এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • জোড়াসাঁকো জংশন ও জেনএক্স রকেটপ্যাড-৮

    শিবাংশু লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৮ মে ২০১৯ | ৩১০৮ বার পঠিত
  • জর্জ ও রবি :'তোমায় বসাই, এ-হেন ঠাঁই ...’
    -----------------------------------------------
    ''.... সেই বাল্যকালে কবে থেকে গান গাইতে শুরু করলাম তা আমার মনেও নেই-- গান গাইছি-তো-গাইছি-তো-গাইছি। কোনো ওস্তাদ অথবা শিক্ষকের কাছে নাড়া বেঁধে বা রীতিমতো লেখাপড়া শেখার মতো করে গান আমি কখনও শিখিনি। ছোটবেলার দিনগুলি থেকে শুরু করে, বড় হয়েও শুধু গান শুনেছি আর গেয়েছি। কোনো সঙ্গীত-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গান শিখবার সৌভাগ্য আমার অদৃষ্টে কখনও জোটেনি।''
    ১৯১১ সালে 'রবিবাবুর গান' শোনার সুযোগ যাঁরা পেতেন, তাঁরা আলোকপ্রাপ্ত, অভিজাত কতিপয় বঙ্গভাষী ভদ্রসন্তান, যাঁদের 'রবিবাবুর গান' শোনা ও উপভোগ করার উচিৎ প্রস্তুতি ছিলো। সাধারণ শহুরে বাঙ্গালি ভদ্রলোকের কাছে প্রিয়তর ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল। রবিবাবুর ভক্ত ও দ্বিজুবাবুর ভক্তদের মধ্যে নানাস্তরে কাজিয়া ছিলো খুব প্রচলিত ঘটনা।

    এরকম একটা সময়ে, ময়মনসিঙের কিশোরগঞ্জে দেবেন্দ্র মোহন বিশ্বাসের পুত্র দেবব্রত জন্ম নেন বাইশে অগস্ট তারিখে। সাহেবরাজা জর্জের ভারত আসার সঙ্গে সময় মিলিয়ে শিশুর ডাকনাম হয় জর্জ। রবীন্দ্রনাথের তখন পঞ্চাশ বছর বয়েস।

    ঠাকুরদা কালীকিশোর ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করার অপরাধে নিজের গ্রাম ইট্না থেকে বিতাড়িত হন। কিশোর জর্জকেও স্কুল জীবনে সহপাঠিদের থেকে তাড়না সহ্য করতে হয়েছিলো 'ম্লেচ্ছ' অপবাদে। ১৯২৭ সালে কলকাতায় কলেজে পড়তে এসে ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে সংযোগের সূত্রে ঠাকুরবাড়িতে প্রবেশাধিকার পান জর্জ। তখনকার রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত প্রধান ব্যক্তিদের গান শোনানোর সুযোগও এসে যায় এইভাবে। তবে এই 'ম্লেচ্ছ' কিশোরটি সৃষ্টিচেতনার প্রথম থেকেই ইতরযানী চেতনার পতাকা বহন করেছেন আজীবন। অস্বস্তিকর আভিজাত্যের দাসত্ব করেননি কখনও, না ব্যক্তিজীবনে , না শিল্পীজীবনে।

