২০২৪ এ অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন আচেমোগলু, জনসন এবং রবিনসন। তাঁদের নোবেল নিয়ে ইতি-উতি সমাজ এবং সংবাদমাধ্যমে অনেকগুলি লেখা চোখে পড়ল। তার বেশিরভাগই হয় ভ্রান্তিমূলক অথবা ধোঁয়াশাপূর্ণ। সেই ভ্রান্তি এবং বিভ্রান্তি কাটাবার প্রয়াস এই প্রবন্ধ। ... ...
কোলকাতার রাস্তায় মোটর চালিত গাড়ি কেবল যে যাত্রী পরিবহণে অন্য মাত্রা যোগ করেছিল তাই নয়, পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রেও নূতন দিগন্ত উন্মচিত করেছিল। লরি, ট্রাক, স্টেশন ওয়াগন, টেম্পো ইত্যাদি নানা আকৃতি এবং আয়তনের পণ্যবাহী যানের আবির্ভাবের ফলে পালটে গিয়েছিল শহরের পণ্য পরিবহণের সামগ্রিক চেহারা। যানবাহনের বিবর্তনের প্রতিটি স্তরেই এসেছে কিছু পরিবর্তন, যার অনেকটাই গতি কেন্দ্রিক। পেশি শক্তির স্থলে যান্ত্রিক শক্তির আগমন, সেই গতিকেই আরো ত্বরান্বিত করেছিল। যত দিন গেছে শহরে নতুন নতুন গতিশীল যানবাহন এসেছে, তবু যাতায়াতের দুর্গতি মেটেনি। কারণ, যানবাহনের সাথে টেক্কা দিয়ে বেড়েছে শহরে যাতায়াত করা মানুষ। এছাড়া রাস্তার অনুপাতে গাড়ি বেশি হয়ে যাওয়ায় বেড়েছে যানজট। পাতাল রেল এবং সার্কুলার রেল, প্রথম দিকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল। আজ সেখানেও রীতিমত যুদ্ধ করে উঠতে হয়। যানবাহনে ব্যাপক পরিবর্তন এবং পরিবর্ধনের পরেও শহরে নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগ আজও রয়ে গেছে। আগামী দিনে আরো উন্নত কিছু প্রকল্প এই ক্লেশ থেকে মুক্তি দিতে পারবে কিনা তা ভবিষ্যতই বলবে। ... ...
রমেশ চন্দ্র দত্ত, সখারাম গনেশ দেউস্কর এর মত তখনকার অনেক বিশিষ্ট মানুষেরা নানান কারণে রেলকে স্বাগত জানাননি। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৪২ সালে বিলেতে গিয়ে রেলে চড়ে মুগ্ধ হয়ে যান। রেলকে তাঁর মনে হয়েছিল—The greatest wonder of England। দেশে ফিরে কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে তৈরি করলেন ‘The great western Bengal railway’ (GWBR)। কোলকাতা থেকে রাজমহল পর্যন্ত গঙ্গার ধার দিয়ে রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করলেন। ম্যাকডোনাল্ড স্টিফেনসনের ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি ছিল তাঁর প্রতিযোগী। ব্রিটেনের থেকে কোন সবুজ সংকেত না পাওয়ায় এবং ইউনিয়ান ব্যাঙ্ক(যার অধিকাংশ শেয়ারের মালিক ছিলেন দ্বারকানাথ) ফেল করে যাওয়ায় তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি জীবদ্দশায় নিজের দেশে রেল দেখে যেতে পারেননি কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূল হলে তাঁর সৌজন্যেই শুরু হত দেশের প্রথম রেল পরিষেবা। ... ...
ধ্যান কেন বিজ্ঞানের আলোচনার বিষয় ও কেন ধ্যান কি নিয়ে স্নায়ুবিজ্ঞানের আলোচনার আগে এই কথাগুলো লেখার প্রয়োজন । এটি প্রথম পর্ব বলে ধরে নেয়া যেতে পারে । ... ...
মাঝে মাঝে কাকতলীয় ব্যাপার দেখা যাক বৈকি – সে বিজ্ঞান জগতে হলেও। যেমন দেখা যায় চার্লস মার্টিন হল এবং পল হেরল্ট এর জীবনে। ‘হল-হেরল্ট’ পদ্ধতির জনক এই দুই জন জন্মেছিলেন এই সালে (১৮৬৩), একই বছরে পৃথিবীর দুইপ্রান্তে পৃথক ভাবে অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাষণের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন (১৮৮৬), আবার দুই জন মারাও গিয়েছিলেন একই বছরে (১৯১৪)। ... ...
জনবহুল ব্যস্ত এই শহরে শান্তিতে কিছুটা সময় কাটাবার জন্য গঙ্গার ঘাটের চেয়ে ভাল আর কোন জায়গা নেই। কবি, সাহিত্যিক, এবং ইতিহাসবিদদের কোলকাতাভিত্তিক রচনায় মাঝে মাঝেই জায়গা করে নিয়েছে মনলোভা এই ঘাটগুলি। তাঁদের নিপুণ লিখন শৈলীতে চিত্রিত হয়ে আছে বিলুপ্ত বা বিলুপ্তির জন্য অপেক্ষারত অনেক ঘাটের অতীতের জৌলুশ। বইগুলির পাতা ওলটালে ঘাট সংলগ্ন পুরনো বাজার, পার্ক, স্নানের জায়গা, মন্দির, শতাব্দ প্রাচীন এমন আরো কত কিছু আমাদের মানস চক্ষে জীবন্ত হয়ে ওঠে। ... ...
এই টোলা, পাড়া, হাটা, তলা, বাগান, সম্বলিত এলাকা অথবা রাস্তাগুলি আগলে রেখেছে কোলকাতার গত কালকে। ... ...
ব্রিটিশ রাজের পাশাপাশি কোলকাতায় তখন পক্ষীর রাজ চলছে। মানুষরূপী এই পাখিরা গান গায়, ঠোকরায়, বুলি আওড়ায়, শুধু ডানা নেই। কয়েক ছিলিম গাঁজা টানার পর নেশার মৌতাত চড়লে ডানা ছাড়াই কল্পলোকে উড়ে বেড়ায়। ... ...
পলাশীর যুদ্ধের পরে মাত্র তিন মাসের মধ্যে নবকৃষ্ণ বিশাল দুর্গা দালান তৈরি করান। তাঁর পুজোয় কৃষ্ণ নবমীর রাতে দেবীকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা হত। পূজা শুরু হত পরের দিন থেকে। দীর্ঘ পনের দিন ধরে চলত এই উৎসব বা ‘মোচ্ছব’। ধনীর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে দুর্গা পূজার সংখ্যাও। পূজাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে শুরু হয় একধরনের অশুভ প্রতিযোগিতা। শহরের দেখাদেখি গ্রামাঞ্চলের নব্য জমিদাররাও পূজায় নানা আমোদ প্রমোদে গা ভাসালেন। পুজার এই মহোৎসবে সাহেবদের ফুর্তির জন্য থাকত এলাহি ব্যবস্থা। কোথাও চলত উদ্দাম নাচ গান, কোথাও নাচত বাইজী, কোথাও বসত পানীয়র আসর। মুর্শিদাবাদ, এমনকি কখনো কখনো লখনৌ থেকে আসত বাইজীরা। সাথে থাকত অতিথিদের পছন্দসই খাদ্যের বিবিধ সম্ভার। সাহেব প্রভুদের তুষ্ট করার যাবতীয় উপাদানের অফুরন্ত যোগান থাকত এই পুজোর আসরগুলিতে। ... ...
এই হানাদারেরা কাছেপিঠের কেউ নয়, আসত সুদূর নাগপুর থেকে। এক সময়ে বাংলা, বিহার ও ওড়িশার সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল লুঠতরাজপ্রিয় মারাঠি বর্গিরা। বর্গিরা ছিল মারাঠি ধনগর জাতীয় অশ্বারোহী সেনা। অত্যাচারের নিরিখে শোলের গব্বর সিং এদের কাছে শিশু। পৌনে দুশ বছর আগের ভয় আজও ছেলে ভুলান ছড়া হয়ে মায়েদের মুখে মুখে ঘোরে। খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গি এল দেশে বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে ধান ফুরোলো পান ফুরোলো খাজনার উপায় কি? আর কটা দিন সবুর কর রসুন বুনেছি। ... ...
শেষের দিকে হাসপাতালটি সব দিক থেকে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ায় ওটিকে বাতিল করে ময়দানের দক্ষিণ দিকের শেষ প্রান্তে লোয়ার সার্কুলার রোডের ধারে জমি বাড়ি কিনে ১৭৭০ সালে সর্বসাধারণের জন্য প্রায় একই নামে গড়ে তোলা হল নতুন হাসপাতাল। ‘প্রেসিডেন্সি হসপিটাল’ এর উত্তরসূরি হয়ে স্থাপিত হল ‘প্রেসিডেন্সি জেনারাল হসপিটাল’, আজকের ‘সেঠ শুখলাল করনানি মেমোরিয়াল হসপিটাল’। ... ...
ধ্যান এবং সাধারণ অবস্থা ... ...
পশ্চিমবঙ্গে সরকারি স্কুল শিক্ষার মান কী কমছে? বিশেষতঃ রাজ্যে ক্ষমতা পরিবর্তনের পরে কী রাজ্যের সরকারি স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে? এই প্রশ্নগুলির উত্তর বোঝার চেষ্টা করব Annual Status of Education Report এর ভিত্তিতে। ... ...
জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মনোনিবেশ এবং ধ্যান ব্যাপারটির অপরিসীম তাৎপর্য। ধ্যান ব্যাপারটিকে ধর্ম, রীতিনীতি বা মনোবিজ্ঞান থেকে একটু সরিয়ে দেখা যাক। একটা প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক: যে ধ্যান করলে মনের "গভীরে" হয় কি? যদি সত্যি কিছু হয়, তাকে জানা যাবে কোন উপায়ে? কোনটা বিজ্ঞান আর কোনটা নয়? এই প্রশ্নগুলোকে কেন্দ্র করে আমাদের মস্তিষ্ক, এবং চেতনার একটা আকর্ষণীয় দিক নিয়ে আলোচনার ব্যাপার রয়েছে। বিশেষ করে, ধ্যান বিষয়টিকে কেন্দ্র করে স্নায়ুবিজ্ঞান (নাকি স্নায়ুশাস্ত্র) ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের মেলবন্ধনে চিন্তাভাবনার একটি নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে। ... ...
সে প্রায় ১১২ বছর হতে চলল, ১৯১২ সালের ১২ এপ্রিল ইংল্যান্ডের সাউথহ্যাম্পটন থেকে আমেরিকার নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিল ‘রয়েল মেল শিপ (আর এম এস) টাইটানিক’। সেই সময়ের সবচেয়ে জমকালো জাহাজের যাতার স্থায়ী হয়েছিল মাত্র দুই দিনের মত। ১৪ই এপ্রিল রাত ১১.৪০ নাগাদ টাইটানিক প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার/ঘন্টা গতিবেগে গিয়ে ধাক্কা দিল এক বিরাট হিমশৈল-তে যার ওজন ছিল দেড় লক্ষ থেকে তিন লক্ষ টনের মত। তারপর মাত্র দুই ঘন্টা চল্লিশ মিনিট – তার মধ্যেই উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে গেল সেই সময়ের বিষ্ময়ের প্রতীক টাইটানিক। জলের তাপমাত্রা তখন খুবই কম, চার ডিগ্রীর মত। বিজ্ঞান বলে এই তাপমাত্রায় মানুষের ২০ থেকে ৩০ মিনিটের বেশী বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। টাইটানিকে যাত্রী ছিল ২০০০ এর কাছাকাছি, এর মধ্যে সেই দিন মারা গিয়েছিল প্রায় ১৫০০ এর মত – এবং বেশীর ভাগই প্রবল ঠান্ডা জলে থাকার ফলে। মানে মৃত্যু সেই অর্থে জলে ডুবে ঠিক নয়। ... ...