ছটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা আগেই জানিয়েছিলেন, তাঁরা নতুন নাগরিকত্ব আইন মানবেন না। আজ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরও একধাপ এগিয়ে সরকারি নির্দেশাবলী জারি করে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে এন-পি-আর এর কাজকর্মে স্থগিতাদেশ জানানো হল। এখনও নিশ্চিত নয়, কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে, নবান্ন থেকে ঘোষণা করা হবে, পশ্চিমবঙ্গে কোনো ডিটেনশন ক্যাম্প হবেনা।
বিক্ষোভের দ্বিতীয় দিনও জনসমুদ্র অব্যাহত। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং একটি বিরাট মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাতে জনসমাগম বিপুল। বিরোধী বামদের ডিটেনশন ক্যাম্প বিরোধী মিছিলেও বিপুল সাড়া। ধর্ণা চলছে দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে। হাজারো জনতা উপস্থিত সেখানে। উপস্থিত হয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। উত্তর-পূর্ব ভারতে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলন তীব্রতর। আসামে যদিও আন্দোলনের চেহারা বাঙালি বিদ্বেষী, কিন্তু তার সঙ্গে এখথাও ঠিক, শাসক দল বিজেপির কোনো উপস্থিতি আছে বলে টের পাওয়া যাচ্ছেনা।
বিহারে আরজেডি ২১ শে ডিসেম্বর বন্ধের ডাক দিয়েছে। বাম দলগুলি দিন এগিয়ে এনে বন্ধ উনিশ তারিখ করার আবেদন করেছে, যাতে বাংলার মহামিছিলের সঙ্গে একই দিনে করা যায়। কেরালার শাসক সিপিএম এবং বিরোধী কংগ্রেস একযোগে দিল্লির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছে। সেখানেও স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সামনে থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিজেপির অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছেনা।
ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ অগণিত। প্রতি মুহূর্তে নতুন একটি প্রতিষ্ঠানের খবর আসছে। আলাদা করে দেওয়া অসম্ভব। তবে বস্তুত ভারতবর্ষের প্রতিটি কোণে ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছে। এরই মধ্যে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায়, শোনা যাচ্ছে, এক আর-এস-এস কর্মী বিক্ষোভকারীদের হাতে ধরা পড়েছেন। তিনি মুসলমান সেজে ধ্বংসাত্মক কাজকর্মে উসকানি দিচ্ছিলেন। আর বহু জায়গায়ই এরকম চেষ্টা চলছে বলে আশঙ্কা। তবে এইটুকুর বাইরে বাংলায় বিজেপির আর তেমন অস্তিত্ব চোখে পড়ছেনা। তাদের বিখ্যাত আইটি সেল ক্রমশ অকার্যকর হয়ে যাবার সম্ভানায় অবশ্য তীব্র প্রচার চালাচ্ছে। ছড়ানো হচ্ছে ভুয়ো খবর, ভিডিও, উত্তেজক বাণী। তা নিয়ে প্রতিবাদও হচ্ছে। প্রবল জনবিক্ষোভে মেঘালয়ের রাজ্যপালকে ছুটিতে যেতে হয়েছে। তিনি উত্তর কোরিয়ায় ছুটি কাটাতে গেছেন কিনা অবশ্য জানা যায়নি।
এরই মধ্যে বাংলায় বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে। গতকাল, পনেরই ডিসেম্বর রবিবার, বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের ডাকে এনআরসি, সিএএ ( CAA) বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক সহমর্মী সংগঠন একত্রিত হয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্মিলিত আলোচনায় বার বার উঠে আসে ভারতীয় নাগরিকদের নাগরিকত্ব হারাবার আশঙ্কা, সরকারের প্রতিশোধপরায়ণ মনোবৃত্তি এবং সামনের দিনগুলোতে আন্দোলনের রূপরেখা কী হবে এইসব বিষয়। গুরুচণ্ডালি সহ, আওয়াজ, সহমন, যাদবপুরের মঙ্গল শোভাযাত্রা ও আরো অনেক সংগঠন অংশগ্রহণ করে এই সভায়। বিভিন্ন বিশিষ্ট বক্তা, ফুরফুরা শরিফের প্রতিনিধি সকলেই আবেদন জানান অহিংস উপায়ে এই গণ আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে এবং আন্দোলনকারীদের ওপর রাশ না আলগা করতে। এর মধ্যেই আইনি লড়াই শুরু হয়ে গেছে। সুপ্রিম কোর্টে পিআইএল করা হচ্ছে।
১৯শে ডিসেম্বর ৬০ টি সংগঠনের ডাকে দেশব্যাপী যে বিক্ষোভ আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তাতে সাড়া দিয়ে এনার্সি ও ক্যা বিরোধী এক মহামিছিল মৌলালির রামলীলা ময়দান থেকে আয়োজন করা হয়েছে। এই বিরাট গণমিছিলের আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। লক্ষাধিক জনসমাগমের আশা করা হচ্ছে ওইদিন।
বাঙালি লড়ছে। সংখ্যালঘুরা লড়ছে। গোটা ভারতের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ লড়ছে। আন্দোলন এত দ্রুত ছড়াচ্ছে, যে, খবর প্রতি মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে। এই আন্দোলন চলছে দেশের বিরাট অংশে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত করে দেবার পরেও। মিডিয়ার একাংশের ব্ল্যাক-আউট সত্ত্ব্বেও।
এই আন্দোলন জাতিসত্ত্বার আন্দোলন। আঞ্চলিকতাকে রক্ষার আন্দোলন। হিন্দি-হিন্দু-হিন্দিস্তানকে প্রতিহত করার আন্দোলন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে রক্ষার আন্দোলন। শক্তিশালী কেন্দ্রীয় একনায়কত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলন। বাঙালির জন্য এই আন্দোলন অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন। মিডিয়া ছাপুক না ছাপুক, আমরা খবর রাখছি। ১৯ তারিখ, পারলে, আসুন রামলীলা ময়দানে। আর খবর পেতে নজর রাখুন এই পাতায়।