এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কাঙালনামা ৩

    Suddha Satya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৩ অক্টোবর ২০১৩ | ১৬৫৩ বার পঠিত
  • ।। জয়ই একমাত্র গুণ ।।

    জিতেছিলেন সিজার। কিন্তু সেই জেতার পিছনে ছিল পরাজিত না হওয়ার ইচ্ছে। লড়াইটাকে সিজার ভাগ করেছিলেন দু-ভাগে। একভাগে ছিল ব্রিটনদের সম্পূর্ণ পরাজিত করে দখলে রাখার ভাবনা, অন্য ভাগে ছিল কৌশলের জয়। প্রথমটা সিজার খারিজ করেছিলেন প্রথমবারই। কারণ এই দেশটাতে আছে বলতে শুধু টিন। সোনা হলে কথা ছিল কিছু। কিন্তু সোনা না হলে সিজারের আলাদা করে কিছু এসে যাবেনা। তিনি ব্রিটেন না, রোম নিয়ে চিন্তিত। সমস্ত রাস্তা পৃথিবীর যাচ্ছে রোমের দিকে, আর তিনি সেই রাস্তায় হাঁটতে পারছেন না। কোনো মানে হয়? ব্রিটেনকে পরাজিত করতে পারেন নি সরাসরি, কিন্তু মৈত্রীর মাধ্যমে আনুগত্য আদায় করেছেন। নিজের পছন্দের শাসক বসিয়ে দিয়েছেন। রোমকে বোঝানো গ্যাছে যে এবারে গল নিরাপদ হয়েছে।

    নিরাপত্তা! সেটাই তাড়িয়ে বেড়ায় যেকোন শক্তিকে। এই যে তাঁবুতে সিজার বাতি জ্বালিয়ে বসে আছেন সন্ধ্যায় সেটা কেন? খুব সহজ কারণ! অন্ধকারে নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ হয়। আর সিজারের নিরাপত্তা এবং শাসনের নিরাপত্তা একই। সিজার শাসনের মুখ। ব্রিটেনে তাঁর জয়ের খবর দিয়েছেন বন্ধু সিসেরোকে। সেই সূত্রে রোম জানবে সব। কে শাসন করছে রোম এখন? কয়েকজন পেটমোটা সেনেটর ।হাহ! শুধু মাত্র ঘুষ আর মস্তান দিয়ে এরা নির্বাচন জিতে রোমান জনগণের প্রতিনিধি হয়ে যায়।জনগণের চাহিদা কি, না একটি ভোট নামের বিপুল সার্কাস! সেই সার্কাসে রোমের কি? কিচ্ছু না! রোমকে নিয়ে এত ভাবনা কেন? কিসের জন্যে রোম আজ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সাম্রাজ্য? সেকি সেনেটের অবদান? নাকি ব্যাক্তির? সেনেট মানে কিছু মাথামোটার দল। আগে হয়তো কখনো অন্যরকম কিছু ছিল। সেখানেও কেউ না কেউ ছিলোই যার জন্যে সেনেট বুঝেছে কখন কি করা উচিত! কিন্তু সেখানে বুদ্ধিমান লোক বেশী ছিল সেদিন। আর আজ? যত রোমের সম্পদ বেড়েছে ত বেড়েছে মূর্খামি! কারণ যাদের অর্থ বেড়েছে তাদের হাতে ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে স্তাবকের দল। তারা সকাল থেকে সন্ধে সুর করে বলে যায় সে কত মহান! ব্যাস! খেল খতম পয়সা হজম। এবারে এরা চালাবে রোম? রোমের দরকার তাঁকে। তিনি এসবের উর্দ্ধে। সম্পদ বা স্তাবকতা তাঁকে বিচলিত করেনা। তিনি দেবপুত্র। তাঁর বংশের সূত্রপাত দেবতার ঔরসে। তিনিই একমাত্র পারেন রোমকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে।

