এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • ২০১৯ ভোট পরবর্তী দু একটি বোঝাপড়া - এক আধটি প্রস্তাব

    শুভ্রনীল লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০২ জুলাই ২০১৯ | ৯৭৫ বার পঠিত
  • প্রগতিশীল সমস্ত প্রোপাগান্ডাকে পরাস্ত করে বিপুল জনমত নিয়ে পুনর্বার প্রধানমন্ত্রী হলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। ভেবেছিলাম তিনি হবেন না। দেশের কৃষকরা যখন একনাগাড়ে দশবছর ধরে প্রতিদিন পঁয়তাল্লিশ জন করে আত্মহত্যা করবার রাস্তাকে ছেড়ে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে শুরু করলেন, যখন দলিতরা তাদের উপর চলতে থাকা মনুবাদী-ব্রাহ্মন্যবাদী-হিন্দুত্ববাদী অত্যাচার সহ্য করবেন না ঠিক করে রাজনৈতিক ক্ষমতায় তাদের আসীন হওয়াকে আরো একবার জোর গলায় প্রচার করতে শুরু করলেন, যখন জানা গেল গত বিয়াল্লিশ বছরে বেকারত্বের হার মোদী জমানায় সবচেয়ে বেশি, যখন বোঝা গেল নোটবাতিল আর জিএসটি অসংগঠিত ক্ষেত্র আর পেটি কমোডিটি প্রোডাকশনের পেশা অধ্যুষিত গ্রামাঞ্চল আর ছোট শহরের জীবন এবং জীবিকা লাটে তুলে দিয়েছে, তখন শুধু আমিই নই, আমার মতন আরো অনেকেই ভেবেছিল মোদী আর আসছে না। অর্থনীতি আর সমাজজীবনের এই প্রেক্ষাপটে রাহুল গান্ধী – দরিদ্রতমদের বছরে বাহাত্তর হাজার করে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। তবুও মোদী এলেন। সপা-বসপা জোট সত্ত্বেও তিনি এলেন। বরং ভোট বাড়িয়েই এলেন। পরিসংখ্যান বলছে যেখানে ২০১৪-য় সারা দেশে বিজেপির ভোট ছিল ৩১.৩% , ২০১৯-এ তা বেড়ে হয়েছে ৩৭.৪% । অর্থাৎ ছ’শতাংশের বেশি। কিভাবে এটা সম্ভব হল? কি করে ভোট বেড়ে গেল? ইভিএমে কারচুপির বিষয়টা যদি আমরা বাদ দিই (কারণ সেক্ষেত্রে কোন আলোচনাই অবান্তর) তাহলে এবিষয়ে অনেকগুলি মত আছে। একটি হল মোদীর চেহারা। বহু মানুষ মনে করছেন দেশ চালাবার জন্য ওরকম বলিষ্ঠ কোন বিকল্প বিরোধীদের ছিল না। এছাড়া নানান অঙ্ক কষে নানান জোট করবার আগে থেকেই বিরোধীদের নেতা নেত্রীরা কে প্রধানমন্ত্রী হবে তা নিয়ে লাফাতে শুরু করেছিলেন। অন্ধ্র থেকে উত্তর প্রদেশ, মায় আমাদের বাংলা, বিরোধীদের এরকম আচরণ জনগণ নাকি পছন্দ করেনি। এছাড়া আরো একটি ব্যাপার আরএসএসের সহায়তা। আরএসএস নাকি মাসছয়েক আগে থেকেই তাদের সাংগাঠনিক কাঠামোকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছিল এবং তার ফলেই নাকি বহু অপরিচিত মুখও এবার জিতে গ্যাছেন। এগুলো ছাড়া আরো অনান্য কারণে যেতে গেলে রাজস্থানের কি রসায়ন, উত্তর প্রদেশের কি অঙ্ক সেসবে অমিত শাহ কি চাল খেলেছেন তার ডিটেলে যেতে হয়। সেগুলোতে না গিয়েও সাধারণভাবে এই কথা বলা যায় যে উপরোক্ত কারণগুলির প্রতিটাই কমবেশি সত্যি। অর্থাৎ ডিটেলড কোনো রসায়ন এই কারণগুলিকে নস্যাৎ করতে পারবে না। কিন্তু এগুলোর প্রতিটাই আংশিক চিত্রকে ধরছে। সাধারণীকৃত বিষয়টিকে সামনে আনছে না। এইসব কারণগুলির থেকে বিমূর্ত নির্যাসগুলি আমরা যদি নিই তাহলে দেখব এবারের নির্বাচনে মোদী বা বিজেপি বা আরএসএস - মোদীর মধ্যে দিয়ে এমন একটি ইমাজিনেশন দিয়েছে যা আসলে সাধারণীকৃত। যার মধ্যে রাজ্যের আঞ্চলিক পার্থক্য, জাতির বিচ্ছেদ এইগুলো অতিক্রম করে একটা সাধারণীকৃত বিমূর্ত ইমাজিনেশন আছে এবং সেটা ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মানুষকে, তার আপন কাঠামোয় আত্মীকৃত করে নেবার ক্ষমতাসম্পন্ন। এই ইমাজিনেশনটি ইন্ডিয়ান বা ভারতীয় সত্তার একটি ইমাজিনেশন এবং যার সমস্ত এসেন্সই হিন্দুধর্মীয়। ঘটনা হল ভারতে হিন্দু ধর্মের মানুষই বেশি থাকে। তারা প্রতিদিন, চলতে থাকা নানান ধর্মীয় বা সামাজিক সংস্কার পালন করে থাকে। তাই এই জনসমষ্টির মধ্যে বিজেপি কৃত ঐ হিন্দুধর্মীয় বা হিন্দু ধর্মের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ইন্ডিয়ান হবার পোটেনশিয়াল সবসময়ই হাজির থাকে। আশেপাশের অনান্য অবস্থা এবং নানান শর্তের উপর নির্ভর করে, সে প্রকটভাবে ওইটা হয়ে উঠবে কিনা। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গের কথা। (উত্তরপ্রদেশে সপা-বসপা’র ভোট কমে যাওয়া এবং বিজেপির ভোট বাড়া, বিহারে আরজেডির একটিও সিট না পাওয়া – প্রেক্ষাপট, রসায়ন আলাদা হলেও, এই সবই, আলাদা আলদা ভাবে একই প্রবণতাকে রিফ্লেক্ট করে)।

    পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তৃণমূলের প্রবল অগণতান্ত্রিক এবং অমার্জিত শাসনব্যবস্থায় অসন্তুষ্ট ছিল। দ্বিতীয়ত এদের বড় অংশ প্রত্যেক দিনের জীবনে হিন্দুধর্মীয় আচার-সংস্কার পালন করে। তাই ব্যাপক বেকারত্বের অন্যদিকে তৃণমূলের ভোট সুরক্ষিত রাখার ফর্মূলা হিসেবে নামকেওয়াস্তে ‘ইমাম’ আর ‘মোয়াজ্জেম’ ভাতা এই হিন্দু সত্তাকে বিজেপির খেলাধূলার অনুকূল করে দিয়েছে।

    শুধু বাম্ফ্রণ্ট নয় তৃণমূলেরও বড় অংশের হিন্দু ভোট চলে গেছে বিজেপিতে। শুধু বামফ্রণ্টের ১৯ শতাংশ ভোট ট্রান্সফার হলে ২০১৬-র নিরিখে বিজেপির ভোট হয় ২৯ শতাংশ। ২০১৯-এ আরো অতিরিক্ত ১১ শতাংশ এল কোথা থেকে? কংগ্রেসের ভোট কমেছে ৪ শতাংশ। যার অধিকাংশই সংখ্যালঘু ভোট যেটা গেছে তৃণমূলে। ফলত তৃণমূলের বড় অংশের ভোট বিজেপিতে এবং সিপিএমের, কম হলেও, একটা অংশের ভোট তৃণমূলে না গেলে তৃণমূলের ৪৫% আর বিজেপির ৪০%-র হিসেব মেলে না। (ধর্মের ভিত্তিতে এরকম শার্প পোলারাইজেশনের ভোট, গোটা রাজ্য জুড়ে পশ্চিমবঙ্গে আগে কখনো হয়েছে কিনা আমার জানা নেই)।

    একটু কান পাতলেই বোঝা যাবে, যতই তৃণমূলের অত্যাচারে এবং অন্য কোন শক্তিশালী বিকল্প না পেয়ে হোক না কেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যখন বিজেপিকে গিয়ে ভোটটা দিল সে রাষ্ট্রীয়-সামাজিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আসলে বিজেপির ঐ সাধারণীকৃত ইন্ডিয়ানের ধারণাটির ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করল।

    এই সাধারণীকৃত ধারণা অন্যান্য নানান শর্তের উপর নির্ভর করে তৈরি হয়, কিন্তু এর তৈরি হওয়া এবং সময়ে সময়ে তার প্রতি আত্মসমর্পণ করাই হল মনুষ্যজাতির বৈশিষ্ট্য। এর দুটো দিক। প্রথমটি হল এই যে, সমাজ আপাতভাবে বিচ্ছিন নানান ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের অজস্র কন্ট্রাডিকশনের জটিল সমাহার। কিন্তু সমাজে টুকরো টুকরো বিচ্ছিন্ন এইসব ক্ষেত্রের যেসব ডাইনামিক্স বা কন্ট্রাডিকশন, আলাদাভাবে সেগুলো একে অপরের থেকে স্বাধীন। অর্থাৎ একটি বিচ্ছিন্ন সামাজিক ক্ষেত্র অপর আরেকটির উপর নির্ভর করে না। কিন্তু মানুষের ধর্ম ক্রমাগত একটি সাধারণ বয়ানের সন্ধান করা। বহুর থেকে একের দিকে যাত্রা। তাই এই আপাত-বিচ্ছিন্ন ক্ষেত্রগুলির ইন্টারসেকশনের একটি জায়গায় সে ক্রমাগত যেতে চায়।

    দ্বিতীয়টি আধুনিক সভ্যতার সাথে সম্পর্কিত (প্রাক-আধুনিক যুগেও এটা প্রযোয্য হতে পারে তবে সীমিত ক্ষেত্রে)। এখানে একজন মানুষ কারোর ছেলে/মেয়ে, কারোর বোন/ভাই, কারোর সহকর্মী, কারোর প্রেমিক/প্রেমিকা, কারোর কমরেড, কারোর বন্ধু/বান্ধবী ইত্যাদি বহুকিছু। এই অসংখ্য পরিচয় বিচ্ছিন্নভাবে, একে অপরের সাথে সম্পর্কহীনভাবে বজায় রাখতে গেলে সে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় তার প্রয়োজন পড়ে একটি সাধারণ অর্গানাইজারের। যেটি তার এই বিভিন্ন পরিচয়কে আপাতভাবে এক সুরে বাঁধতে পারে। এবং নানাভাবে এই একটি অর্গানাইজারের আওতাতেই মানুষ থাকতে চায়। যাতে করে সে সুস্থভাবে সামাজিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। (এই অর্গানাইজারটি সর্বদাই পঞ্চেন্দ্রিয় দিয়ে সরাসরি প্রত্যক্ষ করবার অতীত হয়ে থাকে)।

    বলা বাহুল্য, প্রচন্ড সামাজিক-অর্থনৈতিক দুরবস্থাই আসলে বিজেপির এরকম উত্থানের কারণ। আমরা ভেবেছিলাম সে হারবে কারণ দেশ চালাতে গিয়ে সে মানুষের দুরবস্থার সমাধান করতে পারল না। কিন্তু সে জিতে গেল কারণ মানুষকে সে দিয়েছে এই দুরবস্থায় বেঁচে থাকার একটি আইডিয়া। মানুষও হয়তো তাই চায়। তাকে শুধু ভুলিয়ে রাখা হয় না সেও ভুলে থাকতে চায়। এইখানে মানুষকে ছোট মনে হয়। কিন্তু বিজেপি তাকে যতই বিকৃতভাবে ব্যবহার করুক না কেন, যখন দেখি এই প্রক্রিয়ায় লুক্কায়িত আছে এম্পেরিসিষ্ট বোঝাপড়া এবং তার দেওয়ালগুলিকে নস্যাৎ করে দেবার একটি সম্ভাবনা, তখন বিষয়টি সঞ্চার করে আগ্রহের।

    বিজেপির ‘ভারতীয় মানব’ নির্মাণের বিপরীতে আমাদের দেশের বুর্জোয়া লিবারেল, সরকারী বাম, অনগ্রসরদের প্রতিনিধি সকল পার্টিই মনে করেছিলেন ‘সংবিধান’ হবে একটি সমকক্ষ ভাবনা। ‘সংবিধান’ অর্থাৎ “আম্বেদকর এবং তাঁর রচনা করা আধুনিক, ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল, সামাজিক ন্যায় সুরক্ষিত করা রাষ্ট্রকাঠামোটিই শেষ হয়ে যাবে বিজেপির হাতে”, এই ছিল তাদের বয়ান এবং প্রধান বয়ান। অর্থাৎ এর মধ্যে দিয়ে যাকে উঁচুতে তুলে ধরা হয় তা হল আধুনিক ভারতের রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং তার ভাবনা। বলা বাহুল্য এই আইডিয়াটির গায়ে এখনো পর্যন্ত যতটা পরিমাণ আমদানি করা মালের গন্ধ লেগে আছে এবং ভারতের সিংহভাগ জনমানসে এটা এখন পর্যন্ত এতটাই অসম্পৃক্ত যে, এটার মধ্যে দিয়ে কখনই বিজেপির সাধারণীকৃত ভারতীয়ত্বের ভাবনাটিকে প্রতিহত করা যায় না। এর জন্য ভারতীয় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য এবং ভারতবর্ষে বিকৃত এবং অসম পুঁজিবাদী উন্নয়নের ইতিহাস একান্তভাবে দায়ী। বরং বলা যায়, এই সংবিধান যে বিষয়টিকে ভারতবাসীর মনে এবং আর্থ-রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জগদ্দল পাথরের মতন অপরিহার্য করে তুলেছে তা হল সংসদীয় গণতন্ত্র। এই বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়া প্রায় কোনভাবেই সম্ভব নয়।

    তাহলে এই অবস্থায় কি দিয়ে বিজেপির বয়ানকে প্রতিরোধ করা যায়? কমিউনিস্টরা কি কেইন্সীয় অর্থনীতি দিয়ে চাকরী আর শ্রমিকের মাইনে বাড়ানো বা পিকেটিয় প্রেসক্রিপশন ক্যাপিটালের শেয়ার কমানো আর এসবের মধ্যে দিয়ে অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসানের বয়ানই বলে যাবে? বলা বাহুল্য, সামাজিক ন্যায় আর সংবিধানের পাশে অর্থনীতির কর্মসূচী নিয়ে এই দাওয়াইটিকেই বুর্জোয়া-লিবারেলদের সঙ্গে সঙ্গে সরকারী বামেরাও সমস্বরে সমোচ্চারণ করে গ্যাছে। এবং এটি শুধু এই নির্বাচনেরই ঘটনা নয় বরং সুদূর অতীত থেকেই এই ট্রাডিশন সমানে চলে আসছে। অ-সরকারী বামেরাও এবিষয়ে মৌলিকভাবে বিকল্প কোন পদাঙ্ক অনুসরণ করেন বলে দেখা যায় না। সম্পূর্ণ লেফট-লিবারেল ডিস্কোর্সটাই এই কথাগুলোই আউড়ে যায়। অথচ কথাটা ছিল-“কমিউনিস্টরা তাদের মত এবং পথের কথা লুকিয়ে রাখতে ঘৃণা করে”। অবশ্য এর মানে আমি একথা বলতে চাইছি না যে কমিউনিস্টরা শ্রমিকের কর্মক্ষেত্রের সুরক্ষা বা মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য দাবী করবে না। এইসবই তারা করবে, কিন্তু তার চেয়েও বেশি করবে, তার চেয়েও বেশি বলবে তার নিজস্ব দর্শনের কথা, এই দুনিয়া নিয়ে তার বিশ্ববীক্ষাটির কথা। সেই কথাটি ‘শ্রমে’র। মার্ক্সীয় দর্শন, মার্ক্সীয় বিশ্ববীক্ষা বা মার্ক্সীয় অর্থনীতির গোড়ার কথা এই শ্রমের কথা। এই দুনিয়া চলে শ্রম দিয়ে। বস্তুর ভ্যালু আসে শ্রম থেকে। এখানে বিনিময় হয় যে সাধারণ মাধ্যমটির জন্য তা হল শ্রম। আগে মানুষ ভোঁদড় আর হরিণ শিকার করত। দুটোর শিকারে যতটা করে সময় লাগত সেই অনুপাতে সে দুটো শিকারকে ভাগ করে নিত। একজন করত অপরজনের জন্যে, অপরে করত আরেকের জন্যে। যখন ছুতোর টেবিল বানায় আর তাঁতি বানায় বস্ত্র, তাদেরও বিনিময় হয় ঐ কতটা শ্রম ব্যয় করা হল তার উওর ভিত্তি করে। কাপড় ছাড়া ছুতোরের চলে না, টেবিল ছাড়া তাঁতির। তাই শ্রমের মাধ্যমে তারা যখন নিজের প্রয়োজনটা বুঝে নিচ্ছে, একইসাথে সেইসময় অন্যের প্রয়োজনটিকেও মিটিয়ে দিচ্ছে। এ খাটছে ওর জন্য, ও খাটছে এর জন্য। আধুনিক পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রচন্ড জটিলতার কারণে আমাদের মনে হয়, হয়তো বা দ্রব্যের সঙ্গে পরিবর্তন ঘটছে দ্রব্যের। এখানে মানুষ শিকার হয় পণ্যরতির। শ্রমের ধারণা হয়ে যায় হাওয়া। কিন্তু আসলে, মূল সুরটি একই থাকে, এ খাটে ওর জন্য ও খাটে এর জন্য। দুনিয়া চলে শ্রম দিয়ে। মানুষ শ্রম করে সহযোগিতার জন্য। শুধুমাত্র এই শ্রমের প্রেক্ষিতই বুঝিয়ে দেয়, এই পৃথিবীতে বাঁচতে গেলে মানুষ, তা সে যতই নির্লিপ্তভাবে হোক না কেন, শেষত, মূল নির্যাসে – সহযোগী হতে বাধ্য।

    বস্তুত, সমাজ যেখানে বহু আপাত-বিচ্ছিন্ন জটিল ক্ষেত্রগুলির (উদা- পুঁজির সম্পর্ক এবং লিঙ্গবৈষম্যের সম্পর্ক, সাম্রাজ্যবাদের সম্পর্ক এবং জাত-জাতি বৈষম্যের সম্পর্ক) সমাহার সেখানে, ‘শ্রম’ই হল তাদের মধ্যে সাধারণীকৃত বিষয়। এর মধ্যে সম্ভাবনা আছে – আঞ্চলিকতা, জাত-জাতি, জাতীয়ত্ব এই সমস্ত কিছুকে অতিক্রম করে উন্নত একটি মনুষ্যত্বে পৌছনোর। বহুকে সে আত্মীকৃত করে নিতে পারে। আজকের সময়ে কমিউনিস্টদের কর্তব্য এই শ্রমের জয়গান গাওয়া। এই কথা সদর্পে ঘোষণা করা- এই দুনিয়া চালায় শ্রমজীবি মানুষেরা, এই দুনিয়া চলে শ্রম দিয়ে। এই নগর-সভ্যতা-জ্ঞান-তৃপ্তি সকলেরই পিছনে শ্রম। যার অঙ্গাঙ্গী আরেকটি দিক – সহযোগিতা এবং এই প্রক্রিয়া ছাড়া দুনিয়া একদিনও চলতে পারে না। বস্তুত আরএসএস নির্মিত ভারতবর্ষের আইডিয়া যেরকম আধা ভৌতিক আধা পার্থিব, পঞ্চেন্দ্রিয় দিয়ে তাকে অনুভব করা যায় না, বিমূর্ত শ্রমও সেরকম। কিন্তু তার চেয়েও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সাধারণীকৃত ধারণা। এবং তার চেয়েও বেশি বাস্তব। বা বলা যায় শ্রমজীবি মানুষের মনুষ্যেতর জীবন (অর্থাৎ শ্রেণীবিশ্লেষণ) এবং তা থেকে উত্তীর্ণ হবার লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। তাই বহুর থেকে একে উত্তীর্ণ হবার জন্য আরএসএসের যেটা ভারত, লিবারেলদের ‘সংবিধান’ সেখানে অকেজো এবং কমিউনিস্টদের ‘শ্রম’ অনেক বেশি সম্ভাবনাসম্পন্ন, কারণ দেশ কাল নির্বিশেষে এই বিষয়টি সর্বত্র বিরাজমান। (অবশ্য এরই মাঝে আরেকটি কথা মাথায় রেখে দেওয়া উচিত যে, বস্তুর ভ্যালু কেবল শ্রম থেকে আসে না, তা আসে প্রকৃতি থেকেও। এবং বিমূর্ত শ্রমকে মাপা যায় না। তাই যে যতটা শ্রম করবে সে ততটা পাবে এরকম কথা কমিউনিস্টরা বলে না। অবশ্যই সমানুপাতিক পাবে বা প্রয়োজন মতো পাবে। এর পরের বিষয়গুলিতে এই কথাটির প্রাসঙ্গিকতা অনুভূত হতে পারে)।

    কিন্তু এ’তো গেল বিষয়গত ধারণা। সাধারণীকৃত বিষয়। বিষয়ীর কি হবে? সে কি দেশ কাল আঞ্চলিকতা এই সমস্ত কিছু অতিক্রম করে সুপার-কিছু দিয়ে নিজেকে অর্গানাইজ করবে? ইণ্টারন্যাশনালিস্ট, চীনের চেয়ারম্যান ইত্যাদি কিছু? না। এটা করতে গেলে সে আবার ব্যর্থ হবে। এই সুপার-কিছু গুলো এতদূরের বস্ত এবং পঞ্চেন্দ্রিয়ের এত বেশি বাইরের এবং মনের মাধুরীর যোগানগুলো এখানে এত বেশি আমদানী করা যে বিষয়ীকে অর্গানাইজ করবার জন্য তা কোনভাবেই উপযোগী নয়। বিজেপির ‘ভারতীয়’-র কাছে তো নয়ই। এগুলো অবশ্যই থাকবে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি করে থাকবে দৈনন্দিন জীবনের আরো কাছাকাছি থাকা উপাদানগুলি। বিজেপির সমসত্ত্ব ভারতীয়ের উল্টোদিকে, ‘শ্রমে’র দর্শনের সাথে (যা কেবল জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ নয়) সম্পৃক্ত হবার সম্ভাবনা সম্পন্ন সহজসাধ্য কোন জীবনদর্শনই আজকের আধুনিক সভ্যতায় ঐ প্রয়োজনীয় বিষয়ীগত অর্গানাইজার-টির যোগান দিতে পারে। অন্যান্য রাজ্যের সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকায় এখানে শুধু পশ্চিমবঙ্গের কথাই বলব। পশ্চিমবঙ্গে এই বিষয়ীগত অর্গানাইজারের উপাদান আমাদের সন্ধান করতে হবে আমাদের বাঙালি জাতির মধ্যেই। এইখানটিতে একটি বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যেন বিষয়ী এই অর্গানাইজার কোনভাবেই শত্রুভাবসম্পন্ন কোন এক্সটার্নালিটির উপর ভিত্তি করে তৈরি না হয়। এক্ষেত্রে সমস্যা দ্বিবিধ। প্রথমত, অপরজাতিকে শত্রু মনে করে কোন জাতি ঋজুতার সঙ্গে দাঁড়াতে পারে না। দ্বিতীয়ত, যেহেতু এই ধারণাটি আবার একটি বিক্ষিপ্ত ধারণা হবে, সেজন্য ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে সাধারণীকরণের কোন ক্ষমতাই তার থাকবে না। ম্যাচ জিতে বিজেপি আবার বেরিয়ে চলে যাবে এবারের মত। বরং এই বিষয়ীর নির্মাণ হতে হবে, সাধারণীকৃত মনুষ্যত্বের দিকে যাত্রা করবার যে চেষ্টা বাঙালি অতীতে করেছিল তার উপর ভিত্তি করে। এক্ষেত্রে আমাদের সহায় হবেন রবীন্দ্রনাথ-মুকুন্দ দাস-নজ্রুল ইসলাম-ভূপেন্দ্রনাথ-শ্রীচৈতন্য এবং আরো অনেকে। এঁদের সাধারণীকৃত মনুষ্যত্বের দিকে যাত্রা সম্পৃক্ত হয়ে উঠবে ‘শ্রমে’র বিষয়গত ধারণার সঙ্গে। বিরোধ হয়তো কিছু জায়গায় বাধবে-কিন্তু সেখানেই আমাদের সৃষ্টিশীলতা এবং দৃষ্টিভঙ্গী। কোন সময়ে কোন সামাজিক ব্যবস্থায় তারা এসব করেছিলেন সেদিকে সংবেদনশীল থাকতে হবে আমাদের। তাহলেই মুকুন্দ দাসের “ছেড়ে দাও কাঁচের চুড়ি-বঙ্গনারী/ কভু হাতে আর প’রো না” – হয়ে উঠবে পণ্যপ্রীতির বিরুদ্ধে আমাদের সাধারণীকৃত বিষয়ীর নির্মাণে একটি উপাদান (এই গানটি বস্তুত সাম্রাজ্যবাদ, পণ্যপ্রীতি এবং ড্রেন অফ ওয়েলথ-এর বিরোধী একটি গান)। আমাদেরকেও অংশ নিতে হবে আজকের জীবনের দৈনন্দিনতায়, জীবনের কাছাকাছি থাকা এরকম সাধারণীকৃত মনুষ্যত্বের নির্মাণে। আমাদের প্রতিনিয়ত লক্ষ্য থাকবে – এই নির্মাণ কিভাবে বিশ্বজনীন ‘শ্রমে’র সাথে সম্পৃক্ত হয় বা তার পরিপূরক হয়ে ওঠে। একথা সত্যি যে এই সমগ্র প্রক্রিয়া, বিজেপি-আরএসএসের উগ্রতার মতন উগ্র নয়। এর শেষ স্নিগ্ধতায়। তাই, প্রবল অর্থনৈতিক দুরবস্থায় প্রচণ্ড উগ্রতার প্রয়োজনে কখনো হয়তো ম্যাচ জিতে যেতে পারে বিজেপি। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে যতদিন পর্যন্ত না ‘শ্রম’-এর (আর প্রকৃতির) একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত শ্রমজীবি মানুষের জয় করবার জন্য পড়ে আছে গোটা বিশ্ব। এইসময় পুঁজি আর তার দালাল বিজেপির বিরুদ্ধে ‘শ্রমে’র গান গাওয়া দলের লড়াইয়ে উগ্রতাও থাকবে। আর তার সমসত্ত্ব ‘ভারতীয়’-র বিকল্প হিসেবে থাকবে আঞ্চলিক সাধারণীকৃত মনুষ্যত্ব। এবিষয়টিতেও আলাদা করে অগ্নিযুগের বিপ্লবী বাঙালিরা আমাদের যথেষ্ট রসদ যুগিয়ে গেছেন।

    অবশ্য এত কিছু সত্ত্বেও বিজেপির তরল উগ্রতার কাছে আমরা হয়তো অতটা উগ্র না হতে পেরে হারতে পারি। তাতে ক্ষতি নেই। কারণ আমাদের বোঝাপড়া জিতবে বলে আমরা তার হয়ে দাঁড়াই না, তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করি সেজন্যই তার পক্ষ নিই। আর একারণেই বুর্জোয়া লিবারেলদের ফাঁদে পা দেওয়া আমাদের আর উচিত হবে না। আমরা তাদের সাথে কখনো-সখনো সমঝোতায় আসব, কিন্তু আমাদের টার্মসে। আমরা সেখানে দেখব – আমাদের বোঝাপড়া এর ফলে কতটা এগিয়ে গেল কতটা সুবিধা পেল। এই দৃষ্টিভঙ্গী দিয়েই আজকের সময়ে, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রেক্ষিতটিকে বিচার করতে হবে কমিউনিস্টদের। একে এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। এবং সেই অনুযায়ী কমিউনিস্টদের পুনর্বিন্যাস করতে হবে তাদের সাংগাঠনিক কাঠামো। বিজেপির জয়ে আমরা ভয় পেয়েছি। কারণ আরএসএস তার বিশ্বাসে অবিচল। আরএসএসকে আমরা ভয় পাই কারণ বিজেপি নামক বস্তুটি রাষ্ট্রব্যবস্থায় হাজির। সমাজের সামগ্রিক রূপান্তর এবং আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, যেখানে প্রতিদিনই চাই বা না চাই অংশ নিতে হয় এবং যা সমাজেরই অংশ – এই সম্পূর্ণকে নিয়ে ভাবনা চিন্তার দিন কমিউনিস্টদের এসেছে।

    শেষকালে আরেকটি কথা। বিজেপির জেতার পর বহু বামপন্থী, প্রগতিশীল – সেই পুরনো বুলি আউড়াতে শুরু করেছেন। ‘আমরা লড়াই করব, আমরা মানুষের পাশে থাকব, লড়াইয়ের মাঝে আমাদের লাল পতাকা থাকবে’। এই কথা গুলির মধ্যে কেবল এবং কেবল লড়াইয়ের সুরই প্রকট। এসব কথা অতি প্রাচীন। শুধু এসব করতে আমরা কমিউনিস্ট নই। শুধু লড়াই করে আমরা বাঁচতে চাই না। আমরা জয়ও করতে চাই। লড়াই আমরা করব, সেখানে লাল পতাকাও উড়বে। কিন্তু একথা আমরা যেন ভুলে না যাই, আমাদের সামনে এই দুনিয়া পড়ে আছে জয় করবার জন্য। লাল পতাকা শুধু লড়াইয়ের ময়দানে দেখবার স্বপ্নই আমরা দেখি না – তাকে লাল কেল্লায় ওড়াবার সংকল্পও আমরা করেছি।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০২ জুলাই ২০১৯ | ৯৭৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৯ ০৪:০০79644
  • লেখাটার শুরুটা ভালোই হয়েছিল, কিন্তু কিছুটা এগনোর পর একেবারে গরুর রচনা হয়ে গেল। শ্রম নিয়ে এতো না লিখে রিকার্ডোর কম্পারেটিভ অ্যাডভান্টেজ এর উল্লেখ করলে বোধায় আরও সংক্ষেপে ব্যপারটা বোঝানো যেত।

    আর এটাঃ "তাহলেই মুকুন্দ দাসের “ছেড়ে দাও কাঁচের চুড়ি-বঙ্গনারী/ কভু হাতে আর প’রো না” – হয়ে উঠবে পণ্যপ্রীতির বিরুদ্ধে আমাদের সাধারণীকৃত বিষয়ীর নির্মাণে একটি উপাদান (এই গানটি বস্তুত সাম্রাজ্যবাদ, পণ্যপ্রীতি এবং ড্রেন অফ ওয়েলথ-এর বিরোধী একটি গান)"

    সিরিয়াসলি? লেখক মনে করেন অ্যান্টি-কনসিউমারিসম একটা সলিউশান? তাহলে আর কিছু বলার নেই।
  • S | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৯ ০৬:১৭79645
  • লেখাটা পড়ে পৌরানিক গোঁড়া বামপন্থীদের কথা মনে পড়ে গেলো। তাঁদেরও বহু কথা আজকের মাপকাঠিতে রীতিমত রিগ্রেসিভ লাগে। লেখাটা একটু বেশি লম্বা, সে ঠিক আছে।

    এত জটিল আইডিয়া/কনসেপ্ট ভারতের মতন দেশে (প্রায় সব দেশেই) অচল। বিজেপি-আরেসেস তাদের রাইটউইঙ্গ আইডিওলজি লোকজনকে সেভাবে বোঝায়না। খুব গোদা গোদা কথায় বুঝিয়ে দেয় যে তাদের ভোট দিলে কি সুবিধে।

    এইবারের ভোটে একটা বড় ফ্যাক্টর ছিলো পুলওয়ামা-বালাকোট। উত্তর ভারতের বেশ কিছু বড় এলাকায় ভোটের আগে সারাদিন ধরে লোকাল চ্যানেলগুলো এইসব দেখিয়ে গেছে। লোকে সেসব গোগ্রাসে গিলেছে। আর সঙ্গে সঙ্গে মোদিই যে পাকিস্তানকে সিধে করতে পারে (এটা উত্তর ভারতীয়দের একটা বড় অ্যাজেন্ডা থ্যান্ক্স টু কঙ্গ্রেস), সেইটাও মাথায় ঢোকানো হয়েছে।

    এই দুনিয়া একটুও শ্রম দিয়ে চলেনা। এসি ঘরে বসে এইসব নিয়ে প্রবন্ধ লেখা অনেক সহজ। যিনি সারাদিন প্রচুর শ্রম দান করছেন, তিনিও বলবেন যে এই দুনিয়া চলে টাকা দিয়ে। দুটই প্রোডাকশানের ফ্যাক্টর। কিন্তু বিগত কয়েক শতাব্দীর ইতিহাস বলছে যে এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যায় শ্রমের দাম প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হারে বেড়েছে। তাছাড়া বিগত কয়েক দশকে প্রোডাকশানের আরেক ফ্যাক্টর টেকনলজি শ্রমকে প্রায় রিপ্লেসেবল করে ফেলেছে।

    ফলে শ্রম আর কমন মিনিমাম ডিনমিনেটর থাকছে না। যেটা থাকছে তা হলো সিটিজেনসিপ। আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক, এবং সেই নাগরিকত্বের ফলে আমাদের কিছু নুন্যতম অধিকার আছে। সেটাই লেফট লিবারালরা বলছে। কারণ তারা শ্রম যে রিপ্লেসেবল সেটা বুঝতে পেরেছে। যে প্রোডাকশানে কোনো বাইরের শ্রম লাগছে না, তাকে সোশাল ডেমোক্র্যাসির অঙ্গ হিসাবে কাজে লাগাতে গেলে শ্রমের কথাটি আর কাজে লাগছেনা।

    শেষে, তিনোদের ভোট তেমন কমেনি। ২০১৬র ৪৪.৯১% থেকে কমে ৪৩.২৮% হয়েছে। যেহেতু মোট ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে (আন্দাজ করছি) ফলে তিনোদের ভোটের খুব কিছু বড় অংশ বিজেপিতে গেছে বলে মনে হয়্না।
  • S | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৯ ০৬:১৮79649
  • চীনের এক্সপ্যানশনিস্ট পলিসি গ্লোবাল কমিউনিটির কাছে ক্লিয়ার অ্যান্ড প্রেজেন্ট ডেন্জার। অদ্ভুতভাবে বহু কমিউনিস্টরাই সেই পলিসি ডিফেন্ড করে আম্রিগার উদাহরণ দেখিয়ে।
  • S | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৯ ০৬:১৯79650
  • চীনের এক্সপ্যানশনিস্ট পলিসি গ্লোবাল কমিউনিটির কাছে ক্লিয়ার অ্যান্ড প্রেজেন্ট ডেন্জার। অদ্ভুতভাবে বহু কমিউনিস্টরাই সেই পলিসি ডিফেন্ড করে আম্রিগার উদাহরণ দেখিয়ে।
  • dc | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৯ ০৬:৩৭79646
  • পুলওয়ামা বড়ো ফ্যাক্টর ছিলো ঠিকই। তবে এই ফ্যাক্টরটার ইমপ্যাক্ট বিজেপি পুরোপুরি ফেলতে পেরেছে ওদের সংগঠনের জোরে। বিজেপি/আরেসেস যে বুথ লেভেল সংগঠন আর ভোট কনভার্টিং মেশিনারি বানিয়েছে তার ধারেকাছেও কংগ্রেস আসতে পারছেনা। ফলে বিরোধীদের ইস্যু থাকা সত্ত্বেও ভোট পাচ্ছেনা। এতো যে ভারত জুড়ে শ্রমিক মিছিল হলো, লালে লাল লাল সেলাম হলো, গান কবিতা সবই হলো, সেসবের ফল পাওয়া গেলোনা কারন বিরোধীদের সেই গ্রাসরুট সংগঠনই নেই। পবতে এককালে বামেদের যে ভোট মেশিনারি ছিল সেটা স্রেফ উবে গেছে। শ্রম টম নিয়ে এতো চিন্তাভাবনা করার সাথে সাথে যদি গ্রাসরুট লেভেলে সংগঠন তৈরি করার কাজে বিরোধীরা মন দিতো বা দেয়, তাহলেই আরও ভোট পেতো বা পাবে।
  • shramik | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৯ ০৭:০৩79647
  • পড়্লাম, দুনিয়ার মেহনতি মানুষ ভাই ভাই তো বুঝ্লাম। কিন্তু খটকা লাগে যে।
    চীন পি এল এ মিউজিয়ামে ১৯৬৯ সালে ঝেন্বাও দ্বীপে চীন - সোভিয়েত সন্ঘর্ষে কব্জা করা সোভিয়েত টি৬২ ট্যান্ক সাজিয়ে রাখে । অধুনা চীন ভিয়েতনামের থেকে সাউথ চায়্না কেড়ে নেয় ।
    কে কার শত্রু গুলিয়ে যায়
  • dc | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৯ ০৭:১৯79648
  • তার কারন বেশীর ভাগ সময়েই সরকার যারা চালায় তাদের স্বার্থ একরকম হয়, আর সাধারন মানুষের স্বার্থ আরেকরকম হয়। চীনের মেহনতি মানুষের স্বার্থের সাথে চীনের সরকারি লোকেদের তেমন কোন সম্পর্ক নেই, রাশিয়ারও তাই। ভারতের সাধারন মানুষ পাকিস্তানের সাধারন মানুষের সাথে যুদ্ধে করতে চায়না বা ভাইস ভার্সা, কিন্তু ভারতে যারা সরকারে আছে আর পাকিস্তানে যারা সরকারে আছে তারা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব জিইয়ে রাখতে চায় কারন এই পুলওয়ামার মতো ঘটনাগুলো পলিটিশিয়ানদের জিততে সাহায্য করে।
  • রঞ্জন | ***:*** | ০৪ জুলাই ২০১৯ ০১:১৮79651
  • এস এর সাথে সহমত হয়েঃ
    চিনের বর্তমান পার্টি এবং রাষ্ট্রপ্রধান নিজেকে আজীবন ক্ষমতায় রাখার বন্দোবস্ত সংবিধান সংশোধন করে পাকা করেছেন। এর মধ্যে সাম্যবাদী আদর্শ কোথায়? নর্থ কোরিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে আগের রাউন্ডের আলোচনা ঠিক ভাবে না হওয়ায় ডিপ্লোম্যাটের গর্দান নিয়েছে। এই সমাজ কি আমরা চাই ?
    অথচ এদের নিন্দে করা যাবে না ! বজরঙ্গবলীর ঝান্ডার মত একটুকরো লাল কাপড় টাঙিয়ে রেখেছে বলে ওদের কম্যুনিস্ট বলতে হবে?
    তাহলে অ্যার এস এসের সঙ্গে আম্মাদের তফাৎ কোথায়?
  • কল্লোল | ***:*** | ০৪ জুলাই ২০১৯ ০৩:৩৮79652
  • আমার এখন বেশ সন্দেহ হয়। এই যে কুকুর দিয়ে কাকাকে খাওয়ানো, পিরানহা পুকুরে গা চিরে ফেলে দেওয়া - এগুলোর সূত্র কি?
    এগুলো বহু পুরোনো সাইকোপলিটিকাল যুদ্ধ। একসময়ে (ঠান্ডা যুদ্ধের আমলে) রাশিয়ানরা নিষ্ঠুর, গোমড়া, আকাট এরকম চরিত্র জেমস বন্ডের ছবিতে প্রায়ই দেখা যেতো। র‌্যাম্বো আর ভিয়েৎনাম তো সকলেই জানে, র‌্যাম্বো আর বারবক কারমালের আফগানিস্তানের গপ্পোও অজানা নয়। এখন তো খারাপ লোকের মুসলিম চিহ্ন খুব প্রকট। কিমের নামে যা কিছু চলে, তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য।
    একজন এই বাজারে আমেরিকাকে সোজা ফুটিয়ে দিচ্ছে, এমন কি হুমকি দিচ্ছে - বেশী তেড়িবেড়ি করলে নিউক্লিয়ার বোম চাপিয়ে দেবো - বোতাম আমার আঙ্গুলের ডগায়। এ বেশ কৌতুহলোদ্দীপক। এরপরেও আর একটা ইরাক হচ্ছে না। ইরানের উপর যুদ্ধ চাপানোর কথা চলছে, আর মার্কিন রাষ্ট্রপতি পায়ে হেঁটে উত্তর কোরিয়ায় কিমের সাথে হাতঝাঁকাঝাঁকি কচ্ছে।
    মজার।
  • রঞ্জন | ***:*** | ০৪ জুলাই ২০১৯ ০৫:২১79653
  • @কল্লোল,
    ধরা যাক এসব প্রচার, গল্প। এবং নিঃসন্দেহে কিম একজন আম্রিকাবিরোধী বুকের পাটাওলা রাষ্ট্রনায়ক। সে তো সাদ্দামও ছিলেন। আয়াতুল্লা খোমেইনি এবং বর্তমান ইরানও। এক অর্থে প্রাক্তন সিয়াইএ অফিসার লাদেনও। আমেরিকার সব ব্যাপারে দাদাগিরির বিরোধের প্রশ্নে এদের সমর্থন নিশ্চয়ই করা উচিত।
    কিন্তু আমার প্রশ্ন এদের কাউকেই ডেমোক্র্যাটিক বলা যায় কি ? কম্যুনিস্ট তো দূরস্থান, এদের একনায়কতন্ত্রী পারিবারিক রাজতন্ত্রের মত ভ্যালুজকে কি একুশ শতকে আমরা রোল মডেল বলব? আমেরিকা বিরোধী স্ট্যান্ডের ইস্যুভিত্তিক সমর্থন করতে গিয়ে এদের, এমনকি চিনের পার্টিকে কি বলব?
    সাদ্দাম যে ভাবে দেশের ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স ও পলিতিক্যাল কালচারকে নিশ্চিহ্ন করেছিল সেটা কি ভোলা যায় ?
    শুধু ন্যাশনালিজম, এবং অ্যান্টি-আমেরিকানিজম একমাত্র মাপকাঠি হওয়া উচিত নয় ।
  • কল্লোল | ***:*** | ০৪ জুলাই ২০১৯ ০৫:৪৫79654
  • না, আমি এদের কাউকে কমিউনিস্ট বা গণতন্ত্রী এরকম কিছুই বলতে চাইছি না। আমার আপত্তি এই স্টেটমেন্টে - নর্থ কোরিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে আগের রাউন্ডের আলোচনা ঠিক ভাবে না হওয়ায় ডিপ্লোম্যাটের গর্দান নিয়েছে। - এটার সূত্র কি? পশ্চিমী গণমাধ্যম বা দঃ কোরিয় কোন সরকারি কি বেসরকারি সুত্র। এগুলো কতটা বিশ্বাসযোগ্য - সেটা নিয়েই আমার ধন্দ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন