এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক

  • একটি উজ্জ্বল মাছ (উপন্যাস)

    Hasan Mostafiz লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ২৪ জুন ২০২০ | ৫২০১ বার পঠিত
  • পর্ব ১ | পর্ব ২
    ১.

    বাসটা মুগদার জ্যামে আটকে।আজব ব্যাপার, রাতে বাজে প্রায় বারটা,তাও মুগদায় এত জ্যাম।আমি বসেছি জানালার পাশে।এত রাতেও দেখলাম এক রিকশার গ্যারেজ থেকে রিকশাওয়ালারা বের হয়ে ভাড়া খোঁজার চেষ্টা করছে।এক ট্রাক দেখলাম পিছনে বালি বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।সেই বালির মধ্যেই এক অল্পবয়সী ছেলে আরাম করে ঘুমুচ্ছে।ছেলেটার ঘুম যে গাঢ় সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।নাকে বালি কিভাবে ঢুকছে না সে বিষয়ে খটকা লাগছে।
    আমরা আছি ৫ জন।তার মধ্যে একজন চট্টগ্রাম থেকে বাসে উঠবে।এখন বাসে আছি আমি, ইনু,আবরার আর শুভ।শুভ বারবার পলিথিন নিজের মুখের সামনে ধরছে।একটু আগেও মনোযোগ দিয়ে ফোনের পিডিএফ থেকে বুখারি শরীফ পড়ছিলো।হঠাৎ করে হাত আঁকড়ে ধরে বলল-হাসান,খারাপ লাগছে রে।
    -শার্ট ছাড়।শার্টটা এমনিতেই পুরানো।
    আবরার বলল-ঐ কি হয়েছে রে?
    শুভ মুখ কুঁচকে বলল-ভালো লাগছে না।চারপাশের সবকিছু ছোট হয়ে যাচ্ছে।
    -নিজের আঙ্গুল আবার ফুলে যাচ্ছে নাতো?
    শুভ নিজের হাতের আর পায়ের আঙ্গুল তাড়াতাড়ি দেখে বলল-না ঠিকই আছে।
    -তাহলে কিছু না।মোশন সিকনেস হচ্ছে।চুপচাপ বসে থাক।
    বলে কাঁচা আমের ফ্ল্যাভারের কয়েকটা ক্যান্ডি দিয়ে বলল-বমি আসলে এগুলো চুষবি।আর পলিথিন তো আছেই।নিয়ে বসে থাক।
    ইনু গম্ভীর হয়ে বসে আছে।এটা নতুন না।এলেন ডিজেনারেসের শো দেখলেও ওর মুখে হাসি ফুটে না।তবে আজ রাত গম্ভীর থাকার কারণ্টা ভিন্ন।আজ রাতটা ছিলো বিশেষ দিন।লুবনা প্রমিজ করেছিলো ওকে।আজ লুবনার বাবা-মার বাসায় থাকার কথা ছিলো না।ইনু তাই অনেক কষ্ট করে কয়েক বোতল বাংলা মদ জোগাড় করেছিলো।হাজারের মতো টাকা খরচ করে কয়েক আঁটি ঝাঁঝালো গাঁজা কিনেছে।গাঁজাগুলোর গন্ধ এত কড়া যে অনেক যাত্রীই ওর লাগেজের দিকে সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে।বাংলা মদ আর গাঁজা নিয়ে লুবনার বাড়ির সামনে যেতেই ও দেখলো বাসার নিচে লুবনা দাঁড়ানো।ওকে দেখেই লুবনা এগিয়ে এসে বলল-এই শুনো, বিল্ডিংয়ে না ডাকাতি হয়েছে। বাবা পুলিশ ডেকেছেন।আজ আর হবে না।তুমি অন্যদিন এসো।
    সেই গাঁজা আর বাংলা মদ নিয়ে ইনু বাসে উঠেছে।বাস যখন কোনো স্পিডব্রেকারের উপর দিয়ে যায়,তখনই বোতল নাড়ার শব্দ হয়।
    আবরার এসে ইনুর পাশে বসতেই ও জিজ্ঞাসা করলো-এখন কই আছি?
    -ডেমরা।
    -এত আস্তে যাচ্ছে কেন?ড্রাইভার শালা গাড়ি চালাতে জানে?
    -ইনু চুপ থাক।আগামীকাল সকাল দশটার আগে পৌঁছাতে পারলেই হলো।
    ওদের ঝগড়ার মধ্যেই শুভ পলিথিনে বমি করে দিলো।বমির ভটকা গন্ধ আসছে।
    ইনু আরো ক্ষেপে গিয়ে বলল-তোকে কে বলেছিলো এই চুতমারানিরে আনতে?শালা পুরা ট্রিপ নষ্ট করবে।ও যদি পাহাড়ে উঠে কোনো ঝামেলা করে তাহলে কিন্তু ওকে পুরা ধাক্কা মেরে ফেল দিব।
    শুভ হাঁপাচ্ছে।আবরার উঠে এসে ওকে পানি খাওয়ালো।
    ইনু এই ফাঁকে এই মহিলার সাথে ঝগড়া বাধিয়ে ফেললো।ডেমরায় মহিলাটি বাস থামাতে বলছেন।একজনের সাথে দেখা করা জরুরি।ইনু কিছুতেই বাস থামাতে দিবে না।
    এতকিছু ঘটছে অথচ আমার এসবে কোনো মনোযোগ নেই।জানালার বাইরে তাকিয়ে আছি।আমার মন পড়ে আছে আমার উপন্যাসটার প্রতি।এই উপন্যাসটার গল্প সামান্য দীর্ঘ।

    আমি ছোটবেলা থেকেই নিঃসঙ্গ মানুষ।স্কুল লাইফ পুরাটা কেটেছে বন্ধু ছাড়া।সেই একাকীত্ব আমি কাটিয়েছি লেখালেখি করে।প্রথম দিকে লেখালেখির প্রতি কোনো ঝোঁক ছিলো না।বাবা-মাও বই পড়তে দিত না।কিন্তু আমার যতদূর মনে আছে,আমার লেখার হবার বাসনাটা গভীর হয় যেদিন আমি টিভিতে হুমায়ুন আহমেদকে কবর দিতে দেখি।আমি দেখে খুবই অবাক হয়েছিলাম যে সামান্য লেখালেখি করে কীভাবে একজন এত বিখ্যাত হতে পারে।শেষ বয়সে শুনেছিলাম হুমায়ুন আহমেদও এক নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়েছেন।নিজ সন্তানরা যোগাযোগ রাখতো না।নিজের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানেও যেতে পারেননি।অথচ তার মৃত্যুর দিকে শুধু তার ছেলেপেলেরা না,বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরাও কাঁদছেন।সেই দিনই ঠিক করলাম লেখক হলে খারাপ হয় না।
    এস.এস.সি পর্যন্ত খালি গদ্যছন্দে কবিতা লিখতাম।অন্য ছন্দে কবিতা লিখলেও পরে দেখলাম সেগুলো সব নামছন্দ। কারণ একটারও মাত্রা ঠিকমতো মিলে নি।শেষে ঠিক করলাম বই যেহেতু ভালোই পড়া হয়েছে,একটা উপন্যাস লিখে ফেললে মন্দ হয় না।যা ভাবা,তাই করা।এক রাতে নিউজপ্রিন্ট কাগজ আর কলম নিয়ে বসে গেলাম।কিন্তু বসলেই তো আর লেখা হয় না।রাত দশটা থেকে যখন রাত বারটা বাজলো তখন হুট করে লিখে ফেললাম-

    "ত্বোহা ছুরি নিয়ে নিজের হাতটা সামান্য কেটে একটু রক্ত ওর স্টাডি টেবিলে ফেললো"

    লাইনটা লিখে সামান্য অবাক হলেও লেখা থামালাম না।সেই রাতে প্রচুর লিখলাম।এত লেখা জীবনেও লিখিনি।তখন আবার নটরডেম কলেজে ভর্তি হয়েছি।ওরিয়েন্টেশনে বসেছিলাম একদম শেষ সারিতে।সেদিন আবার চশমা নেইনি।দূর থেকে দেখলাম বিরাট সাইজের এক ভদ্রলোক বক্তৃতা দিচ্ছেন।নটরডেম কলেজ নিয়ে নিজের বিভিন্ন গল্প শোনাচ্ছেন।এমন সময় আমি চেঁচিয়ে উঠলাম-হাতিটা বেশি কথা বলে।
    সবাই হাসিহাসি শুরু করে দিলো। কিন্তু ভদ্রলোক নির্বিকার।আপনমনে বক্তৃতা দিচ্ছেন।যেন কিছুই হয়নি।
    পরে বাসায় এসে ফেসবুকে চেক করে দেখি তিনি হলেন ওয়াহিদ ইবনে রেজা।উন্মাদের প্রাক্তন সহকারী সম্পাদক,সনি কোম্পানির ভিজুয়াল এফেক্টস ডাইরেক্টর।
    এই মানুষটাকে নিয়ে এত আজেবাজে কথা বলায় আমি খুবই লজ্জিত হয়েছিলাম।পরে ওনার ফেসবুক আইডি খুঁজে সেখানে ক্ষমা চেয়ে নেই।আমি ভেবেছিলাম উনি রিপ্লাই দিবেন না।বেশিরভাগ বিখ্যাত লোকই এই কাজটা করেন।কোনো রিপ্লাই দেন না।কিন্তু ওনার ক্ষেত্রে দেখলাম ব্যতিক্রম ব্যাপার ঘটলো।রাত তিনটায় বসে আপনমনে উপন্যাস লিখছি এমন সময়ে ওনার ম্যাসেজ পেলাম-"কোনো সমস্যা নেই,এমন হতেই পারে।"
    এমন হাম্বল ম্যাসেজ দেখে সেদিন খুব আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম।ওনাকে ম্যাসেজ দিলাম -"ভাইয়া,আমি একটা উপন্যাস লিখছি"
    ভাইয়াও সাথে সাথে উত্তর দিলেন-"বাহ!বেশ তো,আমাকেই পাঠিয়ো লেখা শেষ হলে।"
    আমি তখনো বুঝিনি ওনার মাধ্যেমে আমি একদিন উন্মাদে যুক্ত হব।

    ২.

    কুমিল্লা শহরে এসে এক স্টেশনে বাস থামলো।শুভ এখন অনেক স্বাভাবিক।ঘুমিয়ে আছে।ভাবলাম ডাকবো কিনা তখনই আবরার বলল-"থাক,দরকার নেই।শালা ঘুমাক"
    আমি ইনু দুজনই ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সিগারেট ধরালাম।ইনু এখনো ক্ষেপে আছে।ওর জন্য মায়াও হচ্ছে।একটা বিশেষ দিন এভাবে নষ্ট হওয়া।ইতোমধ্যে বিল্ডিংয়ে ডাকাতির খবর বিডিনিউজে চলে এসেছে।ওখানে লুবনার স্টেটমেন্টও আছে।ইনু একবার করে ওটা দেখে আর বলে -"খানকি"।
    নাহ!ইনু বড্ড গালি দেয়।একটা বিষয় বুঝতে পারছি না যে ইনু কেন এত রাগ করলো।আজ তো ওর প্রথম না,এমন বিশেষ রাত ও অনেক কাটিয়েছে।কলেজে ওর সাথে পরিচয়ের পর থেকেই দেখেছি ওর বিশেষ রাত একটা একটা করে আসে।এর মধ্যে বহু রাত নষ্ট হলেও ও এত রাগ করতো না।কিন্তু আজ কেন এত রাগ করছে?
    এমন সময়ে পিছে তাকিয়ে দেখলাম শুভ আসছে।মুখে হাসি।ও দেখে যদিও ইনু খুশি হলো না।ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল-তুই উঠে এসেছিস কেন?
    শুভ উত্তর দিলো না।ওর একটা হাত পিছনে লুকানো।জিজ্ঞাসা করতে যাব পিছনে কি তখনই বাস থেকে আবরার নেমে এলো।ওর হাতে অলটাইম কোম্পানির একটা বাটার ব্রেড।তার উপর কাগজ দিয়ে কোনোমতে একটা মোমবাতি বানানো।ওটা ইনুর দিক ধরে বলল-হ্যাপি বার্থডে।
    ভেবেছিলাম ইনু ক্ষেপে যাবে। কিন্তু না, এই ট্রিপের মধ্যে প্রথমবার ইনুর মুখে হাসি দেখলাম।এই সামান্য বিষয় ওকে খুশি করে ফেললো?
    এত কুয়াশা আর শীত যে মোমবাতি জ্বালানোই যাচ্ছিলো না।শেষে ইনু ম্যাচ কেড়ে নিয়ে নিজে জ্বালিয়ে নিজেই ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিলো।পরে ব্রেডটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে সবাইকে খাইয়ে দিলো।আবরার বলল-উইশ করেছিস কিছু?
    ইনু বলল-সেটা তোকে কেন বলব?
    শুভ তখনো হাসছে।
    আমি বললাম-তোর পিছনে কি?
    শুভ তখন দেখালো।বাংলা মদের বোতল নিয়ে এসেছে।ইনু এবার আবার হাসলো।তারপর ব্যঙ্গ করে বলল-একটু আগে না ফোনে বুখারি শরীফ পড়ছিলো?মদ খেয়ে হাদিস পড়া যায়?
    আবরার সেটা জানার অপেক্ষা করলো না।বোতলটা খুলে বড় একটা চুমুক দিলো।এরপর ইনু খেল।ইনু আমার দিকে এগিয়ে বলল-খাবি?
    অর্ণার কথা মনে পড়লো।ও নিষেধ করেছে।পরে ভাবলাম অর্ণা এখানে নেই।কাজে ওকে মিথ্যা বলাটা পাপ না।যেহেতু আমাদের সম্পর্কটা মিথ্যা,কাজে কথাগুলোও মিথ্যা হতে পারে।আমি বোতলটা নিয়ে চুমুক দিলাম।কেমিস্ট্রিতে ইথানলের বিক্রিয়ার সাথে মিথানলের বিক্রিয়াও আছে।এই বাংলা মদ হচ্ছে মিথানল।শুনেছি মিথানল বেশি খেলে থ্রোট ক্যান্সার হয়।তবে আমাদের কোনো ভাবান্তর নেই।শুভও খাচ্ছে।
    আমি হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার দিকে চলে গেলাম।কুয়াশা খুব বেড়েছে।দূর থেকে বাস আর ট্রাক দেখা যায় না।ইচ্ছা করছে হাইরোডের মাঝখানে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলি-"এই পৃথিবী আমার'।
    চাইলে এই কাজটা আমি জীবন ঝুঁকি নিয়ে করতে পারি,কিন্তু কথাটার কোনো মূল্য নেই।কারণ পুরো পৃথিবী আমার হলে অর্ণা যেমন আমার হতো,তেমনি সুরভিও আমার হতো।কিন্তু কেউই আমার নয়।একজন থাকেনি তাই আমার হয়নি,অন্যজন থেকেও আমার হয়নি।এই দুইজনের জন্যেই আমার বারবার ইচ্ছা হয় একটু খারাপ হই।যদিও আমি এখন সংজ্ঞামতে খারাপ,তাও ইচ্ছা হয় আরও খারাপ হই।
    বাস ছাড়ার সময় ইনু এসে জোর করে শুভর পাশে এসে বসলো।রাগী গলায় বলল-শালা বেশ তো বাহাদুরি দেখালি,জ্বর এসেছে এটা বলবি না?
    শুভর কপালে হাত দিয়ে দেখলাম আসলেই জ্বর এসেছে।আবরার চিন্তিত গলায় বলল-ইশ!ওর ঐসব খাওয়া একদমই উচিত হয়নি।ব্যাগে নাপা আছে।দিচ্ছি দাঁড়া।
    ইনু বাধা দিয়ে বলল-আরে না, ওর পেটে মদ ছাড়া কিছুই নেই।বাস পাহাড়তলীতে যখন থামবে তখন ওকে কিছু খাইয়ে এরপর মেডিসিন দিব।
    আবরার হেসে ফেললো।ইনুর মনের ঠিক নেই।যখন রেগে থাকে,তখন কাউকেই পাত্তা দেয় না।আর যখন মেজাজ নরম থাকে,তখন সবকিছুর প্রতিই ওর মায়া জন্মায়।একবার এক ফকিরকে পাঁচশ টাকা দিয়েছিল বিনা কারণে।
    আবরারের পাশে বসতেই একটা মেইল পেলাম।এক পত্রিকা আমার তিনটি কবিতা ছাপিয়েছে।সেগুলো যখন দেখছিলাম তখন আবরার তা খেয়াল করে বলল-তুই কি করিস এসব?বোরড লাগে না কখনো?
    আমি হেসে বললাম-আমার কোনো গুণ আছে রে?তোর কত গুণ।আর্মিতে এক্সাম দিয়ে সিলেক্ট হলি।নিজের ক্লাবে প্যানেল পেলি।জীবনে যা হতে চেয়েছিলো তাই পেলি।শুভও তো তাই পেলো।ভাষা নিয়ে একটা স্কলারশিপ পেল।কিছুদিন পর চীনে চলে যাবে।ইনুও টেস্ট ভালো করেছে।ইন্টারও ভালো করবে।কিন্তু আমার কি হবে রে?
    আবরার বলল-তুই মদ খাবি।
    দুইজনই হো হো করে হেসে উঠলাম।সামনের সিটে এক মহিলা ঘুমুচ্ছিলেন।তিনি পিছনে ফিরে কড়া চোখে তাকালেন।তাও আমাদের হাসি থামলো না।দুইজনের মুখ থেকেই বাংলা মদের গন্ধ আসছে।কিছু যাত্রীও বিচলিত বোধ করছে কিন্তু কেউই কিছু বলছে না।আমাদের উদভ্রান্ত চেহারা দেখে ভাবছে আমরা গুন্ডা জাতীয় কিছু।আবার শুভকে দেখেও তারা হকচকিয়ে যাচ্ছে।এত সুন্দর চেহারার ভদ্র ছেলে এমন জানোয়ারদের সাথে কিভাবে মিশছে?
    এর পিছনে আসলে দায়ী জীবন।জীবন কি চায় তা কেউ আসলে কখনো বলতে পারে না।জীবনের সাথে তাল মেলালে মানুষ পশুর সমান হয়।আমি হয়ত পশু।নইলে পড়াশোনা বাদ দিয়ে কিসবে জড়িয়ে যাচ্ছি।

    উপন্যাসটা শেষ হবার পর বহুকষ্টে কলেজের পরীক্ষার মধ্যে সেটার পিডিএফ বানিয়ে বাপ্পী(ওয়াহিদ ইবনে রেজা)ভাইকে পড়তে দিলাম।উনি যদিও দুই সপ্তাহ সময় চাইলেন,কিন্তু তাও আমি প্রায় প্রতিদিন ওনাকে জ্বালাতন করতাম।উনি এতে বিরক্ত হয়ে আমার উপর রাগ ঝাড়তেন।পরে একদিন জানলাম উনি প্রচণ্ড অসুস্থ।ওনার গাউট হয়েছে।তাছাড়া ওনার মা মারা গেছেন মাত্র কয়েক সপ্তাহ হয়েছে।তবুও আমি থামতাম না।ইচ্ছামতো বাপ্পী ভাইকে ম্যাসেজ দিয়ে বিরক্ত করতাম।আর ওনার ঝাড়ি দেবার ভাষাও কঠোর থেকে কঠোর হত।
    একদিন রাতে আবরারের সাথে ঘুরে এসে হোস্টেলে ফিরছি এমন সময় বাপ্পী ভাইয়ের ম্যাসেজ পেলাম।অনেকদিন পর তিনি আমাকে সুন্দর একটা ম্যাসেজ দিলেন।ম্যাসেজে লিখেছিলেন-"হাসান,অনেকদিন পর একটা সুন্দর উপন্যাস পড়লাম।খুব এনজয় করেছি।তোমাকে অভিনন্দন"!
    সেদিন প্রথম কেউ আমার লেখার প্রশংসা করেছিলো।আমি সাথে সাথে ম্যাসেজ দিলাম -"ভাইয়া,আমাকে একজন প্রকাশক খুঁজে দিবেন?"
    বাপ্পী ভাইয়া ম্যাসেজ দিলেন-"অবশ্যই,আমি জোগাড় করে তোমাকে জানাবো।"
    ঐদিন খুব আনন্দ হয়েছিলো।আবরারকে সাথে সাথে জানালাম কথাটা।ও পাত্তাই দিলো না,কিন্তু ঐদিনটা মন এত ভালো ছিলো যে ওর ঐ ভাবটা কষ্ট দিলো না।

    ৩.

    পাহাড়তলীতে নেমে ভাগ্যক্রমে এক ডাক্তার পাওয়া গেল।ডাক্তার সিলেট যাচ্ছিলেন।উনি শুভকে দেখেই বল্লেন-"আরে ওর কিছুই হয়নি,স্যালাইন খাইয়ে দিন শুধু।"
    ইনু স্যালাইন কিনতে গিয়ে ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে ফিরে এলো।প্রিন্স আসতে পারবে না।ওর বাবা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।ইনু ক্ষেপে বলল-"শালার সমস্যা আর শেষ হয় না",বলেই সিগারেট ধরালো।আমি ভাবছি ভালোই হলো।দরকার কি এত লোক আসার।আমরা চারজনই থাকি।যদিও টিকেটের টাকা ১০০০ টাকা বেশি লাগলো। বাসে টিকেট চেকারের সাথে অনেক কথা বলেও টাকা কমানো গেল না।
    বান্দরবান বাস স্টেশনে যখন নামলাম তখন মাত্র ভোর শুরু হয়েছে।আমরা নেমেই মেঘ দেখতে পাচ্ছিলাম।প্রথম প্রথম কুয়াশা মনে হলেও পরে জানা গেল এগুলো মেঘ।
    সময়মতো আবরারের ভাড়া করা গাড়ি আসার পর আমরা সবাই আগে নাস্তা করে নিলাম।এরপর আমরা আবার রওনা দিলাম।যে গাড়িটা আবরার ভাড়া করেছে তাকে বলে চাঁদের গাড়ি।গাড়িটা এত জোরে চালাচ্ছিলো যে শুভ বারবার অস্থির হয়ে পড়ছিলো।আশেপাশের দৃশ্য এত মনোমুগ্ধকর।শুধু পাহাড় আর পাহাড়।পাহাড়ের মধ্যে রাস্তাগুলি অজগর সাপের মতো আঁকাবাঁকা। একটু উপরে উঠতে ডিম পাহাড় দেখা যায়।বহু পাহাড়ে আদিবাসীরা জুম চাষ করছে সেটাও দেখলাম।জমজম জাংশনে এসে প্রথম চেকিং পড়লো।শুভ আবার বিচলিত কারণ ইনুর কাছে বাংলা মদ আছে।আর্মিরা এটা দেখলেই আমাদের নামে মামলা করবে। কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাদের ভাড়া করা গাইড রঞ্জনদা ফট করে সব বোতল এক কলার দোকানে লুকিয়ে ফেললো।চেকিংয়ের সময় আর্মির লোক যখন জিজ্ঞাসা করলো মদ,গাঞ্জা টাইপ কিছু আছে কিনা তখন আমাদের আগেই রঞ্জনদা বললেন-না,না স্যার।এরা ভালো মানুষ।ঢাকায় অনেক বড় জায়গায় পড়াশোনা করে।
    চেকিংয়ের পর রঞ্জনদা এসে ইনুকে বললেন-আরে ভাই এতদূর থেকে এটা টেনে আনছেন কেন,আমি আপনারে আসল জিনিস খাওয়াবো।
    গাড়ি যখন আবার চলা শুরু করলো আমার মনটা তখন সামান্য বিক্ষিপ্ত। প্রকৃতির সাথে একান্ত ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কাটাতে হলে আগে অতীতের কিছু ঘটনা প্রকৃতিকে হিসাব দিতে হয়।আমি এখন প্রকৃতিকে হিসাব দিচ্ছি।আমার সব ঘটনা একসাথে মনে পড়ছে।

    বাপ্পী ভাই যখন প্রকাশক খুঁজে দিলেন তখন আমার ফার্স্ট ইয়ারের এক্সাম চলে।ফিজিক্স পরীক্ষার দিন মন দিয়ে পড়ছি এমন সময় ওনার ম্যাসেজ-"হাসান,তোমার প্রকাশক খুঁজে পেয়েছি।প্রথমে বিশ হাজার চেয়েছিলো।কিন্তু তোমার উপন্যাসটা পড়ে সামান্য টাকা কমিয়েছে"।
    আমি আকাশ থেকে না,কালপুরুষ থেকে পড়লাম।২০
    হাজার টাকা?এত টাকা কই পাব?আর আমি তো ওনাকে প্রকাশক খুঁজে দিতে বলেছি যাতে টাকা না লাগে। কিন্তু উনিও দেখি অন্যদের মতোই করছেন।
    আমি ম্যাসেজ দিলাম,"ভাই,আমি এত টাকা কই পাব।আর লেখা ভালো হবার পরেও টাকা লাগবে?"
    উনি সাথে সাথে রিপ্লাই দিলেন,"নাতো কি?তুমি এখনকার নিয়ম জানো না?
    আমি লিখতে গেলাম, "জানি কিন্ত…."
    তার আগেই উনি ম্যাসেজ দিলেন,"তুমি জানো,শামসুর রাহমানের মৃত্যুর পর তার নতুন কবিতার বই মাত্র ৩০ কপি বিক্রি হয়েছিল?সে জায়গায় তুমি এখনো কিছুই নও।আর সত্যি করে বলো তো,তোমার লেখা কোনো বিখ্যাত পত্রিকা,ম্যাগাজিনে বের হয়েছে?"
    -না।
    -তাহলে তুমি কেন বই করার চিন্তা করো?তোমার বই একটুও বিক্রি হবে না।
    আমার সেদিন মনে হল এত ব্যথা কখনো পাইনি।যাকে ভেবেছিলাম আমার মেন্টর হবেন তিনিও দেখি প্রথাগতদের মতো ব্যবহার করছেন।আগেকার দিনে কত বড় বড় সাহিত্যিক যেমন বুদ্ধদেব বসু নিজের লেখার সাথে অন্য বিভিন্ন মামুলি লেখকদের খুঁজে এনে তাদের নিজ পত্রিকায় লেখার উৎসাহ দিতেন।বই করে দিতেন।অথচ এখন কেউই এমন নাই।সেদিন আমি খেয়াল করে দেখলাম আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর আমি প্রচুর ঘামছি।
    শেষে বাপ্পী ভাইকে ম্যাসেজ দিলাম,"ভাই,আপনাকে ধন্যবাদ।অনেক করেছেন আমার জন্য।আমি এসব কখনও ভুলব না।"
    সেদিনের পর আমার কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের এক্সামের রেজাল্ট প্রচণ্ড খারাপ হলো। মনে একধরনের দূষিত অভিমানও জন্মালো।এরপর আমি বহুদিন বাপ্পী ভাইয়ের সাথে কথা বলিনি।



    জাংশনের পর বান্দরবান শহরে বৌদ্ধমন্দিরের পাশে আবার চেকপোস্টে যেতে হলো।তবে প্রথমবারের মতো ওত ঝামেলা হলো না।ইনুর বড় ভাই আর্মির মেজর।দুই বছর বান্দরবানে ছিলেন।ইনু কখনো এই পরিচয়টা ইউজ করতে চায় না কারণ এতে ওর স্বাধীনতা নষ্ট হয়।ওকে অযথা খাতিরও করা হয়।কিন্তু এবার আবরার ওকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করালো কারণ একটু এক্সট্রা সিকিউরিটি থাকলে খারাপ হবে না।যেহেতু আমাদের সাথে শুভর মতো নিষ্পাপ ছেলে আছে।
    চেকিংয়ের পর একজন সৈনিক আমাদের নৌকা ঠিক করে দিলো।আমরা রিযুক ঝর্ণা দেখতে যাব।সেজন্য বান্দরবানের ঘাটে যেতে হবে।বান্দরবানের পাশ দিয়ে গেছে সাংগু নদী।প্রথম দেখে একটুও চিনতে পারিনি নদীটিকে।ইন্টারনেটে নদীটির ছবি সংস্করণ করা হয়নি।
    নদীটি গিয়েছে পাহাড়ের মাঝ দিয়ে।এইসব পাহাড়ের মধ্যে হয়ত আগের গৌরব নেই,তবে মাথা উঁচু রাখার সাহস ঠিকই আছে।যতই দেখি ততই মুগ্ধ হয়।শুভ ক্রমাগত ছবি তুলে যাচ্ছে।আবরার,আমি, ইনু সিগারেট ধরালাম।

    রিযুক ঝর্ণার কাছে পৌঁছে গেলাম আধঘন্টার মধ্যে।তখন সকাল দশটা বাজে।ঝর্ণার শব্দের মধ্যে তেজ আছে।রঞ্জনদা বললেন যে এই ঝর্ণাই সাংগু নদীকে বাঁচিয়ে রেখেছে।অবশ্য সাংগু নদী শীতকাল হওয়ায় অনেক শুকিয়ে গিয়েছে।নদীতে এখন হাঁটুজল পানি।কিন্তু মাছ একটুও কমেনি।
    রঞ্জনদা জানালেন দুই মাস আগেই ঝর্ণার নিচে চোরাবালিতে আটকে এক যুবক মারা গেছেন।যুবকের সাথে তার স্ত্রী ছিল।সেই ভদ্রমহিলা স্বামীকে চোখের সামনে মারা যেতে দেখেছেন।ভাবতেই বুকে মায়া আসে।
    ইনু তাও কথা শুনলো না।উঁচু-নিচু পাথর বেয়ে পাহাড়ে সামান্য উঠে ঝর্ণার কাছে চলে গেল।কাছে গিয়ে ঝর্ণার পানি ফ্লাস্কে ভরে ফেললো।শুভ চেঁচিয়ে বলল-ঐ ইনু, দাঁড়া, তোর ছবি তুলে দেই।
    ইনুও চিৎকার করে কি বলল বুঝা গেল না।তবে ও ছবি তুলবার জন্য দাঁড়ালো না।দ্রুত নেমে এসে আমাকে বলল-যা ঝর্ণা দেখে আয়।
    -দেখছিই তো।
    -এতদূর থেকে কি দেখবি?যা কাছে গিয়ে দেখ।
    -না এখানেই ভালো লাগছে।
    -শালা খানকি।
    ইনু গালি না দিয়ে থাকতে পারে না।আবরার ততক্ষণে নদীতে নেমে গেছে।সাঁতার কাটতে পারছে না কারণ নদীতে তেমন পানি নেই।

