এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কাঙালনামা ৬

    Suddha Satya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০২ নভেম্বর ২০১৩ | ১৬০১ বার পঠিত
  • ।। রেল যাবে,সভ্যতা যাবে বুকের উপর দিয়ে ।।

    দখলদারের সভ্যতা মানে গতি।মানে তুঙ্গ শক্তিমত্ততা। ইঁটের মাপ, দাঁতের ডাক্তারি, ওজন এবং স্থাপত্যের আশ্চর্য্য জ্যামিতি ছাপিয়ে সে চলে যায়। তার সময় নেই। তাকে একজীবনে অনেক কিছু করতে হবে, পেতে হবে। কে পরে থাকছে, কে অক্ষম, কে দুর্বল, কে সঙ্গ ছেড়ে দিল সে সব নিয়ে তার মাথা ঘামাবার সময় কই? সে জানে শুধু তাকে পেতে হবে। দেবার কথা নিয়ে মাথা সে ঘামাতে রাজী না। পেতে গেলে যে সামান্য দিতে হয় তাতেও তার কুন্ঠা, তার হিসেব, তার কার্পণ্য। কাজেই উইলিয়াম ভাবছিল নেটিভের সাহস নিয়ে, জন ভাবছিল রেলপথ বিষয়টা ক্রমশ লাভজনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ব্রিটেনে ব্যাঙ্কার থেকে বণিক সকলেরই প্রবল উৎসাহ এখানে রেলপথ নিয়ে। সরকারও চায় এটার প্রসার। একদল ভাবছে লাভের কথা, আরেকদল সেই লাভকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রশাসনের সুবিধার কথা ভাবছে। সৈন্য চলাচলের কথা ভাবছে। মারাত্মক পরিস্থিতি এখন। খুব গরম হয়ে উঠেছে চারপাশ।

    এতদিন কাটাকুটি খেলেছে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, এবারে সরাসরি শাসন করতে হচ্ছে তাকে। শুধু বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা নয় তার দখলে এখন ভারতের বৃহদাংশই। সীমান্ত অঞ্চলগুলোকে সুরক্ষিত করতে গেলে রেল-এর বিকল্প নেই। জারের রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকাতে গেলে এখনই ব্যবস্থা করা দরকার। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা এবারে তাদের রীতি বদলাচ্ছে। তাদের হাতে এখন অবাধ ক্ষমতা। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মনোপলি তারা ভেঙে দিয়েছে।পার্লামেন্টে কোম্পানির ডিরেক্টররা অনেকদিন ধরেই উপস্থিত ছিল প্রতিনিধি হিসেবে, কিন্তু ক্রমশ পার্লামেন্ট থেকে প্রতিনিধির ডিরেক্টর হয়ে আসাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোম্পানির ব্যবসার চার্টার আজ ধ্বংস। সে এখন শাসক প্রতিষ্ঠান। আর কতকাল তা থাকবে তাও বলা যাচ্ছেনা। পার্লামেন্টে রাজা এবং অভিজাতদের ক্ষমতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে অনেক। বুর্জোয়া প্রতিনিধিরা সেখানে দাপাচ্ছে। যদিও কৃষক এবং শ্রমিক প্রতিনিধি নেই একদম। এই অবস্থায় ব্যবসায়ীরা এখন আর আমদানী না, রপ্তানির দিকে মন দিচ্ছে। ভারতের সুতিবস্ত্রশিল্প ধ্বংস করা হয়েছে ল্যাঙ্কাশায়ার-ম্যাঞ্চেষ্টারের জন্য। ব্রিটেন এবং আয়ার্ল্যান্ড, ১৮৩৩ থেকে বিপুল রপ্তানি বাড়িয়েছে। এককালে লুট নিয়ে গিয়ে যে টাকা হয়েছে ব্রিটেনে সেই টাকা দিয়েই সে উৎপাদন করছে।করে সেই জিনিস যেমন ইছে মূল্যে বেচে আবার টাকা করছে। এই হল সাম্রাজ্যের খেলা। এমন সাম্রাজ্য রাখতে এবং ব্যবসা রাখতে রেলপথ বানাতে হবে বৈ কি!

