জনৈক ঠুল্লা (দিল্লী পুলিশকে ঠাট্টা করে বলা হয়) উমর এবং অনির্বাণকেঃ তোমরা জে এন ইউ তে জাতীয়তা বিরোধী সভা আয়োজন করেছিলে কেন?
অনির্বাণঃ এন্ডারসনের মতে, জাতি একটি কল্পিত সম্প্রদায় যা সেই সব মানুষ, যারা নিজেদেরকে সেই বৃহত্তর গোষ্ঠীর অংশ বলে মনে করেন, তাদের দ্বারা সামাজিক ভাবে নির্মিত...
ঠুল্লা ২ কী? এটা আমরা যা প্রশ্ন করেছি তার উত্তর হল? তোমাদের কে টাকা দিয়েছে?
অনির্বাণঃ আমরা কয়েকজন মিলে কয়েক হাজার টাকা তুলেছিলাম। প্রত্যেকে অল্প কিছু কিছু করে ডোনেশন দিয়েছে।
ঠুল্লা ৩। তার মানে তোমরা এই প্রোগ্রামটার জন্য ইউ জি সি র গ্র্যান্টের টাকা ব্যবহার করেছ? একটা জাতীয়তা বিরোধী প্রোগ্রাম করার জন্য তোমরা করদাতাদের টাকা অপচয় করেছ?
উমরঃ করদাতাদের টাকা কথাটাই ভুল। সব সম্পদই সকলের জন্য এবং তা অবশ্যই সকলের লাভের উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হওয়া উচিৎ। প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তিকে অবশ্যই সমষ্টির স্বার্থে শ্রমদান করতে হবে এবং পরিবর্তে সমষ্টি তার সমস্ত চাহিদার জোগান দেবে। মার্ক্স বলেছেন ---
ঠুল্লা ১। কিন্তু তোমরা কি ওই টাকার অপব্যবহার করেছ?
অনির্বাণঃ আমরা টাকাটা তথ্যের প্রচার এবং শিক্ষার প্রসারের স্বার্থে খরচ করেছি - কোন বুর্জোয়া অথবা এমন কি পেটি বুর্জোয়া স্বার্থেও নয়। আলথুসার বলেছেন ---
ঠুল্লা ২। (মাথা চুলকে) ঠিক আছে ওটায় পরে আসছি। আগে বলো – আফজল গুরুকে কি তোমরা শহীদ মনে কর?
অনির্বাণঃ এই প্রশ্নের উত্তরটা আমি দেব কারণ তা না হলে আপনারা উমরকে ইসলামী উগ্রপন্থী বলে দেগে দেবেন। শহীদ বা মার্টির কথাটার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ দেখলে তা এসেছে “চাক্ষুষ প্রমাণ বহন করা” থেকে। কাউকে যদি কোন দ্বন্দ ছাড়া অন্য যে কোন কারণে হত্যা করা হয় অথবা তাকে আত্মসম্মানহীন জীবন আর মৃত্যু -এর মধ্যে যেকোন একটি বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে এগামবেন যেমন বলেছেন, তার পক্ষে অবশ্যই মৃত্যু বেছে নেওয়া যুক্তিসঙ্গত। এরা তাদের মৃত্যুর মাধ্যমে বিচারের অসম্ভাব্যতার দৃষ্টান্তের সাক্ষ্য বহন করেন। ভগত সিং কেও এই কারণেই শহীদ আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে।
ঠুল্লা ৩। এসব কথার মানে কী? “ভারত কি বরবাদী তক জঙ্গ রহেগী” স্লোগান কে তুলেছিল?
উমরঃ সম্ভবতঃ জামিয়া মিলিয়ার কেউ। যতই হোক, নাজীব জঙ্গ ওদের উপাচার্য ছিলেন, তাই না?
অনির্বাণ ফিক করে হেসে ফেলে।
ঠুল্লা ১। এতে এত মজার কী হল? লোকজন রাগে ফুঁসছে। তোমরা ওদের ভাবাবেগে আঘাত করেছ।
আনির্বাণঃ আমরা আসলে মিডিয়ার ভাবাবেগে আঘাত করেছি – অর্থাৎ আমাদের দ্বারা আহত হয়ে ওদের টি আর পি বেড়েছে। বুর্জোয়াদের স্বার্থে সুশীল সমাজের মতামত নির্মাণ করার এটা একটা ক্লাসিক চমস্কিয়ান উদাহরণ।
ঠুল্লা ২। তোমরা “যে দেশে কোন ডাকঘর নেই” এর মত একটা বিভ্রান্তিকর পোস্টার কেন বানিয়েছিলে? কাশ্মীরে তো অনেক পোস্ট অফিস আছে। আমরা আর টি আই এর মাধ্যমে জেনেছি জম্মু কাশ্মীরে ডাক পরিষেবা খুবই ভালো।
উমর অনির্বাণের পিঠ চাপড়ায়।
ঠুল্লা ৩। এটা পিকনিক নয় – ঠিক আছে? ঠিকঠাক থাকো। তোমরা ভারতে থেকে কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবী সমর্থন কর?
উমরঃ আমরা সর্বার্থে স্বাধীনতাকে সমর্থন করি। অন্য কেউ যদি মনে করে আমরা তাদের অধিকার করে রেখেছি তবে ভারত নিজেও মুক্ত হবে না। বাবা সাহেবের মতে ---
ঠুল্লা ১। এই সব হেঁয়ালি করছ কেন?
অনির্বাণ আর উমর চোখ চাওয়াচায়ি করে।
অনির্বাণঃ তাহলে আপনি অরওয়েল পড়েছেন।
ঠুল্লা ১। হ্যাঁ হ্যাঁ। অল ওয়েল। ধন্যবাদ।
উমর (হেসে উঠে অনির্বাণকে) অজ্ঞানতাই শক্তি
অনির্বাণঃ (পালটা হেসে) স্বাধীনতা মানে ক্রীতদাসত্ব।
দুজনে একসাথেঃ যুদ্ধই শান্তি।
জেরার পুলিশ রিপোর্ট
আমাদের ধারণা এটা একটা গভীর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র যা শুধু ভারত সরকারকে গদিচ্যুত করাই নয়, ভারত রাষ্ট্রকেই ধ্বংস করতে চায়। সম্ভবতঃ দেশের বিভিন্ন অংশে এই দেশদ্রোহীদের কিছু ভাবাদর্শগত গুরু আছে – যেমন জনৈক ভগত সিং (পঞ্জাব পুলিশের কাছে খবর চাওয়া হয়েছে) এবং জনৈক বাবা সাহেব (তথ্যানুসন্ধান চলছে)। জেরায় বেশ কিছু বিদেশী চক্রান্তকারীর নামও উঠে এসেছে, যাদের মধ্যে রয়েছে এন্ডারসন, মার্কাস, চামস কায়ন, এগহাম বেন, আল থুসার প্রমূখ। দিল্লীর লেঃ গভঃ নাজীব জঙ্গ এই সব স্বশাসিত সেলগুলির মধ্যে যোগাযোগ রাখার কাজ করে থাকেন বলে মনে করা হচ্ছে।
মূল লেখাঃ আরিফ আয়াজ
বাজে খবরের পক্ষ থেকে অনুবাদ করেছেনঃ রৌহিন ব্যানার্জী
মূল লেখার লিংকঃ http://sbcltr.in/the-interrogation/