ফেব্রুয়ারি ২০, ১৯১৮। সেদিন সকাল থেকেই বুকটা দুরুদুরু কাঁপছে। আজ আমার ১৮ বছরের জন্মদিন। সকাল থেকে গোলাপের তোড়া আর হরেক কিসিমের কেকে ভেসে যাচ্ছে বোম্বের বাড়িটা। বাবা-মা দু’জনেই মহা-ব্যস্ত, একমাত্র মেয়ের জন্মদিন বলে কথা। বাবুর্চি-খানসামায় ঘর ছয়লাপ। আমাদের বোম্বের বাড়িটায় তো সব অতিথিকে বসানোই যাবে না। সামনের লনটায় প্রচুর আয়োজন করা হয়েছে। খাবার-দাবার, আলো-ফুলে ছয়লাপ কাণ্ড। কিন্তু একটা মজার ব্যাপার আছে। সকাল থেকে আমি খুব খুশি। সেই জে বাবার সাথে কথা বলে যাওয়ার পর থেকে এরম খুশির দিন আমার জীবনে আর আসে নি। আজ আমায় একজন মস্ত বড়ো একটা উপহার দেবেন। নিশ্চিত দেবেন। কিন্তু মজাটা কি জানেন, আমি ছাড়া আর কেউ জানে না আমায় সব থেকে বড়ো গিফ্টটা কে দিচ্ছে? আপনি জানেন কে?
একটু ভাবুন তো। না না দুর। বাবা-মা নন, অন্য কেউ।
না, হলো না। জে’ও নন। জে কি করে আমায় উপহার দেবেন? তিনি তো আজকে নিমন্ত্রিতই নন।
বাবা বোম্বে হাইকোর্ট থেকে একটা রিস্ট্রেইনিং অর্ডার বার করেছেন। রুট্ঠি নাবালিকা, তাই তার বিষয়ে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তার পরিবারের। মহামান্য আদালত আদেশ দিয়েছেন রুট্ঠি আর জে দেখা করতে পারবে না। কোনো প্রকাশ্য স্থানে জে’কে যেন রুট্ঠির সাথে দেখা না যায়।
হ্যাঁ, যা বলছিলাম। বলুন দেখি সেরা উপহারটা কে দিলো? আগের প্যারাগ্রাফে আপনাকে কিন্তু একটা ক্লু দিয়েছি, ভাবুন দেখি। বুঝতেই পারছেন কোনো রাজা-মহারাজা-নবাবের দেয়া উপহার এটা নয়। এ উপহার যার দেয়া, তার কাছে কোনো রাজা-মহারাজা পাত্তা পায় না। সারা পৃথিবীর মানুষ এর কাছে মাথা নিচু করে কুর্নিশ করে। ভাবুন ভাবুন, না পারলে এই একটু পরেই বলে দেবো’খন।
কেক কাটা হলো, সবাই মিলে হ্যাপি বার্থ ডে গাইলেন। কতো কতো মানুষ এসেছিলেন। আমি ভালো করে সবাইকে চিনিও না, মন দিয়ে কথাও বলি নি। আমার চোখ শুধু ঘড়ির দিকে। মালাবার টপ হিল্সের বিশাল বাড়িটায় এখন নিশ্চয়ই ওঁকে ঘিরে অনেক মানুষ। একজন চলে যায় তো আরো দু’জন আসে। জে কিছুদিন হলো জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। চোর ডাকাতি করে নয় রে বাবা, পলিটিক্যাল মুভমেন্ট, রাজনৈতিক আন্দোলন। জেলে থাকতে শরীরটা বেশ খারাপ হয়ে গেছিল, অনেকেই আজকাল আসছেন ওনার খবর নিতে।
অন্যান্য দিন আমার বেশ ভালোই লাগে, আমার জে কতো ইম্পর্ট্যান্ট। কখনও কখনও জে আমায় অতিথিদের সাথে আলাপও করিয়ে দেন। দিব্বি লাগে, আমিও হেসে হেসে আলাপ করি। রাজনীতি যে আমার খুব ভালো লাগে তা নয়, কিন্তু শিল্প, গান, কবিতা নিয়েও তো কথা হয়। কিন্তু আজকে আমার মোটেই ভাল্লাগছে না। একদম কিচ্ছুটি ভালো লাগছে না। জে অ্যাতো দেরি করছেন কেনো? জে’র সাথে আজ যে আমায় কথা বলতেই হবে। শুধুই আমি কথা বলবো, আর কেউ নয়।
আজাদ, জে’র সব চেয়ে বিশ্বস্ত খানসামা-কাম-শফার, মহম্মদ আজাদ। বহুবার জে’কে লেখা আমার চিঠি মালাবার টপ হিল্সে নিয়ে গেছে ও। পেতি পরিবারের কাউকে আমি আর বিশ্বাস করি না, তাই আজাদকে ডেকে এনে ওর হাতেই গালার সিলে মোড়া চিঠি দিতাম। জে সিল ভেঙ্গে পড়তেন। আজাদ এই নিয়ে পঞ্চমবার ফোন ধরলো, “ম্যাডাম, সাহেব তো রিডিং রুমে। খুব ব্যস্ত। একটু ফাঁক পেলেই আপনাকে কল ব্যাক করবেন। আপনি চিন্তা করবেন না। আমি ঠিক মনে করিয়ে দেব।”
শুনে চোখে হঠাৎ জল চলে এলো। আহ্, আজাদ, তোমায় যদি একটুও বোঝাতে পারতাম, আমার যে জে’কে কি ভীষণ প্রয়োজন। উল্টে উনি ফোন করলে যদি আমার বদলে অন্য কেউ ফোন ধরে তাহলেই তো সব ভেস্তে যাবে।
সপ্তম বার ফোন করে, যেই বলেছি, “আজাদ, প্লিজ দেখবে একটু, জে’র ঘরে কি এখনও বাইরের লোক আছে?” ওমনি ফোনের ওপার থেকে একটা পরিচিত গম্ভীর কণ্ঠস্বর, যেন বহুদিনের চেনা, “ইট’স্ জে হিয়ার। ”
আমি যেন ফোনটাকেই আঁকড়ে ধরলাম।
“জে, আমার যে তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে। অনেক, অনেক, অনেক কিছু। আমি পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। আমরা বিয়ে করব। এ দুনিয়ার কোনো শক্তি আর আমাদের আটকাতে পারবে না। আমি ঘর ছেড়ে চলে যাব। বোম্বে হাইকোর্ট কিসসুটি করতে পারবে না।”
এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন কি সেরা উপহারটা আজ কে দিলো? পেরে থাকলে শাবাশি। না পেরে থাকলে শুনে নিন এই বেলা।
সেই মহা আকাঙ্ক্ষিত, প্রতীক্ষিত অতিথির নাম হলো সময়, মহাকাল। সময়ের হিসেবে আজকে আমি আঠারো পূর্ণ করলাম। সময় বলে দিলো, আজ থেকে, আজ এই উনিশশো আঠেরোর বিশে ফেব্রুয়ারি থেকে রুট্ঠি আর অসূর্যম্পশ্যা নয়। আজ থেকে তার কাঙ্ক্ষিত পুরুষ তাকে স্পর্শ করতে পারেন, আজ থেকে সে সাবালিকা। চাইলে আমি আজকেই জে’র হাত ধরে ঘুরতে পারি, জে আমায় স্পর্শ করতে পারেন।
এই এক গণ্ডা লোকের মধ্যে আমি আমার জে’কে নিয়ে সদর্পে এই অসহ্য বোরিং জমায়েতটা ছেড়ে দিয়ে গটগট করে তাজ হোটেলের রিসেপশনে গিয়ে বলতে পারি, আপনাদের সব চেয়ে দামি গাড়িটা ফুলে ঢেকে দিন, জে আর রুট্ঠি মেরিন বিচে যাবে। আজ থেকে আমার সিদ্ধান্ত শুধুই আমার।
ভুল লিখলাম, আমার আর আমার জে’র।
ও আপনাদের বলা হয় নি এখনও। আমার জন্মদিন উপলক্ষ্যে জে তাজ হোটেলে পার্টি দিয়েছেন।
তাজ হোটেলের বড়ো বলরুমটায় ফটফটে সাদা একটা কেক রাখা, তার ওপরে মোমবাতির সারি। ফুল আমি খুব ভালোবাসি। প্রতিদিনের থেকে আমার লম্বা চুলের তাজা ফুলগুলো যেন আজকে একটু বেশিই সুগন্ধ ছড়াচ্ছে। আমার মাথার হেডব্যান্ডটা হীরে, মুক্তো আর পান্না খচিত। সকালবেলা জুয়েলারি শপ থেকে সেরা মিস্ত্রী এসে শ্যামইয়ের চামড়ার টুকরো দিয়ে পাথরগুলো পালিশ করে দিয়ে গেছে। বোম্বের সেরা দোকান থেকে সুগন্ধি মোমবাতি আনা হয়েছে। অনেক অন্তহীন প্রতীক্ষার পরত পেরিয়ে আজকের এ শুভদিন। তাজের বড়ো বলরুমটায় জে’র খুব প্রিয় সুরকার, পোলিশ ভার্চুসো, ফ্রেডেরিক চপিনের একটা রোমান্টিক সুর বাজানো হচ্ছে। গানের নাম –So Deep is the Night
In my dream our lips are blending,
Will my dream be never ending?
জে আমায় বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। এক কাপড়ে পেতি-বাংলো ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। ১৮ এপ্রিল, বোম্বের জামিয়া মসজিদে আমি মুসলিম হলাম। পরদিন বিয়ে।
উনিশে এপ্রিল, ১৯১৮। মালাবার হিল্স টপে মাউন্ট প্লেজেন্ট রোডে, জে’র সাউথ কোর্টের বিশাল বাড়িটায় আমাদের বিয়ে। একটু ভুল বললাম, আজ আমাদের নিকাহ্। গতকালই তো কাজী সাহেবের কাছে আমি মুসলিম ধর্মে দীক্ষা নিয়েছি। সব আয়োজন প্রস্তুত। মেহমুদাবাদের রাজা জে’কে ওয়েডিং রিংটা উপহার দিলেন। মুসলিম সমাজের রীতি মেনে জে এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা পণ দিয়েছেন।
কিন্তু আমার মন বেশ খারাপ।
বাবা জানিয়েছেন এই বিয়ে তিনি স্বীকার করেন নি, কোনোদিন করবেন না। তাই বাবা-মা কেউই আসবেন না। পার্সি সমাজের থেকেই কেউ আসবেন না। মানে আমার বন্ধুরা, ছোটবেলায় যাদের সাথে বোম্বের স্কুলে একসাথে পড়েছি, তারাও কেউ আসবে না। মুসলিম মতে বিয়ে হচ্ছে তো। আমার কোনো হিন্দু বন্ধু আসবে বলেও মনে হয় না। সানাই বাজছে না। জে’র কয়েকজন বন্ধু আসবেন। খুব ছোট্ট একটা অনুষ্ঠান হবে। মুসলিম মতে।
রুট্ঠির বিয়ে তো এরকম হওয়ার কথা ছিল না। কত্তো ধুমধাম, কত্তো লোকজন, সানাই-নহবত, বন্ধু-বান্ধব। কিচ্ছুটি হলো না।
প্রার্থনা করি এ পৃথিবীতে আর কোনো মেয়ের বিবাহোৎসব যেন দুঃস্বপ্নেও এরকম না হয়।
বিয়ের পর দিনগুলো কিন্তু একদম পালটে গেল। স্বপ্নের মতো কাটতে লাগলো। আমার জীবনে দুঃখের দিন বোধহয় ঘুচল। আমরা অনেক অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়াই। শত ব্যস্ততার মধ্যেও জে আমার জন্য সময় বার করেন। জে আর আমার জুটি হয়ে উঠল বোম্বের উচ্চবিত্ত সমাজের হেডটার্নার।
আমাদের প্রকাশ্যে দেখা গেলে সবাই কাজ ফেলে তাকিয়ে থাকে, নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে। প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তি হতো না যে তা নয়, কিন্তু ধীরে ধীরে ওটাই অভ্যেস হয়ে উঠলো।
১৪ অগস্ট, ১৯১৯। আমরা লন্ডনে। আমি আর জে থিয়েটার দেখতে এসেছি। হঠাৎ ওয়াটার ব্রেক করলো, থিয়েটার থেকে সোজা হাসপাতাল। দিনা এলো আমাদের মধ্যে। দিনা, জে’র প্রথম ও একমাত্র সন্তান। ফুটফুটে ঘন কালো চোখের মেয়ে।
ঠিক আঠাশ বছর পরে, আরেকটা চোদ্দোই অগস্ট, এই একই দিনে জন্ম নেবে জে’র আরেক সন্তান। তার নামটা পরে বলবো। সে আমার সৎ সন্তান। কোনোদিন আমি তাকে পছন্দ করি নি, স্বভাবতই দিনাও করে নি।
ব্রিটিশদের মধ্যে বরাবর একটা অদ্ভুত ইনফেরিয়রিটি কমপ্লেক্স কাজ করতো। নেটিভ ভারতীয়রা ওদের থেকে কোনো বিষয়ে এগিয়ে এটা কখনই ওরা মেনে নিতে পারতো না। ওদের আত্মসম্মানে ঘা লাগতো। জে আর আমি দু’জনেই এই ঘা’টা বেশ দিতে পারতাম, এটা আমাদের আনন্দ দিত।
যেমন ধরুন, কোনো ভারতীয় নারী পার্টিতে ইওরোপিয়ান পোশাক পরে গেলে ওরা বেশ অপছন্দ করতো। বিশেষতঃ খাটো ইওরোপিয়ান পোশাকের ওপরে স্বচ্ছ শিফনের শাড়ি আর মানানসই নেকলেস পরিহিত কোনো ভারতীয় সম্ভ্রান্ত নারীকে তো রীতিমত সন্দেহ আর হিংসের চোখে দেখা হত।
ড্রেসিং একটা আর্ট, এটা জে আর আমি দু’জনেই বিলক্ষণ জানতাম। বিন্দুমাত্র গর্ব না করেই বলছি, তদানীন্তন বোম্বেতে আমাদের দুজনকেই সমাজের বেস্ট ড্রেসারদের মধ্যে ধরা হত। লেডি অ্যালিস রিডিং তো লিখেই ফেললেন,
“She is extremely pretty, fascinating, terribly made up. All the men raved about her, the women sniffed.”
মহিলার হিংসেটা দেখলেন?
সিক্রেটটা বলে দিচ্ছি। জে’র স্যুট আসতো খোদ লন্ডনের মেফেয়ার সেভিল রো থেকে। আর আমি যেতাম এমিলি উইন্ডগ্রোভের টেলারিং শপে। বোম্বের তাবড় তাবড় ব্রিটিশ পরিবার এমিলির দোকান থেকে জামাকাপড় বানায়। ইচ্ছে করে এমিলি নেটিভদের জন্য টেলারিং চার্জ প্রচুর বাড়িয়ে রাখে।
জে আমায় বলে দিয়েছেন, খরচার পরোয়া নেই, তুমি এমিলির দোকানেই যাবে। ব্রিটিশদের জানা দরকার ভারতীয়রা ড্রেসিং জানে, আর ওদের অনেকের থেকেই ভালো জানে।
গভর্নর আর ভাইসরয়ের দেওয়া পার্টি তো লেগেই আছে।
সেদিন আমার ড্রেসিং নিয়ে বেশ একটা ঘটনা ঘটলো, এ ঘটনার রেশ অনেক দূর গড়াবে। লর্ড ওয়ালিংটন, বোম্বের তদানীন্তন গভর্ণর মস্ত একটা পার্টি দিয়েছেন। লেডি ওয়ালিংটনের নাম স্বাক্ষরিত নিমন্ত্রনপত্র এসেছে আমাদের বাংলোয়। এই পার্টিটার জন্য আমি এমিলির দোকান থেকে একটা নতুন লো-কাট ড্রেস বানিয়েছি। এই নতুন ধরনের ড্রেসটা এই কিছুদিন আগেই একটা ফ্রেঞ্চ ফ্যাশন ম্যাগাজিনে দেখলাম। ড্রেসটা বেশ চাপা, সামনে পিছনে দু’দিকেই। স্লিভলেস।
যেমনি ভাবা, তেমনি কাজ। যথারীতি পার্টিতে আমি ওই ড্রেসটার ওপরে একটা অর্ধস্বচ্ছ শিফন শাড়ি পরে গেছি। হাল্কা নীল রঙের শিফন শাড়ি। ড্রেসিং যে ভালো হয়েছে সে তো বুঝতেই পারছি। গাড়িতে ওঠার আগে শফারকে লুকিয়ে জে কানে কানে বললেন, মাই র্যাভিশিং ব্লু লিলি অফ বোম্বে।
দেখতে দেখতে গভর্নর হাউসে পৌঁছে গেলাম। প্রচুর মানুষ নিমন্ত্রিত, সারা বোম্বে যেন ভেঙ্গে পড়েছে। লেডি ওয়ালিংটন হাসিমুখে সবাইকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন।
আয়োজনের কোনো কমতি নেই। ওয়াইন-হুইস্কি-শ্যাম্পেনের ফোয়ারা চলছে। অগণিত বেয়ারা, সুগন্ধি মোমবাতি জ্বলছে, বার্বি-কিউ তে মাংস ঝলসাচ্ছে। তবুও সন্ধেবেলা পার্টিতে ঢুকে থেকেই কিরকম একটা অস্বস্তি লাগছে। মেয়েরা মেয়েদের চোখে হিংসের ভাষাটা সবচেয়ে সহজে পড়তে পারে।
লেডি ওয়ালিংটন বেশ পৃথুলা। কোনো রকমে একটা চাপা গাউন খুব টাইট করে বেঁধে চেহারায় একটা শেপ আনার চেষ্টা করেছেন। জঘন্য। হাই সোসাইটির গসিপ বলছে, গভর্নর নিজের স্ত্রীর তুলনায় তাঁর ভারতীয় উপপত্নীদের সাথেই আজকাল বেশি সময় কাটাচ্ছেন। লেডি ওয়ালিংটনকে মোটেই সময় দিতে পারছেন না।
এদিকে জে আমার সঙ্গ ভালোবাসেন, এবং অতিথি অভ্যাগতদের সামনে সে কথা প্রকাশ করতেও কোনদিন দ্বিধা করেন না, আজকেও করছেন না। আমার স্লিভলেস চাপা ড্রেসটার ওপরে যেন বারবার সেই না পাওয়া ঈর্ষার চাবুকটা আছড়ে আছড়ে পড়ছে। তথাকথিত উচ্চমার্গের ব্রিটিশদের সাথে আমাদের এই অনায়াসে মিশে যাওয়াটা লেডি ওয়ালিংটনের যেন ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। ভালোয় ভালোয় ড্রিঙ্কস পর্ব মিটে গেছে। সবাই বেশ গোল হয়ে ডিনারে বসেছে। এখন ডিনারটা মিটে উতরে গেলেই বাঁচি।
পাশ্চাত্যের প্রথা অনুযায়ী টেবিলের একেবারে শেষে গৃহকর্তা স্বয়ং বসেছেন। তার পাশে লেডি ওয়ালিংটন, তার পরে বসেছেন অন্যান্য অতিথি অভ্যাগতরা। ডিনার টেবিলে শুরু হলো সাহিত্য আলোচনা, ওয়ার্ডস্ওয়ার্থ, কীট্স থেকে ঘন ঘন উদ্ধৃতি শোনা যাচ্ছে।
আমার সব চেয়ে প্রিয় অবশ্য অস্কার ওয়াইল্ড। আমিও খেতে খেতে আলোচনায় অংশ নিলাম। দিব্বি কাটছিল সন্ধেটা। লেডি ওয়ালিংটন যেন আর পারলেন না, তাঁরই বাড়িতে এসে একটা নেটিভ মেয়ে এরকম হাল ফ্যাশানের পোশাক পরে নির্ভুল ইংরেজি সাহিত্য আউড়ে যাবে, এ অসহ্য।
হঠাৎ তিনি খানসামাকে ডেকে বেশ জোরে বললেন, “রহিম, দ্যাখো তো। মিসেস জে’র বোধহয় ঠাণ্ডা লাগছে। ওঁকে একটা ওড়না এনে দাও।”
ডিনার টেবিলে হঠাৎ শ্মশানের স্তব্ধতা নেমে এলো। খুব মার্জিত ব্রিটিশ কায়দায়, কোনো স্ল্যাং ব্যবহার না করে এর চেয়ে খারাপ অপমান করা যায় না। কাঁটা চামচের আওয়াজও আর শোনা যাচ্ছে না। পিনড্রপ সাইলেন্স। আমার চোখে ভিজে বাষ্প। ভেজা চোখের কুয়াশার মধ্যে দিয়ে আমি জে’র দিকে তাকালাম। জে শান্ত। টিস্যু দিয়ে মুখ মুছছেন। হঠাৎ ডিনার টেবিলের স্তব্ধতা ভাঙলো, জে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন। ফর্সা মুখটা আগুনের মত গনগনে লাল।
অকম্পিত স্বরে বললেন, “অনারেব্ল গভর্নেস, থ্যাঙ্কস্ ফর ইয়োর কাইন্ড কনসার্ন। রুট্ঠির ওড়না লাগলে ও নিশ্চয়ই চেয়ে নিত। গুড নাইট লেডিজ এন্ড জেন্টলমেন।”
ভাবছেন, রুট্ঠি কি কিছু শিখল? তাহলে বলি শুনুন। লর্ড ক্লেমস্ফোর্ড, তখন ভারতের ভাইসরয়। তাঁর সাথে আমাদের ফর্মালি আলাপ হলো। আমার আর তখন উচ্চপদস্থ ব্রিটিশদের সাথে খেজুরে আলাপ করতে ইচ্ছে করে না। মুখ গম্ভীর করে খালি বড়ো বড়ো কথা। খানা-পিনা-মৌজ-মস্তি সবই তো হয় এই হতভাগা দেশটাকে লুট করে। সেই লুটেরাদের সামনে গিয়ে ঘাড় হেলিয়ে হেঁ হেঁ করা একদম পোষায় না। একরকম বাধ্য হয়েই দেখা করতে গেছিলাম। লর্ড ক্লেমস্ফোর্ড করমর্দনের জন্য হাত বাড়ালেন। আমার একটুও লোকটার সাথে হ্যান্ডশেক করতে ইচ্ছে করছিল না। ভাইসরয়, মানে সেই লুটেরাদের নেতা বৈ আর কিছু তো নয়। আমি সামান্য হেসে নমস্কার করলাম।
ক্লেমস্ফোর্ড বিরক্তি লিক্যে রাখতে পারলেন না, “মাই ডিয়ার লেডি, আপনার স্বামীর একটা দুর্দান্ত পলিটিক্যাল কেরিয়ার হতে চলেছে। এমতাবস্থায় এরকম আচরণ করা কি আপনার ঠিক হচ্ছে? In Rome, you must do as the Romans do”
“ভালো করে ভেবে দেখুন, আমি ঠিক সেটাই করেছি ইয়োর এক্সেলেন্সি। আপনি এখন ভারতবর্ষে, আর আমি আপনাকে খাঁটি ভারতীয় কায়দায় অভিবাদন জানিয়েছি। তাই নয় কি?” ক্লেমস্ফোর্ড আর কথা বাড়ান নি।
(ক্রমশঃ)
ভালো লাগল। পরের পর্বের অপেক্ষায়
পুশকিন মনে পড়ছে। তৎকালীন এলিট শ্রেণীর পার্টি কালচারের দীর্ঘ বর্ণনা অনেকদিন পড়িনি।
প্রেম ছাপিয়ে মৃদু নেটিভ প্রতিবাদ ভালই। লেখায় মুন্সিয়ানা আছে বৈকি । ছবিগুলো আলাদা মাত্রা দিয়েছে।
বেশ ভালো লেখা৷ এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা যায়, বাঁধন টা ভালো।
Ruttie's conversion to Islam is controversial. Some Muslim ulema who were against Jinnah later denied she ever converted, while liberal anti-Jinnah intellectuals give this as an example of Jinnah's Islamic tendencies. Both are wrong. Her conversion to Islam is well recorded and witnessed by Maulana Najafi; and as for the reasons these were practical rather than religious. The only way Jinnah and Ruttie could have wed was in the civil court, and here according to the law of that time both parties entering a civil marriage needed to declare under oath that they do not have any religion. Now we know that Jinnah never claimed he was anything other than a Muslim, even if he did not follow Islamic rituals, but at this stage he may well have gone ahead and given the required declaration in court. The problem was that he was a member of the Imperial Legislative Council on a seat reserved for a Muslim and declaring himself to have no religion would have cost him a set back to his political career. It is very likely that Ruttie, who was very much interested in Jinnah's political future, would have offered to pay the sacrifice and convert so that the marriage can take place under Islamic laws.
https://nation.com.pk/24-Dec-2016/jinnah-and-ruttie-when-love-is-not-enough
পরের পর্বের অপেক্ষায়
ভালো লাগছে
ভা লো লাগলো ।। পরের অংশের অপেক্ষায় থাকলাম