    বানাতেও সমস্যা কম না। বিভিন্ন বেসরকারী কোম্পানি বানাবে এই রেল লাইন। তারা বানাবার জন্যে সরকার তাদেরকে গ্যারান্টি দিচ্ছে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া অবধি বছরে একটা নির্দিষ্ট সুদ দিয়ে যাবে সরকার। জনের কোম্পানিকেও দিচ্ছে।এর পরে রেলপথ চালু হলে সেই পথের ব্যবসা লাভজনক না হলে যে কোনো সময়েই কোম্পানি আরও কিছু টাকার বিনিময়ে এই পথ সরকারকে বেচে দিতে পারবে। সেখানে কোম্পানির লাভের দিক দেখা হবে অবশ্যই। আর সরকারও যদি মনে করে তাহলে যে কোনো সময়ে নির্দিষ্ট এবং যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে রেলপথ কিনে নেবে কোম্পানির কাছ থেকে। তাহলে? লাভই লাভ! ক্ষতি কি সরকারের? তাও না। ব্রিটেনের নাগরিকের? না। ক্ষতি হবে ভারতের নেটিভদের। তাদের ঘাড়ে চাপা রাজস্ব থেকেই উদ্ধার হবে সব। কোম্পানিগুলো দিনের শেষে বিপুল মুনাফা করবে। করবেই। জন ভাবে তার যদি এখন একটা কোম্পানি বানিয়ে ঢালার মত টাকা থাকত! আহ! কোম্পানি এত কিছুর পরেও তাদের মত এঞ্জিনীয়রদের উপরে চাপ দেয় মালপত্র ব্রিটেন থেকে আনা যাবেনা, বা এই উপমহাদেশেও খুব দূর থেকে আনা যাবেনা বলে। অঞ্চলের থেকেই যোগাড় করতে হবে সব।

    ।। তাই হরপ্পা নেই ।।

    সেটা করতে গিয়েই জন একটা গোটা প্রাচীন শহরকে নেই নগর করে দিয়েছে। ব্রাহ্মিণাবাদকে উড়িয়ে দিয়েছে। এবারে হরপ্পার পালা। এটাও একটা প্রাচীন শহর। কবেকার কে জানে? এই শহরের ইঁটগুলো খুলে খুলে নিয়ে রেললাইনের জন্য ব্যালাস্ট বানাচ্ছে সে আর উইলিয়ম। খরচ বিপুল কমছে। এগুলো সব নেই নগর হবার বিনিময়ে তারা লন্ডনে যদি একটা ছোটখাট ভিলাও কিনতে পারে বেশ হয়। আর মধ্যবিত্ত জীবন ভাল লাগেনা। এখন তাদের মালিক যারা তারাও তো এককালে মধ্যবিত্তই ছিল। তাদের বুর্জোয়াই বলত। এখন সেই বুর্জোয়া বললে বোঝায় উচ্চবিত্ত। তারাও ওই শ্রেণীতে পরতে চায়। আর সবচেয়ে মজার কথা হল একবার হতে পারলে জীবন শুধু মজার। লুটের পয়সায় খাওয়া যায়। কি আশ্চর্য্য দেখ! যাদের মাল, পরিশ্রম, তাদেরকেই বেচে দিয়ে যাচ্ছি সব। এমন কান্ড ভাবা যায়?

    তাছাড়া সে নিজে দেখছে যত দিন যাচ্ছে তত কোম্পানিদের গূনমানের প্রতি নজর কমছে। সামনের একশো বছর পরে এটুকুও থাকবেনা বোধহয়। আগে মালিকেরা যখন টাটকা মধ্যবিত্ত জীবন থেকে উঠে এসেছে তখন ভাবত তাদের মতই মধ্যবিত্ত চাইবে সস্তা কিন্তু মজবুত জিনিস। আর এখন যখন অনেকদিন তারা অনেকদূরে আছে ওই জীবন থেকে তখন ভাবছে অন্য কথা। সস্তায় মাল বানাও, যা কমদিন টিকবে এবং তাকে বেচ যত বেশী পার দামে। মুনাফা যত বাড়ে আর কি! হাতের ইঁটটা নিয়ে সে ঘোরাচ্ছিল। ৪:২:১ অনুপাতে বানানো ইঁট। সাঙ্ঘাতিক সুক্ষ কারিগরী। কবে বানিয়েছে এরা কে জানে?

