উড়ঞ্ছু - ঝর্না বিশ্বাস
১
আমার পাশের খোপেই তখন ভেদীপ্রিয়া...ছিমছাম মেয়ে, অত আটঘাট নেই...তবে স্বভাবে আমরা একেবারে উল্টো। ওর অসম্ভব ঠান্ডার বাতিক আর আমার গরম সহ্য হয় না...যদিও বাড়িওয়ালা বেশ বুদ্ধি করে জানালার পাশটা আমায় দিলেন, আর বিনিময়ে আমি ভেদীপ্রিয়াকে দিলাম এতকাল গুটিয়ে রাখা আমার সব বন্ধুত্ব।
প্রথম দিন ঠিকানায় ও এসে পৌঁছোল আমার আগেই...দেখি, এককোণে এক পড়ুয়াটি, আর সামনের গ্লাসে কেউ ঠান্ডা দিয়ে গেছে ...
আমি এগোতেই তোডরমলের চোখ পড়ল...বলল,
তুমিই কি গতকাল ইমেইলটা করেছিলে?
জানালাম, সে আমিই...
উনি বেশ খুশি হয়ে নতুন মেয়েটির পাশে বসার জায়গা করে দিলেন। যদিও এতে তাঁর কোনও তাপ উত্তাপ নেই, তবে সামনে রাখা পানীয়তে লোভ সামলানো গেল না। তাই বলেই ফেললাম,
আপনার কোল্ড ড্রিংক্সটা বোধহয় আর কোল্ড নেই...নিয়ে নিন।
মেয়েটা একঝলক দেখল... ভাবটা এমন যে আপনার তাতে কি!
২
এদিকে দেখতে দেখতে কদিন কাটলেও ওকে দেবীপ্রিয়া বলেই ভুল করি। ও অবশ্য রাগ করেনা এতে, বরং শুধরাতে এসে দিয়ে যায় একচোখা হাসি...যাকে হি-ভাষায় খতরনাকও বলে।
শুরুতে একটু শঙ্কায় ছিলেন তোডরমলবাবু। একে তো পিজি, তায় আবার দুজনাই উলটো মানুষ। যদিও পরে আমাদের মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং ও কিছু কন্ডিশন (যা তোডরমল জানে না) দেখে রাজি হয়ে যান। আমিও “লেডিজ ফার্স্ট” বলে ভেদীপ্রিয়াকে আগে ঢোকার জায়গা করে দিই।
ঘরটা সাজানো...সেখানে বিছানা দুটো হলেও টেবিল এক, বাথরুম এক, রান্নাঘরও এক... এসব দেখে আমার সমস্যা হচ্ছিল...একে তো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার অভ্যাস...তাই বোধহয় সব জলাঞ্জলি দিয়ে এবার ভালো মানুষটি হতে হবে...
নিজেকে এসবই বোঝাচ্ছিলাম, দেখলাম ভেদীপ্রিয়াও আমার নকল করছে...ল্যাপটপের ব্যাগটা কাঁধ থেকে নামিয়ে ঝুঁকে পড়ল বিছানায়...তারপর ওই এক মেয়েলি স্বভাবে...
ওটা আপনার, এটা আমার...বালিশও ছুঁড়ে দিল দুমদাম...গায়ের চাদর যদিও একখানাই...তাই বললাম,
আমার লাগবেনা...ব্যাগে আছে
এদিকে পেট কি খাব-কি খাব করছে ...তখনই স্পষ্ট শুনলাম তোডরমলের গলা,
আজ দুপুরে দুজনে এখানটাতেই খেও...তবে কাল থেকে নিজেদের ব্যবস্থা, বুঝলে?
আমি বরাবরই সোজা মানুষ,আলুসিদ্ধ ভাত -সেখানে ভেদীপ্রিয়া যেন পিৎজা হাটের বেবি...খুঁটে খুঁটে আলুর চামড়া তোলা থেকে শুরু করে উচ্ছের বীজ ফেলে ফেলে খেল...
আমি দেখলাম, দেখল তোডরমলও...ওর জন্য এটাই বোধহয় আমাদের এ বাড়িতে শেষ খাওয়া...আর ডাকবেনা নিশ্চিত...
তখনই তোডরমলের বউ মানে ভাবিজি পরিচয় করিয়ে দিলেন শাইনিকে...একটাই মেয়ে, হেবি ঠাটবাট... আমি কোনও রকমে নমস্কার ঠুকতেই ভেদীপ্রিয়া টগবগে ইংরাজিতে বলল...নাইস টু মিট ইউ, ডিয়ার...
যদিও শাইনি বেশিক্ষণ দাঁড়াল না...চলে গেল...আর ভাবিজি আমাকে-ওকে এ কোশ্চেন সে কোশ্চেনে মোটামুটি ব্যস্ত করে দিল।
৩
তিন দিন পর আমার জয়েনিং আর ভেদীপ্রিয়ার এমবিএ ক্লাস পরের সপ্তাহে...
তাই ঘরের একটু বেশি কাজ ওর ওপর চাপালাম। যদিও বাজারে একসাথেই বেরোব, ঠিক হলো বিকাল পাঁচটার যেন এদিক ওদিক না হয়...
এত টাইম পাগলা মানুষ হলে আমার মুশকিল, যদিও ভেদীপ্রিয়া সেদিন কিছু লেটই করল। ওর মায়ের ফোন, শুরুতে গলা ভারী হলেও পরে ঠিক হয়ে গেছিল...তবে মা-কে বললনা যে ও আমার সাথে আছে।
ব্যাপারটা আমিও কপি করলাম। বাড়ির ফোন এলেই বলতাম, দুজনে অ্যাপার্টমেন্ট শেয়ার করি...কিন্তু অন্যজন কে বা কোথা থেকে বলার আগ্রহই দেখাইনি আর ...
সেদিন বেরোতেই দেখলাম শেয়ার গাড়ি...পেছনে আটজন ও সামনে ড্রাইভার সহ আরও দুজন বসতে পারে...
পয়সাটাও এতে কম তাই উচ্যবাচ্য না করে উঠে পড়লাম...ভেদীপ্রিয়া বসল পাশেই।
বললাম, যাবার ভাড়াটা আমি দিই। আসারটা আপনি।
হিসেব তো, শুরুতে মিলিয়ে নিলেই ভালো। এদিকে সামনের সিটে বসা ভদ্রমহিলা ভেদীপ্রিয়ার ওড়নাটা সামলে দিলেন...কিন্তু ওর ঝুলপিওয়ালা চুল পুরো রাস্তাটায় আমার নাকের সামনে উড়ে উড়েই চলল।
শপিং এ ঢুকতেই এরপর ভেদীপ্রিয়া ভ্যানিশ...কোথায় যে গেল খুঁজে পেলাম না...আমি আর সময় নষ্ট না করে ব্রাশ, পেস্ট, সকালের কর্নফ্লেক্স কিনছি। ও দূর থেকে আওয়াজ দিল,
এই যে শুনছেন আমারও একটা ব্রাশ চাই...
পেস্ট লাগবেবললনা...তার মানে ওটা আমার থেকেই নেবে...তা ভালো ...আমিও কমতি না...একসাথে বিল বানিয়ে নিলাম...হাফ হাফ দুজনের দিতে হবে।
এদিকে ওর আর আমার বাসন পত্রে রান্নাঘর সেজে উঠেছে। গ্যাসটা তোডরমলই দিলেন...একটা বাড়তি আছে,বউয়ের নামে...ব্যবহার হয়না তাই এখন আমাদের।
বাসস্থান ও খাদ্যের চাহিদা মোটামুটি মিটল দেখে আমি ও ভেদীপ্রিয়া দুজনেই খুশি... পেট ভরে খেলাম।
সাউথের ডাল আর বাংলা ভাতের কম্বোটা মন্দ না...বলতেই ভেদীপ্রিয়া হো হো করে হেসে উঠল।
ওর মা বাঙালি কিন্তু বাবা অন্ধ্রপ্রদেশের... তাই দু ভাষাতেই সমান রপ্ত মেয়েটার... এদিকে আমি একই কলকাতার...তায় আবার বাংলা মিডিয়াম, সুতরাং চুপ থাকাটাই ভালো...
ভেদীপ্রিয়া চট করে ধরে নিল ব্যাপারটা।
এত গম্ভীর হলে তো মুশকিল, একসাথে থাকতে হবে যে...!
আমি হাসলাম শুধু...মনে মনে বললাম,
গম্ভীর না ছাই ! ... ভেতরের মানুষটিকে খানিক লুকিয়ে রাখতে হয় ম্যাডাম, নইলে বিপদ হতে পারে...!
এদিকে রাত জাগতে পারিনা একদম, কিন্তু ভেদীপ্রিয়া উল্টোটাই...নিশাচরের মতো ওর কাছে তিনটে চারটে কোনও ব্যাপার না...
একদিন রাগ হলো খুব...সটান উঠে পড়ার টেবিলে এগোতেই ও বলল,
কি হলো স্যার...ঘুম আসছেনা বুঝি!
ওই তো এক চিন্নি মেয়ে, তাও যখন স্যার স্যার করে গা জ্বলে যায়...একদিন ঠিক করেছি তাই রীতিমত জবাব দেব। কিন্তু ওর সাথে পেরে উঠব কিনা ভয় হয়...সেদিন একতরফা তোডরমলকেই শুনিয়ে দিল,
এত চেঁচামেচি করবেন না তো...মাস শেষে পয়সাটা ঠিক হাতে গুঁজে দেব।
তোডরমল অ্যাডভান্স চাইতে গিয়েই সেদিন ফ্যাসাদে পড়েছিল। আমি পরে বুঝিয়ে দিলাম,
মেয়েটার একটু মাথা গরম, কিছু মনে করবেন না।
ওর পক্ষে গিয়ে এ ব্যাপারটা আমাকে না চাইতেও করতে হলো...বহু কষ্টে বাড়ি জোগাড়, আর এখন যদি এ শহরে বেঘর হতে হয় তো কোথায় যাব!
৪
মেয়েটার সাথে থাকতে থাকতে নিজের বদলখানা টের পাচ্ছি...এখন শার্টের ওপর বোতাম লাগানো থেকে শুরু করে জামার হাতায় আয়রনটাও স্পষ্ট হওয়া চাই। কিন্তু ওর বাতিক বলতে একটাই - তোয়ালে চটি সব জায়গামত হতে হবে...শুনতাম না প্রথম প্রথম, পরে দেখতাম আমাকে না শুধরাতে পেরে সবকিছু লুকিয়ে রাখত।
এদিকে অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে আমার নটা বাজে...ও আসে তারও আগে...তাই রাতের রান্নার ভার ওর, আর ব্রেকফার্স্টে আমি...
মায়ের কাছ থেকে শেখা ডবল ডিমের অমলেট খেতে খেতে সেদিন ভেদীপ্রিয়া বলে উঠল...
এটা আপনার বেস্ট প্রিপারেশন জানেন...বাকিগুলো অত ভালো বানান না...
ইচ্ছে হচ্ছিল বলি, তাহলে তোমারটা তোমার – আমারটা আমার করলেই তো হয়!...কিন্তু সেদিকে খরচ বেশি তাই চেপে গেলাম। ও খাবার শেষ করতেই বলল,
আজ বেরোনোর সময় আমার মোবাইলটা একটু রিচার্জ করিয়ে দেবেন প্লীজ! একদম কথা বলা যাচ্ছে না, ইনফ্যাক্ট হোয়াটস্ অ্যাপটা কাজ না করলে খুব বোরিং লাগে...
বাসস্টপের পাশেই দোকান, সুতরাং অজুহাত দিয়ে লাভ নেই। ও একটা কাগজে নম্বর লিখতে গেলে বললাম...
ফোনেই সেভ করে নিচ্ছি, কাগজ লাগবে না...
কোনও “না কিন্তু” করে ভেদীপ্রিয়া নম্বরটা দিল...আর আমিও এই প্রথম অপরিচিত একটি মেয়ের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করতে চললাম।
৫
শাইনি এখন আমার খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে...বন্ধু হয়েছে ভেদীপ্রিয়ারও...আমাদের তিনজনের মজলিশ প্রায়ই বসে ছুটির বিকেলে...
তোডরমলের ছাদে আমি ও শাইনি যখন জমকালো জোকস্ এ হি হি করি, ভেদীপ্রিয়া গান শোনে... ওর গানের কথা কিছু মাথায় না ঢুকলেও বেশ বুঝতে পারি ধাতিং ধাতিং চলছে...শাইনি মাঝে মাঝে ওকে কনুইএর গুঁতো দিয়ে আমাদের গপ্পতে অংশগ্রহন করতে বলে, কিন্তু ও মেয়ে শোনে না...বড় একগুঁয়ে হয়ে যা করার তা করবেই।
এদিকে তিনজনকে একসাথে থাকতে দেখলে তোডরমলের বউ প্রায়ই বিনা অজুহাতে ছাদে চলে আসে। তারপর এটা চাই-ওটা চাই নাকি...বা মেয়ের ওপর নজরদারি...শাইনিও বলে দেয়, কিছু লাগলে বলব। তুমি নীচে যাও মা। নইলে হাঁটুর ব্যাথা বাড়বে।
কথায় কথায় বয়স আসে...আমি নিজেকে ওদের মধ্যে বড় পাই আর হাবভাবে গম্ভীরপনা আনা নিয়ে শাইনি মজা করে,
তুমি যেমন আছ, তেমনি থাক...অত সিরিয়াস হয়ে কাজ নেই...
আমাদের মধ্যে “তুমি” এত তাড়াতাড়ি দেখে ভেদীপ্রিয়া আশ্চর্য হয়না, বরং শাইনিকে টার্গেট করে ঘুরে বসে...
দূরে তখন আকাশ কালো হচ্ছে...টুপটাপ আলো জ্বলছে বাড়িতে বাড়িতে।
যাই, চা করতে হবে... বলে ভেদীপ্রিয়া চলে যায়...আর আমিও ওর পিছু নিই, নইলে এক কাপের জন্য আবার নিজেকে জল বসাতে হবে।
৬
আমার ল্যাপটপ স্ক্রীনে বারবার ঘুরে ফিরে আসছিল মনোলীনার ছবি...এতে ভেদীপ্রিয়ার কোন হা পিত্তেশ নেই, নিজেকে নিয়েই থাকে।
কিন্তু ওর এক মহা দোষ বাথরুমে ঢুকলে পাক্কা আধঘন্টা...কি যে করি আমি! দু এক বার আওয়াজ দিয়েও সাড়া মিলল না...ভেতরে এন্তার গান বাজছে...শাওয়ারেও জল নামছে গানের তালে তালে...
অতএব রাগ হলো খুব...আমি পুরো লেট...বেরোতেই একচোট হয়ে গেল...
ও গলা উঁচিয়ে বলেই দিল,
এমনটা হলে আলাদা হয়ে যাব। একটু সময় দিন।
কথাটা সোজা আমার কান হয়ে ঘুরে ফিরে মাথায় ধাক্কা মারল। থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গেছে... এখন ওকে ছাড়া আবার নতুন করে ভাবব !! খারাপ লাগলেও বুঝতে দিলাম না...
টেবিলে দুধ গরম করা ছিল...না খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম। এটুকু রাগ দেখানো জরুরী ছিল...যদিও চলতি বাসের হু হু হাওয়ায় সব ধুয়ে মুছে সাফ...মনে হচ্ছিল “সরি” লিখে একটা মেসেজ দিই...
কিন্তু ভেতরের মানুষটা বাঁধা দিল। কেনই বা সব বার আমিই প্রথমে...!
৭
বাড়ি ফিরতেই সাময়িক ঝড়ের আশঙ্কা করছি...তাই গুটি পায়ে এগোতেই দেখি পাশের দোকানে রুটি তরকায় জমাট ভিড়...আজ এটাতেই যদি তাঁর রাগ কম করা যায়...!
যদিও ফিরতে সে কিছুই বলল না...বরং একলাটি - যেমন থাকে...
হাত পা ধুয়ে আমাকেই সব করতে হলো... প্লেট সাজিয়ে কাছে আনতেই ভেদীপ্রিয়া বলল,
- সকালের জন্য আমি খুব সরি... আর হবে না।
জিদ্দি মেয়েদের গলায় সরিটাও কেমন গুনগুনিয়ে যায়...ভালোলাগল। বললাম,
- আমিও সরি, অতটা রিয়্যাকশনের বোধহয় প্রয়োজন ছিল না।
তারপর খাবারে ভাগ বসাতে বসাতে ভেদীপ্রিয়া বলল,
- রাগ করে আমার ফায়দা হলো বলুন... তবে একটা কথা বলব...!
ঢোক গিলল মেয়েটা...আমি আর কৌতুহল না চেপে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,
বলুন না...!
- ওই ল্যাপটপের মেয়েটি নির্ঘাত খুব লাকি....আপনি খুব কেয়ারিং...
শুনেই হো হো করে হেসে উঠলাম। ভেদীপ্রিয়া এক ধাক্কায় সে হাসি থামিয়ে দিল...এদিকে যা আন্দাজ করছিলাম ঠিক তাই...ও আমাকে আর ওকে নিয়ে ভাবা শুরু করেছে...
৮
মনোলীনা ছায়াছবির এক উঠতি নায়িকা জেনে ভেদীপ্রিয়ার রাগ সেদিন চরমে...আর ওর রাগ মানেই ছোঁড়াছুঁড়ি... প্রথমে বালিশ, চাদর তারপর মগ, প্লেট যা হাতের কাছের পায়...
ঘরেতে প্রান ফিরেছে, তাই চুপ থাকলেও পরে কাঁটাচামচ দেখে চিৎকার...
এবারে কি সত্যি সত্যি মার্ডার করবেন!!...রাখুন ওটা, বলে ভেদীপ্রিয়ার হাত থেকে যখন কাঁটাচামচ ছাড়াচ্ছি, টের পেলাম ল্যাপটপ স্ক্রীনে মনোলীনার ছবিটা ঝাপসা হয়ে আসছে...
এরপর সব শান্ত...কি যেন একটা ঘটে গেল ... ভেদীপ্রিয়ার মুখ লাল... দু কারণে হতে পারে...
ব্যাপারটা আমি জানি। ভেদীপ্রিয়াও জানে, কিন্তু স্বীকার করবেনা...
৯
পরদিন দুজনেরই ছুটি।
কিন্তু মেয়েটির তরফ থেকে কোনও সাড়াশব্দ নেই। ঘুম থেকে উঠলও দেরীতে...যদিও আমার বানানো চা খেল, তারপর একটাল কাপড় নিয়ে বসল। ওতে দেখি আমার দুটো শার্ট জায়গা করে নিয়েছে।
তাড়াতাড়ি সরিয়ে নিতে গেলে ভেদীপ্রিয়া বাঁধা দিল। আমিও না করলাম না...
রোববারের কাগজে তখন নতুন মুভির রিভিউ...পড়াতে মন বসালাম... আর ভেদীপ্রিয়ার কলে জল তখনও ঝপঝপিয়ে পড়ছে...
দুপুরে একসাথে হওয়া খুব কম...আর আজকের দায়িত্ব খানিক আমারই বেশি... কি করব উপক্রম করছি, মেয়েটি বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করল...
আমারও মনে হল এই সুযোগে কালকের ভুলটার একটা মাফি হয়ে যাবে...
১০
ব্যালকনির দুটো টিকিটে সেদিন আমি ও ভেদীপ্রিয়া। পাশাপাশি। পর্দায় কখন যে নায়িকা এসে গেছে খেয়াল করিনি...
এদিকে মন বলছিল শুরু যখন আমারই, শেষটাও করি...দেখি ভেদীপ্রিয়া গুটিয়ে অন্ধকারে... ওর হাতদুটো কেমন জড় হয়ে আছে...
আমার ভেতরের মানুষটাও অদ্ভুত জানান দিল,
মনোলীনা সে তোমার ফুরুত পাখিটি...আজ কাছে যে, সে তোমার অচেনা নয়...!!
সব টিপিকাল ছায়াছবির মতন এ ছবিতেও দেখলাম সেই একঘেয়ে গল্প...তবে আমি অন্য কিছু হব...
ভাবতেই ইন্টার্ভালের সব আলোগুলো জ্বলে উঠল...
যদিও ভেদীপ্রিয়া হাত সরালো না...আমিই উঠে পড়লাম, নইলে বাটার পপকর্ণের বিশাল ভিড় পেরিয়ে যখন ফিরব, হিরো নির্ঘাত তাঁর মনোলীনাকে নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়েছে...
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।