এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • জোড়াসাঁকো জংশন ও জেনএক্স রকেটপ্যাড-১৪

    শিবাংশু লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১১ আগস্ট ২০১৯ | ৩৭৬২ বার পঠিত
  • তোমার সুরের ধারা ঝরে যেথায়...

    আসলে যে কোনও শিল্প উপভোগ করতে পারার একটা বিজ্ঞান আছে। কারণ যাবতীয় পারফর্মিং আর্টের প্রাসাদ পদার্থবিদ্যার সশক্ত স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। পদার্থবিদ্যার শর্তগুলি পূরণ হলেই তবে মনন ও অনুভূতির পর্যায় শুরু হয়। যেমন কণ্ঠ বা যন্ত্র যদি সঠিক কম্পাংকে না বাজে বা রঙের দুনিয়ায় পরস্পর পরিপূর্ত বর্ণিকাবিভঙ্গ বিষয়ে যদি আঁকিয়ের ধারণা না থাকে, তবে তো প্রথম বেড়াটিই পেরোনো যাবেনা। যে সব শিল্পীদের সিদ্ধিলাভ হয়ে গেছে, তাঁদের শিল্প পরিবেশন, পদার্থবিদ্যা কেন, মননেরও প্রাথমিক স্তরগুলি অনেকাংশে পেরিয়েই শুরু হয়। এই সত্য সঙ্গীতশিল্প, চিত্রশিল্প বা নাট্যশিল্প সবার জন্যই প্রযোজ্য। তেমনই প্রাথমিক স্তরের শ্রোতাদের কাছে শুধু কানে শুনে বা নিজস্বমাপের শ্রবণ অভিজ্ঞতার নিরিখেই সঙ্গীত পরিবেশনার মান নির্ধারিত হয়। এঁরা সঙ্গীতস্বর্গের বাইরের দেউড়ির অতিথি। কিন্তু যখন এই সব শ্রোতারা সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে সুরের অন্দর মহলের দিকে যাত্রা করেন, তখন তাঁদের উচ্চকিত মতামতের জগৎ নিঃশব্দে গভীরগামী হয়ে যায়। তখন তাঁরা যা 'ভালো' লাগে, তা নিয়েই এতো মগ্ন হয়ে থাকেন যে যা 'ভালো' লাগেনা, তা নিয়ে নষ্ট করার মতো সময় পান'না।

    আমি এখন সময় পেলেই অধিকারীজনদের সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীতের বর্তমান আর ভবিষ্যত নিয়ে বিনিময় করি । যেহেতু সে মাথার চারিপাশে । গায়নের ধরনে শোনার অভ্যেস পাল্টায়, না শ্রোতারাই ঠিক করে দেন কীভাবে গান গাইতে হবে। বিশ্বায়িত বাজারের পণ্য হিসেবে রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্থানটি ঠিক কোথায় ? নিবেদিত শ্রোতা বলেন, সাহানাদেবীর গানের থেকে কাননদেবীর গানের পেশকারি অধিক উজ্জ্বল । আমিও এ বিষয়ে একমত । আমরা সাহানাদেবীর একান্ত অনুরাগী শ্রোতা । এমন কি কবি নিজেই বলতেন, সাহানাদেবীর গলায় তাঁর গান পূর্ণ মর্যাদা পায় । কিন্তু রাইচাঁদ বড়াল বা পঙ্কজকুমার কাননদেবীর গানের মধ্যে কোন রসায়নটি যোজনা করতেন, যাতে তাঁর গান অধিকাংশ শ্রোতার ভালো লাগতো । আমার এলেমমতো অনুসন্ধান করে সেকালের তথাকথিত বাণিজ্যসফল শিল্পীদের পরিবেশনার মধ্যে আপোস করার অভিপ্রেত খুঁজে পাইনি । তাঁদের নিষ্ঠা, সচেতন শ্রোতার কাছে এখনও প্রাসঙ্গিক। ঠাকুরবাড়ির কুলুঙ্গি আর শান্তিনিকেতনের উপাসনাগৃহের বাইরে যে সংখ্যাগুরু শ্রোতার দল, তাঁদের জন্য পঙ্কজকুমার, সঙ্গে কুন্দনলাল যে রসটি পরিবেশন করতে পারতেন, দাবি অনুযায়ী অনেক বেশি উৎসমুখী, 'শুদ্ধ' ঘরানার শিল্পীরা সেটা পারতেন না ।

    অথচ ইন্দিরাদেবী দেবব্রতকে আলাদা করে পথনির্দেশ দিতেন, একক গাইতে উৎসাহিত করতেন । শান্তিনিকেতনের ধারায় অন্যমাত্রার স্ফূর্ত গায়ন নিয়ে এসেছিলেন সুচিত্রা । ছয় থেকে আট দশকে একসঙ্গে এতোজন সিদ্ধ শিল্পী রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনের মান'কে যে পর্যায়ে তুলে দিয়েছিলেন, সেটা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জটি পরবর্তী শতকের শূন্য ও প্রথম দশকের গায়কদের নাগালের বাইরে চলে গেলো । একেবারে শীর্ষস্থানে থাকা পরিবেশকরাও ' গলাটা ভালো' জাতীয় মন্তব্যের সীমায় বাঁধা রয়ে গেলেন ।

    আসলে সময় বড়ো কম আর পৃথিবীতে আনন্দের উৎস এতো বিস্তৃত মানচিত্রে ছড়ানো আছে যে নিজেকে সতত টলস্টয়ের সেই গল্প, ' একটা মানুষের কতো জমি চাই'য়ের চরিত্র প্যাহমের মতো লাগে। যা দেখি, তাকে'ই পেতে চাই নিজের করে, কিন্তু সদর্থকভাবে। নেতিবাচী ব্যসনের কোনও স্থান রাখতে পারিনা এই ছোটো জীবনে। রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার যে অভ্যেস মানুষের শ্বাসক্রিয়ার মতো অবিরল‚ অনর্গল বেড়ে ওঠে তার পিছনে দীর্ঘ প্রস্তুতি থাকে। অভ্যেসটি আমাদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নিজেও পরিণত হয় । বয়সের সঙ্গে আমার শরীরের দৈর্ঘ্য‚ প্রস্থ‚ মনের মধ্যে গড়ে ওঠা নানা রকম বেড়া‚ তাদের ভাঙা, আবার গড়ে তোলার খেলা চলতে থাকে। সংক্ষেপে আমার ঐহিক জীবন। তাকে জড়িয়ে ধরে আঙুরলতার মতো গান শোনার অভ্যেসটিও একসঙ্গে আকাশের দিকে হাত বাড়াতে চায় । রবীন্দ্রসঙ্গীত এই মুহূর্তে জীবনে যেভাবে ছায়ানিবিড় মহীরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে‚ সেখানে মুগ্ধতা‚ প্রেম‚ সম্মোহন‚ আকর্ষণ ইত্যাদি ধ্বনি শব্দার্থে যথেষ্ট অভিঘাত আনতে পারেনা। হয়তো একটা শব্দই কিছুটা কাছে যেতে পারে। পরিপূর্ণতা । আমাদের প্রজন্মের সৌভাগ্য‚ গত একশো বছরের অধিক কাল‚ বিগত তিন-চার পুরুষ ধরে রবীন্দ্রসঙ্গীত নামক যে শিল্পধারা গড়ে উঠেছে ‚ তার শ্রেষ্ঠ ফলগুলি আস্বাদন করার সুযোগ আমরা পেয়েছি। এর ভালো দিকটা হলো‚ মানুষ হয়ে জন্মাবার সূত্রে একটা সেরা সম্পদ লাভ । আর আপাত বিপজ্জনক দিকটাও মনে রাখতে হয়। আমাদের প্রত্যাশা, রস আস্বাদনের মাত্রার মান, আকাশছোঁয়া হয়ে গেছে । এই শিল্পে সের্গেই বুবকা বা এডুইন মোজেসের দল বা ‘তোমারি তুলনা তুমি প্রাণ’ যাঁরা ছিলেন‚ খেলা সাঙ্গ করে বাড়ি ফিরে গেছেন । একসঙ্গে আকাশে অগুন্তি নক্ষত্র ছিলো যখন‚ তার শ্রেয়ফল আমাদের নসিব হয়েছিলো । আবার যখন অন্ধকার আকাশ, একটি-দুটি মিটমিটে তারা, নিষ্প্রভ সীমাবদ্ধতায় কোনমতে জেগে থাকার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিলো‚ তার সাক্ষী থাকার সুযোগও হয়েছে আমাদের ।

