ইমানুলদার এই বই আমাকে এমনভাবে শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে, এই বই নিয়ে লিখতে বসে আমার নিজের এক আখ্যান লেখা হয়ে যাবে এত কিছু মনে পড়ে যাচ্ছে। বইটার পরতে পরতে তখনকার সমাজ ব্যবস্থা, দৈনন্দিন সাংসারিক জীবনের খুঁটিনাটির এমন বর্ণনা আছে যে যেকোনো পাঠকের চোখেই সেসময়ের দৃশ্যকল্প তৈরি হতে বাধ্য। পড়তে পড়তে কখনো সখনো মনে হয়েছে ইমানুলদার ছিল সচ্ছলতা আর অসচ্ছলতার পর্যায়ক্রমিক পৌনঃপুনিকতা… একটা অন্যরকমের লড়াই ছিল। এরকমই এক প্রেক্ষাপটে ... ...
‘আমার জার্মানি’ বইটা পড়ে শেষ করার পর খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। তবে হ্যাঁ, যদি কেউ বলেন যে আমি এই বইটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করেছি তাহলে তাঁকে বলতেই হবে যে ক্ষমা করবেন মহোদয়, আপনার বোধহয় কোথাও ভুল হচ্ছে’, কারণ ওটা সম্ভব নয়। এ বই পড়তে হবে থেমে থেমে , রসিয়ে রসিয়ে, অনুভব করে করে, প্রত্যেকটা অনুচ্ছেদের মর্ম অনুধাবন করে। ... ...
বিজ্ঞাপনের মোহিনী মায়া, সংবাদের আলো-আঁধারি ভাষা, কুঞ্ঝটিকা, বাজার ধরার কৌশল সমস্ত মিলিয়ে যে ফাঁদ তার প্রগাঢ় ভাষ্য উপল নির্মাণ করে নেন। সেই নির্মাণে গপ্প হিসেবে উপলকে অনেক সময়ই বাস্তবের আড়ালে চলে যেতে হয়। বাস্তবকে ধরে অপ্রচ্ছন্ন বাস্তবের প্রতিমূর্তি গড়ে তোলেন। সেই অপ্রচ্ছন্ন বাস্তবের ছায়ামূর্তির মধ্যেই বাস্তবের প্রতিমা লুকিয়ে আছে। সেখানে পাঠক বাস্তবকে আবিষ্কার করবেন বা প্রত্যাখ্যান করে অধিবাস্তবের স্বরকে দেখবেন সেটা পাঠকের প্রত্যাশার উপর ছেড়ে দেন। পাঠকের ভাষ্যে তা শিল্প হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। সেসব নিয়ে উপলের কোনো মাথা ব্যথা নেই। তিনি শিল্প বা না-শিল্প বৃত্তের ভাবনায় পাঠককে যে মাতিয়ে রাখতে পারেছেন সেটাই তাঁর সার্থকতা। হ্যাঁ তিনি রীতিমতো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যান। গদ্যসেতু ধরে ভাবনার তরঙ্গ বিচ্ছুরণে পাঠকের মস্তিষ্কে একাধিক বিরোধাভাসের জাল বুনে দিতে চান। সেখান থেকে পাঠক বাস্তবের সত্যে ফিরুক বা বাস্তবকে অস্বীকার করে শিল্পের সত্য বুঝে নিক। ... ...
বইটি পড়া শেষ করে মাথায় একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে এবং মনে হচ্ছে যে এই বইটি না পড়ে মরে গেলে বড্ড অন্যায় হয়ে যেতো। প্রায় প্রতিটি অধ্যায়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বারবার মনে হয়েছে যে এই বই আমার জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোকে মনে করে লেখা হয়েছে। এই বই আমার একান্ত নিজস্ব জীবন দলিল বললেও হয়তো অত্যুক্তি হবে না। ... ...জীবন মানেই উৎসব, জীবন মানেই সম্ভাবনা। আপনার লেখাগুলো প্রতি মুহূর্তে সেই জীবনেরই জয়গান গেয়েছে। কাদামাটির হাফলাইফ জীবন থেকে শিক্ষা নিয়েই জীবনকে উপলব্ধি করতে শেখাবে, এই বিশ্বাস জারি থাকল। ... ...
এই জীবনের তিনকাহন-এর প্রথমপর্ব, ‘বাপের বাড়ি’। লেখিকার জন্ম ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে। রাসবিহারী অ্যাভিনিউ-এ বাড়ি। ঠাকুরদা, ঠাকুমা, বাবা, জ্যাঠা, কাকা, পিসি সকলে মিলে বিশাল এক যৌথ পরিবার। চন্দননগরে সংস্কৃত টোল পণ্ডিতের বংশগত জীবিকা ছেড়ে শিক্ষা-চাকরির জন্য ঠাকুরদার কলকাতায়ন। তারপরে কলকাতায় বাড়ি বানিয়ে পাকাপাকি ভাবে বসবাস। বাবা-কাকা-জ্যাঠারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বা আইনজীবী। বাড়ি ভর্তি ভাই-বোনেরা, আর আছেন গোপালজিউ। সেইজন্য বাড়িতে আমিষ খাবারের প্রচলন নেই। ভাই-বোনেরা মিলে বাড়িটাকে পুরো মাতিয়ে রাখে। কখনও থিয়েটার, কখনও হাতে-লেখা পত্রিকা প্রকাশ, আবার কখনও বা নিখাদ দুষ্টুমি। সঙ্গে বিজয়া, দোল, ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার মতো চিরাচরিত উৎসব পালন তো লেগেই আছে। সেখানেও অবশ্য পারিবারিক বৈশিষ্ট্যের বিশেষ কিছু স্বাক্ষর আছে। অন্দরের অন্তর লেখিকার লেখায় এক নিরবচ্ছিন্ন চিত্রপটে ধরা দিয়েছে। ... ...
দু বছর আগে গুরুচণ্ডালির পাতায় কিশোর ঘোষালের আগমন নয় আবির্ভাব হলো। এক বিদ্যুৎচমক। ক্রমশ তিনি আমার হাতে ধরে নিয়ে গেলেন, বর্তমানের আলোয় অতীতকে চেনালেন। সলতে না পাকালে সাঁঝবাতি জ্বলে না। তিনি সেই সলতে পাকানোর পর্বটি দেখালেন সযত্নে। আমার পৃথিবীকে চেনার জানার যে বিশাল ফাঁক ছিল, সেটিকে তিনি অবহিত করালেন, প্রতিটি লেখা পড়ে ভেবেছি – এতো দিন কোথায় ছিলেন? ... ...
নিউ ইয়র্কে বলে, ইউ ক্যান টেক দি গার্ল আউট অফ ব্রনক্স বাট ইউ ক্যান নট টেক দি ব্রনক্স আউট অফ দি গার্ল। ভারমুক্ত আমি চলে এসেছি অনেক দূরে ইংল্যান্ডের সারেতে কিন্তু কুণালের লেখা মনে করিয়ে দিল, ‘ইউ ক্যান নট টেক বরানগর আউট অফ মি’। কুণাল আমার চেয়ে অনেক ছোটো হবেন, কিন্তু তিনি আর আমি দেখেছি এক আশ্চর্য উত্তাল সময়কে –দিকে দিকে ছড়ানো লাল আগুনের উত্তাল কলকাতা একাত্তর, সেখানে তিনি অর্থনীতি পড়ছেন, অমর্ত্য সেনের পভার্টি অ্যান্ড ফেমিনের কথা বলছেন আর তুষার রায়! রতন বাবু রোডের, আমাদের তুষারদার ব্যান্ডমাষ্টার অঙ্ক কষছেন ম্যাজিক লুকিয়ে চক এবং ডাস্টার। ... ...
ইতিহাসের বিশেষ সন্ধিক্ষণ ইতিহাসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে পরখ করার সৌভাগ্য হয় ক’জনের! বৃত্তের বাইরে থেকে নয়, একেবারে কেন্দ্রে থেকে পটপরিবর্তনের সাক্ষী থাকা এবং তাকে লিপিবদ্ধ করা গল্প বলার ছলে, এ নিতান্ত সহজ কাজ নয়। পাঠ্যবইয়ের ‘ইতিহাস’-এর বাইরে বেরিয়ে যে ভাবে ঐতিহাসিক ঘটনা লেখক নিজে পরখ করেছেন, তার অভিঘাত যা নিজে চোখে দেখেছেন এবং বিশ্লেষণী মন নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন, তা এই বইটিকে নিছক ভ্রমণ কাহিনী বা আত্মজৈবনিক অন্য কোনও রচনার থেকে পৃথক করেছে। এখানেই হীরেন সিংহ রায়ের পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি স্বতন্ত্র। গুরুচণ্ডালী-তে যে লেখা ইতিপূর্বে ধারাবাহিক হিসাবে প্রকাশিত হত, তা-ই এ বার দু’মলাটের মধ্যে। ... ...
গাছের যে অংশ থাকে মাটির ওপরে তাই আমরা দেখি। অর্থাৎ কাণ্ড , শাখা, ডালপালা আর পাতা - ফুল - ফল। আর যা থাকে মাটির নীচে, সেটা অদৃশ্যগোচরই রয়ে যায়। যেমন, শিকড়। শিকড় সন্ধান করতে লাগে.... খুঁজলে পাওয়া যায়। আর না খুঁজলে, বিস্মৃতির অতলে। আমাদের আদত যাপন চিত্রের এক অনুপুঙ্খ ধারা - বিবরণ হিসেবে নয়, ধারণ করে রাখে যে সব পাতা, সে সব পাতাগুলো এক জায়গায় জড়ো করলে হয় ইতিহাস। ইমানুল হকের লেখা 'কাদামাটির হাফলাইফ' সে অর্থে ইতিহাস। ... ...
বয়স্ক জার্মান ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন, বললেন, আমিই সেই জার্মান সৈনিক। ডেভিড সেটা বুঝলেন। কারও মুখে কোনো কথা নেই। উনচল্লিশ বছর আগে ইলিনয়ের ডেভিড দে ফ্রিস অস্ত্র হাতে জার্মানির হেসেনের এক পরাস্ত জার্মানের মুখোমুখি হয়েছিলেন। চারদিকে যখন খুন কা বদলা খুন হচ্ছে, সেখানে অস্ত্রহীন জার্মানকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন তার ওপরওয়ালার অফিসে। তার পরিচয়পত্র নাম ইত্যাদি নথিবদ্ধ করে, তাকে যুদ্ধবন্দির সম্মান দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধের শেষে বিজেতারা ফিরেছেন শিকাগো ইলিনয়, আর বিজিত ফিরেছেন হেসেন, জার্মানি। জার্মান ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন প্রথমে। ডেভিডও ততক্ষণে বেঞ্চ ছেড়ে উঠে পড়েছেন। চার দশক আগের দুই শত্রু। একে অপরকে আলিঙ্গন করলেন। ... ...
'কাদামাটির হাফলাইফ' -- একটি অনন্যসাধারণ রচনা। অনন্যতা নামকরণে। হৃদয়ে বিরাজ করা ভাবনা নির্বাচনে। অনবদ্য জীবনকথা উচ্চারণে। বৈঠকি মেজাজে সত্যোচ্চারণ করার অভূতপূর্ব ভঙ্গিমায়। ১১৬ পর্বে বিন্যস্ত জীবনে জীবন যোগ করার অবিস্মরণীয় সাহিত্যকর্ম 'কাদামাটির হাফলাইফ' সাহিত্যকর্ম তো বটেই, অন্তত আমার নিবিড় পাঠ অনুভবে। বইটির প্রতিপাদ্য বিষয়ের সঙ্গে ষোলআনা একাত্মতায়। আমরা জানি কোনো প্রচারধর্মী, রাজনৈতিক, সামাজিক বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য থেকে জাত হতেই পারে না প্রকৃত সাহিত্য। ভাবে ভাষায় ও রূপে তার নির্মাণ এক 'হয়ে ওঠার' বৃত্তান্ত। মার্কিন কবি আর্চিবল্ড ম্যাকলিশের কথায় : " A poem Should not mean / But be." ইমানুল হকের 'কাদামাটির হাফলাইফ' ঠিক তেমনই গ্রামবাংলার নির্ভেজাল ও 'কান্না হাসির দোল দোলানো পৌষ ফাগুনের পালা'-র সার্থক সাহিত্যরূপ। ... ...
খুবই গোলমেলে অ্যাসাইনমেন্ট। ‘আমার জার্মানি’ বইটার রিভিউ করতে বসেছি। গোদা বাংলায় পুনর্বার দেখা (Review) কি দেখব, কোনখান থেকে দেখব। শুধু জার্মানি হলে কথা ছিল। স্টেট ব্যাঙ্কের চাকরি ১৯৭২ সালে। জলপাইগুড়ি বহরমপুর শ্যামবাজার ব্রাঞ্চে কাজ শেখা। তিন বছর বাদে দু-বছরের জন্য জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট অফিসে বদলি। ফ্রাঙ্কফুটের প্রথমদিন একটি অসামান্য অবদান। পুরো লেখাটার মধ্যে ছড়িয়ে আছে রসিকতার মণিমুক্ত। যে লেখক নিজের দুঃখ নিয়ে নির্মল রসিকতা করতে পারে তার লেখনি কোন মার্গে উঠতে পারে এই অধম রিভিউ রাইটার তা কল্পনাও করতে পারেননি। আসার সময় হাতে ছিল ১২৫ ডলার তার মধ্যে ৫৫ ডলার নিজের সুটকেসের লাইনিংয়ের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন। হাতে পেনসিলের মতো করে ধরা ছিল ৭০ ডলার। হীরেন পৌঁছে গেলেন ফ্রাঙ্কফুর্টে কিন্তু সুটকেস পৌঁছলো না। নিজের অসহায় অবস্থার বিবরণে যে স্যাটায়ার লুকিয়ে আছে, তা এককথায় নান্দনিক। ... ...
দীর্ঘদিন আমরা ইংরেজদের দাসত্বে থাকলেও, আমাদের বাল্যে বিলেত অর্থাৎ ইংল্যাণ্ড সম্বন্ধে বেশ সমীহ জাগানো একটা ধারণা তৈরি করেছিলেন, আমাদের বিলেত-ফেরত ডাক্তার ও ব্যারিষ্টাররা। তাছাড়া ইউরোপের যে কটি দেশ সম্পর্কে আমাদের কৌতূহল ছিল, সেগুলি হল, ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানি, স্পেন, গ্রীস ইত্যাদি। আরও কিছু দেশ যেমন, পোল্যাণ্ড, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লোভাকিয়াকে চিনতাম সে দেশের ডাকটিকিট সংগ্রহের সুবাদে। এখনও মনে আছে, পোল্যাণ্ড, হাঙ্গেরি এবং চেকোশ্লোভাকিয়ার স্ট্যাম্পগুলি, ইংল্যাণ্ডের “মহারাণি” মার্কা একঘেয়ে স্ট্যাম্পগুলির তুলনায় অনেক বেশি আকর্ষণীয় এবং চিত্তাকর্ষক ছিল। আরেকটা দেশের নামও মনে আছে - “নিশীথ সূর্যের দেশ” নরওয়ে! আলোচ্য গ্রন্থদুটি পড়া শেষ করে মনে হল, লেখকের হাত ধরে ইউরোপের ওই অচেনা-অজানা-অস্পষ্ট দেশগুলি থেকে এইমাত্র যেন ঘুরে এলাম। ... ...
কোভিড, বিধ্বংসী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বইপাড়ার বিবরণ ‘মার্কো পোলোর ভ্রমণ বৃত্তান্ত ২০২০’ আখ্যানে এসেছিল। বাঙালি যত আধুনিক হল, যত অর্থবান হল, বিনোদনের নানা উপকরণ পেতেই বই ত্যাগ করল। মধ্যবিত্ত, সংস্কৃতিপ্রবণ মানুষ কেউ কেউ বইকে আঁকড়েই বাঁচতে চাইল, স্বপ্ন দেখল। বাড়ি গাড়ি ভোগবাদের আতিশয্য বিসর্জন দিয়ে কেউ বাইরে মত্ত হল। ভোগবাদে ভেসে যাওয়া, ক্ষমতার অন্দরমহলে থাকা মানুষ বইকে অবহেলা করতে শুরু করল। বিমলের প্রতি অখিলের মনোভাবের মধ্য দিয়ে লেখক কালের ধ্রুব সত্যের তরঙ্গমালা এঁকে চলেন। ... ...
এই বই লেখা শেষ করে প্রকাশকের কাছে জমা দেবার সময় রুশদি অবশ্য জানতেন না এর বেশ কিছু মাস পরে তাঁকেও এক ধর্মান্ধের আক্রমণে একটি চোখ হারাতে হবে। এই বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছে আমার এর লিঙ্গ রাজনীতির পরিব্যাপ্তি। পম্পা কম্পনার সৃষ্ট রাজ্যে মেয়েরা প্রচলিত সামাজিক নিয়মে লিঙ্গ নির্ধারিত ভূমিকায় বাঁধা নয়, তারা কবি কিম্বা শ্রমিক, শিল্পী কিম্বা উকীল, চিকিৎসক কিম্বা যোদ্ধা বেছে নিতে পারে যে কোন পেশা তাদের ইচ্ছেমত। সিংহাসনে মেয়েদের উত্তরাধিকারের চেষ্টা করতে গিয়েই সর্বস্ব খুইয়ে প্রাণ হাতে করে অজ্ঞাতবাসে যেতে হয় নিজের তিন মেয়েকে নিয়ে, তবু সেই সমানাধিকারের স্বপ্ন ছাড়ে না সে। ... ...
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন্দ্র সিংহ কি রাজধর্ম পালন করেছেন? ৩ মে থেকে দুই জনগোষ্ঠীর লড়াইয়ে রক্তাক্ত উত্তর-পূর্বের রাজ্যটিকে দেখে এই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। রাষ্ট্র কি তার কর্তব্য যথাযথ ভাবে পালন করছে? ঘটনাটি ঘটার এত পরে কেন পদক্ষেপ করল প্রশাসন? কেনই বা ৭৯ দিন পর মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী? কোন নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর মূল্যায়ন করা যায়? ভিন্ন প্রেক্ষিতে ভিন্ন সময়ে এমন প্রশ্ন উঠেছিল। ২০০২ সালে গুজরাতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর রাজ্যটির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ঘিরেও তৈরি হয়েছিল নানা প্রশ্ন। সে সময় মোদীকে পাশে বসিয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। মোদীর উদ্দেশে বলেছিলেন, রাজধর্ম পালন করতে হবে। ... ...
এখানে এ কথাটাও বলা উচিত, যে “আলোচনা করার যোগ্য” হওয়ার অর্থ এই নয় যে একজন আকর্ষণীয়ভাবে অথবা সুন্দর ভাষায় একটি বিষয়ের বর্ণনা করতে পারেন। তার থেকেও বড় কথা, মজাদার ভাবটি ধরে রাখতে গিয়ে, প্রায়শই গুরুতর সূচকগুলির সাথে আপোষ করা হয়। লেখক সেই আপোষটুকু না করেই তার হাস্যরসটি দিব্যি ধরে রাখতে পেরেছেন। বইটিতে আলোচিত গল্পগুলোর সম্বন্ধে আমি কিছু বলে দিতে চাই না। তবে, আমি অবশ্যই বলব যে লেখক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রোবাবিলিটি অর্থাৎ সম্ভাবনাতত্ত্বের প্রয়োগগুলিকে সহজে বোঝানোর জন্য খুব যত্ন নিয়ে গল্পগুলি বেছেছেন। একইসঙ্গে, কিছু গল্প এও ব্যাখ্যা করে যে কীভাবে সম্ভাবনাতত্ত্ব এবং পরিসংখ্যানগত (স্ট্যাটিস্টিক্যাল) ধারণার আইনের ভুল প্রয়োগ এবং ব্যাখ্যা - প্যারাডক্সিক্যাল পরিস্থিতিতে পরিণত হতে পারে। বিষয়-নির্বাচনের দক্ষতা, ভাষা ও গভীরতার ভারসাম্যের জন্য লেখককে অভিনন্দন। আমি বাংলা পড়তে পারে এমন উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী সহ সকলকে বইটি সুপারিশ করছি। লেখার ভাষা হাল্কা হলেও বইটি “সিরিয়াস-রিডিং”। যদুবাবু/জ্যোতিষ্কের লেখা প্রবন্ধ থেকে সবাই কিছু না কিছু শিখতে পারবে। ... ...
এ এক অদ্ভুত বই। পাতার পর পাতা উলটেও আমি ঠিক করতে পারিনি এ কোন বৃক্ষের ফুল, কোন জনরেঁ এর উৎস। প্রবন্ধ, ইতিহাস, রসনা-রেসিপি, ইদানীং ফুড-ব্লগ নামে যা জগত-বিখ্যাত, শিল্প ও শিল্পীর ওপর কিছু কথা, নাকি কেবলই মনোহরণ দাস্তান বা আখ্যানগুচ্ছ। সব কাননের ফুলের সুবাস পাওয়া যাবে এতে আলাদা করে, আবার প্রত্যেকটি মিলেমিশে একটি নিবিড় কথকতা! বাংলা সাহিত্যে এরকম আর কিছু আছে কি? ... ...
প্রথমেই যা নিবিষ্ট করে তা হল এই বইয়ের অত্যন্ত সুলিখিত ভূমিকাটি। লেখক পাঠক দুইয়ে মিলেই তো সাহিত্যের সেতু গড়া। "সকলে কি লেখেন? কত নিবিষ্ট পড়ুয়া আছেন, খুঁজে খুঁজে বার করে আনেন সাহিত্যের মণি-মুক্তোগুলি। ভালো পড়ুয়া আছেন বলেই অনেক মহৎ লেখক বেঁচে ওঠেন বিস্মৃতি থেকে।" এইরকম পাঠকেরাই খুঁজে বার করেছেন কতোদিনের হারিয়ে যাওয়া গল্পগুলি। তাদের অনেকগুলিই বিশ্বমানের, অথচ তাদের স্রষ্টারা আজ বিস্মৃত। এদের সংগ্রহ করে এবং একত্রে সংকলিত করে আমাদের ধন্যবাদার্হ হয়েছেন সাহিত্যিক অমর মিত্র, প্রকাশনার জন্য গুরুচন্ডা৯। আমাদের সাগ্রহ অপেক্ষা থাকে পরবর্তী খন্ডগুলির জন্য, কারণ "এই সংকলন যেন আমাদের বংশলতিকা খুঁজে বের করা। সেই খোঁজের শুরু হলো মাত্র।" ... ...