    ।। মার্শাল সব জানেন ।।

    মার্শাল জানেন, জন আর উইলিয়মরা কি ধ্বংস করে গ্যাছে। খ্রীষ্টজন্মের ২৬০০ থেকে ১৯০০ বছর আগে তৈরী ইঁট। অসাধারণ জ্যামিতি। অসাধারণ পরিমাপ জ্ঞান। সেই আমলে আর গোটা বিশ্বে এর তুলনা নেই। নগর পরিকল্পনা আধুনিক নগরকেও লজ্জা দেবে। রেল পথ পাতার জন্যে তাকে কাজে লাগিয়েছে এরা। এই হল বিজয়ীর সভ্যতা, এই হল বিজয়। এই হল ধনতন্ত্রের অন্তর্নিহীত খেলা। লোভ আর মুনাফা। যুদ্ধ আর লুট। মার্শাল রাত জেগে লিখে চলেন এসবের কাহিনী। বের করে চলেন এই প্রাচীন জনপদগুলোর কাহিনী যারা কোনো না কোনো বর্বরের হাতে ধ্বংস হয়েছে। কখনো ক্রীট তো কখনো হরপ্পা তাঁর কাজের ক্ষেত্র। তিনি এখানেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। তাঁর নিজের শহরে ফিরে যেতে লজ্জা লাগে বোধহয়! লেখেন, কিন্তু ছাপেন না এই সব লজ্জার কথাগুলো। কে জানে কেন? ছাপবেনা কেউ বলে? নাকি ছাপলে তাঁকে দেশের শত্রু আখ্যা দেবে বলে? তিনিতো জানেন এই সম্পদই ব্রিটেনকে ধনীতম করেছে আর ভারতকে শুইয়ে দিয়েছে পথের ধুলোয়। হয়ত মার্শালও ভয় পান দেশদ্রোহী নাম পেতে।

    তাঁর তাঁবুতে আলো জ্বলে যাচ্ছে। মার্শাল তাঁরা সারাজীবন এই কাজকে নতুন করে সাজিয়ে চলবেন আমি জানি। একাজ তাঁর সবচেয়ে বড় কাজ হবে ভবিষ্যতে। ব্রিটিশরাও চাইবে তাঁরই হাতে থাকুক কলকাঠি। এত বড় কাজের কৃতিত্ব তাদের হাতে না থাকলে কি করে চলে? মহেঞ্জোদাঢ়ো আমার কাজ। কিন্তু এটাও বেশীদিন আমার থাকবেনা আমি বুঝতে পারছি। এখানে মার্শাল এসে গ্যাছেন। আরো কেউ আসবে, যার চামড়ার রঙ সাদা হবে। আমার মত কোনো এক বাংলাদেশের কোনো এক অখ্যাত আধা শহর বনগাঁর বাসিন্দা না, সে হবে রাজাদের দেশের লোক। আমাকে বা আমাদের মার্শাল জায়গা দিয়েছেন একথা সত্যি। ব্রিটিশের ইচ্ছে ছিলনা কোনো নেটিভকে একাজ করার সুযোগ দিতে। কিন্তু মার্শালই প্রথম এ কাজে আমাদের মত লোকেদের জায়গা দিয়েছেন। যাদের প্রাচীন ইতিহাস তাদের কেউ অন্তত থাক কাজটায়, বোধহয় এমনি ভেবেছিলেন। অথবা যে অসভ্যতা তাঁর সাম্রাজ্য করে চলেছে তার লজ্জাকে কিঞ্চিত ঢাকা দিতে হয়তো বা আমাদের কাজে নেওয়া।

    তারপরেও একটা কিন্তু থেকে যাচ্ছে। আমাদের অভিযোগ করার কতটুকু অধিকার আছে? এই তো হরপ্পা, কবে থেকে এখানে একটি প্রাচীন নগর আছে অনেকে জানে। মেসন ছাড়াও ব্রিটিশ আর্মি পরিত্যাগী এক সেনাও তাই বলেছে। কিন্তু তাতে কি? আমরা তো দাম দিইনি এর। এর যে কোনো মূল্য আছে তা সত্যিই তো আমরাও বুঝিনি। বুঝলে কি আর অন্যরা এসে ঘাড়ের উপরে পা তুলে দাঁড়াতে পারতো? শুধু মার্শালের সাম্রাজ্যকে দোষ দিয়ে লাভ কি? ইঁট একে একে খুলে নিয়ে গ্যাছে স্থানীয়রা এবং সবচেয়ে বেশী ইঁট গ্যাছে রেলপথ পাততে। লাহোর থেকে করাচী জুড়বে এই পথ। এরপরে হয়ত পাঞ্জাব! এটা ব্রিটিশদের কাছে অনেক বেশী প্রয়োজন ছিল। হরপ্পা না থাকলেও কিছু এসে যায়না। আলেক্সান্ডার কানিংহাম এসে এখানে খোঁড়াখুঁড়ি করে কিছু খোঁজার কাজ মাঝে করেছেন।

    ব্যাস! ওই অবধিই। দুনিয়া জুড়ে তাঁর দেওয়া হরপ্পা বা সিন্ধু লিপির ওই ব্রাহ্মীলিপির ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া ছবিটা ছড়িয়েছে। লোকের একটু উদ্যোগ হয়েছে। ফ্লীট এখানে এসে আরো কতগুলো অমন লিপি না পেলে এখানে মার্শাল কাজ করতেন নাকি?তক্ষশীলা, গান্ধার এসবে তাঁর মূল আগ্রহ। বিদেশী গ্রীকরা কত অবদান রেখেছে প্রমাণ করতে পারলে একটু সুবিধা হয় ব্রিটিশদের। যুগে যুগে যে ইউরোপীয়রাই আমাদের সভ্য করেছে একথা সদর্পে বলা যায়। আমাকেও তো আসলে পাঠানো হয়েছিল ওই গ্রীক স্তম্ভ আবিষ্কার করতে। বৌদ্ধ স্তুপের কথায় আমার ইচ্ছে করে দেখতে। বুদ্ধ যেহেতু এশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে আছেন, তাই তাঁকে ফেলে দেওয়া যায়না।তাছাড়া জাপান এবং চীন ইত্যাদিরা এ নিয়ে খুব উদ্যোগী।কাজেই তারা আসবে।পর্যটন হবে।তাছাড়া বুদ্ধ হলেন অহিংসার দূত, এখনতো আবার অহিংসা নিয়ে খুব চর্চা চলছে। গান্ধীর রাস্তা নিয়ে খুব কথা হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলা,পাঞ্জাব,মহারাষ্ট্রের বিপ্লবীদের রাস্তার বদলে এটাই রাস্তা রাজনৈতিক আন্দোলনের, এটা প্রমাণ করতে হলে অহিংসাকে মহান দেখাতেই হবে। অন্যদিকে ব্রিটিশের লাঠি-গুলি-খুন-লুট চলবে। আমার আজকাল কেমন যেন অসহ্য লাগে এদের সব ভান। তবু…!

    ।। বৌদ্ধ, বৌদ্ধিক ও স্বাধীনতা ।।

    আমি এখানে এসেছিলাম একটি বৌদ্ধ স্তুপের খোঁজে। একজন বৌদ্ধ শ্রমণ আমাকে এখানে এনেছিলেন। খুঁড়তে শুরু করে বুঝলাম এটা স্তুপ না। অন্য কিছু। খুঁড়তে খুঁড়তে পেলাম মহেঞ্জোদাঢ়ো। মৃতের নগরী। যা গরম এখানে তাতে মৃতেরাই একমাত্র থাকতে পারে এখানে। এককালে নদী বা জলের যা কিছু স্রোত পাশ দিয়ে যেত তা আর নেই। সব শুকিয়ে গিয়ে একটি জ্বলন্ত এবং মৃত নগর এটা। কিন্তু পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন নগর। আমার দেশের নগর, আমার দেশের সভ্যতা। আমরা হীন ছিলাম না। ব্রিটিশরা যেমন বলে তেমন না। ওই যে ওরা যখন দেখল আমাদের সব কিছু ওদের থেকে কম না, আমরা মানুষ হিসেবে কম না ওদের থেকে তখন থেকে শিক্ষা নীতি করে নিল আমাদের ভাবনায় ব্রিটিশ বানানোর! আচরণে এবং ভাবনায় আমরা যেন ওদের নকল করি। যেন মনে করি হাজার হাজার বছর এখান দিয়ে সময় গিয়েছে বৃথা শুধুই। তার কোনো অবদান নেই। ওরা না এলে আমরা জানতেই পারতাম না আধুনিক সভ্যতা কি! আমরা নিজেরা কখনো সেখানে পৌঁছতেই পারতাম না। এটা আমাদের বুঝিয়ে দিতে পারলেই ওদের শাসন বন্দুক ছাড়াই চলবে। কিন্তু এই নগরগুলো, ওদের সেই ভাবনার মুখে থাপ্পড়। একে আর লুকোতে পারছে না, অবহেলায় ফেলে রাখতে পারছেনা। কিন্তু আমাকে সামনের কোনো দিনে সরিয়ে দিয়ে ওদের বশংবদ এবং ভাই বেরাদর এনে বলতে পারে অন্তত, যে এরা এত অসভ্য, এদের কি ছিল তাও আমাদেরই আবিষ্কার করে দিতে হয়। এখানেই ব্রিটিশ রাজা মহান, ব্রিটিশ সভ্যতা মহান, মহান ওদের পুঁজিতন্ত্র!

    অন্ধকার হয়ে গ্যাছে সব। মার্শালের তাঁবুর আলোও নিবে গ্যাছে। আমি এখনো বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। মাথার উপরে বিপুল তারাভরা এক আকাশ যার কোনো সীমা নেই, শেষ নেই, বিভাজন নেই। যাকে কাঁটাতার দিয়ে দৃশ্যতও অন্তত ভাগ করা যাবেনা। সেই এক অনন্ত আকাশের নীচে আমি দাঁড়িয়ে আছি। মৃতের নগরী আর হরপ্পার অধিবাসীরা, যাদের রাজা ছিল বলে মনে হচ্ছে না, যাদের ধন-সম্পদে নাগরিকে নাগরিকে ফারাক বিরাট ছিলনা, যারা নিজেদের নিয়েই থাকত, অন্যের ধনে লোভ করে আক্রমণ করত না বলেই মনে হয়, তারাও একদিন আমারই মতন এই আকাশের নীচে এমন কোনো রাতে খুব নাচ-গান করতো। চাঁদের আলোয় ঝরে পরত তাদের প্রেম-প্রীতি পরস্পরে। আমি তাদের ছুঁতে ইচ্ছে করি হে জীবন!আমাকে তাদের ছুঁতে দাও। আমি বন্দুক চালানোর লোক নই, মিছিল-মিটিং করার লোক নই। আমি এক খনক মাত্র মহাকালের ভাঁড়ারে। কাল সকালে আবার খনন কাজ শুরু করবো। আমরা এক নেই নগরকে আবিষ্কার করবো একটু একটু করে।অনেককাল পরে এখন আমাদের বাসস্থান নগরগুলোও এমন করে নেই নগর হয়ে যাবে। আমারই মতন বা মার্শালের মত কেউ তাদের খুঁড়ে খুঁড়ে দেখবে, লিখবে। সব হবে নিজের নিজের অবস্থান, স্বার্থ, সুবিধা মাথায় রেখে। কিন্তু কারা পড়বে?পড়ে কি করবে? এসব বদলে দেবে? থামিয়ে দিতে বলবে এই বর্বরতা তথাকথিত সভ্যতা জুড়ে? পড়তে পড়তে কি কয়েকটা মানুষের জন্ম হবে হে দেশ? ধনের গোলাম, ধনীর গোলামের দেশে কি কোনোদিন দু একটা স্বাধীন মানুষ জন্মাবে সত্যিই, যারা বলতে পারবে দাসত্বের সুরভিত জীবনের চেয়ে, একটি স্বাধীন মৃত্যুই শ্রেয়?

    জানি না। আমি পরাধীন দেশের নাগরিক, তার গ্রামের দেশের বাসিন্দা একজন। আমি রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় কি জানি এর উত্তর? আমি শুধু আমার উপমহাদেশকে খুঁড়ে চলি জানতে। আর? ভালবাসতে!

    —-সমাপ্ত—
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০২ নভেম্বর ২০১৩ | ১৬০১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    শুদ্ধ - Suddha Satya
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • i | ***:*** | ০২ নভেম্বর ২০১৩ ০৭:৩০45709
  • অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে প্রতিটি পর্ব পড়ছিলাম। এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে ভাবি নি। খনন শেষ হয় না কি? পুনশ্চর আশায়-
  • শুদ্ধ | ***:*** | ০৩ নভেম্বর ২০১৩ ০৬:০৫45710
  • i, সত্যি খনন শেষ হয় না। তবে এটা নভেলেট-এর মাপে ছিল। থামতে হয়েছিল। খনন চলতে থাকে স্তরে স্তরেই। এর পরের অংশ নিয়ে ভেবেছিলাম আবার কোনো একদিন লিখবো। যদি সময় সুযোগ পাই তাহলে সে লেখাও হয়ে উঠবে একদিন।
  • aranya | ***:*** | ০৪ নভেম্বর ২০১৩ ০৫:৫১45711
  • অসাধারণ
  • arya | ***:*** | ০৪ নভেম্বর ২০১৩ ০৫:৫৫45712
  • খুব ভালো লাগল...

    ইতিহাসের আড়াল দিয়ে ঘুরে এলাম যেন সেই সুদূর অতীতে...এত সুন্দর প্রাঞ্জল ভাষা...এত সুন্দর গতি...

    এটি ধারাবাহিকভাবে পড়তে পড়তে আরও পড়ার ইচ্ছা জাগে...ইতিহাসের কাছে এসে দাঁড়াতে হয়...
  • Tapas | ***:*** | ০৪ নভেম্বর ২০১৩ ০৮:৩৮45713
  • লেখাটার সবচাইতে ভাল লাগার জায়গা হলো কোথাও "আমি কত জানি" ভাবটা নেই, আবার তুমি পাঠক এবারে জেনে নাও এই কথাগুলি, এমন কোনো তাগাদাও নেই। এক নিতান্ত নির্মোহ এবং হয়ত সুনির্মিত তথ্য-কল্পনার বুনত আমাদের এমনিতেই আটকে রাখে লেখাটার সাথে, সময়-স্থান-কাল জুড়ে এর যাত্রাপথ আমরা দেখতে দেখতে ঋদ্ধ হই। ______ ধন্যবাদ শুদ্ধ আরো লিখবে বলার জন্যে।
  • Sukanta Ghosh | ***:*** | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ০১:৫১45715
  • এই লেখাগুলি খুবই ভালো লেগেছিল - আগে জানানো হয় নি, জানিয়ে গেলাম। এমন লেখা আরো পড়তে পারলে ভালো লাগবে।
  • শুদ্ধ | ***:*** | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ১১:০০45714
  • তাপস, আমি তো জানি যে আমি জানি না। হা হা হা হা হা...

    সকলকে ধন্যবাদ। একটা পরীক্ষা ছিল। মনে হয় সেটা কিছুটা কাজে দিয়েছে। আমি সমৃদ্ধ হলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন