রাজ্য রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে এখন চলে এসেছে এসএসসি কান্ডে ভূয়া নিয়োগ ও তাকে ঘিরে দুর্নীতির এক প্রকান্ড পঙ্কিল অধ্যায়। এরই হাত ধরে প্রায় নিত্যদিন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে রাজ্যে ক্ষমতাসীন শাসকবর্গের চুনোপুঁটি নেতাদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার কাহিনী। অখ্যাত গাঁ গঞ্জে তাঁদের পেল্লাই প্রাসাদের সচিত্র বিবরনী। রামপুরহাটের বগটুইয়ে দলীয় কোন্দলে, বখড়ার ভাগাভাগির বলি দিতে দেখা গেল একটি পরিবারের মহিলাদের। গোটা রাজ্যবাসী দেখল কিভাবে জ্বলে পুড়ে খাঁক হয়ে গেল মহিলারা।
নিষ্পাপ শিশুরাও রেহাই পেলনা। মদমত্ত অন্ধ ক্ষমতা শুধু অর্থের লিপ্সাকেই বাড়ায় না, তা বর্বর হিংস্র ও জান্তব আক্রোশেরও জন্ম দেয়। তখন তার কাছে মানবতা, সহমর্মিতা যেন তুমুল এক রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
যাকগে সে কথা। তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসীন মমতা নেতৃতাধীন তৃণমূল সরকারের সর্বাঙ্গে আজ দগদগে ঘা। পর্বত প্রমাণ দুর্নীতির দুর্গন্ধ ভরা ক্ষতচিহ্ন। স্বৈরশাসনের ঘৃণ্য লক্ষণ।
বিজেপির আগ্রাসন ও রাজ্যকে দখল করে নেওয়ার যে ঘোর বিপদ বিগত বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল, রাজ্যবাসী তা প্রতিহত করে। মুক্ত গণতন্ত্র, অবাধ নাগরিক স্বাধীনতা, স্বচ্ছ প্রশাসন, আজ্ঞাবহ পুলিশ প্রশসনের বদলে প্রকৃত জনস্বার্থে পরিচালিত গোটা প্রশাসনিক ব্যবস্থা - সব কিছুকেই দু' পায়ে মাড়িয়ে আজ মমতা সরকার দুঃশাসনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। গোটা শিক্ষা দপ্তর আজ কাঠগড়ায়। স্মরণ কালে কখনও দেখা যায়নি, কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী ঘিরে রেখেছে শিক্ষা দপ্তর, ডেটা রুম সহ চারটি ঘর সিল করেছে সিবিআই। এই ক'দিন আগে পর্যন্ত রাজ্যের মন্ত্রীসভায় মুখ্যমন্ত্রীর পর দ্বিতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আজ মুখ আড়াল করে হাজিরা দিতে হচ্ছে সিবিআই দপ্তরে। আর, একসময় যিনি সারদা কান্ডে ডেলোর সুরম্য অট্টালিকায় সুদীপ্ত সেন - র কাছ থেকে বহু অর্থ নেওয়ার জন্য সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন, তিনিই আজ হয়ে উঠলেন দলের মুখপাত্র, সারদা কান্ডে দীর্ঘদিন জেল খাটা মানুষ টা আজ পরিচ্ছন্নতার প্রতীক হয়ে রাজনৈতিক মঞ্চের প্রথম সারিতে। তৃণমূল দলের শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কমিটির অন্যতম হোমড়া চোমড়া পার্থবাবুকে এখন কে ই বা দেবে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করার সহজ পাঠ!
শিক্ষা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীর কেচ্ছা নিয়ে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী টুঁ শব্দটি করছেন না। প্রকারান্তরে, সিবিআই বা কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সম্পর্কে তাঁর তীব্র অসন্তোষ আর চাপা দিয়ে রাখতে পারেন নি। এতো বড় লজ্জাজনক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসার পরও কেউ মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করলেন না। এমনই এই সরকারের নীতি নৈতিকতা।
শুধু কলকাতা বা সল্ট লেকেই নয়, গভীর শাখা প্রশাখা বিস্তারি এই দুর্নীতি তার শিকড় ছড়িয়েছে অনেক গভীরে। সেই উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা - রঞ্জন নামক এক "গুণধরের" কেচ্ছা ফাঁস করে দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস। বিপুল টাকার বিনিময়ে যিনি অনেককে স্কুলে চাকরি দিয়েছেন। কোলাঘাটে এমনই দুই ভাইয়ের নাম উঠে এল যাদের সাথে রয়েছে পার্থ বাবুর ঘনিষ্ঠতা, পুলিশ যাদের নামে এফ আই আর করল শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে। যে দু'জনের হাত ধরে এলাকার অনেক যুবক যুবতীরা মোটা টাকার বিনিময়ে এসএসসি- গ্রুপ সি - গ্রুপ ডি - এবং প্রাথমিকে চাকরি বাগিয়ে নেন। প্রাথমিকে চাকরির দর ছিল ১২ লক্ষ টাকা, এসএসসিতে ১৬ লক্ষ টাকা, গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি তে যথাক্রমে ১২ ও ১০ লক্ষ টাকা। বলাই বাহুল্য, যে এই বিশাল অঙ্কের টাকা ভাগ হতো বিভিন্ন স্তরে, পর্যায়ে, একেবারে উপর থেকে নীচ পর্যন্ত। আর তাই, এই ষড়যন্ত্রের জাল অনেক বিস্তৃত। আদপেই সেই জাল ছিন্ন হবে কিনা, প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পাবে কিনা তা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
স্কুলসার্ভিস কমিশন! গালভরা নাম। কিন্তু ঘটনাচক্রে আজ এই প্রতিষ্ঠানটির সাথে অন্ধকার জগতের অনেক সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। স্কুলে নিয়োগ নিয়ে বরাবরই ছিল দুর্নীতি। রাজনৈতিক নেতাদের ঘিরে ছিল স্বজন পোষনের নানান অভিযোগ। বাম আমলে রূপ টা ছিল ভিন্ন। তখন প্রভাবশালী নেতা মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ বলয়ে যারা থাকতেন, তাঁদের মধ্যে থেকে কারুর কারুর ভাগ্যে শিকে ছিঁড়তো। এই নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ ধূমায়িত হওয়ার আগেই সরকার নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে তৈরি করল স্ব-শাসিত সংস্থা স্কুল সার্ভিস কমিশন। এই সংস্থা তৈরি হওয়ার পর রাজ্যের বহু নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত মেধাবী ছাত্র ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করার সুযোগ পান। কিন্তু, রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলের পর মমতা নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে এসএসসি-র মাধ্যমে শিক্ষক - অশিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষাটাই লাটে উঠল। এমনকি, ২০১২ সালে যে পরীক্ষা হয়, তাতেও বিরাট মাপের দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। তারপর তৈরি হয় কম্বাইন্ড মেরিট প্যানেল। প্রাইমারির ক্ষেত্রেও উঠে এলো অভিযোগের পর অভিযোগ। টেট কেলেঙ্কারির সমাধান আজ পর্যন্ত হল না। এই চলতে থাকা একের পর এক দুর্নীতির মাঝেই এলো ২০১৪-১৫ সালে নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি। এই বিজ্ঞপ্তি ও এলো অনেক বিক্ষোভ আন্দোলনের পথ ধরে। আর, এবার এল পরীক্ষা পদ্ধতিতে বদল ঘটিয়ে। আগেকার এসএসসি -তে শিক্ষক নিয়োগের যে পরীক্ষা নিত রিজিওনাল লেভেল সিলেকশন টেস্ট, তা পাল্টে হল স্টেট লেভেল রিজিওনাল টেস্ট। কিন্তু এটাও কলঙ্ক মুক্ত হল না। এই এসএলএসটি - র মাধ্যমে তৈরি হওয়া শিক্ষক - শিক্ষিকা নিয়োগের যে প্যানেল হল তাও দুর্নীতির দোষে দুষ্ট।
এসএলএসটি র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ফল প্রকাশের আগেই প্রকাশিত হয়েছিল গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত মেধা তালিকা। কিন্তু প্রথম থেকেই কর্মপ্রত্যাশীরা নানা অভিযোগ নিয়ে এসএসসির দ্বারস্থ হয়ে পড়ে।
নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে আদালত চত্বরে যে লড়াই চলল, তা কম চিত্তাকর্ষক ছিল না। কলকাতা হাইকোর্টের একক বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একের পর এক রায়, মন্তব্য বেশ কিছু বিতর্ক ডেকে আনে। তিনি গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি র নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্তের ও প্রাথমিক কিছু তথ্যের ভিত্তিতে গ্রুপ ডি ও গ্রুপ সি র যথাক্রমে ৫৭৩ এবং ৩৫০ জনের চাকরি বরখাস্থ করে বেতন বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ সেই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে বসে। ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই-র বদলে গ্রুপ ডি মামলার তদন্ত ভার ন্যস্ত করে একটা কমিটির উপর। প্রাক্তন বিচারপতি আর কে বাগ -র নেতৃত্বে ও শিক্ষা দপ্তরের কয়েকজন আধিকারিকদের নিয়ে গড়ে ওঠা এই কমিটি রিপোর্ট দিয়ে জানায় গ্রুপ ডি তে প্যানেল বহির্ভূত নিয়োগ হয়েছে ৬০৯ জনের। এসএসসি কান্ড উন্মোচিত করল রাজনীতির লম্বা হাত কিভাবে বিচারবিভাগকেও প্রভাবিত করে। দিনের পর দিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে যাতে মামলা না ওঠে তার জন্য তৃণমূল প্রভাবিত আইনজীবীর দল অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসের সামনে লাগাতার বিক্ষোভ চালিয়ে যায়। অবস্থা এমনই জায়গায় পৌঁছায় যখন কলকাতা হাইকোর্টের কোন বেঞ্চই আর এসএসসি সংক্রান্ত মামলা নিয়ে রাজি হচ্ছিল না। বার বার ডিভিশন বেঞ্চের হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ অভিজিৎ বাবু সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে ও অভিযোগ জানান। রাজ্য বাসী এটাও দেখল, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চের রায়গুলো, যা সরকারপক্ষকে রীতিমতো বিব্রত ও প্যাঁচে ফেলার সামিল, তা ডিভিশন বেঞ্চে গিয়ে কেমন যেন নিষ্প্রভ, ভোঁতা হয়ে ফিরে আসছে।
নিয়োগ দুর্নীতি নিত্যদিন নতুন নতুন ঘটনা মারফত সামনে আসতে থাকে অবিরাম স্রোতে। ২০১৯ সালে এসএলএসটি-র মেধা তালিকায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতার নাম হঠাৎ দেখতে পেয়ে সকলেই চমকে উঠল। গেজেট মেনে নিয়োগ না করার প্রতিবাদে ২০১৯ র ২৮ শে ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার মেয়ো রোডে প্রেস ক্লাবের সামনে "যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ" - র পক্ষ থেকে শুরু হয় অনশন। লাগাতার অনশন সুশীল সমাজের মধ্যেও ছাপ ফেলতে শুরু করে। তারপর ২৯ দিনের মাথায় মুখ্যমন্ত্রী সেখানে হঠাৎ হাজির হন। তিনি সেদিন স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ঘুঘুর বাসা হিসাবে আখ্যা দেন। সেখানেই তিনি অনশনকারীদের মধ্যে থেকে ৫ জন আর পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দেন কমিশনের মধ্যে থেকে আরও ৫ জনকে নিয়ে একটা কমিটি গঠন করতে, যারা নাকি পুরো বিষয়টা দেখভাল করবেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় সেই পাঁচজনকেই রাখেন, যাদের ঘিরে ছিল বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ। আর, আন্দোলনকারীদের পাঁচজন নেতৃস্থানীয়কে কমিটিতে টেনে তাঁদের ও কমিটির বেশ কিছু সদস্যকে অবৈধভাবে চাকরি পাইয়ে দিয়ে পুরো আন্দোলনকেই বিপদগামি করতে চায় পার্থবাবুর নেতৃত্বাধীন কমিটি। যদিও সেটা ফলপ্রসু হয়নি। অনেক তথ্যই বেরোতে শুরু করল। ওই কমিটির ধুরন্ধর সদস্যদের নানা কারসাজিতে জাল করা হয় রেকমেন্ডেশন লেটারের সই, পোড়ান হয় ওএমআর শিট, মুছে ফেলা হয় কম্পিউটারের বিভিন্ন ডেটা। বিচারপতি বাগের নেতৃত্বাধীন কমিটি জানিয়েছে, এসএসসি - র উপদেষ্টা শান্তি প্রসাদ সিনহা মধ্য শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে ভূয়া সুপারিশগুলো দিয়েছিলেন, আর যে নিয়োগপত্রগুলো পর্ষদের অফিস থেকে না দিয়ে এসএসসির নবনির্মিত ভবন থেকে দেওয়া হয়েছে। মমতার নির্দেশিত কমিটির সদস্যদের আপাদমস্তক এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোন বক্তব্য শোনা গেল না খোদ মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে। ন্যায়সঙ্গত প্রশ্ন ওঠে, এতো বড় একটা দুর্নীতি যে চলছে বছরের পর বছর, তা সত্যিই কি তিনি জানতেন না? তিনি কি জানতেন না তাঁর মন্ত্রীসভার দ্বিতীয় ব্যক্তিই র নামেই ভূরি ভূরি অভিযোগ উঠেছে?
রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লাখেলাখে শূন্য পদ ভরাটের কোন পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত লক্ষ করা গেল না রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। নতুন শিল্পের অভাব, চরম বেকারত্ব, রাজ্য সরকারি দপ্তরে ইনফর্মাল কর্মীর রমরমা, নিদারুণ কম মজুরী, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ আর এরই বিরোধাভাসে লক্ষ কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে তৃণমূল আশ্রিত নেতা মোটা ঘুষের বিনিময়ে প্যালেল বহির্ভূত স্কুলের চাকরির মাধ্যমে -- সরকারি আধকারিক, নীচ থেকে উপর পর্যন্ত বিস্তৃত এক দুর্নীতিগ্রস্থ বাহিনী আজ চেপে বসেছে গোটা রাজ্যবাসীর উপর। মুখ্যমন্ত্রী সব জেনে বুঝে ও তা প্রশ্রয় দিয়ে চলেছেন বছরের পর বছর।
এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে। যে হার না মানা অদম্য জেদ ও হিম্মত নিয়ে এসএসসির কর্মপ্রত্যাশিরা কখনও কলকাতার প্রেস ক্লাব, কখনও বা গান্ধী মূর্তির পাদদেশ কখনও বা সল্ট লেকের সেন্ট্রাল পার্কের ৫ নং গেটে লাগাতার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ঝড় - জল - প্রখর রোদকে উপেক্ষা করে, তাঁদের এই বিক্রম যে বিফলে যাবেনা তার লক্ষণ এখনই ফুটে উঠছে।