Freedom is the drug... : ঋতম সেন
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ১২১৪ বার পঠিত
সহৃদয় পাঠক, যিনি আমার এই ব্যক্তিগত গদ্যটি এখন এই মুহূর্তে পড়তে বসলেন, আপনি কি নেশা ভাং করেন? আমার ধারণা অতি অবশ্যই করেন। নেশা এমনই এক টান যার পাল্লায় না পড়ে উপায় নেই। গানের নেশা, গল্পের নেশা, নাচের নেশা, সুরের নেশা, তালের নেশা, ছবির নেশা, কবিতার নেশা, সিনেমার নেশা, নাটকের নেশা আপনার কি নেই? আকাশ, বাতাস, সমুদ্র, নক্ষত্র, পাহাড়, সমতল, দিগন্ত এদের পাল্লায় পড়ে আপনি কি ঘন্টার পর ঘন্টা কিচ্ছুটি না করে নিজের ভেতর ঢুকে পড়ে, বুঁদ হয়ে সময় কাটান নি? সূর্যোদয়ের মদ, সূর্যাস্তের গাঁজা আপনি কখনো স্পর্শ করেননি বললে আপনি মিথ্যে কথা বলছেন। অনন্ত রাত্রির কোকেন কখনো কি শোঁকেন নি? এখন মোদ্দা কথাটা হল গিয়ে আপনার সময় নেই। আপনার মাথার ওপর বাঘের মত বস রয়েছে, আপনার বেডরুমে কুমিরের মত হাঁ করে বসে আছে সংসারের হাজার দায়িত্ব।এমনই এক ড্রাগনের সময়ে আমরা বসবাস করতে বাধ্য হয়েছি, যেখানে আমাদের নেশাগুলিকে অর্থাৎ আমাদের গোটা পৃথিবীটাকেই আমাদের কাছ থেকে জোর করে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। এমনই ফাঁদে আমরা পড়েছি যে আমাদের হাত পা তো বটেই এমন কি বুদ্ধিবৃত্তি থেকে আরম্ভ করে অনুভূতিগুলিকে পর্যন্ত শিকল টিকল জড়িয়ে বেঁধে মোটা জংধরা তালা লাগিয়ে চাবি দিয়ে সে চাবি আমরা নিজেরাই গিলে নিয়েছি, এবং ভুলে গেছি। ভাবুন মশাই সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত এমনই আপনার জীবন যে আপনার নিজের ইচ্ছে মত কিস্যু করার উপায় নেই। আপনার সময় আপনি বিক্রি করে দিয়েছেন। নিজেই করেছেন, এবং এত কম মূল্যে করেছেন (আমি শুধু আর্থিক মূল্যের কথা বলছিনা) যে সর্বক্ষণ আপনার নিজেকে দেখে নিজেরই লজ্জা লাগে। এই রকম একটা সময়ে আপনি কি করবেন? আপনি কিনবেন। কী কিনবেন? নেশা কিনবেন। আর সেই সব নেশা হবে নকল নেশা। পৃথিবীর নেশার মত, মানুষের নেশার মত তারা আপনার আত্মার উন্নতি ঘটাবে না। বরং প্রভাবিত করবে আপনার শরীরকে, আপনার মাথায়, রক্তে, স্নায়ুতন্ত্রে কিছুক্ষণের জন্য এমন রমরমা ছড়াবে যে আপনার মনে হবে আপনি মুক্ত। আপনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। কিছুক্ষণের জন্যেই আপনার এই যে সর্বক্ষণের দাসত্ব সেটা আপনি ভুলে থাকবেন।একসময়ে আপনার শরীর বিদ্রোহ করবে। আর আপনিও আপনার নেশা থেকে সটান আপনার যন্ত্রণার মধ্যে আছড়ে পড়বেন।আছড়ে পড়বেন সেই জন্য যন্ত্রণা আরো বাড়বে। কিন্তু আপনার মনে আছে সেই ইউফোরিক অবস্থাটা, ফলে আপনি আবার নেশা করতে বাধ্য হবেন, এবং আবার আছাড় খাবেন। এই যে ভয়ংকর লুপ সেটা চলতে থাকবে। আপনার শরীর মন উভয়েই দুর্বল হয়ে পড়বে। আপনি নিজেও সেটা বুঝতে পারবেন। তখন এসে হাজির হবে অপরাধবোধ।আর যেহেতু আপনি সবচেয়ে দুর্বল আপনার নিজের কাছে, সেই জন্য, শুধুমাত্র সেই জন্যেই, আপনি আপনার এই অপরাধবোধের ভারটা চাপাবেন তাদের ওপর যারা বয়সে, পদমর্যাদায়, অথবা শুধুমাত্র আপনার ভাবনায়, আপনার থেকে ছোটো। তাদের ওপর যাদের আপনি ছোটো মনে করেন। আপনি জোর গলায় ফতোয়া জারি করবেন, মেয়েরা মদ গাঁজা সিগারেট খাবে না। আপনি ছাত্রছাত্রীদের একসঙ্গে আনন্দ করতে দেখলে পুলিশে খবর দেবেন। আপনি স্লোগান দেবেন “মদ গাঁজা চরস বন্ধ, তাই কি প্রতিবাদের গন্ধ?” কবিদের মদ খেয়ে চিৎকার করে কবিতা আবৃত্তি করতে দেখলে, শিল্পীদের গাঁজায় ধুর হয়ে রঙ নিয়ে রাস্তা রঙ করতে দেখলে, আপনার গালিব, শক্তি, র্যাঁবো, পাবলো পিকাসো কাউকেই মনে পড়বে না, মনে হবে এদের হোক ক্যালানো। ইতিমধ্যে আপনার বয়স বেড়েছে, এবং যে ভয়ংকর লুপে আপনি পড়েছেন, তার ফলে আপনার বয়স বাদে অন্য কিছুই বিশেষ বাড়েনি। আপনার শরীর আর দেয় না, ফলে আপনি কৃত্রিম নেশাটাও ধরুন আর করতে পারেন না। ফলে আপনি আরো চেঁচাবেন বব ডিলনকে বলবেন বদ গাঁজাখোর,জন লেননকে বলবেন মাতাল, কবির সুমনকে বলবেন মাওবাদী, লিওনার্দ কোহেনকে বলবেন মাগীবাজ। নোংরামিটাও একটা নেশা। এটা আপনি বুঝবেন না, কিন্তু এই সর্বগ্রাসী নেশাটি আপনাকে টুঁটি চেপে পাকড়াও করবে। দল বেঁধে ঘেউ ঘেউ করতে যে কি মজা, তা তো আপনার পাড়ার কুকুরগুলি আপনাকে প্রত্যেক রাতে দেখিয়েই দিয়েছে। খিস্তি করার আনন্দে আত্মহারা হয়ে নেশামুক্ত পৃথিবীর দিকে আরো দশ পা এগিয়ে যাবেন। এর ফলে সবথেকে বেশি সুবিধা হবে তাদের যাদের কাছে আপনি নিজেকে বিক্রি করেছেন। বুঝতে পারছেন? সুবিধা হবে ধনতন্ত্রের। এই মাও মাকুদের সঙ্গে যোগাযোগের ফলে, অথবা এদের সঙ্গে নেশা করে ফেলে যদি আপনি একদিন হঠাৎ বুঝতে পেরে যান কে বা কারা আপনাকে বেঁধে রেখেছে, পঙ্গু করে রেখেছে আপনার চেতনাকে, আপনার গোটা জীবনটাকেই, তবে তো তাদের সর্বনাশ। আপনি যদি একদিন আপনি সত্যি কি চান বুঝে ফেলে সমস্ত বাঁধন দুঃস্বপ্নের মত ঝেড়ে ফেলে অনুভব করেন মাথার চারিদিকে হরিণের দৌড়ে আসার মত বৃষ্টির শব্দ, যদি মেতে ওঠেন স্বাধীনতার নেশায়? যদি বলেন না। যদি বলেন আপনি আর নিজেকে, নিজের সময়কে বিক্রি করবেন না, কারোর কাছে? তাহলে স্যার, ম্যাডাম আপনাকে বলছি শুনুন। আপনারা প্রত্যেকে যদি এটা করেন, তাহলে গোটা মেশিনারিটাই বিকল হয়ে যাবে। সেই যন্তরমন্তর থেকে তখন বেরোবে অন্যরকম মন্ত্র। যেমন ধরুন- “দড়ি ধরে মারো টান রাজা হবে খান খান”। এবারএকটা গল্প শুনুন। কিছুদিন আগেই এক নেশার আড্ডায় এক শিল্পী আমায় এই গল্পটা বলে। বৌদ্ধ গল্প। বুদ্ধের কাছে এক শিষ্য এসেছে একটা প্রশ্ন নিয়ে। প্রশ্ন খুবই গম্ভীর।
সুসমাচার -২০১০ : ঋতেন মিত্র
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৬ ডিসেম্বর ২০১০ | ৯৩৭ বার পঠিত
তাই নামিলেন নীচে। অবশেষে। ফ্লাইট দু মিলেনিয়াম লেট , অথচ আপেক্ষিকতার সূত্র মেনে জৈবিক ক্লকে দেবানন্দীয় স্থবিরতা। বেথলেহেমে প্রথম স্টপ। গন্তব্য নেতাজি আন্তর্জাতিক। চেলা বোঝায় রকেট থেকে এইসা ধোঁয়া- মনে হল, খোদ গড, রজনীকান্ত নকল করে ধূম ছেড়েছেন। বাঙ্গালী ভক্তদের কলকাকলিতে অশান্ত ওয়েটিং এরিয়া দেখে ঘোর সন্দ, যার নামে বিমানবন্দর তিনিই মুখ তুললেন বুঝি? হল না, টি আর পি স্কেলে মেগাতর ভাবুন। তৃতীয় ভুবন পরিদর্শনে ত্রিভুবনেশের পুত্র স্বয়ং হাজির!! যুগ বদলেছে। আকাশপথের পুরানো রুটে আজ একটার বদলে পঁচাশটি তারা। ছবি মেলাতে গিয়ে পদে পদে ঠকবেন। কল্পনাপ্রবণ আঁকিয়েদের কাজ দেখে ভেবেছিলেন, চে গুয়েভারা, চন্দ্রিল ভাট, আর জন লেননের ককটেল , তাই না? দূর, এ তো পাতি কদমছাঁট। তবে হ্যাঁ, সেই মায়াভরা চোখ, সেই শান্ত স্থির চলাফেরা, সেইই হাত তোলার মোলায়েম কায়দা। (এক প্রখ্যাত র:স: গায়িকা গলা ফসকে বিস্মবিষ্ট 'কা-লো?' থ্রো করেই ইনস্ট্যান্ট অপ্রস্তুত, মুদ্রাদোষের অজুহাতে শেষরক্ষে।)
মনের কোণের বাইরে : ঋত
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ১১ ডিসেম্বর ২০২২ | ২০৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
চিররহস্যের আড়াল থেকে মনকে অনাবৃত করার প্রচেষ্টা দার্শনিকেরা করেই চলেছেন। গত পঞ্চাশ বছরে কম্পিউটার ও স্নায়ু বিজ্ঞানের অগ্রগতি মনোদর্শনের চর্চাকে যে ভাবে উজ্জীবিত করেছে, তার অভিঘাত বাংলা প্রকাশনার জগতে সে ভাবে পড়েনি বললেই চলে। বহু বিচিত্রপথে বিশ্বের জ্ঞানচর্চার জগতে প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া আলাপ-আলোচনার সঙ্গে বাংলাভাষার আগ্রহী পাঠকদের পরিচয় হবে এই গ্রন্থটির মাধ্যমে। অমিতাদেবী ভূমিকাতেই রবীন্দ্রনাথ থেকে ডেনেটের উক্তি তুলে ধরে দেখিয়েছেন, তাঁর উদ্দেশ্য মনোদর্শনের সরটুকু কল্পগল্পে ফুটিয়ে তোলা। প্রশ্ন ওঠে, গল্পের আগে কল্প কেন? এখানেও লেখক রবীন্দ্রনাথের শরণ নেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গল্পমাত্রেই কি কল্পলোকের অধিবাসী নয়? ক্বচিৎ কখনও গল্প যদি সত্য হওয়ার দাবি রাখে, তবে অধিকাংশ গল্পই কেবল সত্য নয়, ‘আরও-সত্যি’।’’
জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ : ঋত
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৮৪৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
গত শতাব্দীর শুরুর দিকে এই কাদামাটি, বাদাবনের দেশে ‘আদর্শ সমাজ’ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন এক সাহেব। সে সময় প্রায় ৯ হাজার একর জমি কিনেছিলেন হ্যামিল্টন। ক্রমে সমবায় সমিতি, ব্যাঙ্ক, চালকল, গ্রামীণ পুনর্গঠন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন সেখানে। ১ টাকার নোটও চালু করেন গোসাবায়। গোসাবায় গেলে দেখতে পাবেন, তাঁর বাংলোটি এখনও নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে আছে। হ্যামিল্টনের কুঠি বললে যে কেউ দেখিয়ে দেবে। একবার ওই চত্ত্বরে ঢুকে পড়লে বোঝা যায়, কী যত্ন করেই না তৈরি হয়েছিল এই বাংলো। ওই বাড়িটির সামনে দু’দণ্ড দাঁড়ালে বাদাবনের ইতিহাস যেন কথা বলে। প্রায় ১০০ বছর আগে সুন্দরবনের জঙ্গলে সমবায় আন্দোলন শুরু করেছিলেন স্কটল্যান্ডের ওই সাহেব মানুষটি।
চতুর্থ বিপ্লব! দীর্ঘজীবী হোক : ঋত
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৮০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
নভেম্বর বা মে নয়। ২৫ ডিসেম্বর, বড়দিন, আপনাদের একখানি বিপ্লবের গল্প শোনাতে চাই। এই বিপ্লব জড়িত তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে। শিল্পবিপ্লবের কেন্দ্রে যেমন ছিল ‘শিল্প’, তথ্যবিপ্লবের কেন্দ্রেও তেমনই রয়েছে ‘তথ্য’ বা ইনফরমেশন। প্রশ্ন অতঃপর, ‘ইনফরমেশন এথিক্স’ বিষয়টি কী? খুব সোজা করে বললে, ইনফরমেশন এথিক্স হল এথিক্স বা নীতিবিদ্যার সেই শাখা, যার আলোচনার কেন্দ্রে ‘তথ্য’ বা ইনফরমেশন। এবং, তার সঙ্গে নীতিবিদ্যা বা এথিক্স নিয়ে আলোচনা। কথা হচ্ছে লুসিয়ানো ফ্লোরিদির বই দ্য ফোর্থ রেভোলিউশন: হাউ দ্য ইনফোস্পেয়ার ইজ় রিশেপিং হিউম্যান রিয়্যালিটি বইটি নিয়ে।