    ফিরবার পথে ইনু গান ধরলো।ইনু রক গান ভালো গায়।সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছে আর আমি পড়ে আছি অতীত নিয়ে।অতীতের এক মোহ আছে যে মোহ আমি এড়াতে পারি না।সেজন্যই হয়ত আমি অন্যদের চেয়ে দুর্বল।
    বাপ্পী ভাইয়ের সাথে ঐদিনের কথোপকথনের পর ঠিক করলাম কোনো ম্যাগাজিনের সাথে যুক্ত হব।শুরু করে দিলাম এসব নিয়ে খোঁজাখুঁজি। কিন্তু পরে মনে হলো অন্যসব ম্যাগাজিনে গিয়ে ঝুলে থাকার চেয়ে উন্মাদ ম্যাগাজিনে যোগ দেওয়াই বেটার।কারণ উন্মাদ ম্যাগাজিনের মতো এত সলিড আর এপ্রিশিয়েটিং রিভিউ আর কোনো ম্যাগাজিনের নেই।আর আমার মধ্যে জন্মগত ভাবেই হিউমার জিনিসটা নেই।হয়ত উন্মাদে গেলে সার্থক জোকস লিখতে পারব।
    যে ভাবা সেই কাজ।ইনু,আমি আর আবরার একদিন মিরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।কমলাপুর স্টেশনে উঠে ট্রেনে করে নামলাম উত্তরা।সেখান থেকে বাসে করে মিরপুর ১২ চলে গেলাম।প্রথমে আমরা কেউই বাসা খুঁজে পাই না।শেষে এক দোকানদার জিজ্ঞাসা করলো-আপনারা কই যাবেন?
    আমি বললাম-উন্মাদ অফিস খুঁজছি।
    দোকানদার চমকে উঠে বললেন-আরে অফিসের সামনেই তো দাঁড়িয়ে আছেন।
    অর্থাৎ আন্দাজেই আমরা ঠিক বাড়ির সামনে চলে এসেছি।বিল্ডিংয়ের দোতলা উঠে দেখি এক দরজার ছোট্ট করে একটা ভিজিটিং কার্ড লাগানো।তাতে উন্মাদের সম্পাদকের পরিচয় দেওয়া।
    দরজার নক করতেই যিনি খুললেন তাকে দেখে আবরার বলল-দোস্ত দেখ,হুমায়ুন আহমেদ।
    আমি আস্তে বললাম-ধ্যৎ, উনি মারা গেছেন না?
    আমাদের কথাবার্তা শুনে আহসান হাবীব সাহেব হেসে দিলেন।হাসতে হাসতে বললেন-তোমরা কি আমার কাছে এসেছো?
    ইনু বলল-জি।
    উনি আমাদের অফিসে নিয়ে বসালেন।নেটে যে অফিস দেখেছিলাম এটা সেই অফিস না।শুনলাম অফিসের লোকেশন কয়েকমাস হলো চেঞ্জ করা হয়েছে।ইনু আর আবরার জমিয়ে ওনার সাথে আড্ডা শুরু করে দিলো।আমি চুপচাপ লাজুকভাবে বসেই থাকলাম।শেষে আবরারই উঠে বলল-স্যার,হাসান উন্মাদে কাজ করতে চায়।ওর জন্যেই আমাদের এখানে আসা।
    তখন যেয়ে আহসান হাবীব সাহেব আমার দিকে তাকালেন।সহজ গলায় বললেন-তুমি কার্টুনিস্ট?
    আমি লজ্জিত গলায় বললাম-জি না।
    -তাহলে কি তুমি?
    -আমি সামান্য লেখালেখি পারি।
    -ও আচ্ছা আচ্ছা।তা বেশ তো।উন্মাদে অনেকেই লিখতো।তুমি এক কাজ করো।একটা ফানি ইন্টারভিউ লিখে আনো।
    উন্মাদে প্রত্যেক সংখ্যায় বিভিন্ন কাল্পনিক ও বাস্তব ক্যারেক্টারকে নিয়ে একটা ইন্টারভিউমূলক ফিচার বের হয়।ওটা নিয়ে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে যাব তখনই উনি বললেন-কিছু মনে করো না তোমরা।আমি আবার ড্যাফোডিলে ক্লাস নেই।আমার এখন ক্লাসে যেতে হবে।
    তখনই বিদায় নেবার ইচ্ছা না থাকলেও উঠতেই হলো।কিন্তু মনটা সামান্য আনন্দিত ছিল কারণ একটা কাজ অন্তত পেয়েছি।

    ৫.

    সেদিন রাতেই আমি পাঁচটা ইন্টারভিউ লিখে ফেলি।পরের দিন কলেজ ফাঁকি দিয়ে তা নিয়ে যাই অফিসে।আহসান হাবীব সাহেব আমাকে দেখেই বললেন-আরে তুমি?এত তাড়াতাড়ি?বসো বসো।
    অফিসে ঢুকেই দাড়িগোঁফে মুখ ভরা একজন ভদ্রলোককে দেখলাম।দেখতে একদম ফিটফাট। মনে হয় আর্মিতে ঢুকার জন্য ট্রেনিং করেছেন।পরে জানলাম উনি মোর্শেদ মিশু।মোর্শেদ মিশু ততদিনে ভালোই বিখ্যাত।তার গ্লোবাল হ্যাপিনেস চ্যালেঞ্জ ছবিগুলো বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত।ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে ছবিগুলির এক্সিবিশন হয়ে গেছে।
    সেদিন প্রথম দেখলাম অফিসের সবাই আহসান হাবীব সাহেবকে বস বলে সম্বোধন করছেন।ভাবছি আমিও বস বলে ডাকব কিনা ওমনি আহসান হাবীব সাহেব বললেন-লিখেছো ভালোই।তবে আঁকা একটু মুশকিল হবে।
    সে কথায় কান না দিয়ে আমি বললাম-স্যার, আমি উন্মাদের সাথে কাজ করতে চাই।
    উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-সামনের বছরের বইমেলায় স্টলে বসবা?
    আমি না বুঝেই বললাম-হ্যাঁঁ স্যার,আমি বসব।
    সেদিন আমাকে নিয়ে সামান্য হাসাহাসিও হলো।বিশেষ করে আমার স্বাস্থ্য নিয়ে।অবশ্য সেটা নিয়ে আমি বিচলিত নই কারণ আমার স্বাস্থ্য আসলেই খারাপ।আমি প্রচণ্ড মোটা।মাথায় চুল নেই।মুখে দাড়ির জঙ্গল।তবে আমাকে যে স্যার গ্রহণ করে নিয়েছিলেন সেটা ঐদিনই বুঝতে পেরেছিলাম।

    তবে এর ফাঁকে আরেকটি ঘটনা আমার সাথে ঘটেছিলো যা আমি কখনই ভুলতে পারব না।কলেজে আমাদের সাথে এক ছেলে পড়ে নাম আমির।৬ ফুটের মতো লম্বা।ছেলে ভালো হলেও সমস্যা হলো মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে ওর ধারণা নেই।যেভাবে খুশি মুখ চালায়।ওর গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে এজন্য ঠাট্টা তামাশা হয়।মেয়েটাকে নিয়ে এমন ফাজলামি আমার ভালো লাগে না।আমি আমিরকে বহুবার বললেও ও মুখ উল্টিয়ে বলে-কি হয়েছে বললে?
    একদিন বায়োলজি ক্লাস হচ্ছে। আমির পাশের বেঞ্চ থেকে আমাকে ডেকে এক নম্বর দেখিয়ে বলল-জানিস এটা সুরভির নম্বর।ওকে না আজপর্যন্ত কোনো ছেলে পটাতে পারেনি।কেউ প্রপোজ করলে ও কঠিনভাবে অপমান করে।
    আমি বললাম-ও আচ্ছা।
    টিফিন পিরিয়ডে আমির যখন বাইরে গেল আমি দ্রুত ওর বেঞ্চের ডেস্ক হতে মোবাইলটা নিয়ে সুরভির নম্বর লিখে নিলাম।আমি আসলে প্রেমের দিক দিয়ে ব্যর্থ।বহু মেয়েকে মনের কথা জানালেও কেউই গ্রহণ করেনি।সেজন্য অনেক আজেবাজে কথাও আছে আমাকে নিয়ে।তবুও ভাবলাম এত কঠিন মেয়ে একটু চেষ্টা করে দেখি। যদি লেগে যায় আরকি…..
    এরপর থেকে প্রত্যেকদিন আমি এই নম্বরে হাইকু কবিতার মতো কবিতা পাঠাতাম।ছোট এক দুই লাইনের।এসব পাঠানোর কোনো মানে ছিলো না কারণ এই যুগ হলো আধুনিক যুগ।আধুনিক যুগের নিয়ম হলো কেউ কবিতা পড়ে না,কিন্তু কবিতা লিখে।

    এক বিকালে এক পত্রিকার অফিস থেকে অপমানিত হয়ে ফিরছি এমন সময় দেখি ফোন বাজে।পকেট থেকে ফোন বের করতেই নম্বরটা চিনলাম।এটা সুরভির নম্বর।শরীরে প্রচুর রোমাঞ্চ তৈরি হলো।কিন্তু ফোন ধরব কিনা ভাবছি।শেষে ভাবলাম ধরি।ধরেই বললাম-রাস্তায়
    এখন কথা বলব না।
    ওপাশ থেকে শব্দ নেই।পরে একটা নরম কণ্ঠ শুনলাম-আপনি কে?
    -মানুষই হব।
    -আপনার নাম কি?
    -অনেকে গালিগালাজ করে আমাকে অনেক নাম দেয়।আমার এক বন্ধু আছে ইনু।ও ডাকে লিঙ্গহীন পুরুষ।
    -আপনার বাবা-মা আকিকা করে যে নাম দিয়েছে সেটা বলেন।
    আমি হেসে ফেললাম।যাক মেয়েটি রসিক।অশ্লীল কথা শুনেই থামেনি।কিন্তু বেশি গুরুত্ব দেওয়া যাবে না।আমি বহু মেয়ের কাছেই অপমানিত হয়েছি।এবার হব না।আমি গম্ভীর গলায় বললাম-শোনো এক এক্সপেরিমেন্টের জন্য আমি তোমাকে ঐসব কবিতা পাঠাতাম। কিন্তু সেটা এখন শেষ।তাই আর তোমার সাথে যোগাযোগ রাখার দরকার দেখছি না।রাখি,বাই।
    ফোন রেখে দিলাম।কিন্তু ফোন রাখার সাথে সাথেই একটা ম্যাসেজ পেলাম। সুরভি দিয়েছে।লিখেছে-"কিসের এক্সপেরিমেন্ট? "

    তাই তো!কিসের এক্সপেরিমেন্ট? মুখ ফুটে বললাম,কিন্তু নিজেই জানি না?
    এরপর বহুদিন ভেবেই আমি বের করতে পারিনি ওকে নিয়ে কি এক্সপেরিমেন্ট করেছি।

    ৬.

    যখন ফিরে এলাম তখন বাজে সকাল ১১ টার মতো।হাতে একদমই সময় নেই।তাড়াতাড়ি আমরা টিকেট কেটে রোয়াংছড়ির বাস ধরলাম।বাসগুলির সিট একদম চাপা,পা রাখার পর্যন্ত জায়গা নেই।আর প্রচুর দুর্গন্ধ।আশেপাশের বৌদ্ধমন্দিরের লামারা পাইপ টানতে টানতে বাসে উঠে যাচ্ছে।শুনলাম তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়।টিকেটও কাটা হয় না তাদের।

    রোয়াংছড়ির বাস ছাড়ার আগেই আরেকটা ক্ষুদ্র ঝামেলা হল।আবরার গিয়েছিলো কাউন্টারের টয়লেটে।বের হবার সময় কাউন্টারের গার্ড বলল যে টয়লেট ইউজ করার জন্য ২০ টাকা দিতে হবে।এটা শুনে আবরার প্রচণ্ড ক্ষেপে গেল।গলা ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলো-শালা, বাল ফেলার জায়গা পাওয়া না?টয়লেটে না আছে পানি, না আছে বদনা বা সাবান।আর দিব বিশ টাকা?
    ইনুও এই কান্ড শুনে বাস থেকে নেমে সোজা কাউন্টারের গার্ডকে ঘুষি মেরে বসলো।আমারো প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হলো।পরিবেশ যখন আরো খারাপ হচ্ছে তখনই এক ভদ্রলোক চিৎকার করে বললেন-আইচ্ছা ছার,ঠিইক আছে।আফনাগো ট্যাকা দেওন লাগবো না।
    আবরার ছাড়ে না।আবরার বলতে লাগলো-শালা,আমার সাথে প্রতারণার সুযোগ পেলে না,কিন্তু অন্য যাত্রীদের সাথে তো ঠিকই প্রতারণা কর।টয়লেটের দরজা থেকে টাকার ঘোষণাটা নামাও।এক্ষুণি।
    আবরারের ব্যক্তিত্ব খুবই কঠিন।এর সামনে দাঁড়ানো সোজা না।বাসের মালিক নিজে গিয়ে সাইনটা নামিয়ে ফেললেন।
    বাস ছাড়ার সাথে সাথেই শুভ ঘুমিয়ে পড়লো।ও আমার শরীরের উপর লেলিয়ে পড়ে আছে।মুখ হা করে থাকায় লালা আমার শার্টে পড়ছে।তবুও ওকে জাগালাম না।থাক,বেচারা ঘুমাক।আমি বরং অতীত ভাবি।

    ওদিনের পর সুরভি অনেক ফোন দিয়েছিলো।অথচ সে ফোন আমি ধরিনি।আমির মাঝে মাঝে এসে বলতো সুরভি দেখা করতে চায়।কিন্তু আমি রাজি হইনি।কারণ আমি প্রচণ্ড ভীতু।তার চেয়েও বড় ব্যাপার,মেয়েরা আমাকে ঠিক পছন্দ করতে পারে না।স্কুল জীবনে কবিতা বেশি পড়ার জোরে আমি প্রেমপত্র লেখায় পারদর্শী হয়ে উঠেছিলাম।কত ছেলের যে প্রেমপত্র লিখে দিয়েছি,তার খেয়াল নেই।অথচ নিজে কখনো কোনো মেয়ের সান্নিধ্যে পাইনি।জীবনে প্রথম শিফা নামে একটি মেয়ের প্রতি দুর্বল হয়েছিলাম।পরে সে মেয়ে আমাকে প্রকাশ্যে এমন অপমান করেছিলো,ভাবলেই মনটা ঠান্ডা হয়ে যায়।

    বাস যতই রোয়াংছড়ির দিকে এগুচ্ছে,শুভর নাকের কাছে যতই লামাদের নগ্ন বগলের কটু গন্ধ আসছে,আমার তখনো সেসবে মন বসে না।আমার মনে পড়ে তখন ছাত্র আন্দোলনের কথা।এর পিছনের কাহিনী অতি নির্মম।বহু মহাপুরুষদের জীবনের বিষাদ কাহিনীকেও এটি হার মানায়।

    বাংলাদেশের পরিবহন অংশ সত্যি বলতে আজকে ইন্ডাইরেক্টলি কন্ট্রোল করে বিভিন্ন বাস কোম্পানির মালিকরা।বাস চালকরাও জানে বাস ব্যবহার না করে বাংলাদেশিদের উপায় নেই।বাংলাদেশিরা দরকার হলে একসিডেন্ট করে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হতে রাজি,তাও বিপদজনকভাবে বাস ব্যবহার করবে।এই লাই পেয়ে বাসচালকরা কখনই কোনো ট্রাফিক রুলস মানে না।ফলে শাহবাগ,মিরপুর,ইসিবি চত্বর,এয়ারপোর্ট রোড -এসব জায়গা হয়ে উঠে তাদের কাল্পনিক রেসট্র‍্যাক।তাদের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার জন্যেই একদিন শহীদ রমিজউদ্দিন স্কুলের দুইজন শিক্ষার্থী বাসের নিচে পড়ে আহত হয়।তাদের সেখানেই তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটে।এরকম এক মর্মান্তিক এবং ন্যাক্কারজনক মৃত্যু ঘটার পরও দেশের পরিবহনমন্ত্রী প্রেস কনফারেন্সে হাসতে হাসতে বলে-"মানুষ মরতেই পারে।ইন্ডিয়ায় বাংলাদেশের চেয়েও বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয়"।
    এরপরই আবার সেই কুকুরমার্কা হাসি।ওদিকে দুই জোড়া বাপ মা যে তাদের সন্তান হারালো সেটায় তার খেয়াল নেই।
    দেশের বুড়ো-বুড়ি আর মধ্যবয়সীদের টনক না নড়লেও এই ঘটনায় সবচেয়ে আঘাত পেয়েছিলো কিশোর-কিশোরীরা।তাই তারা বসে থাকেনি।ঘটনার দিনই তারা রাস্তায় নেমে এসবের প্রতিবাদ শুরু করে।ওসময়ে আমি,ইনু,আবরারও বসে থাকেনি।আবরার সেদিনই মিরপুরের মিছিলে যোগ দেয়।ইনু আর আমি যোগ দেই মতিঝিলের মিছিলে।আন্দোলন চলেছিলো প্রায় একমাস।এই একমাসেও কম ঘটনা ঘটেনি।
    এই একমাসে কত শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে পড়েছিলো তার ঠিক নেই।ছোট বা বড় যেই হোক,জীবনের মায়া সবার থাকে।আমার নিজস্ব থিওরি,কেউ চল্লিশ বছর বয়স পার না করে মরতে চায় না।চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত অনেক কিছু করা যায়।

    ৭.

    রোয়াংছড়ি বাস স্টেশনে নামতেই শুভ হাঁচি দেয়া শুরু করে দিলো।অবশ্য ওর দোষ নেই।চারপাশে অনেক ধুলো।ব্রীজ পার হতে গিয়ে দেখলাম ব্রীজের বয়স কমপক্ষে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বয়সের মতো হবে।তারপর যত্ন নেওয়া হয় না বহুবছর।ময়লা হওয়া স্বাভাবিক।

    পুরো বান্দরবান জুড়ে লামাদের সংখ্যা বেশি। তারা এত আগ্রহ করে আমাদের দেখছে কেন কে জানে।আরেকটু এগুতেই দেখলাম আমাদের গাইড দাঁড়িয়ে। গাইডের নাম ওরিফা। চাকমাদের নাম সত্যিই অদ্ভুত হয়।তবে আবরার ওদিক গেল না,সে ডাকা শুরু করলো মামা।দেবতাখুম যেতে হলে আগে শহরের বাজারের সাইবার ক্যাফে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।ওখানে ফর্ম পূরণ সেটা আবার জমা দিতে হবে এলাকার থানার অফিসার ইনচার্জকে। রেজিস্ট্রেশনে শুরু হলো আরেক ঝামেলা। ইনু ওর কলেজ আইডি-কার্ড আনেনি।
    আবরার ক্ষেপে বলল-শালা খুব তো বাল ফালাও।আর ঐ কার্ড আনতে পারলা না।
    এই সময়ে ইনুর সবচেয়ে উপকার করলো শুভ।শুভ হেসে বলল-আবরার থাম।ক্ষেপিস না।আমার ফোনে ওর আইডি কার্ডের ছবি আছে।
    পরেও মনে পড়লো ইনু আর শুভ একসাথে ম্যাথক্লাব করে।শুভ ও ইনু ক্লাবের প্রুফ।আইডি-কার্ডের ছবি হয়ত সে কারণেই ছিলো।পরে সাইবার ক্যাফের প্রিন্টার থেকে সেটা প্রিন্ট করিয়ে নিতেই সব ঝামেলা চুকে গেল।

    চাঁদের গাড়ি ভাড়া করাই ছিলো।চাঁদের গাড়িতে উঠতেই আমার ফোন বেজে উঠলো।মা ফোন দিয়েছে।ইশ!সেই ৫ দিন ধরে মার সাথে কথা হয় না।আবরার বলল-ধরিস না।ধরলে খালি মিথ্যাই বলা লাগবে।
    সেটা আসলেই যুক্তিসঙ্গত কথা।কারণ আমি যে বান্দরবানে মা সেটা জানেন না।টাকাও জোগাড় করেছি অনেকটা চোরা পদ্ধতিতে। বাবাকে বলেছিলাম বই কিনতে হবে।পড়ার বই কেনার কথা শুনলেই বাবা হিসাব না করে টাকা পাঠান।পুরো বই কেনার টাকা আমার চলে যাচ্ছে ট্রিপে।
    ফোন ধরতেই মা বলল-বাবা,শব্দ কিসের এত?
    -ও কিছু না,আমি বাইরে তো।
    -ও আচ্ছা।দুপুর হয়ে গেছে তো বাবা।খেয়েছো?
    মা বলার আগে একটুও ক্ষিধার কথা মনে ছিলো না।আসলে এতবড় একটা ট্রিপে যাচ্ছি সেই আনন্দেই সব ক্ষিধা উধাও হয়ে গিয়েছিলো।এখন দেখলাম আসলেই ক্ষিধা লেগেছে।
    বললাম-হোস্টেলে ফিরেই খাব, মা।বাবা কেমন আছেন?
    -ভালো।বাবা,তুমি আসলে কোথায় বলো তো?
    সামান্য অস্বস্তি লাগলো।আবরার আমার মুখ দেখেই বুঝতে পারছে। ও ইশারা দিয়ে বলল ফোন রেখে দিতে।আমারো মনে হল ফোন রেখে দেওয়া উচিত।
    -হ্যালো?হ্যালো মা?......
    -হ্যাঁ বাবা,শুনছো না?
    -হ্যালো, হ্যালো………
    -হু, শুনতে পাচ্ছো?
    -হ্যালো,হ্যালো……
    এমন করে ফোন রেখে দিলাম।শুভ হেসে বলল-জানিস, আমিও মিথ্যা বলে এসেছি। বাবা জানেন আমি ক্লাবের পক্ষ থেকে যাচ্ছি।
    ইনু বলল-তোমার বাপে যে জিনিস।দেখা যাবে তোকে ট্র‍্যাক করে নিয়ে যাবার জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া করে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
    আসলেই শুভদের পরিবার খুব ধনী।ব্যবসাটা সামান্য ইউনিক।বাংলাদেশে কেউ এমন ব্যবসা কম।ব্যবসাটা হলো বিয়ের পাগড়ির ব্যবসা।তাও শুধু হিন্দুদের বিয়ের পাগড়ি সাপ্লাই দেন।এই ব্যবসার প্রসার অনেক।বিশেষ করে ইন্ডিয়াতে ওনার অনেক কদর।এই বিয়ের পাগড়ির ব্যবসা দিয়ে যে উনি এত টাকার মালিক হয়েছেন সেটা বিশ্বাস করা যায় না।
    ফোনকলের যেন একটা সাইবার প্রতিযোগিতা চলছিলো।কারণ আমি ফোন রাখতেই এবার আবরারের ফোন বেজে উঠলো।আবরার ফোন বের করে দেখে বিরক্ত হয়ে ফোন আবার পকেটে রেখে দিলো।এই বিরক্ত ভাবটা আমি চিনি।আমি নিশ্চিত ওকে ইসরাত ফোন দিয়েছে।ইসরাতের কথা ভাবলেই প্রচণ্ড মন খারাপ হয়।প্রতি মানুষেরই কষ্ট থাকে কিছু,কিন্তু সেগুলো থেকে মুভ অন করে।কিন্তু ইসরাত ওর কষ্টগুলি থেকে কখনো মুভ অন করতে পারবে না।
    আবরার ফোন রাখার পর এবার শুভর ফোন বেজে উঠলো।ফোন ধরেই ও সুরেলা কণ্ঠে বলল-হ্যাঁলো মা,আসসালামু আলাইকুম।
    আমরা সবাই হেসে দিলাম।চাঁদের গাড়ির ড্রাইভারও হেসে দিলো।
    সবার ফোন এলেও ইনুর ফোন এলো না।আমি ভেবেছিলাম ওকে লুবনা ফোন দিবে।কিন্তু কচ্ছপছড়ির দিকে আমরা প্রায় পৌঁছে গেলেও ওকে লুবনা ফোন দিলো না।

    উঁচু পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে যতবার চাঁদের গাড়িটা যাচ্ছে তত আমার শুধু অতীতের কথা মনে পড়ছে।
    সেই আন্দোলনে কেউ কেউ আগ্রহ নিয়ে যোগ দিলেও বেশিরভাগ গ্রামের ছেলে যোগ দিতে চায়নি।এরা সাধারণ পরিবারের ছেলে। বাবা মা কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে কলেজে পাঠিয়েছে।অথচ সমস্যা করলেন সিনিয়র ভাইরা।কারণ আন্দোলনে না থাকলে পরের রাতে সেসব ছেলেদের র‍্যাগ দেওয়া হত।আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে এক ছেলেকে বড় ভাইরা নগ্ন করে বাথরুমের শাওয়ারের নিচে ছেড়ে দিয়ে বলছিলো-তুই এখন নাচবি।তোর ধনের লাফানি আমরা দেখব।
    সেদিনই বুঝেছিলাম আন্দোলন সফল হবে না।
    কিন্তু সফল হোক বা না হোক,আমরা যেহেতু রাস্তায় নেমেছি,এর শেষ না দেখে ফিরে যাওয়া ঠিক না।
    আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত শুরু হলো।কিন্তু আমাদের কে আটকায়।আমরা সে অবস্থার মধ্যেই আন্দোলনে চলে গেলাম।কিন্তু সেদিনটি আমার জন্য সবচেয়ে ব্যথিত দিন ছিলো।কারণ সেদিন দেখলাম স্কুলের কিছু ছেলেপেলে একটি প্রাইভেট কারের ফ্রন্ট মিরর আর সিট ভাঙছে।গাড়ির ভিতরে একটা বাচ্চা মেয়ে বসা।মেয়েটা ভয়ে কাঁদছে।আমি ছুটে গিয়ে বললাম-"এই থামো তোমরা।আমরা কি গাড়ি ভাঙার জন্য আন্দোলন করছি?"
    কেউ আমার কথা শুনলো না।শেষে ড্রাইভার বাধ্য হয়ে জোরে গাড়ি টান দিয়ে ছুটে পালিয়ে গেল।
    একটু দূরেই এক পুলিশ বাইকের উপর বসেছিলো।সে আমাকে ডেকে বলল-"ভাই,কাজটা ঠিক করলেন?এই আপনাদের আন্দোলন?"
    আমি নির্বাক।
    শাপলা চত্বরের দিকে সব ছাত্ররা ট্রাফিক কন্ট্রোল করছিলো।অবাক ব্যাপার সব গাড়ি চলছিলো নির্দিষ্ট লেনে।গাড়ি গাড়ির জায়গায়, রিকশা রিকশায় জায়গায়।কোনো জ্যাম নেই।পথচারীদের চলতেও অসুবিধা হচ্ছিলো না।অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ছিলো ইমার্জেন্সি লেন।ছাত্রদের এসব নিয়ে কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।সর্বোচ্চ তারা এসব মুভি বা টিভিতে দেখেছে।অথচ তাও কাজ কত সুন্দর ছিলো।আমিও নেমে পড়লাম।ইমার্জেন্সি লেনে কাজ করতে থাকলাম।কিন্তু এর পাশেই দেখলাম এক পুলিশ দাঁড়িয়ে হাসছে।আমারও কৌতূহল হলো।এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম-হাসছেন কেন?
    উনি মাথা নেড়ে বললেন-তোমার মনেহয় এসবে কোনো কাজ হবে?বাবা শুনো,সরকার আগের থেকেই অ্যাকশন নিতে বলে দিয়েছে।আমরা নিচ্ছি না কারণ তোমরা আমাদের ছেলে মেয়ের মতো।আমার নিজের ছেলেও এই আন্দোলনে নেমেছে।কিন্তু তোমরা আমাদের যেভাবে অপমান করছো,কয়দিন আমরা ধৈর্য ধরতে পারব কে জানে।
    কথার যুক্তি ছিলো।কারণ এর কিছুক্ষণ পরেই একটি পুলিশ কার যাবার সময়ে সব শিক্ষার্থী সেটাকে ঘিরে চেঁচানো শুরু করলো-"পুলিশ কোন চ্যাটের বাল,লাথি মেরে ভাঙব গাল"বলে।এই কাজটা হত না যদি আমাদের মধ্যে উপযুক্ত লিডারশিপ থাকতো।
    তখন হঠাৎ মনে পড়লো,সুরভিও কি আন্দোলনে?ইশ!কোনোভাবে যদি দেখা হত।
    আন্দোলন শেষে ফিরবার সময়ে দেখলাম কিছু স্কুল ছাত্র বাস থামিয়ে যাত্রীদের নামাচ্ছে।এক ছাত্র এক মধ্যবয়সী মহিলার বুকে হাত দিলো।মহিলা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন।কিন্তু কিছু বললেন না।একটু পরে হাঁটা শুরু করলেন।খেয়াল করে দেখলাম,ওনার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    পর্ব ১ | পর্ব ২
  • ধারাবাহিক | ২৪ জুন ২০২০ | ৫২০১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ২৪ জুন ২০২০ ০২:৪২94573
  • ভাইরে লেখাটা পরে পড়ি?

    আগে বলেন তো, কোন অলৌকিক ক্ষমতাবলে গুরুচণ্ডালী সাইটে পর পর গোটা ১৫ তম।  

  • Hasan Mostafiz | ২৪ জুন ২০২০ ০৪:০৭94575
  • বিপ্লব রহমান ভাই,আপনার প্রশ্নটা বুঝতে পারিনি।

  • বিপ্লব রহমান | ২৪ জুন ২০২০ ০৭:৪৮94576
  • "আমরা টিকেট কেটে রোয়াংছড়ির বাস ধরলাম।বাসগুলির সিট একদম চাপা,পা রাখার পর্যন্ত জায়গা নেই।আর প্রচুর দুর্গন্ধ।আশেপাশের বৌদ্ধমন্দিরের লামারা পাইপ টানতে টানতে বাসে উঠে যাচ্ছে।শুনলাম তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়।টিকেটও কাটা হয় না তাদের।"

    --

    "বাস যতই রোয়াংছড়ির দিকে এগুচ্ছে,শুভর নাকের কাছে যতই লামাদের নগ্ন বগলের কটু গন্ধ আসছে,আমার তখনো সেসবে মন বসে না।"

    --

    "পুরো বান্দরবান জুড়ে লামাদের সংখ্যা বেশি। তারা এত আগ্রহ করে আমাদের দেখছে কেন কে জানে।আরেকটু এগুতেই দেখলাম আমাদের গাইড দাঁড়িয়ে। গাইডের নাম ওরিফা। চাকমাদের নাম সত্যিই অদ্ভুত হয়।"

  • বিপ্লব রহমান | ২৪ জুন ২০২০ ০৭:৫৫94577
  • ^^ হাসান মোস্তাফিজ, 

    অনুগ্রহ করে ওপরের কথাগুলো একটু বুঝিয়ে বলবেন? লামা আসলে কোন জীব? চাকমাদের নাম "অদ্ভুত"? 

    #

    প্রথম মন্তব্যটি দয়াকরে উপেক্ষা করুন, প্লিজ । এই লেখার ১৫টি নোটিফিকেশন দেখাচ্ছিল, তাই দুষ্টুমি করে বলা।   :))

    শুভ কামনা           

  • বিপ্লব রহমান | ২৪ জুন ২০২০ ০৮:৩৯94581
  • "এর পরেই একটি পুলিশ কার যাবার সময়ে সব শিক্ষার্থী সেটাকে ঘিরে চেঁচানো শুরু করলো-"পুলিশ কোন চ্যাটের বাল,লাথি মেরে ভাঙব গাল"বলে।এই কাজটা হত না যদি আমাদের মধ্যে উপযুক্ত লিডারশিপ থাকতো।

    তখন হঠাৎ মনে পড়লো,সুরভিও কি আন্দোলনে?ইশ!কোনোভাবে যদি দেখা হত।
    আন্দোলন শেষে ফিরবার সময়ে দেখলাম কিছু স্কুল ছাত্র বাস থামিয়ে যাত্রীদের নামাচ্ছে।এক ছাত্র এক মধ্যবয়সী মহিলার বুকে হাত দিলো।মহিলা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন।কিন্তু কিছু বললেন না।একটু পরে হাঁটা শুরু করলেন।খেয়াল করে দেখলাম,ওনার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।"

    --

    আর নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, তথা কিশোর বিদ্রোহ তাহলে এই? উপন্যাস (?) এখানেই শেষ, না আরও আছে?              

  • Hasan Mostafiz | ২৪ জুন ২০২০ ১৪:২৯94593
  • বিপ্লব রহমান

    উপন্যাস আরো আছে।আর বৌদ্ধধর্মের লামাদের নাম আমি ইচ্ছা করেই অদ্ভুত লিখেছি কারণ আমি বুঝিয়েছি চরিত্রগুলো আগে কখনো এদের সম্বন্ধে জানতো না।সেজন্য তাদের অদ্ভুত লেগেছে।

    এই উপন্যাসের কিছু অংশ বান্দরবান জায়গা নিয়ে লেখা।  

    আর কিশোর বিদ্রোহী আন্দোলন নিয়ে দীর্ঘ কিছু লেখার সুযোগ আসলে নেই আমাদের দেশের সরকার এটার বিরোধী। তাই আমি ততটুকুই লিখেছি যেগুলো আন্দোলনগুলির মূল লক্ষ্য আর মূল সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করে।আমি আন্দোলন নিয়ে যা লিখেছি সব আমার নিজের চোখে দেখা।

    আপনি পড়েছেন আর কমেন্ট করেছেন দেখে অনেক ধন্যবাদ।চাইলে আরো প্রশ্ন করুন কোন সমস্যা নেই।

    উপন্যাসের পরের সাত অংশ পরের মাসে প্রকাশ করব। 

  • r2h | 49.37.***.*** | ২৪ জুন ২০২০ ১৪:৪২94594
  • পরের মাসে? সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক করা যায় না? তাহলে কন্টিনিউইটিটা মনে হয় আরো ভালো ভাবে থাকবে, পাঠকের কাছে। পড়ছি।
  • Hasan Mostafiz | ২৪ জুন ২০২০ ১৫:০৩94595
  • আচ্ছা এক সপ্তাহ পর পর দিব।

  • বিপ্লব রহমান | ২৪ জুন ২০২০ ২১:১২94598
  • হাসান মোস্তাফিজ,

    বিনীতভাবে জানাই, লামা‍-- বলতে আপনি বোধহয় পাহাড়ি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের (ভান্তে) বুঝিয়েছেন। দীর্ঘ পাহাড় পরিক্রমার কারণে জানি, বান্দরবানে মারমা জনগোষ্ঠীর ভান্তেদের সংখ্যা বেশি। তাদের সম্পর্কে উপন্যাসে যে দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরেছেন, তা বোধহয় বেশখানিকটা সংকীর্ণ, জাত্যাভিমান ঘেঁষা। খোঁজ নিলে জানতে পারতেন, ভিক্ষুরা কঠিন সান্যাস জীবন পালন করেন, ধর্মীয় পড়াশোনার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষায় সকলেই শিক্ষিত, বেশিরভাগই ফ্রি স্কুলিং-এর পাশাপাশি নানান সমাজ-সংস্কারের সঙ্গে জড়িত। আর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা শিক্ষারই অংশ। দান ও ভিক্ষাবৃত্তিতে অন্ন সংস্থান হয় যাদের, তারা লোকাল বাসের ১০-২০ টাকা ভাড়া দেবেন কোথা থেকে? তাছাড়া এমনতেও পাহাড়ে ভিক্ষুরা খুবই সন্মানিত ব্যক্তি, বাসভাড়া দিতে চাইলেও স্থানীয় বাসচালকরা কোনোভাবেই তা নেবেন না, এটিই খুব স্বাভাবিক। উপন্যাসে বোধহয় তাদের ভুলভাবে, হেয় করে উপস্থাপন করা হয়েছে।

    নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, তথা কিশোর বিদ্রোহ নিয়ে যেটুকু উপন্যাসে লিখেছেন, সেটুকু সত্যিকার অভিজ্ঞতা হতে পারে, অবশ্যই এটি তীক্ত ও নিন্দনীয় ঘটনা, কিন্তু পুরো আন্দোলনের সামগ্রিক গৌরবোজ্জ্বল দিক বাদ দিয়ে দু-একটি নেতিবাচক বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ফোকাস করাটা কোনো কাজের কথা নয়, এটি তৃতীয় প্রজন্ম সম্পর্কে ভুল ও নোংরা ইমেজ তৈরি করে, আন্দোলনের তো বটেই। তথ্য-সংবাদের পেশাগত কারণে আন্দোলনটিকে সে সময় খুব কাছ থেকে দেথা হয়েছে। এর স্পিরিট হচ্ছে, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ।

    এই নিয়ে গুরুচণ্ডা৯তে দু-একটা লেখাও লিখেছিলাম। গুগল করে একটি লেখা খুজেঁ পেলাম। ইচ্ছে হলে দেখতে পারেন।

    https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=15974

    ৩.

    উপন্যাস এগিয়ে চলুক। মন দিয়ে পড়ছি। ভাল থাকুন       

  • Hasan Mostafiz | ২৪ জুন ২০২০ ২১:৫৪94601
  • বিপ্লব রহমান

    উপন্যাসটার যে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন সেটা আমি অবশ্যই সমর্থন করি।আপনি ঠিকই বলেছেন।কিন্তু ব্যাপার হল,আমি এখানে ওসব দিক তুলে ধরার প্রয়োজনবোধ করিনি।আমি ওখানে সাধারণ পাঠকসমাজের কথা চিন্তা করে লিখেছি। আপনি যদি সত্যজিৎ রায় কিংবা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কিছু উপন্যাস পড়ে দেখেন আপনি একই বিষয় খেয়াল করবেন।উপন্যাসটায় যদি আমি লামাদের সেসব ব্যাপার তুলে ধরতাম তাহলে সেটাও দেখাতে হত যে তারা বৌদ্ধমন্দিরে যাচ্ছে,সেখানকার কালচারের প্রতি মগ্ন হচ্ছে।কিন্তু তারা তা এড়িয়ে গেছে।ওতেই প্রমাণিত হয় যে লেখক ক্যারেক্টারগুলোর মাধ্যমে ইচ্ছা করে তা এড়িয়ে গেছেন। আমি এটাকে মোটেও সংকীর্ণ বলব না।বরং আমি এটাকে সাহসী কাজ বলব কারণ আমি এখানে ইচ্ছে করে একটা ক্যাওস সৃষ্টি করেছি যাতে আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগে।আমার লেখায় আমি এসব ইচ্ছা করেই করি ।

    আর সড়ক আন্দোলনের ওটা মোটেও নেতিবাচক নয়।সে হিসেবে আমাদের দেশে অনেকেই পাকিস্তান আর্মিদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা যে বিনা কারণে হত্যা করেছে সেটার বিরুদ্ধেও অনেকে গল্প উপন্যাস লিখেছে।আপনি সেটাকে নেতিবাচক বলবেন না মুক্তিযুদ্ধের কলঙ্ক বলবেন? কিংবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের শান্তিমিশনে অনেক গৌরব অর্জন করলেও আমাদের দেশের লোকেরাই তাদের ব্যাপারে "রেপ " এর অভিযোগ করেছিল।সেটাও কি নেতিবাচক?

    আমি সড়ক আন্দোলনের পক্ষে অবশ্যই ছিলাম।তার গুরুত্ব লেখার কোন প্রয়োজনবোধ করিনি কারণ এটা সবাই জানে।আমার কাজ ছিল আমরা কী কী ভুল করেছি সেটা তুলে ধরা।ভুল অবশ্যই হয়েছে অনেক।সেটা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়েছে দেখেই আমি নিজে যা দেখেছি সেটাই লিখেছি। 

    আর আপনাকে অনুরোধ করব আমার সাথে যোগাযোগ করুন।আপনার এফবি আইডি খুঁজে পাচ্ছি না।আমি আপনার বগা লেক নিয়ে লেখাটা পড়েছি।বান্দরবান নিয়ে আপনার যে ধরনের নলেজ আছে আমার তারচেয়ে কম।আমি সেটা স্বীকার করি।আমি সে ব্যাপারে আপনার সাথে কিছু আলোচনা করতে চাই ।

         

  • বিপ্লব রহমান | ২৫ জুন ২০২০ ০৮:০৭94609
  • হাসান মোস্তাফিজ, 

    বৌদ্ধ ভিক্ষুদের "লামা" অভিধা ব্যবহার ও "ক্যাওস" স্বার্থে  তাদের নেতিবাচক উপস্থাপন কার্যত ভুল,  বেশ কিছুটা সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণ,  আর  যেখানে পাঠককে শিক্ষিত করার দায় থাকেই।     

    তাছাড়া  "লামা"  বান্দরবানের উপজেলা,  আশাকরি এইটুকু তত্ব তালাশের ক্ষতি উপন্যাস  লেখক স্বীকার করবেন। 

     http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE_%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE 

    আগেই বলেছি, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, তথা কিশোর বিদ্রোহের  বিচ্ছিন্ন নেতি ঘটনা (হোক নিজের চোখে দেখা), এর সামগ্রিক অবস্থান নয়,  অনুগ্রহ করে ওপরের মন্তব্যটি আরেকবার পড়বেন? এখন লেখায় দু-একটি নেতি ঘটনা উল্লেখে ওই বিদ্রোহকালের উপস্থাপন হেলমেটলীগ- হাতুড়িলীগের সেবা করে কি না, তা খতিয়ে দেখার অবকাশ আছে। "পুলিশ কোন চ্যাটের বাল?" শ্লোগান শেষ বিচারে   রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি চ্যালেঞ্জই।         

    সুনীল, সত্যজিতের চেয়ে এখানে ঋত্বিক বোধহয় অনেক প্রাসঙ্গিক, আসুন আমরা ভেবে দেখি এবং ভাবা প্র‍্যাকটিস করি। 

    ফেসবুক ইত্যাদিতে খুব নিয়মিত নই, তবু সময় করে  আপনাকে খুঁজে দেখবো,  অবশ্য লেখালেখি সম্পর্কে উন্মুক্ত আলোচনা গুরুচণ্ডালীর খোলা পাতাতেই হতে পারে, এতে অন্যদের যোগ দেওয়ারও সুযোগ থাকে। আপনার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ।   শুভেচ্ছা                      

  • বিপ্লব রহমান | ২৫ জুন ২০২০ ১৩:২০94617
  • পুনশ্চঃ এসবই চণ্ডালের ব্যক্তিগত মত। এ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বিতর্ক হতে পারে।  লেখক নিজস্ব যুক্তিতর্কে অনড়ও থাকতে পারেন। তবে যে কোনো প্রতিশ্রুতিশীল  লেখকের বোধহয় তার  লেখার পাঠ প্রতিক্রিয়া ভাবার দায় থাকেই। 

    উপন্যাস এগিয়ে যাক।                             

  • Hasan Mostafiz | ২৫ জুন ২০২০ ১৪:৩৭94619
  • বিপ্লব রহমান

    মোটেও কিশোর বিদ্রোহের ঐ লেখা ঐসব হেলনেটলীগদের পক্ষে কথা বলে না।আমি বলেছি তো সবাই যা লেখে আমি তার বিপরীত লেখার চেষ্টা করি।আপনি আমার কমেন্টও আরেকবার পড়ুন

    আর আপনি বান্দরবানের লামাদের নিয়ে একদম বিশুদ্ধ হিস্টোরি আর ওদের বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রা জানতে চাচ্ছেন আর আমি সেখানে কয়েকলাইনে কোনমতে তাদের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টার মাধ্যেমে গল্পের একটা মোড় এনেছি।এটাকে সাম্প্রদায়িকতা হিসেবে লাগলে আমি বলব বাংলাদেশের সব লেখকই সাম্প্রদায়িক।আমার লাজ কারোর বিশুদ্ধ খবর না তুলে ধরা, ওর জন্য আলাদা স্কলার থাকে।আমার কাজ গল্প লেখা। আপনি এটা কেন দেখতে পারছেন না আমি ওদের কোন বৌদ্ধমন্দিরে পাঠাইনি।তাহলে কেন আমি লামাদের নিয়ে তাহলে দীর্ঘলেখা লিখব? আর ওরা অবাক হয়েছে দেখেই তো প্রমাণিত হয় যে ওরা লামাদের জীবন নিয়ে জানে না।অর্থাৎ লেখক ওদের অবাক করে দিয়ে তা এড়িয়ে গেছে।আপনার কী মনেহয় আমি লেখেছি এসব আমি আগে জানতাম না?ভিক্ষুকবৃত্তির প্রধান শর্ত সবাই জানে।

    আপনাকে অনুরোধ করব আপনি গল্পের ভুল ধরুন।যেগুলোর কাজ একজন লেখকের করার কথা না সেসব ভুল ধরবেন না।এতে কারোরই লাভ নেই।    

  • বিপ্লব রহমান | ২৬ জুন ২০২০ ০৬:০৬94630
  • হাসান মোস্তাফিজ, 

    আমি তথ্যগত ত্রুটির চেয়ে দর্শনের দারিদ্রের কথাই বলছিলাম, নেতিবাচক ও খণ্ডিত  উপস্থাপন। 

    ​আর হ্যাঁ,  "লামা" বলে কোনো জীব  নেই।   

    বিতর্কের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 

    ভাল থাকুন            

  • বিপ্লব রহমান | ২৬ জুন ২০২০ ০৯:২৬94633
  • *সংশোধনী : বান্দরবানে   "লামা" বলে ওই রকম কোনো বিচিত্র  জীব  নেই, তবে "লামা" নামে একটি উপজেলা আছে। 

       

  • r2h | 2405:201:8805:37c0:dc00:6469:8476:***:*** | ২৬ জুন ২০২০ ১২:৪৩94639
  • বিএলেম ইত্যাদি প্রসঙ্গে পড়ছিলাম, গণআন্দোলন, স্বতঃস্ফূর্ত, অসংগঠিত আন্দোলনে বিশৃংখলার ভূমিকা নিয়ে। ফরাসী বিপ্লব, একটি গৌরবাণ্বিত দাঙ্গা, এইসব। কিন্তু অনেক সময় সেগুলো কোথাও একটা পৌঁছয়।

    নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নিয়ে গুরুতেই পড়েছি, ঐ ধরনের কিছু ফেনোমেনাল মনে হয়েছিল, কিন্তু সত্যিই তারপর কী হলো? নেতৃত্ব, বা 'সঠিক' নেতৃত্ব ছিল না, কিন্তু নেতৃত্ব শুরু থেকে থাকতেই হবে তেমনও তো কিছু না। আমাদের উপমহাদেশে কোন কোন গণআন্দোলন সফল হয়েছে, সেসব ভাবছিলাম।

    এই পুরো কাহিনী, চরিত্র সবই একেবারে প্রতিবেশী কিন্তু তবু অচেনা, এবং পশ্চিমবঙ্গের যাঁরা পাঠ্যবস্তুর সঙ্গে 'রিলেট' করতে পারাকে আবশ্যক ভাবেন, তাঁদের কাছে অনেকটা দেওয়াল - এইসব নানান কিছু নিয়ে পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।
  • মোস্তফা তানিম | 108.3.***.*** | ২৮ জুন ২০২০ ১০:৩৮94674
  • বিপ্লব রহমান এবং হাসান মোস্তাফিজের মধ্যে আলোচনা/তর্ক-বিতর্ক ভালো লাগলো।  বলবো কন্সট্রাক্টিভ ডিসকাশন।  দুজনের কেউ সীমা  অতিক্রম করেননি।  এমন আরো আলোচনা দেখতে চাই।  শিল্প-সাহিত্যে কস্ট্রাক্টিভ ডিবেট খুব প্রয়োজন। যেটা অপ্রতুল। 

  • উফ | 2a0b:f4c2:2::***:*** | ২৮ জুন ২০২০ ১১:৩৫94680
  • কি বাজে লেখা। দুই তিন প্যারার পরে আর পড়া গেল না। ফালতু হ্যাজ। বাংলাটাও বেশ খারাপ। উপন্যাস লিখতে গেলে আরো প্রস্তুতি দরকার।
  • Hasan Mostafiz | ৩০ জুন ২০২০ ০৭:৪৪94749
  • জনাবের নাম যেহেতু এখানে উল্লেখ নেই তাই এই অংশটি আমি ভদ্রতাবশত এড়িয়ে যাচ্ছি।

    "বাজে লেখা " বলে উনি প্রথমেই যে একটা দারুণ সমালোচনামূলক মোড় আনলেন,আমি সেটা শ্রদ্ধা জানাই।বাজে ওনার লাগবেই, আজপর্যন্ত সব কালজয়ী লেখকই বাজে লেখা লিখেছেন,সেজন্য তাদের প্রতিভার খর্ব হয়নি।তাই বলে "বাংলাটা খারাপ " এই কথার দ্বারাই প্রমাণিত হয় আমাদের সম্মানিত ভদ্রলোক নাম জানা দুই একজন ঔপন্যাসিক ছাড়া কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া কোন ঔপন্যাসিকেরই বই পড়েননি।আমি এটাও বুঝতে পারছি "উফ" নাম ভদ্রলোক হয়ত বই প্রচুর পড়েছেন কিন্তু কোন লেখার দর্শন নিয়ে তিনি ঘাটেননি।ঘাটলে উনি বহু আগেই বুঝে যেতেন উপন্যাসের ধারাবাহিক অংশের প্রথম পার্টসহ পুরো পার্টই আইসবার্গ থিওরির উপর ভিত্তি করে লেখা।তবে হ্যাঁ,আমার দুর্বলতা এখানেই আমি থিওরি আর কাহিনির প্রতি মনোযোগ দেওয়ায় ভাষায় কোন ছলনা আনিনি।এটা মোটেও আমার shortage of knowledge না।পাঠক হিসেবে  মিঃ উফ এটা না বুঝে এমন মন্তব্য নিজেই প্রমাণ করেছেন যে একটি নেগেটিভ মন্তব্য করা দরকার দেখে উনি সেরকম মন্তব্য করেছেন।ওনাকে আমি অনুরোধ করব আমার সাথে যোগাযোগ করতে।আমার প্রস্তুতি নিয়ে ওনার যদি এতই সন্দেহ থাকে তাহলে দয়া করে আমাকে জানাবেন কিভাবে আরো প্রস্তুতি নিলে আপনার কাছ থেকে "বাংলাটা খারাপ" এমন ছেলেমানুষী কমেন্ট আর শুনতে হবে না।

    ভদ্রলোককে অনেক ধন্যবাদ আমার লেখাটা কোনমতে পড়েছেন।ওনার দীর্ঘ সুস্থতা কামনা করি।             

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন