মেয়েরা যখন ... : শ্রাবণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ মার্চ ২০১১ | ৮৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
"কিছু মনে কোরোনা, তুমি বাঙালী বলেই বলছি। এসব জায়গা কোনো ভদ্র মেয়েদের কাজের উপযুক্ত নয়। মেয়েদের পক্ষে ঐ ইস্কুল বা কলেজে কাজ করাই ঠিক আছে। তোমার বাড়ির লোকই বা কী ধরণের, মেয়েকে এরকম একটা চাকরি করতে পাঠিয়েছে। তা আজকাল কম্পিউটার টম্পিউটার কম্পানি খুলছে তো কলকাতা দিল্লী বম্বেতে শুনি। তুমি তো সেসব জায়গায় চাকরি খুঁজলেও পারতে।"
স্থান : পশ্চিমবঙ্গে স্থিত একটি সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট।
কাল: উপরোক্ত ঘটনার একবছর পর।
পাত্র: ট্রেনিং শেষে জয়েন করতে আসা উল্লিখিত দুটি মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারের একটি।
যে লোকটি এরকম সুমধুর সম্ভাষণে প্রথম দিন মেয়েটিকে স্বাগত জানাচ্ছিলেন তিনি ঐ প্রজেক্টের মেন্টেনান্স বিভাগের প্রধান। মেয়েটি এরকম অভ্যর্থনায় নির্বাক, প্রথম কাজ শুরু করার আগে বিভাগীয় প্রধানের এধরণের উৎসাহ প্রদানের বহরে মনে একরাশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব। তবু মরিয়া হয়ে জানায় যে তার ইচ্ছা এরকম জায়গায় কাজ করা, পড়াতে তার ভালো লাগেনা। প্রচুর বিরক্তিতে ভদ্রলোক খুঁজে পেতে একটি অদরকারী বিভাগে মেয়েটিকে পাঠালেন মুখ দিয়ে অনর্গল বিরক্তিসূচক নানা শব্দ বার করতে করতে। তারপরের কাহিনী, দীর্ঘ লড়াইয়ের, বারে বারে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা।
জরুরী কাজের পারমিট হাতে নিয়ে টেকনিশিয়ান ও মজদুরকে ডাকতে গেছে ফিল্ডে যাবার জন্য, সেখানে তাদের বক্তব্য,
"আপনার লিখিত অর্ডার টা দেখি এই গ্রুপে পোস্টিংয়ের, নাহলে আপনার সাথে কাজ করতে যাব না। কিছু গণ্ডগোল হলে তো মেয়েছেলেকে কেউ কিছু বলবেনা, আমাদেরই ধরবে।"
সেই এক ফাগুনবেলা : শ্রাবণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ মার্চ ২০১১ | ৯৪২ বার পঠিত
পিচকারী টিচকারী ও শুধু কিছু দুধেভাতে বাচ্চাদের জন্য, বেলুনও তাই, কারণ এ বাড়ির দোলে রঙ ঢালা হয় বালতি বালতি। বালতির সাইজ অবশ্য ছেলেমেয়েদের সাইজ অনুযায়ী হয়। রঙ গোলাই হয় চৌবাচ্চাতে। বড় বাড়ির কলতলার বড় চৌবাচ্চা খালি করে সেখানে সারা পাড়ার রঙ গোলা হয়। তবে রঙই, কাদা গোবর ইত্যাদি এ দোলে কড়াভাবে বারন। এক এক টার্গেট ঠিক হয় আর পুরো দল প্রায় সেই "আক্রমণ" স্টাইলে ঝাঁপিয়ে পড়ে বালতি উপুড় করে দেয়। রঙ বরষে তো সত্যিই এ রঙের বর্ষা। কোথাও কোনো শুকনো অবকাশ নেই,আপাদমস্তক রঙে চোবানো হয় এই ভিজে দোলে। বড়রা রঙ খেলেনা তবে রঙ মাখে খুশীমনে আর ছোটোদের নানান ফন্দী বাতলে দেয়। কোনো কোনো গিন্নী অল্প বিরক্তি দেখায়, সন্ধ্যেবেলা আবার চান করতে হবে, তবে সেসবে কেউ পাত্তা দেয় না।
সার্থক মেয়ে জনম আমার -- : শ্রাবণী রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ জানুয়ারি ২০১১ | ৮৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলে এই দলিত মহিলাটি রাজ্যের ভার নেওয়া থেকে দলিত মহিলাদের ধর্ষণের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৮ সনে অন্য সমস্ত রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। এই পরিসংখ্যানের বাইরে অজস্র কেস আছে যার কোনো রিপোর্ট হয়নি বা পুলিশ রিপোর্ট নেয়নি! অজস্র সংগঠন, দেশের আইন,অ্যাক্টিভিস্ট, আমাদের মত সাধারণ নাগরিক বিশেষ করে মহিলা যারা প্রত্যেকে হয়ত অনুভব করছি মেয়েটির দুর্দশা, তারা অসহায় কোন অশুভ শক্তির কাছে,ব্যবস্থার কাছে নাকি নিজেদের কাছে কে জানে? পনেরই জানুয়ারী শ্রদ্ধেয় বহেনজী তাঁর জন্মদিন পালন করছেন, এবার হয়ত লাড্ডুর সাইজ আরো বড় হবে। কেন্দ্রের বন্ধুদের দাক্ষিণ্যে কোর্টের কাছে বেকসুর ছাড় পাওয়ায়, ভক্তরা গলায় পরাবে আরো মূল্যবান টাকার মালা। কাগজে কাগজে আজ তাঁর ছবিতে ছয়লাপ, দলিতদের মসীহা, তাদের উন্নতির শক্তিরূপে। ওদিকে দলিত সতের বছরের কিশোরী মেয়েটি আজো অপেক্ষা করে মুক্তির, শুধু জেলের খাঁচা থেকে নয়, মুক্তি এদেশে এই নারী জন্মের শৃঙ্খল থেকে।
অনস্তিত্ব : শ্রাবণী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০২ নভেম্বর ২০১২ | ৮৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
-"শুনেছিস?"
-"হুঁ, শুনলাম।"
-"কখন? কে বলল?"
-"এই তো একটু আগে। মিসেস চৌবে ফোন করেছিল। অনুপমকেও কে জানি ফোন করেছিল।"
-"ছি: ছি:, কী লজ্জা বলতো? আমরা বাঙালীরা আর কারো কাছে মুখ দেখাতে পারব? সবাই তো মওকা পেয়ে নিন্দের বন্যা বইয়ে দেবে। বলবে "বঙ্গালীলোগ এয়সে হী হোতে হ্যায়"। ছি:"
রুমেলা বিরক্ত হল। যা হয়েছে তা খুবই বাজে ঘটনা, শুনে অবধি তার মেজাজ খারাপ, তবু এসময়ে দেবযানীর এইসব টীকাটিপ্পণী সহ বক্তব্য আর নেওয়া যাচ্ছেনা। সে ফোনপর্ব শেষ করার ইঙ্গিত দেয়,
-"ওসব ভেবে কী লাভ। যাদের যা বলার তারা এমনিতেও বলবে, অমনিতেও বলবে। ওতে কান না দেওয়াই ভালো। যাক শোন, অনুপম অফিস বেরোবে। ব্রেকফাস্ট রেডি হয়নি এখনো। এখন রাখ, সারাদিন পড়ে আছে। এসব আলোচনা পরে হবে।"
নিঠারী - আজও একটি প্রশ্নচিহ্ন : শ্রাবণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ ডিসেম্বর ২০০৭ | ৬৯৬ বার পঠিত
ঝাঁ চকচকে স্যাটেলাইট সিটি নয়ডা, আস্তে আস্তে জমজমাট হয়ে উঠে বড়বোন দিল্লীকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে তার আধুনিকতার গরিমায়। রিয়াল এস্টেটের দাম এখানে আকাশছোঁয়া। প্রবেশপথের ঝলমলে ফিল্ম সিটি , বড় বড় শপিং মল, নির্মীয়মান মেট্রো, বিশাল আধুনিক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক এসব শহরের শোভা হলেও, কোনোদিন নিউজ হেডলাইন হয়নি আজ অবধি - যা হয়েছে শহরের অভ্যন্তরের এক ছোট্ট গ্রাম নিঠারী।
নীল রেখায় ধূসর ছবি : শ্রাবণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ মার্চ ২০০৮ | ৬৭৩ বার পঠিত
২০০৬ এ দুশ জন, ২০০৭ এ একশ কুড়ি জন, ২০০৮ এ এখনো পর্যন্ত আট জন। গড়ে প্রতিবছরে প্রায় শদেড়েক মানুষের প্রাণ যায় রাজধানীর পথেঘাটে ঘুরে বেড়ানো এই মৃত্যুদূতের হাতে। আরো কতজন যে পঙ্গুত্বের শিকার হয়, কত পরিবার চিরদিনের মত রোজগারী সদস্যকে হারিয়ে পথে নামে তার কোনো লেখাজোখা নেই। "ঘাতক", হ্যাঁ, এই নামেই অভিহিত করেছে দিল্লী হাইকোর্ট দিল্লী পরিবহন ব্যবস্থার অন্যতম অংশীদার ব্লু লাইন বাসকে, আর সাধারণ লোকে এর নাম দিয়েছে "ব্লাডলাইন বাস"।
পনেরই জুন-ওয়ার্ল্ড এল্ডার অ্যাবিউজ ডে : শ্রাবণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ জুন ২০০৮ | ৬২৫ বার পঠিত
যা দিয়ে লেখা শুরু করেছি তা হয়ত ঠিক প্রচলিত নিয়মকানুনের সঙ্গে যায় না। আসলে উল্লিখিত বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবতে গেলেই আমার সবচেয়ে প্রথমে যা মনে পড়ে বা যে মুখ মনে পড়ে, তা দিয়েই শুরু করেছি। হয়ত এ ঘটনা অত্যন্ত মামুলী, লেখার মত নয়, তবু আমার কাছে এর গুরুত্ব অপরিসীম। ট্র্যাডিশনাল যৌথ পরিবারের ঘেরাটোপে বড় হয়েছি, সম্পর্কের নানান কঠোর দিক সম্বন্ধে বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিলনা। ভাবতাম বাকী যা যেরকমই হোক, বাবা মা আর সন্তানদের মধ্যেকার সম্পর্কের মত নিখাদ অমলিন আর কিছুই হয়না।
সোনার দেশের সোনার ছেলেরা : শ্রাবণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ আগস্ট ২০০৮ | ৬৩১ বার পঠিত
এগারোই আগস্ট, ২০০৮ এর সকাল। অন্যান্য সকালের মতই খুব সাধারণ আর একটি সকাল। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, কোথাও হাল্কা রোদ্দুর খটখটে শুকনো মাটি, কোথাও বা বৃষ্টিভেজা প্যাচপেচে কাদা। রোজকার খবরেও বৈচিত্র আশা করেনি কেউই তেমন। বন্যা, উত্তাল কাশ্মীর,রাজনীতিকদের চাপানউতোর, ছুটছাট দুর্ঘটনা, বাজারে মুল্যবৃদ্ধির আগুন এইসব নিত্য নৈমিত্তিক হেডলাইন চোখে নিয়ে ঘুম ভাঙছিল কোটি কোটি দেশবাসীর। হঠাৎ একটা খবর, একটা অন্যরকম খবর! আকাশে বাতাসে এ চ্যানেলে ও চ্যানেলে আর শেষমেশ এর মুখে তার মুখে সারা দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ল।
গান্ধী, দু একটি সিনেমা ও কিং অফ গুড টাইমস : শ্রাবণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ এপ্রিল ২০০৯ | ৮৪৩ বার পঠিত
আজ মৃত্যুর প্রায় ষাট বছর পরে তিনি সবার কাছে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে দোসরা অক্টোবরের ছুটির কারণ হয়েই রয়ে যেতেন যদি না বিধুবিনোদ, রাজু হিরানী আর সর্বোপরি সঞ্জয় ডাট থাকত। আমাদের ডিকশনারীর নতুন লব্ধ শব্দ "গান্ধীগিরি" আজকাল টপ ফ্যাশনে। ফুল ও মোমবাতি বিক্রেতাদের পৌষমাস! আজ যে দেশের কোণে কোণে বাচ্চা বাচ্চা জানে গান্ধীর নাম, তার কৃতিত্ব অবশ্যই মুন্নাভাইয়ের। যা ইতিহাসের বই,স্কুলের পাঠ করতে পারেনি তা করে দেখিয়েছে বলিউডের মহারথীর দল। তাতে কি হল যদি আজ গান্ধীজীকে একজন টাডা অপরাধী, প্রাক্তন ড্রাগ অ্যাডিক্ট, তাঁর জীবনদর্শনের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর এক লোকের হাত ধরে জনমানসে ফিরতে হয়!
একটা এমনি রাত : শ্রাবণী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০১ মার্চ ২০০৯ | ৭৪৬ বার পঠিত
আজ অনেকদিন পরে এমনটা হল। এই মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া। অন্ধকারে কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাকে চোখ বন্ধ করে। ঘুমের আমেজ যেন চোখের পাতা ছেড়ে পালিয়ে না যেতে পারে! চোখ খোলা যাবেনা কোনোমতেই, তাহলেই ঘুমের দফারফা। রাত এখন কটা কে জানে? ইস, কমপক্ষে ছ ঘন্টা না ঘুমোলে কাল সারাদিন টানতে পারা যাবে না। অফিসে সীটে বসলেই ঘন ঘন হাই উঠবে, কাজে বিরক্তি আসবে।
একটি গরু, একটি গ্রাম : শ্রাবণী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৭১০ বার পঠিত
কথাটা কখনও কাউকে বলিনি, কেমন একটু অদ্ভুত লাগত। এরকমটা মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই, মনে হলে যেন লজ্জাই পেতাম, তবু মনে হত। গরু, বিশেষ করে গাভীর চোখের দিকে তাকালেই মনে হত মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি, এখনও মনে হয়। শান্ত সজল কাজল আঁখি, দৃষ্টিতে অপত্য স্নেহ, ঠিক আমার মায়ের মত। এদিকে গরুদের নাম করে চারিদিকে যা হ্যাটা দেওয়া হয়। সেই গরুর চোখ দেখে মায়ের চোখের কথা মনে হওয়া, লোকে শুনলে কি ভাববে!