আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত। চর্বিত চর্বণের বাইরে অন্যমাত্রার চিন্তা ভাল লাগল। পাঁচ খন্ডের কথামৃত এবং লীলাপ্রসঙ্গ পড়েই বলছি । গুরুর পাতাতেই এনিয়ে আগে গাল খেয়েছি, তাতে কি !
২০১৮ সালের লেখা দেখছি। সেই লেখায় মোটে দুটো মন্তব্য? আপনি প্রতিটি কথাই ঠিক বলেছেন। আর রামকৃষ্ণর মৃত্যুর পরেই কেবলমাত্র সারদাকে সংঘজননী বানানো হয় সম্ভবত গুরুবাদী ধারাটিকে টিকিয়ে রাখতেই। আপনাকে অনুরোধ, এই নিয়ে আরও বিস্তারিত লিখুন।
কোনো কিছু নিয়ে সামান্যতম পড়াশোনা না করেই কিভাবে পণ্ডিতি ফলাতে হয়, তা এইসব লেখা পড়ে বোঝা যায়।
রামকৃষ্ণ বিনোদিনীকে বলেছিলেন "চৈতন্য হোক।" "তুই গায়ে হলুদ মেখে বসে আছিস" মেগাসিরিয়াল মার্কা ডায়লগ দেননি! তৎকালীন যুগে অভিনেত্রীদের সবাই ঘৃণা করত। সেই সময় রামকৃষ্ণ তাঁদের অভিনয় দেখতে গেছেন, "মা আনন্দময়ী " বলে সম্বোধন করেছেন। এ এক অসামান্য সমাজবিপ্লব। উৎপল দত্ত গিরিশমানস প্রবন্ধে এই নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন।
আর লীলাপ্রসঙ্গ অত্যন্ত প্রামাণ্য গ্রন্থ। রামকৃষ্ণ ভক্তপরিমণ্ডলের বাইরে যাঁরা রামকৃষ্ণ নিয়ে গবেষণা করেছেন, তাঁরাও এই বইয়ের সাহায্য নিয়েছেন।
আর গরু সর্বত্রই গুরুবাদ দেখবে, এতে আর বিচিত্র কি?
লেখিকা বলেছেন, নিবেদিতার বেলুড় মঠে প্রবেশাধিকার ছিলনা। কোথায় পেলেন এই অসামান্য তথ্য? ১৯০৪ সালে বিবেকানন্দের জন্মতিথি অনুুষ্ঠানে নিবেদিতা সভাপতিত্ব করেন।
Complete works of Swami Vivekananda এর প্রথম খণ্ড নিবেদিতা সম্পাদনা করেন। 1908 সালে এটি প্রকাশিত হয়।
নিবেদিতার লেখা " My Master as I saw Him" উদ্বোধন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়। সমস্ত আর্থিক খরচ মিশন কর্তৃপক্ষ বহন করে।
নিবেদিতা মৃত্যুর ছদিন আগে তাঁর উইল করেন। আচার্য জগদীশচন্দ্রের তত্ত্বাবধানে এই উইল হয়। উঠলে নিবেদিতা বলেন, তাঁর সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি তাঁর মেয়েদের স্কুলের জন্য ব্যবহৃত হবে। এবং এর দায়িত্বে থাকবে রামকৃষ্ণ মিশনের ট্রাস্ট বোর্ড।
নিবেদিতা মঠে প্রবেশাধিকার ছিলনা!
লেখিকা বলেছেন নিবেদিতাকে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, বিবেকানন্দ কোনো প্রতিবাদ করেননি! লেখিকা বোধহয় জানেননা, বিদেশ প্রত্যাগত বিবেকানন্দকেও দক্ষিণেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষ ঢুকতে দেননি! 1897 সালে তিনি শেষবার মন্দিরে গিয়েছিলেন, এরপর কালাপানি ফেরত লোক ঢোকার প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ মন্দির গঙ্গাজলে পরিষ্কার করা হয় ও লিখিত বিবৃতি দেওয়া হয় বিদেশ প্রত্যাগত ব্যক্তির মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ!
নিবেদিতা ভারতে আসেন ১৮৯৮ সালে!
মূল বই না পড়ে চোথা মুখস্থ করলে এইরকম লেখা বের হয়!
আর লেখিকা অমরনাথ গুহায় বিবেকানন্দ ও নিবেদিতার কথোপকথন বলে যেটা চালিয়েছেন, সেটা স্রেফ প্রথম আলো থেকে টুুুকলি! আর প্রথম আলো উপন্যাস, কোনো গবেষণাগ্রন্থ নয়! এমনকি কথাটা ওখানেও ছিল না! না পড়ে টুুুকলে এইরকম হয়!
আর রামকৃষ্ণ -বিবেকানন্দ কিভাবে নারীকে অবরোধবাসিনী করে রেখেছেন, তার কোনো প্রমাণ পেলাম না। বরং রামকৃষ্ণ তাঁর শিষ্যা গৌরী মা কে বলেছিলেন এদেশের মেয়েদের জন্য কাজ করতে। গৌরী মা সেই আদেশ মেনে "সারদেশ্বরী আশ্রম" প্রতিষ্ঠা করেন, ১৮৯৪ সালে! বেলুড় মঠ তখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি!
রামকৃষ্ণ নারীকে অবরোধে থাকতে বলেছিলেন!
আর যাঁরা আধ্যাত্মিক জীবন গ্রহণ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই যৌনজীবনকে পরিত্যাগ করেছেন। তাঁদের মতে যৌনজীবন ও সাধনা একসঙ্গে চলেনা। বুদ্ধ, খ্রিস্ট, চৈতন্য সবাই সাংসারিক জীবন পরিত্যাগ করেছিলেন। মীরাবাই স্বামী, সংসার সব ছেড়ে বেড়িয়ে পড়েছিলেন। যাঁরা আধ্যাত্মিক জীবন গ্রহণ করেছেন, সবাই এক কাজই করেছেন!
চৈতন্যের এক শিষ্য ছোটো হরিদাস মহিলার কাছে ভিক্ষা নিয়েছিলেন। এই অপরাধে চৈতন্য তাঁকে পরিত্যাগ করেন। অন্যান্য ভক্তদেরঅনুরোধেও তিনি সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রাখেন। অনুতপ্ত হরিদাস বৃন্দাবনে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন করেন। অর্থাৎ রামকৃষ্ণের চেয়ে চৈতন্য আরো বেশি কঠোর!
প্রসঙ্গত সন্ন্যাস গ্রহণের পরে চৈতন্য মা ছাড়া আর কোনো নারীর কাছে ভিক্ষা নেননি, বাক্যালাপ করেননি!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সারদা মিশনে পুরুষরা যখন খুশি তখন যেতে পারেন না। আর গেলেও তাঁদের যাতায়াত অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত। সব জায়গায় তাঁদের প্রবেশাধিকার নেই!
তা এটাকে কি বলবেন মহাশয়া? পুরুষবিদ্বেষ? Genderbias?
আহা রামকেষ্টচাড্ডিটার আমাশা হয়ে গেছে গো। ছিরিত ছিরিত করে হেগে যাচ্চে। পুরুষদের হারেমেও ঢোকার অধিকার থাকে না। হারেম তৈরী যে মন নিয়ে করে তার থেকে এদের মন চিন্তা বিশেষ আলাদা নয়। মেয়ে মানে সংরক্ষিত ভোগ্যবস্তু।
নেহেরু, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বিনয় সরকার, হীরেন্দ্রনাথ মুখার্জী, উৎপল দত্ত- এঁরা রামকৃষ্ণ -বিবেকানন্দ নিয়ে তথ্যনিষ্ঠভাবে আলোচনা করেছেন। কোনটাই ছুঁয়েছেন বলে মনে হয় না!
ওয়াক থুঃ।