    ১৯২৮ সালের গোড়ার দিকে পূর্ববঙ্গের কিশোরগঞ্জ থেকে আসা সতেরো বছর বয়সের সদ্যোতরুণ কলেজ ছাত্র উত্তর কলকাতার সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ মন্দিরে প্রথম রবীন্দ্রনাথের দেখা পেয়েছিলেন। একটু অপ্রত্যাশিত ছিলো সেই অনুষ্ঠানে কবির আগমন। কারণ এই সময় 'ভদ্র'ঘরের 'বয়স্থা' মেয়েদের দিয়ে জনসমক্ষে নৃত্য অনুষ্ঠান পরিবেশন করার অপরাধে ব্রাহ্মসমাজের চাঁইরা কবিকে তীব্রভাবে নিন্দা ও ভর্ত্সনা করে যাচ্ছিলেন। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য বা দৃষ্টিকোণকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে সমাজকর্তাদের এক তরফা বিষবর্ষণে তিনি রীতিমতো ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত ছিলেন। কিন্তু সেই সব 'রুচি'বাগীশ কর্তাব্যক্তিদের আমন্ত্রণ তিনি অস্বীকার করেননি এবং সেই সভায় অত্যন্ত অসুস্থ শরীরে তিনি উপাসনা পরিচালনা করা ছাড়াও একটি ব্রহ্মসঙ্গীতও গেয়েছিলেন। এই ঘটনাটি, সেই মূহুর্তে না হলেও ধীরে ধীরে এই তরুণটিকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। কবিকথিত, '' সব বিদ্বেষ যেন দূরে যায় তব মঙ্গলমন্ত্রে'' বাণীটি কীভাবে তিনি নিজের জীবনে প্রতিফলিত করতে পেরেছিলেন তার প্রথম পাঠ পেলেন তরুণটি , এভাবেই।
    ১৯২৯ সালে বিদ্যাসাগর কলেজে পড়াকালীন তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় কয়েকজন মানুষের, শৈলেশ দত্তগুপ্ত, হিমাংশু দত্ত, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায় আর সন্তোষ কুমার সেনগুপ্ত । সন্তোষকুমার আর তিনি সে সময় একটি মেসে একই ঘরে থাকতেন। সঙ্গীতের আবহের মধ্যে থাকলেও তাঁর সঙ্গীতচর্চা সীমাবদ্ধ ছিলো শুধু ব্রাহ্মসমাজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সমবেত গায়কমন্ডলীর একজন হিসেবে। সেই সময় ব্রাহ্মসমাজের গায়করা ব্রহ্মসঙ্গীতের প্রশিক্ষণ দিতেন নিজের মতো করে। সেই তরুণের নিজের ভাষায়, ''.... তখনকার দিনে কোনো স্বরলিপির বই সামনে রেখে শেখানো হত না, গাওয়াও হত না। (শিক্ষকেরা) যেভাবে গাইতেন, আমরাও ঠিক সেইভাবেই গাইতাম। ব্রহ্মসঙ্গীত যা গাওয়া হত তা কার বা কাদের রচিত এইসব প্রশ্নও তখন মনে হতনা। 'রবীন্দ্রসঙ্গীত' বলে আলাদা কোনো শ্রেণীবিভাগ তখন একেবারেই ছিলোনা। কিশোরগঞ্জে বাবা মায়ের মুখে, ময়মনসিংহের ব্রাহ্মদের মুখে এবং কলকাতাতেও মাঝে মাঝে শুনতাম 'রবিবাবুর গান' অথবা 'রবিঠাকুরের গান'।'' তিনি অবশ্য এক দিক থেকে সৌভাগ্যবান ছিলেন। পারিবারিক যোগাযোগের কারণে আরও অনেকের সঙ্গে শুনতেন টুলুমাসী, বুঁচিমাসী বা মেজদি'র গান। টুলুমাসী'র গানের গলা ছিলো '' যেমন সুরেলা, তেমন মিষ্টি'', আর বুঁচিমাসীর গলায় '' মিষ্টিত্ব তো ছিলই, আবার 'জোয়ারী' বলে একটি মজার ব্যাপারও ছিল''। এই টুলুমাসী ও বুঁচিমাসী, সাহানা দেবীর মতো কবির বিশেষ স্নেহের পাত্রী ছিলেন। টুলুমাসী হলেন সুপ্রভা রায়, সুকুমার রায়ের পত্নী ও সত্যজিতের মাতা, বুঁচিমাসীর ভালো নাম কনক দাশ এবং মেজ'দি ছিলেন সতীদেবী।
    ''... তখনকার দিনে রুচিসম্পন্ন অবস্থাপন্ন রবীন্দ্র-ভক্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে অন্যান্য রেকর্ডের সঙ্গে সাহানা দেবী, কনক দাশ ও সতীদেবীর রেকর্ড বাজতই...''

