

ছবি: রমিত
দুরি’র কাহিনিঃ
.......আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১। চাঁদের আলোয় আলোকিত রাত্রির অন্ধকার; পৃথিবীর এই প্রত্যন্ত এলাকা এখন বরফে ঢাকা।........আমি কাশ্মীরের কুপওয়াড়া জেলার কুনান গ্রামে থাকি। এটা আমার গ্রাম। এখানে আমার জন্ম হয়েছে।.....আমি এক তরুণী, হয়তো তোমার মতো। আমি তারা দেখতে ভালোবাসি এবং স্বপ্ন দেখতে। সাধারণত এই সময় আমি আমার বোন ফতিমাকে জড়িয়ে শুয়ে থাকি এবং কাংরিটা আমাদের মাঝে থাকে।..........
বোন আর আমি কাংরিটা আরও কাছে টেনে নিলাম। দরজা ধাক্কার শব্দ, আমাদের ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে কেউ আমাদের বাড়ির দরজা ভেঙ্গে ফেলতে চাইছে।.......মুহূর্তের মধ্যে এক সেনাবাহিনীর এক জওয়ান আমাদের সামনে। একটা বিদঘুটে গন্ধ পেলাম, দেখলাম তার হাতে একটা মদের বোতল। আমার গলা শুকিয়ে গেল, আমি চিৎকার করতেও পারলাম না।.........
যখন জ্ঞান ফিরল, আমার মাথাটা শূন্য, আমার শরীর অবশ। আমার মুখ সিক্ত। আমি কাঁদছিলাম। আমি নগ্ন ছিলাম, শুধু শারীরিক ভাবে নয়, মানসিক ভাবেও। আমার মা আমার সাথে একই ঘরে। তিনি অচেতন, কিংবা হয়তো ভান করছেন। আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে তিনি শুয়ে আছেন। কেউ একজন কাঁদছে। আমার ভাই, আমাকে কিছু একটা দিয়ে ঢেকে দিল। পরিষ্কার মনে নেই কী ছিল সেটা। আজ অবধি তাকে সেটা জিজ্ঞাসা করিনি। ওই রাত নিয়ে আমরা কোনও দিন আর কোনও কথা বলিনি। কিন্তু আমার মনে আছে আমার শরীরের নিম্নাঙ্গে কোনও অনুভূতি ছিল না। (নাম পরিবর্তিত)
ওপরের অংশটি ডু ইউ রিমেম্বার কুনান পোষপরা? নামক বইয়ের থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। উল্লেখিত ওই দিনে নিয়ন্ত্রণ রেখার নিকটবর্তি দুটি গ্রাম কুনান পোষপরাতে সেনাবাহিনী নৃশংস অত্যাচার চালায়। গ্রামের পুরুষদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে রাতভোর নিপীড়ন করে, বালিকা থেকে প্রৌঢ়া, অন্তত একত্রিশ জনকে গণধর্ষণ করে। তদন্তে ঢিলা দিয়ে, সাক্ষী লোপাট করে এবং অন্যান্য ছল করে সেই ঘটনা চেপে দেওয়া হয়। বাইশ বছর বাদে পাঁচ জন অকুতোভয় তরুণী একটি পিআইএল, জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে প্রশাসনকে নতুন করে ঘটনাটির তদন্ত করতে বাধ্য করে। এঁরাই ওপরের বইটি লিখে ঘটনাটি সারা বিশ্বের কাছে উন্মোচিত করেছেন। এঁরা হলেন নাতাশা রাথের, মুনাজা রশিদ, সামরিনা মুস্তাক, ইফরাহ বাট, এবং এসা বাতুল। ধারা ৩৭০ বিলোপের ছয় বছর পূর্তিতে কাশ্মীরে যে ২৫টি বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার মধ্যে উপরোক্ত বইটিও আছে।
হঠাৎ কেন এই নিষিদ্ধকরণ? এটা বোঝার জন্য প্রথমে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আরও কিছু বই দেখা যেতে পারে। যেমন অনুরাধা ভাসিনের আ ডিসমেনটেল্ড স্টেট (দ্য আনটোল্ড স্টোরি অফ কাশ্মীর আফটার আর্টিকেল ৩৭০) যেখানে আট নম্বর অধ্যায়ে মিডিয়াকে কী ভাবে স্তব্ধ করে দেওয়া আছে তার উল্লেখ আছে, এগারো নম্বরে কী চতুর ভাবে ধারা ৩৫এ বিলোপ করে ও ভুমি সংক্রান্ত আইন পরিবর্তন করে অকাশ্মীরি ধনকুবেরদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা খুলে দেওয়া হচ্ছে ও উপত্যকার জনবিন্যাস কী ভাবে পাল্টে দেওয়া হচ্ছে তার বর্ণনা আছে; হাফসা কানজয়ালের কলোনাইজিং কাশ্মীর যাতে উপত্যকার সংস্কৃতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা আছে; অরুন্ধতি রায়ের আজাদি যেখানে তিনি লিখছেন কাশ্মীর এমন একটা নাট্যমঞ্চ যেখানে অবর্ণনীয় হিংসা ও নৈতিক অবক্ষয় ঘটে চলেছে যা ভারত পাকিস্তানকে যে কোনও মুহূর্তে পারমাণবিক যুদ্ধে নিমজ্জিত করতে পারে; তারিক আলি, হিলাল ভাট এবং অন্যান্যদের কাশ্মীর দ্য কেস ফর ফ্রিডম আছে যেখানে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে হিলাল ভাট কী ভাবে কাশ্মীরি পন্ডিত হওয়ার ভান করে উন্মত্ত জনতার কবল থেকে মুক্তি পান তার রোমহর্ষক বর্ণনা আছে। ওই একই বইয়ে তারিক আলি ষোলশ শতাব্দীর কবি হাব্বা খাতুনের কবিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। কলোনাইজিং কাশ্মীর-এ বলিউডের সাথে কাশ্মীরের হনিমুনের কথা উল্লেখ আছে; কাশ্মির কি কলি প্রথম ছবি যা উপত্যকায় ১৯৬৩ সালে শুটিং হয়, এরপর এক এক করে এসেছে জংলি, আর্জু, জব জব ফুল খিলে, জানোয়ার ইত্যাদি। আকর্ষনীয় তথ্য হচ্ছে মাত্র দুটি ছবিতে কাশ্মীরি চরিত্র আছে, দুজনেই হাউসবোট চালক, যার মধ্যে একজন শশী কাপুর যে আরবিক ভাষার চেয়ে হিন্দি শিখতে বেশি আগ্রহী এবং যে নায়িকাকে পরদেশী বলে উল্লেখ করে, ‘মেইনল্যান্ড’ ভারতের দর্শকরা যে চোখে কাশ্মীরকে দেখতে পছন্দ করে ঠিক সেই রকম। আবার হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন্স ইন কাশ্মীর-এর লেখক পিয়টর বালসারোভিচ জানান নব্বইয়ের দশক থেকে কী ভাবে নানা কারণে বলিউড ছবির শুটিং কাশ্মীরে বন্ধ হয়ে যায়। অন্য বইগুলিও উল্টেপাল্টে দেখা যাবে যে হয় সেগুলো নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচার, প্রতিবাদ প্রতিরোধ উন্মোচিত করেছে নয় কাশ্মীরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, স্বায়ত্তশাসন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছে। এছাড়া অনেক বই আছে যেগুলি গত প্রায় চল্লিশ বছর ধরে পাঠকমহলে সমাদৃত। সেগুলিতে উনবিংশ শতাব্দীর কাশ্মীর, পঞ্চাশের দশকে বকশি গুলাম মহম্মদের সময়ে রাজ্যের অবস্থা, নেহুরু-শেখ আবদুল্লাহ দ্বন্দ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা আছে। অতীতের এই সব ঘটনা বহু আলোচিত এবং সর্বজনবিদিত, তাই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক এগুলিকে এখন নিষিদ্ধ করার কী যুক্তি আছে।
কবি জারিফ আহমেদ জারিফ বলেন কাশ্মীর ৫০০ বছর ধরে পরাধীন। আমাদের বলা হয় মোঘল সময়ে কাশ্মীর নাকি অনেক সমৃদ্ধ হয়েছিল, আসলে সেটা ছিল লুট, অরাজকতার যুগ। শিখদের সময় ধর্মীয় নিপীড়ন ছিল, ধর্মের ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। তারপর তো পুরো দেশটাই বিক্রি করে দেওয়া হল, ভাবুন একটা দেশের জল, মাটি, গাছপালা, ফুলফল, গ্রাম-শহর, ঘরবাড়ি, নদি-পাহাড়-উপত্যকা, এমনকি মানুষ সব স্রেফ বিক্রি করে দিল ব্রিটিশরা ডোগরাদের কাছে। কবির চোখে বেদনা, বিস্ময় ঝরে পড়ে, পৃথিবীর ইতিহাসে এই রকমটা ঘটেছে কি কখনো? আধুনিক যুগে উপত্যকা বারবার প্রতারিত হয়েছে। গণভোটের আশ্বাস দিয়ে ভারতের সাথে যুক্ত করা হয়েছে, ধারা ৩৭০ প্রণয়ন করে মেকি স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার ভান করা হয়েছে, তারপর ৫ আগস্ট, ২০১৯ সেটাও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তারপর থেকে কাশ্মীর শুধুমাত্র কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যা গাজা ব্যাতিত বিশ্বের সর্বাধিক মিলিটারি অধ্যুষিত অঞ্চল (প্রতি চোদ্দ জন প্রতি একজন সেনা/আধাসেনা), যেখানে শাসন এতই কঠোর ও দমনপীড়নমূলক যে সর্বত্র, সমাজের সমস্ত স্তরে এক ভয়ঙ্কর নীরবতা বিরাজ করছে।
আগস্ট, ২০১৯ এরপর থেকে উপত্যকায় দমনপীড়ন অভুতপূর্ব ভাবে বৃদ্ধি পায়। দিল্লির সংসদে যখন তৎকালীন রাজ্যবাসীর ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছিল, কাশ্মীরিদের তখন ইঁদুরের মতো গর্তে আটকে রাখা হয়েছিল। চারিদিকে তারকাঁটার বেড়া, ব্যারিকেড, নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তচক্ষু, প্রতিটি বাড়ি যেন কয়েদখানা যেখানে সন্ত্রাসের দাপটে মানুষ মূক। ইন্টারনেট, মোবাইল, ব্রডব্যান্ড সার্ভিস এমনকি ল্যান্ডলাইন বন্ধ, রাতারাতি ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ইন্সটাগ্রামের কোনও অস্তিত্ব নেই। সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ, হাজারো মানুষ গ্রেপ্তার, তিনজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গৃহবন্দী। স্থানীয় মানুষদের প্রতি অবিশ্বাস এত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় যে জম্মু কাশ্মীর পুলিশকে নিরস্ত্র করা হয়। দেশজুড়ে প্রায় সমস্ত টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র চাপিয়ে দেওয়া এই সার্বিক নিঃস্তব্ধতায় উল্লাস প্রকাশ করে, প্রচার করা হয় কাশ্মীরে সব স্বাভাবিক, নর্মাল, মানুষ নাকি দিল্লির সিদ্ধান্তকে মন থেকে মেনে নিয়েছে।
আমরা মূলত প্রেস ও মিডিয়ার স্বাধীনতা কীভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে, কীভাবে তাদের সরকারের তল্পিবাহক হতে বাধ্য করা হয়েছে সেটার ওপর আলোকপাত করব। ২০২০তে জম্মু কাশ্মীর মিডিয়া পলিসি ঘোষণা করা হয়। এর তিনটি উল্লেখযোগ্য ধারা হলঃ সরকার যে কোনও খবর, ভিডিও ইত্যাদির বিষয়বস্তু ছাঁকনি দিয়ে অনুসন্ধান করে দেখতে পারে এবং সেগুলিকে ভুয়ো, কুম্ভিলকবৃত্তি, অনৈতিক, রাষ্ট্র-বিরোধী বলে দেগে দিতে পারে; সংবাদপত্র এবং অন্যান্য মিডিয়ার যাবতীয় বিষয় খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে পারে এবং অসামাজিক, রাষ্ট্র-বিরোধী, ভুয়ো হওয়ার কারণে নিষিদ্ধ করতে পারে। এই ধরণের সংবাদ, প্রতিবেদনের কারণে সেই সংস্থা সরকারি আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত হবে এবং আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে; সরকার কোনও সংবাদ সংস্থাকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে প্রকাশক, সম্পাদক, সাংবাদিক ও অন্যান্য কর্মীদের অতীত পরীক্ষা করবে, কোনও সাংবাদিককে accreditation দেওয়ার আগে তার অতীতের কার্যকলাপ ছানমিন করে দেখা হবে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ নজরদারি, সরকার সবুজ সংকেত দিলেই তবে কোনও খবর/বিষয়/মন্তব্য/প্রবন্ধ/ভিডিও ছাপা হবে বা প্রচারিত হবে, নচেৎ নয়।
লক্ষ্যনীয় কোনও সংবাদপত্রকে কিন্তু নিষিদ্ধ করা হয়নি, কিন্তু খুব পরিকল্পিত ভাবে একটা সংবাদ সংস্থা চালু রাখার যাবতীয় উপকরণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যোগাযোগের সমস্ত মাধ্যম ইন্টারনেট, মোবাইল, ল্যান্ডলাইন, এমনকি খবর সংগ্রহ করার প্রয়োজনে স্বাধীন ভাবে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়ার ফলে পুরোদমে সেন্সরশিপ চালু হয়ে যায়, যা একই সাথে স্বকীয় ও সার্বিক। অনুরাধা ভাসিন লিখছেন, এমতাবস্থায় মিডিয়া হিমায়িত হয়ে কৃষ্ণগহ্বরে অদৃশ্য হয়ে যায়। যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রকৃত অবস্থা উন্মোচিত করার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের অবর্ণনীয় নিপীড়নের সম্মুখিন হতে হয়েছে। এখানে বালসারোভিচের বক্তব্যের উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলছেন সারা বিশ্বে শাসক দমনপীড়নের জন্য চারটি পন্থা মূলত অবলম্বন করেঃ ভুয়ো সংঘর্ষ অথবা কাউকে স্রেফ গায়েব করে দেওয়া, যে কারণে উপত্যকায় এত অজ্ঞাতনামা মানুষদের গোরস্থান; অবৈধ ভাবে আটক যেখানে পরিবার জানতেই পারল না তাদের নিকটজন কোথায়, কী অবস্থায় আছে; অকথ্য নির্যাতন; গুমখুন। এগুলি সবই মিডিয়ার কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া আছে দীর্ঘ দিনের কারাবাস, দিনের পর দিন জিজ্ঞাসাবাদ, ইউএপিএ’র মতো আইনে সম্পাদক/সাংবাদিকদের অভিযুক্ত করা, এমনকি প্রেস ক্লাব বন্ধ করে সেটা পুলিশের ডেরা করে দেওয়া। আগস্ট, ২০২১ এরপর থেকে বিভিন্ন মিডিয়া সংস্থার আর্কাইভ রহস্যজনক ভাবে গায়েব হয়ে যাওয়া শুরু করে। ‘রাইজিং কাশ্মীর’-এর মহাফেজখানা পুরো অদৃশ্য হয়ে যায়, ‘কাশ্মীর টাইমস’, ‘গ্রেটার কাশ্মীর’-এর আর্কাইভের নির্বাচিত অংশ মুছে দেওয়া হয়, ‘কাশ্মীর রিডার’-এর তথ্যাবলী ২০১৪ থেকে লাফিয়ে ২০১৭য় চলে যায়, মাঝের তিন বছরের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। গুগলে বুরহান ওয়ানি-র (বলা হয়ে থাকে জঙ্গি, সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে যাঁর মৃত্যু হয়েছিল) নাম সার্চ করলে খুঁজে পাওয়া যায় না। এছাড়া পুলিশ তেতাল্লিশ জনের একটা No-Fly লিস্ট তৈরি করে, যার মধ্যে বাইশ জন সাংবাদিক। এর ফলে সানা ইর্শাদ মাত্তু-কে প্যারিসে একটি সম্মাননীয় পুরষ্কার নিতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না, আকাশ হাসান-এর শ্রীলঙ্কায় কাজে যাওয়ার অনুমতি বাতিল করা হয়।
তেরশ শতাব্দীতে সুফি কবি, সঙ্গীতকার আমির খুসরু’র বিখ্যাত উক্তি, If there is a paradise on earth, it is this, it is this, it is this.....। শাসক চায় কাশ্মীর-কে সবাই স্বর্গ বলেই জানুক, যেখানে সব কিছু স্বাভাবিক। সেখানে যে কোনও বাক স্বাধীনতা নেই, প্রতিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের কোনও যে অধিকার নেই, ভিন্ন মত প্রকাশ করা যে অপরাধ, সেখানে যে জঙ্গি দমনের নামে প্রায় রোজ ভুয়ো সংঘর্ষ হয়, মানুষের ওপর অত্যাচার হয়, এসবের ছিটেফোঁটাও যেন বিশ্বের কাছে প্রকাশিত না হয়। তাই তথ্যের সমস্ত উৎস রুদ্ধ করে দাও। সংবাদপত্র, মিডিয়াকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবার একাডেমিক গবেষণা, বই প্রকাশও নিষিদ্ধ করো। একটি সাক্ষাৎকারে বালসারোভিচ নিষিদ্ধকরণের কারণ ব্যাখ্যা করেন। প্রথম, ভবিষ্যতের গবেষকদের ভয় দেখান যাতে তারা জমিন স্তরে কী ঘটে চলেছে তা বর্ণনা করার সাহস না করে। দ্বিতীয়, তিনি বলছেন বর্তমানে ভারতের ৯৫% মিডিয়া সরাসরি সরকারের বা তাদের অনুগতদের নিয়ন্ত্রণে। স্বাধীন মিডিয়া বলে কিছুই প্রায় নেই, সংবাদপত্র, টিভির স্বাধীনতা ও নেই, ইউটিউব ইত্যাদির গ্রাহক তুলনামূলক ভাবে এখনো খুবই কম। তৃতীয়, এর ফলে সব চ্যানেল, সংবাদপত্রে একই খবর। ভিন্ন মত কিংবা বাস্তবে যা ঘটে চলেছে সেটা প্রচারের কোনও সুযোগই নেই। এবার গবেষণার চ্যানেলও রুদ্ধ করে দেওয়া হল। পরের ধাপ হতে পারে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করা কিংবা উত্তর কোরিয়া, চিনের মতো পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া।
এক দিকে প্রকৃত ঘটনা চেপে দেওয়া হচ্ছে অন্যদিকে ‘কাশ্মীর ফাইলস’, ‘আর্টিকেল ৩৭০’ ইত্যাদি বলিউডের ছবির দ্বারা উপত্যকা সম্পর্কে বিকৃত ধারণা প্রচার করা হচ্ছে। ভিন রাজ্যে কর্মরত বাঙ্গালিদের বাংলাদেশি বলে নির্যাতন করা হচ্ছে, আবার ‘বেঙ্গল ফাইলস’ ছবি তৈরি করে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। নিজেদের গুরু সাভারকার দ্বিজাতি তত্ত্বের জনক হওয়া সত্ত্বেও দেশভাগের দায় আজ নেহুরু, কংগ্রেসের ওপর ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সঙ্ঘীরা অতি সক্রিয়! কাশ্মীর একটা ল্যাবরেটরি, সেখানে আজ যা হচ্ছে ভবিষ্যতে তা বাংলা তো বটেই সারা ভারতে প্রয়োগ করা হতে পারে।
সোমা চ্যাটার্জী | 2402:3a80:1cd1:da6e:278:5634:1232:***:*** | ২২ আগস্ট ২০২৫ ০৭:২৪733552
Tapas Biswas | 202.142.***.*** | ২২ আগস্ট ২০২৫ ১৫:৩২733558
Somnather Oboidho Baap | 2401:4900:8828:c808:bd15:9083:6331:***:*** | ২৩ আগস্ট ২০২৫ ২০:৪৩733585
কামাল পাশা | 58.238.***.*** | ২৩ আগস্ট ২০২৫ ২০:৫৯733586