রবি মামা দেয় হামা
তন্বী হালদার
১
বাঙালী মধ্যবিত্ত জীবনগুলো খুব তাড়াতাড়ি খোল নলচে বদলে ফেলছে বা ফেললো বলা যায়। একসময় সরকারী অফিস দ্বিতীয় আর চতুর্থ শনিবারটি ছুটি থাকতো আর অন্য দুইদিন অর্ধেক অফিস। কিন্তু রবিবার মানে ফুলমস্তি। গৃহিণীদের কাচাকাচি, মাথায় সাবান-শ্যাম্পুর বাহার সব ঐ দিন। কর্তা বাড়ি থাকলে মাথায় একটু ফুলেল তেল তো দেওয়ার কথাই। এছাড়া সারা সপ্তাহের ধুলো ময়লা জমে থাকা ছেলেমেয়েগুলোকে দলাই মালাই করে স্নান করানো। আমি একেবারে গ্রাম্য মফস্বলে বড়ো হয়েছি। তো রবিবার পুকুরে পড়লে জল ঘোল-তোল না করে ওঠা উঠির নাম নেই। গরমকালে জল কমে গেলে দই বানানো হতো। না দুধ বসিয়ে দই না। এ এক্কেবারে ইসস্পেশাল যারে কয়। পুকুরের পাঁক জলে ওপর নীচ হয়ে থকথকে দইয়ের চেহারা নিত। আর দু’হাতে তুলে চেঁচাতাম আমরা - আমার দই, আমার দই। তারপর সেই পাঁকের গন্ধে দেহ মন সিক্ত করে পুরো সত্যবতী হয়ে গায়ে গামছা টেনে, চোখ মায়ের পায়ের জবা বানিয়ে, পায়ে নূপুরের নিক্কণ তুলে সখীদের সঙ্গে ঘরে ফেরা। সখারাও থাকতো জলে। ডাঙায় উঠে কেন জানিনা ছেলেগুলো চোঁচা দৌড়। এবার হাঁটতে হাঁটতে অমুকের ছোড়দা, মেজদার সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যেতেই পারে। ছোড়দা মেজদার টিউশুনি ফেরত বা আড্ডা ফেরত সাইকেলের ঘণ্টির সে কি মধুর সুর। কোনো সখীতে কনুইয়ের গুঁতোয় অধিক সচেতন করে দেওয়া। অকারণে গামছা বুকে আর একটু টেনে নেওয়া। মুহূর্তের চোখাচোখিতে এত সময় জলে থেকেও যা হয়নি তা হতে লাগে শীত শীত বোধ। সাইকেল চলে যাওয়ার পর সখীদের খিল খিল হাসি। আর তাদের প্রতি কপট রাগ দেখানো, কথা বলবো না তোদের সঙ্গে। এরপর বাড়ি ফিরে গর্ভধারিণীর প্রথম ডায়লগ - ঐ এলেন। যৌথ পরিবার হলে আরও উড়ো কথা ভেসে আসতো - ছি ছি কোনো মেয়ে এতসময় ধরে স্নান করে! কমবয়সী পিসি কাকা থাকলে, এ মা তোর গায়ে পাঁক পাঁক গন্ধ বেরোচ্ছে। কোনো মানে হয়। এই গন্ধ একটু আগে সাইকেল আরোহী লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে গেল, আর তা কিনা … কমবয়সী পিসি কাকারা মাই ডিয়ার। তাদের দিকে দাঁত মুখ খেঁচানোই যায়। আবার গর্ভধারিণীর ডায়লগ - এই জানোয়ার বাথরুমে গিয়ে সাবান মেখে আবার স্নান কর। বাবা এতক্ষণে - উফ বকছো কেন। যা, মা যা বলছে কর। এতক্ষণের রোমান্স ভো কাট্টা ঘুড়ি। ধুত্তোরি বলে মার্গো বা লাক্স নিয়ে ফের বাথরুমে ঢোকা। এখন তো কত সুগন্ধী সাবান, শাওয়ার জলে মাখামাখি হয়ে যাই, কোনো ছোড়দা মেজদা আর জঠর পর্যন্ত শ্বাস টানে না। এখন উইক এন্ড ডে হয়।
২
রবিবার যেহেতু একটা নির্ধারিত ছুটির দিন তাই রবিবার অন্যদিনগুলোর থেকে আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এখন এই করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় সব বার রবিবার করে তুলেছে। আমার মতো সর্ব অর্থে ফাঁকিবাজ মানুষেরও অসহ্য লাগছে এই অনন্ত রবিবার। কিন্তু এখন যে-বয়েসটাকে অতীতকাল মনে হয় সেই সময়েও এই রবিবার একটা আলাদা মাত্রা আনতো। স্কুল ছুটি থাকতো। সখীগণের সঙ্গে আদারে বাদারে ঘোরা। কিংবা নদীর ধারে যাওয়া এই ছিল বেড়াবার যায়গা। কিন্তু তাতেই প্রতি সপ্তাহে থাকতো টানটান উত্তেজনা। বারান্দায় বসলে বা ছাদে গেলে আদিগন্ত ধানখেত দেখা যেত। বাতাস দিলে নুয়ে পড়তো তারা। ছুটির দিন স্নান পর্ব মিটলে খাওয়া। রান্না যাইহোক সে তেলি কাঁকড়ার ঝাল বা খাসির মাংস সব স্বাদ একরকম ছিল। অপূর্ব। আহা অসাধারণ। আসলে তখন খিদেটা শুধু জঠরে না সমস্ত শরীর মনে বিরাজ করতো। তাই হয়তো এতো খিদে পেত। খাওয়ার পর খাওয়া। যাই খেতাম মুহূর্তে হজম। তা সে হদ্দ কোষ্টো পেয়ারা হোক বা যম টক তেঁতুল, গাব হোক। লোকের গাছ তো বটেই নিজেদের গাছেরও এসব জিনিস ঢিলিয়ে পাড়তে একটুও খারাপ লাগতো না। এবং ধরা পড়লে মধুর বচন তো বটেই মারধোরও জুটতো। আমি হলফ করে বলতে পারি, আমার জীবনের এমন একটি ঘটনা কারো জীবনে ঘটেনি। তা হচ্ছে যাকে আমার কেষ্টো ঠাকুর ভাবতাম তাদের বাড়ির আমগাছে কাঁচা আম ঢিলিয়ে পাড়ছিলাম বলে তার কাছে মার খাওয়া। এবং এঁ এঁ করে তারস্বরে আমার কান্না জুড়ে দেওয়া। এখন এই মার খাওয়ার কার্যকারণ বিশ্লেষণ করতে বসে একটা সমাধানে পৌঁছেছি - তা হল তার ইগো। সেদিনকার সেই পেঁচো গোপালের ইগোতে লেগেছিল। আরে তুই কাঁচা আম পছন্দ করিস একবার ইঙ্গিত দিলেই তো হনুমানের গন্ধমাদন পর্বতের মত গোটা আম্রবৃক্ষখানাই তোর পায়ের কাছে নিয়ে ফেলতে পারি। তা না করে তুই ঢিল মারছিস কেন! এই কেনর উত্তর আজও আমার কাছে নেই। নেই যেমন পায়ের কাছে কোনো ইটের টুকরো পড়লে রাস্তায় হাঁটবার সময়, সেটাতে কেন লাথি দিতাম। সেটা কিছুদূর যেত আবার দিতাম। এভাবেই সেটাকে ফুটবলের মত লাথি দিতে দিতে গন্তব্য পর্যন্ত নিয়ে যেতাম। কেমন বিজয়িনী বিজয়িনী মনে হতো নিজেকে। যাইহোক ঐ খিদে আমার সবসময় ছিল। পরিমাণে খেতামও বেশি। তাও তিনবেলাই ভাত। এখন যেমন মা বাবারা আমার ছেলেমেয়ে কিছু খায় না বলে এবং সারাক্ষণ এটা খা ওটা খা করে আমাদের বিশেষতঃ আমাকে মোটেই তা করা হত না। বরং উল্টে বলতো - তোর পেটে কি রাক্ষস ঢুকেছে নাকি। এই তো খেলি। এসব শুনলে একটুও দুঃখ, কষ্ট, লজ্জা কিছুই হত না। ঘরের বাইরে একবার পাক মেরে এলেই যদি কারও খাবার হজম হয়ে যায় তাকে এসব ব্যাপারে নির্লজ্জ হতেই হয়।
বিস্কুটের প্রতি ছিল আমার অসম্ভব দুর্বলতা। পয়সা পেলেই বিস্কুট কিনে খেতাম। এবার তো ‘বিস্কুট’ নামে একটা নভলেট লিখেই ফেলেছি। সকালে চায়ের সঙ্গে বিস্কুটের কৌটো নিয়ে বসতাম। না এ নিয়ে কোনোদিন আমাকে কেউ কিছু সেদিন বলেনি। বোন কোনো কোনো দিন ওর বরাদ্দের বিস্কুটটাও আমাকে দিয়ে দিত। আমি বেহায়ার মত খেয়ে নিতাম। বোধটা বরাবর কম আমার। ছোটোবোনটা শুধু চা খেল মনেই হত না। আজ সত্যি বলছি বুকের ভেতরটা হু হু করে, যখন এ ঘটনা মনে পড়ে। বোনকে অনেক দিন ধরেই সন্তান ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। নিজেকে এত স্বার্থপর মনে হয় এখন সেদিনের এই কাজের জন্য। এই বিস্কুট খাওয়ায় প্রথম যবনিকা পতন হয় বিয়ের পর। শ্বশুর বাড়িতে চায়ের সঙ্গে দুটো বিস্কুট নিয়েছিলাম। ননদ হাত থেকে একটা বিস্কুট নিয়ে নেয়। বলে - আমাদের বাড়িতে চায়ের সঙ্গে একটা বিস্কুট খায়। এবং আমার সামনেই মীটসেফে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ঐ প্রথম আমার চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ। এর অনেক অনেক বছর পর আমি হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম, একজন আমাকে বিস্কুট নিয়ে দেখতে গেছিল। আর একজন ‘মিষ্টির দোকান খুঁজে পাইনি’ ব’লে প্রথম এসেছিল আমাদের বাড়ি বিস্কুটের প্যাকেট হাতে নিয়ে। তারা কিছু না জানলেও ঘটনা দু’টি আমাকে অসম্ভব আনন্দ দেয়। চোখে জল এনে দিয়েছিল। আর এখন তো ডাক্তারের নির্দেশ - নো বিস্কুট।
৩
কোনও কোনও রবিবারটা এত তড়বড়িয়ে চলে যে দিন শেষে মনে পড়ে যেত আজ রবিবার। আজও বোধহয় এমন একটা দিনই হবে। আসলে রবিবার হলো খানিকটা পাট না ভাঙা শাড়িকে আলমারি থেকে বের করে এদিক ওদিক খানিক নেড়েচেড়ে অথবা রোদ খাইয়ে আবার যথাস্থানে রেখে দেওয়া।
আমাদের গ্রাম্য মফস্বল শহরে সে সময় আইসক্রিম বলতে ঠেলা গাড়িতে ঘোলমালাই বিক্রি হত। আহা কি মিঠে সুরেলা ছিল সে ঘোলমালাই-ওয়ালার স্বর। আ - ই - স – ক্রী - ম। চাই - ঘোল - মালাই। উফ কি যে সে স্বাদ ছিল ঘোলমালাইয়ের! অনেক অনেক বছর পরে যখন চকোবারের স্বাদ পেলাম, চোখ বুজিয়ে মুখের ভেতর তার গলন অনুভব করলাম তখন আর ঘোলমালাইয়ের ডাক শুনতে সত্যি পাইনি। এখন যদি বলা হয় বেছে নাও। আমি রিয়েলি কনফিউজড। ঘোলমালাইয়ের স্বর, স্বাদ ঘরে বসেই বিনা আয়াসে পেয়ে যেতাম। কিন্তু চকোবার দরজায় আসে না। সুরেলা মূর্ছনাও জাগায় না। খেতে গেলে যেতে হয়। আর অবিরাম এই যাতায়াতে ট্রেন-বাসে সহজ পোশাক চালু করতেই হয়। শাড়ি সেখানে ফ্যান্টাসি। বলা যেতে পারে দুর্গা পূজার অষ্টমীর অঞ্জলী।
মা, পিসি, মাসি, বড়ো দিদিদের ঢলঢলে ব্রা পরে তাদের ব্লাউজ রান সেলাইয়ে ফীটিংস করে, তাদের শায়া গুঁজে পরে, তাদেরই কারও শাড়ি পরে নিজেকে অকাল বোধনের মতো বড়ো করে দেখানোর দিনও ছিল এই রবিবার। অকারণ যদি এমন শাড়ি পরা যেত এবং হাতে ঘোল মালাইয়ের কাঠি আইসক্রিম থাকে প্রিয় সখীকে নিয়ে ধান খেতে নেমে যাওয়া যেতেই পারে। প্রিয় সখীর পিঠে হাত রেখে চমকি বিস্ময় প্রকাশ - এই তুই পরেছিস? কার? কাকীমা জানে? লাজুক না সূচক মাথা নাড়া। আবার প্রশ্ন - ও আসবে এখানে? আবার মাথা নাড়া না। এবার বোধহয় পৃথিবীর অবান্তরতম প্রশ্নটি সখী করতো - তবে পরেছিস কেন? বোঝো কান্ড। কোনো মানে হয়। তবে এই প্রশ্ন কিন্তু তখন মস্তিষ্কের অলিন্দে চারিয়ে গেছে। সে যদি নাই দেখলো আমি বড়ো হয়েছি, তবে মার খাবো জেনেও ঐ ক্ষুদ্র পোশাকটি পরা কেন!
