অনেক সময় অপবিজ্ঞানকে সূক্ষ্মভাবে বিজ্ঞানের মোড়কে মুড়ে দেওয়া হয়। যেমন, পৃথিবী সব জিনিসকে নিজের দিকে টানে, তাই তারা পৃথিবীতে এসে পড়ে – কোনো প্রাচীন শাস্ত্রে এরকম কথা লেখা থাকলেই, নিউটনের অনেক আগে আমরা মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কার করেছি—এটা প্রমাণ হয় না। পৃথিবীতে আপেল এসে পড়ে, কারণ পৃথিবী আপেলকে টানে—এটা গুহামানবরাও বলতে পারত। ব্রহ্মাণ্ডে সব টানাটানিই যে একই সূত্রের ফল—সেটা নিউটনই প্রথম দেখান, আর বিজ্ঞানের যে কোনো সূত্রের জন্যে এই সার্বজনীনতাই মূল কথা। ... ...
মধ্যশিক্ষাপর্ষদের সাইট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যবোর্ডের বাংলা মাধ্যম মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ২৭৬৮ খানা। হিন্দি মাধ্যম ১১৬, ইংরিজি মাধ্যম ৪৫। সব মিলিয়ে মোটামুটি ধরুন ৩০০০। সিবিএসইর সাইট অনুযায়ী, সিবিএসই অনুমোদিত বিদ্যালয় ৪৫০। আইসিএসইর সাইটে পরিসংখ্যান পাইনি, অন্যত্র দেখলাম শ চারেক। দুটো যোগ করে, মোটামুটি ধরুন ১০০০। অর্থাৎ কিনা পশ্চিমবঙ্গের চারভাগের একভাগ স্কুলই কেন্দ্রীয় বোর্ডের। ... ...
যৌনতা সম্পর্কে সচেতনতা ... ...
কোন পুরুষ যদি প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়েই দ্বিতীয় বিয়ে করে, মদ বা জুয়ার নেশায় নিমজ্জিত হয়, যৌনরোগে আক্রান্ত হয়, পুরুষত্বহীন হয়ে পড়ে বা সাংসারিক খরচাদি মেটাতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে সংক্ষুদ্ধ স্ত্রীটি যেন তার স্বামীর বিরুদ্ধে সরাসরি ও স্বাধীনভাবে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন শুরু করতে, সেই সুযোগ আদর্শ বিবাহ চুক্তিটিতে রাখা হয়েছিল। মেয়েদের জন্য মুখলিসার এই সংগ্রামকে নিশ্চিতভাবেই প্রভাবিত করেছে তার নিজের জীবন। , নিজের মোল্লা স্বামীর সাথে কিছুতেই বনিবনা হচ্ছিল না। অথচ প্রায় বিশ বছর তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল বিচ্ছেদ কার্যকর করতে, অনিচ্ছা সত্বেও করতে হয়েছে স্বামীর ঘর। ... ...
বাংলায় শিক্ষা-টিক্ষা চালু করার কথা এলে, প্রথমেই দুটো তর্ক উঠে আসে, যা সেই রবীন্দ্রনাথের আমল থেকে চলছে। এক, বাংলার পরিভাষাগুলো অদ্ভুত। ছোটো থেকে শুনে আসছি, গতিজাড্য, ভরবেগ, জ্যা, ব্যাসার্ধ, কূটাভাষ, চলগতিবিদ্যা, বস্তুবাদ, যুক্তিবাদ, তাত্ত্বিক প্রস্থানবিন্দু, এইসব নাকি খুব কঠিন কথা। 'উদস্থৈতিক কূট'? হ্যাহ্যাহ্যা সেটা আবার কী? আমরা মফঃস্বলবাসীরা এ জিনিস শুনে-শুনে পচিয়ে ফেলেছি। অথচ, কথাটা একেবারেই ফালতু। ইংরিজি দারুণ-দারুণ সোজা পরিভাষার ডিপো, তা নয়। যা আছে, তার বহু কিছুই ইংরিজিভাষীদের পক্ষেও কঠিন। মায়ের পেট থেকে পড়েই 'হাইড্রোস্ট্যাটিক প্যারাডক্স' কাকে বলে কেউ বুঝে যায়না, আর অ-ইংরেজভাষীদের পক্ষে, খুব অভ্যাস না থাকলে, বলতে দাঁত খুলেও যেতে পারে। স্ট্যালাগটাইট, স্ট্যালাগমাইট, ইন্টারডিসিপ্লিনারি-ডিসকোর্স, এসবই কঠিন জিনিস। বৈজ্ঞানিক নামগুলো তো, ওরে বাবা। পেরিপ্ল্যানেটা আমেরিকানা, মানে নাকি আরশোলা, হোমো-স্যাপিয়েন্স মানে মানুষ। তার আগে ছিল নিয়েন্ডারথাল, হোমো-ইরেকটাস। প্রচুর মুখস্থ না করলে মনে রাখা সম্ভব না। আমাদের পন্ডিতদের যেমন তৎসমের উপর একটা ঝোঁক ছিল, পশ্চিমের পন্ডিতদের ছিল লাতিনের উপরে। সব একই রকম খটোমটো। অভ্যাস করলেই অভ্যাস হয়ে যায়। নইলে হয়না। ... ...
