https://www.facebook.com/watch/?v=1374361393014889 “আমরা কোথায় যাচ্ছি বলতো?”
“যেদিকে দু-চোখ যায়”।
“কিন্তু দু-চোখেরও তো একটা লিমিট আছে – সেটা কোথায়? কদ্দূর”?
“তোকে তো বলেইছিলাম, এবারের পঁচিশ-তারিখটা আলাদা রকম কাটাবো। টুনিবাল্ব-জ্বলা শিং নিয়ে পার্কস্ট্রিট নয়। কিংবা কোন মলও নয়, যেখানে ঢুকলেই কিছু-মিছু কিনতে তুই ছটফট করিস”।
“শহর ছেড়ে হাইওয়েতে গাঁগাঁ বাইক হাঁকিয়ে তুই যে আমাকে মলে তুলবি না, সে আমি বুঝেছি। কিন্তু যাচ্ছিটা কোথায়?”
“আমার সঙ্গে এভাবে এতদূরে যেতে... ভয় পাচ্ছিস, না?”
“এখানে ভয়? কেন? তোকে নিয়ে মলে ঢুকতেই বরং আমার ভয় লাগে। কিছু একটা জিনিষ আমার মনে ধরলেই, তুই এমন একখানা মুখ করিস না? যেন শীতের রাতে তোর কম্বলে আমি জল ঢেলে দিয়েছি”।
“হা-হা-হা, অতটা না হলেও কতকটা ঠিকই বলেছিস”।
“তুই এত্তো... এত্তো কিপটে, জানি না, তোকে নিয়ে আমি ঘর করবো কী করে?”
“তুলকালাম করবি রোজ। ছাদে যেন একটাও কাক-চিল বসতে না পারে। শুনেছি ঝগড়ুটি মেয়েদের হার্টের ব্যারাম হয় না”।
দুহাতে কাশের পেট জড়িয়ে ঘনিষ্ঠ বসেছিল শিউলি। কাশের পেটে একটা চিমটি কাটল, কিন্তু জ্যাকেট- জামার পরত পার হয়ে সেটা কাশের ত্বক পর্যন্ত পৌঁছোলো না। চিমটিটা ফল্স্ হয়ে যাওয়াতে শিউলি একটু রেগেই গেল, চেঁচিয়ে বলল, “মুখপোড়া, তুই আমাকে ঝগড়ুটি বললি, তোর এত্তবড়ো সাহস?”
কাশ বাইকের স্পিড কমিয়ে হাইওয়ের ধারে ঘেসোজমিতে দাঁড় করাল, চারদিক দেখে বলল, “মনে হচ্ছে, এসে গেছি, চল এবার নিচেয় নামব...”। শিউলি মাটিতে নেমে পড়েছিল, মাঠের দিকে তাকিয়ে বলল, “ওয়াও, হলদে রঙের ওগুলো কী ফুল রে? গোটা মাঠ জুড়ে কী সুন্দর ফুটে রয়েছে? দারুণ, না!”
“আহাঃ নেমে পড়লি কেন? বললাম না, নিচেয় নামব। ওগুলো কী ফুল তোর না জানলেও চলবে, বিয়ের পর তুই সারা জীবন আমাদের ঘরে ওই ফুলই অজস্র ফোটাবি..! ওঠ উঠে আয়, আলপথে যাবো, খুব ঝাঁকুনি হবে, ভালো করে চেপে ধরিস”। শিউলি বাইকে আবার উঠে বসতে বসতে বলল, “আজকাল তুই বড্ডো ট্যাঁকট্যাঁকে কথা শিখেছিস, কী ফুল ওগুলো বললি না তো”?
শিউলি ঠিকঠাক বসার পর, কাশ খুব সাবধানে প্রথম গিয়ারে বাইক নামিয়ে দিল হাইওয়ে থেকে ক্ষেতের আলপথে। তারপর দ্বিতীয় গিয়ারে এবড়ো খেবড়ো আলপথ ধরে চলতে লাগল। দুপাশের হলুদ প্রান্তরের মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে, শিউলি কাশের কোমর ছেড়ে, পাখির ডানার মতো দু হাত ছড়িয়ে আনন্দে বলল, “ওয়াও, মনে হচ্ছে যেন স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে চলেছি”।
কাশ মজা করে বলল, “বেশি স্বপ্ন দেখিস না, বাইক থেকে ধপাস হলে, কোমরে বড্ডো নাগবে গো, খুকুমণি”। শিউলি এবার চিমটি কাটল কাশের উরুতে, ট্রাউজারের দুর্বল প্রতিরোধ ভেদ করে এবার কাশের ব্যথা লাগল। একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “আঃ কী হচ্ছে কি? বাইকে বসে এয়ারকি করবি না”।
“আর তুই যে সেই থেকে যা খুশি বলে যাচ্ছিস, তার বেলা?”
খেতের আলপথ শেষ হল, বাঁধের নিচে। সেখানেই বাইক স্ট্যাণ্ড করিয়ে কাশ বলল, “চলে এসেছি, এবার নেমে পড়”। হেলমেট দুটো ঝুলিয়ে দিল ক্লাচারে। তারপর শিউলির হাত ধরে উঠতে লাগল বাঁধের ওপর। শিউলি বলল, “তুই এখনও কিন্তু বললি না, অমন সুন্দর হলুদ ফুলগুলো কী ফুল?”
“ওগুলো সর্ষেফুল”।
অবাক হয়ে শিউলি বলল, “ওঃমা, তাই – সর্ষেফুলের কথা অনেক শুনেছি...আজ প্রথম দেখলাম...” তারপরেই বেশ গম্ভীর হয়ে এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, “আমি বিয়ের পর তোকে রোজ সর্ষেফুল দেখাবো, হতচ্ছাড়া? বেশ করবো। দেখাবোই তো!”
কাশ হাসতে হাসতে শিউলির হাতটা আবার নিজের হাতে নিয়ে বাঁধের ওপরে উঠে দু হাত ছড়িয়ে বলল, “এইবার চারদিকে একবার তাকিয়ে দেখ, খেপি, কোন স্বপ্নরাজ্যে তোকে এনে ফেলেছি! শান্ত নিবিড় এই সমস্ত রঙ তোর দু চোখে বসত করুক আজীবন”।
শিউলি আশ্চর্য হয়ে দেখছিল – সোনালী রোদ্দুরে মাখা উজ্জ্বল নীল আকাশ, তুলির হালকা টানে বয়ে চলা সব্জে নদী, তার দুপাড়ের নিবিড় সবুজ গাছপালা আর পিছনে বিছানো পীত পুষ্পপ্রান্তর..। আনন্দে আবেগে শিউলি বলল, “কাশ, কাশ, কাশ...এমন একটা কিউট জায়গা আমাদের এত কাছেই রয়েছে, বিশ্বাসই হচ্ছে না! তুই আমাকে এমন করেই বারবার অবাক করে দিবি তো, কাশ, সারাটা জীবন?”
“দেব, তবে একটা শর্তে”।
“কী?” মুখ তুলে কাশের চোখের দিকে তাকাল শিউলি।
“আমাদের ঘরে আমার চোখের সামনে রোজ এমন অজস্র সর্ষেফুল যদি ফোটাতে পারিস, তবেই...”।
লাজুক হেসে শিউলি কাছে এসে কাশের বুকে কিল মারল আদরে, বলল, “অসভ্য”।
কাশ হাসতে হাসতে বুকে চেপে ধরল তার খেপিটাকে।
.00.