এখন তো ভিডিও কলের যুগ। ইচ্ছে করলে চকোবার খেতে খেতেও সরিয়ে ফেলা যায় সকল মোড়কের আবরণ। সময়। সময়। আসল কথা হলো সময়। মেয়ে বলে, তোমাদের সময়ে … আমাদের সময় মানে! কত আগের মানুষ আমরা! প্রাগ ঐতিহাসিক! হলেও বা কি এসে যায়। নিজের মানুষের কাছে ভিন্ন ভিন্ন সাজে নিজেকে দেখাতে, ধরা দিতে ভালোলাগার বোধটা তো চিরন্তন। দুটো স্বাদ আলাদা। ঘোলমালাই আর চকোবার। কিন্তু দুটোই মুখের জঠরে মেল্ট হয়। চোখ বুজে আসে। আসল হলো অনুভূতি। যে মানুষ বলে সে অনুভূতিহীন, সে সব থেকে বেশি অনুভূতিপ্রবণ। যে মানুষ দাবী করে তার চশমার কাঁচ ঝাপসা, সে রোজ নিয়ম করে চশমার কাঁচের যত্ন নেয়। নিজেকে প্রকাশ বা ধরা পড়ে যাওয়ার অস্বস্তি কাজ করে তাদের। অথচ সেদিন যদি বোঝানো যেত - এই দেখো আমি তোমার জন্য নিজেকে বড়ো করে তুলছি। আবার এ সময়ও যদি বোঝানো যায় ভিডিও কলে ফ্রীল দেওয়া নাইটি তোমার জন্য। এভাবেই রবিবারের দিনগুলো কি অদ্ভুত তুমিময় হয়ে কেটে যেত।
৪
রবিবার হলো সূর্যিঠাকুরের নিজের বার। এ বারে যারা জন্মায় তারা নাকি তেজস্বী, বলবান, সাহসী এসব নানা গুণের অধিকারী হয়। যাকগে বাবা এ বার আমার জন্মবার নয়। তাহলে আমি ওসব গুণের অধিকারীও না। লাজুক ছিলাম কি না কে জানে! তবে মনের কথা কিছুতেই মুখে আনতে পারতাম না। বা যে কাজ ভুলেও ভাবি না সেটিই করে বসতাম। তো এমন এক রবিবারে ধানখেতের সরু আল ধরে হাঁটছি। আমি আর এক পাড়াতুতো সখী। এক ছড়া ধান ছিঁড়ে নিয়ে ধানের দুধ খাচ্ছি। ধান গাছে ধান হতে গেলে ধানকে বেশ কতগুলো পর্যায়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। বীজতলি হওয়ার পর অঙ্কুর, জাবালি, গাছধান, থোর, ফুলা, দুধ, ধান। এই দুধ অবস্থার ধানের খোসা ছাড়িয়ে অনেকগুলো একসঙ্গে মুখে পুরে দিলে মিষ্টি মিষ্টি দুধ দুধ স্বাদ লাগে। আর যে ধানের সুবাস আছে যেমন, গোবিন্দভোগ, তুলাইপাঞ্জী, দুধের সর এসব ধানের দুধ বা ফুলা খেতে একেবারে অমৃত। তবে ধানের আর এক নাম মা লক্ষ্মী। ওভাবে খেত থেকে ছড়া ছিঁড়ে নিয়ে খাওয়াটা খুবই অলক্ষ্মীর ব্যাপার। তবে কিশোরী বেলায় কোন বালিকা আর লক্ষ্মীটি থেকেছে। ওভাবে খেতের আল ধরে হেঁটে গিয়ে আলের মাঝখানে বসে পড়া। ধান খেতে খুব ইঁদুর হয়। মেঠো ইঁদুর বলে সেগুলো। ইয়া ইয়া সাইজ। ছড়া কেটে ধানের মাটির গর্তে ঢুকিয়ে রাখে। আর ইঁদুর খেতে তিনি আসেন। মা মনসার বাহন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গোখরো, কখনো চন্দ্রবোড়ারও দেখা পাওয়া যায়। জাত আর ঢ্যামনা সাপ কখনো একসঙ্গে থাকে না। তাই দশাসই চেহারার দাঁড়াশ কিন্তু ধান খেতে দেখা যায় না। আবার বর্ষায় জল জমলে কেউটে আসে। কেউটে একটু জলা জমি পছন্দ করে। যা হোক হচ্ছিল পাড়াতুতো সখী ও আমার কথা। আলে বসে পড়ার সময় একবারও মা মনসার বাহনদের কথা মনে পড়তো না কিন্তু। এটাকে কি সাহসী বলা যায়? তাহলে রবিবারের জন্মের গল্পটা তো মিললো না। জীবনের কোন গল্পই আর কবে মিললো! সেদিনের সেই আদুরে রবিবার আর আজকের কেজো রবিবারগুলো ভাবলে মনে হয় দরিয়ার এপার ওপার। সখী হাতে করে আনা প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে কখনো দুটো ডাঁশা পেয়ারা, কখনো কাঁচা আম, পাকা তেঁতুল, বাড়িতে বানানো আচার বার করে। গম্ভীর ভাবে নেই। যেন এটা তো আমার পাওনাই। কখনোই ভাবিনি ভাগ দেবো। কারণ এরপর যে কাজটি আমাকে করতে হতো তার মূল্য হওয়া উচিত ছিল চারটে পেয়ারা … মানে সব ডবল।
সখী তাড়া দেয় - তাড়াতাড়ি খা না।
স্টেশন যেতে শর্টকার্ট করতে কেউ এ পথে গেলে, হয়ে গেল। মানে কপালে বীণ বাঁশি বাজিয়ে বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নার নৃত্য বাড়ি থেকে।
সখীকে বলি - আমি বলছি, তুই লেখ।
সে বলে - না আমার হাতের লেখা খুব খারাপ। তুই লিখবি। তা ছাড়া প্রথম থেকে তুই লিখছিস হাতের লেখা বদলে গেলে ও কিছু সন্দেহ করবে না?
কথাটায় লজিক আছে। অগত্যা অর্ধেক খেয়ে বলি - দে তোর খাতা পেন।
সেই প্রথম থেকেই সখীর প্রেমপত্র লিখে যাচ্ছি। অনেক সখীরই দিতাম। এর প্রধান কারণ ছিল, অনেক গল্পের বই পড়ার কারণে প্রচুর কোটেশান মানে লেখকদের লেখার দারুণ সব লাইন জানতাম। বরাবর দয়ার শরীর আমার, তাই কার কখন কাজে লাগবে ভেবে লিখে রাখতাম একটা খাতায়। আর নিজে যে ছিপ নিয়ে বসে আছি, বিশ্বাস ফাতনা একদিন নড়বেই।
সখী গদগদ - তোর হাতের লেখা কি সুন্দর।
রাগ দেখাই - চুপ কর। লিখতে দে।
দু’একটা ছন্দ মিলিয়ে লাইনও ছেড়ে দেই ওদের চিঠিতে। বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা হয়, আমি তাকে কবে লিখবো।
সখী উসখুশ করে বলে - ভাবলি কি করে ওকে জানাবি।
বলি - মণিমেলাতে ভর্তী হবো।
সখী বলে - আমারও খুব শিখতে ইচ্ছা করে। ব্রতচারী, প্যারেড কতকিছু শেখা যায়।
লেখা থামিয়ে বলি - এগুলো শেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই। ও এখন মণিমেলা শেখায় তাই।
সখীর মুখে হাসি - তাই!!!
দিদি , নতুন বই কবে আসছে ? আপনার লেখার অপেক্ষায় আছি।
অসম্ভব মায়াময় শৈশব। লেখনীটিও খুব সুন্দর। বিস্কুট পর্বের বেদনাটুকু মন ছুঁয়ে যায়।
ধন্যবাদ বিপ্লব বাবু
জিৎ কতগুলো নতুন হবে আশা করছি। ছাব্বিশে সেপ্টম্বর আমার নতুন উপন্যাস চন্দ্রাহত প্রকাশ হবে। আগামী কাল সে নিয়ে ফেবুতে সৃষ্টিসুখ থেকে আলোচনা আছে।