এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • কোভিড ১৯: একটি রাজনৈতিক বনাম নৃতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ -- দীপক পিপলাই

    শ্রমজীবী ভাষা লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৮ মে ২০২০ | ৩৩৯১ বার পঠিত
  • আন্তর্জাতিক ভাবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি চর্চিত বিষয় করোনা বা কোভিড-১৯ ভাইরাস। সর্বত্রই একটা 'গেল গেল' রব। আজ (১৫ এপ্রিল) সকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র প্রকাশিত 'সিচুয়েশন রিপোর্ট -৮৫' অনুযায়ী সারা পৃথিবী জুড়ে, পরীক্ষাগারে প্রমাণিত, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৮, ৪৪, ৮৬৩ ; এদের মধ্যে মৃত্যু ঘটেছে ১, ১৭, ০২১ জনের। অর্থাৎ, আক্রান্ত মানুষের মধ্যে শতকরা ছয় জনের (৬%) মৃত্যু হয়েছে। ভারতবর্ষে ১০, ৩৬৩ জন আক্রান্তের মধ্যে ৩৩৯ (৩%) জনের মৃত্যু ঘটেছে। তবে, বাংলায় নমুনা সমীক্ষার কাজ আরও বিপুল পরিমাণে বাড়ানো প্রয়োজন বলে কেন্দ্রীয় সংস্থা 'নাইসেড' (NICED) মন্তব্য করেছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক জগতের হম্বিতম্বি এবং কার্যক্রম, এই দু'য়ের মধ্যে বেশ গরমিল চোখে পড়ছে! নৃতত্ত্বের চোখ দিয়ে, 'করোনা' সংক্রমণের বিষয়টা অন্যরকম মাত্রা নিয়ে হাজির হচ্ছে। আমার কাছে।


    প্রধানত সমাজের কোন অংশ আক্রান্ত?


    নানা দেশের খবর থেকে সাধারণত দেখা যাচ্ছে রাজপুত্র, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, উচ্চপদস্থ আমলা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিদেশে গমন কারী... এইরকম স্তরের মানুষজনের আক্রান্ত হবার খবরই বেশি। ভারতবর্ষও তার ব্যতিক্রম নয়। অর্থাৎ, এক কথায় বোধহয় বলা যায়, প্রধানত সমাজের উপরতলার মানুষজনই করোনা সংক্রমণের শিকার। তাই কি এতো হৈচৈ, এতো প্রশাসনিক সক্রিয়তা?


    করোনা নিয়ে এতো আতঙ্ক কেন?


    কোভিড ১৯-এর কোনও প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কৃত হয়নি, ঠিকই। কিন্তু তথ্য বলছে, ১) ২০১৯ সালে পৃথিবীতে শুধু যক্ষ্মা রোগেই মৃত্যু হয়েছে পনেরো লক্ষ মানুষের; ২) ২০১৯-২০ সালে বিশ্বজুড়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগে মারা গিয়েছেন সাড়ে চার থেকে চোদ্দ লক্ষ মানুষ।


    নৃতত্ত্বের স্বাভাবিক প্রশ্ন: মানবসমাজের এতো বড় দু'টি দুর্বিপাক নিয়েও দুনিয়া জুড়ে কেন শোরগোল পড়েনি প্রশাসনিক কিম্বা নৃতাত্ত্বিক স্তরে?


    যে কোনও বিপদের সময়ে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন মানবসমাজের অবশ্যই হিতকারী। এবং সামাজিক বন্ধনই মানবসমাজের অন্যতম প্রধান সম্পদ। করোনা থেকে সাবধান হওয়ার নিদান হিসাবে, শারীরিক বা ভৌগলিক দূরত্ব বজায় রাখার পরিবর্তে, যেভাবে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখার কথা বলা হচ্ছে প্রশাসনিক স্তরে, তা কি সমাজের পক্ষে হিতকরী?


    ল্যাবরেটরি যখন ‘সমাজ’!


    আধুনিকতম যন্ত্রপাতিতে ঠাসা পরীক্ষাগারে কর্মরত বিজ্ঞানীরা যখন গবেষণার ভিত্তিতে কোনও সাবধানবাণী উচ্চারণ করেন, তখন তাকে গুরুত্ব দেওয়াই কর্তব্য। কিন্তু যখন বিজ্ঞানীদের দেওয়া সেই পরামর্শ সমাজে প্রয়োগ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়, তখন বিষম ফ্যাসাদে পড়তে হয়! ভারতবর্ষে বর্তমানে করোনা ভাইরাস নিয়ে 'সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং'-এর যে উদ্যোগ চলছে বিপুলভাবে, তা এক সুবিপুল সমস্যা সৃষ্টি করেছে !


