এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • মিলেনিয়াম মলঃ পর্ব নয়

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ৯৬৩ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)


  • অদ্যই শেষ রজনী। বছরের অন্তিম সন্ধ্যা। রাত বারোটা অব্দি বিভিন্ন মলে, বার ও রেস্টুরেন্টে অফিসার্স ও পুলিশ ক্লাবে নতুন বছরকে বরণ করার ধূম। সবাই ডাকছে নবীন প্রজন্মকে। আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতা-- নাচ-গান ও ফ্যান্সি ড্রেসের। অন্ততঃ গোটা ছয়েক মিস রায়পুর ও মিস ছত্তিশগড় প্রতিযোগিতা। আজ পানীয় কি্ঞ্চিৎ শস্তা , আর ড্যান্স ফ্লোরে সঙ্গিনী নিয়ে এলে কোন কোন হোটেলে এন্ট্রি ফি মাপ। গোটা শহর অধিকাংশ মহল্লা আলোয় আলোয় ঝলমল করছে। রাস্তায় উদ্দাম বেগে ছুটছে দ্বিচক্রযান, পেছনে বসে কখনো এক, কখনো দুই। পুলিশ দেখেও দেখছে না।
    কিন্তু মিলেনিয়ম হলে কী যে হচ্ছে তার মাথামুন্ডু বোঝা দায়।
    আজ রাত পোহালেই এলাকাটা হাই সিকিউরিট জোন হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী ফিতে কাটবেন আগামী কাল বেলা ১১টা বেজে ১৭ মিনিটে। দুজন জ্যোতিষশাস্ত্রী ও পূজ্য সিন্ধি পঞ্চায়েত মিলে এই শুভক্ষণটি বেছে নিয়েছে। শদাণী দরবারের সন্তজীও আশীর্বাদী ফুল পাঠিয়ে দিয়েছেন।
    মুখ্যমন্ত্রী সপারিষদ সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান, মানে ফিতে কেটে বাটন টিপে বেলুন উড়িয়ে গুলাবচন্দানী পরিবারের সঙ্গে একটা ফোটোসেশন করিয়ে তারপর ওঁদের পুরনো ব্যাংকোয়েট হলে লাঞ্চ সারবেন। উনি ফিরে গেলে একটা ফাঁড়া কাটবে। বিকেল চারটে থেকে মিলেনিয়ম মল সর্বসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত হবে।
    মলের মধ্যে ক্রিকেট প্রিয় কিশোরদের জন্যে থাকবে নেট ঘেরা জায়গায় টিকেট কেটে ব্যাটিং প্র্যাকটিস। একটি কৃত্রিম পিচের মধ্যে উইকেট বসানো। উল্টো দিকে বোলারের জায়গায় একটি বোলিং মেশিন। ব্যাটসম্যানের চাহিদামত ওই মেশিন থেকে ছটি টেনিস বল একের পর এক পূর্ব নির্ধারিত স্পিড ও লেংথে ছুটে আসবে। ভবিষ্যতের শচীন হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেলেপুলের দল এখন থেকেই পাঁয়তারা কষছে। আর আছে হরেকরকম খাওয়াদাওয়ার ব্যব্স্থা। গ্রামীণ ছত্তিশগড়ের ছেলেমেয়েদের দল প্রচারের দৌলতে আগের থেকেই জেনে গেছে সিসিডি ও বরিশ্তার নাম।
    সে যাকগে। সন্ধ্যেয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও ভজন। কিন্তু আমার রক্তচাপ বাড়ার সময় সেটাই।
    এখান থেকেই জেসমিনের দিল্লি থেকে রওয়ানা হওয়াটা মনিটর করতে হবে।

    শীতের ভোর। নতুন বছরের প্রথম ভোর। সাড়ে চারটে? তার বেশি নয়। কুক কুক করে অ্যালার্ম বেজে উঠল। চোখ কচলে সোজা ওয়াশরুম। যে শুইয়া থাকে, তাহার ভাগ্যও শুইয়া থাকে।
    আজ তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে একঘন্টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ব। হতভাগা চমনলাল কোথায়? বেড-টি? আমার শরীর নামক যন্তরটির লুব্রিক্যান্ট?

