহ্রুর পার্সোনাল সেক্রেটারি শ্রীযুক্ত মাথাই তাঁর বিখ্যাত ইংরেজিতে লেখা স্মৃতিকথায় এসব স্পষ্ট করে বলে গেছেন।
ভদ্রলোক মাথাইয়ের সহজলভ্য বইটি পড়ার দরকার মনে করলেন না। বরং বললেন -- এই পোস্টটি আরও প্রচার করা হোক। এই পরিবারটি এত দশক ধরে দেশবাসীকে বোকা বানিয়ে গেছে।
আমি ঝগড়া করি নি। শুধু ইন্টারনেট আর্কাইভ থেকে বইটা ডাউনলোড করে লিংক দিয়ে গ্রুপে বললাম -- যার ইচ্ছে মিলিয়ে নিন। এরকম কোন কথা ওই বইয়ে নেই। ভূমিকায় মাথাই স্পষ্ট বলছেন যে বইটা নেহরু পরিবারের ইতিহাস বা জীবনী নয়। বরং একসঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার সূত্রে বহু ক্রিটিক্যাল সময়ের ডিসিশন এবং বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয়ের কোলাজ। মাথাই সেকুলারিজমের প্রশংসক।
চার, জনৈক স্বামী নিত্যানন্দ প্রচার করছেন -- গীতায় নাকি বলা আছে যে অহিংসা পরমো ধর্মঃ ঠিক কথা। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা ধর্ম রক্ষার্থে হিংসা ন্যায়োচিত। উনি উদাহরণ হিসেবে একটি সংস্কৃত শ্লোকের উল্লেখ করলেন। কিন্তু অধ্যায় এবং শ্লোক সংখ্যা বলা নেই!
একে স্বামীজি, তায় সংস্কৃত শ্লোক! গ্রুপে সবাই বারবার আওড়াতে থাকে। অথচ এদের সবার ঘরে গীতা আছে, কেউ খুলে দেখল না যে ওই শ্লোকটি জালি, গীতায় নেই। আমি দেখালাম বরং তিনবার শ্রীকৃষ্ণ বলছেন -- অহিংসা পরম ধর্ম। শেষে গ্রুপ লীডার, শ্রীনিকেতনে পড়া কৃষি বৈজ্ঞানিক, চেক করে স্বীকার করল এতদিন ধরে যা আউড়ে এসেছে সেটা ফ্রড।
অনেকেই রাভা (শম্ভাজীকে নিয়ে তৈরি সিনেমা) দেখে পবিত্র ক্রোধে উদীপ্ত। তাই আমার শেষ পর্ব যদুনাথের চোখে শম্ভাজী।