    একদিকে, সংক্রামিত কিম্বা ভাইরাসের সম্ভাব্য 'বাহক' মানুষের সঙ্গে যদি ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব বজায় না থাকে, তবে যে কোনও মানুষেরই নতুনভাবে সংক্রামিত হবার সম্ভাবনা প্রবল। ঠিকই। কিন্তু, অপরদিকে, ভারতীয় সমাজের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং এখানে জনঘনত্বের হাল এমনই যে, বিজ্ঞানীদের সাবধানবাণী কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে গেলেও বিপর্যয় অনিবার্য!


    এ'দেশে কয়েক লক্ষ মানুষ (প্রকৃত সংখ্যা কেউ জানেনা) ঝুপড়িতে, বস্তিতে, ব্যারাকে, ফুটপাতে... বছরের পর বছর, প্রতিদিন এমন মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হ'ন যে, 'ডিস্ট্যান্সিং' শব্দটাই তাঁদের ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রহসনের নামান্তর! এঁরা বাসে-ট্রেনে-লরিতে... নিত্য যাতায়াত করেন কল্পনাতীত গাদাগাদির মধ্যে। বিভিন্ন রাজ্য 'লকডাউন' ঘোষণার পর, অর্থ-খাদ্য-কর্ম-ঘরহীন হাজার হাজার মানুষ শতশত মাইল পাড়ি দিতে শুরু করেছেন হাঁটাপথে! মরছেনও মাঝপথে!


    ১৩০ কোটির এমন দুর্ভাগা দেশে মানুষে-মানুষে দূরত্ব রক্ষা করার কথা বলা, আর বাস্তবে তা সফলভাবে প্রয়োগ করা, দু'য়ের মধ্যে আসমান-জমিন ফারাক। সামাজিক নীতি প্রয়োগের ল্যাবরেটরি 'মনুষ্যসমাজ', যন্ত্রপাতিতে সুসজ্জিত চার দেওয়ালের ঘর নয়।


    স্বাস্থ্যকর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানীয় জল, নির্মল বাতাস... ‘উন্নত’ দেশগুলোর এ'রকম পরিবেশে বেড়ে ওঠা মানুষজনের শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা সে'ভাবে গড়ে না ওঠার সম্ভাব্য কারণেই করোনা-বিপর্যয়ের তান্ডব সেখানে এত বেশি কি না, সে'বিষয়ে বিশদ গবেষণাও অবশ্যই নৃতত্ত্বের দায়িত্ব।


    প্রশাসন কি জনস্বার্থে সত্যিই সদা সক্রিয়?


    প্রশ্নটা জাগছে কঠোর বাস্তবের ভিত্তিতে।


    ১) যক্ষ্মা এবং কলেরা আমাদের দেশে বহুকাল ধরে অতিপরিচিত দুটো রোগ। যে রোগের নির্দিষ্ট ওষুধ এবং প্রতিষেধক মানুষের জানা আছে দীর্ঘকাল যাবৎ। অথচ, সেই রোগে লক্ষ লক্ষ মানুষ আজও মারা যান! এবং, মারা যান প্রধানত সমাজের নিম্নবর্গের মানুষ। প্রশাসন তাঁদের কাছে আজও ওষুধ পৌঁছে দিতে পারেনি, কিম্বা ওষুধ পৌঁছে দেবার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করেনি। এই বাবদ উচ্চনিনাদে লক্ষ-হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথাও শোনা যায়না! কেন?


    ২) পুলিশ সর্বদাই শাসকের মর্জি অনুযায়ী কাজ করে 'সার্ভিস রুল' মেনে! তাই শাসকের ইচ্ছানুযায়ী কখনও তারা 'ইনঅ্যাক্টিভ', কখনও 'প্রো-অ্যাক্টিভ' এই মুহূর্তে, করোনা বিষয়ে তাদের বিশেষ রকমের প্রো-অ্যাক্টিভ ভূমিকা আমাদের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ছে। ঝাড়ুদার-দিনমজুর-রিক্সাচালক-গৃহসেবক... ইত্যাদি, যাঁদের বহুজনই বছরের পর বছর বস্তির ঝুপড়ির ছােট্ট এক চিলতে ঘরে ৬-৭-৮ এমনকি ১০-জনও গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হন, তাঁদের হঠাৎ 'সোশ্যাল ডিন্ট্যান্সিং' শেখাতে গিয়ে, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে, পুলিশের নির্বিচার লাঠিপেটানোর ঘটনাও লক্ষণীয়। কেন?


    ৩) ঘিঞ্জি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দীর্ঘকাল থাকার ফলে, সমাজের নিম্নবর্গীয় মানুষজনের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই রোগপ্রতিরোধী ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি গড়ে ওঠে। তা'ছাড়া, নিত্যদিনের রুটি-রুজির প্রয়োজনে তাঁদের দৈনিক কাজে বেরোনোটাও বাধ্যতামূলক। প্রশাসন যদি কখনও এঁদের জন্য 'নৈমিত্তক ছুটি', 'অর্জিত ছুটি', 'বিশেষ ছুটি'... ইত্যাদি চালু করেন, তখনের কথা আলাদা।


    বর্তমানে, এইসব মানুষের বাধ্যতামূলক ছুটির অনুপস্থিতির কারণে, সমাজে সরাসরি ও গুরুত্বপূর্ণ যেসব নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তার দায় কাদের উপর বর্তাবে ?


    ‘শাসক’ বনাম ‘মানবসমাজ-এর দ্বন্দ্ব


    শাসকের 'ইচ্ছা' সমাজের উপর প্রায়শই, নৃতাত্ত্বিক বিচারে, বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে; সমস্যা-মুক্তির বদলে, মানবজীবন সম্মুখীন হয় শাসকসৃষ্ট নতুন সমস্যার ।


    সাম্প্রতিক ও ধারাবাহিক ঘটনাবলি নৃতাত্ত্বিকদের এই পর্যবেক্ষণকে, দুঃখজনকভাবে, আরও মান্যতা দিচ্ছে!


    ১) ভারতবর্ষে, কর্মহীনতা সর্বকালের মধ্যে ভয়ঙ্করতম রূপে দেখা দিয়েছে। শুধুমাত্র সাম্প্রতিক 'লকডাউন'-এর প্রভাবে, অন্তত ১৩ কোটি মানুষের চাকরি যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তথ্যাভিজ্ঞ মহল; তার মধ্যে বেশিরভাগই অসংগঠিত ক্ষেত্রের।


    ২) সঞ্চিত অর্থে সুদের হার কমিয়ে এমন স্তরে আনা হয়েছে যে, (এবং আরও কমানোর আশঙ্কা তীব্র) সুদের আয়ের উপর নির্ভরশীল বিপুল সংখ্যক বরিষ্ঠ নাগরিকের জীবনে উপস্থিত হয়েছে এক চরম অনিশ্চয়তা।


    ৩) পরিসংখ্যান বলছে, জনস্বার্থের প্রতি যথাযোগ্য নজর দেবার বদলে, জ্বালানির থেকেও সরকার বিপুল আয় করছে: প্রতি লিটার পেট্রোল থেকে সরকার অন্ততপক্ষে দশ টাকা মুনাফা করছে।


    ৪) করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধরত চিকিৎসা কর্মীদের কাছে যখন অবশ্য প্রয়োজনীয় 'পিপিই' মাস্ক-র যোগান অপ্রতুল, তখন রাষ্ট্রসঙ্ঘের ইউএনডিপি-র রিপোর্টে প্রকাশ পাচ্ছে, সার্বিয়াকে, দু'বারে কয়েকশো কোটি টাকার মাস্ক ও গ্লাভস বিক্রি করেছে ভারতবর্ষ !


    ৫) উত্তরপ্রদেশে, সরাসরি জনতার উপর জীবানুনাশক প্রয়োগের যে চিত্র সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা-ও এক জ্বলন্ত নজির।


    ৬) বিদেশ থেকে করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য বাহকরা কীভাবে দিনের পর দিন ভারতবর্ষে ঢোকার এবং বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পেলেন?


    জনস্বার্থের প্রতি সরকারের চরম উদাসীনতার অভিযোগ আরও শক্তিশালী হচ্ছে: যথেষ্ট সময় থাকা সত্ত্বেও, কোনও রকম পূর্বঘোষণা ও পূর্বপ্রস্ততি ছাড়াই, ব্যাপক 'লকডাউন'-এর হঠাৎ-সিদ্ধান্ত যে'ভাবে বিপর্যয় নামিয়ে এনেছে সমাজে! ব্যাপক মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, শিক্ষাগত, চিকিৎসাগত... সামগ্রিক ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রাই আজ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রীয় দিশাহীনতার ফলে। কয়েক কোটি মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে খাদ্যহীনতা, বস্ত্রহীনতা, কর্মহীনতা, গৃহহীনতার অভিশাপে! কৃষি ও শিল্প সহ, সমগ্র অর্থনৈতিক ভুবনও আজ সীমাহীন সমস্যার মুখোমুখি। বৃহত্তর মানবসমাজের জীবন নিয়ে শাসকবর্গের চরম উদাসীনতার বিপুল খেসারত দিতে হচ্ছে এখন!


    রাজনীতি, চিকিৎসা বিজ্ঞান ও নৃতত্ত্ব


    রাজনীতির কেন্দ্রীয় বিচার্য ‘শাসন ক্ষমতা’ চিকিৎসা বিজ্ঞানের চর্চা মূলত মানুষের রোগ ও তার প্রতিকার নিয়ে। নৃতত্ত্বের সার্বিক বিচার্য বিষয় 'সামাজিক মানুষ'।


    অনেক রাজনীতিবিদই চিকিৎসা বিজ্ঞানকে এবং নৃতত্ত্বকে রাজনীতির সংকীর্ণ স্বার্থে 'কাজে লাগানো'য় আগ্রহী। এবং অনেক নৃতাত্ত্বিকও তাঁদের আত্মস্বার্থে রাজনৈতিক দলের সেবাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। রাজনীতি, ক্ষেত্রবিশেষে 'ব্যক্তি মানুষ'-এর উপরও অতি গুরুত্ব আরোপ করে। বিপরীতে, নৃতত্ত্ব, সর্বদাই 'মানব গোষ্ঠী' নিয়ে চিন্তিত। করোনা নিয়ে প্রশাসনের 'সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং' কর্মসূচি তাই স্বাভাবিকভাবেই নৃতাত্ত্বিক গবেষণার বিষয়।


    চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণালব্ধ কোনও সিদ্ধান্ত যখন বৃহত্তর সামাজিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়, তার সুষ্ঠু সমাধান নৃতত্ত্বের গবেষণালব্ধ হোলিস্টিক বিচারেই সম্ভব। (যেমন, বর্তমান করোনা সংক্রমণ মোকাবিলার প্রশ্ন। রাজনীতির সংকীর্ণ কর্মসূচি এ'ক্ষেত্রে অচল।


    বর্তমান করোনা সংক্রমণের বিষয়টি মানবসমাজের সামনে এক জটিল সমস্যা হিসাবে হাজির হয়েছে! 'লকডাউন' করলে লক্ষ লক্ষ মানুষের রুটি-রুজি, দেশের কৃষি, শিল্প, অর্থনীতি... সবকিছুই ভয়ঙ্কর ক্ষতির সম্মুখীন; আবার লকডাউন না-করলে ১৩০-কোটি নাগরিকের দেশটির সামনে বিপুল সংক্রমণের বিপদ! অভূতপূর্ব সামাজিক অস্থিরতা ও বিপর্যয় যেন অবশ্যম্ভাবী! এই পরিস্থিতিতে, নৃতত্ত্বের হোলিস্টিক সহযোগিতা ছাড়া ভারতবর্ষ নামক রাষ্ট্রটির উদ্ধার পাবার আশা নেহাতই দুরাশা মাত্র। তবে 'রাষ্ট্র' যদি নীতিগতভাবে তার প্রতিটি নাগরিকের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষা.. ইত্যাদি যোগানের দায়িত্ব বাস্তবিকই পালন করে, তখনকার কথা আলাদা।


    শেষ কথা


    রোগের আর্থ-সামাজিক-পরিবেশিক-জৈবিক উৎসস্থল; মানব জীবনে রোগের প্রভাব; মানব-শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা; গোষ্ঠী জীবনে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের প্রভাব; সামাজিক স্তরের সাথে রোগের সম্পর্ক; অভিবাসী জীবনে মানুষের উপর প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের প্রভাব... সবকিছুই নৃতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের ও বিচারের আওতাভুক্ত। রাজনীতির সঙ্কীর্ণ পরিসর নয়, মানবসমাজের বৃহত্তর ও সার্বিক অঙ্গনই নৃতত্ত্বের বিচরণভূমি। রাজনীতির সংকীর্ণতা কিম্বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা অথবা অর্থনীতির বাধ্যবাধকতা, নৃতাত্ত্বিক ভুবনের চারপাশে এমন কোনও গণ্ডি দেওয়া নেই। সমাজজীবনে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কিম্বা সাম্প্রতিক 'লকডাউন' নির্দেশের প্রত্যক্ষ প্রভাব নিয়ে নৃতত্ত্বের উদ্বেগ তার সামাজিক দায়বদ্ধতারই অঙ্গ।


    এ'বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করাও নৃতত্ত্বের কর্তব্য ও দায়িত্ব।



    [শ্রমজীবী ভাষা-র এপ্রিল মাসের ডিজিটাল সংখ্যাটি পিডিএফ আকারে প্রকাশিত হয়েছে। সেখান থেকে বিভিন্ন লেখা ধীরে ধীরে এই ব্লগে প্রকাশিত হবে।]




    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৮ মে ২০২০ | ৩৩৯১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন