নরাধম কাতলা মাথা সিবিআই এর জালে। আহা কি আনন্দ বাংলার আকাশে বাতাসে !
---- প্রসূন আচার্য
স্বাধীনতার পরে পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে বড় মাফিয়া বীরভূমের কাতলা মাথা সিবিআই এর জালে।
বাড়ি গিয়ে দরজার কড়া নেড়ে তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছে সিবিআই। বোধহয় বিকেলের দিকে গ্রেফতারের করা হবে।
আজ রাখী পূর্ণিমা। হাতে রাখীর বদলে হাতকড়া পরলো পাপে নিমজ্জিত এই নরাধমের। হেন অধর্ম কাজ নেই যে তিনি করেননি।
পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রাজ্যের সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে এই কাতলা মাথা শুধু নিজের এবং ঘনিষ্ঠদের বেআইনি সম্পত্তি বাড়ান নি, দিনের পর দিন ক্যামাক স্ট্রীটে ভাইপো অ্যান্ড কোম্পানিকে পাঠিয়েছেন। বিনয় মিশ্রর মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়েছেন। যে বিনয় মিশ্র ভাইপোর ঘনিষ্ঠতার সুবাদে দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিল। এখন ইন্দোনেশিয়ার কাছে ভান্তুয়া দ্বীপে পলাতক। সেই দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছে।
একদা মুকুল ঘনিষ্ঠ কাতলা মাথা ২০০৯ সালের আগে হাটে মাগুর মাছ বিক্রি করতেন। কাঁসার গ্লাসে দেশি মদ খেতেন। আজ তাঁর বেআইনি বেসরকারি সম্পত্তি অন্তত ১০০০ কোটি। কারণ, তাঁর একজন দেহরক্ষীর সম্পত্তি ১০০ কোটি টাকার বেশি! যিনি এখন সিবিআই এর হাতে।
গত ১১ বছরে বীর ভূমিতে কাতলা মাথার প্রতিপত্তি নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলার সাহস পায়নি। কেউ প্রশ্ন তুললে তার পিঠে চড়াম চড়াম করে ঢাক বাজিয়েছেন শাসক দলের এই ডন। পুলিশকে দিয়ে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে গাঁজা কেস দিয়ে জেলে ভরা হয়েছে। এমনকি খুনের অভিযোগও আছে কাতলা মাথার বিরুদ্ধে। আমার আপনার টাক্স এর টাকায় রাজ্য সরকার এঁকে বিশেষ কমান্ডো সুরক্ষা দিয়েছে। এক ঝাঁক কমান্ডো তাঁকে ঘিরে রাখত। যাতে কেউ এঁকে ছুঁতে না পারে!
বিরোধী শূণ্য করে কাতলা মাথা পঞ্চায়েত ভোট করেছেন। দলের অন্য গোষ্ঠীর লোককে পঞ্চায়েত ভোটে হারাতে প্রয়োজনে পুলিশকে বোম মারতে বলেছেন। খুনে মদত দিয়েছেন। এই তো সেদিনের কথা, ভাদু শেখ পাথর আর বালি খাদান এর তোলার ভাগ দেয়নি বলে বকটুই এ জ্বলন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে ১২ জন মহিলা আর শিশুকে।
শুধু বাংলাদেশে গরু পাচার নয়, পাথর ও বলি খাদান, বেআইনি কয়লা খনি, বাংলা মায়ের সম্পদ লুঠ করে নিজের আর দলের রাজকোষ ভরেছেন এই কাতলা মাথা।
দামী বিদেশি মদ এবং দলের বা ভাড়া করা মহিলা ছাড়া যাঁর একটা দিনও কাটত না।
কোনও ব্যবসায়ী বালি বা পাথর খাদান লিজে নিলে দুই হাজার টাকার নোটের বান্ডিল ছাড়াও দামী বিদেশি মদ এবং সোনাগাছির ভাড়া করা আগ্রাওলি পাঠাতে হত হোটেল বা গেস্ট হাউস ভাড়া করে! এটাই রীতি ছিল।
আর দিনের পর দিন এই সব অনাচার দেখেও চোখ বুজে থেকেছেন সোনা বউয়ের পিসি শাশুড়ি! ফলে সাধারণ মানুষ এই কাতলা মাথাকে নিয়ে যতই ছি ছি করুক, কোনও দিন তাঁর বিরুদ্ধে তিনি কোনও ব্যবস্থাই নেননি। বরং "ওর মাথায় কম অক্সিজেন যায় " বলে বিষয়টি হালকা করে দিতে চেয়েছেন।
গ্রেফতারের পর এখন দল কী করবে ?
বর্ষীয়ান মন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় দায় ঝেড়ে ফেলে বললেন, "দোষ করলে শাস্তি পাবে। এর দায় দল নেবে না।" চিটফান্ড মামলায় সিবিআই এর হাতে গ্রেফতার হয়ে মাসের পর মাস মাস জেল খাটা মদন মিত্রও দায় ঝেড়ে ফেললেন!
কাতলা মাথার পাপের দায় কি নেবেন কেউ ? সেই উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে।
দস্যু রত্নাকর এর পাপের ভাগ কি তাঁর স্ত্রী পুত্ররা নিয়েছিল ?
নেননি।
সিপিএমের আমলে হুগলির অনিল বসুর পাপের ভাগ কেউ নিয়েছিল ?
নেয়নি।
বীরভূমের আকাশে বাতাসে আজ আনন্দ। শেষ শ্রাবণে আবীর খেললেও কেউ আপত্তি করবে না। কারণ, দলটার Moral ভেঙে গিয়েছে। মানুষের মধ্যে বিলি হচ্ছে গুড় বাতাসা।
আমি নিশ্চিত, এই কাতলা মাথার পুজো কোনও দিনই তারাপীঠ এর মা কালী গ্রহণ করেননি। (যদিও আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই ধরনের দেখনদারি পুজোয় বিশ্বাসী নই)।
কারণ, কাতলা মাথার সেই পুজোতে বার বার তাঁর আর্থিক বৈভব আর স্বর্ণালঙ্কার প্রাধান্য পেত। ভক্তি নয়। সেই সব ছবি তোলা আছে সংবাদ মাধ্যমে।
আমার মনে হয়, কাতলা মাথার ঈশ্বর ভক্তি ছিল না। পুরোটাই লোক দেখানো। থাকলে এত পাপ করতে পারতো না!
তাই তিনি ঘর বন্ধ করে পুজো করার সময় দরজায় কড়া নেড়ে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছে সিবিআই। বোধহয় ওঁর পূজিত ঈশ্বরই চান, এমন পাপীকে বলি দিতে। মা কালীর কাছে পাপীদের বলি দেওয়া হয় তো সেই জন্যই।
আজ রাজ্যবাসী গুড় বাতাসা খেয়ে চড়াম চড়াম করে ঢাক বাজাবে।
বলবে আহা আজ কি আনন্দ বাংলার আকাশে বাতাসে!
C@ Prasun Acharya