    ।। একই কথা অন্যরাও ভেবেছিল বোধহয় ।।

    যেমন রবার্ট ক্লাইভ। ব্রিটেনের সংষ্কৃতির আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে রোম আর সিজার। ক্লাইভ থেকে উইলিয়াম সকলে ছোট কিম্বা বড় প্রতিরূপ সিজারের। কিন্তু কেউই গোটা সিজার হতে পারেনি। উইলিয়াম বন্দুক হাতে ফিরে গিয়েছিল তাঁবুর ভেতরে শেষ-মেশ। জন তাকে নিয়ে চলে গিয়েছিল। সমস্যা হচ্ছে পাথর লাগবে ব্যালাস্টের জন্যে। কিন্তু সে পাথর অন্য জায়গা থেকে আনা হবেনা কেন? সেই উত্তরটা জড়িয়ে আছে ক্লাইভের সঙ্গে। জড়িয়ে আছে কোম্পানীর পরিচালন ব্যবস্থার সঙ্গে।ওই বুড়োটা, যে উইলিয়ামকে অগ্রাহ্য করে চলে গেছিল সে এসব জানেনা। সে কি জানে তা আমরা পরে জানব। কিন্তু ক্লাইভ কি জানত সেটা এবারে জানা জরুরী। মার্শাল এই বৃত্তান্তগুলো জানেন কিন্তু লিখবেন না। কারণ এই তত্ত্ব তাঁর পুরাতত্ত্ব নয়।তবু খাতার সামনে বসে বসে সাইটের এখন অবধি করা স্কেচগুলো দেখতে দেখতে ভাবছিলেন ইতিহাস কিভাবে জড়িয়ে থাকে পরতে পরতে। কত জীবন্ত সে!

    রবার্ট ক্লাইভ, একজন সামান্য সৈনিক থেকে কোম্পানীর ভারতের শাসনযন্ত্রের মাথা হয়েছিলেন। সে খেলা চারটিখানি খেলা?

    ।। সাফল্য আসলে জুয়ো খেলা ।।

    এটা যারা জানে তারাই পারে কিছু লাভ করতে। ক্লাইভ তার পাড়ায় যখন বাজারে মস্তানি ঠেকানোর জন্যে দল গড়েছিল, কিম্বা নিজে বারবার স্কুলে গন্ডগোলে জড়িয়ে পড়ছিল তখন কি সে এটা জানত? ততটা স্পষ্ট করে জানত না। কিন্তু তার স্বভাবে আছে দল পাকানো এবং তার মাথা হয়ে ওঠা। তাকে সে অস্বীকার করে কি ভাবে? অনেকবার এভাবে ঝামেলার সামনে পরে পরে সে পোক্ত হয়ে ওঠে। ফল, নতুন উপনিবেশের দিকে যাত্রা। তাও জাহাজ খারাপ হয়ে গেল ব্রাজিলের কাছে।সেখানে বেশ কয়েকমাস কাটানোর ফাঁকে ক্লাইভের রপ্ত হয়ে গেল পর্তুগীজ ভাষাটাও। সদ্য উনিশের বাচ্চা ছেলে ঠিক হওয়া জাহাজে চড়ে একসময় ভারতে এসে একদিন গভর্ণর গেনারেল হয়ে যাবে।

    দেশটা নাকি রহস্যময়।ইউরোপের মানচিত্রে তেমন করে ছিলনা। এখান থেকে যদিও অনেক অনেক কাল আগেও পসরা যেত গ্রীস বা রোম, তবুও জানা ছিলনা তেমন করে এদের কথা। পল্লবিত হয়ে হয়ে কথা চলত শুধু। বাণিজ্যে যেত এরা।মেসোপটেমিয়া কিম্বা ইজিপ্টে থামত এদের জাহাজ অথবা ক্যারাভ্যান। সেখান থেকে আরো অন্য অন্য দেশে যেত। কিন্তু খাস ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় রোমের পতনের পর থেকে। রোমও জানত এদের। শুধু বাণিজ্য না জানত এদের যোদ্ধাদেরও। গঙ্গাহৃদির বা গঙ্গারীডাই-এর যোদ্ধারা স্থান পেয়েছিল ভার্জিলের কাব্যেও। সেই গঙ্গারিদি, যা নাকি আমার দেশ ছিল।

    সত্যি এমন দেশ ছিল আমার। সেখানে রাজার থেকেও বড় ছিল মানুষ। সেখানে আমরা জানতাম হাতির ব্যাবহার। প্রাগজ্যোতিষপুর আর আমরা, এই দু-দলই জানতাম হাতির ব্যবহার। আমরা বাণিজ্যে যেতাম অনেক অনেক কাল ধরে। আমাদের বন্দর ছিল গঙ্গারিদি। সেই বন্দরে আসত গ্রীক বণিকদের জাহাজও। তারো আগে আসত ফোনেশীয়রা। বন্দর গড়ব বলে আমরা গঙ্গাকে টেনে এনেছিলাম। সেই কাহিনীও বলার মতই।

    ।। গঙ্গাকে টেনে এনে ।।

    আমরা টেনে এনেছিলাম গঙ্গাকে। সঙ্গে ছিলেন দার্শনিক কপিল মুনি। বেদের লোকেদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল বলে একদিন চলে আসেন এই দেশে। এখানকার লোকেদের বেদের দেশের লোকেরা বলত দস্যু। কখনো ‘বয়ংসি’ বলে আমাদের ভাষাকে হেয় করত। মানে পাখির মত ভাষায় কিচিরমিচির করা লোকেরা থাকে এখানে। আসলে আমরা এখানে এসেছি যেখান থেকে সেখানের থেকেই ওদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ। ওনার নাকি সাংখ্য বলে দর্শন ছিল যাকে প্রথমে ওরা মানেনি। ওদের দর্শনের মত ওখানে ঈশ্বর বলে কেউ ছিলনা। ছিল প্রকৃতি আসলে। আর ছিল পুরুষ, যে অকর্মক। আর ওদের দর্শনে ক্রমশ ব্রহ্ম হয়ে ওঠে সব চেয়ে বড়। তার আগের ইন্দ্র, বরুণ সবাইকে ফেলে সে মুখ্য হয়ে ওঠে। মুনির শিষ্যেরা বলতেন ওদের নাকি লোক বেড়ে যাচ্ছে আর সেই তুলনায় খাবার বাড়ছেনা। তাই এই অবস্থা। রাজারা বা ব্রাহ্মণরা আর সামলাতে পারছে না। তাই অনেক কিছু আনতে হচ্ছে ওদের। যেমন এসব পূর্বজন্মের ফল, যেমন আসলে জাত হোলো আগের জন্মের কর্মের ফলে লোকের অবস্থা। তাই শুদ্রেরা খেটেই চলবে, বৈশ্য, ব্রাহ্মণ আর ক্ষত্রিয়রা তাদের সেবা ভোগ করবে। শুদ্র হোলো বেশীরভাগ। তাছাড়া বংশের বৃত্তি ত্যাগ করে অন্য বৃত্তিতে যাওয়া যাবেনা। বংশ পরম্পরায় কুমোরের ছেলে কুমোর থাকবে, রাজার ছেলে রাজা এসব আমাদের ছিলনা। ওদের ছিল। কপিল মুনির সঙ্গে এসব নিয়ে লেগেছিল বিরোধ।

    তিনি চলে এলেও তাঁর পিছু ওরা ছাড়েনি। সগর নামের এক রাজা অশ্বমেধ শুরু করল। আমরা এসবের মানেও বুঝতাম না। মানে হোলো ঘোড়া যদি তোমার জমির উপর দিয়ে বিনা বাধায় হেঁটে যায় তাহলে সে জমির মালিক হয়ে যাবে সগরের খাজনাদার। আমরা বুঝিইও না, তাকে আটকাবার প্রশ্নও নেই তাই। কিন্তু কপিল মুনি জানতেন। তিনি ওদের মধ্যেই বড় হয়েছেন। তিনি আটকে দিতে বললেন ঘোড়া। আমাদের গণ সভা বলল হোক যুদ্ধ। আমরা খাজনা কাউকে দেবো না। ব্যাস!লেগে গেল যুদ্ধ।

    ।। অশ্বমেধের ঘোড়া-সাম্রাজ্যের সূচনা ।।

    ঘোড়া নিয়ে কত কি হয়ে গেল বিশ্ব জুড়ে। সেই ঘোড়া যা ট্রয়ের পতন ঘটালো, সেই ঘোড়াই আবার আটকে গেল কপিল মুনির কাছে। সেই ঘোড়াই আবার একদিন আটকাবে লব-কুশ। উত্তর রামায়ণের সূচনা হবে। রামের পুত্ররা তাদের সাম্রাজ্য ফিরে পাবে। তাদের মায়ের মৃত্যু আর বাপের অত্যাচার ভুলে যাবে। ঘোড়ার সঙ্গে সঙ্গে সভ্যতা দৌড়চ্ছে। দৌড়চ্ছে উচ্চাকাঙ্খা। সেই ঘোড়ার ব্যবহার এদেশে আসা ইন্দো-ইরানীয়ান আর ইন্দো-ইউরোপীয়ান ভাষাগোষ্ঠীর লোককে অনেক বেশী সুবিধা দিয়েছিল। এ দেশ জানত না ঘোড়ায় টানা রথের ব্যবহার যুদ্ধে। ঘোড়াও এ দেশে ছিল না। পরের দিকে ঘোড়া আনতে হত আরব থেকে। যারা একদিন মেসোপটেমিয়ার দিক থেকে এসেছিল দলে দলে পশুচারণ ক্ষেত্রের খোঁজে তাদের সঙ্গে ছিল ঘোড়া। সেই ঘোড়ার দৌড় তাদের জিতিয়ে দিয়েছে অনেক যুদ্ধ। তারা আবার এই ব্যবহার শিখেছিল সেমাইট, অ্যারামাইটদের কাছে। সেখানে শিখলেও তাদের হাতের লোহার অস্ত্রের সঙ্গে, তাদের সংখ্যা আর তৈরী বাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠছিল না। ফলে জায়াগার খোঁজে এখানে চলে আসা। সেই যে আগমন তাতে যাদের মুখোমুখি পড়ল তারা ততদিনে শুধু শিখেছে গরুর গাড়ির ব্যবহার। সেই গাড়ি দিয়ে তারা বাণিজ্য করে। তারা যুদ্ধ করেনা।

    কিন্তু যারা যুদ্ধ করে? যেমন সগর রাজা? সে রাজা চায় অন্য ক্ষমতা! তার চাই জলের দখল! কেন? আগের কাল হলে এটা হতনা। তখন চাইত জমি। এখন চাই জল। আগের কালে ছিল পশুপালন। তার জন্যে চাই বিস্তৃত তৃণভূমি। সেটা নদীর কাছেই বেশী পাওয়া যায়। তাই সগর রাজার বাপ-পিতামহরা নদীর ধার ঘেঁষে বসত করেছিল। কিন্তু সেই বসতে ঘটল এক মজার ব্যাপার। সেখানে চাষ হয়। সেই যে মিশরে চাষ হত! কিম্বা এখানে থাকা লোকগুলো যারা সগর রাজাদের থেকেও আগে থেকে আছে তারা যেমন করে আর কি! বনের থেকে খাবার পাবার মতন গাছের বীজ সব পুঁতে হত ফসল। শুধু দেখতে হত এমন যেন না হয় যে ফসল ফলতে ফলতে একটা মানুষের গোটা জীবন যেন কেটে না যায়। কিছু গাছ যেমন আছে না, যাদের ফসল হয় অনেক অনেক দিন পরে। একটা মানুষের প্রায় সোয়া জীবন কেটে গেলে তবে সে সব গাছে ফল ধরে। ততদিন তাকে আগলে আগলে রাখতে হয় আলাদা করে পুঁতলে। তার চেয়ে কিছু গাছ আছে যেগুলো তেমন শক্তপোক্ত কান্ডের নয়, কিন্তু ফসল ফলায় বছরে একবার অন্তত। মানে একেবারে বীজ থেকে ফসল। অনেকটা ফলায় সে গাছ। এবারে এসব জানে আগের মানুষরা। তাদের সঙ্গে যেমন যুদ্ধ হয়েছে শুরুর দিকে তেমন সন্ধিও হয়েছে পরে। এমনকি নয় নয় করে বিয়ে-থাও হয়েছে। তাদের থেকে শেখা এক এক করে এসব। এই ফসল ফলাতে সার লাগে, লাগে জল, লাগে ভাল মাটিও। যেমন তেমন মাটি হলে হবেনা, লাগবে সরেস মাটি। সেই আগের দেশের বালির মাটিতে হবেনা এ ফসল। নদী বছর বছর একবাত্র দুবার বন্যা দেবেই। সেই বন্যার জলে নরম কাদা কাদা মাটি এসে জমা হবে পাশের জমিতে। সে জমিতে বীজ যদি পরে তাহলে চড়চড় করে বাড়বে তা।

    সে সব ছিল আগের কালের কথা। এখন সেই ফসলেও কুলোচ্ছে না। নতুন নতুন মানুষ জন্মাচ্ছে। তার সঙ্গে সগর রাজার আছে নতুন ভাবনা। অনেক ছোট ছোট রাজ্যে সমাবেশ চারপাশে। তার ফলে বেশ সমস্যা। একটা দেশে অনেক লোক তো আরেকটা দেশে লোকই প্রায় নেই। এবারে? ফসল ফলাতে যে খাটতে হবে সেসব করে কে? তাছাড়া এখানে-ওখানে ছড়িয়ে থাকলে আরো মুশকিল আছে। রাজত্ব চলে খাজনার উপর। এবারে খাজনার জন্যে যদি এই লোকগুলোর উপর বেশী অত্যাচার হয় তাহলে এরা অন্যত্র চলে যায়। অন্য রাজার শাসনে বা গণপরিষদের শাসনে। তখন সমস্যা। বেশী শাসনও করা যায়না। আর তা না করতে পারলে বেশী ফসল, বেশী খাজনা পাওয়া যাবে কি করে? সগর রাজার চাই বেশী খাজনা। সে খাজনা না পেলে তার এত বড় কান্ডকারখানা সব ব্যার্থ! এর আগে আর কোনো রাজা এমন করে ভাবেনি যেমন করে সগর ভেবেছেন। সগরের রাজ্যে লোক বেড়েছে বলে শুধু না, আরো অন্য কারণ আছে এ সব ভাবনা ভাবার।

    যুদ্ধ অনেকদিন ধরেই চলছে এই অঞ্চলে। সে সগররা যবে থেকে এসেছে তবে থেকেই। সগরদের বংশ যতদূর পিছনে যেতে পারে তার-ও পিছনের সময় থেকে চলছে। সেই সপ্ত জাতির ভূখন্ড থেকে সরতে সরতে এখানে আসার পিছনেও তো যুদ্ধ!একবার অ্যারামাইট তো আরেকবার হিটাইটরা ক্ষমতায় আসে। হিটাইটদের তাড়িয়ে দেয় আবার অন্যে। ব্যাবিলন, মেসোপটেমিয়া এসবের পত্তনতো এভাবেই। এই সব যুদ্ধের পিছনে জমির দখলের গল্প আছে। হয় চাষের, নয় পশুচারণের জন্যে!কাজেই যুদ্ধ বস্তুটা তাদের অজানা নয়। বরং তারা জানে যারাই যুদ্ধে জিতেছে তারাই তাদের ব্যবহার করেছে। কখনো পুরষ্কার দিয়েছে তো কখনো আবার সব ছিনিয়ে নিয়েছে। এই ছিনিমিনি খেলা থেকে বাঁচতে তারা সরতে থেকেছে। একসঙ্গে সবাই যায়নি ওখান থেকে ।একে একে, দুইয়ে দুইয়ে, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে গ্যাছে। একদল গিয়ে আবিষ্কার করেছে নতুন ভূখন্ড। সেখানে জমি আছে, ঘাস আছে পশুর খাবার। পাশেই আছে নদ। এককালে নদটিকে বলত ওরা হিন্দু নদ। হিন্দুকুশ পাহাড়ের কাছেই। একটা বা দুটো নয়, ওখানে ছিল সাত সাতটা নদ-নদী। সপ্তসিন্ধু বা সপ্তহিন্দুর দেশ। কিন্তু ওই অঞ্চলে আগে থেকে যারা আছে তাদের ভাষা এটা। ক্রমশ তারা নামটা পালটে নিল। কাছেই সমুদ্র। সেই সমুদ্রকে তারা বলে সিন্ধু।এখানে আগে থেকে থাকা লোকেরা ‘স’ বলতে পারেনা বলে,‘হ’ বলে। তারা ঠিক করে নিল সিন্ধুর নামে হবে নদের নাম। কাজেই ‘সিন্ধু’ নদ। হিন্দুকুশের পাশে সিন্ধু নদ।

    এই সমুদ্র এখানকার আগের বাসিন্দাদের অনেক দিয়েছে। এই নদ-নদীগুলোও। কিন্তু অনেক নদী মরে গ্যাছে, বা পাতাল দিয়ে বইছে। তা দিয়ে আর জমি উর্বর হয়না, হয়না মাছ ধরার মত কাজও সেখানে। সমুদ্র দিয়ে এখানকার লোকেরা বাণিজ্যে যেত একসময়। সেই বাণিজ্য তাদের আগের বসত ছাড়িয়েও যেত অনেক দূর। সেই বাণিজ্যের সূত্রেই তাদের পূর্বজরা এমন একটা দেশের সন্ধান পায়। কিছু বাণিজ্য হত নৌকায়, কিছু হত গরুর গাড়িতে। পথ লেগেছে বাণিজ্যের। সমুদ্রের ধারে হত বন্দর নৌকার জন্যে। আর জমির উপর দিয়ে পথ গরুর গাড়ির। বন্দর অবধি গরুর গাড়ির রাস্তা। বন্দর থেকে নৌকা। আবার মাল এলে পথটা পালটে যায় শুধু। কিন্তু দেশের ভিতরে যেমন করে চলতে পারে গরুর গাড়ি তেমন করে দেশের বাইরে চলতে পারেনা আজকাল। ক্রমশ সব অঞ্চলে লোক বাড়ছে। তাদের খাবার যোগান কম, ব্যবস্থাও সব জায়গায় ভাল নয়। কাজেই লুটপাট লেগেই থাকে। সেই জন্যেই ক্রমশ জলের বাণিজ্য বেড়ে উঠছিল। দেশের বাইরে স্থলের ব্যবহার কমে আসছিল।কাজেই ঘোড়া বণিকেরা দেখলেও তা আনার কারণ বোধ করেনি। সগরদের আগে ঘোড়া ঢোকেনি এখানে।

    একদিন পালটে গেল সব। আবহাওয়া বদলে যেতে লাগল। বিরাট বিরাট নগর ছিল আগের লোকেদের। অনেকের জন্যে থাকার ব্যবস্থা, স্নানের ব্যবস্থা। একসঙ্গে ধানের গোলা। সেই সব ফেলে রেখে তাদের চলে যেতে হবে। কাছাকাছি গ্রাম ছিল না তাদের। নগরের থেকে একটু দূরে দূরে থাকত সব গ্রাম। সেখানে চাষ হত। চাষ বন্ধ হয়ে এল। নদীর জল মাটির তলায় ঢুকে গেল। বৃষ্টি কমে যেতে থাকল। ক্রমশ এমন অবস্থা হল যে ঘাস-ও জন্মাবেনা বোধ হয়। অনেক সাধের নগর ছাড়তে হল।
    নগরগুলো তারা গড়েছিল অনেক পরিকল্পনা করে। তাদের এই বসত একদিনে তৈরী হয়নি। অনেককাল আগে তারা যখন প্রথম এখানে আসে তখন তারা গ্রামে থাকত। তারপরে গড়ে তুলেছে নগর। কিন্তু আসলে তাদের নগর গড়ার মানে ছিল বন্যা থেকে বাঁচা। বন্যা হলেই ধুয়ে যেত সব। মাটির বাড়ি থেকে জিনিসপত্র সব জলে ভেসে যেত, তছনছ হয়ে যেত। সেই সব কিছুকেই তারা দেখে ভেবেছিল অন্য ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামের পাশাপাশি উঁচু পাচিল দিতে হবে। তার জন্যে তাদের শিখতে হয়েছে অনেক কিছুই। দশমিকের ব্যবহার থেকে মাপের জন্যে জ্যামিতিও। সেই পাঁচিল তাদের বন্যা থেকে বহিঃশত্রু সব ঠেকাতে পারত। তাদের জন্যে এই পাঁচিলের কাজটা যথেষ্ট কঠিন ছিল। কারণ ছোট পাঁচিলে যেভাবে আন্দাজ করা সম্ভব বড় পাঁচিলে তা হয়না। যদি তার ভূমির অংশ যথাযথ চওড়া না হয় তাহলে পাঁচিল পরে যাবে। সেই জন্যে প্রথম দরকার ছিল মাপটা আগে হিসেব করে নেওয়া। সেই সব হিসেব যা তখনো বাকী দুনিয়ায় বেশীরভাগ লোকে জানেনা তখন তাদের আবিষ্কার করতে হয়েছে। তারা পাঁচিল গড়েছে। ক্রমশ সাজিয়ে নিয়েছে শহরের বিন্যাস। একেক অংশে একেক পেশাজীবির বাস। মধ্যখানে রয়েছে এক বিপুল স্নানাগার। সেখানে একই সঙ্গে স্নানের কাজ সারা যায় এবং আড্ডা দেওয়া যায়। সেই স্নানাগারের মতই আছে এক সঙ্গে ফসল জমা রাখার একটি বৃহৎ গোলা। সারাবছরের জন্যে খাদ্য জমা রাখার ব্যবস্থা আছে সেখানে। বাজরা থেকে যব, সব তারা ফলাতে পারত। তার সঙ্গে ছিল পশুপালন। মোষের প্রতিপালন তারা শিখে নিয়েছিল।মোষের দুধ থেকে মোষের চামড়ার ব্যবহার সব। এত কিছু জানার পরেও তারা জলের অভাব সামলাতে পারেনি। অনেক জায়গা ছেড়ে যেতে হয়েছে তাদের। তাদের এই সব গল্প কাহিনী নিয়ে তাদের পরবর্তীরা চলে গ্যাছে অন্যত্র। কোন কোন মুল্লুকে গ্যাছে সব। সেই সব কাহিনী ছড়িয়ে থেকেছে তাদের গানে কথায় গল্পে। আর সব কাহিনীই পৃথিবীতে লেখা হয়না। সেই সব অলিখিত কাহিনীগুলো তাতে মরে যায়না। তারা নিভৃতে অপেক্ষা করে নতুন শ্রোতার। পেলেই নতুন জামাকাপড় পরে চলে আসে গল্প শোনাতে।

    তাদের এই গল্প আমার মতই সগরও জেনেছিল। তার জানাটা তাকে অন্য ভাবে ভাবিয়েছে। সে চেয়েছে জলের একচ্ছত্র দখল। গঙ্গাকে সে নিয়ন্ত্রণ করবে। উপরের প্রবাহকে সে তার কাজে লাগাবে, আর নীচের অংশকে করদ করে নেবে। সেখানের লোকেরা চাষ তেমন করতে পারে না সর্বত্র। কিছু কিছু নদী ও নদ আছে। সেখানে চাষ হয়। তবে সে তেমন কিছু না। গঙ্গা এই বঙ্গের মধ্যভাগ দিয়ে চলে গিয়েছে আরো পূর্বে। তারপরে এক নদীর সঙ্গে মিশে নেমে গিয়েছে সাগরে। সে অঞ্চল আবার এত বেশী নদী সঙ্কুল যে চাষের জমি তেমন পাওয়া দুর্ভর। নীচের দিকে গভীর অরণ্য। সগরের রাজ্যের ঠিক পূর্বে আর ওই নদীনালাজঙ্গল অঞ্চলের পশ্চিমের যে ক্ষেত্র সেখানে কপিলের মদতে একটা খাল কাটছে এরা। নীচের দিকের এক নদীর পুরোনো মজা প্রবাহকে জুড়বে গঙ্গার সঙ্গে। জোড়া হয়ে গেলে মধ্যভাগ থেকে গঙ্গা এই পশ্চিমেও সোজা নেমে যেতে পারবে সাগরে। মাটি ক্রমে উর্বর হবে। একদিন ফসল হবে। ফসল হলে সম্পদ হবে। সম্পদ হলে শক্তি বাড়বে এদের। তাই আগে থেকে সগরের ঘোড়া দাপিয়ে চলে যাবে এখানে। করদ অঞ্চল হয়ে গেলে সগরের চিন্তা কম। খাল কাটার ব্যাপার সেই না হয় দেখবে তখন। নিজের রাজ্যের প্রজাপুঞ্জের একাংশকে দরকারে পাঠিয়ে দেবে সেখানে। ও দেশে খাল কাটার পরে জমি চষার লোক বাড়বে, আবার তার রাজ্যের বর্ধিত আবাদীর সমস্যারও সমাধান হবে। সগরের ঘোড়াকে এই অলিখিত কাহিনী নিয়ে গিয়েছিল আজকের ভাগীরথীর প্রবাহভূমিতে ভাগীরথীর জন্মের পূর্বে। আর আমাকে নিয়ে এসেছে এই মহেঞ্জোদাঢ়ো-র ধ্বংসস্তূপের কাছে।

    (ক্রমশঃ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৩ অক্টোবর ২০১৩ | ১৬৫৩ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    শুদ্ধ - Suddha Satya
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Blank | ***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০১৩ ০১:১২47018
  • বাহ, পরের লেখায় অপেক্ষায় রইলাম
  • আর্য | ***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০১৩ ০৬:২৩47015
  • অসাধারণ...তাড়াতাড়ি পরের কিস্তি আসুক।আমরা আলোকিত হই।অসামান্য রচনা...
  • | ***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০১৩ ১২:৫৬47017
  • *পর্বগুলো
  • | ***:*** | ০৪ অক্টোবর ২০১৩ ১২:৫৬47016
  • একটা মস্ত বড় নক্সী কাঁথা। কখনও এদিকের এক ঝলক রোদেপোড়া ইঁটের পাঁজা নজরে আসছে তো কখনও ওদিকে হস্তীবাহিনীর আনাগোণা।
    প্রবগুলো আরেকটু তাড়াতাড়ি আসলে ভাল হয়।
  • শুদ্ধ | ***:*** | ০৫ অক্টোবর ২০১৩ ০৭:০৮47019
  • চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি দিতে। :)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন