দোল পূর্ণিমা ১০ই মার্চ ২০২০
১
ওই চাঁদে কারো কিছু হারিয়েছে নির্ঘাৎ। এতটা সে ঝুঁকে পড়েছে দেখি। যেন পৃথিবীর সব্বার মুখ কাছ থেকে দেখে নেয় সে। চোখ রাখে চোখে। চেতনা বিস্তার করে প্রতি মস্তিস্কে - যেন মায়াজাল। নিরীহ স্নিগ্ধ চেহারা সত্ত্বেও তার অভিসন্ধির হদিশ পেয়েছি আমি কিছুদিন হ'ল। সেবার জলের কাছে গিয়ে সব শুনে এসেছি আমি।
২
একলা মানুষের মধ্যে বড় বড় মাঠ থাকে,
কারও কারও খানিক বনাঞ্চল,
যারা তার মধ্যে রাস্তা পছন্দ করেন
আর, মাঝখানে সিঁথে করে চুল আঁচড়ান।
যাদের বৃষ্টি বাদলা একটু কমের দিকে
সেখানে শুকনো ঘাসের ঝোপ জঙ্গল ধুসর
অনেকটাই অনাকর্ষক, তবে হঠাৎ বৃষ্টির দিনে
সবাইকে চমকে দিয়ে দুর্দান্ত গান শোনাতে পারেন।
সাজিয়ে গুছিয়ে রাখেন প্রান্তর, যার যতটুকু
সামান্য একটিরও বিচ্যুতি দেখলে খুঁতখুঁতে জন
বাকিদের অতিষ্ঠ করে বলে সবাই তটস্থ
কেউ শুধু বাইরে তাকিয়েই কালানিপাত
তার ভিতরে হরি ঘোষের গোয়াল -
উড়নচণ্ডীর মেলা দিনভর,
কেউ সেখানে উঁকিও মারবে না।
৩
ঘরের মধ্যে মস্ত মস্ত হাইওয়ে তৈরী হ'ল
ঝকঝকে ফ্লাইওভারে গাড়িরা
সাঁই সাঁই পাড়ি দেয় দূরান্তে, মুহূর্তেই একশো মাইল স্পিডে
সেইসব রাস্তার কারণে গাড়ি এখন প্রত্যেকের আলাদা।
যাতে যে যার ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াতে পারে যত্রতত্র।
গল্পকথা মনে হয়, আগে যখন জঙ্গল ছিল
খুব একটা জানত না মানুষ, ঘরের প্রত্যেকে
সারা দিনে কত কথা বলত পাখিদের মত
রাতে পালা করে রাত্রি জাগত পাশের মানুষের
মুখের দিকে চেয়ে।
৪
শুধু তোমার জন্য লিখি
অবান্তর আগডুম বাগডুম কথা,
মাঝে মা মশলা সাঁতলানো স্মৃতিচারণ
স্তুতি রাখি সাবধানে যাতে তাকে ফুলদানির
একমাত্র অদৃশ্য সুগন্ধি ফুল হয়ে থাকতে হয় -
তার দেঁতো হাসি দেখা গেলে তুমি বিব্রত হও জানি।
অভিমানী যেন দেখায়, তাই স্বেচ্ছায় দূরে যাই
দূর থেকে দেখি ভোরের আকাশে একমাত্র শুকতারা
অথবা চোখের পাতাদের পারস্পরিক আলাপচারিতা -
কাছাকাছি এসে। দেখি যেন অদৃশ্য হয়ে তোমায় আনমনা
অন্ধকারে দেখে আলো জ্বালিয়ে পথ ঘাটও আঁকি
ইচ্ছে করে, তুমি তৃষ্ণার্ত হলে - এক গ্লাস জল হয়ে থাকি।
৫
ছোটখাটো স্টেশনগুলি তার চারপাশের চেয়ে পরিচ্ছন্নতর
বড় অফিস টফিসে কাজ পড়লে সে বারবার চুল ঠিক করে
দেখে নেয় জুতোর ছেঁড়া জায়গাটা বোঝা যাচ্ছে কি না
গলা শুকোয়, জল খাওয়ার ব্যবস্থা দেখলেও সাহস পাচ্ছে না
হিসি করতে গিয়ে বেসিনের জলই দু এক ঢোঁক গলায় ঢালে -
বেকায়দায় না পড়লে এক্সপ্রেস এখানে থামে না
ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে শেষমেশ ট্রেন সেই স্টেশন ছাড়লে।
১৫ ই মার্চ ২০২০
১
আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসায় শূন্য যেমন
ত্রিশঙ্কু এক ভাসতে থাকে নিরালম্ব
ভারসাম্যের পরোয়া নেই
ইচ্ছে টিচ্ছে পার হয়ে সে অনেক দূরে পাড়ি দিচ্ছে।
এখন যেমন সকালবেলার বসন্তদিন ঘরবন্দী
টবের গাছকে দেখতে আসে রৌদ্রটুকু অল্পসময়
তার মধ্যেই নতুন পাতার খবরটবর
জল পেল কি - সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেন বেলফুলগাছ।
কে চলে যায়? কে আসছে ফের?
কেউ থেমেছে বলবে বলে?
আকাশছোঁয়া ভালোবাসায়
এই পৃথিবী শূন্য হলে।
২
দূরে চলে যাই, ভয়ে।
যদি সংক্রামিত করি প্রেমে
যদি ফিরিয়ে তাকাও আর তার ফলে
মুখমণ্ডলে বসন্তের জাদু হাওয়া
দেখতে দেখতে মেঘ করে ঝড় হয়ে
গলে যায় বৃষ্টিতে একলা উইন্ডস্ক্রীন।
অপেক্ষায় অপেক্ষায় সুস্থ বেঁচে থাকে
বন্ধ গাড়িতে একা লোক -
সম্মোহিত। হিতাহিত চেতনা-বিহীন।
৪
আলোর মধ্যে থেকে সুতো সুতো অন্ধকারও
আলাদা আলাদা করে ঝেড়ে বেছে রাখছ
সতর্ক চোখে পৃথিবীব্যাপী ক্যামেরায় দেখছ
কে কীসে কত অকারণে খুশি হয়ে গেল।
মহৎ কাজে তুমি একাই অক্ষৌহিণী সেনা
কাউকে বিশ্রামরত আনন্দে দেখতে পার না।
যে যার নিজস্বভাবে বাঁচতে চায় পৃথিবীতে
যতটা যেতে পারে যায়, যতটা দেখে বা তাকায়
এতদিনে দেখা হ'ল আচমকা নক্ষত্রের ফেরে
তুমি কেন ধুলো দেখ? তার চুল চুল ভুলগুলো
দেখাতে দেখাতে তাকে নগ্ন করে দিলে, যেন
তোমার শ্লাঘার পানীয় তার জিজীবিষার বদলে।
আজ অতিমারী সংক্রমণ, কাল নয় অন্য ছুতোয়
মানুষ যখনই খুশি থাকে, তোমায় সশস্ত্র হতে হয়।
৫
এবার থেকে নিজের মুখের সামনে আয়না রাখব
অথবা সম্ভাব্য উত্তরসমূহ - যথাঃ
"ভালো আছি";
"সিগারেট ফুরিয়েছে, আনতে যাব"।
"ও, তাই? আমার জানা ছিল না"।
"এটা ঠিক বলতে পারব না"।
এতে সব হবে
যে যার নিজস্ব মুখ দেখবে
উত্তরও পাবে যদিও তা কাজে আসবে না
যার মুখই হোক, সে যতই না সুসংবাদ আনুক।
আর কাউকে দেখতে চাইব না।
অবাক হব না কিছুতেই এতটা দেখেছি এযাবৎ,
ভেসেও যাব না তাই পাথরের মতো জলের কাছাকাছি সৌভাগ্যবশত।
উদ্দীপনার ঢেউ বাইরে পৌঁছবে না, তাই ছোঁবেও না কেউ - জানি।
যতটুকু যাওয়ার, পৌঁছে গিয়েছি,
যতটা ফেরার কথা ছিল সন্ধ্যার আগে
তার সিকিভাগও পারিনি ফিরতে
ঘুমোনর আগেও এখানে দু'টো পা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়।
রাত্রি ও পরোয়ানা আনে আমায় ঘিরতে।
৬
সহজে জীবাণুমুক্ত হতে
একশিশি ফিনাইল খেলে কেমন হয়?
ভাবি, যখনই তিরস্কৃত হই কথায় কথায়
নিজের বিচ্যুতি ছাড়া আর কিছু চোখেই পড়ে না।
এতই দূষিত আমি, স্বপ্নের সমুদ্রস্নানের শেষে
কিচকিচে বালি যেন ছড়িয়ে ফেলেছি বিছানায়
কখনও জঙ্গলের কাদা মাটি শুকনো ডাল পাতা
বারান্দায় দাঁড়িয়ে কতবার হাত বাড়িয়ে মেঘ এনে
ঘরে হাজির করেছি বলে সব শুকনো কাপড় স্যাঁতসেঁতে
কেন এখনও সময়ে অসময়ে ইচ্ছে করে ভালোমন্দ খেতে?
জ্যান্ত জীবাণু হয়ে সেঁটে আছি এতক্ষণ ভুলিয়ে ভালিয়ে
মানুষের কাছাকাছি, কথা হয় তার মৃত্যুর দিকে যেতে যেতে।
২০ মার্চ ২০২০
১
শুনেছি মৃত্যুর মধ্যে শৈশবের ঝুমঝুমি বাজে বাঁশি দেয় ট্রেন।
ঘুড়ির পেটের মধ্যে আমার আত্মার যতটুকু অল্প অল্প করে
দূরে যায়, কাছে আসে, মেঘ দেখে আরও কাছ থেকে -
ততক্ষনে ঘুমিয়ে পড়েছে সেই গাছ।
কার সঙ্গে দেখা হল কাল স্বপ্নে?
বারবার ঘুমের মধ্যে তার হাত উঠে আসছিল বুকে
ছটফট করে উঠছিল রাতচরা পাখির শব্দে?
অথচ প্রচুর জল অনেকটা সময় নিয়ে
উঠোনের পাশ দিয়েই সরু রাস্তা চলে গিয়ে নদীতে নেমেছে
ওখানেই থাকে সে সারাটা দিন, সন্ধের পর দেখা হয় না।
নদীটিও তখন চলে যায় অন্য ঠিকানায়
যেখানে দিনের আলো।
প্রায় অসীম দৈর্ঘ্যের মালগাড়ি যায় দূরের রেললাইনে রাতে
নদীটি কি ওতেই সওয়ার?
ব্রিজ পেরোনর সময়ে মুখ বাড়িয়ে
জলের আয়নায় মুখ দেখে কি ও?
দেখা হলে তাকে আমার চিঠিটি শুনিও।
২
সত্য গোপন করা পাপ - যে বলেছিল
এইটুকু বলেই চেপে গেছে।
যদিও তার চোখের কোণে কালশিটে দাগ
গালে ও ঘাড়ের পাশে নখের আঁচড়গুলো দেখা যাচ্ছিল।
সেসবও কি পাপের ফল - জিজ্ঞাসা করিনি।
হয়ত বাকিটা বলতে অসুবিধা ছিল তার।
ওই কটা কথা বলার পরিশ্রমে হাঁফাচ্ছিল,
চোয়াল নাড়াতেও অসুবিধা - বোঝা যাচ্ছিল
উচ্চারিত শব্দ যেন নিংড়ে নিচ্ছে তাকে -
যন্ত্রণায় কেঁপে উঠছে মুখ।
এ কী উপলব্ধি কোনও -
নাকি নিছক বিবৃতি দুঁদে দারোগার রুলের সামনে
নাকি প্রায়শ্চিত্ত জ্ঞাপন নদীর সামনে শ্রদ্ধাঅবনত
সত্য গোপন করা পাপ - বাকিটুকু রইল স্থগিত।
৩
বারণ করেছ এত, মাঝে মাঝে
শ্বাসপ্রশ্বাস চলাচলের মধ্যেই সামান্য তৃপ্ত হলে
আশঙ্কায় হলদে হয়ে যাই।
মনে হয় এই বিচ্যুতিতেই পৃথিবী নষ্ট করি
এই উচ্ছৃঙ্খল আনন্দ বিহ্বলতায়।
খোঁজ রাখি কীভাবে দিনকাল আরও খারাপ হতে পারে
হয়ত খেতে পাব না আগামী সপ্তাহে
হয়ত রোগে ভুগতে শুরু করলেই
নির্বাসনে যেতে হবে সাদা দেওয়ালওলা ছোট ঘরে
যাতে দরজা জানলা খাট বিছানা আসবাব
কিছুই থাকে না। মানুষকে এক জায়গায় রেখে
তার চারপাশে দেওয়াল গাঁথা হয় সহজে।
সেই ভালো, সব দেওয়ালের কান তো থাকেই
তার কাছেই আমি আনন্দবাজার হই নিজে নিজে।
৪
নিরঙ্কুশ প্রতিরোধে রয়েছি
ছোট বাড়ির মধ্যে ঢেউগুলো
দেওয়ালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আরও
তেড়েফুঁড়ে আছড়ে পড়ছে
একে অপরের গায়ে।
সাবধান করে চলছি সব সময়েই
এতে অপরের ত্রুটি বিচ্যুতি ছাড়া
আর কিছু চোখেই পড়ছে না।
ভাবছি, এতে নাকি সবারই মঙ্গল।
এত কাছে জলজ্যান্ত মহামারী
বাইরে মৃত্যুর মিছিল ভিতরে কোন্দল।
২২ মার্চ ২০২০
১
আমাদের একসঙ্গে আলাদা থাকতে হবে কিছুদিন
চৌকাঠের ভিতরে অন্তরীণ, পারলে খোলসের মধ্যে
জীবাণুনাশক হাত, অনর্থক ছোঁয়াছুয়ি বন্ধ একেবারে।
সংক্রমণ পৌঁছনর আগে ভয়, ফেউ ডেকে গেছে রাতভর
খবরেরা ক্রমশ নিকটবর্তী বাড়ির দোরগোড়ায় প্রায়
এ সময়ে আর একটু সংযত, আরও ভিতরে যেতে হয়।
ঘরের ভিতর তাই যে যার নিজস্ব ভয় অপরের সঙ্গে
কথা বলে ক্রমশ সমৃদ্ধ হয়, তারা খাদ্য পায় দুঃসংবাদে
বহরে বাড়তে বাড়তে ক্রমে আমাদেরই একে একে গেলে
তারপর সে খবর পাঠায় অন্য ঘরে খাদ্য অনুসন্ধানে।
এ বিপর্যয় এ পৃথিবীর অজানা, কয়েক প্রজন্ম পরে পরে
ফিরে আসে বাউন্ডুলে বখে যাওয়া ছাত্রের হোস্টেলে
মফস্বলের রাশভারী শিক্ষক বাবার একদিন আচমকা হানা -
উড়ন্ত দুরন্ত মানুষ ডানা ছাড়ে। এ ভাবেই পেয়েছে ঠিকানা।
২
চুল আঁচড়ালে আয়নার লোকটা প্রথমে অল্প খুশি হলেও
তারপর মুখ কোঁচকায়, দেখে অবাধ্য চুলগুলো
যেদিকে গেলে তাকে ভালো দেখায় -
সেদিকে সহজে যায় না।
অস্বীকৃত পাপ, জেরার ফাঁক দিয়ে পালানর সময়ে
এরা পূঙ্খানুপুঙ্খ জানে
এ ছাড়াও যতবার মিথ্যে বলেছি -
যতক্ষণ চুপি চুপি অপরাধ করেছি
বোধ হয় তার সবকিছু মনেও রেখেছে।
খুব একটা শক্ত হওয়া সহজ না বলে
অশাসিত চুল অন্যায়ের সাক্ষ্য দিয়ে চলে।
৩
এরও ভালো দিক আছে, চোখ পড়ে গাছের পাতায়
কবে কুঁড়ি এল বেলফুল গাছে?
এত পাখি ডাকে বুঝি? এমন সকালও হয়?
একটাও মানুষ কোথাও নেই বারান্দার দৃষ্টি সীমায়।
দু-তিনটে শালিখের কথোপকথন ফোনে তুলে রাখি
কিছু পরে তারা ফের গল্প করতে শুরু করলে
মাঝখানে সেই রেকর্ড চালিয়ে দিই -
দেখি, পাখিরা আরও বেশি আশ্চর্য হল।
আজ বুঝি পাপ কম হবে পৃথিবীতে
অসময়-গাথা সময়েই লিখে রাখা ভাল।
৪
সে অনাহূত এসে সব তছনছ করতে শুরু করেছে বলেই
তার কথা বলতে বসিনি।
কোনও অভিযোগ কখনও করিনি জ্ঞানত
জানি, তা আমার সাজে না -
বরং লিখি আজ সারাদিন পাখিদের ডাক শোনা যাচ্ছিল
পাখিরা রোজই এমন ডাকাডাকি করে হয়ত
অনেক দূরের বাড়ির জানলাও স্পষ্টতর
সবাই বাড়িতেই ছিলাম। সামান্য চিন্তিত
দূরে থাকা নিকটাত্মীয়দের কথা ভেবে
অথবা অনিশ্চিত আসন্ন দিনকাল।
কোনও অভিযোগ নেই রেফারি বা আম্পায়ারের প্রতি
বদলে যাওয়া স্বাদ যতটুকু পাই চাখি -
এই কথা বলেছিল সকালে গল্প করতে আসা পাখি।
২৫ মার্চ ২০২০
১
সুগন্ধের মতো কিছু কল্পনা কার্যত অসম্ভব
যেভাবে অন্ধজন সাপের মতো পথ খোঁজে
ব্যস্ত শরীরের রাস্তায়, অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গলিখুঁজি
মাঝে একা পুরনো চায়ের দোকান -
যার আভিজাত্য বিরাট কেটলির
টোল পড়া গাল আর তামাটে রঙে -
যেমন দোকানি বংশপরম্পরায় প্রায়
মুঘল আমল থেকেই একঠায়ে ওইভাবে আছেন।
তার কাছে সম্পূর্ণ ঠিকানার শেষাংশ রয়েছে।
২৬ শে মার্চ
১
তুমি জানো, দূরত্বটুকু ছাড়া তো কিছুই রাখিনি আমি।
সে বোধ হয় তিলে তিলে আলোকবর্ষ পার হয়ে গেছে
কত ঝড় ঝাপটা সত্ত্বেও, করোনা তো নয়া আমদানি
নিকটাত্মীয় বলতে শুধুই সে দূরত্ব পাতা ভরা গাছে।
আগেকার মতো নিবিড় করে তোমাকে কখনও ভাবিনা
দুর্বিপাকে সফল মানুষও থতমত রসদ জোগানরত
মাঝে মধ্যে দেখে তার জ্বর তার আসছে কি না
ক্রমশঃ দূরত্ব বাড়ে, যে পৃথিবী এতদিন অচেনা হয়ত।
এখনও জানে না কেউ, ধ্রুবতারা কতদিন বাঁচে একা একা
অনেক দূরের থেকে পৃথিবীকে নিঃশব্দে দেখে বাঁচে
পৃথিবী দূষণমুক্ত হলে শহরের জানলায় কিছুক্ষণ দেখা
তখন সে হয়ত নেই। শুধু তার আলো ওই রাস্তা পেরোচ্ছে।
এ হাতে জলও আটকায়নি, আয়ু বাউন্ডুলে প্রকৃত হারামি-
তুমি জানো, দূরত্বটুকু ছাড়া কিছুই রাখিনা আর আমি।
২
বসন্তের মাঝপথে কোথায় হারালে
বাড়ি থেকে বেরোতে পারছে না কেউ
কৃষ্ণচূড়ার তলা যেন সিঁদুর খেলেছে
পায়রার দল এসে তাতেই সাজছে।
২৯ মার্চ ২০২০
১
আলাদা ক্লাস রুম নেই বলে
চৈত্রের নিম ইস্কুলে সকালে রঙের হাট
আগের ক্লাসের হলুদেরা ইস্কুল ছাড়ার আগে
সকালের আলো যতটুকু পাওয়া যায় শুষে খাচ্ছিল
তার মধ্যে থেকেই নতুন বাচ্চাদের দল
কচিকাঁচা হাত যতটা পারে তুলে
নিজেদের আরও আলোর দাবিতে সোচ্চার
এর মধ্যেই এক সবুজ ঘুঘু বেড়াতে এসেছিল
কচি কাঁচা নিমপাতা -
তার গায়ে নিজের ছায়া এঁকে যেন
দোল খেলছিল…..
২
আমি তার ইচ্ছেমতো হতেও পারিনি
কঠিন ছিল না মোটে
আমার তো সে ইচ্ছেই ছিল
কী করব, দরকারে যদি একটা ছদ্মবেশ জোটে।
ঠিক সেই কথা কীভাবে পাওয়া যায়
ঠিক সেই নীরবতা, যতি -
যখন সে চাইবে সেইমতো বুঝে -
যদি আয়ত্ত হতো, কার তাতে হ'তো কিছু ক্ষতি?
যদি বা গাছের মতো, তার বাড়ির কাছাকাছি
ফুটপাথ হওয়া যেত, অথবা জানলা
আলো হাওয়া আনতাম, বসন্ত ফুটপাথে ফুল,
আর বর্ষার দিনে বিব্রত করলাম ছাটে, এমনই হ্যাংলা।
৩
এত বেশি খাঁই আমার,
কিছুতেই যেন আশ মেটে না
বারান্দার আরামে দাঁড়িয়ে
এমারেল্ড ডাভটার ছবি পেলে মনে হয় -
ব্যাটা যদি ওপরের ডালটায় বসত
কম্পোজিশন টা খোলতাই হতো আরও।
ইচ্ছে করে হাতে ক্যামেরা নিয়ে
যেদিকে তাক করব -
তখনই সেখানে উড়ন্ত ম্যাগপাই।
আকাশের দিকে তাকালে দুর্দান্ত মেঘের ম্যুরাল
লিখতে বসলেই একটানা দুরন্ত দৌড়
দক্ষিণের বাতাসে বেলফুলের গন্ধ বারান্দায়।
যখন যা চাইব তা তো তক্ষুণি হতে হবে
তা ছাড়াও আরও কিছু, যা ভাবতে পারিনি
তবু লাগসই, যেন ঠিক এইটাই চাই -
এ ছাড়া আর বিন্দুমাত্র চাহিদাটি নাই।
পরের পর্ব - https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=17860
শিবাংশু দা,
অনেক ধন্যযোগ। এবার হয়ত আরও নিয়মিত আসতে পারব।
আর কিছুতেই "সখ্যতা" নয়। এটা জানতামই না।
আমার লেখাটা আসচে না
অনেক ধন্যবাদ, কুশান। হ্যাঁ, এর বেশিরভাগই স্বগতকথন।
কুমুদি, তোমার লেখা দেখতে পেলাম না। আশা রাখলাম।
E to March ei sesh. !
Tarpore?
তিতি দি,
আরও জুড়বে। সেগুলো একটু দেখে নিয়ে দেব ভেবেছি।