    ব্রাহ্ম হলেও, শান্তিনিকেতনের অন্দরমহলে তাঁর কোনও যোগাযোগ ছিলোনা। বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন উৎসবে বেড়াতে যেতেন সেখানে। কিন্তু সেখানে যে গান শুনতেন তার কোনও প্রভাব তাঁর উপর পড়তো না। ''.... এক নম্বর কারণ হতে পারে যে , ঐ গানগুলির রস গ্রহণ বা উপভোগ করার ব্যাপারে আমার নিজের অক্ষমতা কিংবা দু নম্বর কারণ হতে পারে এই যে যাদের মুখে ও গলায় ঐ সব গান শুনতাম, গানের মধ্যে রস সঞ্চারণে তাদের অক্ষমতা। আবার এই কথাটিও সত্যি যে তখনকার দিনে সঙ্গীতরসিকরা এবং সাধারণ শ্রোতারাও রবীন্দ্রনাথের প্রেম পর্যায়ের গান এবং ঋতুসঙ্গীতগুলিকেও যথেষ্ট মর্যাদা দিতেন না। এই সব গানগুলির প্রতি তাদের রীতিমতো অশ্রদ্ধাই ছিল।''

    ১৯৩৫ সালে চাকরিতে ঢুকে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে। সুরেন্দ্রনাথের পুত্র সুবীরেন্দ্রনাথের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ প্রগাঢ় হয়ে ওঠে। এই সময় তিনি সুবীর ঠাকুরের সূত্রে ইন্দিরাদেবীর সংস্পর্শে আসেন। ইন্দিরাদেবীর পাম অ্যাভেনিউয়ের বাড়িতে তাঁর নিয়মিত গতায়াত হতে থাকে। ইন্দিরাদেবীই তাঁকে কবির অধ্যাত্মসঙ্গীতের বৃত্তের বাইরে থাকা গানের সঙ্গে পরিচিত করান। ইন্দিরাদেবী পিয়ানো বাজিয়ে কোন গান কীভাবে গাইতে হয় তার প্রশিক্ষণ দিতেন। ''আমি চিনি গো চিনি তোমারে'' গানটি পশ্চিমী কায়দায় হার্মোনাইজ করে তিনি গাইতেন। তাঁরই নির্দেশনায় যুবকটি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একাকী রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া শুরু করেন। ''.... সেই দিনগুলি থেকেই রবীন্দ্রনাথের প্রেম ও নানা পর্যায়ের গানগুলির রসে আমি মজা পেতে লাগলাম।'' তখনও তিনি 'স্বরবিতান' নামের কোনও স্বরলিপি বইয়ের নাম শোনেননি। স্বরলিপি বুঝতেনও না। তবে পরবর্তীকালে 'টাকা জমিয়ে' কিছু স্বরলিপির বই তিনি কিনে ফেলতে পেরেছিলেন এবং নিজে নিজে স্বরলিপি দেখে গান গাওয়ার অভ্যেসও হয়ে যায় তাঁর।

    পারিবারিকসূত্রে যদিও তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে আবাল্য পরিচয়, কিন্তু এই সঙ্গীতধারাটির নিয়মমাফিক শিক্ষা তাঁর ইন্দিরা দেবীর কাছে। তাও পূর্ণসময়ের 'শাগির্দি' যাকে বলে, তা নয়। কলকাতা ও শান্তিনিকেতনে যেসব দিগগজ রবীন্দ্রসঙ্গীত গুরুরা সেই সময় শিক্ষণ প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে ছিলেন, তাঁদের কারুর কাছেই জর্জ পরম্পরাগত শিক্ষা লাভ করেননি। সত্যি কথা বলতে কি তাঁর দিগ্দর্শক ছিলো স্বরবিতান, নিজের কান ও নিয়মভাঙা অফুরন্ত সৃজনশীলতা। একে যদি তাঁর সীমাবদ্ধতা বলি, তবে তাই। আর যদি বলি এখান থেকেই তিনি সূত্রপাত করেছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতে সম্পূর্ণ নতুন এক ঘরানা, জনপ্রিয়তায় যা ছিলো শীর্ষস্থানে, কিন্তু কোনও দ্বিতীয় ঘরানাদার তৈরি হতে পারেনি। অর্থাৎ জর্জদা রবীন্দ্রসঙ্গীতে একাই একটা বাতিঘর হয়ে রয়ে গেলেন।
    জর্জদার প্রস্তুতিপর্ব প্রসঙ্গে গুরু'র একটি মন্তব্য তাঁর প্রতি অবশ্যপ্রযোজ্য। ' বাইরে থেকে যারা দেখে তারা কে জানবে ভিতরে একটা সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলছে। এ সৃষ্টির কি আমারই মনের মধ্যে আরম্ভ আমারই মনের মধ্যে অবসান। বিশ্বসৃষ্টির সঙ্গে এর কি কোনো চিরন্তন যোগসূত্র নেই। নিশ্চয় আছে।' ( পথে ও পথের প্রান্তে - ১৯২৬)

    তিরিশের দশকের শেষদিকে সুরেশ চক্রবর্তী মশায়ের উদ্যোগে তিনি বেতারকেন্দ্রে গান গাওয়ার সুযোগ পা'ন । শৈলজারঞ্জনের নির্দেশনায় কনক দাশের ( পরবর্তীকালে তাঁর বৌদি) সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে এইচ এম ভি থেকে একটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড প্রকাশ করেন। গানদুটি ছিলো, ''সংকোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান'' আর '' হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব'' । ১৯৩৮ সালে কনক দাসের সঙ্গে আবার অন্য রেকর্ডে দুটি গান,দ্বৈতকণ্ঠে, '' ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে'' আর ''ঐ ঝঞ্ঝার ঝংকারে ঝংকারে।।।''। মোটামুটি এই সময়েই তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ট পরিচয় হয় দ্বিজেন চৌধুরী, অজিত চট্টোপাধ্যায়, সমরেশ রায় এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। আরেকজন ঘনিষ্ট বন্ধুও তিনি পেয়েছিলেন এই সময়, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র। এইসব বন্ধু, গণনাট্য সঙ্ঘ, ভারতীয় কম্যুনিস্ট পার্টি এবং পথেঘাটে ইতরশ্রোতাদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাঁকে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে সম্পূর্ণ অন্য মাত্রায় বোঝা এবং ততোধিক ভিন্ন শৈলিতে পরিবেশন করার একটা ক্ষমতা এনে দেয়। এই সময়েই শ্রীহট্ট থেকে আসা একটি ছেলে তাঁকে বলেন, '' জর্জদা, রবীন্দ্রসঙ্গীত যেভাবে আপনি গাইলেন সেইভাবে যে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া যায় তা আগে ভাবতেও পারিনি।'' এই ছেলেটির নাম ছিলো হেমাঙ্গ বিশ্বাস। শুধু যে নতুন প্রজন্মের শ্রোতারাই জর্জ'দার গুণগ্রাহী ছিলেন তাই নয়, সেই সময় বাংলা গানের জগতে অলিখিত রাজা পঙ্কজকুমার জর্জদা'কে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। পঙ্কজকুমার জর্জদা'কে কখনও ডাকতেন 'সম্রাট' বা কখনও 'মিস্টার ট্রাস্ট' সম্বোধনে। ডেকে নিয়ে গিয়ে নিউ থিয়েটার্সের ফিল্মে কোরাস গাওয়াতেন। সত্যি কথা বলতে কি সেই সময়, অর্থাৎ চল্লিশ দশকের প্রথম দিকে, জর্জদা প্রকাশ্যে মাঠেঘাটে জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র বা হারীন চট্টোপাধ্যায়ের লেখা গান গাইতেন মূলতঃ গণনাট্যের অনুষ্ঠানে।এ ছাড়া ব্রাহ্মসমাজ সম্পৃক্ত আসরে বা ইন্দিরাদেবীর গীতবিতানের অনুষ্ঠানে, সমবেত বা একক রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়ন ছিলো তাঁর গানের বিশ্ব। গণনাট্যের আসরেও রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন তিনি, কিন্তু সেখানে চাঁইরা তাঁর এই শখটিকে 'বিচ্যুতি' বলেই মনে করতেন। তাঁর একক রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড কিন্তু প্রকাশিত হয়েছিলো চল্লিশ দশকের শেষ দিকে। ঠিক কবে হয়েছিলো তা তাঁর মনে ছিলোনা। তবে খুঁজে পেতে দেখা যাচ্ছে ১৯৪৭ সালে তাঁর প্রথম ডিস্ক কলাম্বিয়া কোম্পানি বাজারে ছাড়ে। একদিকে, ''এ শুধু অলস মায়া'' আর অন্যদিকে ''দিন পরে যায় দিন''। তার পর বছর ন-দশ তিনি কলাম্বিয়া ছাপেই রেকর্ড করতেন। কিন্তু সেটা বন্ধ হয়ে যায় রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ডের বাজার যথেষ্ট ভালো নয় বলে।
    গণনাট্য সঙ্ঘ ও কম্যুনিস্ট পার্টির সঙ্গে এই 'ঘনিষ্টতা' ও তদ্ভব অনুপ্রেরণা, জর্জদাসহ আরো যে দুজন শিল্পীকে ভবিষ্যতের রবীন্দ্রসঙ্গীত মানচিত্রে চিরস্থায়ী গরিমার আসন এনে দিয়েছিলো তাঁরা হলেন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সুচিত্রা মিত্র।

    জর্জদা বা দেবব্রত বিশ্বাস সম্পর্কে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী বা শ্রোতাদের মনে যে অনুভূতিটি রয়েছে তা'কে নৈসর্গিক বলা যেতে পারে। অনুভবের জগতে ব্যক্তি জর্জদা হয়তো একজন আত্মীয়ের মতো মুগ্ধ জনতার হৃদমাঝারে নিজের স্থান করে নিয়েছেন, কিন্তু তাঁর গাওয়া গান আজকের শ্রোতাদের কাছে জল-মাটি-অক্সিজেনের মতো প্রাকৃত নৈসর্গিক সম্বল। তাঁর যে দীর্ঘ প্রস্তুতিপর্বের বিবরণ ইতোমধ্যে দিয়েছি সেখানে একটা সূত্র অতি স্পষ্ট, তাঁর গান শোনা বা শেখার পদ্ধতি ছিলো একান্ত নিজস্ব। তার সঙ্গে আর কোনও রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীর শিক্ষা বা অনুশীলন ক্রিয়াকে তুলনা করা যায়না। যে দুজন শিল্পীর রবীন্দ্রসঙ্গীতচর্চা সিদ্ধির বিচারে তাঁর নিকটতম, সেই পঙ্কজকুমার বা হেমন্তকুমারের সঙ্গেও এই ক্ষেত্রে তাঁর কোনও সমান্তরাল মাত্রা নেই। তাঁদের তিনজনের মধ্যে যে উল্লেখযোগ্য সাধারন লক্ষণগুলি রয়েছে, তার মধ্যে প্রধান তাঁদের প্রত্যেকের নিজস্ব বিপুল জনপ্রিয়তা। কোনও পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মূল্যে নয়, স্বকীয়তার উজ্জ্বল মানদন্ডে তাঁরা শ্রোতার মনের নিভৃতকোণে নিজেদের তো বটেই, আরো সরাসরি বলতে গেলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের জন্য প্রাপ্য সিংহাসনটি পেতে দিয়েছিলেন।

    জর্জদার গান আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন আসরে শুনেছি পাঁচ-ছ'বার। রেকর্ডের গান তো জ্ঞান হওয়া থেকে প্রায় নিত্যদিনের সঙ্গী। বহুবার বোঝার চেষ্টা করেছি ওঁর গানের মধ্যে কোন লক্ষণটি এতো বেশি মোহগ্রস্ত করে? তা কি তাঁর ব্যারিটোন কণ্ঠ অথবা শব্দে সুর প্রয়োগের অন্যতর ভঙ্গি, কিংবা সাড়ে তিন মিনিটের এক-একটা নির্মাণে প্রত্যেকবার পাল্টে যাওয়া প্যাটার্ন। মন্দ্রসপ্তকে কাঁচ চুরমার জোয়ারির টান আর তারসপ্তকে পঞ্চম পেরিয়েও অনায়াস সুর ধরে রাখা, '' ওগো সুদূর, বিপুল সুদূর, তুমি যে বাজাও ব্যাকুল বাঁশরি''। কমবয়সে বুঁচিমাসীর গলায় জোয়ারি শুনে রোমাঞ্চিত স্মৃতিকে ম্লান করে তাঁর নিজের কণ্ঠে, '' গোধূলি গগনে মেঘে ঢেকেছিলো তারা''। এইসব জাদু পেরিয়ে থেকে সম্পূর্ণ অন্য মেরুতে থাকা তাঁর মহাভারতের কর্ণের মতো একটি ভাবমূর্তি, যার সারাজীবনের 'পরাজয়ে'র পদাবলীই শ্রোতার কাছে জয়ের ফলকপ্রস্তর। পন্ডিতের ভৎর্সনা প্রপাত, শ্রোতাদের হাত ধরে ফিরে আসতো পুষ্পবর্ষা হয়ে। শ্বাসরোগে সীমিত দমের আকুলতাকে ব্যবহার করতেন ম্যারাথন দৌড়ে শেষ ল্যাপে সাফল্যের অধীরতার মতো। সব মিলিয়ে একটা একেবারে অন্যরকম একটা পরিবেশনা, যা শুনলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের শিরায় রক্তের লালিমা অনুভব করা যেতো। তপ্ত, উজ্জ্বল, চরিতার্থ মাত্রার সম্পূর্ণ অনুভব। জীবৎকালে শেষ রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড করেছিলেন ১৯৭১ সালে। তেত্রিশ বছরের দীর্ঘ সৃষ্টিশীল জীবন। যদিও ১৯৭১ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বহু গান ব্যক্তিগত সংগ্রহে ফিতেবদ্ধ করে গিয়েছিলেন, যা আমরা পরবর্তীকালে শুনতে পেয়েছি।
    যতো বয়েস বেড়েছে, জর্জদা'র কন্ঠস্বরের ন্যাচরল বেস বেড়েছে আর কমেছে লয়ের দ্রুততার দম। এই প্রাপ্তি ও ক্ষতি, দুটোকেই তিনি অবলীলায় ব্যবহার করতে পেরেছেন নিজের পক্ষে। যতোদিন গেছে তিনি গানের লয় কমিয়ে দিয়েছেন। স্বরবিতানে যে তালনির্দেশ করা আছে তাতে বদ্ধ না থেকে তালমুক্ত নাটকীয়তা নিয়ে এসেছেন গাইবার সময়। এই গুলো ই তো ছিলো তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ। তবে এ সবই তাঁকে শ্রোতার কাছে বেশি করে নিয়ে এসেছে, সে শ্রোতা 'প্রস্তুত' বা 'অপ্রস্তুত' তার অপেক্ষা রাখেনি। ‘পন্ডিত’রা পরিস্থিতিটি ঠিক বুঝতে পারেননি তখন, রবীন্দ্রসঙ্গীতের শুদ্ধতা নিয়ে বেশ দ্বিধায় ছিলেন।

    কণ্ঠের সুর দিয়ে গানকে বেঁধে রাখা ছাড়াও তিনি সম্পূর্ণ অন্য শৈলিতে চিন্তা করেছিলেন রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ডে যন্ত্রানুষঙ্গের প্রয়োগ নিয়ে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর শেষ যুদ্ধ তো ছিলো-ই এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে। গান পরিবেশনের সময় সহযোগী যন্ত্রসঙ্গীতের কুশল ব্যবহার, সম্পূর্ণ আবহ ও গানের চরিত্রটিকে অন্যস্তরে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু কর্তাবাবারা তাঁকে অতোটা স্বাধীনতা দিতে প্রস্তুত ছিলেন না। বাকিটা তো ইতিহাস। এই বিষয়ে তাঁর চিন্তাভাবনার সামান্য কিছু উদাহরণ দেখা যেতে পারে। যেমন, 'এইতো ভালো লেগেছিলো', পুরোনো রেকর্ড, যন্ত্রানুষঙ্গ শুনলে মনে হবে যেন একজন বাউল গাঁয়ের পথে পথে গেয়ে চলেছে, সুরের উচ্চাবচ, ধারাস্রোতের মধ্যে একটা গড়িয়ে যাওয়ার গতি আছে। এটাই ঐ সুরবিন্যাসের নাট্যরস। পুরোনো গানের মধ্যে 'আজি যতো তারা তব আকাশে'যন্ত্রবিন্যাসের মধ্যে একটা বিরাটকে ধরার জমকালো প্রয়াস আছে। অন্তত ষোলো পিস অর্কেস্ট্রা ব্যবহার হয়েছে মনে হয়। কয়েকটি গানের যন্ত্রায়োজন বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয়, যেমন, গায়ে আমার পুলক লাগে, এ কী মায়া লুকাও কায়া, বহুযুগের ওপার হতে, দারুণ অগ্নিবাণেরে, গোধূলিগগনে মেঘে ইত্যাদি ইত্যাদি। 'বহুযুগের ওপার হতে' শুনলে মনে হয় সলিল চৌধুরির কম্পোজিশন। 'প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে'র প্রায় সমান সুরে তৈরি ' আমার জ্বলেনি আলো অন্ধকারে'র লয় ধরে রেখেছে ম্যারাকাস। গলার রিভার্ব বাড়িয়ে শুধু কর্ডে আঘাত করে লয় ধরে রাখা তাঁর আগে রবীন্দ্রসঙ্গীতে আর কেউ করেনি। যেসব গানের সুরে অভিভাবক রাগের ভূমিকা প্রকট থাকে, সেখানে মূলত বাঁশি ( কারণ তাঁর কন্ঠের মন্দ্র ও বাঁশির তার পরস্পরকে বেঁধে রাখে) মুখ্য ভূমিকা পালন করে, তার সঙ্গে থাকে সেতার ও বেহালা। যেমন, আজি শ্রাবণ ঘন গহন মোহে, আমার যেদিন ভেসে গেছে, আমার রাত পোহালো ইত্যাদি। আবার একটু দ্রুত লয়ে, অনেক দিনের আমার যে গান, প্রিলিউড পিয়ানো দিয়ে, কিন্তু চলে যাচ্ছে বাঁশিতে। আবার ঢিমে লয় 'এ মণিহার' য়ে তিনি তাঁর কন্ঠের বেসকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, তাই গানটি বাঁশি দিয়ে শুরু করে বেহালায় চলে যাচ্ছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর ও বাণীর মধ্যে যে নাটকীয় টানাপড়েন তাকে তিনি সতত সফলভাবে খুঁজে পেয়েছেন এবং নিজের পরিবেশনায় তাকে মূলস্রোতের সঙ্গে পূর্ণ মর্যাদায় মিলিয়ে দিতে পেরেছিলেন।
    আজকের শ্রোতাদের কাছেও তাঁর প্রাসঙ্গিকতা সমানভাবে স্বীকার্য। তাঁর গায়ন পদ্ধতি ও রবীন্দ্রসঙ্গীতকে একটি ভিন্নমাত্রায় নিজস্বভাবে ব্যাখ্যা করার সামর্থ্য, তাঁকে নিজের সময়ের থেকে অনেকটা এগিয়ে রেখেছিলো।

    যদি আমরা জর্জদার সঙ্গীত পরিবেশনের জাদুটিকে সঠিক বিশ্লেষণ করতে পারি। একজন 'প্রস্তুত' শ্রোতা এবং একজন 'অপ্রস্তুত' শ্রোতা, এই দুজনকেই তিনি মুগ্ধ করতে পারেন একই গানের মধ্যে দিয়ে। এই দুই বর্গের শ্রোতার কিন্তু গান ভালো লাগার মানদন্ড পৃথক। কিন্তু জর্জদার গানে তাঁরা উভয়েই রবীন্দ্রনাথকে স্পর্শ করতে পাচ্ছেন একভাবে, কিন্তু ভিন্ন কারণে। অর্থাৎ একজন প্রকৃত শিল্পী সচেতনে-অবচেতনে যদি নিজস্ব বোধ, অনুভব থেকে রবীন্দ্রনাথকে স্পর্শ করার সিদ্ধি অর্জন করতে পারে, তবেই সে সেই আলোর শিখা দিয়ে শ্রোতার মনের প্রদীপকেও জ্বালিয়ে দিতে পারে। অবশ্য সেতো অনেকেই পারে। আমার প্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে অন্তত পাঁচটি নাম আমি এক নিঃশ্বাসে নিতে পারি, যাঁদের সেই সিদ্ধি লাভ হয়ে গেছে। তবে জর্জদা কেন অনন্য?
    আমি যেভাবে এর উত্তরটি খুঁজি, খুঁজতে চেষ্টা করি, তাই লিখি না হয়। তাঁর মুখোমুখি বসে শোনা শেষ অনুষ্ঠানের কথাটিই মনে পড়ছে এই মুহূর্তে। যেন ক্লান্ত দেখাচ্ছিলো তাঁকে। গেরুয়া ফতুয়া, গেরুয়া লুঙ্গি, কালো ফ্রেমের চশমা, তিন খন্ড গীতবিতান। সঙ্গে থাকে চিরকাল, কিন্তু তাকিয়ে দেখেন না সেদিকে। একজন সহকারী বসে থাকেন পাতা খুলে, তাঁর চোখ তো বোজাই থাকে। হারমোনিয়ামের বেলো খুলে তাকালেন আমাদের দিকে, বললেন, 'নমস্কার"...., আর কথা নয়...

    সোজা মধ্যম টিপে গেয়ে উঠলেন,

    সুর ভুলে যেই ঘুরে বেড়াই
    কেবল কাজে
    বুকে বাজে
    তোমার চোখের ভর্ত্সনা যে....

    সেই চোখ তাঁকে কেমন করে তাড়না করছে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছি যেন... উধাও আকাশ, উদার ধরা, সুনীল শ্যামল সুধায় ভরা.. উধাও আকাশ কীভাবে মানুষের বোধে, কণ্ঠে জেগে ওঠে, উদার ধরার সুনীল শ্যামল রূপ ধরা পড়ে যায়, সুনীল, শ্যামলের হসন্ত 'ল' প্রপাতের মতো ঝরে পড়ছে আমাদের কানে, অবচেতনায়,... একেই কি বলে প্রাণ দিয়ে গাওয়া? শিল্পীর থেকে শ্রোতা নতুন প্রাণের স্পন্দন আত্মস্থ করছে...
    'তোমায় বসাই, এ-হেন ঠাঁই, ভুবনে মোর আর- কোথা নাই, মিলন হবার আসন হারাই আপন মাঝে- বুকে বাজে তোমার চোখের ভর্ত্সনা যে.....' জর্জদা যেন কথা বলছেন সেই মানুষটির সঙ্গে, যাঁর সঙ্গে আমরা কারণে অকারণে রোজই তো কথা বলি, তাঁর কণ্ঠ শুনতে পাইনা, কিন্তু তাঁর ভালোবাসা আমাদের মতো নগণ্য কীটপতঙ্গকেও ভরিয়ে রাখে। আমাদের জন্যই যদি তাঁর এতো ভালোবাসা, তবে জর্জদাকে তিনি কী দিয়ে অভিষিক্ত করছেন এই গান শুনে, কোন মন্ত্রে দীক্ষা দিচ্ছেন ? আমাদের ধরাছোঁয়ার দূরের জগৎ সেটা, কিন্তু 'বুঝেছি কি, বুঝি নাই বা, সে তর্কে কাজ নাই'। ভালো আমার লেগেছে যে রইলো সেই কথাই।

    একটু আবেগপ্লাবিত লাগছে কি? কাউকে 'অনন্য' বলতে গেলে তা একটু লাগেই তো, 'আবেগ'।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৮ মে ২০১৯ | ৩১০৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শিবাংশু | ***:*** | ০৮ মে ২০১৯ ০৩:৫৫48219
  • দিনমাহাত্ম্য বলে একটা ব্যাপার আছে। এই দিনটিতে জর্জ ও রবি একাত্ম হয়ে যান। অন্তত আমার কাছে তো হয়ে যানই। জর্জদা বিষয়ক এই লেখাটি তাঁদের দুজনের প্রতি নিবেদিত আমার আজকের প্রণাম।
  • dd | ***:*** | ০৮ মে ২০১৯ ০৪:৫৪48220
  • বাঃ বাঃ বাঃ।

    খুব ভালো লাগছে।

    পড়ছি আর শুনছি।
  • i | 162.158.***.*** | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৫:৪৯90950
  • কয়েক মাস হল শুনেই চলেছি শুনেই চলেছি শুনেই চলেছি।
    অভ্যুর খোলা টই তে তুলে দেওয়া যুক্তিযুক্ত হত। সে টই গুরুসন্ধানে খুঁজে পেলাম কিন্তু খুলতে পারি নি ( আমারই অপারগতা)।
    এই লেখায় এভাবে গান তুলে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। তবু আপাতত এখানেই থাক।

  • শিবাংশু | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২০:৫৭90965
  • এই গানটি জর্জদার মুখোমুখি বসে শুনেছিলুম...১৯৭৬
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন