উৎসব সংখ্যা ১৪৩২ -র সমস্ত লেখার হদিশ পাবেন এই পাতায় ... ...
হঠাৎ বাসটা ডান দিকে ঘুরে গেল! কি হল ব্যাপারটা? যাত্রীদের মধ্যে একটা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ল। তমাল এতক্ষণ খেয়ালই করেনি যে গাড়ি পুরো ঠাসা, ঘাড়ের ওপর লোক ঝুঁকে পড়ছে। কিন্তু আনোয়ার শাহ রোডে বাসটা ঘুরে গেলো কেন? এরকমটা তো মহরমের দিন হয়। তমালের মাথায় চিন্তাটা আসতেই একজন বলে উঠলো, নিশ্চয়ই মুসলমানদের কোনও পরব! ... ...
বাসব স্যার তখন সখা মাতলির সঙ্গে একহাত পাশা খেলবেন বলে মনে মনে ভাবছেন। গুটিগুলোকে শচীর তৈরি রেশমী পুঁটুলি থেকে বের করে সবে গোছাতে শুরু করেছেন,এমন সময় পাশে রাখা বাক্ যন্ত্রখানি সরব হয়ে ওঠে। যন্ত্রখানির দিকে নিতান্তই বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই দেখে পজ্জন্যর তলব। “ কী ব্যাপার? হঠাৎ ফোন করেছো কেন?” “ফোন কি আর সাধে করেছি? চতুর্দিক তোলপাড় হয়ে গেল ভোলুরামের হাঁচির শব্দে, আর আপনি শুধোচ্ছেন কী ব্যাপার!” – পজ্জন্যর কথায় খানিকটা উষ্মা ঝরে পড়ে। ... ...
সন্ধ্যে মেখে কুড়িয়ে নেওয়া চাঁদের আলো, ভরদুপুরে ধার করে নাও ছায়ার আড়াল, ... ...
হ্যাজাক একটা আলো নয়, অনুভূতি। উত্তাপ পেলে তীব্র হয়। কেউ কি বলেছিলো আগে? নাঃ কেউ বলেনি। এখানে, এই বারান্দায় হ্যাজকের অনুভূতির উত্তাপ যতদূর, ঠিক ততদূর চোখ যায়। তার ওপারে কিছু নেই। নাঃ সত্যি কিছু নেই। আছে বারান্দার বাসিন্দারা, হ্যাজকের কাছেপাছে। কীর্তন, রামপ্রসাদী, সব চলছে একের পর এক। গেলুমামা মানে শম্ভুদার বাবা গলা খেলিয়ে সন্ধ্যেটাকে বড় করছে। সুপ্রিয় ওর মায়ের পেছনে অল্প ছায়ায় লুকিয়ে সাথীদিকে দেখছে। সাথীদির এখন বিনুনি, খুলে রাখেনি। অন্ধকারকে শাসনে রাখার অভিপ্রায়। ... ...
আলো ছিল, আবার যেন ছিল না—হালকা, প্রায় অদৃশ্য ... ...
এক বন্ধু এই পুজো সম্পর্কে খবর দিলেন যে পুজো কমিটির মধ্যে মিলে মিশে আছেন বাঙালি অবাঙালি সমস্ত ধরনের মানুষ। সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এইবার ভাবনা হবে লীলা মজুমদার। তারপরেও শোনা গেছে একজন অবাঙালি দর্শক বলছেন, “ক্যায়া সব লিখা হ্যায় সব বাংলামে, হিন্দিমে কিউ নেহি হ্যায়?” তখনই মনে হলো আমরা জিতে গেছি। বাংলায় লেখা, বাংলার লীলা মজুমদার, উপেন্দ্রকিশোর, সত্যজিৎ রায়দের একটা ইতিহাস আছে, সেই ইতিহাস সেই ঐতিহ্য না জেনে, না বুঝে এই বাংলায় হিন্দি যাঁরাই চাপাতে যাবে, তাঁরা ধাক্কা খাবে। কোনও সঙ্ঘ পরিবারই এই ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতে পারবে না। মনে পড়ে যাচ্ছে কলকাতার একটি পুজো একবার একটি মণ্ডপ তৈরী করেছিল, নাম দিয়েছিল ‘হলদি কা প্যান্ডাল’। সেই পুজো যে বাঙালির আত্মাকে ছুঁতে পারেনি, তা বলাবাহুল্য। সেই জন্যেই এবারের কাশী বোস লেনের পুজো অনন্য হয়ে উঠেছে। প্রতিটি পুজো মণ্ডপই যেন এক একটা আলাদা লড়াই। হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কাশী বোস একটা প্রতিবাদ। ... ...
নব চুপ করে থাকল। বন্ধুদের নাম করতে নেই। নাম লিখতে নেই বন্ধুদের তবু নবর নাম লিখে ফেলেছিলাম। ভুল করলাম কি? বিজয়দার নামও লিখেছি, দেখছি ও পড়ে আছে। কুয়াশা ঘন হলে দেখা যাচ্ছে না। ঘন কুয়াশার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। সূর্যের অভাব অনুভব করলেই দৃষ্টি আরো তীক্ষ্ণ হচ্ছে তখনই সব দেখতে পাচ্ছি। কুয়াশা ভেদ করে সিংকোনার বাকল মাথায় বেঁধে নিয়ে একজন চলে গেল। সে যেন কুয়াশাকে সঙ্গে নিয়ে গেল আর আমি দেখছি বিজয়দার মাথায় টুপি। সে পড়ে আছে, অদ্ভুত একটা টুপি পরেছে। সেই ঝোপের মধ্যে দিয়ে কুয়াশার আগে পড়ে রয়েছে। তারপর থেকে কুয়াশার অঞ্চল শুরু হয়েছে। সেখানে সব আবছা। কিছু দেখা যায় না। ... ...
এরপরেই আসে পঙ্গপাল আর তার সঙ্গেই আসে ১৯৪৩ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষের কথা। বাংলার মাটি এতো উর্বর এতো শষ্যশ্যামলা হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে ঔপনিবেশিক শাসক এবং কিছু মুনাফাখোর কতিপয় মানুষ এবং অবহেলার কারণে বাংলার মানুষের এত দুর্দশা হয়েছিল, সেটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে মন্ডপের তৃতীয় অংশে। ... ...
আজ সোনম ওয়াংচুক কারাগারে। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন, তাঁর দর্শন, তাঁর আন্দোলন—এসবকে কারাগারের দেওয়ালে আটকে রাখা যাবে কি?একজন ব্যক্তি যখন গোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক প্রতীক হয়ে ওঠেন, তখন তিনি আর শুধুই ব্যক্তি থাকেন না। হয়ে ওঠেন সমষ্টির একজন। তাই একজনকে বন্দি করার অর্থ আন্দোলনকে আরও অনেক বেশি উস্কে দেওয়া। ... ...
রাজনৈতিক পরিচিতি নির্মাণ আসলে একটি জোট বা কোয়ালিশন নির্মাণ – কখনও সেখানে বাঙালি হিন্দু, বাঙালি মুসলমানের সঙ্গে জোট গঠন করবে আবার কখনও বাঙালি ব্রাহ্মণ, উত্তরপ্রদেশ বা মহারাষ্ট্রের ব্রাহ্মণদের সঙ্গে জোট তৈরি করবে। সমস্যা হল, পরিস্থিতি ভেদে পুরনো কোয়ালিশন ভেঙ্গে নতুন কোয়ালিশনের জন্ম হয়, তার ফলে মানুষ তার প্রধান পরিচিতিকেও পালটে ফেলতে পারে। ... ...
‘বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই নবী'- তাঁর 'আমার কৈফিয়ত' পড়ে মনে হল নজরুল ইসলাম তাচ্ছিল্যের হাসিতে ফেটে পড়েছেন। উত্তরসূরিরা তাঁর মূল্যায়নে যে রকম লাজনম্র নববধূর মতো দ্বিধাকম্পিত বাক্যরাশি নিবেদন করে চলেছেন, এতটা তাঁর দূর প্রত্যাশায়ও ছিল না। নজরুলকে নিয়ে বাঙালি শিল্পীসমাজের, বিশেষত কবিদের, অস্বস্তির শেষ নেই। তাঁকে বাতিল করা যায় না স্বভাব-কবি বলে, কিন্তু গ্রহণ করায় সমস্যার ব্যাপ্তি প্রচুর। আমাদের সান্ধ্য লিরিক-বিতানে নজরুল প্রায় এক সাংস্কৃতিক উপদ্রব। ... ...
বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্যাস আনন্দ মঠ পুস্তকাকারে প্রথম প্রকাশের (১৮৮২ সাল) প্রায় ১৫০ বছর পরে আজ নতুন করে একথা বলার প্রয়োজন নেই যে যে সামান্য কয়েকটি পুস্তক সময়ের সীমাকে অতিক্রম করে আসমুদ্র হিমাচলকে প্রভাবিত করেছে – বিশেষ করে এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সংগীত বন্দেমারতম্ – শুধু ভারতে কেন, সমগ্র বিশ্বেই এর তুলনা মেলা ভার। James Campbell Ker-এর কথায় – “The greeting “Bande Mataram became the war-cry of the extremist party in Bengal; it was raised at political meetings to welcome the popular leaders and ... also occasionally as a shout of defiance of Eropeans in the street.” ... ...
যশপতি সিংহের বুকের মধ্যে অনেকগুলো কাশফুল ডিজে মিক্সের তালে নাচছিল। পুজোর বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। আজ আমদানি ভালই হল। দু'লাখ লাগিয়েছিলেন সকাল সাড়ে নটায়। বারোটার মধ্যেই বেড়ে হয়ে গেল দু'লাখ আশি। মানে ফর্টি পার্সেন্ট। শেয়ার বাজার কি জয়! প্রাণ ভরিয়ে ঝিঙ্গালালা ধ্বনি বাজছিল। অ্যাপ থেকে অর্ডার করে বিখ্যাত দোকানের কিং সাইজ বিরিয়ানি আনালেন। সাঁটিয়ে খেলেন। সঙ্গে ছিল মাটন চাঁপ, স্পেশাল রায়তা আর ফিরনি। তার পরে গ্লাসে কোল্ড ড্রিঙ্ক ঢাললেন। দু-প্যাকেট জলজিরা মেশালেন। গ্লাসের অন্তঃস্থল থেকে উঠে এল আনন্দ বুড়বুড়ি। ... ...
সবেমাত্র চল্লিশের চৌকাঠ পেরিয়েছেন কেপলার। 'প্রবাবিলিটি' শব্দটা তখনও কেবলই লুডোর ছক্কাতেই সীমাবদ্ধ। গণিতশাস্ত্রের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থায়ী জায়গা করে নেয় নি। 'স্ট্যাটিস্টিক্সও' গণিতগর্ভের অঙ্কুর। ... ...
ভৌত ধর্মের নিয়মে সে ক্ষয়ে যাচ্ছে টের পায় তিতাস। তিতাস বন্দোপাধ্যায়। তার ৫ফুট ১১ ইঞ্চির শরীর থেকে একটু একটু করে চুন বালি সুরকির আস্তরণ খসে পড়ছে সে বুঝতে পারে। গভীর রাতে সে জেগে ওঠে। আর তখন তার তীব্র জলতেষ্টা পায়। ক্ষয়প্রাপ্ত বাড়ির মতো তার শরীর খুব জল টানে। জোর হাওয়া দিলে ধুলো ওড়ে। জানলা দিয়ে সে দ্যাখে রাতের অন্ধকার ভেদ করে মিটমিটে আলো জ্বেলে প্লেন উড়ে যাচ্ছে দিল্লি কিংবা জয়পুরের দিকে। কতদিন সে প্লেনে চড়েনি! মনে পড়ে না তিতাসের। আর কতদিন? এভাবে চলবে? ... ...
বাংলা ভাষা একটি মিশ্র ভাষা। তার মধ্যে বৈদিক, সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষার অবদান যেমন আছে, তেমনি আছে খেরওয়াল বা সাঁওতালী সহ বেশ কিছু মুণ্ডা ভাষার অতি গুরূত্বপূর্ণ অবদান। বাংলা ভাষার ওপর বৈদিক, সংস্কৃত ও প্রাকৃতের মতো আর্য ভাষার প্রভাবের দিকটি নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু অস্ট্রো এশিয়াটিক, দ্রাবিড় ও সিনো টিবেটিয়ান ভাষারও যে কম বেশি প্রভাব আছে বাংলা ভাষার গঠনে – তাই নিয়ে আলোচনা তেমন দেখা যায় না। অথচ ভাষাপ্রকৃতির দিক থেকে বিচার করলে বাংলা ভাষার গঠনে মুণ্ডা সহ এসব ভাষার প্রভাবের দিকটি কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ... ...
Tame birds sing of freedom, wild birds fly.... হাওয়াবিহীন দিনগুলিতে আকাশকে চুপসানো বেলুনের খণ্ড মনে হয় - ফ্রেমে আটকানো; যেদিন বাতাস ওঠে, নীল বেলুনের টুকরো ঢাউস শামিয়ানা হয়ে উড়তে থাকে, মেঘ আর ডানারা মোটিফ তৈরি করে - সাদা কালো লাল নীল মেঘ ছেনে ছোটো ডিঙি, বড় বড় পালতোলা নৌকো, বিশাল সব দুর্গ, হাতি, উট আর বুড়ো মানুষ। তার ওপর ঘুড়িরা লাট খায়, জেট চলে যাওয়ার ঘন সাদা লাইন ফিকে হতে হতেই একগুঁয়ে উড়োজাহাজরা উড়ে যায় আচমকা। পাখিরা চক্কর কাটে আর চক্কর কাটে, শেপ ফর্ম করে - ভি, ওয়াই, এম, এ, ডব্লিউ; কখনও তারা মানুষের কাছাকাছি নেমে আসে এমন, যেন ডানার কথা ভুলেই গিয়েছে। ঘাসের ওপর শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখি- ডান হাত মাথার নিচে, বাঁ হাত শুরু হয়েই শেষ হয়ে গিয়েছে, কাঁধের খুব কাছেই চেটো- তাতে তিনটে আঙুল। যেন ডানা। আমি হৃদয়রাম, পঁয়ত্রিশ বছরের এক্ট্রোড্যাকটাইলি পেশেন্ট। উড়তে পারি না অথচ বাঁ কাঁধে কারো হাত ঠেকলে খাঁচায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় পাই। আসলে এ'সবই ডানার গল্প। ... ...