কেমন আছে ভারতের মুসলমান সমাজ? এই প্রশ্ন উঠলেই সঙ্গে সঙ্গে আর একটা প্রশ্ন ও প্রকট হয়ে ওঠে, ভারতের রাষ্ট্রব্যবস্থা কেমন আচরণ করছে সহনাগরিক মুসলমান সমাজের প্রতি? আরও যদি নির্দিষ্ট ভাবে বলতে হয়, তাহলে এই কথাই উঠে আসে যে, ভারত নামক দেশটির রাষ্ট্রিক কাঠামোর অন্যতম প্রধান স্তম্ভ কেমন আচরণ করে থাকে মুসলমান সমাজের প্রতি? বিষয়টা একটু ঘুরিয়েও বলা যায়, এই দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোটা যাদের মাধ্যমে সবথেকে বেশি মালুম হয়, সেই পুলিশের কাছ থেকে কেমন আচার- আচরণ পেয়ে থাকে আমাদের সহনাগরিক মুসলমানেরা?
মুসলমানেরা ভারতের নাগরিকদের ভিতরে সবথেকে কলহপ্রবণ। অপরাধের মাত্রা মুসলমানদের ভিতরে সবথেকে বেশি-- আর এস এস - বিজেপি মার্কা এইসব লব্জগুলো কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার হালের বাড়বাড়ন্তের অনেক আগের থেকেই পুলিশের কাছে কার্যত গৃহীত সিদ্ধান্ত। জওহরলাল নেহরু থেকে জ্যোতি বসু, কেউই এই ভাবনা থেকে কখনো পুলিশকে বের করে আনতে পারেন নি। এঁদের নিজস্ব ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব তাঁদের জীবৎকালে প্রশাসনে জোরালো ছিল। তাই পুলিশ বেশি সাহস করেনি মুসলমানদের প্রতি বেশি বৈরী মনোভাব দেখাতে। তা বলে এঁরা যে যে দলের প্রতিনিধি ছিলেন, সেইসব দলগুলির একটা বড়ো অংশ যে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মুসলমানদের উপরে গায়ের ঝাল মেটায়নি- তেমনটা মনে করবার আদৌ কোনো কারণ নেই।
মুম্বাই দাঙ্গার সময়ে (১৯৯২-৯৩) সেখানকার পুলিশ কি ছুতোনাতায় মুসলমানদের হেনস্থা করেছে বিচারপতি বি এন শ্রীকৃষ্ণের প্রতিবেদনেই তা পরিষ্কার। ভুলে গেলে চলবে না যে, মুম্বাই দাঙ্গার সময়কালের অতিরিক্ত কমিশনার ভি এন দেশমুখের মতো অফিসারদের নিয়েই কিন্তু আমাদের পুলিশ বাহিনী। শ্রীকৃষ্ণ কমিশন এই দেশমুখদের সম্পর্কে যতোই বিরূপ মন্তব্য করুক না কেন, এইসব অফিসারদের কেশাগ্র স্পর্শ কখনো রাষ্ট্র ব্যবস্থা করবে না। আর এই দেশমুখের মতো অফিসাররা থাকে বলেই গুজরাট থেকে দিল্লি, মুসলমানের রক্ত আর কান্নায় দেশের মাটি কেবল ভিজতেই থাকে, ভিজতেই থাকে।
সাচার কমিটি তার প্রতিবেদনে বলেছিল; এমন একজনও ভারতীয় মুসলমান খুঁজে পাওয়া কঠিন, যাঁকে কখনো না কখনো আই এস আই এর চর, এই অপবাদ শুনতে হয় নি।বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁরা নিজেরা যতোই ধর্মনিরপেক্ষ হোন, দলীয় সতীর্থদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে এই মানসিকতা থেকে বের করে আনতে সমর্থ হয়েছেন? না। সাচার কমিটিই বলছে; কোনো গোলমাল ঘটলেই পুলিশ আগে মুসলমানদের ধরে। যিনিই রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকুন না কেন-- এই কঠিন- কঠোর - উদ্ধত - অসহায় বাস্তব থেকে কি একচুল ও আমরা সরে আসতে পেরেছি? না। আজও কি দেশের আনাচে কানাচে গড়ে দিনে একটা ফেক এনকাউন্টারের শিকার হন না মুসলমান? বুদ্ধ- মমতার নিরন্তর প্রয়াসের পরও কি কেবল আমাদের এই রাজ্যেরই সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে মুসলমানদের কথায় কথায় 'বিদেশি নাগরিক' বলে পুলিশ কর্তৃক দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলে না? বিচারপতি সাচার যে গলদগুলি চিহ্নিত করেছিলেন, সেগুলিকে অবলম্বন করে তো রাজনীতি অনেক হল, সেই ক্ষত মেরামত করে মুসলমান সমাজকে একটুখানি মানসিক নিরাপত্তা দিতে পুলিশকে বাধ্য করতে পেরেছে কি কোনো রাজনৈতিক দল?