    যে ব্যাপারটা বহুদিন আগেই জেনেছি যে কবির কাঙালও যখন বলে‚ আমায় ভিখারি করেছো‚ আরো কী তোমার চাই ? এই ভিখারি তো আসলে কপিলবাস্তুর রাজকুমারের মতো । আমাদের ঐতিহ্যে প্রথম মানুষ‚ যিনি ভিক্ষাবৃত্তির মধ্যেও রাজকীয় সম্ভ্রমের সঞ্চার করেছিলেন । যিনি তাঁর ভুবন শূন্য করে ফেলেন আরেক কাঙালের আশ মেটাতে । এভাবে সর্বহারারও এক রাজসিক পরিচয় গড়ে ওঠে । রবীন্দ্রসঙ্গীত আমাদের সেই রাজসিক উত্তরাধিকার । সন্ধ্যাকাশে ঊর্দ্ধকর হয়ে দাঁড়ালে থরে থরে ঝরে পড়া আপন প্রাণের ধন । তাকে তো ‘ম্যাজেস্টিক’ হতেই হবে ।
    যেরকম বলেছি, রসবস্তু উপভোগের তিনটি পথ আছে। শুধু হৃদয় দিয়ে, শুধু মস্তিষ্ক দিয়ে, অথবা হৃদয় ও মস্তিষ্কের মধ্যে ভারসাম্যের ভিত্তিতে একটা অবস্থান নিয়ে কোথাও পৌঁছোনো । নিজের গান সৃষ্টি করার সময় রবীন্দ্রনাথ শিল্পের সেরিব্রাল দিকটা নিয়ে শেষকথা বলে দিয়েছেন। তাই তাঁর গান প্রকৃতভাবে উপভোগ করতে গেলে শুধু তাঁর প্রকল্পিত সেরিব্রাল ম্যাপিংটাকেই মনে রাখতে হবে। কোনো খোদকারি করার অবকাশ নেই। গলায় তারযন্ত্র ঝুলিয়ে, মেটাল বাস দুন্দুভির সঙ্গে 'প্রাণশক্তি'র প্রেরণা প্রচুর শারীরিক লম্ফঝম্প যোগ করে ফেলে অনেকেই কবির গান আজকের শ্রোতার কাছে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে চান। অন্য একটা একটা ফ্যাসাদ, 'রাগভিত্তিক' রবীন্দ্রসঙ্গীত নামে একটা জঁর তৈরি করতে চাওয়া। এরকম চলতে থাকলে অবিলম্বে দেখতে পাবো 'রাগভিত্তিক' মোজার্ট বা শোঁপ্যা'র কম্পোজিশন নিয়ে জনতা কাজ শুরু করে দিয়েছে। 'নতুন কিছু করো' সহ্য হবার একটা সীমা থাকে।
    এই প্রসঙ্গে দেখি বছর দুয়েক আগে এক কর্মশালায় বিশিষ্ট শিল্পী প্রমিতা মল্লিক আজকের অনুরাগী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু পথনির্দেশ দিয়েছিলেন।

    "....দ্বিতীয় দিনে শিল্পী প্রমিতা মল্লিকের কাছে শিক্ষার্থীদের আশা কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে। একশো বছর আগের লেখা কবিগুরুর ‘ওরে আমার হৃদয় আমার’ গান দিয়ে শুরু করেন কর্মসূচি। দাদরা তালে গানটির লাইন ধরে অর্থ, গানের মূল বিষয়, গানটির পিছনের ঘটনা এবং ওই সময় কী কী গান কবি রচনা করেছিলেন সবটাই আলোচনায় তুলে আনেন। গান শুরুর আগে শোনান ১৯১৪ সালের কবির নৈরাশ্যের এক চিঠি। কাকে লেখা সেই চিঠি, নৈরাশ্য কেটে যাওয়ার পরে কী গান তিনি রচনা করেছিলেন সবই জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গ আনতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে গেলে আগে নজর রাখা উচিত কোথায় গাইছি, কেমন শ্রোতা আর গান নির্বাচনের কথা। ১৮৯৬ সালের মাঘোৎসবে গাওয়া বিলম্বিত ত্রিতালে ভাঙাগান ‘মহাবিশ্বে মহাকাশে’ গানটিও শেখান শিল্পী।"
    (রবীন্দ্রসঙ্গীত কর্মশালাঃ আরও শেখার চাহিদা থেকেই গেল-পাপিয়া মিত্র/ খবরonline, ১৮/০৮/২০১৬)

    কবির গান একান্তভাবে স্বয়মসম্পূর্ণ একটি শিল্পরীতি এবং তার ধরনটা একটা স্বীকৃত স্ট্রাকচার মেনে চলে। রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে নানা অধিকারীর নিজস্ব ব্যাখ্যার মধ্যে কবি'র প্রতি যথেষ্ট আনুগত্য ও নিষ্ঠা হয়তো থাকে। কিন্তু বহু সময়েই সুর ও অন্যান্য প্রয়োগের দিকগুলি নিয়ে ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে নিজস্ব অবস্থানটি অনেক বেশি জোরালো হয়ে যায়। গুণী ও সমর্থ শিল্পীদের গায়ন অবস্থানগুলি শ্রোতাদের কাছে সচরাচর লোকপ্রিয় হয়ে থাকে। কিন্তু যতো গুণী অধিকারীই হোন না কেন, তিনি কবির অবস্থানের উর্ধে যেতে পারেননা। রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি নিজস্ব অবস্থান প্রকট করার আগে বিষয়টি নিয়ে কবির বক্তব্য অনুধাবন করাটা প্রয়োজনীয়। নতুনত্বের খাতিরে তদ্গত, আত্মগত বা উৎকেন্দ্রিক যে অবস্থানই নেওয়া হোকনা কেন, তা যেন কবিকে অতিক্রম না করে ফেলে।

    শুধুমাত্র 'সময়ের দাবি' বা 'জনরুচির চাহিদা' জাতীয় কিছু বিমূর্ত কারণ রবীন্দ্রসঙ্গীতের জন্য যদি প্রযুক্ত নাই হয়, তবে ক্ষতি কী? সবাই জানে রবীন্দ্রসঙ্গীত কারও 'বাপের সম্পত্তি' নয়। কিন্তু পূর্বপুরুষের ইচ্ছাটাও যেন উত্তরপুরুষের বিবেকের কাছে নস্যাৎ না হয়ে যায়, এটা তো খুব বড়ো কিছু প্রত্যাশা নয়। কবি কেন নীচে উদ্ধৃত এই উক্তিটি করেছিলেন, আজ তা প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড়ো বেশি হয়েই মনে বাজছে তার তাৎপর্য।
    " ……..আমার গান যাতে আমার গান ব’লে মনে হয় এইটি তোমরা কোরো। আরো হাজারো গান হয়তো আছে-তাদের মাটি করে দাও-না, আমার দুঃখ নেই। কিন্তু তোমাদের কাছে আমার মিনতি–তোমাদের গান যেন আমার গানের কাছাকাছি হয়, যেন শুনে আমিও আমার গান বলে চিনতে পারি। এখন এমন হয় যে, আমার গান শুনে নিজের গান কিনা বুঝতে পারি না। মনে হয় কথাটা যেন আমার, সুরটা যেন নয়। নিজে রচনা করলুম, পরের মুখে নষ্ট হচ্ছে, এ যেন অসহ্য। মেয়েকে অপাত্রে দিলে যেমন সব-কিছু সইতে হয়, এও যেন আমার পক্ষে সেই রকম।
    বুলাবাবু, তোমার কাছে সানুনয় অনুরোধ–এঁদের একটু দরদ দিয়ে, একটু রস দিয়ে গান শিখিয়ো-এইটেই আমার গানের বিশেষত্ব। তার উপরে তোমরা যদি স্টিম রোলার চালিয়ে দাও, আমার গান চেপ্টা হয়ে যাবে। আমার গানে যাতে একটু রস থাকে, তান থাকে, দরদ থাকে ও মীড় থাকে, তার চেষ্টা তুমি কোরো। "
    (গীতালি- ৩০ জুন ১৯৪০, ১৬ আষাঢ় ১৩৪৭)

    আমাদের অধুনা প্রজন্মের বিবেকপ্রহরী কবি শঙ্খ ঘোষ । এই মনস্বীশ্রেষ্ঠ মানুষটি যখন গুরুর থেকে পাওয়া উত্তরাধিকার 'বিশ্বাস হারানো পাপ' প্রত্যয়ে অবিচল থাকতে পারেননা, তখন অনুজদের জন্য শুভবোধের প্রতি বিশ্বাসযোগ্য থাকার চ্যালেঞ্জটিও বেড়ে যায়। রবীন্দ্রসঙ্গীত আমাদের শ্রেষ্ঠতম উত্তরাধিকারের একটি। আমরা যেন সেই পতাকাবহনের শক্তি অর্জন করতে পারি।

    'এখানে আমাকে তুমি কিসের দীক্ষায় রেখে গেছ?
    এ কোন জগৎ আজ গড়ে দিতে চাও চারদিকে?
    এ তো আমাদের কোনো যোগ্য ভূমি নয়, এর গায়ে
    সোনার ঝলক দেখে আমাদের চোখ যাবে পুড়ে।

    বুঝি না কখনো ঠিক এরা কোন নিজের ভাষায়
    কথা কয়, গান গায়, কী ভাষায় হেসে উঠে এরা
    পিষে ধরে আমাদের গ্রামীণ নিশ্বাস, সজলতা,
    কী ভাষায় আমাদের একান্ত বাঁচাও হলো পাপ।

    আমার ভাইয়ের মুখ মনে পড়ে। গ্রামের অশথ
    মনে পড়ে। তাকে আর এনো না কখনো এইখানে।
    এইখানে এলে তার হৃদয় পাণ্ডুর হয়ে যাবে
    এইখানে এলে তার বিশ্বাস বধির হয়ে যাবে

    বুকের ভিতরে শুধু ক্ষত দেবে রাত্রির খোয়াই।
    আমার পৃথিবী নয় এইসব ছাতিম শিরীষ
    সব ফেলে যাব বলে প্রস্তুত হয়েছি, শুধু জেনো
    আমার বিশ্বাস আজও কিছু বেঁচে আছে, তাই হব

    পঁচিশে বৈশাখ কিংবা বাইশে শ্রাবণে আত্মঘাতী।
    (আত্মঘাত - শঙ্খ ঘোষ)

    (শেষ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১১ আগস্ট ২০১৯ | ৩৭৬২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শিবাংশু | ***:*** | ১১ আগস্ট ২০১৯ ০৬:৪৩49292
  • ভেবেছিলুম বাইশে শ্রাবণেই শেষ কিস্তিটি পত্রস্থ করবো। কিন্তু ব্যাপারটা একটু নাটকীয় হয়ে যাবার সম্ভাবনা ছিলো। পরিহার করলুম। এই দীর্ঘ লেখাটি যাঁরা পড়েছেন এবং বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নভাবে ভেবেছেন, আলোচনা করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ।

    একটাই প্রার্থনা রইলো সবার কাছে, তাঁর গান যাতে তিনি শুনলে চিনতে পারেন সেটুকু প্রয়াস ও রুচিবোধ যেন আমাদের বজায় থাকে।
  • i | ***:*** | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৪৫49293
  • আমি দীক্ষিত শ্রোতা নই সে অর্থে। পাগএর মত গান শুনি-এইটুকুই। তবু, মনে হল কিছু বলি। অপরাধ নেবেন না। লেখাখানি একটু দ্রুত শেষ হয়ে গেল যেন। একাদশ পর্বে সুবিনয় রায়, দ্বাদশে ও ত্রয়োদশে যথাক্রমে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, ঋতু গুহ ও মোহন সিং। চতুর্দশে ঝপ করে অন্ধকার আকাশ, মিটমিটে তারাদের কথা এসে গেল। আকাশ সত্যি অন্ধকার কী না, তারারা মিটমিটে কী না সেটা পরে কোনদিন আলোচনা করা যাবে। যে কথা বলতে এলাম তা হল এই-যখন আকাশ সেই অর্থে নক্ষত্রখচিত-সেই তারাদের ছটায় বহুগুণীজনের কন্ঠ শ্রোতার কানে সেভাবে পৌঁছয় নি-আপনার লেখাতেও তাঁরা এলেন না সেভাবে - বা এলেও, নক্ষত্রদের মত জায়গা পেলেন না- নীলিমা সেন, মায়া সেন, অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্তোষ সেনগুপ্ত, বনানী ঘোষ, গীতা ঘটক, আরও পরে সঙ্ঘমিত্রা গুপ্ত কী শ্রীনন্দা মুখোপাধ্যায়- কয়েকজনের নাম করলাম শুধু, নিচে কিছু উদাহরণ-







    আর যেটি বলার, নক্ষত্র বিদায়ের পরে আকাশ কিন্তু ঝপ করে অন্ধকার হয় নি-(যদি ধরেই নি অন্ধকার)-একটা পরিবর্তন আসছিল -পরিবেশনে, গানের সঙ্গে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রে। কণিকা, ঋতুর পরে স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, দেবারতি সোম, পীযূষকান্তি সরকার, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, আলপনা রায়, রেজওয়ানা বন্যা , শ্রেয়া গুহঠাকুরতা, ( অদিতি মহসীনের উল্লেখ আছে শেষ পর্বে), লাইসা আহমেদ লিজা, সাহানা বাজপেয়ী বা একদম হালফিলের ইমন চক্রবর্তী- বদলটা গড়িয়ে গড়িয়ে এসেছে- এই ব্যাপারটা আপনার লেখায় পেলাম না-









    আমার কোথাও বুঝতে ভুল-এও হতে পারে।

    যখন লাইসা গান-



    বা ঋতজা-


    পরিবেশনা ভিন্ন , সন্দেহ নেই। কিন্তু আকাশ অন্ধকার? মনে তো হয় না।
  • i | ***:*** | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫৪49294
  • গুছিয়ে লিখে উঠতে পারলাম না। তার ওপর লিংক ও একটু উল্টে পাল্টে গেল, টাইপো তদুপরি।
  • i | ***:*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩৮49295
  • প্রিয় শিবাংশুদা,
    আবার ফিরে পড়লাম এই সিরিজের প্রথম লেখাটি-যেখানে আপনি বলছেন, গত এক শতক ধরে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পরিবেশন শিল্পটি কী ভাবে বিকশিত হয়েছে, তার একটি খতিয়ান প্রস্তুত করবেন। আসলে, এই লাইনটি সম্ভবত আমার মনে যে প্রত্যাশা তৈরি করেছিল-সমগ্র সিরিজটি তা সেভাবে পূর্ণ করে নি। তার দায় আমি আপনাকে দি না। এ ভাবনা আমারই।তবু, সেই অপূর্ণ প্রত্যাশাহেতুই কাল লিখছিলাম -এলোমেলো কথা।
    আসলে , এই সিরিজে নক্ষত্রদের কথা চমৎকারভাবে আলোচিত-কিন্তু প্রতিটি পর্ব এক একটি বিচ্ছিন্ন পর্ব যেন। পরিবেশন শিল্পটি কীভাবে বদলে বদলে যাচ্ছে সেই টি যেন আমার কাছে খুব স্পষ্ট হয় নি-
    আর যে কথাগুলি কাল কিছুটা বলতে চেয়েছি-যে এই নক্ষত্ররাজির বাইরে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা কেন সেভাবে জনপ্রিয় হন নি-তাঁদের পরিবেশনের কিছু বৈশিষ্ট্য কী আলোর বৃত্তের বাইরে ঠেলে দিয়েছিল?কী সেই বৈশিষ্ট্য? শ্রোতাদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের অক্ষমতা? তাঁদের ব্যক্তিত্ব যা জনপ্রিয়তার পরিপন্থী? কন্ঠস্বরের কিছু বৈশিষ্ট্য যা সাধারণের অপছন্দ ? বা তাঁরা যে গানগুলি গাইতেন সেগুলি সচরাচর শোনা যায় না? একজনের কথা মনে পড়ে-আলপনা রায় রবীন্দ্রসদনের মঞ্চে গাইছেন-একলা বসে একে একে-সেই আত্মমগ্ন পরিবেশন, সেই গান , সেই কথা-অথচ উনি জনপ্রিয় নন, নক্ষত্র নন। গানটিও বহুশ্রুত নয়। আলপনা র গলায় গানটি খুঁজে পেলাম না-আর এক অ-জনপ্রিয় শিল্পীর কন্ঠে পেলাম-সেটি দিলাম-


    অথচ তাঁদের নিজস্ব শ্রোতামন্ডলী ছিল, যাঁরা এই অ-জনপ্রিয় শিল্পীদের গান শুনতে চাইতেন। এই ব্যাপারটা হতে পারত আকাশবাণীর কল্যাণেই মূলতঃ। কিছুটা দূরদর্শন আর বাকিটা রবীন্দ্রসদন মঞ্চের অনুষ্ঠানগুলিতে। আমি ২০০০ সাল অবধি যতটুকু দেখেছি তার ভিত্তিতে বলছি।আমার ভুল হতেই পারে। যেটা বলার তা হল, জনপ্রিয়তা কী ভাবে পরিবেশনকে বদলে দিচ্ছিল ধীরে । যন্ত্রানুষঙ্গ বদলে যেতে লাগল -জনপ্রিয়তাকে , পরিবেশনকে তা কতখানি প্রভাবিত করছিল ধীরে ধীরে সেটিও বুঝতে চেয়েছিলাম আপনার সিরিজটি থেকে।

    এই পর্বে আপনি যথার্থই লিখেছেন 'যদি স্টিম রোলার চালিয়ে দাও, আমার গান চেপ্টা হয়ে যাবে। আমার গানে যাতে একটু রস থাকে, তান থাকে, দরদ থাকে ও মীড় থাকে, তার চেষ্টা তুমি কোরো' এই প্রসঙ্গে , সুধীর চক্রবর্তী মশাইয়ের একটি সাক্ষাৎকার মনে পড়ল-যেখানে তিনি আর্নল্ড বাকের কথা বলছেন। বলছেন, বাকে' এক আশর্য কথা আমাদের বলেছেন রবীন্দ্রনাথের গান সম্পর্কে। তা হল ভারতবর্ষের গানের যে স্বভাব সেটা হচ্ছে ইম্প্রোভাইজেশন।... সব জায়গাতেই ইম্প্রোভাইজেশন আছে।'... 'এটাই বাকের শনাক্তকরণ-বিদেশি বলেই পেরেছিলেন, আমরা পারি নি-রবীন্দ্রনাথের সংগীত সম্পরে যে অ্যাটিচিউড সেটা হচ্ছে ইউরোপীয়ান অ্যাটিচিউড। যে মুহূর্তে গানটি সৃষ্টি হল সে মুহূর্তে সেটা পূর্ণ। যার জন্য যখন দিলীপকুমার রায় বা জ্ঞানেন্দ্রনাথ গোস্বামী অনুমতি চেয়েছিলেন যে, আপনার গানে আমরা একটু তান-কর্তব দেব, গাইতে গেলে কেমন ন্যাড়া ন্যাড়া লাগে .. রবীন্দ্রনাথ বললেন, আমি তো কোথাও ফাঁক রাখি নি গানে। এই যে ফাঁক না রাখা-সেটাই হচ্ছে ইউরোপীয় তত্ত্ব।..' একথা সমীর সেনগুপ্ত মশাইয়ের লেখাতেও পেয়েছি।

    এইবারে আমরা যদি সটান আবার এসে পড়ি এই সিরিজের এই অন্তিম পর্বে-আপনি শঙ্খ ঘোষকে উদ্ধৃত করেছেন বলেই , শঙ্খ ঘোষের এ আমির আবরণ মনে পড়ছে।'দেখি, এমন কোনো পদ্ম গড়ে ওঠেনি আমার স্বভাবের মাঝখানে যেখানে পা রাখবে শ্রী, সৌন্দর্য। এই বোধ থেকে শুরু হল কান্না, অপচয়ের অক্ষমতার অপূর্ণতার কান্না' -
    ধরুন, এই বোধের বশবর্তী হয়ে যে শ্রোতা গান শোনেন বা অন্য কোনো শিল্পের শুশ্রূষা প্রার্থনা করেন, তখন যদি আজকের কোনো শিল্পী তাঁর একেবারেই ভিন্ন পরিবেশন দিয়েই ছুঁতে পারেন এই কাতরতার জায়গাটি-তবে তো আকাশ আর অন্ধকার নয়- অন্তত সে শ্রোতার কাছে। তাই না? পুরাতন নক্ষত্র রাজি অস্তমিত হয়েছেন, যথার্থ; হঠাৎ পর্দা সরালে নতুন তারাও তো দেখে কেউ-
  • শিবাংশু | ***:*** | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৭:১৩49296
  • ইন্দ্রাণী,