আমি শিক্ষাবিশেষজ্ঞ নই। এবং আমার দৌড় কলকাতা থেকে সিঙ্গুর অবধি। সেটাও নেহাৎই মধ্যবিত্ত বৃত্তে। সেই বৃত্তে আমি কী দেখছি? আমার পরিচিত বন্ধুবান্ধবরা প্রায় কেউ তাঁদের ছেলেমেয়েদের রাজ্য বোর্ডের ইশকুলে পড়াননা। যাঁরা রাজ্য বোর্ডের শিক্ষক, তাঁরাও না। তার নিশ্চয়ই অনেক কারণ আছে। কিন্তু মোদ্দা কথা হল, কলকাতা থেকে সিঙ্গুর অবধি, এই যে তিরিশ কিলোমিটার এলাকা, স্যাম্পল সার্ভে না করেই বলতে পারি, যে, রাজ্য বোর্ডের ইশকুল গুলো মধ্যবিত্তের প্রথম পছন্দ তো নয়ই, বরং অগতির-গতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। আমরা যে ইশকুলগুলোয় পড়েছি, যেগুলো নামী ইশকুল বলে জেনেছি, সেগুলো সমেত। দুর্নীতি, ইশকুল-বন্ধ করে দেওয়া, এই ব্যাপারগুলো দিয়ে এই দুচ্ছাইকরণ প্রক্রিয়াটাকে ক্রমশ ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। ... ...
আপনি খেয়াল করে দেখেন রাস্তাঘাটে এত কুকুর, অথচ কয়টা কুকুর গাড়ির নিচে চাপা পরে মরে? আমাদের বাচ্চাকে আমরা সাবধানে রাখি, রাস্তা পাড় হাওয়া শিখাই। ওদেরকে কে শিখাইছে? ওদের মস্তিষ্ক বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তন হয়েছে। আজকে থেকে দুই তিনশ বছর আগের কোন কুকুরকে যদি আজকের রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া যায় চোখের নিমিষে গাড়ির নিচে পরে মরে যাবে। কিন্তু এখনকার কুকুরেরা ঠিক নগর সভ্যতার সাথে অভিযোজিত হয়ে গেছে। এমন অনেক প্রাণী আছে যারা বিবর্তনের মাধ্যমে প্রকৃতিতে টিকে আছে। আর এগুলাই বিবর্তনের পক্ষের যুক্তি। ক্ষুদ্র জীবাণুতে এর উপস্থিতি আরও পরিষ্কার বুঝতে পারা যায়। এই যে অ্যান্টি বায়োটিক খান আর কয়দিন পরেই বলেন যে কাজ করে না, অন্য আরেকটা দেন, পাওয়ার বাড়ায় দেন, কেন বলেন? ওই ব্যাকটেরিয়া সমানে বিবর্তনের মাধ্যমে নিজেকে পরিবর্তন করে চলছে। অ্যান্টি বায়োটিক যেটা ওকে মেরে ফেলছে ওইটার প্রতিরোধ নিয়ে পরেরটা আসছে, বিবর্তনের মাধ্যমেই এই কাজ হচ্ছে। মশার কয়েলে কাজ করে না বলে চিল্লাফাল্লা করেন, কাজ করে না কেন? মশাও বিবর্তিত হচ্ছে, আপডেট কয়েল না ফলে মশা তাড়াতে পারবেন না। ... ...
মারিয়ামের ভাষায় গণিতের সৌন্দর্য তার কাছেই ধরা দেয়, যে ধৈর্য ধরে অনুসরণ করতে পারে একে। তিনি দাবী করতেন যে, তিনি একজন ধীর চিন্তক, অনেকটা সময় ব্যয় করার পরই কেবল পরিষ্কার হত তার কাছে পথটা। তার কাছে গাণিতিক সমস্যার সমাধান ছিল যেন জংগলে হারিয়ে যাওয়া, সমস্ত জ্ঞানকে ব্যবহার করে এরপর একটি কৌশল যার প্রয়োগ ও কিছুটা ভাগ্যের সহায়তায় এরপর পাহাড়ের চুড়োয় উঠে যাওয়া, আর সব কিছু পরিষ্কার দেখতে পাওয়া, বিস্তৃতভাবে। মারিয়াম তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, “জানার চেষ্টা কর, আসলেই তুমি কী চাও, আর কখনোই পথ-বিচ্যূত হয়ো না।“মারিয়াম বিনোদন শিল্পে ‘জিনিয়াস’ এর যে অদ্ভুতুরে রূপটি প্রদর্শিত হয়, সেরকম ছিলেন না। তার বন্ধুরা বলেন, “মারইয়াম আর দশজনের মতই মনোরম ছিলেন এবং আমরা তাকে এরকমই ভালবাসতাম যদি তার কোন স্বীকৃতি নাও থাকতো।“ ... ...
ঠাকুরের কথা, "মানবগুরু মন্ত্র দেন কানে, জগৎগুরু মন্ত্র দেন প্রাণে।" সেই সকল মানুষ – যাঁদের মধ্য দিয়ে কথায়, লেখায়, সুরে, কাজে জগৎগুরু, পরম আমাদের প্রাণে সৃষ্টির বার্তা পাঠিয়ে চলেছেন – সব্বাইকে আমার শ্রদ্ধা জানাই আজকের দিনে। ... ...
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বিশ্বভারতী' পড়তে গিয়ে কিছু আলোচনা, ধ্যানধারণা সম্বন্ধে পরিচিত হলাম। তেমন কিছুই নয়, ভদ্রলোক বিশ্বভারতীর সুপ্তি থেকে বিকাশে যাওয়ার পথগুলি বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন ১৩২৮-এর বসন্তকালে। যেমন বুঝেছি, কয়েকটি ধাপে লেখার চেষ্টা করছি। ধাপগুলির নাম আমারই দেওয়া, নিজের বোঝবার সুবিধার জন্য। ... ...
অতিমারিতে অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতির অন্যায্যতা নিয়ে অনেকেই সামাজিক ও সংবাদমাধ্যমে সরব হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় দেখলাম এই "অ-ন্যায়" এক অন্য ধরণের ন্যায়ের জন্ম দিয়েছে। এই প্রবন্ধ সেই আলোচনা উস্কে দেওয়ার একটি প্রয়াস। ... ...
প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এসো, কোভিড অতিমারীকে হারিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য আমরা দ্বাদশ অঙ্গীকার করি। ... ...
স্কুল খোলা নিয়ে নানান তর্ক চলছে। তর্ক না হওয়াটাই অস্বাভাবিক হত। উন্নত বিশ্বে কোথায় কোথায় স্কুল কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে বা কোথায় একদিনের জন্যও স্কুল বন্ধ হয়নি তা একেকজন প্রচার করছে। এখানেই গোলটা বাঁধে। আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমরা ভুলে যায়। আমাদের বিপুল জনগোষ্ঠী সম্পর্কে আমাদের ধারনা থাকে না এমন মন্তব্য করার আগে। যারা আমেরিকা ইউরোপের উদাহরণ দিচ্ছে তাদের ধারনাও নাই আমাদের একেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যতজন ছাত্র পড়ে তা অনেক দেশের জনসংখ্যার সমান! কাজেই তাদের উদাহরণ আমাদের দেখিয়ে লাভ নাই। আমাদের সমস্যা আমাদের সমাধান করতে হবে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে সমাধানের পথে কেউ নাই। আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উদাহরণ নিতে পারি। আমি জানি না ওই দেশের স্কুল কলেজ খোলা কিনা। তারা কীভাবে সমাধান করছে এই সমস্যার তা আমাদের দেখা উচিত। জনসংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থা সব মিলিয়ে ভারতকে এই বিষয়ে অনুসরণ করা যেতে পারে। ওরাই যদি লেজেগোবরে অবস্থায় থাকে তাহলে আমাদের ভিন্ন পথে হাঁটতে হবে। আমাদের দেশে কত জ্ঞানী গুণীজন আছে, তাদের নিয়ে একটা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। পরীক্ষা বা মুখস্থ বিদ্যা দ্বারা মেধা যাচাই ছাড়া আর কোন কোন উপায়ে ছাত্রদের মেধা যাচাই করা যায়, পড়াশোনার ভিতরে রাখা যায় এটা বের করতে হবে আমাদের। মোট কথা যেভাবে চলছে সেভাবে চলতে দেওয়া যায় না। ... ...