কঠিন হলেও এটাই বাস্তব যে, পুলিশের কাছে একজন মুসলমানকে হত্যা করা মানে দেশ থেকে একটি মুসলমান কমে যাওয়া। এই মানসিকতা নিয়েই কিন্তু ভারত রাষ্ট্রের পুলিশ মুসলমানদের দেখে। পুলিশের ভিতরে যারা জুনিয়ার, তাদের ভিতরে মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক মানসিকতা বেশি দেখতে পাওয়া যায়। মুসলমানকেই দাঙ্গাতে অভিযুক্ত করার প্রবণতা খুব বেশি দেখতে পাওয়া যায়। দাঙ্গার অভিযোগে ধরে আনার পর মুসলমান কয়েদিদের সঙ্গে অমানবিক, নিষ্ঠুর আচরণ করতে পুলিশকে তুলনামূলক ভাবে বেশি দেখা যায়। দাঙ্গার ক্ষেত্রে পুলিশ বেশিরভাগ সময়েই মুসলমানদেরই প্রত্যক্ষ দাঙ্গাকারী হিসেবেই সনাক্ত করে।
হিন্দু- মুসলমানের ভিতরে সাম্প্রদায়িক হিংসার স্বরূপ বিশ্লেষণে বিভূতি নারায়ণ রাইয়ের প্রতিবেদনকে সামনে রেখে যদি দেখা যায়, তবে এটাই উঠে আসবে যে, গত শতকের তিনের দশক থেকে ভারতে যতো সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়েছে, তার প্রত্যেকটিতেই পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হেনস্থা করেছে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষদেরই। ১৯৩১ সালের কানপুর দাঙ্গা, ১৯৬৭ সালের রাঁচি, '৬৯ সালের আহমেদাবাদ, '৭০ সালের ভিওয়ান্দি জলগাঁও, '৭৭ সালের বেনারস, '৭৯ সালের জামশেদপুর, '৮০ সালের মোরাদাবাদ, '৯০ সালের মিরাট, '৮৯ সালের ভাগলপুর, '৯২ এর অযোধ্যা, '৯২-'৯৩ এর মুম্বাই সর্বত্র ই দেখা যাচ্ছে, মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষদের একতরফাভাবে প্রথমেই দোষী বলে ধরে নিচ্ছে পুলিশ।
বিভূতি নারায়ণ রাই তাঁর প্রতিবেদনে জোরের সঙ্গে বলেছেন, দাঙ্গার সময়কালে পুলিশ তার নিরপেক্ষ চরিত্র বেশিরভাগ সময়েই ভুলে যায়। নিজের আইনানুগ ভূমিকা ভুলে গিয়ে এক 'হিন্দু শক্তি' হিসেবে পুলিশ নিজেকে মেলে ধরে। দাঙ্গার সময়ে , কার্ফু চলাকালীন মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি পুলিশ নিজের রক্ষাকারীর ভূমিকা পালন করতেই ভুলে যায়। মুসলমানদের বাঁচানোর থেকে তাঁদের শত্রু হিসেবে নিজেদের মেলে ধরতেই পুলিশের ভূমিকা তীব্র হয়ে ওঠে বলে বিভূতিবাবু তাঁর প্রতিবেদনে খুব স্পষ্টভাবে বলেছেন। গড়পড়তা পুলিশকর্মীরা পুলিশবাহিনীতে যোগদানের সময়কালেই মুসলমানদের সম্পর্কে একটা বৈরিতার মানসিকতা নিয়ে থাকে। সেই মানসিকতাই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে মুসলমানেদের প্রতি দেখাতে থাকে বলে বিভূতিবাবুর অভিমত। সেই প্রতিবেদনে ক্ষেত্র সমীক্ষার ভিত্তিতে দেখানো হয়েছে, পুলিশ সাম্প্রদায়িক প্রশ্নে হিন্দুকে মনে করে বন্ধু আর মুসলমানকে মনে করে শত্রু।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্যি যে, ভারতীয় সমাজ গড়পড়তাভাবে পুলিশকে সাম্প্রদায়িক ভাবেই দেখতে চায়। পুলিশ নিরপেক্ষ হবে, হিন্দু- মুসলমান দুজনকেই সমান দৃষ্টিতে দেখতে সাধারণভাবে যে এটা ভারতীয় সমাজ চায় না বিভূতি নারায়ণ রাই ক্ষেত্র সমীক্ষা জনিত বিশ্লেষণের ভিতর দিয়ে তা দেখিয়েছেন। পুলিশ ও নিজেদের কেবলমাত্র সংখ্যাগুরুর রক্ষাকর্তা বলেই মনে করে।পুলিশ আর মুসলমানের সম্পর্কটা প্রথম থেকেই যে সংঘাতের সেকথা খুব পরিষ্কার ভাবেই বিভূতি রাই বলেছেন। পুলিশ যে ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে মুসলমানের উপরে করে চলেছে তার প্রেক্ষিতে এটা ধরে নেওয়া যায় না যে, মুসলমান পুলিশের নামেই অচলাভক্তি নিয়ে থাকবে।
'৮২ সালের মিরাট দাঙ্গার সময়ে পুলিশই যে মুসলমানদের উচিত শিক্ষা দিতে তৎপর হয়েছিল তা স্পষ্ট হয়ে যায় জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের তৎকালীন যুগ্মসচিব এন সি সাক্সেনার প্রতিবেদন থেকে। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায় রাজ্য সরকার পরিচালিত প্রভিন্সিয়াল আর্মড কন্সট্যাবুলিরি( পি এ সি) মুসলমানদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার কাজটি পরিচালনা করেছিল। সাক্সেনা পুলিশের এই কাজটিকে আদৌ কোনো দোষের বিষয় বলে মনেই করে নি। তার কাছে মুসলমান মাত্রেই ছিল সাম্প্রদায়িক, দাঙ্গাপ্রিয়। আর হিন্দুরা আইনকানুনের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ। পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতায় হিন্দুদের জুড়ি খুঁজে পান নি সাক্সেনা।
জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের উচ্চপদস্থ আমলা তার প্রতিবেদনে বলছে; মিরাটে '৮২ সালের দাঙ্গা শুরু করেছিল মুসলমানেরাই। তারাই প্রথম অপর সম্প্রদায়ের মানুষদের উপরে চড়াও হয়। খোদ জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের কর্তাব্যক্তিদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘিরে মুসলমান সম্প্রদায় সম্পর্কে এইরকম ধারণা হলে খুব সহজেই অনুমান করতে পারা যায় যে, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পটভূমিকা কী ভাবে ধীরে ধীরে রচিত হচ্ছিল।
মিরাট দাঙ্গা সম্পর্কে সেইসময়ের জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের আধিকারিক লিখছেন; মিরাটের আগে যতোগুলো দাঙ্গা হয়েছে, সেইসব দাঙ্গায় হিন্দুরা একতরফা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেইসব দাঙ্গাগুলোতে হিন্দুদের জানমালের ক্ষতির পরিমাণ ছিল ভয়াবহ। মিরাট দাঙ্গায় মুসলমান সম্প্রদায়ের যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল সেটাকে আড়াল করে এই প্রতিবেদনে এটুকুই বলা হয়েছিল যে, এই দাঙ্গায় হিন্দুদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অপর দাঙ্গাগুলিতে হিন্দুদের ক্ষতির তুলনায় কম। পরোক্ষ ভাবে মিরাট দাঙ্গায় মুসলমানের ক্ষতির কথা স্বীকার করা হলেও প্রত্যক্ষ স্বীকারোক্তি না থাকার কারণে মিরাটের মুসলমানেরা কোনো ক্ষতিপূরণই পান নি। খোদ জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের আধিকারিক যখন এই ধরণের প্রতিবেদন দাঙ্গার পরে দাখিল করেন, তখন খুব সহজেই বুঝতে পারা যায় যে, হিন্দি বলয়ে পুলিশ, প্রশাসন মহলে ইন্দিরা গান্ধীর জীবিতাবস্থাতেই কি ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটেছিল! জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন মুসলমানকে থার্ড ডিগ্রি প্রয়োগের ভিতর দিয়ে শিক্ষা দেওয়া গিয়েছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করছে নিজেদের প্রতিবেদনে। ভুলে গেলে চলবে না যে, এইসময়কালে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন যথাক্রমে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং এবং শ্রীপতি মিশ্র। তাঁরা দুজনেই তখন ছিলেন কংগ্রেস দলের প্রতিনিধি।
পি এ সি তার প্রতিবেদনে বলেছিল, মুসলমানেরা হল; দানব, অপরাধী এবং সন্দেহভাজন। গোটা প্রশাসনের যে মুসলমানদের উপর কোনো আস্থা ছিল না, তা প্রশাসনিক বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকেই পরিস্কার হয়ে যায়। এই ঘটনা যে কেবল আটের দশকের সূচনাপর্বে মিরাট দাঙ্গাকে ঘিরেই হয়েছিল বা সেই সময়ের উত্তরপ্রদেশকে প্রেক্ষিতে রেখেই ঘটেছিল- এমনটা মনে করবার আদৌ কোনো কারণ নেই। এটাই হল গোটা ভারতের চিত্র। মুসলমান সমাজ সম্পর্কে এটাই হল ভারতের পুলিশ এবং প্রশাসনের মূল্যায়নের প্রকৃত চিত্র। আজ কেন্দ্রে বিজেপি একক গরিষ্ঠতা নিয়ে এসেছে বা উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতায় আছে বলে একতরফা ভাবে মুসলমানদের উপর অত্যাচার হচ্ছে, অতীতে মুসলমানেরা খুব ভালো ছিলেন, সুখে শান্তিতে ছিলেন, নিশ্চিন্ত ছিলেন- এমনটা মনে করবার যে আদৌ কোনো কারণ নেই তা স্বাধীন ভারতে মুসলমান আর পুলিশের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলেই দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে। আজ গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে পুলিশের যে ভূমিকা আমরা দেখছি সেই একই ভূমিকা এই পি এ সি আটের দশকে উত্তরপ্রদেশে নিয়েছিল।
পুলিশের ভিতর কি ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক বিভাজন প্রবেশ করছে তা ১৯৮১ সালে পেশ করা জাতীয় পুলিশ কমিশনের প্রতিবেদনে স্বীকার করে নেওয়া হয়। ভি পি সিং যাকে বামপন্থীরাও একটা সময়ে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার পরাকাষ্ঠা হিসেবে সাব্যস্ত করেছিল, তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বকালেও উত্তরপ্রদেশে পি এ সি তে কোনো মুসলমান নিয়োগ হতো না। স্বাধীনতার পর থেকে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশ পি এ সি তে মাত্র তিনজন ( এস ইউ আহমদ[১৯৫৩-৫৪], এস এ আলম[১৯৬২-৬৩] এবং এস এ আব্বাস[১৯৭২] ) মুসলমান কর্মরত ছিলেন।আটের দশকের শুরুতে গোটা দেশের পুলিশের ভিতরে যে মুসলমান বিদ্বেষের একটা মেরুকরণ তীব্র হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, এখানে মনে রাখতে হবে যে, এই গোটা দেশের ভিতরেই কিন্তু আমাদের পশ্চিমবঙ্গও আছে।পশ্চিমবঙ্গের পুলিশবাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশও কিন্তু সেইসময়েই হোক বা তার পরবর্তীকালে মুসলমান বিদ্বেষী মানসিকতা থেকে আদৌ মুক্ত নয়।
আমাদের মনে রাখা দরকার যে গুজরাট গণহত্যা কিন্তু একদিনে হয় নি। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ - প্রশাসনের ভিতরে ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছিল মুসলমান বিদ্বেষ। কখনো সেই বিদ্বেষ প্রকাশ্যে বের হয়ে পড়েছে।ফলে ঘটেছে মিরাট, ভাগলপুর ইত্যাদির মতো ঘটনা। বামপন্থী রাজনীতিকরা বামফ্রন্টের আমলে দাঙ্গা হয় নি বলে যতোই আত্মশ্লাঘা অনুভব করুক না কেন, ভুলে গেলে চলবে না যে, সেই সময়কালেই মুর্শিদাবাদে কাটরা মসজিদে দাঙ্গা হয়েছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর দাঙ্গা হয়েছে কলকাতার ট্যাংরা অঞ্চলে। দাঙ্গা হয়েছে মেটিয়াবুরুজের কাশ্যপপাড়াতে। প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা সেদিন দাঙ্গা রুখতে কৃতসংকল্প থাকলেও পূলিশের নীচুতলার মধ্যে মুসলিম বিদ্বেষের যে সংক্রমণ তাকে কিন্তু সার্থক ভাবে প্রতিহত করতে পারা যায় নি। হিন্দি বলয়ে পুলিশের ভিতরে যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তৈরি হয়েছিল, তার জের যে পশ্চিমবঙ্গে পড়েনি- এমন টা মনে করার অর্থ মুর্খের স্বর্গে বাস করা। এই বোধকে মাথায় রেখেই কিন্তু আজকের প্রেক্ষিত ঘিরে আমাদের চিন্তা ভাবনাগুলিকে আবর্তিত করা প্রয়োজন।
তারিখ ০৩ জুলাই ২০২১ হয় কীকরে! ওটা নিশ্চয়ই জুন হবে। সংশোধন করে দেওয়া দরকার।
একদম সত্যি। আমার নিজের জীবনে দেখেছি অমন কিছু তীব্র বিদ্বেষের ঘটনা ।
একদম সঠিক বিশ্লেষণ। দেশের সমস্ত পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে আরএসএসের মনোভাব বিরাজ করছে। তাই তারা নিরপেক্ষ না হয়ে মুসলিম বিদ্বেষীতা দেখায় তাদের প্রশাসনিক কাজে।
যারা স্বাধীন স্বশাসিত 'পুলিশ কমিশন' এর পক্ষে সওয়াল করেন তাদের মতামত জানতে আগ্রহী... এই লেখার বক্তব্য অনুযায়ী একটি চরম 'সাম্প্ৰদায়িক' সশস্ত্র বাহিনীকে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকার/রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত মনে হয়?
আগে এই বিদ্বেষ প্রকাশ করাটা চক্ষুলজ্জায় আটকাতো। এখন রীতিমতো গর্বের বিষয়।
কিন্তু হিন্দুদের মধ্যে এই মুসলমান বিদ্বেষের কারণ কি?
ধর্ম অনুযায়ী অপরাধীদের সংখ্যা প্রকাশ করা দরকার, তাহলে এরা বেশি ক্রাইম করে ওরা কম ক্রাইম করে প্রচারটা চ্যালেঞ্জড হবে। পুলিশের চালু ধারণা পাল্টাতে এটা জরুরি।
পুলিশকে ফ্রি হ্যান্ড? নৈব নৈব চ। নইলে মণিপুরের মত 'আফস্পা' রাজ হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর চরিত্র বদলে গেলে পুলিশের চরিত্রও বদলাবে।
Two-third of prisoners in Indian jails are Dalits, tribals and from Other Backward Classes (OBCs), 19% are Muslims and 66% of 4.66 lakh inmates are either illiterate or have not studied beyond Class X, the latest statistics on prisons in the country have revealed
পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে দারিদ্র্য, অশিক্ষা, অপ্রেশন--যা সমাজের 'পিছিয়ে পড়া' শ্রেণীকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে... ক্রাইমের সাথে ধর্মীয় লিংক খোঁজাটা জাস্ট চাড্ডি প্রোপাগান্ডার অংশ...
একদম। সঠিক অবজার্ভেশন।
@রঞ্জন বাবু "দলদাস পুলিশ=লেসার ইভিল এবং স্বাধীন পুলিশ= গ্রেটার ইভিল" এই তত্ত্বে সাবস্ক্রাইব করছেন??
আপনার "রাজনৈতিক দলগুলোর চরিত্র বদলে গেলে পুলিশের চরিত্রও বদলাবে"-----ঠিক , কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো চরিত্র পাল্টাবে এইটা "উইশফুল থিঙ্কিং"
লেখাটা যথার্থ । হিন্দুরা "গোলি মারো শালেকো" বলে পুলিশ কে সাহায্য করে । উদ্দিষ্ট যে মুসলমান কোনো সন্দেহ থাকেনা । তবে , বুদ্ধ থেকে মমতার আমলে পুলিশের মানসিকতা কর্মীদের মানসিকতায় মুসলিম বিদ্বেষ তো থাকেই । সেই সঙ্গে তাদের ভোটবাক্সের দিকে লক্ষ্য রেখে মৌলবাদের তোল্লাই যে থাকে গৌতমবাবু সেটাও বলতে পারতেন । শাসক নিজেও যে সাম্প্রদায়িক সে তো তসলিমা নাসরিনের বই নিষিদ্ধ করে বুদ্ধদেব বুঝিয়েছেন আর তাঁকে রাজ্য ছাড়া করে মমতা বুঝিয়েছেন । মৌলবাদের সামনে শাসক ডান বাম নির্বিশেষে টুপি খুলে দাঁড়ায় বৈকি ?