    ধন্যবাদ। যে অভিনিবেশ নিয়ে এই দীর্ঘ লেখাটি তুমি মন্থন করেছো, তার জন্য।

    প্রথমত বলি এই লেখাটি এখনও ঠিক 'সম্পূর্ণ' নয়। একটি শেষ অধ্যায় আসবে। মোহনদার পরে যাঁরা এই শিল্পটির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন, তাঁদের কয়েকজনকে নিয়ে। এই পর্বটির মূল্যায়ণ করার জন্য মানদণ্ডটি একটু বদলাতে হবে। কারণ সেই শিল্পীরা মোটামুটিভাবে এক্স প্রজন্মের পরবর্তী শ্রোতাদের কাছে পৌঁছোতে চাইছেন। সম্ভাব্য শ্রোতাদের শ্রবণ অভ্যাস ও প্রাথমিকতা অনেক বদলে গেছে গত দু দশকে। যদিও মানুষের শিল্পবোধ ও রুচির ক্ষেত্রে 'চক্রবৎ পরিবর্তন্তে' নিয়ম অবশ্যই খাটে। তাই সে অর্থে 'অন্ধকার' পর্ব কিছু নেই। খুব বেশি হলে অস্থায়ী 'তারার আলোক থেকে নিরালোক' পর্ব হয়তো আসতেও পারে। তার পরে ভোর তো অবশ্যম্ভাবী বাস্তব। শিরোনামটি বদলে দেবার পরই হয়তো বিষয়টি আরো প্রাসঙ্গিকতা পাবে।

    ৫'ইয়ের পোস্টে তুমি বেশ কয়েকজন শিল্পীর নাম দিয়েছো। এঁদের মধ্যে অধিকাংশই আমার প্রিয় শিল্পী। বিশেষ করে নীলিমা সেন, গীতা ঘটক বা সঙ্ঘমিত্রা গুপ্তের গান, 'ব্যক্তি' আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী। কিন্তু আলোচনায় তাঁরা উল্লেখিত হননি। কারণটি বলি। যে সব শিল্পীদের নিয়ে চর্চা করেছি, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজস্ব গীতধারা প্রবর্তন করতে পেরেছিলেন। বাংলায় যাকে 'ট্রেন্ডসেটার' বলা হয়। আমি সন্ধান করতে চেয়েছিলুম তাঁরা কেন সেটা চেয়েছিলেন, কীভাবে চেয়েছিলেন এবং তাঁদের সাফল্যের জাদুটি কোথায়? তাঁদের সম্পর্কে লেখাগুলি একটি সূত্রে গাঁথা যাবেনা। তাঁদের মেধা ও ক্ষমতার স্পর্শবিন্দুগুলি একান্ত আলাদা। ধরা যাক, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়-সাগর সেন- চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, শ্রোতাদের জন্য একটি বার্মুডা ত্রিভুজ। তাঁদের আকর্ষণ করার ক্ষমতা অতুলনীয়। যাঁদের নিয়ে আলোচনা করেছি, তাঁদের অনেকের থেকেই সাধারণ শ্রোতৃমণ্ডলীর কাছে এঁদের আবেদন ব্যাপকতর। কিন্তু এঁরা একটা ধারাবাহিক হেমন্তবৃত্তের অংশ। নিজেরা ধারা নন। রাজেশ্বরী দত্ত বা অর্ঘ্য সেনকে নিয়ে পৃথক আলোচনা করবো কি না সে নিয়ে অনেক ভেবেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিরস্ত হয়েছি এই কারণেই। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৃত্তে এসে যাবেন লাইসা আহমেদ লিসা বা বন্যা। দেবব্রতের বৃত্তে যেমন পীযূষকান্তি। লিসা, বন্যা ও অদিতির প্রসঙ্গ নিয়ে একজন শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতগুরুর সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ হয়েছিলো বিশদে। তিনিও একমত ছিলেন আমার ধারণার সঙ্গে।

    আলপনা রায় বা মুনিয়াদির গান শুধু সামনে বসেই শোনা যায়। শুনেওছি মূলত শান্তিনিকেতনে। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের গান তাঁর ছাত্রীজীবন থেকেই শুনি এবং উপভোগ করি। কিন্তু তাঁরা এই লেখাটির শর্তাধীন নন। আলোচনাটিতে প্রিয় শিল্পীদের ভূমিকা নিয়ে ভাবিনি। গত একশো বছরের গায়নকৌশলটিই উপজীব্য ছিলো। তার সঙ্গে আরও কিছু প্রসঙ্গ এসে গেছে স্বাভবিকভাবে।

    গত বছর দশেক ধরে যাঁরা পাদপ্রদীপের সামনে এসেছেন তাঁদের গান শুনি খুব মন দিয়ে। উত্তম গায়নের অভাব তো নেই। কণ্ঠসম্পদ বা প্রস্তুতিপর্বের ছাপ অনেকের মধ্যেই দেখতে পাই। তাঁদের গায়নের কারিগরি নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। যেমন ধরো, ঋতজার গায়নে গীতা ঘটক ও বনানী ঘোষের মতো পর্দা ও ঘাত লাগানো বা উচ্চারণের ধরনটা পাবো। তিনি অবশ্য নিতান্ত নবীন। সময় লাগবে। এখনও তাঁদের সিদ্ধি নিয়ে কোনও অবস্থানে আসতে পারিনি। এখনও এমন কাউকে শুনিনি যাঁর গান দুদশক পরেও শ্রোতারা সমান মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। নিজস্ব গীতধারা সৃষ্টি করার জন্য তাঁদের আরও সময় দিতে হবে।লোকপ্রিয়তার প্রসঙ্গে বলা যায়, শ্রীকান্ত বা মনোময়, জয়তী বা স্বাগতালক্ষ্মী, ইমন বা কমলিকা, এঁরা সবাই বিভিন্ন মাত্রার শিল্পী হলেও প্রথম বিভাগে পাস দিয়েছেন। কিন্তু এখনও এঁদের মধ্যে কাউকে পৃথক গীতধারার স্রষ্টা হিসেবে মানতে পারছি না। হতে পারে এ আমার নিছক শ্রোতা হিসেবে সীমাবদ্ধতা।

    রবীন্দ্রসঙ্গীতের কারিগরি নিয়ে যে যৎসামান্য ধারণা আছে তার থেকে বুঝি কবির দেওয়া সুরের বিন্যাস ও প্রগতির প্রতি সুবিচার করতে গেলে পর্দা ও শ্রুতির সঙ্গে তালমেল অত্যন্ত জরুরি শুধু নয়, অনিবার্য। কবি নিজে সঙ্গত হিসেবে এসরাজ বা তানপুরার উপরেই নির্ভর করতেন। পিয়ানো ও বেহালার ব্যবহার কবির সঙ্গীতবৃত্তে প্রথম থেকেই আছে। কারণ তাদের সুর ধরে রাখার ক্ষমতা আমাদের সঙ্গীতের পক্ষে উপযোগী। প্রাথমিক পর্যায়ের হারমোনিয়ম, যা ছিলো বক্স অর্গ্যানের সন্ততি, তাকে তিনি গ্রহণ করেননি। পরে অবশ্য ঐ যন্ত্রটি বিশেষভাবে উন্নত হয়ে শিল্পীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। তার বদলে যদি স্প্যানিশ গিটারের স্ট্রোক দিয়ে (কবির সুমনের ভাষায় 'ঝ্যাং ঝ্যাং মেরে') কেউ সুর ধরে রাখতে চান, তবে সেই সঙ্গীত আমার জন্য নয়।

    তোমার এই মতামত আমার জন্য জরুরি। এই লেখাটিসহ আমার আরও কিছু সঙ্গীতবিষয়ক রচনার সংকলন গ্রন্থাকারে আনার জন্য কেউ উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁকে জানিয়েছি আমি এখনও প্রস্তুত নই। বিশদ পুনর্লিখন ও মূল্যায়ণের অবকাশ এখনও রয়ে গেছে। 'হাতের কাজ' সেরে সেসব নিয়ে বসার আকাঙ্খা আছে।

    ভালো থেকো।
  • i | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১০:২২49297
  • শিবাংশুদা,
    এইবার সম্ভবতঃ এ'লেখার সুরটি ধরতে পারলাম। অনেক ধন্যবাদ।
    ইন্দ্রাণী
  • i | 108.162.***.*** | ০৯ মার্চ ২০২০ ১৪:৩৪91347
  • প্রিয় শিবাংশুদা,
    আপনি বলেছিলেন, লেখাটি এখনও শেষ হয় নি। তাই এখানেই লেখা। ইদানিং কিছু ফিউশন শুনছি-সৌরেন্দ্র সৌম্যজিতের।
    যে কথা আগে লিখেছি, শ্রোতার আর্তির জায়গাটি গায়ক ছুঁতে পারলেই তারার জন্ম হয়...
    আপনার পরবর্তী লেখায় সে সব তারা হয়ত জায়গা পাবে না কোনদিন, তবু কিছু নমুনা দিলাম- যদি পরবর্তী কোনো পর্বে এই ফিউশন বা একসপেরিমেন্ট নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছে হয় আপনার-







  • i | 108.162.***.*** | ০৯ মার্চ ২০২০ ১৪:৫৮91348
  • প্রতিটি ভিডিওতে Watch this video on YouTube ক্লিক করে শুনতে হবে সম্ভবত
  • শিবাংশু | ০৯ মার্চ ২০২০ ২১:১০91352
  • থ্যাংকু ইন্দ্রাণী। নিশ্চয় শুনবো ...
  • :(₹& | 162.158.***.*** | ১৩ মে ২০২০ ১২:৪০93279
  • এটা?

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন