চারিদিকে লকডাউনের বিধি নিষেধ আর অচেনা অনিশ্চয়তা -- বাতাসে অবাধ্য মাছির মতো উড়ছে ভাইরাস। এমতাবস্থায় আমাদের ছোটো অথচ জনবহূল শহরের এক প্রতিষ্ঠিত দোকানে চাল কিনতে গিয়ে দেখি, মাস্ক ও গ্লাভস পরিহিতা এক ভদ্রমহিলা দোকানের ছেলেটিকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছেন বিরিয়ানি চাল আর কেওড়া জলের বোতলের জন্য। বুঝলাম,শুধুমাত্র ক্লোরোকুইনোন নয় করোনা আতঙ্ক কাটাতে পরিবার সহযোগে বিরিয়ানি ভক্ষণও যথেষ্ট কার্যকরী হতে পারে। দোকান থেকে বেরোতেই রাস্তায় দেখা হলো এক প্রাণের বন্ধুর সাথে ---সহাস্যে জানালো মাছের বাজারে দৌড়োচ্ছে; আরে ভাই বাঙালির কি মাছ ছাড়া একদিন ও চলে? উৎসুক কণ্ঠে জিগ্যেস করলাম,তার পাশের বাড়ির মাসিমার কথা--একদম এক থাকেন, কি ভাবে চালাচ্ছেন। বন্ধুনি কাঁচুমাঁচু মুখে জানালো, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিঙ চলছে , কি করেই বা খবর নেওয়া যায় !!! তারপর বাড়িতে কাজের লোক অনিয়মিত , গৃহস্থালী কাজের চাপে ফোন করে ওঠা হয়নি। ঠিকই তো, কথায় বলে, আপনি বাঁচলে বাপের নাম, আগে নিজেদের প্রাণ--- পরে অন্য কথা |
সেলফ আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইন একপ্রকার স্বেচ্ছা বন্দীত্ব। ভারতের মতো দেশে যেখানে প্রাত্যহিক জীবনচর্যার মধ্যে সামাজিক সূত্র গাঁথা হয়ে চলে নিরন্তর সেখানে হঠাৎ করে এই ঘরবন্দীত্ব মানসিক অস্থিরতা, কোথাও যেন একাকীত্বের বিষাদ খিন্নতা তৈরী করে । ভাবুন না সেই বৃদ্ধা মাসিমার কথা, যাঁর দিন শুরু হতো দুধওয়ালা; কাগজওয়ালা; খানিক পরে কাজের দিদির আগমন বা পাঁচিলের ওধার থেকে ও বাড়ির বৌটির টুকিটাকি গৃহস্থালি কথা দিয়ে বা সন্ধ্যেয় পাড়ার রাস্তায় বা পার্কে হালকা সান্ধ্য ভ্রমণে, আজকের দিনে তাঁর গণ্ডী মানব বর্জিত বাড়ির চৌহদ্দিটুকুর মধ্যেই । এমনিতে ছোট শহরের একা থাকা, আটপৌরে মানুষেরা বুঝতেই পারেন না একাকীত্বের অসহায়তা---গোটা পাড়াটাই তো তাঁর স্বজন, তাঁর মুক্তির আস্বাদন। বলা ভালো ভারতীয় উপমহাদেশের ছোট, বড়ো পুরোনো যেকোনো শহরেই অলিগলি তে এরম অজস্র মানব হৃদয়ের মেলবন্ধন লুকিয়ে থাকে, কোনো রকম থিওরীতে যার ব্যাখ্যা চলে না। এইসব সামাজিক সংযোগ একলা থাকা মানুষদের কোথায় যেন অফুরান আত্মবিশ্বাস যোগান দেয় । যান্ত্রিক নয়, অনাবিল ,অপারিবারিক মানব সম্পর্ক ,উপমহাদেশের সামাজিক পরিকাঠামোয় এক অনন্য বিশিষ্টতা ।
আর আজ নিরাপদ দূরত্ব বজায়ের প্রতিজ্ঞায় , প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আমরা বাধ্যত কূটীচক | সেলফ আইসোলেশনের দাপটে অনায়াসলভ্য মানব সম্পর্কগুলো স্তিমিতপ্রায় । সেলফ আইসোলেশন যে আমাদের শরীরের থেকেও মনে বেশি চেপে বসেছে, আমরা ধরাশায়ী মেন্টাল আইসোলেশনেও । আজ আমরা মাছের দোকানে ( চুলোয় যায় তখন সোশ্যাল ডিস্টেন্সিঙ) ঠেলাঠেলি করতে পারি কিন্তু পাশের বাড়ির একলা মাসিমার দরজায় একটিবার করাঘাত করতে করোনাতঙ্ক এ জর্জরিত হই । আমরা, লক ডাউনের অবসরে ছুটির মেজাজে পুত্র পরিবারের জন্য বিরিয়ানী রাঁধতে ব্যস্ত হয়ে উঠি কিন্তু দূর প্রদেশ থেকে পড়াশোনা করতে আসা- গৃহবন্দী নিজের ছাত্রীর খোঁজ নিতে ভুলে যাই । নেটফ্লিক্স -হটস্টার-চর্ব্য-চোষ্য -লেহ্য-পেয় সহযোগে কোভিড আক্রান্ত মৃতদের জন্য শোক সপ্তাহ পালন করে চলি কিন্তু সরকার বাহাদুর ত্রাণ নিমিত্ত বেতনের ৩০% কেটে নেবে শুনলে কপাল চাপড়াই । ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ এ করোনা ভাইরাস এর টিকি থেকে লেজ পর্যন্ত বিশ্লেষণ করে গবেষণা পত্র লিখে ফেলি কিন্তু বাড়ির পরিচারিকা কে ছুটি দিতে মন কেমন করে। ওই যে বললাম বিষম ভয়--এতো ভয় যে যুক্তি,মানবতা সব গুলিয়ে গ। দয়া করে বিশ্বাস করুন, করোনা ভাইরাস আপনার শ্বাসযন্ত্র বিকল করে দিতে পারে কিন্তু আপনার হৃদয় সংকুচিত করতে পারেনা। এই দুঃসময়ে নিশ্চয়ই সংক্রমণ প্রতিরোধ করুন কিন্তু অনর্থক ভয়ের চাদরে হৃদয়কে মুড়ে রাখবেন না। সময়টা বসন্ত অন্তিম হতে পারে, কিন্তু ভালোবাসা, সহমর্মিতা এখনো বাতাসে টিকে আছে।
অন্য বাড়ি যেতে ভয় করছে, বা উনি আমার পরিবারের কেউ নয় বা এখন নেটফ্লিক্সে ভালো থ্রিলার দেখছি বা স্রেফ কুড়কুড়িয়ে পাঁপড় খাচ্ছি---- এইসব ছুতোগুলো থেকে সাময়িক অব্যাহতি নিয়ে বাড়ির বারান্দা থেকেই নাহয় হাঁক পড়ুন-"মাসিমা কি খবর, কিছু প্রয়োজন হলে বলবেন" । অথবা মোবাইল তুলে একটা মেসেজ করুন সেই আটকে পড়া একলা ছাত্রীকে -"সব ঠিক তো?" না, নিয়ম মাফিক একবার নয়; আপনার আকাশচুম্বী ইগোকে সরিয়ে রেখে বারবার খবর নিন| মাস্ক, গ্লাভস পরে ,ভয় জয় করে মাসিমার বাড়ির গেটে বারবার হানা দিন অন্তত এক মিনিটের জন্য। তাঁকে বোঝান আপনি আছেন তাঁর মনের কাছেই।
প্রত্যাশা ছাড়াই হৃদয়ের যোগাযোগ বাড়ান। হতে পারে আপনার কোনো যায় আসেনা; রক্তের সম্পর্ক তো নেই কিন্তু ঘরবন্দি একলা (হয়তো বা বয়স্ক ) মানুষটির কাছে আপনার একটুকরো কথা বা এক চিলতে ফোনালাপই অনেক বড়ো আশ্বাসের । নাহয় আজ আমরা বাঁধা গতের বাইরেই ভালোবাসলাম , নাহয় অনাত্মীয় একলা মানুষটির মন খারাপ নিজের দিকে একটু টেনেই নিলাম ---হৃদয়ে কোথাও কিছ্ছু কম পড়বেনা। মনে রাখুন, ভারতে করোনায় মৃত্যু হার এখনো পর্যন্ত ২% আর হতাশা, একাকীত্বয় মৃত্যু তার থেকে ঢের বেশী ।
আসুন না এই দুর্দিনে, চেনা বৃত্তের বাইরে গিয়ে অকারণেই সহমর্মী হই , নিছক অকারণেই ভালোবেসে ফেলি মানুষকে । ভয় কি-- আপনার ভালোবাসার সিন্দুক তো পুরো ঠাসা ।|
সত্যিইতো সময়টা ভালোবাসার, সহমর্মিতার। তার জন্য দূরে যাওয়ারও দরকার নেই । বাড়ির কাজের মাসি, রান্নার দিদি,ড্রাইভার ভাইটি ( যদি থাকে ) এদেের খোঁজ নেওয়া , সামনের মাস-পয়লায় পুরো মাইনেে দেওয়া ( এক দিনও কাজ না করলেও) -এগুলো সহমর্মিতা, ভালোবাসা, মানবসেবা। এই সময়টাতেই দেখানো দরকার - মানুুুষ মানুষের জন্যে ।
सखी,
अभी जो परिस्थिति है ,इसमें हमे बिना किसी स्वार्थ के जो भी जरूरत मंद हो उनकी खैरियत और सहायता करना ही हमारी पहली जरूरत होनी चाहिए। हमारे पड़ोसी और हमारे सहायक साथी की मदद करना ही हमारा मानव धर्म है।
कभी कभी लगता है ,यह वायरस क्या हमें हमारे होने के उद्देश्य से परिचित कराने आया है।