এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  ইতিহাস

  • পুনর্নবীকরণের ইতিহাস (History of Renormalisation)

    ঋক্ ধর্মপাল বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ০৭ আগস্ট ২০২২ | ১১১২ বার পঠিত
  • দুয়ারে QFT
    ফ্রেঙ্কেলের দেওয়া পয়েন্ট ইলেক্ট্রনের আইডিয়া, চটজলদি বিজ্ঞানীমহলে ছড়িয়ে পড়লো এবং QFTর কন্সেপচুয়াল বেসিস হয়ে উঠলো। ডিরাক বললেন,"ইলেক্ট্রনের মতো পাতি জিনিশের স্ট্রাকচারের নিয়মকানুন নিয়ে প্রশ্ন তোলার'ই মানে হয়না!" ১৯২৮ শালে ডিরাক সমীকরণ আর ১৯৩০ সালে হোল থিওরী ( এই কারণেই বাংলায় সব লিখছিনা - যেমন ধরুন, আমি কখনোই ফুটো তত্ত্ব লিখবোনা।) আগমনী সঙ্গীত, আধুনিক QFTর রূপরেখা আঁকতে শুরু করলো। এই থিওরি বললো, ভ্যাকুয়াম হলো গিয়ে ভার্চুয়াল ইলেক্ট্রন পজিট্রনের জোড়ায় ভর্ত্তি একটা ডায়ানামিক্যাল মাধ্যম। ওয়েইস্কপ্ফ এই সময়ে প্রথম দেখালেন যে ইলেক্ট্রনের সেল্ফ এনার্জির ডাইভার্জেন্সের প্রকৃতি লগারিদমিক। হাইসেনবার্গ আর ডিরাক ইলেক্ট্রনের চার্জ ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে দেখলেন ইলেক্ট্রনের 'বেয়ার চার্জ'ও লগারিদমিক ভাবে ডাইভার্জ করে যাচ্ছে।
     
    সংগ্রামের দশক
    হাইসেনবার্গ আর পাউলি দেখলেন পয়েন্ট ইলেক্ট্রনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ভর, কোয়ান্টাম থিওরি ব্যবহার করে'ও ডাইভার্জ করে যাচ্ছে,, ঠিক যেমনটা আগে করছিলো সনাতনী তত্ত্ব ব্যবহার করে। গোদের উপর বিষফোঁড়া সেজে, হোল থিওরি আবার বলছিলো -ভ্যাকুয়ামের নেগেটিভ চার্জ ডেন্সিটি, ইনফাইনাইট! ( ছবিতে পাউলি আর ডিরাক )
    ভ্যাকুয়ামের এই গেরো, রিডেফিনেশানের মাধ্যমে মেটানোর চেষ্টা করা হলো। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ভ্যাকুয়ামের ইনফাইনাইট জিরো-পয়েন্ট এনার্জিকে রেফারেন্স বদলে পাতি বিয়োগ করে দেওয়া হলো। মহাশূন্যের দর্শন নিয়ে ভাবতে গিয়ে, এরিস্টটলের সময় থেকেই পাণ্ডিত্যের শুভ্রশিখরে বিরাজমান মানুষেরা, মাথার চুল ছিঁড়তেন। ভ্যাকুয়ামের এনার্জিকে এড়িয়ে যাওয়ার এই 'শয়তানি বিয়োগ-প্রক্রিয়া'কে পাউলি'র মতো অনেকেই ভালো চোখে দেখলেন না। ওয়েইস্কপ্ফ সাধে পাউলি'কে "পদার্থবিদ্যার সাক্ষাৎ বিবেকমূর্ত্তি" ডাকতেন না! এমনিতে'ও এই পদ্ধতিতে বিশেষ লাভ হলোনা কারণ হাইড্রোজেন পরমাণু'র এনার্জি, ইলেকট্রন মাসের সঙ্গে সমানুপাতিক। হায়ার অর্ডার এপ্রক্সিমেশানে দেখা যেতে লাগলো, শুধু স্পেক্ট্রাম এনার্জি'ই নয় ; এনার্জি ডিফারেন্স'ও ডাইভার্জ করতে শুরু করে দিয়েছে। QED যদিও লোয়ার এপ্রক্সিমেশানে দুরন্ত সব রেজাল্ট দিচ্ছিলো, হায়ার অর্ডারে কিছুটা অবাক করে দিয়েই সে পেতে থাকলো ইয়া বড়ো বড়ো একেকটা রসগোল্লা! ত্রিশের দশকের মধ্যভাগে, ইন্টার‍্যাকশান পোটেনশিয়ালের বিভিন্ন ফর্ম ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন স্পিনের পার্টিকেলের তত্ত্ব খাড়া করার একটা ঢল নামলো। ১৯৩৭ সালে মেসোট্রন নামে একটা কণার আবিষ্কার সকলের নজর কাড়লো। এই মেসোট্রনের ভর ছিলো ইলেক্ট্রন আর প্রোটোনের মাঝামাঝি। মেসো মানেও মাঝামাঝি। হিদেকি ইউকাওয়া দুইবছর আগেই এই মেসোট্রনের কথা তত্ত্বগতভাবে অনুমান করে গেছিলেন। এই মেসোট্রন, পরবর্তীকালে যাকে আমরা মেসন নাম দেবো, আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীমহলে বেশ কিছুদিন খুশীর হাওয়া বইলো। 
    কিন্তু কিছুদিন পরেই দেখা যেতে থাকলো, এই সবকটা মডেল থিওরিতেই ইনফিনিটি জাঁকিয়ে বসে আছে। কেউ কেউ এই বিপত্তিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলো। ১৯৩৮ সালের ৫ই এপ্রিল, হাইসেনবার্গ, পাউলিকে লিখলেন,"ভাবা আর হাইটলার, নিউট্রন আর প্রোটনের মধ্যকার বলের জন্যে, খুব'ই ক্ষুদ্র দূরত্বের ক্ষেত্রে একটা ইনফাইনাইট এক্সপ্রেশান বের করেছে দেখে আমার বেশ কৌতুহল জেগেছে। এইরকম একটা টার্ম আমাদের দেখাচ্ছে যে নিউট্রনের মাস ডিফেক্ট, ইনফিনিটি। আর'ও ভালোভাবে বলতে গেলে, ওটা একটা হাই এনার্জি কাট-অফের উপর নির্ভরশীল। এই ফলাফল আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ একটা ইউনিভার্সাল লেংথের প্রসঙ্গ না তুলে যে এগুনো যাবেনা, সেটা এই ফলাফলটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে !" ১৯৩৯ সালে, যখন গোটা পৃথিবী, চৌকাঠে পা ফেলা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ; কোনো স্কেলার পোটেনশিয়ালের প্রভাবে, রিলেটিভিস্টিক ইলেক্ট্রনের স্ক্যাটারিং-এর ক্ষেত্রে তেজষ্ক্রিয় সংশোধনের তূলনামূলক সহজ একটা সমস্যা কিছু পদার্থবিদ'দের নজর কাড়লো। সেই বছরের'ই প্রথমভাগে, ইউনিটারি ট্রান্সফর্মেশানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট হ্যামিল্টোনিয়ান'টি নিয়ে কাজ করা শুরু হলো। ব্লক এবং নর্ডসেক, এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই ইনফ্রারেড ডাইভার্জেন্স সমস্যার মোকাবিলা করেছিলেন। ড্যাঙ্কফ অন্যদিকে, আরও সিধাসাধা, পার্টার্বেশান মেথডের হাত ধরে এগুলেন। পাউলি-ওয়েইস্কপ্ফের স্পিনলেস কণার তত্ত্ব ব্যবহার করে তিনি আশ্চর্যজনক'ভাবে একটা ফাইনাইট রেজাল্টে উপনীত হলেন। ডিরাক ইলেক্ট্রন থিওরী'র ক্ষেত্রে তিনি যদিও দেখালেন যে, ভ্যাকুয়াম পোলারাইজেশান কন্ট্রিবিউশান এখনো একটা লগারিদমিক ডাইভার্জেন্স দিচ্ছে। যুদ্ধের পর, তোমোনাগা দেখাবেন যে ড্যাঙ্কফের এই ধারণা'টা ভুল ছিলো। ড্যাঙ্কফ, ক্যালকুলেশানে একটা গলদ করেছিলেন এবং তিনি সেটা না করলে বোধহয় রিনর্মালাইজেশানের ইতিহাসটা'ই অন্যরকম হতো। যাইহোক, এইসব বৈজ্ঞানিক কচকচানি'র মধ্যেই একদিন বেজে উঠলো বিশ্বযুদ্ধের রণদুন্দুভি...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৭ আগস্ট ২০২২ | ১১১২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শালিনী | 2402:3a80:198a:1a75:2854:42ea:9252:***:*** | ০৭ আগস্ট ২০২২ ১৪:৪৪510837
  • পরের পর্বের জন্য অপেক্ষারত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন