গুরুত্বপূর্ণ লেখা। কিন্তু অনেকগুলো প্রশ্নের উদ্রেক হলো। প্রথমত পরিসংখ্যান সংক্রান্ত প্রশ্ন।
১. বার্ষিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে কোন তাপমাত্রা বাড়ার কথা বলেছেন শুরুতে? এই বৃদ্ধির হার সম্পূর্ণ অসম্ভব! "১৯৫০ এর পরবর্তী সময়ে ভারতের গড় পৃষ্ঠীয় তাপমাত্রা ১° সেলসিয়াস হারে বেড়ে ২০২৩ সালে এসে পৌঁছেছে ২৫.০২° সেলসিয়াসে" : তার মানে ১৯৫০ এ গড় পৃষ্ঠীয় তাপমাত্রা ঋণাত্মক ৪৮ ডিগ্রি ছিলো! নাকি গড় পৃষ্ঠীয় তাপমাত্রা মোট ১ ডিগ্রি বেড়েছে? যেখানে গুগল বলছে দেশের গড় তাপমাত্রা বিগত ১১৮ বছরে বেড়েছে মোট ০.৭ ডিগ্রি। যদিও ০.৭ ডিগ্রি একেবারেই হেলাফেলার বিষয় নয়। যার প্রভাব দেখছি প্রতিবছরের প্রবল দাবদাহে।
২. এবারে পরের কথা। যে ভয়ানক দাবদাহ চলছে, তাতে শীতাতপ যন্ত্রের দরকার পড়ে বৈকি! কিন্তু সত্যি বলতে সেটা বছরের কয়েকটা দিন মাত্র। তাই শীতাতপ যন্ত্র ব্যবহার করা বন্ধ নয়, নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। সচেতনভাবে বিলাসিতার নিয়ন্ত্রণ। এখন আর এসি থেকে সিএফসি তৈরির উদ্বেগের অস্তিত্ব নাই নতুন প্রযুক্তির কল্যাণে। একইভাবে নতুন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তির এসিও বিদ্যুৎ চাহিদার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ন্ত্রণে রাখবে। এই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি কতোটা কার্যকরী তার ছোটো একটা উদাহরণ দেই আমার অভিজ্ঞতা থেকে। পাঁচ বছর আগে পর্যন্ত আমরা বাড়িতে বিশ বছরের পুরানো ফ্রিজ ব্যবহার করতাম। তাতে গরমে বিল আসতো গড়ে ১২০০ টাকা মতো। ২০২০ তে একটা নতুন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ কিনি, আরও বড়ো আরও শক্তিশালী। এখন গড় বিল আসে ৭৫০ টাকা।
৩. দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের ১/৪ অংশমাত্র গৃহস্থালিতে ব্যয়িত হয়। এসির চাহিদা বৃদ্ধিতে এই অনুপাতে কতোটা প্রভাব পড়েছে বা পড়তে পারে তার একটা ধারণা থাকলে ভালো হতো। নয়তো এটা পরিষ্কার না যে দেশে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ২০ গিগাওয়াট বৃদ্ধি কীসের কারণে? কেবল এসি, না জনসংখ্যার বৃদ্ধি, না ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন। আর শিল্পায়নের বিরোধিতা করা হবে কিনা, বা শিল্পে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের দাবি তোলা হবে কিনা সেটা পৃথক আলোচনার বিষয়।
৪. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর চিনের বেশি এসি ব্যবহার করার দুটো কারণ মনে হয়। অর্থনৈতিক উন্নতি, আর দেশের বিভিন্ন অংশে প্রবল শীতল ও উষ্ণ জলবায়ু। এসি শীত গ্রীষ্ম উভয়েই কার্যকরী। এই প্রসঙ্গে আরেকটা উদাহরণ দেই। আমার জাপানের ঘরে এসি নাই, ইলেকট্রিক হিটার আছে। তাই গ্রীষ্মে আমার বিল খুবই কম আসে, কিন্তু প্রবল শীতে প্রতিদিন মাত্র আট ঘণ্টা হিটার চালালেও বিল আসে প্রায় ১৫-২০ গুণ! আর যাদের এসি আছে, তাদের বিল আসে প্রায় ৫-৭ গুণ। অর্থাৎ শীতপ্রধান এলাকায় এসি তুলনামূলকভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
৫. "একটি এয়ার কন্ডিশনার গরমের চারটি মাসে প্রতিদিন আট ঘণ্টা করে চললে ব্যবহৃত বিদ্যুতের ইউনিট পিছু ২.৭৮ কিলোগ্রাম কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছের পক্ষে এই কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করতে সময় লাগে কম বেশি ৫০ দিন।" : অর্থাৎ সহজ হিসেবে এসির সংখ্যার অর্ধেক সংখ্যক গাছ সমসময়ে এসি হতে নির্গত CO২ শোষণ করতে সক্ষম। দেশে গাছের সংখ্যা এসির তুলনায় অনেক অনেক গুণ বেশি নিঃসন্দেহে। যদিও গাছের বণ্টন উদ্বেগের বিষয়।
৬. অনেক লেখা হয়ে গেলো! ছোটো কথায় বলতে গেলে, আমার মতে নজর বেশি দেওয়া উচিৎ বরং শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের দিকে, কারণ শিল্পপতিরা নিজেদের লভ্যাংশ বজায় রাখতে পারে শ্রমিককে শোষণ করে ও অন্যান্য পদ্ধতিতে। কিন্তু গৃহস্থালির বিদ্যুতের খরচ যায় জনগণের নিজের পকেট থেকে। পকেটে টান পড়লে সাশ্রয়ও করবে নিজে থেকেই।