    ভাবতে না ভাবতেই দরজায় মৃদু নক। সামান্য ঠেলে ট্রে হাতে চমনলাল। টি-পট, সুগার ইত্যাদি ও কিছু বিস্কিট সুন্দর করে সাজিয়ে এনেছে।
    শীতটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে বটে, তবে গরম চায়ের সঙ্গে আমার শরীরেও ধীরে ধীরে একটা আরাম ছড়িয়ে পড়ছে। চমনলালের দিকে তাকাই। মৃদু হাসির সঙ্গে বলি — হ্যাপি নিউ ইয়ার!
    ও হেসে প্রত্যুত্তর দিয়ে গম্ভীর হয়ে যায়। এই ভাবান্তর আমার চোখ এড়ায় না। আমি অপেক্ষা করি। চায়ে চুমুক দিয়ে ক্রিম ক্র্যাকার চিবুই।

    -- “ব্যাটম্যান?”
    -- “ক্যা বাত হ্যায়?”
    -- “আমাকে একটা নিউ ইয়ার গিফট দেবে?”
    -- “কেন দেব না? কিন্তু আগে শুনি তো!”
    -- “আমাকে আজ তোমার সিক্রেট মিশনের টিমের সঙ্গে দিল্লি পাঠিয়ে দেবে? এরোপ্লেনে?”
    আমি হতবাক।
    -- “এসব কী বলছিস? তোকে হঠাৎ দিল্লি পাঠাব কেন? আর সিক্রেট মিশন টিশন কী? আজকাল ব্যাটম্যান সিরিজের জায়গায় টম ক্রুজের ফিল্ম দেখছিস নাকি রে ?”
    --- “কথা ঘোরাবে না, ব্যাটম্যান! ঠিক সে বতাও। মুঝে চান্স দেও গে কি নহীঁ? আমি জানি যখন সবাই চিফ মিনিস্টারের ফিতে কাটার ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকবে, তখন দুজনের একটা টিম তোমার নির্দেশে দিল্লি যাওয়ার জন্যে মানা এয়ারপোর্ট থেকে প্লেনে চড়বে। তোমার দুশমন ওই ক্লাউন টেরটি পাবে না। কী? ঠিক বলেছি তো?”

    আমার সারা শরীর ঝিমঝিম করে ওঠে। তারপর গোটা শরীরে একটা হাই পাওয়ার ভোল্টেজের শক খাওয়ার মতন অনুভূতি। কিছু বোঝার আগেই দেখি তিনলাফে দরজায় পৌঁছে গিয়ে লক্‌ করে দিয়েছি।
    এবার তাকাই চমনলালের দিকে। ও ভয় পেয়ে সরে গেছে দেওয়ালের দিকে, কিন্তু চোখে তেমন আতংকের ছাপ নেই।
    -- “হল কী ব্যাটম্যান? আমায় মারবে?”
    আমার হাত নিশপিশ করে। কিন্তু স্নায়ু ঠান্ডা রাখার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাই। হিমশীতল গলায় বলি — “সত্যি কথা বল্‌।”
    --- “মানে? মিথ্যে কথা কোথায় বল্লাম?”
    আমার ডানহাত ওর গলার কাছে জামাটা খিমচে ধরেছে।
    -- কথা ঘোরাবি না চমনলাল। তুই কে? কী করে জানলি যে আজ কোন মিশনে আমার দুইজন লোক দিল্লি যাচ্ছে?
    ওর ফ্যাকাশে চেহারায় একটু হাসির আভাস।
    -- “জামাটা ছেড়ে দাও। গলায় লাগছে। নাঃ ব্যাটম্যান। তোমার নার্ভ তত স্ট্রং নয়।”
    আমার মুঠো একটু আলগা হয়।
    -- “কে বলেছে? কার থেকে শুনেছিস?”
    -- “আরে যা ভাবছ সে'রম কিছু না। টেনশনে টেনশনে তোমার মাথাটা গেছে।”
    -- “কে বলেছে?”
    আমি হিস হিস করে উঠি।
    ও ঝাঁঝিয়ে ওঠে।
    --- “কে আবার! বড়ে মালিক।”
    -- “রমেশজী? কখন বলেছে?”
    --- “কাল রাত দেড়টা নাগাদ।”
    ঘরের মধ্যে আচমকা সুনামির ঢেউ। তার ঝাপটায় আমি হাবুডুবু খেয়ে খানিকটা পিছিয়ে যাই।
    তারপর বলি।
    -- “শোন, সবটা খুলে বল। যদি একটাও মিথ্যে কথা বলিস তো আজ এই ঘর থেকে স্ট্রেচারে করে বেরোবি।”
    চমনলাল বেশ ধাতস্থ হয়ে উঠেছে।
    -- “আরে লুকোতে যাব কেন? তখন তোমার ঘরের আলো নিভে গেছে। আমার মোবাইলে মালিকের নাম দেখা গেল। উনি এই বাড়িটার নীচে গাড়িতে বসে ছিলেন। বললেন—‘শোন, চমন! একটা কাজ করতে পারবি? তুই এখন বড় হয়ে গেছিস। কাল রাত্তিরে তোকে দিল্লি যেতে হবে। প্লেনে চেপে। একা না, আরও দু'জন যাচ্ছে।কিন্তু ব্যাপারটা খুব সিরিয়াস। কোন প্রশ্ন করবি না। টপ সিক্রেট।”
    --- ‘কিন্তু আমার সাহেব? ওকে না জানিয়ে?’
    --- “আরে ওই পাঠাবে। কাল সকালে বলিস। সাহেবও তোকে ভালবাসে, বিশ্বাস করে। ঠিক পাঠাবে। বলেই দেখিস।”
    উনি চলে গেলেন। আমার আনন্দের চোটে ঘুম হয় নি। কালকে রাত্তিরে দিল্লি যেতে হবে? সিক্রেট মিশনে? একটু ভাবতেই মনে হল। নিশ্চয়ই মিস্‌ ক্যামেলিয়া। তারপর আর ঘুম আসে? মনে হল ভগবান আমার কথা শুনেছে। তোমাকে বলেছিলাম-- পাত্তা দেও নি। এখন বড়ে মালিক নিজে বলছেন যেতে।”
    --- “সেটা আগে বলিস নি কেন?”
    --- “ভেবেছিলাম -- থোড়া মজাক করুঁ। পর আপ তো আপ হী হ্যায়!”

    আমার মন সন্দেহের দোলায় দোলে। কোথায় কিছু একটা গন্ডগোল হচ্ছে। ওকে ইশারায় চেয়ারে বসতে বলি। ও একটু অবাক হয়, তারপর বসে পড়ে।
    এবার দরজায় পিঠ দিয়ে ওর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে রমেশজীকে ফোন লাগাই।
    -- “হ্যাঁ, আমিই কাল রাতে ওকে বলেছি তৈরি হতে, সকালে আপনাকে জানাতে।
    না, কাল রাতেই আইডিয়াটা এল। ওই দুজন পেশাদার বটে! কিন্তু আমার সহোদরটি অসম্ভব ধূর্ত। এখানে অধিকন্তু ন দোষায়।
    আর চমনকে খাটো করে দেখবেন না। ও হল আমার আপনার গ্রে হাউন্ড। ওর একটা অ্যাডভান্টেজ আছে। ও রাজকুমারের প্রায় সব লোককেই চেনে। ও তাদের আগে থেকেই স্পট করতে পারবে।
    আর একটা কথা বলি। ও একটু অ্যাবনর্মাল সেটা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন। ও মিস ক্যামেলিয়ার ফ্যান, দরকার হলে ওর জন্যে জান লড়িয়ে দেবে।
    না, খালি হাতে যাবে না। একটা পুরনো পিস্তল। ওর নামেই লাইসেন্স, ছ'মাস আগে করিয়ে দিয়েছি। দরকার পড়বে না। তবু সাবধানের মার নেই।”



    আর আধঘন্টা। সতর্ক চোখে সব দেখে নিচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রীর পাইলট কার ঢুকল। এর পর ডিজিপি ও সিআইডি বিভাগের ডিআইজি। লোকটা আমাকে দেখেও দেখল না। সে যাকগে। সবকিছুই নিয়মমাফিক হচ্ছে। আমার টিম প্রেসের লোকজনকে গরুতাড়া করে ওদের জন্যে নির্দিষ্ট কর্নারে ঢুকিয়ে দিল। এদিকে হোস্ট পরিবার বিশেষ সেজেগুজে হাজির। বড়ে বাবুজি ও বড়ী মা। রমেশ ও বড়ী ভাবীজি। ওঁর কিশোর বয়সের ছেলেমেয়ে দুটো বন্ধুদের নিয়ে অন্যদিকে সমানে সেলফি তুলছে। রাজকুমার এসে্ছে একা, ইম্পোর্টেড সানগ্লাস ও লাউড কালার কম্বিনেশনের স্যুট পড়ে।
    ইতিমধ্যে প্রায় নিঃশব্দে গড়িয়ে গড়িয়ে ঢুকে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ঢাউস গাড়ি। ভদ্রলোক এখনও সাফারি সুটের মায়া ছাড়তে পারেন নি। কিন্তু অসম্ভব জনপ্রিয়। আগামী নির্বাচনে ওঁর কুর্সীর কোন বিপদ নেই বলেই জনশ্রুতি।
    ওঁরা এগিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির দিকে। রমেশের হাতে একটি বিশাল গারল্যান্ড। এই প্রোগ্রামের জন্যে বেঙ্গালুরুর কারিগর দিয়ে তৈরি করা। আমি তীক্ষ্ণ চোখে রাজকুমারকে দেখছি। কালো চশমায় ঢাকা ওর চোখের ভাষা কে পড়তে পারে!
    বেজে উঠছে পুলিশ ব্যান্ড। মাইকে ঘোষক কিছু বলে যাচ্ছে, আমার কানে সব কথা ঢুকছে না। আমার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নয়। তারজন্যে ডিজিপি নিজে ও সিআইডি বিভাগ রয়েছে। ওরা প্রতিটি মুভমেন্ট ছকে রেখেছে।
    আমার দায়িত্ব মিলেনিয়ম মলের সার্বিক সুরক্ষা। হ্যাঁ, তার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তাও খানিকটা রয়েছে বৈকি!
    ঘড়ির কাঁটা ঘুরে চলেছে। আমার হার্টবিট বাড়ছে।
    হ্যাঁ, সবাই ঠিক জায়গায় রয়েছে। আর পনের মিনিট।
    এবার মুখ্যমন্ত্রী এগিয়ে আসছেন, দুপাশে কালো সাফারি স্যুটে ব্ল্যাক ক্যাট কম্যান্ডো, দু'জন ছ'ফুটিয়া জাঠ জোয়ান। আগে আগে বড়ে বাবুজি। রমেশজি উত্তেজনা গোপনের চেষ্টায় কেমন যেন হয়ে গেছেন। রাজকুমার ওঁর পাশে পাশে চলছে।

    এবার মূল হলের কাঁচের দরজার সামনে একটি রূপোর থালায় লাল ফিতে, কাঁচি, ধূপবাতি ও নারকোল নিয়ে এক সুন্দরী দীর্ঘাঙ্গী দাঁড়িয়ে। উনি নারকোল তুলে দরজার সামনে আঁকা আলপনার উপর মাটিতে আছাড় মারলেন। ঝুনো নারকোল সহজে ফাটলো না। বাবুজির ইশারায় রমেশজি ওটা তুলে দু'বার আছড়াতেই ফেটে জল বেরিয়ে এল। হাততালি। ফ্ল্যাশের চমক।
    এবার উনি তরুণীটির হাত থেকে ধূপবাতি নিয়ে জ্বালিয়ে ধরে দুবার শূন্যে ঘোরালেন। জনতা হর্ষধ্বনি করে উঠল। উনি কাঁচি দিয়ে লাল ফিতে কাটতেই মিউজিক লাউড হয়ে বেজে উঠল। কারো কথা শোনা যাচ্ছে না।
    আমি সতর্ক।
    উনি এগিয়ে চলেছেন এই শোয়ের জন্যে নির্মিত বিশেষ একটি প্যানেলের দিকে। সেখানে নির্ধারিত সুইচটি টিপে দিলেই উপরের গম্বুজ খুলে নানারঙের একগাদা বেলুন আকাশে উড়ে যাবে। বেলুনের উপর প্রিন্ট করা — মিলেনিয়াম মল!
     এই শোয়ের কথা নিয়ে অনেক খবর প্রবন্ধ ছবিছাবা বেরিয়েছে। ফলে পাবলিক এবং মিডিয়ার একস্পেকটেশন তুঙ্গে।
    না, ভুলের কোন সম্ভাবনাই নেই। আমি কাল রাত্তিরেও ইঞ্জিনিয়রকে সঙ্গে নিয়ে রান করে দেখেছি। সব ঠিক আছে। খটকা যা ছিল আরেকটা বাটন নিয়ে। যেটা প্যাসেজের নাইন্টি ডিগ্রিতে বাঁক নেওয়া কোনাটায় আছে, মানে যেটা কেউ ভুল করে কিছুদিন আগে বদলে দিয়েছিল। সেই বাটনটা আগেই ঠিক করে নেয়া হয়েছে।

    আমি কোন চান্স নিইনি। ওই বাটনটার সামনে একজন স্পেশাল অফিসার দাঁড় করিয়ে দিয়েছি। ও রমেশজির বিশ্বস্ত লোক। জগন্নাথ দামলে।
    ওর একটাই কাজ। ওই প্যানেলটার কাছে কাউকে ঘেঁষতে না দেওয়া-- অন্ততঃ চিফ মিনিস্টার এখান থেকে চলে না যাওয়া পর্য্যন্ত। পাইলট কার ঢোকার আগে থেকেই ও ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমি নিজে দেখে এসেছি। একটু আগেও মোবাইলে কথা বলে নিয়েছি।
    আমার চোখ ওই মেফিস্টো রাজকুমারের দিকে।
    না, অমন কালো চশমায় চোখ ঢেকে কাউকে ইশারা করা যায় না। ওর মোবাইল মনে হয় পকেটেই আছে। ওর শরীরের ভঙ্গিতে একটা একাগ্রতা, মুখ্যমন্ত্রীর সমস্ত নড়াচড়া যেন জরিপ করছে। না, হাত-টাত নাড়ছে না।
    বাবুজি ও মুখ্যমন্ত্রী কথা বলছেন। ঘোষক কিছু বলছে। উনি প্যানেলের সামনে দাঁড়ালেন। সবার দিকে তাকিয়ে একটু নার্ভাস হাসি। জনতার দিকে হাত নাড়লেন। ওঁর নামে জয়ধ্বনি উঠল।
    বোঝাই যাচ্ছে প্রতিটি মুহুর্ত উনি বেশ উপভোগ করছেন।
    প্যানেলের উপর ওনার হাত, ব্যান্ড বেজে উঠেছে। ওঁকে বোঝানো হয়েছে যে যেই মিউজিক একবার রিপিট হয়ে তারসপ্তক ছোঁবে তখনি উনি যেন সবুজ বোতাম টিপে দেন।
    উনি ভুরু কুঁচকে বলেছিলেন -- এতসব মুশকিল। ঠিক আছে, যেই ব্যান্ড মাস্টারের লাঠি শূন্যে উঠবে তখনি -- “কি? হবে তো?”
    ব্যান্ডে মুখড়া রিপিট হল। অন্তরার সুর চড়ছে। টানটান উত্তেজনা।
    ব্যান্ডমাস্টারের ব্যাটন উঁচুতে উঠবে বোঝা যাচ্ছে। উনি তাকিয়ে।
    এমন সময় একটা টায়ার ফাটার মত আওয়াজ। মলের বন্ধ পরিবেশে কেঁপে কেঁপে উঠল। সবার চোখ আকাশে।
    মুখ্যমন্ত্রী বাটনে খালি হাত রেখেছিলেন কি টিপেছিলেন বোঝা গেল না, কিন্তু গোটা ডোমটাই একটা বিস্ফোরণে ফেটে গিয়ে উড়ে গেছে। এখান থেকেই আকাশ দেখা যাচ্ছে।
    ভাঙা ডোমের মলওয়াগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে হলের মাঝ খানে পড়ছে। অল্প সাদা ধোঁয়া। না, প্যানেল থেকে একটু দুরে, তাই কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় নি। কেউ আহত হয় নি। কিন্তু আকস্মিক এই ঘটনায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
    কয়েক মিনিটের মধ্যে বিশাল কম্যান্ডো বাহিনী মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে নিয়ে গাড়ি করে রাজভবনের দিকে বেরিয়ে গেছে। বাকি পুলিশ ঘিরে ফেলেছে মলের থেকে বেরনোর সবকটা দরজা।
    লোকজনের কান্নাকাটি চেঁচামেচিতে কানপাতা দায়।
    বাবুজি ও সমস্ত গুলাবচন্দানি পরিবারের যেন পক্ষাঘাত হয়েছে।
    আর রমেশ? রক্তশূন্য ফ্যাকাশে মুখে বিড়বিড় করছেন।
    সব স্বপ্ন শেষ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ৯৬৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ০২ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৫৩525436
  • বলতে ভুলে গেছিঃ 
    আগামী কিস্তিতে সমাপ্য।
  • মত | 173.49.***.*** | ০২ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:০০525451
  • দ্য ডে অফ দ্য জ্যাকল  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন