এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম

    Gautam Mistri লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ | ১৯২৪ বার পঠিত
  • একটি আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির অপব্যবহারের কথা

    একটা শিঙাড়ার জন্যেঃ 
    মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য বুকের ব্যথা নিয়ে শহরের সবচেয়ে নামকরা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি। ভালোয়-মন্দয় মিশিয়ে গড়িয়ে, হোঁচট খেয়ে সংসারটা চলছিল। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এই উটকো ঝামেলা। কর্তাবাবু শীতের সন্ধেয় শখ করে ফুলকপির শিঙাড়া খেয়ে কয়েকবার চোঁয়া ঢেকুর তুলেলেন। রাতের খাবারও ভাল করে খেতে পারেন নি। শুতে যাবার সময় একবার বমিও করলেন। রাত ২টো নাগাদ বুকে একটা চাপ অনুভব করলেন। গরম জল আর বাঙলির পেটের রোগের সর্বঘটের হরিতকী অম্বলের ওষুধ দু দফা খাওয়া হল। পাড়ার প্রবীণ ডাক্তার শুনে টেলিফোনেই নিদান দিলেন জিভের নীচে হৃদরোগের বড়ি রাখতে । আট থেকে আশি সবাই ঐ ওষুধটির নাম জানে। আজকাল সহজেই পাওয়া যায়, নিজের বাড়িতে না থাকলেও আশপাশের বাড়িতে পাওয়া যাবেই। মুশকিল হল, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুকের ব্যথাও বাড়তে লাগল। অগত্যা ট্যক্সি খোঁজা, হাসপাতাল ছোটা। 


    ব্যাকুল হৃদয়ে রাতের আঁধারে হাসপাতালে অভিসারঃ 
    টেলিভিশণ আর সিনেমায় যেমনটি দেখা য়ায, তেমনটি হচ্ছে না। সরকারি হোক বা কর্পোরেট হাসপাতাল, কোথাও কেউ ‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি’-র অ্যাকশনের ভঙ্গিতে পোজ দিয়ে বসে নেই। ঘুম থেকে তুলতে হচ্ছে নার্স আর রাতের একমাত্র ভাগ্যনিয়ন্ত্রক ‘হাউস স্টাফ’ বা জুনিয়ার ডাক্তারকে। অপরাধী মুখ করে নিবেদন করা হল সমস্যাটা। ভাল করে ব্যাথার কথাটাও বলার সময় দিলেন না ডাক্তারবাবু। মুখ ঢেকে গেল অক্সিজেনের মুখোশে, হাতে স্যালাইনের নল। বিপ বিপ বিপ… শব্দে চলমান হৃদস্পন্দনের রেখাচিত্রের যন্ত্র গুরুগম্ভীর আবহ সৃষ্টি করে তুলল। প্রযুক্তিসর্বস্ব আধুনিক চিকিৎসায় প্রশিক্ষিত নতুন প্রজন্মের চিকিৎসকদের রোগলক্ষণ বিশ্লেষণের ক্ষমতা ব্যবহার করার সুযোগ, প্রয়োজন আর উৎসাহ কম। অব্যবহারে এই দুর্লভ গুনটির অকালমৃত্যু হয়ে যায়। পশ্চিমী ধারা অনুকরণে এখন ব্যবহারিক চিকিৎসা প্রযুক্তিতে ব্যক্তি চিকিৎসকের রোগলক্ষণ বিশ্লেষণের ক্ষমতা অবহেলিত। চিকিৎসক প্রশিক্ষিত হন যন্ত্রচালক হিসাবে, যে কাজের জন্য মেধার প্রয়োজন সামান্য। সুস্পষ্ট নির্দেশিকা আছে, রোগ নির্ণয়ের জন্য হরেক রকমের ডাক্তারি পরীক্ষাও আছে। ‘ ফ্লো-চার্ট’ মেনে পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য চিকিৎসকের প্রয়োজন কেবল একটা রীতি মেনে চলায় পর্যবসিত হয়েছে। চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নার্স আর অ্যাম্বুলেন্স কর্মীদের ওপর নিয়ম করেই দেওয়া আছে পশ্চিমী দেশগুলোতে। আমাদের দেশে এটা বিধিসম্মত না হলেও ‘ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিটের’ পর্দার আড়ালে গভীর রাতে এই সিদ্ধান্তগুলো নার্স ও অন্য চিকিৎসা কর্মীদেরই নিতে হয়। বিধিসম্মত নয় বলে, এদের প্রশিক্ষিত করাও হয় না। যদিও এই দীনতা কোনো চিকিৎসা সংস্থা স্বীকার করবে না, ‘ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে’ কাজের অভিজ্ঞতা আছে, এমন চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের কাছে এটা থেকে যাচাই করে নেওয়া যেতে পারে।

    পর্দার পেছনের কর্মকান্ডঃ 
    বুকে ব্যথা হলে কী কী করতে হবে সেটার নির্দেশিকা, ফ্লো চার্ট ইত্যাদি আই. সি. সি. ইউ.র নোটিস বোর্ডে লটকানো থাকে। রাতের ডিউটিতে থাকা জুনিয়র ডাক্তারের কাজ সহজ হয়ে যায়। রোগীর সমস্যার কথা তার সেরিব্রাল কর্টেক্সে গুঁজে, মাথা চুলকে ভাবনা চিন্তা করে হাত পা গজায় না। বুকের ব্যথার ধরন-ধারন, ই. সি. জি. তরঙ্গের ওঠা নামা নিয়ে হ্যারিসন, ডেভিডসন আর ব্রনওআল্ড দের স্মরণ করে সময় নষ্ট করে কোন মূর্খ? চিকিৎসাবিজ্ঞান এখন বাঘের পিঠে সওয়ার। ক্লিনিকাল মেডিসিন মিউজিয়ামে সংরক্ষিত এক ধারণা মাত্র। নির্দেশিকার ক্রম অনুযায়ী চিকিৎসার সিদ্ধান্তগ্রহণ চিকিৎসকের বিশ্লেষণক্ষম চিন্তা প্রক্রিয়ার পরিবর্তে পূর্বনিধারিত যান্ত্রিক ফ্লো-চার্ট বা কর্মপদ্ধতি অনুকরনে পর্যবসিত হয়। মানবিক চিকিৎসা নয়, দামী ও পশ্চিমী দেশ থেকে আমদানি করা যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ে, কমে চিকিৎসকদের দায়দ্ধতা আর চিকিৎসিতের ভরসা । রোগী বিস্মৃত হয় তার এক মৌলিক অধিকারবোধের — সে কোন দিন জানতে পারে না, কোন রোগের জন্য সে চিকিৎসিত হচ্ছে । উৎকন্ঠার চাপে সেটা জানার তাগিদ হারিয়ে যায় । ডাক্তারবাবু রোগের টিকিটি ধরতে পারলেন কি না, সেটা আর জানা হয়ে ওঠে না। রোগী মারা গেলে সেটা জানার প্রবল আগ্রহ হয়, কিন্তু সেরে গেলেও এটা জানা খুব দরকার। প্রশিক্ষণকালে রোগনির্ণয় ও তার প্রথাগত পঞ্জীকরণের উপরে গুরুত্ব আরোপ করা হলেও , সেই শিক্ষা বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায়। উৎকন্ঠার এই চরম মুহূর্তে রোগী অথবা তার আত্নীয়স্বজন্দের ব্যস্ত রাখার হরেক রকমের উপায় আছে। ট্রলি ঠেলা, ওষুধ কিনে আনা, রক্ত জোগাড় করা এই সব কাজে ব্যস্ত মানুষগুলোর স্থির মস্তিস্কে ভাবার অবকাশ থাকে না । এদিকে রাত গড়িয়ে সকাল হয়, ক্লান্ত রোগী এক সময় ঘুমিয়েই পড়ে। হাসপাতালের সামনের ফুটপাথে রাতজাগা রোগীর বাড়ির কিছু লোক বাড়ি ফেরে, পরের শিফটের ডিউটির জন্য তৈরী হতে। এমন সময় প্রবীণ হৃদরোগের বিশেষজ্ঞ রাউন্ডে এসে জানান দেন হৃদযন্ত্রে ব্লক থাকতে পারে। বিজ্ঞাপনের দৌলতে ব্লক শব্দটির সঙ্গে আমরা অপরিচিত নই। তাই করোনারি আঞ্জিওগ্রাফি করার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে বিশেষ বেগ পেতে হয় না ডাক্তারবাবুদের। এইখানে আমাদের কয়েকটা প্রাকৃতিক আপাত সাদৃশ্য ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক আছে বলে ধরে নিতে হচ্ছে, যেটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। হাট ব্লক বলতে এক্ষেত্রে হৃৎপেশীর ধমনীতে কোলেস্টেরল ও আনুষঙ্গিক পদার্থ জমে রক্ত চলাচলের পথটা সরু হয়ে যাওয়ার ফলে যে রোগ হয় সেটা বোঝানো হচ্ছে। মাঝবয়সী ভারতীয়দের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব বেশ বেশী। বুকের ব্যথারও হরেক রকম কারণ আছে এবং বুকের ব্যথা প্রায়শই ঘটে। এই দুই ধরণের ঘটনার সমাপতন আকছার হয়, কার্য-কারণ সম্পর্ক ছাড়াই। কিন্তু বুকের ব্যথা হলেই হার্ট ব্লককে নিশানা করে চিকিৎসা প্রক্রিয়া শুরু করায় বিপদের শুরু। বলতে পারেন, পরীক্ষাই তো, ক্ষতি কী ? রোগ নেই এটা নির্ণীত হলে নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আর এক বৈশিষ্ট্যের কথা জেনে নিলে এমনটা আর কেউ ভাববেন না। তাল গাছে কাক বসলে, তাল পড়তেই পারে। তাকে কাকতালীয় বলা যেতে পারে, কিন্তু কাক বসার জন্যই তাল পড়েছে এমনটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে হৃৎপেশীর আংশিক সরু রক্তনালী নির্ণীত হতেই পারে, কিন্তু সেটাই বুকের ব্যাথার কারণ মনে করলে বড় ভুল হবে। এই কথাটা একটু বেখাপ্পা ঠেকাতে পারে। সে জন্যই চিন্তার পরিসরটা বাড়ানো প্রয়োজন । অ্যাঞ্জিওগ্রামে নির্নীত সরু রক্তনালী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাৎক্ষণিক বুকের ব্যথার কারণ নয়।

    হৃদপেশী রক্তনালীর সরু হয়ে যাওয়ার ফলাফল তিন ধরণের হতে পারেঃ                                                 

    
(১) রক্তনালী সরু হয়ে যাওয়ার মাত্রা অল্প (৬০ - ৭০) শতাংশের কমঃ 
    এরকম ক্ষেত্রে হৃদরোগের সূত্রপাত হয়েছে ভাবা যেতে পারে, তবে এই মাত্রার ব্লক স্থিতিশীল থাকলে সাধারণত বুকের ব্যথা সৃষ্টি করে না। এ ক্ষেত্রে আঞ্জিওগ্রাফি পরীক্ষা বুকের ব্যথার চিকিৎসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে সাহায্য করে না । অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বা বাইপাস অপারেশনের দ্বারা এই ব্লক নির্মূলের চেষ্টা অকাজের। এই সংক্রান্ত তথ্য বারবার জেনে, বিশ্বাস জন্মানোর মতো করে বুঝে নিতে হবে। সাধারণত এই অল্প মাত্রার ব্লকে হৃদরোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এমন ক্ষেত্রে ক্বচিৎ কদাচিৎ কঠিন পরিশ্রম করা কালীন হৃদপেশীর কাজের বোঝা বেড়ে যাবার জন্য অল্প সময়ের জন্য বুকে চাপ ধরার মতো এক ধরণের কষ্ট হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে আঞ্জিওপ্লাস্টি বা বাইপাস অপারেশন কোনো উপকারে আসে না, তা প্রমাণিত। অথচ এই অল্প মাত্রার ব্লকই অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি প্রযুক্তির অপপ্রয়োগের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ। অল্প মাত্রার ব্লকে আঞ্জিওপ্লাস্টি পদ্ধতি সঠিকভাবে প্রযুক্ত না হলেও, আঞ্জিওপ্লাস্টি প্রয়োগের অসারতা ধরা পড়ার উপায় নেই। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুকের ব্যথা যে কারণগুলোতে হয়, সেগুলো (হাড় ও বুকের খাঁচার মাংসপেশির ব্যথা, মানসিক উদবেগজনিত ব্যথা ইত্যাদি) সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এমনিতেই সেরে যায়। এই জন্য এই ধরণের রোগীরা আঞ্জিওপ্লাস্টি-প্রিয় হৃদরোগ বিশারদদের কাছে বড়ই প্রিয়। আঞ্জিওপ্লাস্টি প্রক্রিয়ার প্রথমে হৃদপেশীতে সরবরাহকারী সরু হয়ে যাওয়া রক্তনালীর অংশে একটি রক্তনালীর চেয়ে সরু একটি ফাঁপা নল (ক্যাথিটার) ঢুকিয়ে বাইরে থেকে উচ্চ চাপযুক্ত তরল পদার্থ পাঠিয়ে নলের মাথায় থাকা একটা বেলুন ফুলিয়ে রক্তনালীর সরু অংশটি মোটা করা হয়। এর পরে স্টেণ্ট নামে এক ধরনের খাঁচা ঐ মোটা করে দেওয়া রক্তনালীর অংশটিতে প্রতিস্থাপন করা হয়, যাতে মোটা করে দেওয়া অংশটি আবার সরু হয়ে না যায়। একটি জিনিস বেশ বোঝা যাচ্ছে , শুধু চাপ দিয়ে ব্লক সৃষ্ঠিকারী পদার্থগুলো সাময়িকভাবে সরিয়ে রক্তনালী মোটা করে রাখা সম্ভব, স্থিতিস্থাপকতার জন্য ও আনুষঙ্গিক কারণে ব্লক পুনরায় সৃষ্টি হওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা। একটা সমস্যা মেটাতে তার একটা সমাধান আমদানি করা হয় বটে, কিন্তু সেই সমাধানও আবার নতুন একটা সমস্যা তৈরি করে ফেলে। এটা জেনে নেওয়া যাক, প্রয়োজনে অথবা অপ্রয়োজনে আঞ্জিওপ্লাস্টি করার জন্য অনেক ক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে হার্টের রক্তনালীতে আগের থেকে বেশি মাত্রার ব্লক তৈরি হয়ে যায়। একটা প্রচ্ছন্ন ও নির্ভুল নয় এমন চিকিৎসার মাসুল হিসাবে ২০-৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে কেবল একবারই নয়, বারবার কিছুদিন পরপর সঠিক প্রয়োজনে আঞ্জিওপ্লাস্টি করার দরকার হয়ে পড়ে। 


    (২) রক্তনালী সরু হয়ে যাওয়ার মাত্রা বেশি (৭০-৮০ শতাংশের চেয়ে বেশি) কিন্তু সেটা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়নিঃ
    এরকম ক্ষেত্রে স্বল্প শারীরিক পরিশ্রম করলে হৃদপিণ্ডকে বেশি জোরে আর উচ্চহারে পাম্প করে কর্মরত মাংসপেশিতে বেশি করে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের জোগান দিতে হয়। এতে হৃদপিণ্ডের ওপর কাজের চাপ বাড়ে। তখন সেই অতিরিক্ত কাজের বাড়তি বোঝার জন্য হৃদপেশিকে অধিক পরিমাণে কাজ করতে হয় ও তার নিজের ব্যবহারের জন্য বেশি পরিমাণে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রয়োজন হয়। হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠের মধ্যে তাজা রক্ত থাকলেও সেই রক্ত হৃদপিণ্ড ব্যবহার করে না। হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনে আলাদা রক্ত বয়ে নিয়ে যায় তিনটি বিশেষ ধমনি (রক্তনালী) যার পোশাকি নাম করোনারি আর্টারি। রোগটা ঐ করোনারি আর্টারিতেই। শারীরিক পরিশ্রমের প্রয়োজনে অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহিত হওয়ার কালে সরু হয়ে যাওয়া রক্তনালী একটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এমন ক্ষেত্রে পরিশ্রম করার সময়, ঐ অতিরিক্ত অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের অভাবে হৃদপেশীতে ব্যথার উদ্রেক হয়। যদি এটাই রোগীর রোগের আত্মপ্রকাশের লক্ষণ হয় তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওষুধপত্রের মাধ্যমে রোগীর ব্যথার উপশম ও রোগের তীব্রতার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় । এমন ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে অ্যাঞ্জিওগ্রাম ও আঞ্জিওপ্লাস্টি করে অতিরিক্ত সুবিধা করা যায় না। উপযুক্ত ওষুধ ও স্বাস্থ্যকর জীবনশৈলী প্রয়োগ করে বিফল হলে তবেই অ্যাঞ্জিওগ্রাম ও তার পরে অবস্থা অনুযায়ী আঞ্জিওপ্লাস্টি অথবা বাইপাস অপারেশন করে রোগকষ্ট লাঘবের করার কথা ভাবা যেতে পারে।

    (৩) হার্ট এটাকঃ
    রক্তনালী সরু হয়ে যাওয়ার মাত্রার ওপর নয় বরং রক্তনালী সরু করার পদার্থের ভৌত অবস্থার ওপর নির্ভরশীল কারণে কখনও কখনও হৃৎপেশীর রক্তনালী ক্ষণিকের জন্য সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থাকে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া বলা হয়। কেবল রক্তনালী সরু হয়ে যাওয়ার মাত্রার ওপর হার্ট অ্যাটাক নির্ভরশীল নয়। সরু রক্তনালী হঠাৎ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবার কারণ হিসাবে রক্তনালীর মধ্যে জমে ওঠা কোলেস্টেরল ও আনুষঙ্গিক পদার্থের (প্লাক) ভৌত অবস্থা অনেকাংশে দায়ী। নরম, জৈব-রাসায়নিকভাবে অধিক সক্রিয় ও স্থিতিশীল নয় এমন প্লাক বিভিন্ন তাৎক্ষণিক কারণে স্থিতিশীলতা হারায় ও ফেটে যায়। এটাই বোমার সলতেতে আগুন লাগানোর সমতুল্য। এই রকমের কু-সময়ে একের পর এক প্রাকৃতিক ভাবে অনিয়ন্ত্রণযোগ্য জৈবিক ক্রিয়ার ফলে আংশিক বন্ধ হয়ে যাওয়া রক্তনালীর ওপরে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়ে রক্তনালীকে পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে দেয় । এর ফলে ঐ রক্তনালীর ওপর সম্পূর্নভাবে নির্ভরশীল হৃৎপেশীর রক্ত সরবরাহ পুরোপুরিভাবে স্তব্ধ হয়ে যায় ও হৃৎপেশীর মৃত্যু হয়। এই অবস্থা নির্ণয়ের জন্য একাধিক নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা আছে – ই সি জি আর রক্তের ট্রোপোনিন টি অথবা অপেক্ষাকৃত সস্তার ক্রিয়েটিনিন ফসফোকাইনেজ। অর্থাৎ বুকের ব্যথা মারাত্মক কিনা সেটা নির্ণয়ের জন্য রোগলক্ষণ সন্দেহজনক হলে উল্লেখিত পরীক্ষাগুলো যত শীঘ্র সম্ভব করে নিতে হবে । হার্ট অ্যাটাক নির্ণীত হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অস্থিতিশীল প্লাকের ওপরে জমে যাওয়া জমাট বাঁধা রক্তকে আঞ্জিওপ্লাস্টি অথবা ওষুধের মাধ্যমে সাফ করে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে আঞ্জিওগ্রাফি করে সস্কটজঙ্কভাবে সরু হয়ে যাওয়া রক্তনালীর অস্তিত্ব, অবস্থান, দৈর্ঘ্য ও জটিলতা নির্ণয় করে আঞ্জিওপ্লাস্টি করে ব্লক নির্মূল করে স্টেন্ট প্রতিস্থাপন করতে হবে। তবে করতে হবে তাড়াতাড়ি - ২ ঘণ্টার মধ্যে, নইলে কোনো লাভ নেই। জরুরি ভিত্তিতে এই পরিষেবা পাওয়া আমাদের দেশে দুর্লভ । যদি এটা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকে, তবে পরবর্তী শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা হল ওষুধের (স্ট্রেপ্টোকাইনেজ জাতীয় ইনজেকশন) দ্বারা জমাট বাঁধা রক্ত গলিয়ে দেওয়ার চিকিৎসা বা থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি । রোগীর ভৌগোলিক অবস্থিতি , সজ্ঞান ইচ্ছা ও আথিক সঙ্গতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হয়। পরিসংখ্যান বলে, বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালের আপ্তকালীন (ইমারজেন্সি) বিভাগের দ্বারস্থ রুগীদের মধ্যে এই ধরনের রুগীর সংখ্যা শতকরা ১.৫ শতাংশ (Klinkman MS, Episode of care for chest pain: a preliminary report from MIRNET, Michigan Research Network: J Fam Pract 1994: 38(4):345)। একটা নির্ধারিত সময়ে ( বুকে ব্যথা শুরু হওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে) আঞ্জিওপ্লাস্টি করার সুবিধা আছে এমন হাসপাতালে যত শীঘ্র সম্ভব অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে আঞ্জিওপ্লাস্টি করতে পারল রোগীকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়া গেল বলে মনে করা হয়। যে কথাটা সাধারণ মানুষের মাথায় চট করে না আসাই স্বাভাবিক, সেটা হোল অ্যাঞ্জিওগ্রাম এই ক্ষেত্রে রোগনির্ণয় করার জন্য ব্যবহৃত হয় না। হৃদপেশির ধমনিতে যে ব্লক আছে সেটা আঞ্জিওগ্রাম করার আগেই বুঝে নিতে হয়, আর সেটা মোটেই কঠিন নয়। ব্লকের অস্তিত্ব অন্য প্রক্রিয়ার জেনে নিতে ও নিশ্চিন্ত হতে হয়। আঞ্জিওপ্লাস্টি করার প্রয়োজন উপস্থিত হলে ব্লকের সংখ্যা, অবস্থান, দৈর্ঘ্য, জটিলতা ইত্যাদি বুঝে নেবার ও চিকিৎসার সঠিক পরিকল্পনা করার জন্য আঞ্জিওপ্লাস্টি করার আগে অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে নিতে হয়। বিদেশের পরিসংখ্যান বলছে , বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালের আপ্তকালীন পরিষেবার দ্বারস্থ হওয়া রোগীদের ৮০ শতাংশের বুকে ব্যথার কারণ হৃদরোগ নয় ( হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ বা অম্বলের রোগ জনিত)। কুড়ি শতাংশ ক্ষেত্রে হৃদরোগজনিত কারণে বুকে ব্যথা হয় । এরমধ্যে স্থিতিশীল ইস্কিমিয়াই (ক্রনিক স্টেবল অ্যানজাইনা) বেশি। ঐ সমীক্ষা অনুযায়ী হৃদরোগের কারণে যে বুকের ব্যথা তাদের মধ্যে সত্যিকারের প্রাণের আশঙ্কা আছে এমন হৃদরোগ (acute coronary syndrome, unstable angina, acute myocardial infarction) মাত্র ৬ শতাংশ। অর্থাৎ বিধিসম্মতভাবে চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করলে অধিকাংশ বুকের ব্যথার প্রশমন করার জন্য হৃদরোগের চিকিৎসা প্রয়োগের দরকার নেই। করোনারি আঞ্জিওগ্রাফি আর আঞ্জিওপ্লাস্টির প্রয়োজন আরও কম। কর্পোরেট হাসপাতালের মুনাফার চাপ আর যন্ত্রনির্ভর চিকিৎসার সাঁড়াশি আক্রমণে ঐ ৬০-৮০ শতাংশ বুকের ব্যথার রোগী (যাদের হৃদয় স্বাভাবিক আর রোগনির্ণয় করতে করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করার দরকার নেই) ছাড় পান না। কেবল বুকের ব্যথার বৈশিষ্ট্য, তার হৃদরোগের সম্ভাবনার ঝুঁকি ও প্রাথমিক পরীক্ষার (ইসিজি ও রক্ত পরীক্ষা) দ্বারা ৮০ শতাংশ নিশ্চয়তা নিয়ে হৃদরোগের সম্ভাবনা নির্মূল করা যায় । অত্যাধুনিক যন্ত্রে সজ্জিত আধুনিক কর্পোরেট চিকিৎসা পরিষেবার ধ্বজাধারীরা বলবেন, হোক না বিরল, ঐ অ্যাঞ্জিওগ্রাম পরীক্ষার দ্বারা সরু রক্তনালী আছে কি না, সেটা নিশ্চিত করে নিলে ক্ষতি কী? ক্ষতি প্রচুর । আর্থিক ক্ষতি, পরিষেবা অপব্যবহারের ক্ষতি, পরীক্ষার ঝুঁকিজনিত ক্ষতি আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হৃদপেশীর রক্তনালীর ব্লক ধরা পড়লে। কারণ, তখন বুকের ব্যথায় আক্রান্ত ব্যাক্তির অজ্ঞতার ও উৎকণ্ঠার সুযোগের আঞ্জিওপ্লাস্টির অসৎ ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই রকম সময়ে আঞ্জিওপ্লাস্টি বা বাইপাস অপারেশন চিকিৎসা প্রযুক্তি বিক্রি করতে কু-চিকিৎসার সওদাগরদের বেগ পেতে হয় না। একটা ছোট জটিল বিষয় অন্তত একবার বুঝে নিতে হবে। কোনোরকম রোগ- লক্ষণ ছাড়াই হৃদপেশীর রক্তনালীতে স্বল্পবিস্তর কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ এথেরোস্কেরোটিক ‘প্লাক’ জমে রক্তনালীকে আংশিকভাবে সরু করে দিতে পারে। যদিও এটাকে রোগবিহীন অবস্থা বলা যাবে না, রোগের এই অবস্থায় এখনও পর্যন্ত উপলদ্ধ নবতম প্রযুক্তির দ্বারা ‘প্লাক’ টিকে বেলুন দিয়ে ফুলিয়ে চেপেচুপে আর স্টেন্ট-এর খাঁচা দিয়ে ঠেকা দিয়ে রক্তনালীকে কিছুটা (কারণ সম্পূর্ণভাবে আগের মতো করে সম্ভব নয়) মোটা করে দিলে রোগের সার্বিক নিরাময় হবে না। বরং কেবল এই খোঁচাখুঁচির ফলে পরবর্তীকালে আরও প্লাক জমে রক্তনালীর সরু হয়ে যাওয়টা ত্বরান্বিত করে দিতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বুকের ব্যথার কারণ ঐ অল্পমাত্রার সরু রক্তনালী নয়। অপরদিকে অসঙ্গত কারণে আঞ্জিওপ্লাস্টি করার ফলে একটি সুপ্ত (সাবক্লিনিক্যাল) রোগকে খুঁচিয়ে রোগের অগ্রগতিকে বাড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা উপস্থিত হয়। এই কুচিকিৎসার একটা সুবিধা (কুচিকিৎসদের কাছে), আঞ্জিওপ্লাস্টি অসফল হলেও ছলচাতুরিটা ধরা পড়ে না। কারণ, এইসব ক্ষেত্রে বুকের ব্যথার কারণ সরু হৃৎপেশীর রক্তনালী নয়। এমন ক্ষেত্রে বুকের ব্যথা অন্য কারণে, যেটা নিজের থেকেই লাঘব হয়ে যায়। 
    ওপরের অবস্থাটা তবুও সহজবোধ্য।

    কিন্তু কোনো কোনো সময় সরু হৃৎপেশীর রক্তনালীই বুকের ব্যথার কারণ। এইরকম অবস্থাটা আবার দুই ধরনের হতে পারে। 

    (ক) অস্থিতিশীল এথেরোস্কেরোটিক ‘প্লাক’ ফেটে গিয়ে জমাট বাঁধা রক্তের পিণ্ড আংশিকভাবে সরু রক্তনালীকে পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে দিয়েছেঃ
     
    এই ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলা হয়। এক্ষেত্রে সর্বোত্তম চিকিৎসা হল ওষুধের সঙ্গে সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে আঞ্জিওপ্লাস্টি ও স্টেন্ট প্রতিস্থাপন করা (primary angioplasty)। বুকের ব্যাথা শুরু হবার দু ঘণ্টার মধ্যে এটা করার ব্যবস্থা না থাকলে এর পরিবর্তে জমাটবাঁধা রক্ত গলিয়ে দেওয়ার চিকিৎসা বা ‘থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি’ শ্রেয়। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, দু ঘণ্টার পরে আঞ্জিওপ্লাস্টি করার চেয়েও তাৎক্ষণিক ‘থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি’ বেশি কাজের। এর প্রয়োজন আছে কি না, সেটা জানার জন্য পরীক্ষা হিসাবে অ্যাঞ্জিওগ্রাম করার দরকার নেই। বুকের ব্যাথার ধরণ, ইসিজি এবং চটজলদি ফল পাওয়া যায় ও যত্রতত্র জটিল যন্ত্র ছাড়াই করে ফেলা যায় (আঙুলে ছুঁচ ফুটিয়ে এক ফোঁটা রক্ত নিয়ে ট্রোপোনিন- ‘টি’, সংক্ষেপে ‘ ট্রপ-টি’ ) এমন রক্ত পরীক্ষা করে নির্ভরযোগ্যভাবে হৃদরোগের এই রোগের অস্তিত্বের উপস্থিতি নির্ণয় অথবা নির্মূল করতে পারে।

    (খ) হৃৎপেশীর রক্তনালী ( করোনারি আর্টারি) যথেষ্ট সরু ও সেটাই বুকে ব্যাথার কারণঃ 
    এমন ধরনের রোগীদের মধ্য থেকে সঠিকভাবে নির্বাচিত একটা বড় অংশকে সঠিক ওষুধের দ্বারা সর্বোৎকৃষ্ট রোগনিয়ন্ত্রিত জীবন উপহার দেওয়া সম্ভব। মনে রাখতে হবে, আঞ্জিওপ্লাস্টি র দ্বারা রোগ নির্মূল সম্ভব নয়। এমন ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার জন্য রোগীর বৈশিষ্ট্যের আরও কিছু কথা মাথায় রাখতে হয়। এই ধরনের রোগের চিকিৎসার একটা বিতর্কিত বিষয় আছে। যেটা বিতর্কের ঊধের্ব, সেটা হল, ওষুধ ও স্বাস্থ্যকর জীবনশৈলীর মাধ্যমে বুকের ব্যথা ও অন্যান্য রোগকষ্ট নিয়ন্ত্রণ করা গেলে আঞ্জিওপ্লাস্টি অপ্রয়োজনীয়। আর আঞ্জিওপ্লাস্টি করার পরিকল্পনা না থাকলে, অ্যাঞ্জিওগ্রাম করাও অর্থহীন। আর একবার স্মরণ করে নিই, রোগনির্নয়ের জন্য রক্তনালীর ব্লকের অস্তিত্ব প্রদর্শনের প্রয়োজন নেই। আঞ্জিওপ্লাস্টি বা বাইপাস অপরেশনের বিস্তারিত কৌশল ঠিক করার জন্যই কেবল অ্যাঞ্জিওগ্রাম করা উচিত। অনেক গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা প্রযুক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত একাধিক ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত প্রভাববিহীন (unbiased) ও কার্যকারণ সম্পর্ক মুক্ত (not just by chance), নিরপেক্ষ, সমমাত্রার রোগপরিবেশে তার সফলতা প্রদর্শনের (randomized multicentric clinical trials) ওপর নির্ভরশীল । দুর্ভাগ্যক্রমে এই খরচসাপেক্ষ গবেষণার দায়িত্ব এখন রাষ্ট্র বহন করে না । বহুজাতিক ব্যবসায়ীদের মুনাফা চালিত চিকিৎসা গবেষণাই এখন একমাত্র প্রমাণ নির্ভর বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার দিশারি । সেই কারণে স্বাস্থ্যকর জীবনশৈলী সংক্রান্ত চিকিৎসা গবেষণা অবহেলিত হয়, প্রাধান্য পায় জটিল থেকে জটিলতর নতুন নতুন ধরনের প্রযুক্তির (স্টেণ্ট) সফলতা প্রদর্শনের চেষ্টা। এটা আমাদের সৌভাগ্য (!), এখনও কোনো উচ্চমূল্যের সফল আঞ্জিওপ্লাস্টি আর স্টেণ্ট প্রযুক্তি আমাদের অর্থনৈতিকভাবে বিদ্রুপ করতে পারেনি । যদি সেটা কোনোদিন সম্ভব হয়, তখন এই প্রতিবেদনটা পুনর্লিখন করতে হবে। রোগ প্রতিরোধের ওপর ভরসা করতে হবে। এই ধরনের গবেষণার ফলাফল একত্র করে যে বিজ্ঞানসম্মত নির্দেশিকা চালু আছে সেটা জটিল। আঞ্জিওপ্লাস্টি ও বাইপাস অপারেশনের সাফল্য হৃদপেশীর রক্তনালীর ব্লকের মাত্রা, সংখ্যা, অবস্থান, হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচনের ক্ষমতা, বয়স, রক্তের সুগার ইত্যাদি হরেক রকমের নির্ণায়কের ওপর নির্ভরশীল। এই বিষয়ে আমলাতন্ত্রের সঙ্গে চিকিৎসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার একটা মিল আছে। দুটোই জটিল ও সরলীকরণের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে না। আমাদের এ পোড়া দেশে ভালমতন গবেষণাও হয় না। শহরকেন্দ্রিক যৎকিঞ্চিত গুটিকয় পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে, যে গুলোর মতে আমাদের দেশে অপ্রয়োজনে প্রায় ৫৫ শতাংশ ক্ষেত্রে আঞ্জিওপ্লাস্টি ও বাইপাস অপারেশন করা হয় (টাইমস অব ইন্ডিয়া, মুম্বাই, ৪জানুয়ারি, ২০১৫)। এটাকে কেবল অজ্ঞানতা ভাবলে ভুল হবে, এটা দুর্নীতিগ্রস্থ চিকিৎসা পরিষেবার এক ক্ষুদ্র ঝলক মাত্র।                
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ | ১৯২৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Gautam Mistri | ***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৭58774
  • লেখাতি পোরে অর্থনইতিক ও হ্রিদয়-দুদিক থেকেই দুর্বল হোয়েও আমার হ্রিত্পিন্দের জোর বেরে গেলো , লেখক-কে প্রান উজার কোরে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি /
  • avi | ***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৫:০০58775
  • খুব ভালো লাগলো।
  • Ekak | ***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৫:১০58776
  • কাজের লেখা । ভালো লেখা ।
  • Du | ***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৬:৩৩58777
  • লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
  • Gautam Mistri | ***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ১০:০৬58773
  • নিবন্ধটি পূর্বে উৎস মানুষ পত্রিকায় প্রকাশিত।
  • Prativa Sarker | ***:*** | ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৬:১২58778
  • অনেক প্রয়োজনীয় কথা জানা হলো।
  • দেবব্রত | ***:*** | ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:০৪58779
  • অনেক দিন পরে লিখলেন গৌতম দা।যথারীতি ভালো লাগল।বেলুড় শ্রমজীবী তে নবারুন বলছিলেন যে একই স্টেন্ট একই ডাক্তার অন্যত্র ১,৬৫,০০০/- এ লাগাচ্ছেন আর শ্রমজীবী তে ৬৫০০০/-
  • Soumyadeep Bandyopadhyay | ***:*** | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ১০:৩৫58780
  • খুব উপযোগী পোস্ট ! ধন্যবাদ
  • SS | ***:*** | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৬:০৪58781
  • লেখাটি খুবই উপযোগী। কিন্তু ট্রোপোনিন টেস্ট নিয়ে একটা কথা। শুধুমাত্র ট্রোপোনিনের লেভেল টেস্ট করে এম আই ডিটেক্ট করা বোধ হয় খুব একটা নির্ভরযোগ্য নয়। ট্রোপোনিন অ্যাসের সেনেসিটিভিটি আর স্পেসিফিসিটি নিয়ে অনেক সমস্যা আছে। টেস্ট কখন করা হচ্ছে সেটাও ইম্পর্ট্যান্ট। আর ল্যাব বা হসপিটাল ডেভেলপড টেস্ট হলে সেটার কতটা কোয়ালিটি কন্ট্রোল করা হয় সেটা বিচার্য্য। ট্রোপোনিনের সাথে অন্যান্য কার্ডিয়াক বায়োমার্কার, ইসিজি বা অন্য ইমেজিং টেস্ট ও করা উচিৎ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন